অশোক মুখোপাধ্যায়
প্রাবন্ধিক, সেস্টাস-এর সম্পাদক
বিভিন্ন দেশে ও কালে ফ্যাসিবাদের অনেকরকম লক্ষণের মধ্যে একটা সাধারণ ব্যাপার থাকবেই— সমস্ত সরকারি স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের উপর শাসক ফ্যাসিস্ট দলের নিরঙ্কুশ প্রভাব স্থাপন ও বিস্তার। আর না হলে তাদের কোনও কোনওটাকে ঠুঁটো করে রাখা। {করোনা এবং ইয়াস ঘুর্ণিঝড়ের ঠেলায় জগন্নাথ মহাশয় এখন একটু ঝামেলায় আছেন বলে ওকে আর টানাটানি করলাম না!} এই একটি জায়গায় হিটলার মুসোলিনি ফ্রাঙ্কো তোজো ম্যাক্আর্থি ইন্দিরা প্রমুখর মধ্যে গুণগত কোনও তফাত কেউ দেখাতে পারবেন না। পরিমাণে অবশ্য পরস্পরে বিস্তর তফাত ছিল বা আছেই।
তথাপি ভারতবাসী হিসাবে আমরা গর্ব করে বলতে পারি, এই মুহূর্তে আমরা যাঁর শাসনাধীনে রয়েছি, সেই সুপরিচিত শুভ্র শ্মশ্রুধারী অর্ধশতাধিক ইঞ্চিবিশিষ্ট বক্ষছাতির মালিক যিনি, তিনি তাঁর সাত বছরের রাজত্বকালে অন্যদের সঙ্গে উপরোক্ত দখলমুখিতার পরিমাণগত তফাত অনেকটাই কমিয়ে এনেছেন। আরও কিছু দিন সুযোগ পেলে, আমার দৃঢ় বিশ্বাস, তিনি ওদের সকলকে ছাড়িয়ে যাবেনই। ভারত আবার জগত সভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে— ফ্যাসিস্ট শাসন প্রবর্তনে।
কীভাবে এই শ্রেষ্ঠ আসনের সন্ধানে দেশ এগোচ্ছে তা নিয়েই এই প্রবন্ধের দুর্বল তত্ত্বতালাশ।
ভালো নোট বাতিল
প্রথমেই সেই রাতটার কথা স্মরণ করা যাক। ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর।
রাত ৮টায় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করে দিলেন, রাত বারোটার পরে পরেই, ৯ নভেম্বর থেকেই, সারা ভারতে সমস্ত পাঁচশো ও এক হাজার টাকার ভালো নোটগুলি বাতিল বলে গণ্য হবে। খুচরো পাইকারি কোনও বেচাকেনায় সেই সব নোট আর গ্রাহ্য হবে না। যাদের কাছে যত এরকম নোট আছে সব ব্যাঙ্কে গিয়ে জমা দিতে হবে এবং অন্য নোটে টাকা তুলে আনতে হবে। বাতিল নোট জমা দেওয়ার কোনও ঊর্ধ্বসীমা নেই, কিন্তু প্রতি সপ্তাহে একবারে কে কত টাকা তুলতে পারবে, তার ঊর্ধ্বসীমা চাপিয়ে দেওয়া হল।
মানুষের মধ্যে তখন প্রবল চাঞ্চল্য। এবারে সমস্ত কালো টাকা ধরা পড়ে যাবে। যারা বাড়িতে ঘুষের টাকা, জালিয়াতি করে উপার্জিত টাকা বালিশের খোলে পুরে রেখেছিল, এখন সব বের করতে এবং জমা দিতে হবে। পাকিস্তান এবং ইসলামি জঙ্গিরা ভারতে যে বিপুল পরিমাণ জাল নোট ছড়িয়ে দিয়েছে তাও এবার উদ্ধার হয়ে পড়বে। সন্ত্রাসবাদের কোমর ভেঙে যাবে। আদি আদি,…
সেস্টাসের তরফে আমাকে কিছু কিছু জায়গায় গিয়ে বক্তব্য রাখতে হয়েছিল। অল্পবিস্তর লেখালেখিও করেছিলাম। তবে, সবিনয়ে জানিয়ে রাখি, অর্থনীতি আমি খুব ভালো বুঝি না। মার্ক্সীয় রাজনৈতিক অর্থশাস্ত্র সম্পর্কে যেটুকু পুঁথিগত বিদ্যা কৈশোরোত্তর কাল থেকে মগজস্থ করেছিলাম, তার ভিত্তিতে এখানে ওখানে দুচার কথা বলতে এবং লিখতে সাহস পেয়েছিলাম। আর যাঁরা প্রচলিত অর্থনীতি বিশারদ তাঁদের রচনা ও বক্তব্য থেকে নানারকম চিন্তা যুক্তি ধার নিয়ে প্রকাশ্য সভায় নোটবাতিলের ভালোমন্দ বলতে চেষ্টা করেছিলাম। সেই সময়, ২০১৭ সালের এপ্রিলে, বিবিধ পরিচিত বিশেষজ্ঞদের থেকে লেখা সংগ্রহ করে একটি (দ্বিভাষিক) সম্পাদিত প্রবন্ধ সঙ্কলনও প্রকাশ করেছিলাম। “নোটবাতিলের রহস্য” শিরোনামে।
তখনই যে কথাটা তুলেছিলাম, আজ আবার বলি। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক তার রুটিন কাজ হিসাবেই অর্থমন্ত্রকের সঙ্গে আলোচনাক্রমে বাজার থেকে পুরনো নোট একটা (পূর্ব পরিকল্পিত) সময় অন্তর তুলে নেয় এবং নতুন নোট ছাপিয়ে তা বাজারে চালু করে। দ্বিবিধ উদ্দেশ্যে: জাল নোট বাজার থেকে চুপিসারে সরিয়ে ফেলা; পুরনো ছেঁড়া নোট বাজার থেকে তুলে নেওয়া। নোট বাতিল করে যে কালো টাকা উদ্ধার করা যায় না— এই ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে বেশ কিছু সরকারি কমিটিরও এত সুনির্দিষ্ট পরামর্শ আছে যে একটু কষ্ট করে সচিবদের কাছে চাইলেই তা জানা যেত। অর্থাৎ, সেই সিদ্ধান্ত যদিবা মন্ত্রীসভায় নেওয়া হয়েও থাকে, এটা প্রধানমন্ত্রীর বুক বাজিয়ে ঘোষণা করার কথা নয়।
কিন্তু বিজেপি বা নরেন মোদির ক্ষেত্রে একথা খাটে না। তাঁরা তো স্পেশাল। একে তো বিজেপি এবং আরএসএস-এর পক্ষ থেকে মোদিকে তখন কালা এবং জালি ধনের বিরুদ্ধে একজন শক্তিশালী লড়াকু দেশভক্ত সৈনিক হিসাবে তুলে ধরার আয়োজন চলছে। পাশাপাশি গভর্নর থাকাকালীন রঘুরাম রাজনের সময় থেকেই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের উপরে সরকার তথা প্রধানমন্ত্রীর খবরদারির একটা আন্তরালিক প্রয়াস শুরু হয়ে গিয়েছিল। মোদি তখন প্ল্যানিং কমিশন তুলে দিয়েছেন। রেল মন্ত্রককে স্বশাসন বঞ্চিত করে মন্ত্রীসভার অন্তর্ভুক্ত করা হয়ে গেছে। এবার শুরু হয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ককেও অর্থমন্ত্রকের সরাসরি অধীনে নিয়ে আসার তোড়জোড়। রাজন থাকলে তাতে সুবিধা হবে না বুঝেই তাঁর মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে বিজেপি সরকার একদিনও দেরি না করে মুকেশ আম্বানির কাছের লোক উর্জিত প্যাটেলকে সেই পদে বসিয়ে দেয়। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যে প্যাটেলের সঙ্গে ওদের বনিবনা ভেঙে যেতে থাকে। আত্মসম্মান বাঁচাতে উর্জিত প্যাটেল মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই পদত্যাগ করেন। সেই পদে আর একজন দালালকে বসিয়েই সরকার রিজার্ভ ব্যাঙ্ক-এর আমানত থেকে ২০০০০ কোটি টাকা সরকারি (অপ)ব্যয়ের জন্য তুলে নেয়।
আর ভালো নোট বাতিলের পর মোদি সরকার নতুন নোট ছাপানোর দায়িত্ব দেয় এমন একটা কোম্পানির হাতে (ইংল্যান্ডের ডে লা রুই কোম্পানি) যাকে ২০১০ সালে মনমোহনের আমলে ভারত সরকার দুনম্বরি কার্যকলাপের জন্য কালো তালিকাভুক্ত করে দিয়েছিল।
কালা আর জালি এরা না ধরলে আর কে ধরবে?
অসংখ্য ব্যক্তি ব্যাঙ্কের বাইরে, এটিএম কাউন্টারের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে ঠান্ডায়, গরমে এবং বর্ষায় ভিজে মারা গেছেন। ব্যাঙ্কের ভেতরে বহু ঘন্টা অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে বাধ্য হয়ে বেশ কয়েকজন কর্মচারী মারা গেছেন। মোদির সেই বুক বাজানোর মোট শিকার ১৬৩ জন। পার্লামেন্টে বা অন্য কোনও সভায় দাঁড়িয়ে সেই ৫৬ ইঞ্চি একবারের জন্যও তাদের মৃত্যুর পরোক্ষ দায়িত্ব গ্রহণ করে দুঃখপ্রকাশ করেননি।
অথচ কালো টাকা উদ্ধারের শেষ পর্যন্ত কী হয়েছিল?
তিন মাসের মধ্যেই যখন বোঝা গেল সমস্ত পাঁচশো এবং এক হাজার টাকার নোট ব্যাঙ্কে ফেরত আসতে চলেছে, কালা ধন উদ্ধারের উদ্ধত খেলুড়ে ঘোষণা মাঠে মারা যেতে বসেছে, তখন থেকে রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে দিয়ে টাকা জমা দেওয়ার ওপর নানারকম বিধিনিষেধ আরোপ করা শুরু হল, যাতে লোকে সহজে ব্যাঙ্কের দরজা অবধি যেতেই না পারে।
দুটো কাজ অবশ্যই সিদ্ধ হল। ভারতীয় অর্থনীতির কোমর দীর্ঘকালের জন্য ভেঙে দেওয়া গেল। জিডিপি-র অধোগতি, বেকার সংখ্যার ঊর্ধ্বগতি, ডলার সাপেক্ষে টাকার দামের পতন নিশ্চিত করা গেল। আর, ব্যাঙ্কে বড় বড় কর্পোরেটদের ঋণখেলাপির ফলে যে অর্থশূন্যতা সৃষ্টি হচ্ছিল, বাসেল কনভেনশনের প্রোটোকল অনুযায়ী যে ন্যূনতম আমানত ব্যাঙ্কে রাখার কথা অথচ থাকছিল না, কোটি কোটি মানুষকে পথে বসিয়ে কিছু দিনের জন্য তার ব্যবস্থা করা সম্ভব হল।
প্ল্যানিং কমিশনও বাতিল
প্ল্যানিং কমিশনের চেয়ারম্যান প্রধানমন্ত্রী হলেও সাংবিধানিক এই সংস্থাটির অনেকটাই স্বশাসিত কর্তৃত্ব ছিল। আর্থিক নীতি গ্রহণের ক্ষেত্রে আপেক্ষিক স্বাধীনতার সঙ্গে তারা নীতি নির্ধারণ করতে পারত এবং বহু ক্ষেত্রেই সরকার তা মেনেও নিত। তাছাড়া, প্ল্যানিং কমিশনে সমস্ত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীরা বিধিবদ্ধ সদস্য হতেন বলে তাঁদের বক্তব্য ও সমস্যা শুনতে এবং সমাধানের নির্দেশিকা দিতে কমিশন বাধ্য ছিল। বুর্জোয়া গণতন্ত্রের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও এবং ভারতীয় সংবিধানের এককেন্দ্রিক মূলগত বৈশিষ্ট্যের মধ্যেই সীমিত যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর একটা আনুষ্ঠানিক অনুশীলন এর মধ্য দিয়ে রক্ষিত হতে পারত। এতকাল একরকমভাবে সেটা চলেও আসছিল।
নরেন মোদির তা পছন্দ নয়। সরকারের বাইরে আর কোনও ক্ষমতার কেন্দ্র টিকে থাকা তিনি পছন্দ করেন না। আবার যুক্তরাষ্ট্র-ফাস্ট্রও তিনি বোঝেন না বা মানেন না। সঙ্ঘ পরিবার তাঁকে শিখিয়েছে, ক্ষমতার একটাই কেন্দ্র না থাকলে হিন্দুরাষ্ট্র স্থাপনে অনেক বাধাবিঘ্ন এসে যাবে। রাজ্য সরকারগুলিকে যতটা পারা যায় ভোঁতা করে দিতে হবে। যাতে ওদের হাতে অর্থ বা কার্যকর ক্ষমতার অবশেষ কিছুই না থাকে।
জিএসটি
তার জন্যই অনেক ঢাকঢোল পিটিয়ে চালু করা হল জিএসটি। এই জিএসটি আদায়ের কায়দাটা দেখুন। পুরো ফরমুলাটাই এমনভাবে করা হয়েছে যে আপনার পাড়ার পানের দোকান থেকেও আপনি যা কিছু কিনবেন, তার জিএসটির টাকা (কেন্দ্রীয় এবং রাজ্যের নামে আলাদা হিসাব দেখিয়েই) কেন্দ্রে গিয়ে জমা হবে। এবার কেন্দ্র সেই জমা টাকা থেকে বিভিন্ন রাজ্যের পাওনা বুঝিয়ে ফেরত দেবে।
দিচ্ছে না। শুধু দিচ্ছে না তাই নয়, কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন অর্থমন্ত্রী হয়ে এসে এখন নির্মলা সীতারামন বলছেন, স্বয়ং ভগবান ব্যবস্থা না করে দিলে সেই টাকা নাকি রাজ্যগুলিকে আদৌ দেওয়া যাবে না। এদিকে, আয়করের সমস্ত টাকাও কেন্দ্রীয় সরকারের হাতেই জমা হয়। এর অর্থ হল, রাজ্যগুলিকে আর্থিক দিক থেকে দেউলিয়া করে দিয়ে সমস্ত টাকা কেন্দ্র হাতিয়ে নিচ্ছে এবং কুক্ষিগত করে রাখছে। রাজ্যে নির্বাচন হোক না হোক, রাজ্য সরকারের ক্ষমতা বলে আর কিছু অবশিষ্ট রাখতে চাইছে না।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে থাবা
মোদি সরকার ২০১৪ সালে ক্ষমতায় বসেই বিভিন্ন কেন্দ্রীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাথায় দলীয় এবং সঙ্ঘ অনুমোদিত এবং শিক্ষাগত দিক থেকে অযোগ্য লোকজনদের চাপিয়ে দিতে শুরু করে। পুনার ইন্সটিটিউট অফ ফিল্ম স্টাডিজ থেকে এই প্রক্রিয়া চালু হয়। কিছু দিন পরে জেএনইউ-তে একজন অনুরূপ স্বল্পশিক্ষিত দালালকে উপাচার্য করে পাঠানো হয়। তারপর হায়দ্রাবাদের কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে, আরও পরে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় এবং বোলপুরের রবীন্দ্রনাথের ঐতিহ্যমণ্ডিত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে একই ঘটনার জেরক্স চলতে থাকে।
স্বভাবতই এই প্রতিটি শিক্ষায়তনে বিজেপি তার কার্যক্রম চালাতে গেলে, বিশেষ করে ভর্তি সঙ্কোচন এবং ফি বৃদ্ধি ঘটাতে গেলে, ছাত্রছাত্রীদের ব্যাপক প্রতিরোধের সামনে পড়ে। ছাত্র সংসদ নির্বাচনে বিদ্যার্থী পরিষদ গো বা হনু-হারা হেরে যেতে থাকে। তাতে সম্বিত ফিরে পাওয়ার বদলে একটি আদর্শ স্বৈরশাহী শাসকের মতো তারা আরও নগ্ন আক্রমণ নামিয়ে আনতে থাকে। জেএনইউ-র একজন ছাত্রকে অপহরণ করে তারা সম্ভবত মেরেই ফেলেছে। তিন বছর হতে চলল, ছাত্রটি বা তার লাশ গায়েব। কানহাইয়া এবং উমর খালেদ-এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মিথ্যা মামলা শুরু করে জেলে পুরে দেয়। বিদ্যার্থী পরিষদ ভুয়ো ভিডিও বানিয়ে যে অভিযোগ করে, পুলিশি তদন্তেই তা মিথ্যা ও সাজানো বলে প্রতিপন্ন হয়।
হায়দ্রাবাদে আন্দোলনকারী আম্বেদকর ছাত্র সমিতির সভায় হামলা করে বিদ্যার্থী পরিষদ গবেষক রোহিত ভেমুলা ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধেই হামলা করার মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করে। তৎকালীন কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী স্মৃতি ইরানি {হ্যাঁ, ঠিক চিনেছেন, পৃথিবীর একমাত্র শিক্ষামন্ত্রী যিনি ২০১৪ সালে বি-কম পাশ বলে দাবি করে লোকসভায় জিতে এসে ২০১৯ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাশ বলে এফিডেবিট জমা করেন; তাতেও তাঁর আগের বারের পদ বাতিল ও সুযোগসুবিধা ফেরত কিংবা পরের বারে দাঁড়াতে অসুবিধা— কোনওটাই হয়নি। ধন্য ভারতীয় লোকতন্ত্রের মহিমা!!!!} তখন কাজে নেমে পড়েন। তিনি দিল্লি থেকে ঘন ঘন চাপ দিয়ে ভৃত্যস্বরূপ উপাচার্যকে দিয়ে ভুয়ো কমিটির মাধ্যমে তদন্ত করে রোহিত ভেমুলাকে হোস্টেল থেকে বহিষ্কার করান এবং গবেষণা থেকে তাঁকে সাসপেন্ড করান। অন্যায় শাস্তিপ্রাপ্ত এবং অপমানিত ভেমুলা কিছু দিন পরে আত্মহত্যা করেন।
এই সব অন্যায় কাজের জন্য না সেই উপাচার্য, না সেই মন্ত্রী, কারও কোনও সাজা হয়নি।
বিশ্বভারতীতে উপাচার্য হয়ে এসে একই রকম সঙ্ঘ শিক্ষিত বিদ্যুৎ চক্রবর্তী ছাত্রছাত্রীদের বিরুদ্ধে এবং রবীন্দ্রনাথের মহান ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে বসেছেন। বিশ্বভারতীর খোলামেলা পরিবেশ নষ্ট করার জন্য চারদিকে সীমাপ্রাচীর দিয়ে (অবশ্যই এতে শুধু খরচ হয় না, প্রতিটি ইটই নাকি পয়সা এনেও দেয়) পৌষ মেলা উৎসব বন্ধ করে দিয়ে রবীন্দ্রনাথের পরিকল্পনাকেই প্রতিদিন হত্যা করে চলেছেন। ধীরে ধীরে সমস্ত বাংলা হরফে লেখা বিজ্ঞপ্তির অবলুপ্তি হচ্ছে এবং সেই সব দেওয়ালে হিন্দি এসে কঠোরভাবে জানান দিচ্ছে, বাংলায় থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বাংলার কোনও জায়গা থাকবে না। সেখানে তিনি বিজেপি-র সাংসদকে ডেকে এনে বিজেপি-র বিভাজক রাজনীতি উৎসারিত এনআরসি-র সপক্ষে বক্তৃতা করাতে চান। ছাত্ররা আপত্তি জানালে ও বাধা দিলে তিনি ছাত্রদের পুলিশ ও বহিরাগত আরএসএস গুন্ডাদের দিয়ে মারধোর করান, হোস্টেল থেকে বের করে দেন, ইত্যাদি। অধ্যাপকদের সঙ্গে সামন্তযুগের চাকরদের মতো ব্যবহার করেন এবং কথায় কথায় চার্জশিট ধরাতে থাকেন।
এই যাবতীয় অপকর্মের উদ্দেশ্য একটাই, বিশ্ববিদ্যালয়গুলি যেন বিজেপি আরএসএস-এর রাজনীতি প্রচারের আখড়া হয়ে ওঠে। ভিন্ন মতের যেন কোনও অস্তিত্ব না থাকে।
অন্যান্য শাখায়
এগুলো যখন হস্তগত করা যাচ্ছে, অন্যগুলোই বা নয় কেন?
ইডি আর সিবিআই। দুটি খুব গুরুত্বপুর্ণ কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান। একটা সংস্থা উচ্চবিত্তবানদের বেনজির আয়ের উৎস সন্ধান করে, ব্যয়ের সমতুল্য আয়ের উৎস দেখাতে না পারলে ও তদনুরূপ আয়কর না দিয়ে থাকলে জেলপানে টানাটানি করে। অপরটি বিশেষ বিশেষ অপরাধের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের তত্ত্বাবধানে অপরাধীকে ধরে এবং তদন্ত করে শাস্তির ব্যবস্থা করে।
এই সব সংস্থা কংগ্রেস আমলেও রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব দেখাত। কেন্দ্রের শাসক দল যেমন চাইত সেইভাবে কাজ করত। তবু তাতে কিঞ্চিত রাখঢাক থাকত। ইডি রং না দেখেও কালো উপার্জকদের বাড়িতে একটু আধটু হানা দিত। সিবিআইয়ের মধ্যেও একটু পুলিশ পুলিশ ভাব ছিল।
মোদি জমানায় এদেরও ভোল পালটে গেল। এরা সকলেই বিজেপি-র বিরোধী-খোঁচাও শাখা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হল। এক এনজিও-র পরিচালক তিস্তা শিতলবাদ কিংবা কংগ্রেস নেতা চিদাম্বরম-এর পেছনে ইডি ধাওয়া করল স্রেফ কংগ্রেসকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলার জন্য এবং শিতলবাদ যেন আর গুজরাতের দাঙ্গার ব্যাপারে মাথা না গলান তা সুনিশ্চিত করতে। পশ্চিমবাংলায় সিবিআই এল সারদা পঞ্জি স্কিমে যুক্ত তৃণমূল কংগ্রেস নেতাদের— না না, দুর্নীতি ধরতে নয়, ওরা অমন বেহুদা কাজ করতেই পারে না— দুর্নীতি সম্পর্কে ফাইল খুলে কে কে বিজেপি-তে যোগ দেবে তা খতিয়ে দেখতে। সারদা কাণ্ডে মদন মিত্রের আড়াই বছর বিনা বিচারে তদন্তের নামে জেলে থাকার ব্যবস্থা হয়ে গেল, তাপস পাল এবং সুদীপ ব্যানার্জীরও বিনা পয়সায় ওড়িশার জেলে মাসছয়েকের আতিথ্য জুটল। কিন্তু সারদা কাণ্ডের পাণ্ডা মুকুল রায় যেই ইশারায় জানালেন, তিনি বিজেপি-তে যোগ দিতে প্রস্তুত আছেন, ছ্যা ছ্যা, সিবিআই অমন নিপাট বিজেপিগামী ভালো মানুষকে ধরে কখনও?
এই বছর বিধানসভা ভোটের পরে পরেই সিবিআই আরও একবার তাদের বানর সেনা চরিত্র দেখিয়ে দিল একইভাবে চার নেতাকে নারদ কাণ্ডের জন্য ধরে এবং যথারীতি মুকুল এবং শুভেন্দুকে ছাড় দিয়ে। ব্যাখ্যাট্যাখ্যা ওরা যাই দিক, সাধারণ মানুষের বুঝতে কোনও অসুবিধা হচ্ছে না, এই দুরকম আচরণের পেছনে রহস্য কী।
তবে চোরের উপর বাটপাড়িতেও অনেক সময় বড় বাটপাড়কে থাবড়া খেতে হয়। যেমনটা হয়েছিল মহারাষ্ট্রে অজিত পাওয়ারের বেলায়। গত নির্বাচনে বিজেপি নিরঙ্কুশ জয়লাভ করেনি। হ্যাঁ, নাগপুর মহারাষ্ট্রে অবস্থিত হওয়া সত্ত্বেও। অতএব অমিত শাহ একদিকে বাক্স ভর্তি টাকা, অপরদিকে ইডির ফাইল নিয়ে গিয়েছিলেন এনসিপি থেকে কজনকে ভাঙাতে। অজিত পাওয়ার রাজি হয়ে গেলেন দুটো শর্তে: এক, তাঁকে উপমুখ্যমন্ত্রী করতে হবে; দুই, তাঁর বিরুদ্ধে ইডি-র ছটা কেস তুলে নিতে হবে। অমিত শাহ সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে গেলেন। সরকার দখল করতে গিয়ে অত চুরি-ফুরি নিয়ে মাথা ঘামালে চলে না। আর কে না জানে, একবার বিজেপি-তে যোগদান করলে চোরডাকাতরা সকলেই বশিষ্ঠ মুনি হয়ে যায়। ইডি-কেও দুবার বলতে হল না। অমিতজি বোলতা হ্যায় মতলব ফওরন উসে কর দেনা হ্যায়! অজিত পাওয়ারের মাথার উপর থেকে ইডি খাঁড়া ঝটাফট সরে গেল।
হায় হায়। তার পরই উনি জানালেন, উনি বিজেপি-র দিকে ঢলছেন না। কংগ্রেসের সঙ্গেই থাকছেন।
সারা বিশ্বের সামনে অমিত শাহ এবং ইডি-র সম্মান বিরাট উচ্চতা স্পর্শ করে ফেলল।
ভীমা কোরেগাঁও মামলায় বিচারাধীন অভিযুক্তদের মহারাষ্ট্রের নবনির্বাচিত সরকার মুক্তি দিয়ে দেবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ব্যাপারটা আঁচ করতে পেরে কেন্দ্রীয় সরকার এনআইএ-কে পাঠিয়ে মামলাটা ওদের হাতে তুলে দেয়। ইতিমধ্যে ন্যাশন্যাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট সংশোধন করে রাজ্য পুলিশের এক্তিয়ারে কেন্দ্রের নাক গলানোর পাকা বন্দোবস্ত করা হয়ে গেছে। যে বিলের ভোটাভুটির সময় টিএমসি-র এম-পি-রা বুদ্ধি করে বাইরে নারকেল মুড়ি খেতে বেরিয়ে পড়েছিল। এই সংশোধনের ফলে এখন আর এরকম হস্তক্ষেপ করার সময় রাজ্য সরকারের অনুমতি বা পরামর্শের প্রয়োজন হবে না।
এনআইএ মামলা হাতে তুলে নেবার ফলে অভিযুক্তদের পক্ষে জেলে বিনা বিচারে থাকার বিরাট সুযোগ এসে গেল। মামলা শুরু করার দায় নেই। জামিনও দেওয়া যাবে না। সুপ্রিম কোর্ট একবার মাত্র মিউ মিউ করে জানতে চেয়েছিল, এদের বিচারপর্ব শুরু করতে এত দেরি হচ্ছে কেন? কেন্দ্রীয় সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল মৃদু হেসে জানিয়ে দেন, এত জন আসামীর জন্য চার্জশিট তৈরি করতে সময় তো লাগবেই।
সুপ্রিম কোর্ট আর জানতে চায়নি, তাহলে এদের জামিন দেওয়ার প্রক্রিয়া কেন শুরু হবে না?
আরে, এরা তো অর্ণব গোস্বামী নামক মোদির জুতালেহক সাংবাদিক নয় যে হত্যার মামলা হলেও তিন দিনের মধ্যে জামিনের ব্যবস্থা হয়ে যাবে।
ওদিকে আমেরিকার এক কাগজে খবর বেরিয়েছে, যে অভিযোগের ভিত্তিতে বিজেপি এই মামলা সাজাচ্ছে, তার প্রাথমিক সমস্ত তথ্যগুলিই নাকি মিথ্যা এবং বিজেপি-র আইটি সেলের চারুকলা।
বিচারব্যবস্থাকেও যে কীভাবে মোদি কোম্পানি পকেটে পুরে ফেলছে, তা প্রথম আমাদের নজরে আসে রাফায়েল নথি নিয়ে মামলার সময়। রাফায়েল কেনাকাটায় কারচুপি হয়েছে বলে অভিযোগে যখন সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলছে, সরকারের কাছে ক্রয়ের ইনভয়েস দেখানোর দাবি উঠল, সরকার আদালতকে জানাল, রশিদ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতিরক্ষা দপ্তরের সুরক্ষিত আলমারি থেকে সংশ্লিষ্ট গোপন ফাইল বেরিয়ে গেছে। এরকম ক্ষেত্রে আদালত ডুপ্লিকেট রশিদ চাওয়া তো দূরের কথা, সরকারের মৌখিক বিবৃতিকেই সত্য বলে ঘোষণা করে দিল।
সেই থেকে শুরু হল এক নতুন ধরনের বিচার পর্ব: মোদি সরকারের যে কোনও মোকদ্দমায় আদালত আর রায় দিচ্ছে না, শুধু সায় দিচ্ছে।
এই সায় পদ্ধতিতেই অসমে সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে অসমের বিজেপি সরকার এনআরসি সেরে ফেলল, এবং উনিশ লক্ষ বাঙালিকে (তার মধ্যে চোদ্দ লক্ষই হিন্দু) ডিটেনশন ক্যাম্পে রওনা করিয়ে দিল। হিন্দুদের স্বার্থে বিজেপি লড়ছে লড়বে।
এই সায়দানের প্রক্রিয়াতেই অযোধ্যার বাবরি মসজিদের জমি সর্বোচ্চ আদালত হিন্দু মন্দিরওয়ালাদের হাতে তুলে দিল। কাশ্মিরকে ভাঙার বিরুদ্ধে, ৩৭০ ধারা বাতিলের বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণ করার সময়, দু বছর পরেও, আজও এল না। কেননা, মহামান্য বিচারপতিরা জেনে গেছেন, শ্রীশ্রী নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদি এই সব ব্যাপার নিয়ে এত মামলা মোকদ্দমা পছন্দ করছেন না।
এই সব মামলার সময় যিনি সুপ্রিম কোর্টের প্রধান সায়দাতা বিচারপতি ছিলেন, অবসর গ্রহণ করার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি বিজেপি-র রাজ্যসভার সদস্য বনে গেলেন। কাদের কুলের বউ গো তুমি, কাদের কুলের বউ— প্রশ্ন করার প্রশ্নই ওঠে না।
মুম্বই হাইকোর্ট একটা আশ্চর্যজনক কাণ্ড করে ফেলল ইতিমধ্যে। ফাদার স্টান স্বামীকে এনআইএ ধরেছিল ভীমা কোরেগাঁও মামলায়। আশি বছরের এই বৃদ্ধ পার্কিনসন রোগাক্রান্ত। জেলের ভেতরে জল খাওয়ার জন্য তিনি একটি প্লাস্টিক নলের ব্যবস্থা করে দিতে আবেদন করেছিলেন। মোদি জমানার আগে হলে যেকোনও আদালত নিজেরাই বিবেচনা করে এই আবেদন মঞ্জুর করত বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। কিন্তু এখন জমানা বদল রহা হ্যায়। মুম্বই হাইকোর্ট নিজে থেকে এই কঠিন আবেদনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারল না। তারা এনআইএ-কেই বলল এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়ে আদালতকে জানাতে। এনআইএ কুড়ি দিন সময় চেয়ে নিয়ে প্রচুর মাথা ঘামিয়ে শেষ পর্যন্ত জানাল, এই আবেদন মানা যাবে না। জল খাবার মতো একটা প্লাস্টিকের নলও নাকি জেলের ভিতরে একটা সাংঘাতিক মারণাস্ত্র হয়ে উঠতে পারে।
আর আদালতও কী নমনীয়! সঙ্গে সঙ্গে এনআইএ-র এই পরামর্শে সায় দিয়ে বসল। ক্যুয়ো ভাদিস, ভারতীয় বিচারতন্ত্র!
নির্বাচন কমিশনও যে এখন বিজেপি-রই আর একটি শাখা, যারা বাইরে থেকে বিজেপি-কে সমর্থন করছে, পশ্চিমবাংলার বিগত বিধানসভা নির্বাচনে আমরা তার প্রচুর নিদর্শন দেখেছি। আমি এই কাগজেই কিছু দিন আগে সেই বিষয়ে লিখেছিলাম। কিন্তু সেই পরিষেবা নিষ্ফল কর্মযোগ নয়, গীতা অনুপ্রাণিত “মা ফলেষু কদাচন” মন্ত্রসিক্ত নয়। বরং সেখানে মোদিগীতা অনুযায়ী ব্যবস্থা হচ্ছে সুফলেষু যথাতথা। কমিশনের প্রাক্তন প্রধান অফিসার এপ্রিল মাসে অবসর গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে মে মাসেই গোয়ার রাজ্যপাল পদ পেয়ে গেলেন।
উপসংহার— আসলে সংহার?
তাহলে কী দাঁড়াল? মোদিরাজত্বে সমস্ত স্বশাসিত সরকারি সংস্থার স্বাধীন দল নিরপেক্ষ ভূমিকাকে কোতল করে তাদের বিজেপি-র শাখায় পরিণত করার কাজ চলছে; বিচারব্যবস্থা, যা গণতন্ত্রের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ বলে খ্যাত, এবং ভারতে যা খানিক মেরুদণ্ড প্রদর্শন করেই বিশ্বে সুনাম অর্জন করেছিল, অবসরোত্তর লোভনীয় পদের চার ফেলে তাকেও ধ্বংস করা হচ্ছে। আদালতের রায় পছন্দ না হলে উত্তরপ্রদেশের যোগীসরকার খোলাখুলি তা লঙ্ঘন করে দেখিয়ে দিচ্ছে, তারা বিচারকদের পাত্তা দিতে আগ্রহী নয়। দিল্লি হাইকোর্টের এক বিচারক দাঙ্গাবাজ বিজেপি নেতাকে গ্রেপ্তার করতে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়ায় তাকে রাত দুপুরে চণ্ডীগড়ে বদলির আদেশ ধরিয়ে দেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় রাজ্য সরকারগুলির যতটা গুরুত্ব পাওয়ার কথা তাও পদদলিত করে অবিজেপি রাজ্য সরকারগুলিকে ডাবল ইঞ্জিনের নামে পঙ্গু করে দেওয়ার আয়োজন পরিদৃশ্যমান। এইভাবে মানুষের সমস্ত গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা ও প্রয়োগের পরিসরগুলিকে একটু একটু করে ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এই সমস্ত প্রক্রিয়ায় ভারতে বুর্জোয়া গণতন্ত্রের যতটুকু ছিটেফোঁটা অবশিষ্ট ছিল বিজেপি-র উদ্যোগে তার পুরো সংহারের আয়োজন চলছে। ভারতবাসীকে অবিলম্বে সচেতন হয়ে উঠে বিগত সাত বছরের এই সর্বনাশা ফ্যাসিস্ট প্রবণতার বিরুদ্ধে সর্বশক্তি দিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে। মনে রাখতে হবে, আজ যা প্রবণতা হয়ে দেখা দিয়েছে, বাধা না পেলে আগামী দিনে সেটাই দেশের ভবিতব্য হয়ে উঠবে।