অরুণপ্রকাশ রায়
পূর্ব প্রকাশিতের পর
পঞ্চম পর্ব
আমার সুফি বন্ধু সুমনের কথা এর আগেই বলেছি। তার সঙ্গে সুফি সঙ্গীত ছাড়াও আরও হাজারটা বিষয় নিয়ে আমার আলোচনা হয়। তেমনই এক আলোচনার মধ্যে আমি একদিন ওকে বলেছিলাম, আমার বেতালা হিন্দিটা একটু মেরামত করে দিতে। সেই প্রসঙ্গে অনেক ভেবেচিন্তে ও জানায়, ওর মতে, আমার হিন্দি, উর্দু, পাঞ্জাবি ও ফার্সিতে নাকি কোনও ভুল নেই, শুধুমাত্র ভার্ব আর জেন্ডার নাকি ওভারল্যাপ করে যায় মাঝেমধ্যে। এ হেন কমপ্লিমেন্ট পেয়ে আমি মুহূর্তের জন্য বাক্যহারা হয়ে গিয়ে, তার পরে সামলে নিয়ে শুধোই, “তবে? ভার্ব আর জেন্ডার সামলানোর কী উপায়?” উত্তরে তখন কিছু না-বললেও, পরে সুমন আমাকে বেশ গোটাকয়েক লিঙ্ক পাঠায় সেসব শুনে ভার্ব আর জেন্ডার শোধরানোর জন্য। সবই হিন্দি ও উর্দুর, যেখানে বুল্লে শাহ মাঝেমধ্যেই ঢুকে পড়েন তাঁর ভাষ্য নিয়ে।
বুল্লে শাহ-র কথা লিখতে বসে তাই আজ সুমনের প্রসঙ্গ ফের মনে পড়ে গেল। এদিকে বুল্লে শাহ বললেই তাঁর আইকনিক ‘তেরে ইশ্ক নাচায়া কার থেইয়া থেইয়া’-র প্রসঙ্গ আসবেই। সে গান প্রায়ই গেয়ে ওঠেন কাওয়ালরা, সুযোগ পেলেই, সমস্বরে। ফরিদসাবও তার ব্যতিক্রম নন। কিন্তু, ফরিদ সাবের ডেলিভারি, যাকে বলে ক্লাস অ্যাপার্ট। ৫ মিনিট ৪০ সেকেন্ড-এর পর থেকে পরবর্তী তিন মিনিট শুনে দেখবেন, একেবারে অনবদ্য। কাওয়ালি শোনেন মানে, ধরেই নিচ্ছি আপনি একটু-একটু পাগল (কারণ, সাচ্চা পাগল না-হলে কেউ কাওয়ালির প্রেমে পড়েন না), এবং দায়িত্ব নিয়ে বলছি, ফরিদ সাবের গলায় ‘তেরে ইশ্ক নাচায়া’ শুনলে একেবারে পুরো পাগল হয়ে যাবেন।
তো, যে কথা বলছিলাম। বুল্লে শাহ-কে নিয়ে সুমনের মস্ত পড়াশোনা। ওঁর অনেক কবিতা সে খুঁজেপেতে জোগাড় করেছে। এই প্রসঙ্গে তারই একটা আপনাদের শোনাতে খুব ইচ্ছে করছে…
মেনু পুছেয়াঁ দুনিয়াওয়ালেয়াঁ নে
তেনু কি হয়া এ মারজানি
কি দাসা লোকা ঝালেয়া নু।দুনিয়া সারি ছাড কে তে
ম্যায় রাহ ফকির দে পেয় গাঁইয়া
হরদম যার নু বেখেয়া ম্যায়
বাস যার দি হোকে রেহ গাঁইয়া
বাংলায় এর অক্ষম ভাবানুবাদের চেষ্টা করতে গিয়ে এরকম দাঁড়াল—
প্রশ্ন সবার জগৎজোড়া
কী হল তোর, রে মুখপোড়া
বুঝবে না তা নির্বোধেরারাজপ্রাসাদের লোভ ছেড়ে মন
ফকিরপুরে দিলাম পাড়ি
চোখের তারায় তাঁরই ছবি
তাঁর মনেতেই বসতবাড়ি।…লেখক
শুধু বুল্লে শাহ নিয়েই নয়, সুফি সঙ্গীতের ইতিহাস-ভূগোল-বিজ্ঞান সব সুমনের একেবারে নখদর্পণে। সুফি ভক্তি-পরম্পরায় মীরাবাঈ-এর অবস্থান নিয়ে ও যে গবেষণা করেছে, এখানে তার উল্লেখ না-করলে ওর ওপর অত্যন্ত অবিচার করা হবে। মীরার গান বলতে আমাদের সকলেরই ‘পায়ো জি ম্যায়নে রাম রতন ধন পায়ো’-র কথা মনে আসে। কিন্তু ও বলে, এর বাইরেও আরও অনেক অসাধারণ গান রয়েছে মীরার। উদাহরণ দিতে গিয়ে ও সেদিন বলছিল ‘পগ ঘুংরু বান্ধ মীরা নাচে রে’-র কথা।
আমি হইহই করে উঠলাম, “আরে, সে তো বিখ্যাত গান! কে না শুনেছে!”
ও আমায় থামিয়ে দিয়ে একেবারে ঘনাদার স্টাইলে বলল, “বটেই তো। কিন্তু এ গান রাজার গলায় শুনেছ কি?”
এবার আমার অবাক হওয়ার পালা। “কে রাজা?”
“আরে, তোমাদের কলকাত্তার রাজা। পার্ক সার্কাসের বালু হক্কক লেনের এককালের বাসিন্দা রাজা।”
শুনে আমি তো আকাশ থেকে পড়ি আর কী! বালু হক্কক লেনের রাজা মানে…
“আজ্ঞে, হ্যাঁ। ঠিকই ধরেছ…” ঠোঁটের কোণে ওর ট্রেডমার্ক হাসিটা ঝুলিয়ে সুমন বলল, “বড়ে গুলাম সাহেবের সুপুত্র উস্তাদ মুনাব্বর আলি খাঁ ও তাঁর ছেলে রাজা আলি খাঁর দ্বৈতকণ্ঠে গাওয়া ‘পগ ঘুংরু বান্ধ’ যদি না-শুনে থাকো, তবে ও গান তুমি আসলে শোনোইনি।” বলে, ঠিক সাড়ে সাত সেকেন্ডের মধ্যে ইউটিউব থেকে সে গান বের করে আমায় শুনিয়ে দিল সুমন। সত্যি, আগে সে গান শুনিনি কখনও! মিশ্র কাফি-তে এত মোলায়েম করে গাওয়া সে গান… শুনলেই মনে হয় স্নান করে উঠলাম যেন…
সুমনের কাছ থেকেই পাওয়া মীরাবাঈয়ের আর একটি অসাধারণ সুফি ভজন, যা ওর মতে এখনও কেউ রেকর্ড করেনি, তার ক’টি পংক্তি নীচে রইল…
কাহাঁ কাহাঁ জাউঁ তেরে সাথ কানহাইয়া
বৃন্দাবন কি কুঞ্জ গলিঁ মে গাহে মিলো মেরো হাথ
দুধ মেরো খায়ো মটকিয়া ফোরি লিনো ভুজ ভর সাথ
লপটঝপট মোরি গাগর পাটকি সানভারে সালোনে লোন গত
কবহুঁ না দান লিয়ো মনমোহন সদা গোকুল আত জাত
মীরা কে প্রভু গিরধর নাগর জনম জনম কে নাথ।
এই সুমন একদিকে যেমন জাত গান-পাগল, তেমনই আবার দুঁদে গবেষক ও সম্পাদক। নানা ছলে-বলে-কৌশলে আমায় দিয়ে বারো পর্বের একটি ধারাবাহিক ওর পত্রিকায় লিখিয়ে নিয়েছে, মোল্লা নাসিরুদ্দিনকে নিয়ে। তাতে অবিশ্যি আমার মস্ত লাভ হয়েছে। ‘মডার্ন টেল্স অব মুল্লা নাসিরুদ্দিন’ লিখতে বসে আমাকে খানিকটা বাধ্য হয়েই তৎকালীন তুরস্কে মৌলবি সুফি অর্ডারের সাধনা কীভাবে হত, মায় মৌলানা রুমির কিংবদন্তি শেফ আতিশ বাজ ও তুর্কি পাকশাস্ত্রে তাঁর অবদান নিয়ে পড়াশুনো করতে হয়েছে; এমনকী রুমির কবরে গোলাপ রেখে সেখানকার লোকজনের হাতে রাঁধা টার্কিশ পাঁঠার ঝোল খেয়ে ও দস্তুরমতো গবেষণা করে তা ওদের রেঁধে খাইয়ে পাশমার্ক নিয়ে ফিরতে হয়েছে— মেরাম নামে এক ছোট জায়গায় দু’রাত্তির কাটিয়ে। এমনই ধুরন্ধর সম্পাদক সুমন— দু’মাস না-যেতেই মিহি গলায় তাগাদা দেয়— “তোমার লেখার কিস্তি কিন্তু বাকি পড়ে যাচ্ছে…।” আর তার ভালবাসার দাবি এমনই যে, সেদিনই বসে পড়তে হয় পরের কিস্তি লিখতে। ভালবাসার সঙ্গে অবশ্য খানিক ভয়ও থাকে— বলা তো যায় না, লেখা সময়মতো না-দিলে যদি ফার্সির ভার্ব আর জেন্ডারের বাকি প্যাঁচপয়জারগুলো আমায় না-শিখিয়েই কেটে পড়ে…
সে যাক। যে কথা থেকে এত কথা এসে পড়ল। এর আগে আমরা আলোচনা করেছি, কাওয়াল বাচ্চো কা ঘরানার কী সব দিকপালেরা ছড়িয়ে রয়েছেন পাকিস্তানের করাচিতে, আর ভারতের দিল্লি ও হায়দরাবাদের আনাচে-কানাচে। এরকমই এক পরিবার হল হায়দরাবাদের ওয়ার্সি ব্রাদার্স। নাজির ও নাসির ওয়ার্সি প্রখ্যাত কাওয়াল আজিজ আহমেদ খান ওয়ার্সি-র পৌত্র। আজিজ সাব পদ্মশ্রী পেয়েছিলেন ভারত সরকারের কাছ থেকে— তিনিই বোধহয় এ-দেশের একমাত্র কাওয়ালি সঙ্গীতশিল্পী যিনি এই উপাধি পেয়েছেন। হজরত আমির খুসরোর ‘বহুত কঠিন হ্যায় ডাগর পনঘট কি’ শুনেছি আগেও, কিন্তু ওঁর গলায় শোনার অভিজ্ঞতা সত্যিই বিরল। বিশেষ করে, পাঁচ মিনিটের পর থেকে ‘ইন চুড়িও কি লাজ পিয়া রাখনা’ শুনলে যে কেউ নেচে উঠতে পারে। অল ইন্ডিয়া রেডিও-র আর্কাইভ-এ এইরকমই আরও কত কী হিরেমাণিক যে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে, না-জানলে আন্দাজ করা মুশকিল। আজিজ সাবের গাওয়া ‘ছাপ তিলক সব ছিনি’ শুনেছি ওই একই আর্কাইভ থেকে ২০২০-র মে মাসের আপলোড-এ, সেও এক কথায় অসাধারণ।
নাসির ও নাজির দুই ভাই এগারো বছর বয়সে প্রথম পাবলিক পারফরম্যান্স-এ বসেন। বড়দের কাছ থেকে শুনে শুনে শেখা, এঁদের ঘরানাতে সেসব যথেষ্ট প্রচলিত আছে। একদিন ফোনে নাসিরভাই বলছিলেন, ওঁদের ছোটবেলায় বড়ে গুলাম আলি খাঁ, বিরজু মহারাজজি, আল্লারাখ্খা খাঁ, সবাই বাড়িতে আসতেন, খুব শ্রদ্ধা করতেন ওঁর ঠাকুরদাদাকে, আর ওঁরা এলেই বাড়ির বাতাসে একটা উৎসবের আমেজ চলে আসত কোথা থেকে— সারারাত ধরে চলত গানবাজনা। বাড়ির বড় ঘরে বসে রাত্তিরভোর ওঁদের শুনতে-শুনতেই কবে যে গলায় সুর এসে গিয়েছে, মালুমই পাননি।
নাসিরজি-র কথায়, “দাদাজি এঁদের গান শোনাতেন একের পর এক। আমাদের গাইতে বললে আমরাও বীরদর্পে শুনিয়ে দিতাম যা শিখেছি। একবার আমির খাঁ সাহেব আমাদের গান শুনে যারপরনাই খুশি হয়ে দাদাজিকে বলেছিলেন, ‘ওয়ার্সি সাব, আপনার দুই নাতির গলা ভগবানদত্ত, সুর ও লয়ে সমৃদ্ধ, বড় হয়ে এরা অনেক নাম করবে, আর আপনার বংশের মুখ উজ্জ্বল করবে।’ এঁদের আশীর্বাদ ও ভালবাসার জোরেই আজ যেটুকু নামডাক।”
আপনারা নিশ্চয় নাজির ও নাসির সাবের গানের সঙ্গে পরিচিত আছেন, তবু বলব, এঁদের আরও শুনে দেখুন। ঠকবেন না। সুমন এবার আমির খুসরোর উর্স-এ (মৃত্যুবার্ষিকী, সুফি মতে আরাধ্যের মধ্যে ভক্তের বিলীন হয়ে যাওয়ার দিন) একটা ভার্চুয়াল কনসার্ট আয়োজন করেছিল জুম-এ। এঁরা দুই ভাই অসাধারণ গেয়েছিলেন। সে অনুষ্ঠান ফেসবুকে লাইভ-ও হয়েছিল। ‘আজ টোনা ম্যায় এইসা বানাউঙ্গি’ শুনে দেখবেন কখনও, অপূর্ব।
দ্বিতীয় গানটিও একেবারে সময়োপযোগী, ৮ মিনিট ১৫ সেকেন্ড-এর মাথায় একটা মারাত্মক তারানা আছে, কেউ হঠাৎ করে লাফিয়ে উঠে ‘বসন্ত এসে গেছে, বসন্ত এসে গেছে’ বলে চেঁচালে কিন্তু আমি একেবারেই দায়ী নই, কারণ সুফি কাওয়ালি শুনতে বসে এ ধরনের অনুভূতি একেবারেই অস্বাভাবিক নয়।
সুমন আর আমি ইদানিং একটা পরিকল্পনা করি প্রায়ই। কোনও এক সন্ধ্যায় আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে (ফিজিক্যাল ডিসট্যান্সিং মেনেই) নিজামুদ্দিন দরগায় ওয়ার্সি ভাইয়েদের ডেকে নেব হায়দরাবাদ থেকে, রাহাখরচ দিয়ে। তারপর পরের পর শুনব খুসরো-র কালামগুলি। রাত্তির হয়ে যাবে, সবাই বাড়ি ফেরার আগে হাতে একটা করে বিরিয়ানির প্যাকেট ধরিয়ে দেব, যাতে খিদে পেলেই সবাই খেয়ে নিতে পারেন সঙ্গে সঙ্গে— একটুও দেরি না-করে। নিজামুদ্দিন আউলিয়া বহু রাতে অভুক্ত থাকতেন বলে শোনা যায়। হয়তো বহুদূর থেকে কোনও শিশুর কান্নার শব্দ ভেসে এল— হয়তো সে রাতে খাবার জোটেনি শিশুটির। শিশুটির আর তার মায়ের অসহায়তার কথা ভেবে সে রাতে খাওয়া হল না নিজামের। তাঁর ছেলেবেলায় মাই-সাহিবা ছোট্ট নিজামকে যখনই মৃদু গলায় বলতেন, “আব্বা নিজাম, আজ রাত্তিরে কিন্তু আমরা আল্লাহ-র অতিথি”, ছোট্ট নিজাম বুঝতে পারতেন, মায়ের ভাঁড়ারে সেদিন আটা বাড়ন্ত। পরবর্তীকালে নিজামুদ্দিন বলে গিয়েছেন তাঁর শিষ্যদের, “যখনই তোমার ঘরে কোনও অতিথি আসবেন, তাঁকে স্বাগত জানিয়ে সবার আগে কিছু খাবার তাঁর মুখে তুলে ধরবে, বাকি যা আলাপ-আলোচনা সে সব হবে পরে।”
এরকমই এক রাতে ক্ষুধার্ত ছোট্ট নিজাম ঘুমনোর চেষ্টা করছিলেন, খিদের তাড়নায় ঘুম আসতে চাইছিল না। সে রাতে এক অচেনা প্রতিবেশী দরজা খটখটিয়ে এক বাটি খিচুড়ি দিয়ে গিয়েছিলেন নিজামের হাতে। নিজামুদ্দিন আউলিয়া পরে বলেছিলেন, সেটাই নাকি ছিল তাঁর জীবনের সেরা সুস্বাদু খাবার, সে উপকার কখনও ভোলেননি তিনি শেষদিন পর্যন্ত। সাতশো বছর আগেও নিজামের দোরগোড়া থেকে কেউ অভুক্ত ফিরে যেত না। আজও যায় না।
এই প্রসঙ্গে অভুক্ত রামলালার একটা গল্পও মনে পড়ে যাচ্ছে। সেটাও শোনাই। ২০০৬ সালে একবার ফৈজাবাদ গিয়েছি কী একটা কাজে, সপা-র ডাকসাইটে নেতা চৌধরী অমর সিংহ একটা পেল্লায় তিনতারা হোটেল খুলেছিলেন ওখানে, সেখানে উঠেছি। সে এক অভিজ্ঞতা বটে! টকটকে লালরঙা ঘরের দেয়াল, প্রচণ্ড তেল দিয়ে রাঁধা মুরগির ঝোল— সবকিছুই একেবারে চূড়ান্ত মাত্রার। আদবকায়দাও সেই মাপের! চেক আউট করার সময়ে কর্পোরেট ডিসকাউন্ট দেয়নি দেখে আমি যেই ক্যাশিয়ারকে কড়কেছি, অমনি সে আমার হাতে নগদ টাকা ধরিয়ে দিতে চেয়ে এমন ধাঁতানি খেল ম্যানেজারের কাছে! সে যা-ই হোক, আমার ড্রাইভার তিওয়ারিজি চেয়েছিলেন আমি অযোধ্যার রামমন্দিরটা সে-যাত্রা একবার ওঁর সঙ্গে গিয়ে দেখে আসি। আমারও আপত্তি ছিল না। মন্দিরের পার্কিং লট-এ দাঁড়িয়ে বেল্ট, মানিব্যাগ সব ওঁর জিম্মায় রেখে ভেতরে ঢুকতে যাব, এমন সময় দেখি এক ভদ্রলোক বাইরে দাঁড়িয়ে বিড়বিড় করে কাকে যেন প্রচণ্ড গালি দিচ্ছেন আপন মনে। বলছেন, কী দিনকাল পড়ল, মন্দিরের পুরোহিতরা রামলালাকে সন্ধের ভোগটুকুও দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। আর, মাঝে মাঝেই কপাল চাপড়াচ্ছেন। শুনে, মনটা হঠাৎই দ্রব হয়ে গেল, চোখের সামনে ভেসে উঠল একটি অভুক্ত বালকের ছবি— খালি গা, কোমরে ঘুনসি। আমাদের আবহমানের রামলালা। পার্কিং লট-এ ফিরে তিওয়ারিজিকে বললাম সোজা লখনউয়ের দিকে রওনা হতে।
তার বহু বছর পর নিজামুদ্দিন দরগার জাফরিতে মুখ রেখে এক বৃদ্ধাকে চোখের জল ফেলতে দেখেছিলাম। কাঁদতে কাঁদতে মাত্র দুটো পংক্তি বারবার আবৃত্তি করছিলেন। আমি সেগুলো টুকে নিয়েছিলাম আমার নোটবুকে।
দিল্লি শহর আজ বনি অযোধ্যা, সোয়ে রহে রঘুরাই।
তুম ওড় চাদরিয়া সোয়াত হো, ম্যায় ওড় চুনারিয়া আয়ি…
মাফ করবেন, ভারতবর্ষের এই চিরকালীন চোখের জলের অনুবাদের ভাষা আমার জানা নেই।
(ক্রমশ)
apurbo!!