স্বপন ভট্টাচার্য
প্রাবন্ধিক, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক
সাতই জুন যখন সংবাদমাধ্যমগুলো প্রচার করতে শুরু করল যে প্রধানমন্ত্রী বিকেল পাঁচটায় জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন, তখনই চাইলে বাজি ধরতে পারতাম টিভি ক্যামেরাকে সাক্ষী করে নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা করতে চলেছেন ১৮-৪৪ বছর বয়সীদের জন্য টিকাকরণের দায়িত্ব অতঃপর সরকারই নেবে। জানুয়ারি মাসের ১৬ তারিখে এ দেশে টিকাকরণের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে এটা চতুর্থ দফার সুভাষিতাবলি এবং বলতে বাধা নেই এই প্রথম তিনি কিছু সদর্থক প্রতিক্রিয়া আদায় করতে পেরেছেন। কিন্তু কথা হচ্ছে এই ভোলবদল, তা চাপে পড়েই হোক বা সদিচ্ছার প্রতিফলনই হোক, ঠিক কতটা জনমুখী এবং কতটাই বা প্রয়োগে প্রামাণ্য সত্য?
গত ১৯ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী তাঁর টিকা সংক্রান্ত তৃতীয় দফার ঘোষণায় জানিয়েছিলেন পয়লা মে থেকে ভারতে উৎপাদিত দুটি টিকার ৫০ শতাংশ ক্রয় ও বণ্টনের দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের এবং বাকিটার জন্য কোম্পানি দায়ী নহে। তিনি এও জানিয়ে দিতে ভুললেন না যে, ৪৫ বছর বয়সের ঊর্ধ্বে নাগরিকদের টিকাকরণের দায়িত্বই যা সরকারের, ১৮-৪৪ বছর বয়সীদের জন্য আপনা হাত জগন্নাথ— তারা হয় বেসরকারি হাসপাতাল থেকে নগদ টাকা আদায় দিয়ে টিকা নেবে নতুবা রাজ্য সরকারগুলো নিজেরা টিকা কিনে এই নয়া নিয়মের টিকা কর্মসূচি চালু রাখতে পারে। এর নাম দেওয়া হল ‘লিবারেলাইজড ভ্যাকসিন পলিসি-২০২১’ এবং বোঝাই যাচ্ছিল লিবারেলাইজড বা মুক্ত-বাজারের হাতেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল উৎপাদনের অন্তত অর্ধাংশের বাণিজ্য। বাণিজ্যে বসত লক্ষ্মী— সুতরাং ডোজপ্রতি ৮৫০ টাকা থেকে শুরু করে ২৫০০ টাকা দামে টিকা কিনতে শহুরে বিত্তবানদের সন্তানেরা লাইন দিলেন বেসরকারি ভ্যাকসিন সেন্টারে আর রাজ্য সরকারগুলো নিজেদের কর্মসূচি চালু রাখতে গিয়ে নিজেদের মধ্যে কলহে জড়াল। এর ফলে সেরাম ইনস্টিটিউট বা ভারত বায়োটেকের মত টিকা উৎপাদকেরা অপরিমেয় লাভের সুযোগ পেয়েছিল, প্রাইভেট হাসপাতাল কোথাও কোথাও সীমানার বাইরে টাকা আদায় করতে শুরু করেছিল সার্ভিস চার্জের নামে, কিন্তু কোটি কোটি দিন-আনি-দিন-খাই মানুষের কাছে, বিশেষত গ্রামেগঞ্জে প্রান্তিক মানুষদের কাছে তা অলভ্যই থেকে যাচ্ছিল। নতুনতর ঘোষণাটিতে যা বলা হল তাতে বোঝা যাচ্ছে লাভের সুযোগ সম্পূর্ণ কেড়ে নেওয়া হয়নি। ৫০ শতাংশের জায়গায় আগামী ২১ জুন থেকে সরকার উৎপাদনের ৭৫ শতাংশ নিজেই কিনবে এবং ১৮-ঊর্ধ্ব সমস্ত নাগরিকের টিকাকরণের দায় সরকারই নেবে অতঃপর। বাকি ২৫ শতাংশ যথাপূর্বং প্রাইভেট হাসপাতালে যাবে এবং সম্পন্ন নাগরিকের দল যদি চায় নগদ বিদায়ে আগের মতই তা নিতে পারবে। যদিও সার্ভিস চার্জ ১৫০ টাকায় বেঁধে দেওয়ার একটা ঘোষণা ইতিমধ্যেই হয়েছে। তবু, উৎসাহী এবং সমর্থ যুবকের দল তার চেয়ে বেশি দিয়ে টিকা নিতে অনাগ্রহী হবে, এমনটা জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না। ফলে, মানুষের প্রত্যাশা যে কল্যাণকামী রাষ্ট্রের ভূমিকায় ভারতবর্ষকে দেখতে চায়, তা কেবল অংশত মিটেছে আপাতত, ঘরপোড়া গরুদের দিয়ে এটুকুর বেশি কিছুই বলানো যাচ্ছে না। কথা হল, যতটুকু হয়েছে, সেটাই বা হল কী করে? আসলে আগের দফার ঘোষণায় সরকার এত ভুল এবং এত বড় বড় ভুল করে বসেছিল যে তা দেশের সংবিধান, মৌলিক অধিকার এবং কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের ওপর বিসদৃশ রকমের প্রশ্নচিহ্ন ঝুলিয়ে দিয়েছিল।
প্রশ্নগুলো এরকম:
১) টিকা হল ‘গ্লোবাল পাবলিক গুড’, বাংলায় যাকে বলা যায় ‘বিশ্বজনীন উৎপাদন’, যা অর্থে এবং ব্যাপ্তিতে ‘পাবলিক গুডস’ অপেক্ষা ভিন্নতর। পাবলিক গুডস বা ‘জন-উৎপাদন’ হল অর্থনীতির ভাষায় তেমন পণ্য যা প্রতিযোগিতার আওতায় আসবে না এবং যা থেকে কাউকে বঞ্চিত করা যাবে না। গ্লোবাল পাবলিক গুড কিন্তু এমন উৎপাদন যা নিরাপদ, কার্যকরী এবং একই সঙ্গে বিশ্বব্যাপী সমস্ত মানুষের কাছে সহজে লভ্য বলে বিবেচিত। টিকার ক্ষেত্রে এই শর্ত তখনই পালিত হতে পারে যখন রাষ্ট্র নিজেই টিকাকরণের দায়িত্ব নেবে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের কাছে এটাই প্রত্যাশা করে মানুষ। আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, চিন— এরা সকলেই নিখরচায় প্রতিটি নাগরিকের টিকাকরণ সম্পন্ন করছে। ভারতবর্ষ সে জায়গায় সম্পূর্ণ বিপ্রতীপে হাঁটা শুরু করেছিল।
২) ‘রাইট টু হেলথ’ অর্থাৎ স্বাস্থ্যের অধিকার ভারতের নাগরিকের সংবিধানসম্মত অধিকার এবং বিনামূল্যের টিকা সেই প্রেক্ষিতে নাগরিকের রাইট টু লাইফ বা জীবনের অধিকারের সঙ্গে সাযুজ্য মেনেই সঙ্গত।
৩) টিকা গবেষণার টাকা সে এদেশ বা বিদেশ যেখানেই হোক না কেন, জুগিয়েছে পাবলিক, কল্যাণকামী সংস্থা অথবা দাতাগোষ্ঠী। যেমন, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন যা এদেশে আদর পুনাওয়ালার সেরাম ইনস্টিটিউট তৈরি করছে লাইসেন্স নিয়ে, তা তৈরি হওয়ার গবেষণায় ৯৭ শতাংশ টাকা জুগিয়েছিল পাবলিক এবং অক্সফোর্ড টাকা নিয়েছিল এই শর্তে যে টিকা হবে নন-প্রফিট উৎপাদন। তা পুনাওয়ালা এদেশে সেই ভ্যাকসিনই যে ডোজপ্রতি ১৫০ টাকা লাভে বিক্রি করছে তা সে নিজেই জানিয়েছে গত ৬ এপ্রিল। মোদির ১৯ এপ্রিলের ঘোষণার পরে তা যে বহুলাংশে বেড়েছে অনুমান করা যায়— যেখানে সামান্য লাভও উচিত বিবেচিত হওয়ার কথা নয়। আর ভারত বায়োটেকের কোভ্যাকসিনের গবেষণাই তো আইসিএমআর-এর— এর পেটেন্ট যেকোনও মূল্যেই সরকারের হাতে থাকা উচিত এবং সরকার টিকা বেচে লাভ করছে এমন ঘটনা এই প্রাইভেট-পাবলিক পার্টনারশিপে ঘটে থাকলে তা গর্হিত অপরাধ বলেই বিবেচিত হওয়া উচিত।
৪) ভারতের দারিদ্রসীমার নীচে থাকা বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠী যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরোয় তাদের নিজ খরচে টিকা নিতে বলা মানে আদার ব্যাপারীকে জাহাজ দেখানো। সেক্ষেত্রে প্রকারান্তরে তাদের টিকা নিতে নিরুৎসাহিত করার দায়িত্ব নিয়েছিল সরকার যা বর্তমান সংশোধনীতে কিছুটা শোধরানোর অবকাশ থাকল।
৫) ১৩৮ কোটির দেশে আঠেরো-ঊর্ধ্ব বয়সের জনসংখ্যা ৯৬ কোটির কাছাকাছি। জনপ্রতি দুটি ডোজের হিসেবে চাহিদা ১৯২ কোটি ডোজের। যদি ধরেও নেওয়া যেত যে কেন্দ্রীয় সরকার এদের মধ্যে ত্রিশ কোটি লোককে বিনামূল্যেই দিতে চেয়েছিল টিকা, তা হলেও ১৩২ কোটি ডোজ রাজ্যগুলিকে বাজার থেকেই কিনতে হত যদি তারা নিজেরাই টিকাকরণের দায়িত্ব নিতে চাইত। ৪০০ টাকা ডোজপ্রতি এই ষাট কোটির জন্য যে ৫৩০০০ কোটিরও বেশি খরচ হত তার দায় সম্পূর্ণভাবে রাজ্য সরকারগুলোর ঘাড়ে চাপিয়ে খালাস হতে চাইছিল অচ্ছে দিন-এর সরকার। নতুন ঘোষণায় অন্তত এ দায় থেকে মুক্তি পেয়েছে রাজ্য সরকারগুলি যদিও টিকাকরণ চালিয়ে যেতে তাদের এখনও কেন্দ্রের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে।
বলাই বাহুল্য, এই প্রশ্নগুলোর কোনও সদুত্তর ছিল না কেন্দ্র সরকারের কাছে। অ-বিজেপি-শাসিত রাজ্য সরকারগুলি বারবার প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছে ১লা মে-র আগের অবস্থায় ফিরে যেতে। জনমত ক্রমশ বিরুদ্ধে যাচ্ছিল এবং উত্তরপ্রদেশে নির্বাচন আসন্ন এমন অবস্থায় সামাজিক সার্ভেগুলোতে মোদির জনপ্রিয়তা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছিল। এমতাবস্থায় সুপ্রিম কোর্ট একটি জনস্বার্থ মামলা গ্রহণ করে Distribution of Essential Supplies and Services During Pandemic— অতিমারিকালে অত্যাবশ্যক পণ্য ও পরিষেবা প্রদানের প্রেক্ষিতে।
সর্বোচ্চ আদালতের বিশেষ বেঞ্চে বিচারপতিত্রয় জাস্টিস ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, এল এন রাও এবং এস রবীন্দ্র ভাট সর্বসম্মতিক্রমে যে রায় দেন তাতে মামলা প্রলম্বিত হলে মোদি সরকারের গুরুতর লজ্জার কারণ হতে পারত। দেশের শীর্ষ আদালতকে আমরা ইদানিং এমন ভূমিকায় দেখতে অভ্যস্ত নই। বিচারপতিরা বলেন, দেশের মানুষের সংবিধানসম্মত অধিকার যখন কোভিড-১৯ অতিমারি মোকাবিলায় পিষ্ট হচ্ছে তখন শীর্ষ ন্যায়ালয় ‘সাইলেন্ট স্পেক্টেটর’— নীরব দর্শকের ভূমিকা নিতে পারে না। তাঁরা মোদি-ঘোষিত তথাকথিত লিবারেলাইজড ভ্যাকসিনেশন পলিসিটিকে প্রথম দর্শনেই অবিবেচনাপ্রসূত এবং অযৌক্তিক বলে দেগে দিয়েছিলেন এবং এটি পুনর্বিবেচনার আদেশ দেন। এ গেল ৩১ মে ২০২১-এর কথা। ২ জুন তারিখে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে যে অর্ডার আপলোড করা হল তাতে দেখা গেল স্পেশাল বেঞ্চ বাজেটে টিকাকরণে বরাদ্দ ৩৫০০০ কোটি টাকার খরচের হিসেব চেয়ে বসেছেন। তাছাড়া তাঁরা বিভিন্ন বয়ঃক্রমের জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা, রাজ্যের জন্য ও ইচ্ছুক নাগরিকের জন্য ভিন্ন ভিন্ন দাম এবং সবাইকে কো-উইন পোর্টালে নাম লিখিয়ে টিকার জন্য মনোনীত হওয়ার ব্যবস্থা— পুরোটাকেই প্রায় তুলোধোনা করে ছাড়লেন। বললেন— দেশে কি আপনারা ‘ডিজিট্যাল ডিভাইড’ তৈরি করতে চাইছেন নাকি? এ ব্যাপারে দু সপ্তাহের মধ্যে কেন্দ্রের ব্যাখ্যা চাইলেন মাননীয় বিচারপতিত্রয়। কেন্দ্র একটা এফিডেভিট দাখিল করে বলতে চেয়েছিল পলিসি নির্ণয়ে জুডিসিয়ারির ভূমিকা সামান্যই, সুতরাং কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের ভালো খারাপ যাচাই করা কোর্টের কাজ হয়ে উঠলে তা হবে অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ। বিচারপতিরা তাতে রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করে যে মত ব্যক্ত করেছেন তার সারমর্ম হল— যখন ব্যক্তিস্বাধীনতা ও স্বাতন্ত্র্যে রাষ্ট্র দ্বারা অনভিপ্রেত অনুপ্রবেশ ঘটছে তখন দেশের সংবিধান ভারতের ন্যায়ালয়গুলিকে কেবলমাত্র নীরব দর্শকের ভূমিকায় সীমাবদ্ধ থাকতে বলেনি। স্মরণকালের মধ্যে এত কড়া কথা রাষ্ট্রকে এর আগে শুনতে হয়নি। বস্তুত তাদের এসব শোনার অভ্যাসটাই চলে গেছে। কোভিডকালে যতগুলো বিল পার্লামেন্টকে এড়িয়ে পাশ করিয়ে নেওয়া হয়েছে তার প্রতিটির ক্ষেত্রেই কোর্ট সুও-মোটো মামলা গ্রহণ করতে পারতেন। তা তো হয়ইনি, বরং রামমন্দির প্রসঙ্গে শাসকগোষ্ঠীকে তুষ্ট করার মতো রায় দিয়ে ভূতপূর্ব প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগই রাজ্যসভার আসন অলঙ্কৃত করতে পেরেছেন। এই পটভূমিতে কোর্টের আদেশ— “We direct the Union of India (UoI) to undertake a fresh review of its vaccination policy addressing the concerns raised,”— ভারতরাষ্ট্রকে আদেশ দেওয়া যাইতেছে যে তাহারা টিকাকরণ নীতিটিকে পুনর্বিবেচনা করিয়া (দেশবাসীকে) উদ্বেগমুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করুন— শুনলে বেশ নীতিকথা বলে মনে হয়। ভরসার কথা এই যে সর্বোচ্চ ন্যায়ালয়ের ওপর এই আস্থা ফিরে আসার মতো অন্তত একটা কারণ দেশবাসীর নজরে মান্যতা পেয়েছে এবং তাই বা কম কথা কীসের?
তবে শেষ ভালো যার তার সব ভালো যে হয় না সব সময়, বরং বিপরীতটাই বেশি সত্য প্রতিপন্ন হয় অধিকাংশ সময়ে তাও আমরা জানি। সুতরাং প্রশ্ন যা এখনও থেকে যায় তা হল, ২৫ শতাংশ টিকায় কোম্পানির লাভের রাস্তা রেখেই এই উদারতা। এই পঁচিশ শতাংশ টিকা নাগালে থাকবে তাদেরই যাদের তা কেনার টাকা আছে। সুতরাং ফাটল একটা সেই উন্মুক্ত থেকেই গেল যাতে আমজনতা যে কোনও সময়েই পা পিছলে পড়তে পারেন। বলছি এ কথা এই জন্য যে অন্তত একশো কোটি মানুষের টিকাকরণ প্রয়োজন ধরে নিলে এই বছরের মধ্যে তা সম্পন্ন করতে দেশে টিকা উৎপাদনের যে লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা যায় বাস্তবে উৎপাদনের হার তার ধারেকাছেও নেই। টিকা অপ্রতুল হলে স্বাভাবিকভাবেই ১৮-৪৪ বছর বয়সীদের সরকারি টিকার জন্য প্রতীক্ষা দীর্ঘতর হবে। অথচ এঁদেরই একটা বড় অংশকে যুদ্ধক্ষেত্রে নেমে কাজ করতে হবে। দুর্ভাগ্যের কথা শ্রমিক কৃষক এখানে ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কার বলে বিবেচিত হন না, কিন্তু যিনি কাজের তাগিদে স্থানান্তরে যাবেন, যিনি সেলসের কাজে দিনে একশো সম্ভাব্য গ্রাককের দরজায় ঘুরবেন, যিনি পর্যটনে কাজ করবেন তার হয়ত টিকা না হলে কাজটাই হবে না। এঁরা পকেটের বাইরে গিয়ে টিকার জন্য খরচ করতে বাধ্য হবেন। তা হলে ডিভাইডটা মিটল কোথায়? প্রাইভেট হাসপাতালকে লাগাম পরানোর কথা বলা হয়েছে সম্প্রতি, বলা হয়েছে ১৫০ টাকার বেশি সার্ভিস চার্জ নেওয়া যাবে না, কিন্তু যে অতিদীর্ঘকাল ধরে এ টিকা অভিযান চলবে তাতে অসততার সু্যোগ দেওয়া এবং নেওয়ার লোক যে প্রচুর থাকবে সন্দেহ নেই। এই নজরদারি চলবে কীভাবে? জেনে অবাক হতে হয় যে, ইতিপূর্বে যখন পঞ্চাশ শতাংশ টিকা প্রাইভেট হাসপাতালের হাতে তুলে দেওয়ার নিদান ছিল তখন করে খেয়েছে দেশের মাত্র নটি হাসপাতাল গ্রুপ। তারাই পেয়েছে বেসরকারি কোটার অর্ধেক, বাকিটা দেশের প্রায় তিনশো অন্য হাসপাতালে গেছে। পরিষেবার গল্প এই পর্যন্ত। অতিমারিতে টিকা থেকে প্রাপ্তব্য তাদের লাভের অনুপাত ২০০০ থেকে ৪০০০ শতাংশ বাড়িয়ে দেওয়ার অবকাশ এই নীতি পরিবর্তনের পরেও রয়ে গেল। সুতরাং, যা হয়েছে তা আগের চেয়ে ভালো হয়েছে, কিন্তু যা হয়েছে তা আরও অনেকটাই ভালো হতে পারত, কল্যাণকামী রাষ্ট্রের মুখটি তাতে কিঞ্চিৎ কম ঝাপসা দেখাত হয়তো।