চার নম্বর নিউজডেস্ক
অতিমারির সময়। মারণ জীবাণু। দোসর বীভৎস এক রাজনীতি। কথা না রাখার সময়। প্রতিশ্রুতি ভাঙার সময়। এ এক অদ্ভুত অথচ ভীষণই স্বাভাবিক হয়ে যাওয়া, সয়ে যাওয়া সময়ে কিছু মানুষ অন্য গল্প বলেন। কথা রাখেন…
ধ্রুবল প্যাটেলের কথা বলছিলাম। আমেদাবাদের আনন্দ এলাকার ধ্রবল। পেশায় রঙের কন্ট্রাক্টর। কোভিডের প্রকোপ। ধ্রুবল, স্ত্রী নেহা, ধ্রুবলের বাবা, ছেলে— চারজনেই আক্রান্ত হলেন। একমাত্র ধ্রুবলের মা-র রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছিল। অবশ্য এতে শান্তি আসেনি। কারণ, দ্বিতীয় তরঙ্গ বয়সের গাছপাথর মানেনি। স্রোতের মতো যাকে পেয়েছে কেড়েছে। ধ্রুবল এবং তাঁর বাবা সেরে উঠলেন, ১৫ বছরের কিশোর পুত্র পূর্ব সেরে উঠল, অথচ নেহা, এতদিনের সঙ্গিনী, নেহার শরীর অসুখের তৃতীয় দিনেই সঙ্কটের মুখোমুখি হল। অক্সিজেন শর্টেজ। হাসপাতালের পর হাসপাতাল ঘোরা। বেড নেই। ১২ মে। সকাল ৯.৩৫। শ্বাসবায়ুর জন্য আকুল হয়ে নেহা শেষমেশ চলে গেলেন…
ধাক্কা, শোক, বিস্ময়। এবং সেখান থেকেই উত্তরণের গল্প। ছেলেকে কীভাবে সামলাবেন ধ্রুবল, এসবের চেয়েও তখন মাথায় অন্য চিন্তা। স্বপ্ন। পারিবারিক শেষকৃত্যের পর সিধপুরে মৃত্যু পরবর্তী আচার অনুষ্ঠানে পুরোহিত অদ্ভুত এক কথা বলেছিলেন। যে গাছের কাঠ দিয়ে নেহার চিতা সাজানো হয়েছিল তা তো ধ্রুবলের নিজের লাগানো চারা থেকে বেড়ে ওঠা গাছ নয়, অন্যের গাছ। একধরনের উপহার। সে উপহার ফিরিয়ে দিতে হবে। অন্তত তিনটে চারা পোঁতা। শেষকৃত্য পরবর্তী প্রতিশ্রুতিতে শুধু এটুকুই ছিল। বাকি গল্প যে আরও বড়…
একটা মাস হয়ে গেল নেহা নেই। ধ্রুবল এবং পূর্ব হাতে হাত লাগিয়ে তিনটে চারা বাড়িয়ে সংখ্যাটা দাঁড় করিয়েছেন ৪৫০-তে। নিজের ঘরের বাগান, স্থানীয় এলাকা— বাদ যায়নি কোথাও।
গাছ লাগাতে লাগাতে হাঁফ ধরে। পেশাগত কাজ। ফোনের পর ফোন। অসুস্থ বাবা মা। ছেলের পড়াশুনো। এসবের মাঝেই কখনও একা ধ্রুবল। স্মৃতির ভেতর ওর মুখ। ২০০০ সালে আলাপ। পারিবারিক কিছু সমস্যার জন্য লড়াই চলেছিল ৪ বছর। শেষমেশ ২০০৪-এ বিয়ে। দুজনে মিলে সংসার, বাইরের পৃথিবী। নেহা কিছু না থাকা, না পাওয়া মানুষদের পাশে সবসময় দাঁড়াতেন। সেই নেহার প্রতি হোমেজ এইসব গাছ, সবুজ। সংখ্যাটা বাড়াবেন পিতাপুত্র। নেহা থেকে যাবেন পাতায়, ডালে, সবুজে…
স্থানীয় এক শ্মশান থেকে ছাই নিয়ে হরিদ্বারে গিয়ে ফেলে আসতেন ধ্রুবল। এবার তাঁর সঙ্গে নেহার শরীরাংশ। ছাই। ১৭ বছরের পরিচয়ের চিহ্ন…
এবং সঙ্গে অবশ্যই অক্সিজেন। শ্বাসবায়ু। নেহা পেল না। বাকি পৃথিবী, যতটুকু পায়, পাক বরং…