প্রতীক
সাংবাদিক, স্বাধীন ব্লগার
গো জরা সি বাত পর বরসোঁ কে ইয়ারানে গয়ে
লেকিন ইতনা তো হুয়া কুছ লোগ পহচানে গয়ে।
খাতির গজনভির এই বিষণ্ণ গজল মেহদি হাসানের গলায় একাধিকবার শুনেছি। গত কয়েক বছরে সামাজিক-রাজনৈতিক মতামতের কারণে বন্ধুবিচ্ছেদ হওয়ার অভিজ্ঞতা হয়েছে অনেকেরই। যতবার কারও এই অভিজ্ঞতার কথা শুনি বা নিজের এ অভিজ্ঞতা হয়, ততবার গজলের এই প্রথম পংক্তিদুটো (পরিভাষায় মতলা) মনে পড়ে। কিন্তু এ বছর মার্চ মাসে টের পেলাম, এই পংক্তিগুলোর বেদনা সঠিকভাবে অনুভব করা আসলে আমার কল্পনাবিলাস। এই বেদনা শতকরা একশো ভাগ অনুভব করেন যাঁরা, তাঁদের কথা আমি জানতে পারি না, জানার চেষ্টাও করি না বিশেষ। সামান্য কারণে বহু বছরের বন্ধুত্ব আর রইল না। তা না-থাকুক, কিছু লোককে তো চিনতে পারা গেল। কোন বেদনায় অক্ষম মলমের কাজ করে এই উপলব্ধি, তা স্পষ্ট বুঝতে পারলাম কয়েকমাস আগে।
দেশের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কোনওদিন মুখ না-খোলা ক্রিকেটাররা যখন একযোগে মোদি সরকার-প্রণীত কৃষি আইনের সপক্ষে টুইট করতে শুরু করলেন, তখন এক জায়গায় লিখেছিলাম, ভারতীয় ক্রিকেট দল একসময় সব ভারতীয়ের ছিল, এখন আর নেই। কীভাবে সকলের ছিল, তা বোঝাতে ১৯৯৯ সালের ৩১ জানুয়ারি চিপকে শচীন তেন্ডুলকরের অসাধারণ ১৩৬ রানের ইনিংস দেখার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছিলাম। তখন ক্লাস ইলেভেনে পড়ি, কড়া নিয়মের হোস্টেলে থাকি। আমরা কয়েকজন পাঁচিল টপকে খেলা দেখতে গিয়েছিলাম। লেখায় সেই বন্ধুদের কথাও ছিল। প্রকাশিত লেখাটা তাদের পাঠাতে ইচ্ছে হয়েছিল। পাঠিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “মনে পড়ে?” দেখলাম, সকলেরই সেই দিনটা ছবির মতো মনে আছে। তবে আমাকে নাড়িয়ে দিল এক মুসলমান বন্ধুর উত্তর। সে লিখল, “খুব সুন্দর লেখা। এই একটা ভারত-পাক ম্যাচে আমাকে এক ব্যাচমেট ‘পাকি’ বলে সম্বোধন করেছিল। কলেজজীবনের অনেক স্মৃতির মধ্যে সেইটা আজও ভুলতে পারিনি।”
আমার বন্ধুবিচ্ছেদের অভিজ্ঞতা এর চেয়ে বেদনাদায়ক নিশ্চয়ই নয়। কারণ, মানসিক বিচ্ছেদ ঘটে গিয়ে থাকলেও এরপরেও সেই ব্যাচমেটের সঙ্গে বন্ধুত্বের অভিনয় করে যেতেই হয়েছিল আমার মুসলমান বন্ধুটিকে।
এসব কথা আজ তুলছি কেন? তুলছি, কারণ ইউরো ফাইনালে ইংল্যান্ডের কৃষ্ণাঙ্গ ফুটবলার বুকায়ো সাকা, মার্কাস র্যাশফোর্ড আর জেডন স্যাঞ্চো পেনাল্টি শুটআউটে গোল করতে না-পারার পর যে বর্ণবিদ্বেষী আক্রমণের শিকার হয়েছেন, তার জোরালো প্রতিবাদ দেখতে পাচ্ছি ভারতীয়দের মধ্যে থেকে। তাতে কোনও অন্যায় নেই। বর্ণবিদ্বেষের প্রতিবাদ করাই উচিত, কিন্তু মুশকিল হল, আমাদের প্রতিবাদের মূল সুর “আমরা কিন্তু এরকম নই।” কথাটা যদি সত্যি হত, তা হলে আমার বন্ধুর অভিজ্ঞতা ওরকম হত না। প্রাক-বাবরি ভারতের কথা জানি না, কিন্তু নব্বইয়ের দশকে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের দিন শুধু যে আমার বন্ধুর মতো সাধারণ ক্রিকেটভক্তদেরই অকথা-কুকথা শুনতে হত তা নয়, মুসলমান ক্রিকেটারদের সন্দেহ করাও চলত পুরোদমে।
তখন শারজায় আব্দুল রহমান বুখাতিরের রমরমা। চেতন শর্মার শেষ বলে জাভেদ মিয়াঁদাদের ছক্কার পর থেকে কেবল শারজা নয়, বিশ্বকাপ ছাড়া অন্য যে কোনও মঞ্চে ভারত-পাকিস্তানের খেলায় পাকিস্তান না-জিতলেই অঘটন। সেই দিনগুলোতে আমাদের চোখে ‘জলজ্যান্ত খলনায়ক’ ছিলেন মহম্মদ আজহারউদ্দিন। এমনিতে তাঁর কব্জির মোচড় আর অসামান্য ফিল্ডিং দক্ষতার কারণে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ভক্তকুল বিরাট। কিন্তু পাকিস্তান ম্যাচ মানেই অন্য ব্যাপার। ওই ম্যাচে শচীন সৎভাবেই শূন্য রানে আউট হতে পারেন, দিনটা তাঁর নয় বলে মনোজ প্রভাকর ব্যাটসম্যানের হাতে যথেচ্ছ মার খেতে পারেন, মনঃসংযোগ নষ্ট হয়ে কপিলের হাত থেকে ক্যাচ পড়ে যেতে পারে। কিন্তু আজহার ব্যর্থ হলেই সেটা ‘ইচ্ছাকৃত’ বলে মনে করা হত। আজ এ-কথা বললে অনেকেই বলবেন, ওটা একেবারেই মুসলমান-বিদ্বেষের ব্যাপার নয়। পরে তো সিবিআই তদন্তে প্রমাণ হল যে, আজহার একজন অসাধু ক্রিকেটার। অতএব, “আমরা আন্দাজ করতাম বলেই ওরকম বলতাম”। মুশকিল হল, সিবিআই তদন্তে আজহারের জুয়াড়ি-যোগ প্রমাণিত, তিনি মুসলমান বলে পাকিস্তানকে ম্যাচ ছেড়ে দিতেন এমনটা আদৌ প্রমাণিত হয়নি। তা ছাড়া, সেই সময়ের রথী-মহারথীদের কথাবার্তা যা লিপিবদ্ধ আছে, তা থেকে মোটেই প্রমাণ করা যায় না যে, তাঁরা জানতেন আজহার অসাধু।
ঐতিহাসিক রামচন্দ্র গুহ ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ে তাঁর ‘আ কর্নার অফ আ ফরেন ফিল্ড’ বইয়ে লিখেছেন, একবার আজহারের শতরান এবং ভারতের জয়ের পর খোদ বাল ঠাকরে তাঁকে “জাতীয়তাবাদী মুসলিম” আখ্যা দিয়েছিলেন। শুধু কি তাই? অযোধ্যার রামমন্দির আন্দোলনের হোতা লালকৃষ্ণ আদবানি স্বয়ং ১৯৯৮ সাধারণ নির্বাচনের প্রচারে বেরিয়ে মুসলমান যুবকদের বলেছিলেন, তাঁদের আজহার কিংবা এ আর রহমানের মতো হওয়ার চেষ্টা করা উচিত। সুতরাং এখন “আগেই বলেছি” বললে চিঁড়ে ভিজবে না। আরও বড় কথা হল, যারা আজহারকে সর্বদা সন্দেহ করত, তারা কিন্তু ঘুণাক্ষরেও অজয় জাদেজা বা নয়ন মোঙ্গিয়াকে সন্দেহ করেনি। কেন?
প্রশ্নগুলো সহজ আর উত্তরও তো জানা…
ভারত আজ অবধি বিশ্বকাপে কখনও পাকিস্তানের কাছে হারেনি বলে আমরা বড় জাঁক করে থাকি। প্রথম তিনটে ম্যাচেই কিন্তু অধিনায়ক ছিলেন আজহারউদ্দিন। তিনবারের একবারও তিনি ব্যাট হাতে পুরোপুরি ব্যর্থ হননি। সিডনিতে ১৯৯২ সালে কম রানের ম্যাচে ৩২, বাঙ্গালোরে ১৯৯৬ সালে ২২ বলে ২৭, আর ম্যাঞ্চেস্টারে ১৯৯৯ সালে গুরুত্বপূর্ণ ৫৯ রান করেন। সে যা-ই হোক, দুর্নীতির দায়ে ধরা পড়ে তিনি নির্বাসিত হওয়ার পর যদি মুসলমান ক্রিকেটারদের সন্দেহ করা শেষ হয়ে যেত, তা হলে আর আজ এত কথা উঠত না।
সেই কেলেঙ্কারির পরে সৌরভ গাঙ্গুলির হাতে নতুন করে গড়ে ওঠা ভারতীয় দল দেশের ক্রিকেটের দুটো ধারা একেবারে বদলে দিয়েছিল। এক, বিদেশের মাঠে নির্বিবাদে হেরে যাওয়া; আর দুই, পাকিস্তানের কাছে হারের পর হার। দুটোর কোনওটার পিছনেই ভারতীয় দলের ইসলাম ধর্মাবলম্বী ক্রিকেটারদের অবদান ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়। ২০০৫-’০৬-এর পাকিস্তান সফরে প্রথম টেস্টে করাচিতে ইরফান পাঠানের হ্যাটট্রিক ভোলা যাবে? নাকি তার আগের সফরে চতুর্থ একদিনের ম্যাচে প্রায় তিনশো রান তাড়া করতে নেমে গদ্দাফিতে ১৬২ রানে পাঁচ উইকেট চলে যাওয়ার পর রাহুল দ্রাবিড়ের (অপরাজিত ৭৬) সঙ্গে মহম্মদ কাইফের (৭১) জুটি ভুলতে পারবেন কোনও ক্রিকেটরসিক? দেশ-বিদেশের মাঠ মিলিয়ে ভারতীয় ক্রিকেটের সবচেয়ে অবিশ্বাস্য জয়গুলোর একটা হল লর্ডসে ন্যাটওয়েস্ট ট্রফির ফাইনাল। সেই জয়ের কাণ্ডারীও তো এই কাইফ। আর জাহির খান তো প্রায় প্রতিষ্ঠান হয়ে গেলেন শেষপর্যন্ত। জাভাগল শ্রীনাথ অস্তাচলে গেলেন, আশিস নেহরা উপর্যুপরি চোট-আঘাতের কারণে নিজের প্রতিভার প্রতি সুবিচার করতে পারলেন না। মাঝখান থেকে ভারতীয় বোলিং আক্রমণের নেতা হয়ে উঠলেন জাহির। ভারতের বহু টেস্ট জয়ে তাঁর ঝলমলে ভূমিকা। শ্রীনাথ, নেহরার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বল করে ২০০৩ বিশ্বকাপ প্রায় তুলে দিয়েছিলেন অধিনায়কের হাতে।
এসব ইতিহাসে থেকে যাবে, কিন্তু আমাদের হৃদয় পরিবর্তনে খুব একটা প্রভাব ফেলেছে কি না তা বলা শক্ত। গদ্দাফিতে কাইফের ওই ইনিংস যখন চলছে, তখন আমাদের বাড়িতে বসে আমাদেরই সঙ্গে খেলা দেখছিল মাত্র বারো-তেরো বছরের এক ছেলে। সে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল, “ও পাকিস্তানকে হারতে দেবে না। পাকিস্তান তো ওদেরই টিম।” সেই ছেলেমেয়েরা যে আজ বাবা-মা হয়েছে সে কথা খেয়াল হত, যখন অতিমারির আগে শুনতাম কোনও শিশু স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে বলেছে, “জানো তো বাবা, আমাদের ক্লাসের টিফিনে অমুক মাংস নিয়ে আসে।” যে বাবা-মায়েরা টুইটারে ইরফান পাঠানকে বলেন “গো টু পাকিস্তান”, তাঁদের ছেলেমেয়েদের এরকম আচরণে অবাক হওয়ার কিছু দেখি না।
আমার বন্ধুর ঘটনাটার মতো আমার অভিজ্ঞতাটাকেও স্রেফ একজনের অভিজ্ঞতা বলে উড়িয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু এমন অভিজ্ঞতা যে ঘরে-ঘরে। ওই যে গোড়াতেই বলেছি, আমরা জানতে চাই না বলেই জানতে পারি না। পিউ রিসার্চ সেন্টার-এর সাম্প্রতিক সমীক্ষা যেমন দেখিয়েছে আর কি। আমরা ভারতীয়রা যে যার নিজের খোপে থাকতে পারলেই খুশি। কে কোথায় কোন অবিচারের শিকার হল, তাতে আমাদের কী? সাকা, র্যাশফোর্ড, স্যাঞ্চোর দুঃখে আমাদের কান্নাকে তাই কুম্ভীরাশ্রু না-ভেবে পারছি না।
ওঁদের তিনজনের পিছনে লেগেছে অসভ্য শ্বেতাঙ্গ ইংরেজরা, আবার পক্ষে দাঁড়িয়েছেন শ্বেতাঙ্গ অধিনায়ক হ্যারি কেন। দ্ব্যর্থহীন ভাষায় টুইট করেছেন, এরকম সমর্থক তিনি চান না। কোচ গ্যারেথ সাউথগেটও শ্বেতাঙ্গ। তিনিও এই ট্রোলিং-এর নিন্দা করেছেন। উইদিংটনে র্যাশফোর্ডের মুরাল বিকৃত করা হয়েছিল। নতুন করে তা সাজিয়ে দিয়েছেন শ্বেতাঙ্গরা। দক্ষিণপন্থী এবং শ্বেতাঙ্গ প্রধানমন্ত্রীও ওই তিনজনের পাশে। ইংলিশ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনও বিবৃতি দিয়ে নিন্দা করেছে। অথচ কী অভাগা আমাদের ওয়াসিম জাফর! এই তো সেদিনের ঘটনা। উত্তরাখণ্ডের কিছু ক্রিকেটকর্তার রঞ্জি দলের কোচ জাফরকে পছন্দ হচ্ছিল না। তাই তাঁরা সংবাদমাধ্যমকে বলে দিলেন, জাফর সাম্প্রদায়িক। মুসলমান দেখে দলে সুযোগ দেন, ড্রেসিংরুমে মৌলবী ঢোকান, টিম হাড্লে ‘জয় হনুমান’ বলতে দেন না। জাফর প্রত্যেকটা অভিযোগের যথাযোগ্য জবাব দিয়েছিলেন, কর্তারা প্রত্যুত্তর দিতে পারেননি। কিন্তু যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। অনলাইনে জাফরকে অকথ্য গালিগালাজ করা হয়েছে। মুসলমান মানেই যে বদমাইশ তারই প্রমাণ হিসাবে তুলে ধরা হয়েছে তাঁকে। গোটা সময়টা ভারতের তারকা ক্রিকেটাররা মৌনীবাবা হয়ে ছিলেন। শচীন তেন্ডুলকরের মত মহীরুহ, যিনি আবার জাফরের সঙ্গে কেবল ভারতীয় দল নয়, মুম্বই দলেও খেলেছেন, তিনিও স্পিকটি নট। অমোল মুজুমদার, মনোজ তিওয়ারির মতো দু-একজন ছাড়া সকলেই যেন ধ্যানস্থ ছিলেন। আর বাংলার গৌরব সৌরভের নেতৃত্বাধীন ক্রিকেট বোর্ড তো মহাত্মা গান্ধির তিন বাঁদরের মতো হয়ে গিয়েছিল।
এসব কথা অপছন্দ হলে অনেকে তূণ থেকে ব্রহ্মাস্ত্র ভেবে বার করবেন সেই বাক্য— সাম্প্রদায়িকতা আর বর্ণবিদ্বেষ কি এক জিনিস নাকি? এ নিয়ে একটা সূক্ষ্ম তর্ক হতে পারে বটে, তবে সে-সবে যাচ্ছি না। না হয় বর্ণবিদ্বেষের কথাই হোক। বলুন তো, আমাদের ক্রিকেট বোর্ড বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে কবে কী ব্যবস্থা নিয়েছে? ২০২০ সালের ৮ জুলাই যখন অতিমারির মধ্যে আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট চালু হল, তখন ইংল্যান্ড আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম টেস্টের প্রথম দিন খেলা শুরু হওয়ার আগে দু দলের ক্রিকেটাররা এক হাঁটু মুড়ে মুষ্টিবদ্ধ হাত আকাশের দিকে তুলে বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে প্রতীকী প্রতিবাদ জানান। ততদিনে পৃথিবীর সব খেলার মাঠে ওটা দস্তুর হয়ে গিয়েছে। এই প্রতিবাদের প্রেক্ষাপটে আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবিদ্বেষী পুলিসের হাতে নিহত জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু। ইংল্যান্ডের মাটিতে ওই টেস্ট ম্যাচের প্রায় আড়াই মাস পরে ১৯ সেপ্টেম্বর শুরু হয় ভারতীয় ক্রিকেটের বাৎসরিক মোচ্ছব— আইপিএল। সেখানে কিন্তু ওসব হাঁটু মুড়ে বসা-টসা হয়নি। ২৫ অক্টোবর মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের খেলোয়াড় হার্দিক পান্ডিয়ার যে কোনও কারণেই হোক (হয়তো তাঁর অধিনায়ক কায়রন পোলার্ড বলে) মনে হয় এমনটা করা উচিত, তাই তিনি রাজস্থান রয়ালসের বিরুদ্ধে অর্ধশতরানের পর হাঁটু মুড়ে বসেন। আইপিএল-এর গভর্নিং বডি বা ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড থেকে কোনও নির্দেশ আসেনি কিন্তু।
আচ্ছা বলুন তো, ভারতের সর্বকালের সেরা অধিনায়কদের একজনের হাতে থাকা বোর্ড ইশান্ত শর্মাকে কী শাস্তি দিয়েছে আজ অবধি? ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলন শুরু হওয়ার পর প্রাক্তন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক ড্যারেন স্যামি জানিয়েছিলেন, সানরাইজার্স হায়দরাবাদে একসঙ্গে খেলার সময় ইশান্ত তাঁকে ‘কালু’ বলে ডাকতেন। মানে জিজ্ঞেস করায় বলেছিলেন, ওটা নাকি আদরের ডাক। যদিও পরে স্যামি জানতে পেরেছিলেন, ওটা তাঁর চামড়ার রং নিয়ে ব্যঙ্গ। অভিযোগটা যে মিথ্যে নয় তার প্রমাণ হিসাবে পাওয়া গিয়েছিল ইশান্তের ইনস্টাগ্রাম পোস্ট। সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করা ছবিতেও ইশান্ত স্যামিকে ‘কালু’ বলেই উল্লেখ করেছিলেন। ইশান্ত এরপর স্যামির কাছে ব্যক্তিগতভাবে ক্ষমা চেয়ে নেন, কিন্তু বোর্ড কী ব্যবস্থা নিয়েছিল কেউ জানেন? ভারতের হয়ে একসময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা অভিনব মুকুন্দ আর দোদ্দা গণেশও সেইসময় বলেছিলেন, খেলোয়াড় জীবনে গায়ের রং নিয়ে তাঁদের কটুকাটব্য হজম করতে হয়েছে। তারকাদের কেউ দুঃখপ্রকাশ করেছেন তার জন্য? বোর্ড দুঃখপ্রকাশ করেছে? শুধু তো কয়েকটা ভাল শব্দ। তা-ও খরচ করা যায়নি এই মানুষগুলোর জন্য! আজ যেমন সাকা, র্যাশফোর্ড, স্যাঞ্চোর জন্য ইংরেজদের বর্ণবিদ্বেষী বলে নিন্দা করছেন; সেদিন মুখে কুলুপ এঁটে থাকা বোর্ড আর তারকাদের একইরকম নিন্দা করেছিলেন?
অবশ্য এসব প্রশ্ন অবান্তর। এ দেশের মাটি বড়ই উদার। এখানে “কালো মেয়ের পায়ের তলায় দেখে যা আলোর নাচন” জনপ্রিয় হয়, আবার ফেয়ার অ্যান্ড লাভলিও রমরমিয়ে বিক্রি হয়।