দলীয় স্লোগান হিসেবে ‘জয় শ্রীরাম’ সংবিধান বিরোধী

বর্ণালী মুখার্জি

 



রাজনৈতিক ও গণ-আন্দোলনের কর্মী

 

 

 

মোহন ভাগবত, নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ বা আদিত্যনাথ যোগী, কারও মুখে হিন্দু ধর্ম, হিন্দু ধর্মের মাহাত্ম্য নিয়ে প্রচার কখনও শোনা যায় না কেন? হিন্দুত্ব নিয়ে তাদের ব্যাখ্যা কেউ কোনওদিন কেন শোনেনি? এমনকি তাদের নেতা সাভারকার ১৯২৬ সালে ‘হিন্দুত্ব’ নামে যে বইটা লিখেছিলেন সেখানেও হিন্দু ধর্ম সম্পর্কে কিছুই নেই। হিন্দু ধর্ম নিয়ে লেখার অর্থ ধর্মের ইতিহাস নিয়ে লেখা। বেদ, বেদান্ত নিয়ে লেখা। শঙ্করাচার্য কী বলেছিলেন? বা গুরু বৃহস্পতি অন্যদিকে কণাদই বা কী বলেছিলেন, তা নিয়ে আলোচনা করা। হিন্দু ধর্মের যে ছটা ভাগ তা নিয়ে লেখা। গীতার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ হাজির করা। ঈশ্বরের খোঁজ করার উপায় হিসেবে হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন শাখাপ্রশাখার মধ্য মিল, অমিল নিয়ে লেখা। জ্ঞানের মধ্য দিয়ে পরমাত্মার সাথে আত্মার যোগাযোগ ঘটবে নাকি প্রেমের মধ্য দিয়ে মানুষের মুক্তি হবে, তা খোঁজা। না, সেইসব পথ মাড়াননি সাভারকার। তিনি স্রেফ ভারতের ইতিহাসের এক বিচিত্র ব্যাখ্যা করেছেন। ইতিহাসবিদ হিসেবে যা করলে ইতিহাসমহলে পাত্তা পেতেন না। তাই ধর্মীয় গ্রন্থের নামে তিনি টিভি সিরিয়ালের চিত্রনাট্য লিখে গেছেন পাতার পর পাতা। রোমহর্ষক সেই সব ইতিহাস। বৌদ্ধরা কেন খারাপ, মুসলিমরা কেন আরও খারাপ তা লিখে গেছেন। কেন তারা আসলে ভারতীয় নয় তা নিয়ে গল্প করেছেন। অথচ হিন্দু ধর্ম নিয়ে কিছু নেই। সাভারকার স্বীকার করেছেন যে হিন্দুত্ব কতটা উদার, হিন্দুত্বের মধ্যে কতরকম বৈচিত্র আছে, সেসব দেখা তাঁদের কাজ নয়। তাঁদের কাজ একটা রাজনৈতিক কাঠামো গড়ে তোলা, যার নাম হবে হিন্দু রাষ্ট্র। তাই ইংরেজদের তাড়ানোর দরকার নেই। কারণ মুসলিমদের রাজত্ব অবসান করে ইংরেজরা এদেশে এসেছে।

আসলে বিজেপি-আরএসএসের মুখে আমরা হিন্দুত্বের নামে যা শুনি তা হল মুসলিম বিদ্বেষ। যে কারণে সাভারকারের উত্তরসূরি নরেন্দ্র মোদি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন অন্তরের আবেগ দিয়ে। ট্রাম্পও যে তাঁদেরই মত হিন্দু, তাঁদেরই মত মুসলমান বিদ্বেষী। সে তিনি গরুর মাংস খেলেও ট্রাম্প বিজেপিদের মনের মানুষ। ইজরায়েলের রাষ্ট্রপ্রধানের ক্ষেত্রেও একই কথা সত্য, তারাও যে মুসলিম বিরোধী। ফলে বিজেপি হিন্দুত্ববাদী আখ্যা পাওয়ার ‘যোগ্য’ কি না তা পর্যালোচনা করার সময় এসেছে।

তবে হিন্দুত্বের কথা তাঁদের মনে যে পড়ে না তা নয়। পড়ে তখনই যখন ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান নিয়ে সমাজে প্রশ্ন ওঠে। এই স্লোগান নিয়ে ভারতে রাজনীতি করা যায় না, তা সংবিধান বিরোধী, এই আওয়াজ তুললেই আরএসএস-এর লোকজন হঠাৎ ধার্মিক হয়ে ওঠেন। হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসী হয়ে ওঠেন এবং নিজেদের সাধু সাজিয়ে সংবিধানের ২৫ নম্বর ধারা দেখিয়ে দেন। অর্থাৎ বলার চেষ্টা করেন যে যেহেতু ভারতে প্রতিটা ব্যক্তির ধর্মাচরণের স্বাধীনতা আছে, অতএব ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান তোলা নাকি তাঁদের মতো ধর্মবিশ্বাসী দলের অধিকার। বুঝতে অসুবিধা হয় না, ধর্মবিশ্বাসের যুক্তি তাঁদের প্রয়োজন হয় একমাত্র ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগানকে টিকিয়ে রাখার জন্য। আর ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান টিকিয়ে রাখার দরকার হয় কারণ এটাই তাদের ফ্যাসিবাদ কায়েম করার হাতিয়ার, এই স্লোগান হিটলারের ‘হাইল হিটলার’ স্লোগানের সমদোষ-সম্পন্ন। এই স্লোগান দিয়েই তাঁরা ঘৃণা ছড়ায়, দাঙ্গা করে।

বিজেপির যুদ্ধবাজদের স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়ার সময় হয়েছে যে কোনও কালেই তাদের দল হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসী ছিল না। আরএসএস যতই গোপন করার চেষ্টা করুক, এখন সকলেই জানে যে বিজেপি দলটির জন্ম ১৯৮০ সালে অথচ দলের ম্যানিফেস্টোতে ‘হিন্দুত্ব’ শব্দটা ঢুকেছে ২০ বছরেরও পরে। এর মাঝে দলে বিতর্ক হয়েছে, কিন্তু নেতারা সরাসরি এই শব্দ ঢোকানোর প্রস্তাব বাতিল করেছে। এ কেমন বিশ্বাস!!? দলের যেটি বিশ্বাস সেটি এত দেরি করে সংবিধানে প্রবেশ করানো হল!! রাজনৈতিক দলের নীতি বা বিশ্বাস কখনও এত দেরি করে প্রবেশ করে?!! কম্যুনিস্ট দলের বিশ্বাস মার্ক্সবাদ, জন্মমুহূর্ত থেকেই দলের ম্যানিফেস্টোতে থাকে। আসলে ক্ষমতায় যাওয়ার কৌশল কেমন হবে তা সম্মেলনের মধ্য দিয়ে বদলায়। স্থান কাল পাত্র অনুযায়ী নতুন কিছু ম্যানিফেস্টোতে প্রবেশ করে বা বাতিল হয়। ফলে বিজেপি যে তাদের ‘বিশ্বাসের’ হিন্দুত্ব শব্দটা এত দেরি করে প্রবেশ করিয়েছে তার কারণ আসলে এটা ওদের বিশ্বাস নয়, শুধুই কৌশল। ক্ষমতায় যাওয়ার কৌশল।

তৃতীয়ত তাঁরা আর একটি বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। দলের বা যে কোনও গোষ্ঠীর ধর্মাচরণ করার নিয়ম আর ব্যক্তির ধর্মাচরণ এক নয় সংবিধান অনুসারে।

ভারতের সংবিধান অনুযায়ী ধর্মবিশ্বাসের দুই প্রকার। এক ব্যক্তির, এবং দুই গোষ্ঠীর (মন্দির, মসজিদ, গির্জা, গুরুদ্বারা, রামকৃষ্ণ মিশন গোত্রীয়)। দলকে যদি গোষ্ঠী ধরা হয় তবে গোষ্ঠীর অধিকার আর ব্যক্তির অধিকার এক নয়। ধর্মাচরণের অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে সংবিধানে অনেকগুলি ধারা উপধারা আছে। মেকি হিন্দুত্ববাদীরা ২৫ নম্বর ধারার উল্লেখ করলেও কখনওই বাকি ধারাগুলি নিয়ে কিছু বলে না। ২৬, ২৭, ২৮, ২৯, ৩০ ধারা এবং সর্বোচ্চ আদালতে ধর্মীয় অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে বিপুল সংখ্যক মামলা ও রায়ের মধ্য দিয়ে কোন বার্তা স্পষ্ট হচ্ছে, সংবিধানের ব্যাখ্যা কেমন হছে তা উল্লেখ করে না আরএসএস। ভারতের সংবিধান ব্যক্তির ধর্মাচরণের অধিকার যেমন নির্দিষ্ট করেছে, তেমনই একটি ধর্মীয় গোষ্টীর অধিকারে সীমা টেনেছে। আবার ব্যক্তি এবং গোষ্ঠী, উভয়কেই যথারীতি আইন প্রণয়নকারীদের অধীনে রেখেছে ২৬-এর ঘ উপধারার সাহায্যে। ব্যক্তির ধর্মাচরণের অধিকার দিচ্ছে ২৫ নম্বর ধারা, আবার ধর্মাচরণের অধিকারের নামে যথেচ্ছাচার করতে দিচ্ছে না আমাদের সংবিধান।

ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর অস্তিত্বকে পৃথক করে সংবিধান এক বিরাট ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছে। ধর্মনিরপেক্ষতা ব্যক্তির সর্বোচ্চ অধিকার সুনিশ্চিত করেছে। কিন্তু ধর্ম যখন একটি সামূহিক-সংগঠিত-গোষ্ঠী চেহারা নেয়, যখন তার হিংস্র চেহারা মানবসভ্যতা দেখেছে। ধর্মযুদ্ধের নামে বর্বর ক্ষমতার আস্ফালন ও লক্ষ মানুষের মৃত্যু দেখেছে। তাই সংবিধান ব্যক্তির ধর্মাচরণকে যতটা খোলা হাতে প্রশ্রয় দিয়েছে তা দেয়নি গোষ্ঠীকে। ধর্মীয় গোষ্ঠী ও ব্যক্তির মধ্যে যদি ধর্মাচরণকে কেন্দ্র করে কোনও বিরোধ বাধে তবে গোষ্ঠীকেই হারতে হবে। সর্বোচ্চ আদালতের বিভিন্ন মামলার রায় সংবিধানের সেইরকম ব্যাখ্যাই করেছে।

একটি গুরুত্বপূর্ণ রায় হচ্ছে, দরগা কমিটি আজমির-এর সঙ্গে সৈয়দ হোসেন মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায়। এই মামলার রায়ে বলা হচ্ছে, যে সমস্ত নিয়মাবলি একটি ধর্মের জন্য অপরিহার্য তার বাইরে কোনও প্রতিষ্ঠান স্বাধিকারের নামে মনের মাধুরী মিশিয়ে নিয়ম বানাতে পারবে না। আদালত ২৬-এর গ ও ঘ উপধারার উল্লেখ করেছে। অপরিহার্যতা প্রমাণ করতে প্রতিষ্ঠানকে প্রামাণ্য দলিল দস্তাবেজ পেশ করতে হবে। হিন্দু ধর্মে যেটা বেশ কঠিন। বেদ গীতা মহাভারত রামায়ণ প্রত্যেকটার মধ্যেই হাজার রকম মত রয়েছে। একটি কোরান বা একটি বাইবেল দিয়ে প্রমাণ করা যাবে না হিন্দু ধর্মের ক্ষেত্রে। আরও দুটো খুব গুরুত্বপূর্ণ মামলা ছিল পানাচাঁদ গান্ধি বনাম বোম্বে স্টেট এবং খাজা মিয়া ওয়াকফ এস্টেট বনাম মাদ্রাস স্টেট। মন্দির মসজিদের সম্পত্তি সরকার চাইলে অধিগ্রহণ করতে পারে সম্পত্তি যদি সরকারের আইনবহির্ভূত হয়। সুতরাং রায় অনুযায়ী একজন তিরুপতিভক্তকে বাড়িতে পুজো করতে বলে তিরুপতি মন্দিরের সম্পত্তি ক্রোক করে নিতে পারে সরকার। সবচেয়ে বড় কথা সংবিধান জুড়ে হিন্দু ধর্ম আর অন্যান্য সংখ্যালঘু ধর্মকে একাসনে বসানো হয়নি। হিন্দুধর্মের সংস্কারকে মান্যতা দেওয়া হয়েছে। সুতরাং কট্টরপন্থাকে অবলম্বন করার অধিকার কোনও ব্যক্তিকেও দেওয়া হয়নি।

এগুলি থেকে দুটি জিনিস প্রমাণিত হচ্ছে। এক, ব্যক্তি আর গোষ্ঠী বা দলের ধর্মবিশ্বাস এক জিনিস নয়। দুই, আইনকে, আইনপ্রণেতাকে ব্যক্তি এবং ধর্মীয় গোষ্ঠীর ঊর্ধ্বে থাকতে হবে, সংস্কারেরও ঊর্ধ্বে হতে হবে। অতএব কোনও একটি ধর্মীয় মত আইনপ্রণেতা কখনওই বহন করতে পারে না। তবে এসব কিছুই বিজেপির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। কারণ তাদের দলের কোনও ধর্মবিশ্বাসই নেই, যা আগেই আলোচিত হয়েছে।

তাছাড়া বোম্মাই মামলার রায় সকলেরই জানা। রাজনীতিকে ধর্মের থেকে বিচ্ছিন্ন করাকেই ধর্মনিরপেক্ষতা বলেছে সর্বোচ্চ আদালত। রায় বলছে যে ২৭ নম্বর ধারার মধ্য দিয়ে সংবিধান জানিয়েছে যে রাষ্ট্র তার কোষাগার কখনওই কোনও ধর্মের প্রচারে ব্যবহার করবে না। যার অর্থ একটাই, রাষ্ট্রের সাথে ধর্মের সম্পর্ক থাকবে না। কারণ পুঁজিবাদে যে কোনও সম্পর্কের প্রথম শর্তই হল টাকা।

ভারতের এনসিইআরটি সরকারি সিলেবাসের ক্লাস সেভেন এবং ক্লাস এইটের পাঠক্রম বলছে যে একদিকে ধর্মনিরপেক্ষতা মানে হল সরকারের সঙ্গে ধর্মের কোনও সম্পর্ক থাকবে না। ধর্ম ব্যক্তিগত। কিন্তু আবার এখানে সংখ্যালঘুদের জন্য সরকারি সুরক্ষার ব্যবস্থা না করলে তাদের ব্যক্তিগত স্তরে ধর্মাচরণের অধিকারটুকু হাতছাড়া হবে। স্কুল পাঠক্রম স্বীকার করছে যে সংখ্যালঘু মানে শুধু হিন্দুদের সাপেক্ষে মুসলমান নয়। হিন্দুদের মধ্যেও যারা সংখ্যালঘু তাদের ব্যক্তিগত ধর্ম অধর্ম আচরণের নিরবচ্ছিন্ন স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ রাখতে হলেও আগ্রাসনকারী শক্তির হাত থেকে বাঁচাতে হবে সরকারকে। বৈষ্ণবদের অধিকার রক্ষা করতে হবে শিবভক্তদের থেকে। রামভক্ত হিন্দুদের থেকে রক্ষা করতে হবে রাবণভক্ত হিন্দুদের অধিকার।

উপরন্তু আমরা দেশভাগের মধ্য দিয়ে গেছি। এবং দেশভাগের জন্য মূলত দায়ী আরএসএস ও হিন্দু মহাসভা। আমাদেরকে দেখানোর চেষ্টা করা হয় দেশ ভাগ হওয়ার ফলে দাঙ্গা হয়েছে। কিন্তু সেটা অর্ধসত্য। আসলে দাঙ্গার মধ্য দিয়ে দেশ ভাগ হয়েছে। প্রতিটা পাড়ায়, প্রতিটা গ্রামে, প্রতিটা শহরে একসঙ্গে হিন্দু-মুসলমান থাকতেন। ফলে দ্বিজাতিতত্ত্ব বাস্তবে প্রয়োগ করা অত সহজ ছিল না। তার জন্য প্রয়োজন ছিল দেশভাগের আগে কিছু দাঙ্গা। দাঙ্গার ভয়ে মুসলমানরা হিন্দু পাড়া ছেড়ে মুসলিম পাড়ায় গেছে। হিন্দুরা যেখানে হিন্দু বেশি সেখানে চলে এসেছে। বাংলায়, পাঞ্জাবে দুক্ষেত্রেই সেটা সত্যি। এটা হওয়ার ফলে দেশভাগের একটা রিহার্সাল হয়ে গেছিল। দেশভাগের কারিগরদের উত্তরসূরি আজকের বিজেপি। একটি বিভাজনের মধ্য দিয়ে তারা সন্তুষ্ট নয়। আজও তারা দেশকে টুকরো টুকরো করতে প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। ‘জয় শ্রীরাম’, সেই বিভাজনের স্লোগান। বিচ্ছিন্নতাবাদী, সন্ত্রাসবাদী স্লোগান।

সবচেয়ে মজার কথা হল, হিন্দুত্ব তাঁদের কাছে ছেলেখেলা। তাই যখন যেমন প্রয়োজন তখন তেমন তার ব্যাখ্যা তাঁরা দেন। কখনও বলেন এটা ধর্ম নয়, জাতীয়তাবাদ। কখনও বলেন মুসলিমরাও হিন্দু। কখনও আবার বলেন এটা একটা সংস্কৃতি। কখনও বলেন দলিতরাও হিন্দু, কখনও আবার দলিত হত্যা করেন। তাই কেউ যদি মনে করেন মুসলিম বিদ্বেষটাও তাঁদের আদর্শ, সেটাও সত্য নয়। শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী, তাঁদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, ফজলুল হকের মন্ত্রিসভায় মহানন্দে মন্ত্রী হলেন শুধু তাই নয়, যখন সকল রাজ্য থেকেই মন্ত্রীরা পদত্যাগ করছেন, তিনি ভয়ানক আপত্তি করেছেন। মন্ত্রী হয়ে তিনি এতটাই সন্তুষ্ট যে ১৯৩৭ সালের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গঠিত আঞ্চলিক সরকারগুলিকেই তিনি স্বাধীনতার প্রকাশ হিসেবে দেখছেন। আবার দেখুন, সাভারকারের হিন্দু মহাসভা মুসলিম লিগের সঙ্গে জোট সরকার গঠন করেছিল সিন্ধু প্রদেশে। সেই সরকারই প্রথম দ্বিজাতিতত্ত্বের আইন গ্রহণ করেছিল। আবার কিছুদিন আগে নরেন্দ্র মোদি পিডিপির সঙ্গে জোট করেছিলেন জম্মু কাশ্মিরে, কিছুদিন আগেই।

সুতরাং একদিকে তাঁদের মুসলিম বিদ্বেষেও যেমন ভেজাল আছে, তেমনই হিন্দুত্ব নিয়ে ব্যবসার সীমাপরিসীমা নেই। এমনকি শ্রীরামচন্দ্রকে নিয়ে তামাশা করতেও তাঁরা পিছুপা হননি। রাম মন্দির তৈরির প্রক্রিয়াতে শ্রীরামকে জনমানসে হেয় প্রতিপন্ন করে ছেড়েছেন তাঁরা। রামচন্দ্রকে দুই পুরোহিতের সঙ্গে প্রতিদিন পাঠানো হল সর্বোচ্চ আদালতে। খোকা রাম বা রামলালা করলেন মামলা! আমরা জানি ঈশ্বরের শুরু বা শেষ হয় না। অন্তত হিন্দু সন্ন্যাসীরা আমাদের তেমনই শিখিয়েছেন। কিন্তু অমুক স্থানে, তমুক নির্দিষ্ট কোণেই রামের জন্ম নিয়ে কেচ্ছা চলল, এর ফলে ঈশ্বরের মান যে বাড়েনি, তা বলাই বাহুল্য।

এছাড়া সাধারণ বুদ্ধিতে আমরা দেখতেই পাই যে হিন্দু কৃষকদের গুলি করে মারা হয়। দেখতেই পাই যে নরেন্দ্র মোদি আদৌ যুধিষ্ঠির বা রামের ভক্ত নন। যুধিষ্ঠিরকে মাত্র একবার সত্য গোপন করে নরক দর্শন করতে হয়েছিল। নরেন্দ্র মোদি নরক দর্শনের ভয় পান না, অজস্র মিথ্যা কথা বলেন। তিনি প্রজাবৎসল রাজা রাম হতেও চেষ্টা করেন না। রামের মত প্রতিশ্রুতি রক্ষার জন্যও আপ্রাণ চেষ্টা করেন না। বরং প্রতিশ্রুতিকে বলেন জুমলা। এক কথায় বললে, ধর্মের জন্য তাঁরা পার্টি করেন না। করেন টাকার লোভে, সুযোগসুবিধা পেতে, বিলাসবহুল জীবন ভোগ করতে, লাম্পট্য করতে, যথেচ্ছ দুর্নীতি করতে। তাঁদের আদর্শ কীচক। তাঁদের প্রকৃত স্লোগান হওয়া উচিত ‘জয় শ্রী কীচক’।

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4879 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...