হিয়া মুখার্জি
উদীয়মান সূর্যের দেশ হল জাপান। এই ছোট্ট দ্বীপপুঞ্জটি প্রশান্ত মহাসাগরের তীরে অবস্থিত। ভূমিকম্পপ্রবণ জাপানের কথা ভাবলেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে সেই সমস্ত ভয়ঙ্কর ইতিহাসের স্মৃতির কথা, কীভাবে আমেরিকা ১৯৪৫ সালে ৬ ও ৯ আগস্ট জাপানের হনশু দ্বীপের হিরোশিমা শহর ও কিউশিউ দ্বীপের নাগাসাকি শহরে একের পর এক পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করে এই ছোট্ট দেশটাকে ও দেশের নিরীহ মানুষজনকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়। জাপানের এই হিরোশিমা ও নাগাসাকির ভয়াবহ ইতিহাসকে কেন্দ্র করে কিংবা এই পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের ফলে সেখানকার সাধারণ মানুষের জীবনের ওপরে ঠিক কী প্রভাব ফেলেছিল এবং কত নিরীহ মানুষজনকে তাঁদের প্রাণ বিসর্জন দিতে হয়েছিল; তাছাড়াও এখনও সেই পারমাণবিক বোমার দ্বারা আক্রান্ত ব্যক্তিরা যাঁরা কিনা হিবাকুশা নামে পরিচিত তাঁরা ঠিক কীভাবে এই ২১ শতকে দাঁড়িয়ে তাঁদের দৈনন্দিন জীবনযাপন করছেন; সেই সময়ে ঘটে যাওয়া ঘটনা সম্বন্ধে তাঁরা কী মত পোষণ করছেন; সেই ঘটনার স্মৃতি সম্বন্ধে তাঁদের কতটুকু মনে আছে— ইত্যাদি বিষয়ে আজও সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক নানান দৃষ্টিকোণ থেকে গভীরভাবে অনুসন্ধান, বিচার ও বিশ্লেষণ করবার জন্য শুধুমাত্র জাপানি গবেষকরাই নন, অজস্র দেশের বহু গবেষকরা জাপানে এসে গবেষণা করে নানান অজানা তথ্যকে নিয়মিতভাবে আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। এর ফলস্বরূপ আমরা পূর্ব এশিয়ার এই ছোট্ট দেশটির হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে ঘটে যাওয়া ইতিহাস সম্বন্ধে বেশ ভালোরকমভাবে জানতে পারি। কিন্তু জাপানি মানুষদের পুরাতনকাল থেকে চলে আসা নিজস্ব সংস্কৃতি, আচার ও অনুষ্ঠান, ইত্যাদি সম্বন্ধে আমরা খুব একটা পরিচিত নই বললেই চলে।
জাপানের এই হিরোশিমা ও নাগাসাকির ইতিহাস জানার প্রতি আমরা এতটাই আগ্রহ প্রকাশ করি যে এই ইতিহাস ব্যতীত যে জাপানিদের জন্মানোর সময়কাল থেকে বিবাহ, আবার বিবাহ থেকে মৃত্যুকাল পর্যন্ত জীবনের নানান পর্যায়ে কী ধরনের আচার, অনুষ্ঠান, সংস্কৃতি, প্রথা ও রীতিনীতি যুগের পর যুগ ধরে পালিত হয়ে আসছে সেগুলি সম্বন্ধে আমরা আলাদা করে কিছুই জানতে পারি না। জাপানের মতন এক আধুনিক দেশে একটা শিশু জন্মানোকে কেন্দ্র করে আজও সেখানকার মানুষেরা ঠিক কী ধরনের প্রথা ও রীতিনীতি পালন করে থাকেন, তাঁরা সেই রীতিনীতিগুলিকে আজও, বিশেষ করে এই ২১ শতকে দাঁড়িয়েও, পালন করাটাকে কেন এত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন, একটা শিশু যাতে সুস্থভাবে জন্মাতে পারে তার জন্য ঠিক কী ধরনের রীতিনীতিগুলিকে পালন করে থাকেন, সেই রীতিনীতিগুলির তাৎপর্য কিংবা বিশেষত্বই বা কী, কখন কীভাবে এই রীতিনীতিগুলিকে পালন করে থাকেন, ইত্যাদি বিষয়ে যে গবেষণা হয়নি তা নয়। বরং বলা ভালো যে বিদেশি গবেষকদের তুলনায় জাপানি গবেষকরা দীর্ঘকাল ধরে জাপানে শিশুজন্মকে কেন্দ্র করে প্রচলিত রীতিনীতিগুলি সম্বন্ধে গবেষণা করবার জন্য গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেছেন এবং নিজেদের মাতৃভাষা জাপানি ভাষাতে অজস্র গবেষণাপত্র প্রকাশ করে নানান অজানা তথ্যকে উপস্থাপিত করেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হল যে, বেশিরভাগ গবেষণাপত্র যেহেতু জাপানি ভাষাতে প্রকাশিত হয়েছে তার ফলে যাঁরা জাপানি ভাষা জানেন না তাঁদের পক্ষে সেগুলিকে গভীরভাবে জেনে ওঠা কিংবা সে সম্বন্ধে আগ্রহ বৃদ্ধি করা সম্ভবপর হয়ে ওঠেনি। সেইজন্য একজন বিদেশি গবেষক হিসাবে জাপানের শিশুরা জন্মানোর আগে ও পরে ঠিক কী ধরনের রীতিনীতি জাপানি মহিলারা পালন করে থাকেন এবং সেই রীতিনীতিগুলির তাৎপর্য ও গুরুত্ব ইত্যাদি নিয়ে গবেষণা করবার জন্য আমি ২০১৬ সালে সেপ্টেম্বর মাসে জাপান সরকারের স্কলারশিপ নিয়ে জাপানের চিউবু রিজিওনে অবস্থিত নাগোয়া শহরে যাই ও সেখানকার নাগোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডিতে ভর্তি হয়ে গবেষণার কাজ শুরু করি।
গবেষণার জন্য নাগোয়া শহরে অবস্থিত যে সমস্ত বৌদ্ধ ও শিন্ত মন্দিরগুলি আছে, বিশেষ করে যেখানে শিশুর জন্মা কেন্দ্র করে নানান ধরনের প্রথা ও রীতিনীতি আজও পালন করা হয়ে থাকে, সেই সমস্ত মন্দিরগুলিতে দীর্ঘদিন ধরে ঘুরে সেখানকার পুরোহিতদের প্রত্যেককে জাপানি ভাষাতে প্রশ্নোত্তর ও সাক্ষাত্কারের মাধ্যমে কখন কীভাবে কী ধরনের রীতিনীতি পালন করা হয়ে থাকে সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করি। যেমন নাগোয়া শহরে বিশেষত শিন্ত মন্দিরগুলির মধ্যে সিওগামা মন্দির, আৎসুতা মন্দির ও ইনু মন্দির-গুলির জনপ্রিয়তা লোকমুখে প্রায়ই শোনা যায়। জাপানে একটি শিশু জন্মানোকে কেন্দ্র করে ‘আনযানকিগান’, ‘হারাওবিইয়াই’, ‘আনযান-নো-ওরেইমাইরি’ ও ‘হাৎসুমিয়ামাইরি’ ইত্যাদি নানান ধরনের রীতিনীতি পালিত হয়ে থাকে। নাগোয়া শহরও এর ব্যাতিক্রম নয়। কেন জাপানি মহিলারা এই আনযানকিগান, হারাওবিইয়াই, আনযান-নো-ওরেইমাইরি ও হাৎসুমিয়ামাইরি ইত্যাদি রীতিনীতি পালন করবার জন্য এই মন্দিরগুলিতে আসেন এবং কবে থেকে এই মন্দিরগুলিতে এই রীতিনীতিগুলি পালিত হয়ে আসছে সেই বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করি। শুধুমাত্র এই মন্দিরগুলির পুরোহিতদের দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, আমার গবেষণার জন্য যে সমস্ত জাপানি মায়েরা এই নাগোয়া শহরে বর্তমানকালে বসবাস করছেন, তাঁদেরকেও এই পুরাতন প্রথা ও রীতিনীতিগুলির প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে জিজ্ঞাসাবাদ করতে আরম্ভ করি।
এবারে এই আনযানকিগান ও হারাওবিইয়াই রীতিনীতিগুলি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক। প্রথমে আসা যাক আনযানকিগান রীতিটির কথায়। জাপানি ভাষাতে “আনযান” বলতে কোনওরকম বাধাবিপত্তি কাটিয়ে সুস্থভাবে একটি শিশুকে প্রসব করাকে বোঝায় আর “কিগান” শব্দের অর্থ হল প্রার্থনা করা। পুরাতনকালে একটি শিশু প্রসব করাটা কিন্তু এখনকার মতো এত সহজ সরল ব্যাপার ছিল না। বরং এটি একটি ভীষণ প্রাণঘাতী ঘটনা ছিল— একটি শিশুর জন্ম দিতে গিয়ে বহু গর্ভবতী মহিলাদের প্রসবের সময়ে যন্ত্রণা ও ব্যথা সহ্য করতে করতে মারা যেতে হয়েছে। সুতরাং তখনকার দিনের মানুষেরা যাতে নিরাপদে সুস্থভাবে একটি শিশুর জন্ম দিতে পারে তাঁর জন্য শিন্ত ও বৌদ্ধ মন্দিরে গিয়ে ভগবানের কাছে প্রার্থনা নিবেদন করাটা একটি স্বাভাবিক রীতিরেওয়াজে পরিণত হয়। আগের তুলনায় এখন যতই চিকিত্সা প্রযুক্তি আধুনিক ও উন্নত হোক না কেন, শিশু জন্মানোর সময়ে গর্ভবতী মহিলাদের প্রাণের ঝুঁকির সম্ভাবনা যে একেবারে নির্মূল হয়ে গেছে তা কিন্তু বলা যায় না। কালের নিয়মে যুগের কিংবা লোকেদের মানসিকতাতে পরিবর্তন হলেও আজও একটি গর্ভবতী মহিলা আগের মতনই তাঁর পেটের মধ্যে একটু একটু করে বেড়ে ওঠা শিশুটি যাতে সুস্থভাবে পৃথিবীর আলো দেখতে পারে সেই কামনা করে থাকেন।
জাপানের বিভিন্ন অঞ্চলে ও লোকালয়ে আনযানকিগান প্রথাটি পালন করবার জন্য অসংখ্য বৌদ্ধ ও শিন্ত ধর্মের মন্দির আছে। সাধারণত গর্ভাবস্থার পঞ্চম, সপ্তম কিংবা নবম মাসে গর্ভবতী মহিলারা তাঁদের বাবা, মা ও স্বামীকে নিয়ে কিংবা শ্বশুর, শাশুড়ি ও স্বামীকে নিয়ে লোকমুখে পরিচিত শিন্ত অথবা বৌদ্ধ মন্দিরে গিয়ে নিজেদের আনযানকিগান প্রার্থনাটি ভগবানের কাছে নিবেদন করে থাকেন। যেমন বৌদ্ধ ধর্মের ক্ষেত্রে “কোয়াসু কাননন” আবার “কোয়াসু জিজো” বিশেষভাবে সুস্থ ও নিরাপদে একটা শিশু যাতে জন্মাতে পারে তাঁর জন্য আশীর্বাদ করে থাকেন। আরেকটি অদ্ভুত ব্যাপার হল এই আনযানকিগান প্রথাটি যে কোনও দিনে পালন করা গেলেও জাপানিরা এই প্রথাটি “ইনু-নো-হি” নামক একটি বিশেষ শুভদিনে পালন করে থাকেন। কেননা, ইনু মানে হল কুকুর আর জাপানিরা প্রাচীনকাল থেকে বিশ্বাস করেন যে কুকুর প্রাণীটির প্রজনন ক্ষমতা অন্য জীবজন্তুর তুলনায় আনেক বেশি এবং একটি কুকুর একসঙ্গে অনেকগুলি কুকুরছানাকে সুস্থভাবে জন্ম দিতে পারে। তাই তাঁরা যদি ইনু-নো-হি দিনটিতে আনযানকিগান প্রথাটি পালন করেন। তাঁদের বিশ্বাস, তাহলে তাঁরাও কোনওরকম যন্ত্রণা ছাড়াই একটি কুকুরের মতন করে খুবই সহজে একটি শিশুকে জন্ম দিতে পারবেন। আবার এই আনযানকিগান প্রার্থনাটি নিবেদন করবার সময়ে বিভিন্ন ধর্মীয় স্থানগুলি থেকে গর্ভবতী মহিলাদের সুস্থভাবে প্রসবের জন্যে বিভিন্ন ধরনের জিনিস দেওয়ার প্রচলন আছে। যেমন মোমবাতি, ছোট বালিশ, নুড়ি পাথর, লবণ, ভগবানের নাম লেখা পবিত্র কাগজ ইত্যাদি। সুস্থভাবে একটি শিশুকে প্রসব করার পরে এই সমস্ত জিনিসগুলি সেই শিন্ত ও বৌদ্ধ মন্দিরগুলিকে পরিদর্শন করে আবার ফিরিয়ে দেওয়ার নিয়ম আছে।
এবারে আসা যাক কী এই “হারাওবিইয়াই”? জাপানে আনযানকিগান-এর পাশাপাশি হারাওবিইয়াই নামক এই প্রথাটি প্রাচীনকাল থেকে পালিত হয়ে আসছে। এখানে বলে রাখা দরকার জাপানি ভাষাতে “হারা” বলতে পেটকে, “ওবি” বলতে পেটে বাঁধার জন্য একটি বিশেষ ধরনের বেল্টকে বোঝায় এবং “ইয়াই” শব্দের অর্থ হলো অনুষ্ঠান। সুস্থভাবে ও নিরাপদে একটি শিশুকে জন্ম দেওয়ার জন্যে হারাওবিইয়াই রীতিটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে পালন করা হয়ে থাকে। আবার একটি অদ্ভুত ব্যাপার হল জাপানের বিভিন্ন এলাকা কিংবা অঞ্চল অনুযায়ী এই প্রথা পালন করার নিয়ম, সময়, প্রথাটির নাম, পেটে বাঁধার বেল্টের নাম ইত্যাদি বিষয়ে তারতম্য দেখা যায়। এক্ষেত্রেও, জাপানিদের বিশ্বাস ইনু-নো-হি নামক ঐ বিশেষ দিনে যদি প্রথবারের মতন পেটে শক্ত করে ঐ ওবি বা বেল্ট বাঁধা হয়, তাহলে তাঁরাও কুকুরের মতো করে সুস্থভাবে প্রসব করতে সক্ষম হয়ে উঠবেন। এই হারাওবিইয়াই প্রথাটি উদযাপনের মাধ্যমে জাপানি গর্ভবতী মহিলারা তাঁদের প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনদের গর্ভধারণের কথাটি আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে থাকেন।
জাপানি মহিলাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা তথ্য অনুযায়ী, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই রীতিটিতেও অনেক পরিবর্তন হয়েছে। যেমন এখন আর আগের মতো ধুমধাম করে বিরাট অনুষ্ঠান করে এই হারাওবিইয়াই আর পালন হয় না বললেই চলে। নিকটবর্তী আত্মীয়স্বজন কিংবা আশেপাশের লোকজনকে নিমন্ত্রণ করে ঘটা করে নিজের গর্ভধারণের কথা সামাজিকভাবে জানানোর নিয়ম প্রায় বিলুপ্তই হয়ে গেছে। পেটে বাঁধার ওবি বা বেল্টটি “ওবিকাকে”, “ওবিমাওয়াশী”, “ইয়াতাতাই”, “নিনপুতাই” ইত্যাদি নামেও পরিচিত। পুরাতনকালে সাধারণত এটি গর্ভবতী মহিলার বাপের বাড়ি থেকে পাঠানো হত। কিন্তু আজকাল বেশিরভাগ জাপানি মহিলারা তাঁদের পছন্দমতো ওবি সরাসরি আনযানকিগান-এর সময়ে বৌদ্ধ ও শিন্ত মন্দির থেকে কিংবা ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনলাইনে কিনে থাকেন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল, আজও জাপানি গর্ভবতী মহিলারা পঞ্চম মাসে পেটে বেল্ট বাঁধার আগে সনাতন রীতি অনুযায়ী সেটিকে ভগবানের কাছে নিবেদন করে শুদ্ধিকরণ করে থাকেন।
জাপানি মহিলাদের পুরাতনকালে পরম্পরাগতভাবে ধবধবে সাদা বর্ণের “ওসারাশি” নামক এক বিশেষ ধরনের কাপড় ভাঁজ করে পেটে বাধতে হত। কিন্তু এখনকার জাপানি মহিলারা বাইরে বেরিয়ে অফিসে গিয়ে দীর্ঘক্ষণ ধরে কাজকর্ম করতে হয় বলে ওসারাশি-র পরিবর্তে সহজেই বাঁধা কিংবা পরা যায় যে বেল্টগুলি সেগুলিই পছন্দ করেন। সাদা নয়, বরং কালো, ধূসর, নীল, হলুদ ইত্যাদি নানান রঙের বেল্ট ব্যবহার এখন বেশি হয়। ব্যস্ত কর্মজীবনের ফলে হারাওবিইয়াই রীতিটিরও নানা তারতম্য দেখা যায়।
এই হারাওবিইয়াই প্রথাটি ঠিক কবে থেকে উদযাপন করা আরম্ভ করা হয় সে বিষয়ে জাপানিদের প্রাচীনতম গ্রন্থ “কোজিকি” এবং “নিহনশোকি”-তে বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায়। নিহনশোকি এবং কোজিকি অনুসারে সম্রাট জিম্মু ছিলেন জাপানের কিংবদন্তি প্রথম সম্রাট। সম্রাট জিম্মু যখন কোরিয়ান উপদ্বীপে শিনরা জয় করতে যান তখন তাঁর পত্নী সন্তানসম্ভবা ছিলেন। সেই সময়ে হঠাৎ করে সম্রাজ্ঞীর প্রসবযন্ত্রণার ব্যথা শুরু হয়ে যায় বলে সেই ব্যথা প্রশমিত করবার জন্য তখন পেটে একটি কাপড়কে ভাঁজ করে করে শক্ত করে বাঁধা হয়। জাপানে ফিরে আসার পরে সম্রাজ্ঞী একটি পুত্রসন্তান জন্ম দেন এবং সেই থেকে পেটে বেল্ট বাঁধার রীতি চালু হয় বলে বিশ্বাস করা হয়। এই হারাওবিইয়াই পালন করার মাধ্যমে কেবলমাত্র গর্ভবতী মহিলা ও তাঁর পেটে থাকা ভ্রূণটিকে সুরক্ষা প্রদান করা হয় তা নয়, সামাজিকভাবে পেটের মধ্যে একটু একটু করে বেঁড়ে ওঠা ভ্রূণের আত্মা স্থিতিশীল করার জন্যে এই প্রথাটি একটি বিশেষ অর্থ বহন করে।
সবশেষে বলতে পারি যে শিশু জন্মানো কেন্দ্র করে পুরাতনকাল থেকে পালিত হয়ে আসা আনযানকিগান, হারাওবিইয়াই ইত্যাদি রীতিনীতি ও প্রথাতে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নানান পরিবর্তন হলেও, আজ এই একুশ শতকেও জাপানি মহিলারা গর্ভবতী হলে নিজেদের বাড়ির কাছে যে সমস্ত জনপ্রিয় বৌদ্ধ ও শিন্ত মন্দিরগুলি আছে সেখানে তাঁরা নিজেদের পরিবারের সঙ্গে যান, এবং শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সঙ্গে রীতিগুলি পালন করেন।
*লেখার ভেতরের সমস্ত ছবি লেখকের তোলা