শুভ প্রতিম
সংঘর্ষ ও সহাবস্থান সম্পর্কিত ক্ষেত্রসমীক্ষা ও গবেষণা গোষ্ঠী ‘আমরা— এক সচেতন প্রয়াস’-এর সদস্য
যতদিন বাস্তব জীবনের বড় সমস্যাগুলো মেটানো না যাচ্ছে ততদিন ধর্ম নিয়ে বেফিকির (কিন্তু বেফায়দা) চিন্তা-ভাবনা আর নির্লজ্জ ব্যাবসা— দুইই চলবে।
–রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য
সংজ্ঞায়িত সংজ্ঞা
রাজনৈতিক হিন্দু ধর্ম বা হিন্দুত্ব কবে প্রথম সংজ্ঞায়িত হয় তা নিয়ে মতের ভিন্নতা থাকলেও সংবাদ পরিসরে হিন্দু সন্ত্রাস সাম্প্রতিক সংযোজন। হিন্দুত্বের সংজ্ঞা প্রথমে সাভারকারের দেওয়া, এই মত প্রচলিত।
সম্প্রতি হিন্দুত্ব সন্ত্রাস নিয়ে আলোচনা হলেও, ইতিহাস বলছে হিন্দুত্ব সন্ত্রাস আরও পুরনো, এমনকি স্বাধীন ভারতে প্রথম সন্ত্রাসবাদী নাথুরামের সন্ত্রাসেরও আগে। আসছি সে কথায়। হিন্দুত্ব সন্ত্রাসকে ক্যালেন্ডার অনুযায়ী আমরা কয়েকটা ভাগে ভাগ করতে চাই, যা আলোচনাকে প্রাঞ্জল রাখতে সহায়ক হতে পারে। আলোচনার শেষে হিন্দুত্ব সন্ত্রাস নিয়ে বিশ্লেষণ থাকবে। মুসলিম, খ্রিস্টান ইত্যাদি ‘বহিরাগত’ ধর্মকে হিন্দুত্বের সংজ্ঞার বাইরে রেখেছিলেন সাভারকার। হিন্দুত্বের বড় শরিক রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বা আরএসএস। ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপি তার রাজনৈতিক সংগঠন। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ তাদের ধর্মীয় সংগঠন। একইভাবে সামাজিক ক্ষেত্র, শ্রম/বাণিজ্য/শিল্প উদ্যোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতি, জনগোষ্ঠী— এইসব ক্ষেত্রেও তাদের সংগঠন আছে। কিন্তু আরএসএস ও তার শাখা-প্রশাখা ছাড়াও হিন্দুত্বে বিশ্বাসী অন্যান্য রাজনৈতিক, ধর্মীয়, সামাজিক সংগঠন ছিল ও আছে। শিবসেনা, হিন্দু মহাসভা, সনাতন সংস্থা, হিন্দু সেনা ইত্যাদি। হিন্দুত্বের লক্ষ্য ভারতকে ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ করা। ভারতকে মুসলমান ও খ্রিস্টান-মুক্ত করা। তার জন্য ধর্মান্তরকরণ, বিতাড়ন এবং সন্ত্রাস— তিনটি মূল অস্ত্র।
গণহত্যা এবং পরিকল্পিত অতর্কিত আক্রমণকে বা আক্রমণের ষড়যন্ত্রকেও এই আলোচনায় সন্ত্রাস বলে উল্লেখ করা হয়েছে। দাঙ্গার ক্ষেত্রে কয়েকটি ঘটনা রাখা হয়েছে যেখানে বিচার করা হয়েছে কয়েকটি সূচক, যেমন—
ক) যেখানে সরকারের ভূমিকা কোনও একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের স্বপক্ষে এবং অন্য সম্প্রদায়কে ‘খতম’ করার লক্ষ্যে। এবং রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের উপস্থিতি।
খ) প্রচলিত অর্থে দাঙ্গা মানে দুই সম্প্রদায়ের সংঘর্ষ, হিংসা। এক্ষেত্রে সেই দাঙ্গাগুলি রাখা হয়েছে যেখানে অন্য সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে হিংসা সংঘটিত হলেও তা অপর সম্প্রদায়ের তুলনায় যৎসামান্য এবং অপরিকল্পিত।
হিন্দুত্ব সন্ত্রাসের পরিধিতে গণহত্যা একটি উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি। জম্মু থেকে গুজরাট, গণহত্যার একাধিক নজির আছে। এক্ষেত্রে গণহত্যা সম্পর্কে জাঁ পল সার্ত্রের বক্তব্য উল্লেখ করা যায়, যদিও তার ব্যাখ্যা বিশেষভাবে ভিয়েতনামে মার্কিন বাহিনির গণহত্যা বিষয়ক ছিল। ১৯৬৭ সালে ডেনমার্কের রোসকিল্ডে আন্তর্জাতিক যুদ্ধ ট্রাইবুন্যালে প্রদত্ত সভাপতির ভাষণে সার্ত্র সাধারণভাবে গণহত্যা সম্পর্কে ও ভিয়েতনামে তা কীভাবে সংঘটিত হয়েছিল তা তুলে ধরেন। হিন্দুত্ব শক্তির দ্বারা সংঘটিত গণহত্যার ক্ষেত্রেও সার্ত্র খুব প্রাসঙ্গিক।
ইহুদিদের নিঃশেষ করার জন্য হিটলার এক বিস্তৃত পরিকল্পনা ঘোষণা করেন, তিনি এ কথা কখনও গোপন করেননি যে রাজনৈতিক রণকৌশল হিসাবে তিনি গণহত্যাকে ব্যবহার করেছেন। যেখান থেকেই আসুক না কেন, তারা জার্মানির আদি বাসিন্দা হলেও ইহুদিদের মরতেই হবে, এই ছিল নাৎসি জার্মানির শেষ কথা। ভিয়েতনামের ক্ষেত্রে আমেরিকা এইরকম কিছু ঘোষণা করেনি। বরং ‘মহান উদ্দেশ্য’, যেমন তাদের মিত্র দক্ষিণ ভিয়েতনামকে উত্তরের কম্যুনিস্ট ভিয়েতনাম থেকে রক্ষা করতেই তারা যুদ্ধে নেমেছে, এই ছিল তাদের বক্তব্য।
আত্মসমর্পণ বা বিলোপসাধন। ভিয়েতনামে মার্কিন বাহিনির দ্বারা সংঘটিত গণহত্যা ছিল গোটা মানবজাতির কাছে এক সতর্কবার্তা, সার্ত্র বলেছেন। তিনটি বিষয় পরিষ্কার। ১) আমেরিকার সরকার একটি ভিত্তিভূমি ও একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চেয়েছিল। ২) শুধুমাত্র একটি জনজাতিকে ধ্বংস করে এবং ভিয়েতনামি মরুভূমিতে নিখিল আমেরিকাবাদ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এটি করা সম্ভব। ৩) দ্বিতীয় লক্ষ্য অর্জন করতে গেলে আমেরিকাকে নিশ্চিতভাবে অন্তত আংশিকভাবে হলেও নিশ্চিহ্নকরণের সাফল্য পেতে হবে। নিশ্চিহ্নকরণ অর্থাৎ গণহত্যা। গুজরাটে হিন্দুত্ববাদীরা এবং নরেন্দ্র মোদির রাজ্য সরকার এলাকাভিত্তিক মুসলিম নিশ্চিহ্নকরণে অগ্রসর হয়, সুপরিকল্পিতভাবে। তাদের সর্বশেষ অ্যাজেন্ডা হিন্দু রাষ্ট্র স্থাপন, গুজরাট ছিল তার পরীক্ষাগার। হিটলারের মতো প্রকাশ্য ঘোষণা মোদি করেননি। যদিও প্রবীণ তোগাড়িয়া সহ অনেকেই তা জানিয়েছেন প্রকাশ্যেই। পরবর্তী আলোচনায় আমরা সেই বিষয়ে আসব।[1]
জম্মু গণহত্যা
দেশভাগের সময় মীরপুর গণহত্যা এবং জম্মু গণহত্যা এই তথ্যকে পুষ্ট করে যে ব্রিটিশ ভারতের বাইরে করদ রাজ্যেও সাম্প্রদায়িকতার বিষ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে ছিল। ব্রিটিশ ভারতের স্বাধীনতা লাভের অব্যবহিত পরে এবং কাশ্মির যুদ্ধের আগে ১৯৪৭ সালে জম্মু কাশ্মিরের (বর্তমানে আজাদ কাশ্মিরে) মীরপুর জেলায় হিন্দু ও শিখদের হত্যা করা হয়। প্রায় ৭৫,০০০ হিন্দু ও শিখ বাস করত মীরপুরে, জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ। তাদের বহুলাংশ মীরপুর, কোটলি, ভীমবেড় নামক শহরে বসবাস করত। ২৫ নভেম্বর সকালে মুসলিম জঙ্গিরা সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর আগুন লাগিয়ে দেয়, মাত্র ৫,০০০ মানুষ কোনওক্রমে জম্মুতে পালিয়ে আসতে পারে। এই হত্যাকাণ্ডে পাকিস্তান সেনাবাহিনিও যুক্ত ছিল।
অন্যদিকে অক্টোবর-নভেম্বরে জম্মুতে মুসলিম নিধন চলে। ২০,০০০-১,০০,০০০ মুসলিমকে হত্যা করা হয় বলে খবরে প্রকাশ। সংখ্যা নিয়ে দ্বিমত আছে। এই নিধনকাণ্ডে আরএসএস এবং মহারাজা হরি সিংহের সেনাবাহিনি যুক্ত ছিল। মুসলিমরা পশ্চিম পাঞ্জাবে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।
১৪ অক্টোবর আরএসএস এবং অকালি দলের জঙ্গিরা জম্মু জেলার আমরে, চিয়াক, আত্মাপুর ও কোচপুরাতে মুসলিমদের হত্যা, তাঁদের ঘরবাড়ি লুঠ করে এবং আগুন ধরিয়ে দেয়। জম্মু শহরের আশেপাশে মুসলিমদের গণহত্যা হয়। জম্মু কাশ্মিরের রাজার বাহিনি অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে আরএসএসকে সাথ দেয়।
জম্মু শহরের মুসলিমরা তালাব খাতিখান এবং মহল্লা উস্তাদ এই দুই এলাকায় একত্রিত হলে রাজার প্রশাসন তাঁদের পানীয় জল পর্যন্ত বন্ধ করে দেয়। মুসলিম কনফারেন্স (পরবর্তীতে ন্যাশানাল কনফারেন্স) মুসলিমদের আত্মরক্ষার্থে অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করেছিল। রাজার প্রশাসন মুসলমানদের আত্মসমর্পণ করতে বলে, বলা হয় বাঁচতে হলে পাকিস্তান চলে যাও। প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় যখন পাহারা দিয়ে তাঁদের শিয়ালকোটের দিকে ট্রাকে চাপিয়ে পাঠানো হতে থাকে তখন আরএসএস-এর সশস্ত্র বাহিনি ট্রাক থামায়, ট্রাক থেকে একে একে পুরুষদের নামিয়ে হত্যা করে। মেয়েদের অপহরণ করে নিয়ে যায়।
একইরকম ঘটনা হয় উধমপুরেও। ওই জেলার উধমপুর, চেনাই, রামনগর, ভাদেরওয়াহ এবং রেয়াসিতে মুসলিম নিধন হয় ব্যাপকভাবে। জম্মুর কাঠুয়া ও বিল্লাওয়ার-এ হত্যা ও মহিলাদের ধর্ষণের একাধিক ঘটনা ঘটে। ১৯৪৭-এর নভেম্বর মাসে মহল্লা উস্তাদে উদ্বাস্তু শিবির খোলা হয়। বলা যায় সেই প্রথম উপমহাদেশের রাজনৈতিক বৃত্তে ব্যাপকতা ও নিষ্ঠুরতার নিরিখে আরএসএস-এর ঘৃণ্য ভূমিকা নজরে আসে।
আরএসএস-এর করাচি কাণ্ড
সন ১৯৪৭। সদ্য দেশবিভাগের যন্ত্রণা তখন বাতাসে আকাশে। কোনও মুসলিম সন্ত্রাসী গোষ্ঠী নয়, উপমহাদেশে প্রথম সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটল করাচিতে, ঘটাল আরএসএস। করাচির শিকারপুর কলোনি কেঁপে উঠল বোমার আওয়াজে, ১০ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৭, সময় দুপুর ৩টা। আর বি তোতারামের বাড়িতে বোমা বাঁধতে হাজির আরএসএস-এর কয়েকজন যুবা। সেখানেই বোমা বাঁধতে গিয়ে বিস্ফোরণ ঘটে, একজন মারা যায়, নন্দ বাদলানিকে স্পটেই গ্রেফতার করা হয়। শিকারপুর কলোনি মামলা নামে খ্যাত এই মামলায় একাধিক ব্যক্তি অভিযুক্ত হন। পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মুহম্মদ আলি জিন্না সহ ওঁর সহকর্মীদের হত্যার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে বোমা বাঁধা হয় বলে মামলায় উল্লিখিত হয়। ১৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৮-এ বিশেষ ট্রাইবুন্যাল আদালতে ১৯ জন অভিযুক্তদের মধ্যে দুইজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে, ১৩ জনকে ১০ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। বিচারপতি রহিম বক্স মুন্সি বলেন, ‘অভিযুক্তরা পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত ছিল।’ দুই প্রধান অভিযুক্ত খানচাঁদ গোপালদাস (উকিল) এবং নান্দ বাদলানিকে যথাক্রমে ৫০,০০০ এবং ২০,০০০ জরিমানা করা হয়। উল্লেখ্য অ্যাডভোকেট খানচাঁদ গোপালদাস ছিলেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের সিন্ধু প্রদেশের সভাপতি। তাঁকে আটক করার মামলায় তাঁর হয়ে সিন্ধু হাইকোর্টে এ কে ব্রহি সওয়াল করেন।
অন্যান্য অভিযুক্ত যারা ১০ বছরের কারাদণ্ডের এবং ১০০০ টাকা জরিমানার সাজা পায় তারা হল:
গোবিন্দ রাম পারাস, রাম মতওয়ানি, নানিকরাম গোবিন্দরাম রামরাখিয়ানি, হরগোবিন্দ চান্দুমল গিদওয়ানি, আর্জন জেঠানন্দ ভোজওয়ানি, সান্তু চান্দুমল গিদওয়ানি, গোবিন্দ লালসিং আজওয়ানি, বিষ্ণু জেঠানন্দ জাগেসিয়া, নারিমান দিয়ালমল মেরচন্দানি, লেখারাম ভগবানদাস ভাযিরানি, টিকামদাস জয়রামদাস ভাযিরানি, দৌলত নারায়ণদাস সাজনানি, নারায়ণ গঙ্গারাম এবং রাম বোলচাঁদ হিঙ্গোরানি।
চারজন অভিযুক্ত ছাড়া পান, তাঁরা হলেন ডাঃ তিলুমল হিরওয়ানি, মায়ারাম লাছিরাম, লছমন মোটানমল জগেসিয়া এবং ধনরাম জগন নাথ। ফাইল রিপোর্ট অনুসারে ৪০ জন ব্যক্তি করাচি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে চ্যালেঞ্জ করে, ২০ জনের স্বাস্থ্যের কারণে জামিন মঞ্জুর হয়। তাদের মধ্যে অনেকেই নিরুদ্দেশ হয়। এই নিরুদ্দিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে লালকৃষ্ণ আদবানিও ছিলেন। ৮ নভেম্বর ১৯২৭ সালে জন্ম হওয়া আদবানি তখন ২০ বছরের যুবক। ওঁর বিরুদ্ধে মামলা dormant অবস্থায় আছে। পাকিস্তান সরকার আদবানির নাম ভারতে থাকা পাকিস্তানে সন্ত্রাস চালানো ব্যক্তিদের নামের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে বলে খবর। আদবানি সহ নিরুদ্দিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা বিচারাধীন গ্রাফতার নামে একটি ফাইলে (Dormant File) পাঠানো হয়েছে। পশ্চিম পাকিস্তান হাইকোর্ট (তখন তা পশ্চিম পাকিস্তান ছিল)-এ যারা দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল তারা আপিল করে, কিন্তু তাদের আবেদনের শুনানি হওয়ার আগেই একটি চুক্তি অনুসারে তাদের ভারতে প্রত্যর্পন করা হয়। আমরা জানি আরএসএস-এর এই যুবক সন্ত্রাসী, লালকৃষ্ণ আদবানি পরে রাজনৈতিক জীবনে ভারতের উপপ্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত হন। ভারতীয় জনতা পার্টির অন্যতম স্থাপয়িতা তিনি। রাজনৈতিক হিন্দু ধর্মের চরম উত্থান যা আজকের ভারতবর্ষ প্রত্যক্ষ করেছে তা অনেকাংশে আদবানির ‘অবদান’।[2]
কিছু সংবাদ, যা আমরা বিস্মৃত হয়েছি
২ এপ্রিল, ২০১৯-এর সংবাদ। মহারাষ্ট্রের ওয়ার্ধায় এক জনসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ‘হিন্দু সন্ত্রাস’-এর অস্তিত্ব অস্বীকার করেন। তাঁর বক্তব্য, এ শব্দবন্ধ কংগ্রেসের তৈরি করা। এ প্রসঙ্গে সমঝোতা এক্সপ্রেস বিস্ফোরণে অভিযুক্তদের বেকসুর খালাসের কথা উল্লেখ করেন তিনি। তবে আদালতের নথি অবশ্য ভিন্ন কথা বলছে।
সমঝোতা এক্সপ্রেস বিস্ফোরণ মামলায় নিম্ন আদালত সমস্ত অভিযুক্তদের খালাস করে দিলেও গভীর বেদনা ও উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে এনআইএ এ ব্যাপারে যথাযথ প্রমাণ হাজির করতে পারেনি। কথা হল, এনআইএ, সিবিআই কাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত তা সবার জানা।
২০১৭ সালের ৮ মার্চ জয়পুরের বিশেষ আদালত তিন প্রাক্তন আরএসএস প্রচারক সুনীল জোশি, দেবেন্দ্র গুপ্তা এবং ভবেশ প্যাটেলকে ২০০৭ সালের আজমের দরগা বিস্ফোরণ কাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত করে। ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে এদের সকলকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়। এমনকি ততদিনে মৃত সুনীল জোশিকেও দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল।
আদালত জানিয়েছিল, এনআইএ প্রমাণ করেছে যে সুফি দরগায় যে বোমা রাখা ছিল তার ট্রিগার হিসেবে ব্যবহার করার জন্য সেলফোনের সিম কার্ড কিনেছে দেবেন্দ্র গুপ্তা। জোশি এবং গুপ্তা বিস্ফোরণের পরিকল্পনা করার জন্য এবং প্যাটেল ঘটনাস্থলে বোমা রাখার ব্যাপারে দোষী বলে ঘোষণা করেছিল আদালত।
আজমেরের সুফি সন্ত খাজা মইনুদ্দিন চিস্তির দরগায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছিল ২০০৭ সালের ১১ অক্টোবর।
এ মামলায় আরএসএসের নবকুমার সরকার ওরফে অসীমানন্দ ও আরও ৬ জনকে খালাস করে দিয়েছিল আদালত। এদের সকলকে বেনিফিট অফ ডাউটের কারণে ছাড়া হয়। আমরা জানি, এই অসীমানন্দ ৯০ দশক-উত্তর সময়ে বহু নাশকতার ঘটনায় যুক্ত।
২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে মহারাষ্ট্রে দেবেন্দ্র ফড়নবিশ সরকারের অধীন অ্যান্টি টেররিস্ট স্কোয়াড (এটিএস) ১২ জনের বিরুদ্ধে ইউএপিএ-র আওতায় চার্জশিট দাখিল করে। এরা সকলেই কঠোর হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত। সে বছরেই এটিএস এদের সকলকে অস্ত্রশস্ত্র ও বিস্ফোরক আটক করার সময়ে গ্রেফতার করেছিল।
এই অভিযুক্তদের সন্ত্রাসবাদী গ্যাং নামে অভিহিত করে চার্জশিটে বলা হয়েছিল,
অভিযুক্তরা সকলেই সনাতন সংস্থা [সদর দফতর গোয়া], [এদেরই অধীনস্থ] হিন্দু জনজাগৃতি সমিতি এবং এ ধরনের কোনও না কোনও ছোটখাট সংস্থার সঙ্গে যুক্ত… এরা সকলেই তথাকথিত হিন্দু রাষ্ট্র তৈরি করতে চায়, যে হিন্দু রাষ্ট্রের ব্যাখ্যা রয়েছে সনাতন সংস্থা প্রকাশিত পুস্তক ক্ষাত্র ধর্ম সাধনা-য়।
চার্জশিটে আরও বলা হয়েছিল,
অভিযুক্তরা সমমনস্ক তরুণদের নিয়ে একটি সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী তৈরির ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। এদের উদ্দেশ্য ছিল দেশের ঐক্য, সংহতি, নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করা।
তদন্তে প্রকাশিত হয়েছিল, ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে পুনেতে অনুষ্ঠিত সানবার্ন নামের পাশ্চাত্য সঙ্গীতের একটি আসর এই সন্ত্রাসবাদী গ্যাংয়ের নজরে ছিল। চার্জশিটে এ কথার উল্লেখ করা হয়েছে। এই চার্জশিটে ১৯০ জনের সাক্ষ্য লিপিবদ্ধ হয়েছে।
চার্জশিটে বলা হয়েছে, এই সন্ত্রাসবাদী গ্যাংটি দেশি বোমা, পেট্রোল বোমা, আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে এবং ব্যাপক হারে পাথর ছুড়ে পাশ্চাত্য সঙ্গীত এবং সংস্কৃতির অনুরাগীদের উদ্দেশে কড়া বার্তা দেওয়ার পরিকল্পনাই শুধু করতে চায়নি, অনুষ্ঠানে হাজির জনতাকেও সন্ত্রস্ত করে তুলতে চেয়েছিল।
এই তদন্তের উপর ভিত্তি করে এটিএস কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে একটি ডসিয়ের পাঠিয়ে সনাতন সংস্থাকে নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব দেয়। ২০১১ সালে ইউপিএ সরকারের সময়ে সনাতন সংস্থা সম্পর্কে একই ধরনের ডসিয়ের পাঠানো হয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে। কিন্তু সে সময়েও কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
সমঝোতা এক্সপ্রেস বিস্ফোরণ মামলায় খালাসের ক্ষেত্রে পাঁচকুলার বিশেষ আদালত এনআইএ তদন্তে অসামঞ্জস্যের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে। রেলে স্টেশনের সিসিটিভি ফুটেজকে নথিবদ্ধ না-করা থেকে ইন্দোরের দর্জিকে দিয়ে অভিযুক্তদের আইডেন্টিফিকেশন প্যারেড না-করানোর ব্যাপারে প্রশ্ন তোলে আদালত। ইন্দোরের ওই দর্জি যে সুটকেসগুলিতে বোমা রাখা হয়েছিল, সেগুলির ঢাকা সেলাই করেছিলেন বলে অভিযোগ।[3]
মুম্বাই ট্রেন বোমা বিস্ফোরণ মামলা, ২০০৬
দুটি সমান্তরাল তদন্তে দুটি ভিন্ন তত্ত্ব অনুসরণ করা হয়েছে। ১১ জুলাই, ২০০৬-এ সংঘটিত এই বোম বিস্ফোরণ নিয়ে বিভিন্ন সংবাদপত্র ও অন্যন্য সূত্রে কী প্রকাশিত হয়েছিল দেখা যাক—
ক) বিস্ফোরণের প্রথমদিনেই এইবি জানায় সিমি-র ক্যাডাররা এই বিস্ফোরণে জড়িত।[4]
খ) পুলিশ লস্কর এ তৈবা এবং সিমি-কে সন্দেহ করছে। জঙ্গি হিসাবে চিহ্নিত রাহিল, ফাইয়াস কাগজি এবং জইনুদ্দিন এতে জড়িত।[5]
গ) একজন প্রত্যক্ষদর্শী এবং আহত ব্যক্তির বয়ান মোতাবেক সন্দেহভাজনের স্কেচ আঁকা হয়েছে। নেপাল পুলিশ তিনজন পাকিস্তানিকে কাঠমান্ডুতে গ্রেফতার করেছে।[6]
ঘ) পুলিশ তিনজন সিমি কর্মীকে হায়দ্রাবাদ থেকে গ্রেফতার করেছে।[7]
ঙ) ট্রেন বিস্ফোরণের চার দিন বাদে কমপক্ষে ২৫০ জনকে আটক করা হয় মুম্বাইয়ের মাহিম এলাকা থেকে।[8]
চ) পশ্চিমবঙ্গের তদানীন্তন শাসক দল সিপিএম-এর নেতা ও বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু ট্রেন বিস্ফোরণ হিন্দু মৌলবাদীরা ঘটিয়েছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেন।[9]
ছ) ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন ধ্বংসাবশেষ থেকে আরডিএক্স ও অ্যামোনিয়ামের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।[10]
ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে ষড়যন্ত্রের পিছনে কারা তা জানানো হতে থাকে। কী তথ্যের ভিত্তিতে এই দাবি করা হচ্ছে তা পরিষ্কার নয়। অর্থাৎ বিস্ফোরণ এবং সঙ্গে সঙ্গেই অপরাধী চিহ্নিতকরণ। আবার অতি দ্রুততার সঙ্গে তদন্তও শেষ হয়। এটিএস জানায় তারা অপরাধী ধরে ফেলেছে। কীরকম?
এটিএস জানাচ্ছে ২০ জুলাই বিহার থেকে ও ২৯ জুলাই মুম্বাইয়ের মীরা রোড থেকে যথাক্রমে কামাল আহমেদ ও এহতেসামকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী মোহম্মদ সাজিদ, মোহম্মদ শাফি (দুজনেই মুমবরার বাসিন্দা), ওয়াজুদ্দিন শেখ (কাশি-মীরা), মোহম্মদ মাজিদ শেখ (কোলকাতা)-কে ধরা হয়। এদের গ্রেফতারই এটিএস-এর ‘তদন্ত শেষ’-এই দাবীর প্রেক্ষিত। এই চারজন নাকি পাকিস্তানি নাগরিকদের পরিবহণে সাহায্য করেছিল। চারজনের অন্যতম একজন মাজিদ লস্করের সদস্য বলে সন্দেহ করা হয়।
তদন্ত শুরু হয় মুসলিম-বিরোধী মানসিকতা থেকে। আইবি প্রথম দিনেই সিমিকে দায়ী করে আমরা জানি। সিপিএম নেতা বিমান বসুর কথাও ছিল তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া, কিন্তু কোনও তদন্তকারী দল তাঁর কাছে পৌঁছয় না। কেন পৌঁছয় না? বলা হয় গুজরাট গণহত্যার প্রতিশোধ নিতে এই বিস্ফোরণ। প্রশ্ন হল চার বছর পর প্রতিশোধ? আচ্ছা তাও যদি মেনে নেওয়া যায় তাহলে বিস্ফোরণ তো হওয়ার কথা গুজরাটি ও হিন্দু-অধ্যুষিত স্টেশন চার্চগেট থেকে দাদার এবং ভায়ান্দার থেকে ভিরার পর্যন্ত। তা না হয়ে তা মুসলিম-অধ্যুষিত স্টেশনগুলিতে, মাহিম থেকে মীরা রোড পর্যন্ত স্টেশনগুলিতে হল কেন? নান্দেদে যে বিস্ফোরণ ঘটে তাতে আরএসএস-বজরং দলের কর্মীরা যুক্ত ছিল বলে জানা যায়, কিন্তু রহস্যজনকভাবে তাদের কোনও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় না। কেন হয় না?
আদালতে যা প্রমাণিত নয় তা দেশের আইন অনুযায়ী দাঙ্গা বা সন্ত্রাস নয়, অভিযুক্তরা বেকসুর খালাস মানেও তারা সন্ত্রাসী নয়। কিন্তু আইন রক্ষাকারী সংস্থা এবং আদালত কতটা কোনও বিশেষ সম্প্রদায়বিরোধী তা আমরা জানি। এই বিরোধিতা আসলে ‘সাম্প্রদায়িকতা’ বই কিছু নয়। মিডিয়া যখন ঘটনার পরে পরেই কাউকে বা কোনও সম্প্রদায়কে দোষী বলে দেগে দেয় তখন তাদের সাম্প্রদায়িকতা স্পষ্ট হয়। স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত জাতির পিতা, দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অমুসলিম সন্ত্রাসবাদীদের দ্বারা নিহত হলেও হিন্দু সন্ত্রাস কোনও চর্চায় আসে না।
গুজরাট গণহত্যা, ২০০২
বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সভাপতি প্রবীণ তোগাড়িয়া গুজরাট গণহত্যার সময় কিছু ভাষণ দিয়েছিলেন, সন্ত্রাসের স্বরূপ বুঝতে দেখা যাক উনি কী বলেছিলেন—
গোধরা স্টেশনে সন্ত্রাস হয়েছে যেহেতু এই দেশ গান্ধিকে অনুসরণ করে। ২৮ ফেব্রুয়ারি আমরা সেই গান্ধিকে তালাবন্ধ করে দিয়েছি। (মুসলমান) নিজেদের শুধরে নাও, নাহলে আমরা গান্ধিকে চিরকালের জন্য ভুলে যাব। যত দিন আমরা গান্ধিনীতি অনুসরণ করব, যত দিন আমরা মুসলমানের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে থাকব ততদিন সন্ত্রাসবাদকে নিকেশ করা যাবে না। ভাই সব, আমাদের গান্ধিকে বাতিল করতে হবে। আপনারা রামায়ণ জানেন তো, সত্যিই গোধরার ঘটনার জন্য যা প্রাসঙ্গিক। ফালিয়া সিগন্যালে সকাল ৭.৪৫-এ এস-৬ কামরায় লাগা আগুন হনুমানজির ল্যাজে লাগানো আগুনের সমান ছিল।
উপস্থিত হিন্দু জনতা তালি বাজিয়ে, ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে থাকে। তখন রাত্রি। উনি আবার বলতে থাকেন—
‘হনুমানের ল্যাজ কে জ্বালিয়েছিল? রাবণ জ্বালিয়েছিল। হনুমানজি বেড়াতে গিয়েছিলেন, আমি শুনেছি হনুমানজি গোধরা এসেছিলেন (উপস্থিত জনতা হাসতে থাকে, খুশি জানাতে থাকে)। হনুমানজি হলোল, কলোল, সরদারপুরা এসেছিলেন আর উনি কর্নবতীতে (আহমেদাবাদ) থেকে গেছেন আর ফিরে যেতে চাইছেন না।
উক্তিতে স্পষ্ট যে রাবণ মানে মুসলমান। গুজরাটে মুসলমানদের মেরেকেটে ফেলার এই ছিল আহ্বান। তোগাড়িয়া আদি সঙ্ঘ পরিবারের পরিশ্রম এবং মোদিকে ‘হিন্দু হৃদয় সম্রাট’ হিসাবে তুলে ধরা চলতে থাকে। এই কৌশলের উদ্দেশ্য ছিল বিধানসভা ভোটে বিজেপির জয়লাভ নিশ্চিত করা। এই প্রসঙ্গে টাইমস অফ ইন্ডিয়ার একটি রিপোর্টের উল্লেখ করছি।
‘গুজরাটে ডিসেম্বর ২০০২-এ হওয়া বিধানসভা ভোটে লাগাতার দুই সপ্তাহ হেলিকপ্টার চেপে বিজেপির সমর্থনে প্রচার করেছেন প্রবীণ তোগাড়িয়া। একশোর বেশি জনসভায় বক্তব্য রেখেছেন।
আহমেদাবাদ ও ভদোদরার মুসলমানরা প্রচণ্ড ভয়ের মধ্যে আছে। আতঙ্ক এবং বিশ্বাসঘাতকতার যুগপৎ আক্রমণে ত্রস্ত মানুষ। ৭০ বছরের বৃদ্ধ আবিদ সামসি বলেন, ১৯৬৯, ১৯৮৫ এবং ১৯৯২ সালে আমি আহমেদাবাদে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা দেখেছি। কিন্তু এর আগে কখনও এতটা আতঙ্কিত বোধ করিনি। যখন দেখি পুলিশের সামনেই সবকিছু হচ্ছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যেখানে বলছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা হবে। কারও জীবন ও সম্পত্তির ক্ষতি হবে না। এই বৃদ্ধ ১৯৯২-এর দাঙ্গার ফলে ভস্ত্রপুর থেকে নবরঙ্গপুরাতে চলে আসতে বাধ্য হন। কিন্তু এখানে এসেও একই অবস্থা। এখন আমরা কোথায় যাব? জানতে চাইলেন বৃদ্ধ। আফজল মেমন, ফল বিক্রেতা জানালেন, কোনও দমকল, কোনও পুলিশ, কোনও এ্যাম্বুলেন্সে নেই, আমরা আতঙ্কে আছি, এখানেও দাঙ্গা শুরু হবে।’[11]
২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ২ মার্চ, ২০০২ গুজরাটে প্রায় ২০০০ মানুষ যাদের মধ্যে অধিকাংশ মুসলমান হত্যা করা হয়। প্রায় ২০০০০০ মানুষ গৃহহারা হয়। দ্য হিন্দু সংবাদপত্রে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি কে আর নারায়ণন লিখেছিলেন, ২০০২ সালে গুজরাটে কেন্দ্র সরকার এবং গুজরাট সরকার মিলে ষড়যন্ত্র করেছিল। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন কী বলছে দেখা যাক—
The NHRC found that the ongoing violence in Gujarat has “resulted in the violation of the Fundamental Rights to life, liberty, equality and dignity of citizens of India….” Significantly, it then considers whether the Godhra tragedy and the resulting violence could have been prevented by the state government and police. In light of the state government’s own admission that Gujarat witnessed over 443 “communal incidents” between 1970 and 2002, the commission faults the state government for a “failure of intelligence and action” with regard to the events “leading to the Godhra tragedy and the subsequent death and destruction that occurred.”
গুজরাটের হিংসা আসলে গণহত্যা ছাড়া অন্য কিছু নয়। ইন্টারন্যাশানাল ইনিশিয়েটিভ ফর জাস্টিস ২০০৩ সালে তাদের রিপোর্ট, ‘A Feminist Analysis of the Genocide in Gujrat’-এ উল্লেখ করে গণহত্যার আইনি ব্যাখ্যায় গুজরাটের ২০০২ সালের হিংসাকে সংজ্ঞায়িত করা যায়।
১৯৪৮ সালের গণহত্যা বিষয়ক কনভেনশনের দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ অনুসারে গুজরাট গণহত্যা সংজ্ঞায়িত করা যায়। ৯ ডিসেম্বর, ১৯৪৮-এ রাষ্ট্রসঙ্ঘের রিজল্যুশন ২৬০(৩) অনুসারে উক্ত কনভেশনে গণহত্যার যে ব্যাখ্যা দেওয়া হয় তা গৃহীত হয়। ব্যাখ্যাটি নিম্নরূপ:
‘Genocide’, the Convention clarifies, occurs when any of the following acts are committed with intent to destroy,in whole or in part, a national, ethnic, racial or religious group, such as: killing members of the group; causing serious bodily or mental harm to members of the group; deliberately inflicting on the group conditions of life calculated to bring about its physical destruction in whole or in part; imposing measures intended to prevent births within the group; forcibly transferring children of the group to another group.
গুজরাটে ইন্টারন্যাশানাল ইনিশিয়েটিভ ফর জাস্টিস জানাচ্ছে, উপরিউক্ত মাপদণ্ডের প্রথম চারটি মিলে গেছে। বেপরোয়া হত্যাকাণ্ড চালিয়ে কোনও একটি গোষ্ঠীর সদস্যদের গণখুন করা; কোনও একটি গোষ্ঠীর সদস্যদের বেপরোয়া হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, ছুরিকাঘাত, প্রহার ইত্যাদি ঘটিয়ে মারাত্মক শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি করা; কোনও একটি গোষ্ঠীর সদস্যদের আর্থিক বয়কট, মানসিক-দৈহিক-সামাজিক আঘাত করে ত্রাস সৃষ্টি করা বা গণধর্ষণ, অঙ্গচ্ছেদ, সম্পত্তিহানি ইত্যাদির মাধ্যমে সন্তান উৎপাদনে বাধা দান— এই সব কিছুই গুজরাটে দেখা গেছে।
(ক্রমশ)
[1] গণহত্যা সম্পর্কে। জাঁ পল সার্ত্র। অনুবাদ ও সম্পাদনা: গৌতম গাঙ্গুলী। ছাড়পত্র প্রকাশন। কোলকাতা, ২০২০
[2] দ্য টেলিগ্রাফ, ১.২.০২; দ্য ডন, ১.২.০২
[3] ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
[4] আফটারনুন, মুম্বাই, ১২ জুলাই ২০০৬
[5] মিড-ডে, মুম্বাই, ১২ জুলাই ২০০৬
[6] রেডিফ ডট কম, ১২ জুলাই ২০০৬
[7] এশিয়ান এজ, মুম্বাই, ১২ জুলাই ২০০৬
[8] দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া, মুম্বাই, ১৫ জুলাই ২০০৬
[9] রেডিফ ডট কম, ১৫ জুলাই ২০০৬
[10] এশিয়ান এজ, মুম্বাই, ১৭ জুলাই ২০০৬
[11] টাইমস অফ ইন্ডিয়া, ১ মার্চ ২০০২