সাম্প্রদায়িকতার বিষবৃক্ষ ও সংস্কৃতজ্ঞর শাণিত কুঠার

শতবর্ষে সুকুমারী ভট্টাচার্য | সংস্কৃতজ্ঞ, প্রাবন্ধিক

কণিষ্ক চৌধুরী

 


শিক্ষক, গবেষক, প্রাবন্ধিক

 

 

 

নানা রঙের সাম্প্রদায়িকতার উর্বরা ভূমি এই ভারতবর্ষ। হিন্দু, ইসলামীয়, খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ সাম্প্রদায়িকতার মধ্যে প্রথম দুটিই প্রধান এবং ভয়াবহ। অনেকেই মনে করেন এটি ঔপনিবেশিক শাসনের দান। আর একভাবেও বলা যায়— আধুনিকতার ফসল এই হিন্দু ও মুসলিম সাম্প্রদায়িকতা। সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদ যে ধর্মীয় সম্প্রদায় বা গোষ্ঠীর সঙ্গেই যুক্ত থাকে না কেন, তা সামাজিক অগ্রগতির পথে বিরাট বাধা। সুকুমারী ভট্টাচার্য হিন্দু সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে একটানা সংগ্রাম করেছেন। এখন প্রশ্ন হল তিনি শুধু হিন্দু সাম্প্রদায়িকতা নিয়েই কাজ করলেন কেন? এর উত্তরে সুকুমারী ভট্টাচার্যের জবাব:

হিন্দু সাম্প্রদায়িকতাকে বিশেষ করে চিনি বলেই সেই বিষয়কে কেন্দ্র করে কিছু চিন্তা দেশের মানুষের সামনে উপস্থিত করছি এই বিশ্বাসে যে, এখনও বহু সুস্থমনা মানুষ দানবের সঙ্গে সংগ্রামের জন্য ঘরে ঘরে প্রস্তুত হচ্ছেন।[1]

এর অর্থ কিন্তু এটা নয় যে তিনি ইসলামীয় সাম্প্রদায়িকতা সম্পর্কে সচেতন ছিলেন না। নানা লেখাতেই তার প্রকাশ ঘটেছে। যদিও তিনি সেই বিষয়ে গভীরে প্রবেশ করেননি। বরং পরিচিত মুখটিরই তিনি খোঁজখবরে বেশি আগ্রহী ছিলেন, ওপরের উদ্ধৃতিটিতেই তার উল্লেখ পাওয়া যাবে।

সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদ শব্দ দুটি প্রায়শই ঘনিষ্ঠভাবে ব্যবহার করা হয়। যদিও শব্দ দুটির অর্থ এক নয়, ভিন্ন। মৌলবাদ বলতে কোনও মতাদর্শ বা ভাবনা বা ধর্মের মৌল প্রতিপাদ্যগুলির ওপর গুরুত্ব আরোপকে বোঝানো হয়। সাম্প্রদায়িকতার সঙ্গে যুক্ত থাকে সম্প্রদায়ের ধর্মীয় স্বার্থের বিষয়টি। ইংরাজি ভাষায় communal শব্দটির ব্যবহার গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত সদস্যদের সঙ্গে সংযুক্ত। যেমন যৌথ খাওয়াদাওয়া— communal dining। এখানে শব্দটি কখনওই নেতিবাচক নয়। ভারতবর্ষে সাম্প্রদায়িক শব্দটি ভীষণ রকমের নেতিবাচক। শব্দটি মূলত হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক সংঘাতের ক্ষেত্রে ঘন ঘন ব্যবহৃত হয়। “খুব সহজ কথায়, সাম্প্রদায়িকতাবাদ হল এমন এক বিশ্বাস, যে একদল মানুষ একটি বিশেষ ধর্মে বিশ্বাস করলে তাদের সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক স্বার্থ সব একই হয়। সাম্প্রদায়িকতাবাদ হল সেই বিশ্বাস, যা অনুযায়ী ভারতে হিন্দু, মুসলিম, ক্রীশ্চান ও শিখরা বিভিন্ন ও স্বতন্ত্র সম্প্রদায়, যারা স্বাধীনভাবে এবং স্বতন্ত্রভাবে বিন্যস্ত ও সংহত। এই বিশ্বাস অনুযায়ী একটি ধর্মের অনুবর্তীরা শুধুমাত্র এক ধর্মীয় স্বার্থের অংশীদার নন, বরং তাঁদের ধর্মনিরপেক্ষ স্বার্থ অর্থাৎ অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক স্বার্থও অভিন্ন।”[2]

সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী ধর্মীয় বিশ্বাস সেকুলার জীবনের নিয়ন্ত্রকে পরিণত হয়। দ্বিতীয়ত, শ্রেণিগত স্বার্থ ও ঐক্য ও জাতিগত (Nation) স্বার্থ ও ঐক্য অস্বীকৃত হয়। তৃতীয়ত, অন্য ধর্মাবলম্বীকে প্রতিদ্বন্দ্বী শুধু নয়, একেবারে শত্রু হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

সুকুমারী ভট্টাচার্য সাম্প্রদায়িকতা বা মৌলবাদের কোনও সুস্পষ্ট সংজ্ঞা নির্ধারণ না করলেও তাঁর আলোচনার মধ্যে এই ভাবনাটিরই প্রকাশ পেতে দেখা গেছে। তিনি লক্ষ করেছেন হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক শক্তি এক ভয়ঙ্কর কর্মসূচি নিয়ে ময়দানে হাজির। তাদের লক্ষ্য ভারতে হিন্দুরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা, ভারতীয় সমাজকে একশিলীভূত হিন্দু সমাজে রূপান্তরিত করা। দ্বিতীয়ত, অন্য ধর্মাবলম্বীদের কেবল অ-ভারতীয় বলে বিবেচনা করা নয়, শত্রু হিসেবেও চিহ্নিত করা। অ-হিন্দুদের ওপর হিন্দু আধিপত্যকে প্রতিষ্ঠা করাও তাদের ঘোষিত লক্ষ্য। যেমন আরএসএসের অন্যতম প্রধান তাত্ত্বিক গোলওয়ালকর (১৯০৬-৭৩) তাঁর We or Our Nationalhood Defined (১৯৩১) গ্রন্থে লিখেছেন:

হিন্দুস্তানের অ-হিন্দু জনগণকে হয় হিন্দু সংস্কৃতি ও ভাষা গ্রহণ করতে হবে, হিন্দু ধর্মকে শ্রদ্ধা ও ভক্তি করতে শিখতে হবে, হিন্দু জাতি (race) এবং সংস্কৃতির মহিমা প্রচার ব্যতীত অন্য কোনও ধারণা বর্জন করতে হবে। অর্থাৎ তাদের কেবল এই দেশ ও তার যুগযুগান্তরব্যাপী ঐতিহ্যের প্রতি অসহিষ্ণুতা ও কৃতঘ্নতার দৃষ্টিভঙ্গি ত্যাগ করলেই হবে না, বরং তার পরিবর্তে ভালোবাসা ও আরাধনার ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করতে হবে— এক কথায় তাদের হয় বিদেশি হয়ে থাকা বন্ধ করতে হবে, অথবা তারা এদেশে থাকতে পারে, কিন্তু সম্পূর্ণভাবে হিন্দুজাতির অধীনস্থ হয়ে, কোনও কিছু দাবী না করে, কোনও বিশেষ সুবিধার দাবিদার না হয়ে, কোনও পক্ষপাতমূলক আচরণের দাবিদার না হয়ে তো বটেই— এমনকি নাগরিক অধিকারের দাবিদার না হয়ে।[3]

এখানেই হিন্দুত্ববাদীরা থামে না। তাদের আরও কর্মসূচি আছে:

ক) ছদ্ম ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদ প্রচার করা। আদর করে যার নাম রাখা হয়েছে সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদ।
খ) ব্রাহ্মণ্যবাদী মতাদর্শের প্রতিষ্ঠা।
গ) মুসলিম ও খ্রিস্টানদের ‘অপর’ হিসেবে নির্মাণ করে ভারতের শত্রু হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।
ঘ) শূদ্র ও দলিত পীড়নের কর্মসূচি।
ঙ) চরম পিতৃতান্ত্রিক হিন্দুত্ববাদীদের লক্ষ্যই হল নারীসমাজের অগ্রগতিকে রোধ করা ও দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করা।
চ) সর্বোপরি কর্পোরেট স্বার্থের সেবা করা।

সুকুমারী ভট্টাচার্য হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক শক্তির তাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গিটিকে যুক্তির শাণিত তরবারির আঘাতে সম্পূর্ণরূপে নস্যাৎ করেছেন। তাঁর এই বিচারধারার তিনটি বিশেষ ক্ষেত্র আছে—

প্রথমত, হিন্দুসমাজ একশৈলজ নয়। এর মধ্যে আছে বহুত্ব, সমন্বয় ও প্রতিবাদী ধারা।
দ্বিতীয়ত, হিন্দুরাষ্ট্রের ধারণা ভারতীয় সংস্কৃতির বিরোধী। রামকে কখনওই আদর্শ রাষ্ট্রপুরুষ বলা যায় না।
তৃতীয়ত, মুসলিমদের ‘অপর’ হিসেবে নির্মাণ করার হিন্দুত্ববাদী প্রচেষ্টা ইতিহাস ও যুক্তিবিরোধী।

হিন্দুত্ববাদীরা বলেন:

আমাদের জাতীয় দৃষ্টি ভৌগোলিক বা রাজনৈতিক সত্তা দ্বারা সীমাবদ্ধ নয়, এর সংজ্ঞা আমাদের প্রাচীন ঐতিহ্যের দ্বারা নির্ণীত। এই প্রত্যয় থেকেই আমাদের ‘সংস্কৃতির জাতীয়ত্বে’ বিশ্বাস প্রবাহিত হয়, এইটিই হিন্দুত্বের কেন্দ্রবস্তু। আমরা বিশ্বাস করি, এটিই আমাদের প্রাচীন জাতীয় সত্তা। … হিন্দুত্বই সেই একমাত্র সংযোগসূত্র যা আমাদের জাতির ঐক্য এবং সংহতি রক্ষা করতে পারে… হিন্দুত্ব কোনও একটি অংশের অন্য অংশের স্বার্থের মূল্যে সুবিধা ভোগ করার ঘৃণ্য প্রচেষ্টার প্রতিষেধকও বটে।[4]

সুকুমারী ভট্টাচার্যের মতে, এই দাবি একেবারেই মিথ্যা। পঞ্চদশ শতাব্দীর পূর্বে ‘হিন্দু’ শব্দটি সংস্কৃত ভাষায় একবারও ব্যবহৃত হয়নি। ‘হিন্দু’ শব্দটি পাওয়া যায় ১৪২৪ খ্রিস্টাব্দে বিজয়নগরের দ্বিতীয় কৃষ্ণদেব রায়ের ‘সত্যমঙ্গল’ তাম্রপটে। এখানে পাওয়া যায় বিজয়নগরের রাজাকে ‘হিন্দুরায় সুরতরাণা’[5] হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।[6] বিষয়টি আরও একটু বিস্তৃত করে বলা যায় যে ১৮১৬-র আগে হিন্দু নামে কোনও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের অস্তিত্বই ছিল না। ঊনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে (১৮১৬) রাজা রামমোহন রায় প্রথম Hinduism শব্দটি ধর্মীয় অর্থে ব্যবহার করেন। এর পূর্বে শব্দটার কোনও ধর্মীয় ব্যঞ্জনা ছিল না।[7]

হিন্দুত্ববাদীদের অন্যতম প্রধান তাত্ত্বিক ও নেতা গোলওয়ালকর যখন বলেন: “ভারতের ইতিহাস হল একটি দীর্ঘায়ত হিন্দু যুগ,” বা “আমাদের দেশে রাষ্ট্রীয় মানেই হিন্দু,” বা বিশ্ব হিন্দু পরিষদ যখন ঘোষণা করে “সমস্ত অ-হিন্দুই বিজাতীয়,” কিংবা “মুসলমানরা বিদেশি,” তখন সুকুমারী ভট্টাচার্য তাকে চ্যালেঞ্জ করেন। প্রশ্ন তোলেন:

…অন্তত সওয়া তিন হাজার বছর আগে আর্যরাও তো ভারতবর্ষের বাইরে থেকে এসেছিলেন, ওই সুবাদে তাহলে আর্যরাও কি অ-ভারতীয়? এর কোনও সদুত্তর নেই বলেই আজকাল ইতিহাসকে বিকৃত করে একদল লোক জোর গলায় বলতে শুরু করেছেন যে সিন্ধু সভ্যতা আসলে আর্যদেরই কীর্তি। তাহলে আর্যরা আর বহিরাগত হন না, প্রায় সাড়ে চার হাজার বছর ধরে এক অব্যাহত ‘আর্য’ সভ্যতার ধারার অস্তিত্ব প্রতিপন্ন করা যায়। এঁরা মূর্খ নন, অজ্ঞ নন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যাবাদী ও মিথ্যাচারী।[8]

তিনি আরও দেখিয়েছেন যে, খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দী থেকে খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতাব্দী পর্যন্ত এই ৮০০ বছরে যবন, পারদ, পহ্লব, মুরুন্ড, কুষাণ, শক, হুন ইত্যাদি নানা পরিচয়ের মানুষ বাইরে থেকে ভারতে এসেছে এবং আর্যাবর্তের তখনকার অধিবাসী জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মিশে গেছে। বর্ণবিভক্ত সমাজ তাদের প্রথমে শূদ্র, ম্লেচ্ছ বলেছে, পরে তাদের তেজ, শক্তি ও বিজয়ী সত্তাকে স্বীকার করেছে, ‘ক্ষত্রিয়’ সংজ্ঞা দিয়েছে।[9]

মুসলমানদের বিদেশি বলতে সুকুমারী ভট্টাচার্য রাজি নন। তিনি লিখেছেন:

মুসলমানরা সিন্ধু অধিকার করবার পরেও বেশ কয়েক শতাব্দী হিন্দু-মুসলমান আত্মীয়-বন্ধুর মতো পাশাপাশি শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করেছে। মোগল সাম্রাজ্য স্থাপনের সময় কিছু ধর্মান্তরকরণ হয় জোর করে, কিছু মঠ-মন্দির ভেঙে রাজশক্তি মসজিদ তৈরি করে। ভুলে গেলে চলবে না যে, পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বত্রই সর্বকালে বিজয়ী বিজিতের ওপর এ ধরনের অত্যাচার করেছে। ফা হিয়েন, হিউয়েন সাঙ, ইৎসিঙ এঁরা যত বৌদ্ধ মঠ, বিহার, সঙ্ঘারাম দেখে বর্ণনা করেছেন, তার কটি রক্ষা পেয়েছিল? বৌদ্ধদের উপর হিন্দুদের নানা অত্যাচারের কথা ইতিহাসে আছে। ‘মৃচ্ছকটিক’ নাটকে শুনি বৌদ্ধ শ্রমণ বলছে অত্যাচারী রাজশ্যালকের প্রসঙ্গে যে সে বৌদ্ধ শ্রমণদের নাক ফুটো করে দড়ি দিয়ে বলদের মতো করে টানিয়েছে। … তাছাড়া মুসলমানদের জোর করে ধর্মান্তরকরণের যে অপবাদ তা আংশিকভাবে সত্য হলেও সঙ্গে সঙ্গে এও সত্য যে ব্রাহ্মণ্য সমাজ শূদ্র, শ্বপাক, পুল্কস, চণ্ডাল ও ম্লেচ্ছদের ঊনমানব হিসেবে দেখত বলেই তাঁদের মধ্যে বৃহৎ এক অংশ মুসলমান হন, যেহেতু ওই সমাজে জাতিভেদ ছিল না।[10]

অন্য ভাষায় বললে বলা যায় ব্রাহ্মণ্যতান্ত্রিক সমাজে নিম্নবর্ণ বিশেষ করে শূদ্র ও অতিশূদ্র বা অস্পৃশ্যদের অবস্থা ছিল অসহনীয়। অনাহার ও দারিদ্র্যের সঙ্গে ছিল সামাজিক অবমাননা। উচ্চবর্ণের অত্যাচার, দমন, পীড়ন ও শোষণে তাদের জীবন হয়ে পড়েছিল দুর্বহ ও দুঃসহ। এই অবস্থা থেকে মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় তারা ইসলাম সাদরে বরণ করে নিল। ফলে বিপুলসংখ্যক ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষের আবির্ভাব ঘটল। এরা সকলেই ভারতবাসী— প্রজন্ম প্রজন্ম ধরে এই ভূখণ্ডেই তাদের বাস। তাদের ধর্ম ইসলাম হতে পারে, কিন্তু ভূখণ্ডের অধিকার কারও চেয়ে কম কিছু নয়। আর সেই কারণেই ‘অ-হিন্দু মানেই বিদেশি’ এই প্রচার যারা করে তারা শুধু ইতিহাসবোধহীনই নয়, ভারত-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির শত্রুও বটে।

হিন্দুত্ববাদীরা একদিকে জাতিবিদ্বেষী তত্ত্ব প্রচার করে, আবার অন্যদিকে প্রাচীনের গরিমা প্রচার করে শ্রেষ্ঠ সভ্যতা প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করে। এই দৃষ্টিভঙ্গি হল নির্জলা ফ্যাসিবাদ। গোলওয়ালকরের বক্তব্যে আধুনিক ধারণার প্রয়োগও দেখা যাবে, যদিও তা বিকৃতির চূড়ান্ত। গোলওয়ালকর বলেন: গণতন্ত্রের ভাবের শ্রেষ্ঠ প্রকাশ যা ব্যক্তিকে বাক্য, চিন্তা ও ক্রিয়ার স্বাধীনতা দেয় তা সুপ্রাচীন হিন্দু ঐতিহ্যে যেমন স্বীকৃত এবং আচরিত হত তেমন আর কোথাওই নয়।”[11] এই দাবী যে একেবারেই হাস্যকর ও যুক্তিবুদ্ধিরহিত তা বলার অপেক্ষা রাখে না। গোলওয়ালকরের মতকে খণ্ডন করতে গিয়ে সুকুমারী ভট্টাচার্য বলেছেন:

প্রাচীন ভারতে রাষ্ট্রনীতি মনু, কৌটিল্য ও অন্যান্য ধর্মশাস্ত্রে যার নির্দেশ আছে তাকে হাজার চেষ্টাতেও গণতন্ত্র বলা যাবে না। তা হল বিশুদ্ধ রাজতন্ত্র [এবং অবশ্যই তা স্বৈরতান্ত্রিক]। একটি রাজা কীভাবে প্রজাপালন করবে ও ক্রমান্বয়ে চেষ্টা করে চলবে আশপাশের রাজ্যগুলিকে জয় করে সাম্রাজ্য বৃদ্ধি করবার, তারই নির্দেশ এসব গ্রন্থে [অর্থশাস্ত্র]। এ রাষ্ট্রনীতি গণতন্ত্র থেকে শত যোজন দূরে। প্রাচীন ব্রাহ্মণ্য রাষ্ট্রব্যবস্থায় দণ্ডনীতি ছিল বর্ণ, জাতি অনুসারে; একই অপরাধে ব্রাহ্মণ ও শূদ্রের ভিন্ন ভিন্ন দণ্ডের বিধান ছিল। প্রাচীন রাষ্ট্রনীতিতে নারীর কোনও রাষ্ট্রিক বা সামাজিক অধিকার ছিল না। অন্তঃপুরের নেপথ্যেই তার স্থান ছিল। সমাজ বা রাষ্ট্র সংবিধানে সে ‘ব্যক্তি’ হিসেবে স্বীকৃতই ছিল না। গণতন্ত্রে ব্যক্তির অধিকার নীতির সঙ্গে এর আকাশ-পাতাল প্রভেদ। হিন্দুরাষ্ট্র সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার খর্ব করা মাত্রই গণতন্ত্র থেকে বহু দূরে সরে এল, গণতন্ত্রের কোনও সংজ্ঞাই এর সম্বন্ধে আর প্রযোজ্য রইল না।[12]

তিনি লক্ষ করলেন এই হিন্দুত্ববাদী প্রতারকরা এত বড় প্রতারক যে, আধুনিক যে ধ্যানধারণাগুলিতে তাদের বিন্দুমাত্র বিশ্বাস নেই প্রয়োজনে সেগুলিকেও ব্যবহার করতে তারা পিছপা হয় না। মানবিক অধিকার প্রসঙ্গে হিন্দুত্ববাদীরা ঘোষণা করে “আমরা জাতি, বিশ্বাস, ধর্ম ও লিঙ্গ-নিরপেক্ষভাবে প্রত্যেক ব্যক্তির মানবিক, গণতান্ত্রিক ও নাগরিক অধিকার সংরক্ষণে অঙ্গীকারবদ্ধ।”[13] এটা একটা বিরাট ধাপ্পা। এই পরিপ্রেক্ষিতে হিন্দুত্ববাদীদের মুখোশ উন্মোচন করতে সুকুমারী ভট্টাচার্য লেখেন:

বাবরি মসজিদ ভাঙা [১৯৯২] অমানবিক নিষ্ঠুর আচরণ নয়? ১৯৯০-এর দিল্লিতে নিজামুদ্দিনে ১৯৯০-৯১-এ খুর্জাতে দাঙ্গায় হিন্দু নিষ্ঠুর আচরণ করেনি? রেড্ডি, বিয়াঠারাথিন ও বেণুগোপাল কমিশন— তিনটিরই ঘোষিত সিদ্ধান্ত হল দীর্ঘ কয়েক বৎসরের মুসলমান ও খ্রিস্টান-বিরোধী দাঙ্গার পেছনে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের সক্রিয় প্ররোচনা ছিল।[14]

সুতরাং হিন্দুত্ববাদীরা মুখে মানবিক অধিকারের সমর্থন করলেও বাস্তবে এদের কাজকর্ম চূড়ান্ত মানবাধিকার-বিরোধী।

হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক শক্তির চিন্তার দুটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল— ব্রাহ্মণ্যতন্ত্র ও পিতৃতন্ত্র। এই পিতৃতান্ত্রিক চিন্তাধারার স্বরূপ উন্মোচন করার জন্য সুকুমারী ভট্টাচার্য হিন্দুত্ববাদীদের লেখা থেকে উদ্ধৃত করেছেন:

ক. “মহিলা শিক্ষার ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হবে। কারণ প্রত্যেক মাকে সাক্ষর করলেই প্রত্যেক শিশুও সাক্ষর হবে।”[15]

সুকুমারী ভট্টাচার্যের মন্তব্য:

নারীর নিজের জন্য শিক্ষার প্রয়োজনকে ছাপিয়ে উঠেছে তার সন্তানের সাক্ষরতার প্রয়োজন। তাছাড়া সাক্ষরতা তো শিক্ষার প্রথম ধাপ মাত্র। নারীর শিক্ষার প্রয়োজন বা অধিকার সম্বন্ধে কোনও কথাই নেই ইস্তেহারে।[16]

খ. হিন্দুত্ববাদী সাধ্বী ঋতাম্ভরার উক্তি— “নারীকে নারী হতে হবে। তাকে মা হতে হবে।”[17]

সুকুমারীর মন্তব্য:

মাতৃত্বের ওপর অত্যধিক গুরুত্ব দেওয়ার আড়ালে কুমারী ও সন্তানহীনা নারীর প্রতি সমাজের অবজ্ঞা প্রকাশিত হয়; এর সমর্থন আছে সঙ্ঘ পরিবারের নারী সম্বন্ধে আদর্শেও।[18]

গ. বিধবাবিবাহ ও সতীদাহ সম্পর্কে সঙ্ঘ পরিবারের বক্তব্য— বিধবাবিবাহ অন্যায় এবং সতীদাহ প্রথা চলতে দেওয়া উচিত।[19] মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন।

ঘ. সঙ্ঘ পরিবারের মতে, বাড়ির বাইরের কাজ নারীদের করা উচিত নয়, “কারণ এতে পরিবারের গঠন নষ্ট হয়। … বাল্যবিবাহ প্রবর্তন করতে হলে তা আমরা করব। … সম্পত্তিতে নারীর অধিকার দিলে সামাজিক সংহতি নষ্ট হয়। দুই বর্ণের মধ্যে বিবাহে সামাজিক সংহতি নষ্ট হয়ে যায়, কারণ প্রত্যেক বর্ণ বা জাতির নিজস্ব ঐতিহ্য আছে।”[20]

সুকুমারীর মন্তব্য:

এইসব মতামত বিংশ শতকের শেষভাগে উচ্চারিত হচ্ছে। … প্রশ্ন আসে, এই বহু-ঘোষিত সামাজিক সংহতির যে চেহারা আমরা অপেক্ষাকৃত অনুন্নত রাজ্যগুলিতে দেখতে পাই, সেখানে স্ত্রীশিক্ষার প্রচলন নেই। মাতৃত্ব ছাড়া নারীর আত্মবিকাশ বা আত্মপ্রকাশের আর কোনও সমাজ-সমর্থিত পথ নেই, বিধবাবিবাহ অকল্পনীয় এবং মধ্যে মধ্যেই রূপ কানোয়াররা পুড়ে মরে। নারী সেখানে সম্পত্তির ওপর কোনওরকম অধিকারই পায় না, পাওয়ার স্বপ্নও দেখতে সাহস পায় না। এক কথায় নারীর সামাজিক অবস্থান মধ্যযুগীয় অন্ধকারে; সমাজে তার ব্যক্তিসত্তা সম্পূর্ণভাবে অস্বীকৃত। হিন্দু রাষ্ট্রে এই হল নারীর স্থান।[21]

ঙ. হিন্দুত্ববাদের তাত্ত্বিক গোলওয়ালকরের বক্তব্য হল: “মেয়েদের স্বাধীনতা দেওয়ার ফলেই প্রতি পরিবারে বিরোধ বাড়ছে। মেয়েরা অনেক অধিকার পেয়েছে বলেই এখন পরিবারগুলি ভেঙে যাচ্ছে। … হিন্দু মেয়েদের অধিকার প্রদানের আইনগুলি, যেমন বিধবাবিবাহ আইন (১৮৫৬), হিন্দু মেয়েদের সম্পত্তিতে অধিকার সংক্রান্ত আইন (১৯৩৭), বিশেষ বিবাহ আইন (১৯৫৪) এবং হিন্দু বিবাহ ও বিবাহ-বিচ্ছেদ আইন (১৯৫৫) সবগুলিই হিন্দু সমাজে এবং হিন্দু পরিবারে শুধুমাত্র ভাঙন ও বিশৃঙ্খলা আনতেই সাহায্য করেছে।”[22]

সুকুমারীর মন্তব্য:

নারীর মানবিক অধিকারগুলি সম্বন্ধে বিগত অর্ধশতাব্দী জুড়ে সারা পৃথিবীতে বহু সহস্র নারীর যে আন্দোলন অপ্রতিহত গতিতে অগ্রসর হচ্ছে, বিজেপি প্রবক্তাদের মতে তা শুধু নিষ্প্রয়োজন নয়, দেশের, সমাজ ও পরিবারের সংহতির পক্ষে বিধ্বংসী। বর্তমানের নারী এই ধরনের পশ্চাদমুখী মতকে মেনে নিয়ে অন্তঃপুরচারিণী, সর্বতোভাবে পুরুষের কর্তৃত্বাধীন অবস্থান ও নিজের ব্যক্তিসত্তার সম্পূর্ণ বিলোপ কি মেনে নিতে প্রস্তুত?[23]

চ. প্রতিবছর বধূহত্যার যে অসংখ্য ঘটনা কাগজে প্রকাশিত হয় তার অন্যতম কারণ পণপ্রথা। এই পণপ্রথা হিন্দু শাস্ত্রসম্মত। হিন্দু রাষ্ট্রে বাস করলে নারী কখনও এই ধরনের অপঘাত মৃত্যুর আশঙ্কা থেকে মুক্তি পাবে না।[24]

ছ. গোলওয়ালকর লিখেছেন: “ইদানিং প্রায়ই নারীর জন্য পুরুষের সমান অধিকারের দাবী শোনা যায়। পুরুষের আধিপত্য থেকে তাদের মুক্তির দাবি। ভিন্ন লিঙ্গের ভিত্তিতে নানা ক্ষমতার আসনে তাদের জন্য আসন সংরক্ষণের দাবি শোনা যাচ্ছে; ফলে জাতিবাদ, সাম্প্রদায়িকতাবাদ, ভাষাভেদবাদ ইত্যাদির সঙ্গে আরও একটা ‘বাদ’ যুক্ত হচ্ছে— লিঙ্গলিঙ্গবাদ।”[25]

সুকুমারী গোলওয়ালকরের এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বলেন:

এ মন্তব্যের উদ্দেশ্য খুবই স্পষ্ট: নারীর স্থান পুরুষের অধীনে, তা-ই থাকা উচিত, আর ব্যতিক্রমের চেষ্টা সমাজের পক্ষে ক্ষতিকর। ক্ষমতার আসনগুলিতে পুরুষের একচেটিয়া অধিকার, সেখানে নারীর অনুপ্রবেশ বাঞ্ছনীয় নয়। সন্তানের প্রাথমিক শিক্ষা, সাক্ষরতার জন্য নারীকে সাক্ষর হতে হবে এ কথা যারা বলে, তারা প্রকারান্তরে নারীর উচ্চশিক্ষা এবং বহির্জগতে আপন শক্তি ও কুশলতার জোরে সম্মানের ও ক্ষমতার স্থান অধিকার করা আদর্শ হিন্দু রাষ্ট্রে অচল বলে মেনে নেন। বলা বাহুল্য, সন্ন্যাসিনী উচ্চশিক্ষিতা হতে পারেন, কিন্তু কুলবধূ? নৈব নৈব চ। বিজেপির যে নারী সংগঠন, রাষ্ট্রসেবিকা দল, তাদের কার্যক্রমের মধ্যে গৃহবধূর ভূমিকায় থেকে অন্যের সাহায্য ও সংগঠন করা অনুমোদিত, কিন্তু সমস্ত ছকটাই পুরুষতান্ত্রিক সমাজের অনুগত। হিন্দু শাস্ত্র নারীকে যে ভূমিকায় দেখেছে, রেখেছে ও রাখতে চায়, হিন্দু রাষ্ট্রেও নারী সেখানেই থাকবে। শাস্ত্র যে লক্ষণের গণ্ডি এঁকে রেখেছে, তার মধ্যেই সীতার অনুগামিনীরা চলাফেরা করবে, বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করবে না।[26]

আরএসএসের প্রতিষ্ঠাতা হেডগেওয়ার বেশ জোরালোভাবেই বর্ণব্যবস্থাকে সমর্থন করেছেন। এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য হল:

চতুর্বর্ণ ব্যবস্থা কখনওই বিলুপ্ত হয়নি, এমনকি বুদ্ধের প্রবাহেও নয়, বরং জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে; রাজা ও সম্রাটগণ এই চতুর্বর্ণ ব্যবস্থা নামক পৃথকীকরণের যৌক্তিকতাকে বুঝতে পেরেছিলেন। এই প্রতিষ্ঠানে সপক্ষে সমর্থন উত্তরোত্তর এতটাই শক্তিশালী হয়ে উঠেছে যে, আমাদের জাতীয়তা বর্ণব্যবস্থার সঙ্গে প্রায় একীভূত হয়ে গেছে।”[27]

হিন্দুত্ববাদী তাত্ত্বিক গোলওয়ালকর বর্ণ-জাতভেদকে প্রশংসা করে বলেন: “জাতিভেদ প্রথা সামাজিক সংহতির একটি বিশিষ্ট বন্ধন।[28]

আর এক হিন্দুত্ববাদী, যিনি বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সন্ত সমিতির নেতা, সেই স্বামী মুক্তানন্দের কথা শোনা যাক। নিম্নবর্ণভুক্ত জগজীবন রাম সম্পর্কে এঁর মন্তব্য হল এর মন্তব্য হল: “তুই ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী ছিলি, তাও, শালা তুই হরিজন? শালা তুই চামারদের জন্য অধিকার চাস, আবার ব্রাহ্মণদের পাশে বসতেও চাস! … জাতিভেদকে আবার পুনরুজ্জীবিত করা সম্ভব।”[29]

সুকুমারীর মন্তব্য:

জাতিভেদ ও তথাকথিত নিম্নবর্গের মানুষের বিজেপির হিন্দু রাষ্ট্রে স্থান কোথায় হবে সে কথা এসব উক্তিতে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সংসারত্যাগী ধর্মপ্রাণ স্বামীজীর ‘নিম্নবর্গের’ মানুষ সম্বন্ধে অসহিষ্ণুতা কোন রুচিবর্জিত আক্রোশে পৌঁছেছে, তা তাঁর ভাষা প্রয়োগেই স্পষ্ট।[30]

প্রাচীন বৈদিক ধর্মের সঙ্গে আধুনিক হিন্দু ধর্মের বহু পার্থক্য থাকলেও একটি বিষয়ে বেশ সাদৃশ্য আছে। তা হল শূদ্রাতিশূদ্র পীড়নে উভয় নেতারাই এককাট্টা। শম্বুক থেকে রোহিত ভেমুলা প্রাচীন ও নবীন ভারতকে একাকার করে দেয়। রোহিত ভেমুলার ‘হত্যাকাণ্ড’ সুকুমারী ভট্টাচার্য না দেখে গেলেও দেখে গেছেন শম্বুক ও রোহিতের মৃত্যুর মতো অজস্র ঘটনা। তাই তাঁকে লিখতে হয়েছে শম্বুকের কথা, মায়াতির কথা।

সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সুকুমারী ভট্টাচার্য যে লড়াই করেছিলেন, এটা ছিল তার উপরিত্বকের বিষয়। কিন্তু তিনি আরও গভীরে গিয়ে কাজ করেছেন। নধর জলের নীচে ডুব দিয়ে দেখে আসতে চেয়েছেন কোনও কুঁড়ি আছে কি না। তার প্রাচীন সাহিত্য পাঠ এক বিকল্প ব্যাখ্যার সন্ধান দেয়। এই বিকল্প ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে The Indian Theogony, ইতিহাসের আলোকে বৈদিক সাহিত্য, নিয়তিবাদ, বেদে সংশয় ও নাস্তিক্য, বেদের যুগে ক্ষুধা ও খাদ্য, বাল্মীকির রাম, ইত্যাদি গ্রন্থে।


[1] সু.ভ। ২০০০: ৫, মুখবন্ধ। হিন্দু সাম্প্রদায়িকতা। কলকাতা। দীপ প্রকাশন।
[2] চন্দ্র, বিপাণ। ১৯৯৮: ১। আধুনিক ভারত ও সাম্প্রদায়িকতাবাদ। কলকাতা। কে পি বাগচী অ্যান্ড কোম্পানি। অনুবাদ: কুণাল চট্টোপাধ্যায়।
[3] Golwalkar. 2015: 183-84.
[4] বিজেপি নির্বাচনী ইস্তেহার, ১৯৯৬, পৃঃ ১৫, উদ্ধৃত সু.ভ। ২০০০: ১১৯।
[5] ডি এন ঝা দেখিয়েছেন যে, চতুর্দশ শতাব্দীতেই বিজয়নগর রাজ্যে ‘হিন্দু’ শব্দটির ব্যবহার দেখা যায় সংস্কৃত ভাষায়। ১৩৫২ খ্রিস্টাব্দে বিজয়নগরের দ্বিতীয় শাসক বুক্কার একটি লিপিতে তাঁর অন্যতম উপাধি ‘হিন্দুরায় সুরতরাণা’র কথা উল্লেখ আছে। (Jha, D.N. 2017: p. 13-14. Looking for a Hindu Identity. New Delhi: People’s Publishing House (P) Ltd.)
[6] পূর্বোক্ত, পৃঃ ১২০।
[7] চৌধুরী, কণিষ্ক। ২০১৮: ১২। হিন্দু জাতীয়তাবাদ— উদ্ভব ও বিকাশ। কলকাতা। আজাদী।
[8] দ্রষ্টব্য টীকা ১, পৃঃ ৪৬।
[9] পূর্বোক্ত, পৃঃ ৪৭।
[10] পূর্বোক্ত, পৃঃ ৪৭
[11] বাঞ্চ অফ থটস, পৃঃ ৩২৪; উদ্ধৃত সু.ভ। ২০০০: ১২৪।
[12] পূর্বোক্ত, পৃঃ ১২৪।
[13] উদ্ধৃত, পূর্বোক্ত, পৃঃ ১২৮।
[14] পূর্বোক্ত
[15] বিজেপি-র নির্বাচনী ইস্তেহার। ১৯৯৬। পৃঃ ১২।
[16] দ্রষ্টব্য টীকা ১, পৃঃ ১৩০।
[17] পূর্বোক্ত
[18] পূর্বোক্ত
[19] পূর্বোক্ত
[20] পূর্বোক্ত, পৃঃ ১৩০-৩১।
[21] পূর্বোক্ত, পৃঃ ১৩১।
[22] পূর্বোক্ত
[23] পূর্বোক্ত
[24] পূর্বোক্ত, পৃঃ ১৩২।
[25] উদ্ধৃত, পূর্বোক্ত, পৃঃ ১৩২।
[26] পূর্বোক্ত, পৃঃ ১৩২-৩৩।
[27] উদ্ধৃত, Islam, Shamsul. 2015. p. 276. Hindu Nationalism and Rashtriya Swayamsevak Sangha. Delhi: Media House.
[28] উদ্ধৃত, সু.ভ। ২০০০: ১২৯।
[29] পূর্বোক্ত
[30] পূর্বোক্ত

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4879 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...