রোবসন কথা : পঞ্চম ভাগ

দেবাশিস মৈত্র

(চতুর্থ ভাগ এখানে)

 

পল রোবসন # ১০

হাওয়ার্ড ফাস্টের ‘Peekskill, U. S. A.’ অ্যামেরিকায় প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৫১ সালে; প্রকাশক ছিল সিভিল রাইটস কংগ্রেস, যাদের সাহায্যার্থে পীকস্কিলের সেই অনুষ্ঠান। সেসময় ভারতীয় মুদ্রায় বইটির দাম ছিল– হার্ড কভার ১৫ টাকা এবং পেপারব্যাক ৫ টাকা। এই দাম সাধারণ ভারতীয় ক্রেতাদের নাগালের বাইরে এমন বিবেচনায় ১৯৫১ সালে গ্রন্থটির একটি সুলভ সংস্করণ ছাপা হয় ভারতে। প্রকাশক ছিলেন বম্বের ‘দ্য পিপলস পাবলিশিং হাউস।’ (প্রসঙ্গত, সম্ভবত আটের দশকের শেষে ‘পীকস্কিল’ নাম দিয়ে বইটি বাংলাতে অনুবাদ করেছিলেন অনীশ দেব। এছাড়া, কাছাকাছি সময়ে পল রোবসনের আত্মজীবনী ‘Here I stand’ অনুবাদ করেছিলেন কমলেশ সেন, নাম ছিল ‘যে মাটিতে দাঁড়িয়ে’)।

‘Peekskill, U. S. A.’ গ্রন্থটির এই ভারতীয় সংস্করণের জন্য যৌথভাবে একটি ভূমিকা লিখেছিলেন রোবসন ও ফাস্ট। এই ভূমিকার শেষ অংশটি ছিল এইরকম:

“পীকস্কিলের ঘটনাবলি আমাদের অনেক কিছু শিখিয়েছে। আমরা শিখেছি যে, ফ্যাসিস্ট শক্তির চেহারা পৃথিবীর সব দেশে একই রকম। আমরা শিখেছি, নিগ্রো মানুষ আর শ্রমজীবী মানুষের মিলিত শক্তি ফ্যাসিস্টদের বাহুবলকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতে পারে। সর্বোপরি আমরা শিখেছি, আজকের দিনে গণ-আন্দোলন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কোনও শিল্পীর পক্ষে সততার সঙ্গে শিল্পসৃষ্টি করা সম্ভব নয়।

“কোটি কোটি ভারতবাসীর কাছে এই ঘটনাবলির গুরুত্ব প্রশ্নাতীত। অ্যামেরিকার প্রগতিশীল মানুষদের মধ্যে ভারতের জনগণের প্রতি রয়েছে গভীর সহমর্মিতা, রয়েছে মানবজাতির এই বিশাল অংশের শক্তি ও সহ্যক্ষমতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা। আমাদের এগিয়ে আসতে হবে তাঁদের আরও কাছাকাছি, আরও সম্পূর্ণভাবে তাঁদের বুঝতে হবে, আর তাঁদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে আমাদের নিজেদের দেশে ক্রিয়াশীল নানান শক্তির সম্পর্কে যথাযথ বিশ্লেষণ। তাই আমরা আপনাদের কাছে উপস্থিত করছি অন্য এক অ্যামেরিকার গল্প। এই অ্যামেরিকা ট্রুম্যান বা অ্যাচিসনের অ্যামেরিকা নয়, এ হল সাধারণ মানুষ, শ্রমিকশ্রেণী, নিগ্রো এবং আরও বহু সংখ্যালঘু শ্রেণীর সমন্বয়ে গঠিত এক অন্য অ্যামেরিকা।”

পীকস্কিল। দূরের মাঠে পঁচিশ হাজারের কিছু বেশি শ্রোতার সমাবেশ। সামনে পল রোবসনকে লুম্পেনদের আক্রমণ ঠেকানোর জন্য আড়াই হাজার লোকের তৈরি-করা এক সুবিশাল বৃত্তাকার মানবপ্রাচীরের একটি ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ

 

House Committee on Un-American Activity-র জেরার মুখে নিজের অমার্কিন আচরণ সন্দেহাতীতভাবে এবং যথেষ্ট দাপটের সঙ্গে প্রমাণ করতে সক্ষম হওয়ার দরুণ হাওয়ার্ড ফাস্টের পুরস্কার জুটল, তিন মাসের কারাদণ্ড। এই তিন মাস ধরে জেলের কুঠুরিতে বসে তিনি লিখলেন একটি উপন্যাস, এক মডার্ন ক্ল্যাসিক—‘স্পার্টাকাস’।

হাওয়ার্ড ফাস্ট সেসময় অত্যন্ত জনপ্রিয় এক লেখক। কিন্তু জেল থেকে বেরিয়ে ফাস্ট দেখলেন, হাওয়া-মোরগ একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে গেছে। একাদিক্রমে আটটি প্রকাশনা সংস্থা থেকে স্পার্টাকাসের পাণ্ডুলিপি ফেরত এল। তাদের মধ্যে একটি সংস্থা তো ফাস্টের পাঠানো প্যাকেটটি খোলেইনি। একটি চিরকুট সঙ্গে জুড়ে দিয়ে তারা জানাল যে, কোনো দেশদ্রোহীর লেখা বই ছাপতে তারা রাজি নয়!

হ্যাঁ, ওঁরা সবাই দেশদ্রোহী! হাওয়ার্ড ফাস্ট, পল রোবসন, উডি গাথরি, পিট সিগার, আরথার মিলার… এমনকী হেলেন কেলার (১৯৫০ সালে যিনি সত্তর বছরের বৃদ্ধা) পর্যন্ত।

দেশপ্রেমিক তাহলে কে?

প্রশ্নটা সহজ, আর উত্তরও তো জানা! দেশদ্রোহীরা যাদের বিরোধিতা করে, তারাই তো দেশপ্রেমিক! সেই তালিকায় তো রয়েছে ওরা সবাই… প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান, সেনেটর ম্যাকার্থি, ওয়াল্ট ডিজনি আর রোনাল্ড রেগন, এফ-বি-আইয়ের সমগ্র টিম, HUAC-এর মাননীয় সদস্যরা, কু-ক্লুক্স-ক্ল্যানের গুণ্ডাবাহিনী… দেশপ্রেমিকের অভাব পড়েছে নাকি দেশে?

কারা যে দেশদ্রোহী আর কারা দেশপ্রেমিক-– ২০১৭ সালের ভারতেও তা ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

‘Peekskill, U. S. A.’ গ্রন্থটির প্রথম ভারতীয় সংস্করণের প্রচ্ছদ

 

পল রোবসন # ১১

দীর্ঘদিন ধরেই পল খবর পাচ্ছিলেন যে শুধু তাঁর উপরই নয়, এমনকী তাঁর কনসার্টে কারা গান শুনতে আসছে, সেদিকেও নজর রেখেছে এফ-বি-আই। উদ্দেশ্য আর কিছুই নয়, শ্রোতাদের মনে নিঃশব্দে আতঙ্ক ছড়িয়ে রোবসনের কাছ থেকে তাদের দূরে সরিয়ে দেওয়া। আর এখন তো তাঁর গান গাওয়া বন্ধ। গুটিকয়েক বন্ধু ছাড়া আর কেউ ভয়ে তাঁর সঙ্গে দেখাও করতে আসে না। এখন রোবসনের কোনও কাজ নেই, কোনও আয় নেই। পাসপোর্ট ফিরে পাওয়ার জন্য আদালতে মামলা করেছেন তিনি, সে মামলার কোনও অগ্রগতি নেই। নিঃসঙ্গতায় ক্রমশ ডুবে যেতে থাকলেন রোবসন।

একটা মাত্র মুচলেকা দিলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যেত। কিন্ত পল রোবসন যে the tallest tree in our forest!

একটি বিষয় এখানে লক্ষণীয়। পল রোবসনের বিরুদ্ধে কোনও থানায় কখনও কোনও অভিযোগ কেউ দায়ের করেনি; কখনও তিনি গ্রেপ্তার হননি; তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্র অথবা ব্যক্তিবিশেষ আদালতে কোনও মামলা দায়ের করেনি, দোষী সাব্যস্ত হওয়ার তো প্রশ্নই নেই; এমনকি তাঁকে গৃহে অন্তরীণ করে রাখার সিদ্ধান্তও সরকার নেয়নি। আপাতদৃষ্টিতে তিনি স্বাধীন নাগরিক, শুধু সুকৌশলে তাঁর আত্মপ্রকাশের সমস্ত রাস্তাগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাঁর পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করার পিছনে সরকারপক্ষের যুক্তি ছিল এই যে, তাঁকে দেশের বাইরে যেতে দিলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ নাকি ক্ষুণ্ণ হতে পারে!

অতএব দেশের ভিতরে-বাইরে তাঁর শিল্পচর্চার সমস্ত পথ তখন রুদ্ধ। রোবসন তখন মাঝে মাঝে গান গাইছেন কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য নির্দিষ্ট কোনও গির্জার প্রার্থনাসভায়, অথবা অরাজনৈতিক কোনও সংগঠনের জমায়েতে।

আর এভাবেই আস্তে আস্তে তিনি এগিয়ে চলেছেন বার্ধক্যের দিকে।

১৯৫৩ সালে রোবসনের কাছে একটা অদ্ভুত প্রস্তাব এল। পূর্ব জার্মানির ফিল্ম প্রযোজনা সংস্থা DEFA সারা পৃথিবীর শ্রমজীবী মানুষদের ঐক্যর কথা প্রচার করার উদ্দেশ্যে একটি তথ্যচিত্র করতে চায়। রোবসনকে সেই ফিল্মের জন্য একটি গান গাইতে হবে।

The Song of the Rivers তথ্যচিত্রটির সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন নানান দেশের এমন কয়েকজন প্রগতিশীল মানুষ, যাঁরা স্বক্ষেত্রে স্বরাট, যাঁদের একশো মাইলের মধ্যে আসার মতো প্রতিভাধর কেউ সেই সময়ে পৃথিবীতে ছিলেন না, এখন তো নেই-ই। ছবির জন্য ওই একই শিরোনামের গানটি লিখেছিলেন জার্মানির বেরটোল্ট ব্রেশট, গানে সুর দিয়েছিলেন রাশিয়ার দিমিত্রি শোস্টাকোভিচ, ছবির ইংরাজি ভার্শনের জন্য গান গেয়েছিলেন অ্যামেরিকার পল রোবসন, ছবির প্রচারের জন্য পোস্টার এঁকেছিলেন স্পেনের পাবলো পিকাসো, এবং সর্বোপরি ছবিটি পরিচালনা করেছিলেন নেদারল্যান্ডের ইয়োরিস ইভেন্স (Joris Ivens)। ছয় দেশের ছয় নদী-– ভোলগা, মিসিসিপি, গঙ্গা, নীল, আমাজন এবং ইয়াংসি-– এদের নিয়েই ছবির কাহিনি। এই ছয় নদী একদিন এসে মহাসমুদ্রে মিলবে-– এ-ই ছিল ছবির বক্তব্য। মোট ৩২ জন ক্যামেরাম্যান বিশ্বের নানান দেশে ঘুরে ঘুরে ছবির শুটিং করেছিলেন। ইয়োরিস ইভেন্সের আরও বহু ছবির মতো এই ছবিটিও দেখার সৌভাগ্য আমার হয়নি। এইটুকু শুধু জানি যে, ছবিটিতে ছয় নদীর ছয় রকম গল্পকে এক সূত্রে বেঁধে রেখেছিল পল রোবসনের গাওয়া গানটি। ছবির পরিচয়লিপিতে বলা হয়েছিল যে, এটি হল… ode to international solidarity।

একটি মাত্র তথ্যচিত্রকে কেন্দ্র করে এতজন প্রাতঃস্মরণীয় মানুষের এই অবিশ্বাস্য শীর্ষ সম্মেলন?

হ্যাঁ, হয়েছিল, ওই একবারই।

গানের কথা এবং সুরের নোটেশন রোবসনের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সস্তা স্টুডিওতে গানটি রেকর্ড করে রোবসন যথাস্থানে সেটি ফেরত পাঠালেন।

বিদেশে গান গাইতে যাওয়ার উপায় নেই রোবসনের। কিন্তু কানাডা? সে তো ঘরের পাশেই। কানাডার নাগরিকরাই উপায় খুঁজে বার করল। ১৯৫২ আর ১৯৫৩ সালে, পরপর দু’বছর, কানাডা-সীমান্তের পাশে পীস আর্চ পার্কে একটি ট্রাকের উপর দাঁড়িয়ে গান গাইলেন রোবসন। সীমানার এপার আর ওপারে দাঁড়িয়ে তাঁকে দেখল, তাঁর সে গান শুনল, কমপক্ষে তিরিশ হাজার শ্রোতা।

অনেকদিন আগে ইংল্যান্ডে থাকাকালীন ওয়েলসের কয়লাখনির শ্রমিকদের মধ্যে কিছুদিন কাটিয়েছিলেন রোবসন। এবার তাদের কাছ থেকেই ডাক এল-– রোবসনের গান আবার শুনতে চায় তারা। নিউ ইয়র্কে বসে গান গাইলেন রোবসন, আর ট্রান্স-আটলান্টিক রেডিওফোন ব্রডকাস্টের মাধ্যমে সেই গান শুনল ওয়েলসের শ্রোতারা।

১৯৫৮ সালে প্রকাশিত হল পল রোবসনের আত্মজীবনী, Here I stand। মার্কিন সরকারের কাছে এই ঘটনাটি বোধহয় একটু অপ্রত্যাশিতই ছিল। কিন্তু সমস্ত দিক থেকে তাঁর মুখ বন্ধ করে দেওয়ার পরও গ্রন্থরচনা থেকে তাঁকে নিবৃত্ত করার উপায় তাদের জানা ছিল না। একটিই পথ খোলা ছিল তাদের সামনে, বইটির বহুল প্রচার বন্ধ করার ব্যবস্থা করা। রাষ্ট্র তার সর্বশক্তি নিয়ে সেই কাজেই ঝাঁপিয়ে পড়ল।

রোবসনের নিজের ভাষায়, Here I stand ছিল একাধারে তাঁর আত্মজীবনী এবং ম্যানিফেস্টো, যেখানে তাঁর সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থান তিনি পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। বইটির প্রকাশক ছিল কৃষ্ণাঙ্গ মালিকানাধীন এক ছোট প্রকাশনা সংস্থা Othello Associates। একটি গ্রন্থের প্রকাশকে কেন্দ্র করেও যে মানুষের গাত্রবর্ণের কথা উল্লেখ করতে হচ্ছে, তা হয়তো দুর্ভাগ্যজনক, কিন্তু উপায় নেই। প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বইটি যে নিছক গাত্রবর্ণের ভিত্তিতেই গোটা দেশটাকে দু’ভাগে ভাগ করে দিয়েছিল। একদিকে রইল অ্যামেরিকার প্রত্যেকটি শহরের সমস্ত বড় সংবাদপত্র, প্রত্যেকটিই শ্বেতাঙ্গ মালিকানাধীন (চলতি কথায় White Press)। সেইসব কাগজে বইটির পর্যালোচনা প্রকাশিত হওয়া তো দূরের কথা, এমনকি বইটি ছাপা হওয়ার খবরও সম্পূর্ণ এড়িয়ে যাওয়া হল। অন্যদিকে থাকল কৃষ্ণাঙ্গদের মালিকানাধীন ছোট ছোট কিছু সংবাদপত্র, আর কিছু বামপন্থী পত্রপত্রিকা-– তারা বইটির প্রশংসায় উচ্ছ্বসিত।

কিন্তু দেশের মধ্যে প্রায় ব্রাত্য করে রাখলেও বিদেশের সমাদরকে আটকানো গেল না। একের পর এক দেশে নানান ভাষায় বইটির অনুবাদ বেরোতে থাকল। রাশিয়া এবং অন্যান্য সমাজতন্ত্রী দেশে বইটির জয়জয়কার হয়তো প্রত্যাশিতই ছিল। কিন্তু আদ্যন্ত দক্ষিণপন্থী দেশ বলে পরিচিত জাপানেও অকুণ্ঠ সমাদর পেল বইটি।

ভারতীয় কোনও ভাষায় বইটির অনুবাদ সেই সময়ে বেরোয়নি বটে, কিন্তু মূল ইংরাজি বইয়ের কিছু কপি এদেশেও এসে পৌঁছেছিল। বম্বের ‘ব্লিৎজ’ সংবাদপত্র ১৯৫৮ সালের ৫ই এপ্রিল চার পাতার এক বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করল; তার পুরোটা জুড়েই শুধু এই বই এবং তার লেখকের সম্পর্কে আলোচনা।

দীর্ঘ আট বছর ধরে পল রোবসনের পাসপোর্ট সংক্রান্ত মামলাটি চলার পর এই ১৯৫৮ সালেই সুপ্রিম কোর্ট রায় ঘোষণা করল-– পল রোবসনের পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করার সিদ্ধান্ত ছিল বেআইনি; রাজনৈতিক বিশ্বাস বা মতামতের কারণে কোনও নাগরিকের পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করা যায় না। রোবসন তাঁর পাসপোর্ট ফেরত পেলেন। পৃথিবীর যে কোনও দেশে যেতে রোবসনের আর কোনও বাধা রইল না।

রোবসনের বয়স তখন ষাট।

কয়েক মাসের মধ্যেই সস্ত্রীক রোবসন বেরিয়ে পড়লেন কনসার্ট ট্যুরে। প্রথমে ইংল্যান্ড; একের পর এক গানের অনুষ্ঠান, ‘ওথেলো’ নাটকের নামভূমিকায় আরও একবার অভিনয়। অতঃপর রাশিয়া, হাঙ্গেরি। বহু বছর পর রোবসনের জীবনে আবার ফিরে এসেছে চূড়ান্ত কর্মব্যস্ততা।

কিন্তু ততদিনে রাষ্ট্র তাঁর জীবন থেকে কেড়ে নিয়েছে আট-আটটা বছর। অসাধারণ মানসিক শক্তির অধিকারী এই মানুষটি ভিতরে ভিতরে তখন ভয়াবহ অবসাদের শিকার। সেই অবসাদ দুঃসহ হয়ে উঠল ১৯৫৯ সালে, যখন প্রায় একই সঙ্গে ধরা পড়ল পলের হৃদযন্ত্রের সমস্যা আর তাঁর স্ত্রী এসল্যান্ডা রোবসনের ক্যান্সার।

১৯৬০ সালে তাঁর জীবনের শেষ কনসার্ট ট্যুর অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ডে। পল রোবসন তখন অতীতের ছায়ামাত্র। ১৯৬৩ থেকে তিনি লোকচক্ষুর অন্তরালে নিজেকে সরিয়ে নেন।

১৯৭৬-এ ফিলাডেলফিয়ায় নিজের বোনের বাড়িতে পল রোবসনের জীবনাবসান হয়।

সঙ্গীত নিয়ে অনেক নতুন নতুন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার ইচ্ছে ছিল রোবসনের, গাওয়ার কথা ছিল অনেক নতুন ধরণের গান। সেইসব পরীক্ষা শুরু করার মতো সাঙ্গীতিক পূর্ণতা যখন তাঁর মধ্যে এসেছে, ঠিক তখনই তো চারিপাশে লোহার দেওয়াল তুলে বন্দি করে ফেলা হল তাঁকে। নাজিম হিকমতের কথাগুলোই সত্য হল শেষ পর্যন্ত। ওরা তাঁকে গান গাইতে দিল না।

পল রোবসনের কথা এখানেই শেষ হতে পারত। কিন্তু আরও একজন মহান শিল্পীকে এই লেখায় একবারের জন্য ফিরিয়ে না আনলে একটি প্রসঙ্গ অসমাপ্ত রয়ে যাবে।

তিনি হলেন চার্লি চ্যাপলিন।

(ষষ্ঠ তথা শেষ ভাগ ১লা নভেম্বর)

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4879 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

1 Comment

  1. মারা গেলেন?! লেখাটা পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল রোবসনও বেঁচে থাকুন, আর লেখাটাও শেষ না হোক… মন খারাপ হল!

আপনার মতামত...