চন্দ্রাবতীর অন্য রামায়ণ

চিরঞ্জয় চক্রবর্তী

 

চন্দ্রাবতী (১৫৫০-১৬০০) ষোড়শ শতাব্দীর কবি। ভারতবর্ষে যে তিনজন মহিলা স্বীকৃত রামায়ণ রচয়িতা আছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতমা। মহাকবি বাল্মীকি যে অনুক্রমে রামায়ণ লিখেছিলেন, তখনকার দিনে কোনও কবিই সেই অনুক্রম ভাঙতে সাহস দেখাননি। তিনি দেখিয়েছিলেন। অনেকেই বলে থাকেন চন্দ্রাবতী প্রথম বাঙালি কবি যিনি রাবণকে গুরুত্ব দিয়েছেন। সেই রামায়ণের টেক্সট নিয়ে চিরঞ্জয় চক্রবর্তীর বই ‘চন্দ্রাবতী রামায়ণ’। প্রকাশক সূত্রধর। বইয়ের ভূমিকার অংশটি এখানে পেশ করা হল।

দীনেশ চন্দ্র সেনের পূর্ববঙ্গ গীতিকায় আমরা একটা অসম্পূর্ণ রামায়ণ পেয়েছি। এই রামায়ণটির রচয়িতা চন্দ্রাবতী ভট্টাচার্য, যদিও তিনি চন্দ্রাবতী নামেই পরিচিত। তাঁর লেখা রামায়ণ অন্যরকম। অর্থাৎ সাধারণ রামায়ন থেকে আলাদা। রামায়ণের স্বতন্ত্রতা চন্দ্রাবতীর জীবনচর্চা থেকেই উঠে এসেছে বলে মনে হয়। বা বলা যেতে পারে তিনি যে স্বতন্ত্র জীবন-যাপনে নিজেকে অভ্যস্ত করেছিলেন, আপাতদৃষ্টিতে সেটা অন্যরকম মনে না হলেও, নিজেকে নিজের মধ্যে গুটিয়ে নেওয়াও এক বিশেষ শৈলী। হয়ত এই বিশেষত্ব রচনায় ফুট উঠেছে।

তাঁর বাবা বংশীদাস ভট্টাচার্য ছিলেন শিবভক্ত, মা জানকী। পূর্ববঙ্গে বংশীদাসের লেখা মনসা ভাসানের গান এখনও খুব সমাদৃত। বাবার পুজোর জন্য তিনি ফুল তুলতেন। তাঁদের বাড়ি ছিল পাতুয়ারী গ্রামে। বাড়ির ফুল তোলার পর ফুলেশ্বর নদীর পাড়ে যেতেন ফুল তুলতে। বহুরকম ফুলের গাছ সেখানে ছিল এবং স্বাভাবিক কারণেই নানারকম ফুল ফুটত। তিনি মনের অনন্দে ফুল তুলতেন, ভোরবেলা ঠান্ডা বাতাসে বসে মালা গাঁথতেন। নদীর অপর পাড়ের সুন্ধ্যা গ্রাম থেকে ফুল তুলতে আসতেন এক অনিন্দ্যকান্তি যুবক, তাঁর নাম জয়চন্দ্র চক্রবর্তী। দুজনের দেখা হত, কথা হত, ক্রমশ আলাপ প্রেমে পরিণত হল। প্রেমালাপের মধ্যেই জয়চন্দ্র জানান, তিনি মামাবাড়িতে থাকেন, বাবা-মা কেউ নেই। অর্থাৎ তিনি অনাথ। শিব এবং অন্যান্য দেবতাদের জন্য চন্দ্রাবতী মালা গাঁথতেন। উভয়ের আলাপ হওয়ার পর থেকে সংখ্যায় একটি মালা বেশি গাঁথা শুরু করলেন চন্দ্রাবতী, সেটি জয়চন্দ্রের। ধীরে ধীরে প্রতিদিন সকালে চন্দ্রাবতীর হাতে গাঁথা মালা না পেলে তিনি সুস্থ থাকতে পারতেন না। মালার স্পর্শে বা চন্দ্রাবতীর হাতের স্পর্শে তিনি সারাদিন উজ্জ্বল এবং উচ্ছল থাকতেন।

কন্যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নারী হয়ে ওঠেন। বিবাহযোগ্যা কন্যা অভিভাবকদের চিন্তার বিষয়।

তৎকালীন দিনে এ এক ভয়ানক অসুখ। বিবাহযোগ্যা কন্যা ঘরে থাকাটাই অপদার্থতা এবং অপরাধবোধ তৈরি হওয়ার অনুঘটক। পাত্রী এবং পিতা-মাতা তিনজনেই এই অসুখে ভোগে।

অন্যদিকে গরীব ব্রাহ্মণ বংশীদাস প্রতিদিন শিবপুজো করতে করতে বলতেন, “আমি নিঃসহায় সঙ্গতিশূন্য ব্রাহ্মণ, আমি কেমন করিয়া কন্যাটির বিবাহ দিব?” নিশ্চল শিবঠাকুর প্রার্থনা শুনতে শুনতে একদিন ঘটকঠাকুরকে পাঠিয়ে দেন। বিধাতার অদ্ভুত লক্ষণ ঘটকঠাকুর জয়চন্দ্রকেই পাত্র হিসেবে উপস্থিত করেন। বংশীদাস কোষ্ঠীবিচার করেন, রাজযোটক। বর ও কনের এমন অশ্চর্য মিল সচারাচর দেখা যায় না। যখন কোষ্ঠীর ফল শুভ, তখন বংশীদাসের আর কোনও দ্বিধাই রইল না। বিবাহের দিন স্থির হয়ে গেল।

শুভলগ্নের অপেক্ষায় সবাই, কারণ রাজযোটক, যা সচারাচর হয় না। অন্তঃসলিলা আরেকটা কারণ প্রেম বিবাহের দ্বারা সফলতা পূর্ণ হতে চলেছে। দীনেশচন্দ্র সেন লিখছেন, ‘তখন বসন্তের হওয়া প্রকৃতিকে আনন্দরসে ডুবাইয়া ধরিত্রীর বৃক্ষকুলকে স্পন্দিত করিয়া ঘন ঘন বহিতেছে— আমগাছের মুকুল হইতে শ্যামবর্ণের কুঁড়ি বাহির হইয়াছে। চারিদিকে অশ্বত্থ ও পন্নগ বৃক্ষে নূতন পাতার সমারোহ। পান ও খিলি বিতরিত হইয়া বিবাহের উদ্যোগ চলিল।’

ইতিমধ্যে জয়চন্দ্র নদীর পাড়ে এক মুসলমান কন্যাকে দেখেন। তাঁর রূপে মুগ্ধ হয়ে যান। নিজে মুসলমান হয়ে তাঁকে বিবাহ করেন। চন্দ্রাবতী পড়ে থাকেন বাপের কাছে। জয়চন্দ্রের এই হঠকারী সিদ্ধান্তে চন্দ্রাবতী দৃঢ়চেতা হয়ে ওঠেন বা বলা যেতে পারে নতুন চন্দ্রাবতীর জন্ম হয়।। বাবা-মা অন্যস্থানে বিয়ের কথা বললে রাজী হন না। তিনি ঘোষণা করেন, আর বিবাহ করবেন না। সারাজীবন শিবপুজো করে কাটাবেন। অন্যদিকে সবকিছু বিবেচনা করে জ্ঞানী, ধার্মিক ও সংযমী বংশীদাস অন্য কোনও বাবার মত তাঁকে দ্বিতীয়বার অনুরোধ না করে আজীবন কুমারী ব্রত অবলম্বন করে থাকবার অনুমতি দিয়ে বললেন, “শিবোপূজা কর, লিখ রামায়ণে।”

জয়চন্দ্র মুসলমান রমণীর দ্বারা প্রতারিত হওয়ায় এবং স্বধর্ম ত্যাগ করার ফলে নির্বান্ধব হয়ে পড়েছিলেন। একবার চন্দ্রাবতীর সঙ্গে দেখা করতে চেয়ে চিঠি দিয়েছিলেন। নিঃসঙ্গ, ধর্মচ্যুত, নিঃসম্বল জয়চন্দ্র তখন প্রায় পাগল। অনুতাপ ছাড়া আর কিছু করার নেই। চন্দ্রাবতী পত্র পেয়ে বংশীদাসের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘কী করব?’

জীবনে এত বড় একটা দুর্ঘটনার পর চন্দ্রাবতী সারাদিন ফুলেশ্বর নদীর পাড়ে শিবমন্দিরেই থাকতেন। পুজো করতেন, সাধনা করতেন। চিঠি পেয়ে তিনি বাবার কাছে প্রশ্ন করায় বাবা বলেছিলেন, ‘ধর্মে অবিচল থাকো।’ ফলে শিবমন্দির ছাড়া অন্য কোথাও তিনি যান না, কেউ তাঁকে দেখতেও পায় না। তিনি শিবমন্দিরের দরজা বন্ধ করেই সাধন-ভজন করেন। কবির ভাষায়—

নির্ম্মাইয়া পাষাণশিলা বানাইল মন্দির।
শিবপূজা করে কন্যা মন করি স্থির।।
অবসরকালে কন্যা লেখে রামায়ণ।
যাহারে পড়িলে হয় পাপ বিমোচন।।
জন্নাথ১ থাকিব কন্যা কুলের কুমারী।
একনিষ্ঠ হইয়া পূজে দেব ত্রিপুরারী।।
শুধাইলে না কয় কথা মুখে নাহি হাসি।
একরাত্রে ফুটা ফুল ঝুইয়া হইল বাসি।।

জয়চন্দ্র দেখা করতে আসেন, শিবমন্দিরের বন্ধ দরজায় বারবার আঘাত করেন। চন্দ্রাবতী সাধনায় এতটাই মগ্ন ছিলেন যে জয়চন্দ্রের ডাক কিংবা কোনও আওয়াজ তিনি শুনতে পাননি। (হতে পারে তিনি জয়চন্দ্রের ডাক এবং দরজায় করাঘাতের আওয়াজ উপেক্ষা করেছিলেন, যা তাঁর চরিত্রের সঙ্গে মানানসই।) জয়চন্দ্র ফুল দিয়ে মন্দিরের সিঁড়িতে নিজের কথা লিখে যান। জল আনতে বাইরে এসে চন্দ্রাবতী জানতে পারেন, জয়চন্দ্র এসেছিলেন। কিছুক্ষণের জন্য হলেও বিচলিত হয়েছিলেন। তারপর মন শক্ত করে ফুলেশ্বরে জল আনতে গেছিলেন। সেখানে তাঁর জন্য একটা ভয়াবহ দৃশ্য অপেক্ষা করছিল। যে জয়চন্দ্র মাত্র একবার তাঁকে দেখতে চেয়েছিলেন, তিনি নদীর জলের মধ্যে শুয়ে আছেন নিথর শরীরে।

অসাধারণ একটি প্রেমকাহিনির এখানেই ইতি হয়।

কাঁথাস্টিচ। শিল্পী: মহামায়া শিকদার

২.

চন্দ্রাবতী নিজের মত রামায়ণ লেখেন। মহাকবি বাল্মীকি যে অনুক্রমে রামায়ণ লিখেছিলেন, তখনকার দিনে কোনও কবিই সেই অনুক্রম ভাঙতে সাহস দেখাননি। অনেকেই বলে থাকেন চন্দ্রাবতী প্রথম বাঙালি কবি যিনি রাবণকে গুরুত্ব দিয়েছেন। এই সত্যটা কালের হিসেবে গৌণ হযে যায়, কারণ ‘বাল্য শিক্ষা’ পুস্তকের প্রণেতা রামসুন্দর বসাক নয় লাইনে শিশুদের জন্য একটি রামায়ণ লিখেছিলেন সেখানেও সীতা অপহরণ থেকেই রামায়ণ শুরু হয়েছে।

রামায়ণ

দুষ্টমতি লঙ্কাপতি      হরে নিল সীতাসতী,
রামচন্দ্র গুণাধার      ত্বরা গিয়ে সিন্ধুপার,
ঘোরতর যুদ্ধ করে    বাঁধিলেন লঙ্কেশ্বরে,
সীতাসহ পুনরায়      চলিলেন অযোধ্যায়,
লঙ্কাপুরে ছিল রানী    কত কষ্ট নাহি জানি,
অন্তঃস্বত্বা ছিল সীতা   বিনা দোষে নির্ব্বাসিতা,
বাল্মীকির তপোবনে    শুভদিনে শুভক্ষণে,
বীরপুত্র কুশ-লব       করিলেন সুপ্রসব,
অবশেষে পুত্রবতী      ঘরে নিল রঘুপতি।

বাংলা ভাষায় সংক্ষিপ্ততম রামায়ণ হলেও, এটি পাঠ্যপুস্তকের একটি অংশ। সাধারণে স্বীকৃত রামায়ণ নয়। মহাকবি কৃত্তিবাসের বাড়িতে একটি ছোট রামায়ণ খোদিত আছে, সেটি রামায়ণ নয়, রামায়ণের সার কথা:

আদিকাণ্ডে রাম জন্ম, বিবাহ সীতার।
অযোধ্যাকাণ্ডেতে রাম চলিলা কান্তার।।
অরণ্যকাণ্ডতে সীতা হরিল রাবণ।
কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ডতে বালি হইলা নিধন।।
সুন্দরাকাণ্ডতে সেতু-বন্ধ চমৎকার।
লঙ্কাকাণ্ডে রাবণের সবংশে সংহার।।
উত্তরাকাণ্ডতে ছয় কাণ্ডের প্রকাশ।
লোক নিন্দা হেতু ঘটে সীতা-বনবাস।।
কৃত্তিবাস পণ্ডিতের কবিত্ব বিচক্ষণ।
সংক্ষেপে কহিলা সাত কাণ্ড রামায়ণ।।

তথাকথিত সংক্ষিপ্ত রামায়ণ নয়, চন্দ্রাবতী ৬৮৪ লাইনে রামায়ণ লিখেছেন। শুধু স্বীকৃত নয়, ভারতবর্ষে যে তিনজন মহিলা স্বীকৃত রামায়ণ রচয়িতা আছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতমা। ঐ শতাব্দীতেই তেলেগু ভাষায় কুম্ভকার কন্যা মোল্লা রচনা করেছিলেন সূক্ষ্মকাব্যগুণসম্পন্ন, ধ্রুপদী একটি রামায়ণ। কাব্যটিকে মোল্লা বলেছিলেন, “রামায়ণ-সুধামাধুরী”। সেই সময়ে সুধামাধুরী ব্রহ্মণ পণ্ডিতেরা পান করতে চাননি, কারণ মোল্লা শূদ্র এবং নারী, ফলে সেই রামায়ণ উচ্চবর্ণের মানুষেরা পাঠ করেননি বা অনুমতি দেওয়া হয়নি। প্রায় চারশো বছরের কিছুদিন পরে তেলেগু ভাষাতেই আরেক নারী রামায়ণ রচনা করলেন। তিনি নাম দিলেন “রামায়ণবিষবৃক্ষম”। সুধা পান করার আগ্রহ ব্রাহ্মণ পণ্ডিতেরা দেখাননি, তাঁরা বিষ পান করবেন কেন? নবনীতা দেবসেন লিখছেন,

এই বই মোল্লার বইয়ের মতো কৃশ নয়, মোল্লার মতো মধুর রসে সিঞ্চিত নয়, তিন খণ্ডে প্রকাশিত ইয়া পালোয়ান এই রামায়ণ, তার বক্তব্যেও জুতসই পালোয়ানি চিন্তাভাবনার পেশি সঞ্চালন। অন্ধ্রের মান্যিগণ্য মানুষেরা বইটাকে মোটে সইতে পারেননি। পারবেন কী করে? বইয়ের নাম যেমন, তেমনি ধাম যে রামকে একেবারে ধুইয়ে দিয়েছেন রঙ্গনায়কাম্মা। এ সেই চন্দ্রাবতীর মতো ধমকধামক দিয়ে ‘চন্দ্রাবতী কয় রাম গো তোমার বুদ্ধি হইল নাশ’— বলে ছেড়ে দেওয়া নয়। এ হল প্রায় বেঁধে মার।0

(চন্দ্র-মল্লিকা এবং প্রাসঙ্গিক প্রবন্ধ— নবনীতা দেবসেন)

এই প্রসঙ্গে উনবিংশ শতাব্দীর কবি শ্রীমতী উপেন্দ্রমোহিনীর কথা না বললে সম্পূর্ণ হয় না। কবিতাটি ছাপা হয়েছিল বামাবোধিনী পত্রিকায় বাংলা ১৮৬৭ সালে।

কবির পদবী নেই। সেই সময়ে একটা প্রচলন ছিল, উচ্চবর্ণের মহিলাদের নামের পরে দেবী বসত আর নিম্নবর্ণের নারীদের দাসী বলে চিহ্নিত করা হত। অর্থাৎ একজন নারী কোন শ্রেণিভুক্ত সেটা পদবী থেকে জানা যেত। এক্ষেত্রে কিছুই জানা যাচ্ছে না। বামাবোধিনী পত্রিকা প্রতিষ্ঠা করেন উমেশচন্দ্র দত্ত ১৮৬৩ সালে, উদ্যোক্তা বামাবোধিনী সভা। এই উদ্যোগ নেওয়ার কারণ মেয়েদের আরও শিক্ষিত করে তোলা। শ্রীমতী উপেন্দ্রমোহিনী কোন পরিবারের প্রতিনিধি জানা যায় না, তবে তিনি প্রচলিত রামায়ণের বিপরীতে দাঁড়িয়ে রামকে অভিযুক্ত করছেন। আজ থেকে প্রায় দেড়শো বছর আগে। রঙ্গনায়কাম্মাই প্রথম ভারতীয় নারী নন যিনি রামের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। আমাদের বঙ্গললনাও বহু আগে নিচের কবিতাটা লিখেছিলেন।

জানকীর দুঃখ বর্ণন

পুরুষের তুল্য শঠ নাহি ধরাতলে।
কত দুঃখ দেয় তারা রমণীকে ছলে।।
আহা মরি কত দুঃখ পায় নারীচয়।
বর্ণিতে স্ব-জাতি দুঃখ, হৃদি বিদরয়।
অবগত আছে সবে কৌশল্য নন্দনে
বিনা দোষে দিয়াছিল জানকীরে বনে।।
নারীদের উপদেশ দিইবার তরে।
প্রকাশিল সীতালীলা অবনী ভিতরে।।
আহা কিবা চমত্কার সীতা উপাখ্যান।
হরদে জ্ঞান উপজিছে শুনে সে বাখান।।
আহা মরি কত দুঃখ পেয়েছে সে সীতা।
দুঃখ জন্য হয়েছিল রামের বণিতা।।
দুঃখ পান তার কোন ছিল না কারণ।
উপলক্ষ হোল মাত্র রাক্ষস রাবণ।।
যদি না হরিত সেই দুষ্ট দশানন।
তবে কেন দুঃখ পাবে জানকী রতন।।
মৃগ অন্বেষণে রাম করিল গমন।
পাপ নিশাচর সীতা করিল হরণ।।
তারপর নিয়ে গেল লঙ্কার ভিতর।
মিষ্টভাষ তুষিলেক সীতারে বিস্তর।।
তার বাক্যে ভুলিল না জনক নন্দিনী।
নিয়ত করিত মুখে রাম রাম ধ্বনি।।
তারপর যুদ্ধ হলো রাম রাবণেতে।
দুর্জয় সমর সেই কে পারে বর্ণিতে।।
লঙ্কা জিনি রাম যবে যান নিজদেশ।
সীতা উদ্ধারিতে সবে কহিল বিশেষ।।
অনন্তর অগ্নিকুণ্ডে পরীক্ষা করিল।
পুনরায় বল তারে কেন বনে দিল?
দশমাস গর্ভবতী জানকী যখন।
শ্রীরাম তখন তারে পাঠাইল বন।।
একাকিনী বিরহিণী বন পর্য্যটনে।
বল দেখে কত দুঃখ পেয়েছিল মনে?
তথাপিও রামপদে ছিল তাঁর মতি।
ধন্য পতী-পরায়ণা ধন্য সীতা সতী।।
এ হেন সীতাকে রাম পাঠাইল বন।
বল দেখি রামচন্দ্র নির্দ্দয় কেমন?

দ্বিতীয়ত রাবণের চরিত্র রামের থেকে অনেক বেশি বর্ণময়, তাঁর বিপুল যুদ্ধজয়ের ইতিহাস, থেকে বিলাসবৈভবে তিনি অনন্য। সমগ্র বাল্মীকি রামায়ণ জুড়ে রাম আছেন, রাবণ অরণ্যকাণ্ডে পাঠকের সামনে এসেছেন। শুধু এসেছেন নয়, মায়াবী মানুষের নেতা হিসেবে উপস্থিত হয়েছেন। তাঁর অসাধ্য কিছুই নেই। এক বৃহৎ শক্তির সঙ্গে রামের লড়াই। স্বাভাবিকভাবেই রসিক পাঠক অকল্পনীয়, মায়াবী বীর রাবণের গুণগ্রাহী হয়েছেন।

কৃত্তিবাসের মত বাল্মীকির কাছাকাছি থাকা তিনি যে কোনও কারণেই হোক পছন্দ করেননি। হতে পারে তিনি মূল রামায়ণ শুনেছিলেন, তারপর আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে রামায়ণ রচনা করেছেন। নিজস্ব রামায়ণ নির্মাণে তিনি বাবার সাহায্য নেননি সেকথাও জোর দিয়ে বলা চলে না। তবে মনসার ভাসান গান রচয়িতা কিন্তু  মঙ্গলকাব্য থেকে কোথাও সরে যাননি বা অন্য ভাসান নির্মাণ করেননি। সেই হেতু মনে হয় চন্দ্রাবতী নিজস্ব ভঙ্গিমায় যে রামায়ণ লিখেছেন তাতে তাঁর মানসিক অস্থিরতা কি প্রকাশ পায় না? তাঁর বাবা শিবপুজো করার সঙ্গে রামায়ণ কেন লিখতে বলেছিলেন? তাঁর নিজের কি রামায়ণ লেখার ইচ্ছা হয়েছিল? তাঁর বাবা হয়ত ভেবেছিলেন, রামায়ণে সীতার দুঃখ অনুভব করতে পারলে চন্দ্রাবতী অনেকটাই স্বাভাবিক হতে পারবে। রামায়ণে সীতার জীবনকাহিনি প্রকৃতই করুণ। সেখানে প্রায় প্রতিটি সময়ে সীতা রামের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন। শুধুমাত্র বনবাসে সীতাকে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা রামের ছিল না। পতিব্রতা সীতা বুঝতে পেরেছিলেন চোদ্দ বছর মানে জীবনের অনেকটা সময় শুধু নয়, যৌবনের অমূল্য সময়, যা কোনওদিনই ফিরে আসবে না। তাই তিনি নাছোড়বান্দা হয়ে বনবাসে গেছিলেন। রাজপ্রাসাদ ও রাজসুখ যাতে তিনি অভ্যস্ত, সে সব ছেড়ে জীবন-যাপনের সমস্ত কষ্ট সহ্য করতে হবে জেনেও বনবাসে গেছিলেন। বাকি সব জায়গায় রামের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন। কোথাও প্রতিবাদ করেননি। এমনকি প্রতিবাদ করার ইচ্ছাও তৈরি হয়নি। বা বলা যেতে পারে বাল্মীকি সীতাকে সর্ব্বংসহা হিসেবে চিত্রিত করতে চেয়েছেন। শুধু সীতা নন, ভারতীয় মহিলারা সবকালেই সর্ব্বংসহা, এটা মনে হয বাল্মীকির কোনও কৃতিত্ব নয়। ভারতীয় মাটির গুণ। তাই একবিংশ শতাব্দীতেও শিক্ষিত মহিলাদের জন্য খোরপোষের মামলা চলে, ভাবা যায়? চন্দ্রাবতী সেক্ষেত্রে স্বাধীন, সমস্ত সিদ্ধান্ত তিনি নিজে নিয়েছেন। এই সিদ্ধান্তগুলির মধ্যে ‘বিবাহ করব না’ তৎকালীন সময়ে এক অভাবনীয় সিদ্ধান্ত। প্রকৃতপক্ষে তাঁর কি আর কোনও উপায় ছিল? জয়চন্দ্রের প্রতি তাঁর সামান্য অনুরাগ থাকলেও তিনি নিজের বাবা এবং সমাজের প্রেক্ষিতে নিজেকে আলাদা রেখেছেন। একজন তৎকালীন মহিলা সমস্ত কিছু ঠিক হওয়ার পর বিবাহে প্রত্যাখ্যাত হচ্ছেন, এই অপমান বা জ্বালা অনুমান করা অসম্ভব। কী কঠোর মনোভাব থাকলে নিজেকে একা করে শিবের সাধনা করেছেন ও রামায়ণ নির্মাণ করেছেন, ভাবলে অবাক হতে হয়।

 

৩.

চন্দ্রাবতী রামায়ণের প্রথম বিশেষত্ব ভাষা। প্রতিটি লাইনে একটা বিশেষ শব্দ আছে ‘গো’। সাধারণত বাঙালি পুরুষেরা স্ত্রীদের এবং স্বামীরা স্ত্রীদের ডাকার সময়ে ‘গো’ ব্যবহার করে থাকে। যেমন, ‘ওগো শুনছ’। বলা যেতে পারে এটা পূর্ববঙ্গের রীতি। চন্দ্রাবতীর সে সুযোগ হারিয়ে গেছিল, তিনি প্রতিটি লাইনের মাঝে শব্দটা জুড়ে দিয়েছিলেন। এই ‘গো’ শব্দ জুড়ে কিন্তু সব কথা বলা হত না। অন্যান্য রচনায় তিনি কিন্তু অহেতুক কোনও শব্দ ব্যবহার করেননি। এই ‘গো’ শব্দটা ব্যবহার করার ফলে রামায়ণ পাঠ একটা অন্য ভাব পেয়েছে।

যেমন,

সাগর পারে আছে গো কনক ভুবন।
তাহাতে রাজত্বি করে গো লঙ্কার রাবণ।

‘গো’ শব্দটা না থাকলে কবিতার ভাব বা বক্তব্যের কোনও ইতরবিশেষ হয় না।

যদি ‘গো’ শব্দটা না থাকে তাহলে এইরকম দাঁড়াবে, “সাগর পারে আছে কনক ভুবন।/তাহাতে রাজত্বি করে লঙ্কার রাবণ।” একটি মাত্র শব্দ সংযোজন করায় ভাষার লালিত্য যেমন বেড়েছে, সঙ্গে সঙ্গে খুব কাছের হয়েছে। অনেকটা কথক ঠাকুরের মত, যেন খুব পরিচিত মানুষদের সামনে বসিয়ে রামকথা বলা হচ্ছে।

দ্বিতীয়ত, প্রচুর আঞ্চলিক বা কথ্যভাষা ব্যবহার করা হয়েছে, যাতে শ্রোতা বা পাঠক সহজে ভিতরে প্রবেশ করতে পারে। যেমন, রাজত্বি, নির্ম্মাইল, পুষ্কু’ণী, বান্ধ্যা, তির্ ভুবনে, সাজান, পাকনা, বৈস্যা, পারা (পাহারা) ইত্যাদি। এমনকি স্থপতির দেবতা বিশ্বকর্ম্মাকে এক জায়গায় ‘বিশাই’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

১৫৫০ সালে যাঁর জন্ম এবং ১৬০০ সালে মৃত্যু, আনুমানিক পঞ্চাশ বছরের জীবন। তিনি যে ভাষায় লিখেছেন, তখনকার সময়ে সেটাই প্রামাণ্য ভাষা ছিল বলে মনে হয়। পুরুষ সমালোচকেরা চন্দ্রাবতী রামায়ণ সম্বন্ধে যে কোনও মতামতই দিয়ে থাকুন না কেন। আজ দুহাজার কুড়ি সালে দেখা যাচ্ছে রামায়ণটা আছে, সমালোচনাগুলো হারিয়ে গেছে। রামায়ণটা রয়ে গেছে বা পাঠক গ্রহণ করেছে, তার প্রধান কারণ, এটা অন্য রামায়ণ। অর্থাৎ কাহিনিতে নতুন কিছু থাকার সম্ভাবনা নেই বলেই তিনি উপস্থাপনায় পরিবর্তন এনেছেন। যা তাঁর রচনাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। সমগ্র রাময়ণটি তিনটি পরিচ্ছেদে বিভক্ত। প্রথম পরিচ্ছেদে আছে, লঙ্কার বর্ণনা, রাবণের স্বর্গ জয় করিতে গমন, রাবণ কর্তৃক মর্ত্য ও পাতাল বিজয়, সীতার জন্মের পূর্ব-সূচনা, মন্দোদরীর গর্ভসঞ্চার ও ডিম্ব-প্রসব, মাধব জালিয়া ও সতা জাল্যানী, রামের জন্ম। দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ— সীতার বারোমাসী, এর পর তৃতীয় পরিচ্ছেদ— সীতার বনবাসের পূর্ব সূচনা।

পরিচ্ছেদ ভাগ থেকেই বোঝা যায় রামায়ণ লেখার আগে তিনি প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। তাঁর রক্তে আছে পুরাণ নিয়ে কাব্য করার কথা। তাঁর বাবা বংশীদাসের লেখা মনসা ভাসানের গান পূর্ববঙ্গে বিখ্যাত। ফলে উপস্থাপনার পদ্ধতি তাঁর রক্তে ছিল। গল্পে আছে, ‘শিব তখন বনে বাস করতেন, একদিন বিশ্বকর্মা একটা লাঠি দিয়ে বলেন যে পিছনদিকে না তাকিয়ে একটা দাগ কাটতে। যে-ই শিবের দাগ কাটা শেষ হল, সঙ্গে সঙ্গে সোনার লঙ্কা নির্মিত হল। তারপর উৎসব হল। শিব তখন রাবণকে জিজ্ঞাসা করেন, এই যে সোনার লঙ্কা তৈরি করা হল, এর জন্য তিনি কি পুরস্কার চান? রাবণ সোনার লঙ্কা ফিরে চাইলেন। ফিরে চাইছেন মানে তা আসলে তাঁরই ছিল। শিব তখন পর্বতে তাঁর নিজের জায়গায় ফিরে যান।’ (পৃঃ ৪৫, বিশ্বকর্মার সন্ধানে, মীরা মুখোপাধ্যায়)। সেই লঙ্কার বর্ণনা দিয়েই চন্দ্রাবতী শুরু করেছেন তাঁর রামায়ণ।

বিচিত্র সুবর্ণ লঙ্কা গো নির্ম্মাইল বিশাই।
এমন বিচিত্র পুরী গো তির্ ভুবনে নাই।।

সেই রাজা কীরকম? বড়ই দুরন্ত রাজা দেবতাদেরও ভয় করে না, কারণ ব্রহ্মার বরে সে অমর। ইন্দ্র এবং অন্যান্য দেবতারা তাঁকে ভয় করে, শুধুমাত্র মানুষ আর বাঁদর তাঁর শত্রু। সেই দুষ্ট রাবণ স্বর্গ জয় করতে চায় শুধু নয়, পরিকল্পনা করে স্বর্গে পৌঁছে আক্রমণ করে। ‘রাইক্ষসের রোলে স্বর্গ গো কাঁপিয়ে উঠিল’, তাতেই দেবতারা সব পালিয়ে গেলেন। রাবণ ইন্দ্রাদি দেবতাদের বেঁধে আনলেন। সঙ্গে আনলেন পুষ্পক রথ, ঐরাবত হাতি, উচ্চৈঃশ্রবা ঘোড়া এবং “মণিমুক্তা লইলা কত গো না যায় গণন।/ঝাইড়া মুইচ্ছা লইলা রাজা গো ভাণ্ডারের ধন।।” এরপর রাবণ চললেন মর্ত্য ও পাতাল জয় করতে। পাতাল জয় করে তিনি চললেন গহন কাননে, যেখানে তপস্যা করেন সব মুনিরা। তাঁদের কাছে কর চেয়েছেন, মুনিরা কর দিতে না পারায় কুশের দ্বারা চিরে বুকের রক্ত দিতে বাধ্য করছেন রাবণ। সেই রক্ত একটা পাত্রে সঞ্চয় করে নিয়ে আসা হচ্ছে লঙ্কায়। মুনিদের রক্ত নাকি বিষ, আর সেই বিষ প্রয়োগে তিনি ইন্দ্রাদি দেবতার মারবেন। তাই লঙ্কায় ফিরে মন্দোদরীর হাতে সেই রক্তভাণ্ড দিয়েছিলেন গুছিয়ে রাখার জন্য। রাবণের মত বীর তাঁর শত্রুদের বা অপছন্দের মানুষকে বিষ প্রয়োগে মারবেন, একটু অবাক হতে হয়। রাক্ষসরাজ রাবণের চরিত্র বহু বিচিত্র, অসামান্য এই রূপ তার একটি।

বাল্মীকি বা কৃত্তিবাস রাবণকে যেভাবে চিত্রিত করেছেন, চন্দ্রাবতী সম্পূর্ণ অন্যভাবে দেখেছেন এবং চিত্রিত করেছেন। কারণ বীর কখনও বিষ প্রয়োগে শত্রু নিধন করতে চায় না। বিষ প্রয়োগ কাপুরুষের কাজ, সেই নীচকর্ম লঙ্কেশ্বর কেন করবেন? আরও দেখার যে লঙ্কেশ্বর এতদিন পরে দেশে ফিরে স্ত্রীকে সঙ্গ না দিয়ে পরনারীদের সঙ্গে জলকেলি করতে চলে গেছেন। এই অপমানে মন্দোদরী মরতে চাইলেন। যে বিষ রাবণ এনে রেখেছিলেন ইন্দ্রাদি দেবতাদের জন্য এবং রেখেছিলেন মন্দোদরীর জিম্মায় মনের দুঃখে মন্দোদরী সেই বিষ পান করলেন। দশ মাস দশদিন পরে একটি ডিম প্রসব করলেন। সংবাদটা শুনে রাবণ জোতিষী ডাকলেন। অনেক হিসেব-নিকেশ করে জ্যোতিষী বললেন—

অবধান কর আজি গো রাক্ষসের নাথ।
সুবর্ণ লঙ্কার শিরে গো হইল বজ্রাঘাত।।
এই ডিম্বে কন্যা গো এক লভিল জনম।
তা’ হইতে রাক্ষস-বংশ গো হইবে নিধন।।
আর এক কথা শুন গো রাক্ষসের পতি।
কন্যার লাগিয়া বংশে গো না জ্বলিবে বাতি।।
দৈবের নির্ব্বন্ধ কভু খণ্ডান না যায়।
আপনি মরিবে রাজা গো এই কন্যার দায়।।
রাক্ষসের রক্ষা নাহি গো গণিলাম সার।
সুবর্ণের লঙ্কাপুরী হৈল ছারখার।।

রাবণের আদেশে একটা বিশেষ কৌটো করে সেই ডিম সাগরে ভাসিয়ে দেওয়া হল।

এরপর নতুন দুটো চরিত্র আসছে, যা রামায়ণ পাঠকদের কাছে অপরিচিত। খুব দুঃখী অভাবী একজন জেলে ও তার স্ত্রী, তাদের নাম যথাক্রমে মাধব ও সতা। একদিন সেই মাধব সারাদিন জাল টেনে একটাও মাছ পায়নি। বারবার মাছ না পেয়ে শেষবারের মত ঈশ্বরের নাম করে জাল ফেলে এবং মাছ ধরতে গিয়ে জালের মধ্যে সোনার কৌটো পায়। “চন্দ্রাবতী কহে, ‘মাধব গো ঘরে ফিইরা যাও/পোহাইল দুঃখের নিশি গো সুখে বৈস্যা খাও।” যেদিন মাধব মাছ যদি ধরতে পারত, সতা সেই মাছের ঝুড়ি মাথায় করে নিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরত বিক্রির জন্য। কিন্তু যেদিন কৌটোটা জালে উঠল, আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। আর্থিক অবস্থা পাল্টে গেল। পাড়া-প্রতিবেশী এবং পরিচিতরা এই নিয়ে আলোচনা করত। সীতার নামকরণ ও জন্ম নিয়ে চন্দ্রাবতী লিখছেন—

একদিন রাত্রে গো সতা দেখিল স্বপন।
সে বড় আশ্চর্য্য কথা গো শুন সখীগণ।।
আড়াই প্রহর রাত্রি গো সতা শুইয়া নিদ্রা যায়।
চান্দের আলোক গো তার ঘুরে আঙ্গিনায়।
কৌটা হইতে গো এক কন্যা বাহির হইয়া।
মা মা বলি ধরে গো সতার গলা জড়াইয়া।।
আশ্চর্য্য রূপসী কন্যা গো যেন পুষ্পডালা।
উজলা করিল গো গৃহ সাক্ষাৎ কমলা।।
ধরিয়া সতার গলা গো কহে ধীরে ধীরে।
‘আমারে লইয়া যাও গো জনক রাজার ঘরে।।
বাপ মোর জনক রাজা গো রাণী মোর মাও।
কালি প্রাতে মোরে লইয়া গো রাণীর কাছে যাও।।’
ভোর না হইতে গো সতা সকালে উঠিয়া।
সুবর্ণ কটরা লইল গো অঞ্চলে বান্ধিয়া।।
গত নিশির স্বপ্নের কথা গো রাণীরে কহিল।
অঞ্চল খুলিয়া কৌটা গো রাণীর হাতে দিল।।
রাণী বলে, ‘কিবা দিব গো ইহার বদলে।’
গজমতি হার এক পরায় সতার গলে।।
ধামায় মাপিয়া দিল গো রত্নাদি কাঞ্চন।
সতা বলে ‘এ সকলে কোন প্রয়োজন।।
তোমার রাজ্যেতে বসি গো জন্ম-কাঙ্গালিনী।
আছয়ে মিনতি এক গো শুন রাজরানী।।
স্বপ্ন যদি সত্য হয় গো কন্যা জন্মে ইতে।
আমার নামেতে গো কন্যার নাম রাইখ্যো সীতে।।

সীতার নামকরণের প্রক্রিয়া পাল্টে গেল শুধু নয়, সমগ্র রামায়ণে সীতা এক বোন থাকলেন। রামায়ণের উৎস কৃষি গ্রন্থে আমরা প্রত্যেক বোনের নামকরণের কারণ জেনেছি (লেখক— জিতেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়)— এঁদের কৃষিচরিত্র অনস্বীকার্য। হলকর্ষণের পর সীতার উদ্ভব। সীরখাত জমিতে ঢেউ তৈরি হয়। ঢেউ অর্থে ঊর্মি। এই অবস্থাকে ঊর্মিলা বলা হয়েছে। এই কারণে ঊর্মিলা সীতার কনিষ্ঠা এবং সীরধ্বজের কন্যা। কর্ষিত জমির সঙ্গে মেঘ-বর্ষণ দেবতার সম্পর্ক। কিন্তু বর্ষণের প্রকাশ জলধারায়। জলধারা প্রথম স্পর্শ করে জমির ঢেউ অর্থাৎ ঊর্মির ঊর্ধ্বপিঠ। এইজন্য ঊর্মিলা লক্ষ্মণের স্ত্রী। বর্ষাকালে জমির জলধারণ ক্ষমতা বাড়ে। তখন জমির মাটি মণ্ডে পরিণত হয়। এই অবস্থার প্রকাশ ভরত ও মাণ্ডবীর বিবাহ। শ্রুতকীর্তি অর্থাৎ বিখ্যাত। শত্রুঘ্ন অর্থ শত্রুনাশক। কর্ষিত জমির সার্থকতা ফসল উৎপাদনে। ক্ষেত্র হতে ফসল-প্রাপ্তিকে নির্দেশ করছে শত্রুঘ্ন ও শ্রুতকীর্তির বিবাহ। বিনা জলে মাটি মথিত হয় না এবং ফসল উৎপাদিত হয় না। তাই এঁরা কুশধ্বজের কন্যা। অথচ চন্দ্রাবতী রামায়ণে সতার নাম থেকে হল সীতা। কারণ সতা জেলেনী শর্ত দিয়েছিলেন, তাঁর নামে কন্যার নাম রাখতে হবে। তিনিই তো উপহার দিলেন মিথিলার রানিমাকে।

বাল্মীকি রামায়ণে (অনুবাদ হেমচন্দ্র ভট্টাচার্য, ভারবি, পৃঃ ১১৭) বালকাণ্ডের ছেষট্টিতম সর্গে সীতার জন্মকাহিনি বলছেন রাজা জনক, “একদা আমি হল দ্বারা যজ্ঞক্ষেত্র শোধন করিতেছিলাম। ঐ সময় লাঙ্গলপদ্ধতি হইতে এক কন্যা উত্থিতা হয়। ক্ষেত্র শোধনকালে হলমুখ হইতে উত্থিতা হইল বলিয়া আমি উহার নাম সীতা রাখিলাম। এই অযোনিসম্ভবা তনয়া আমার আলয়েই পরিবর্ধিতা হইতে লাগিল।”

কৃত্তিবাস বিরচিত রামায়ণের (হরেকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত, সাহিত্য সংসদ, পৃঃ ৫০-৫১) আদিকাণ্ডে সীতার জন্মকাহিনি—

সীতার জন্ম বিবরণ

শ্রীহরির জন্ম কথা থাকুক এখন।
আগেতে কহিব আমি লক্ষ্মীর জনম।।
যেখানেতে বেদবতী ছাড়িল জীবন।
সেখানে হইল দিব্য মিথিলা ভুবন।।
তার রাজা হইল জনক নামে ঋষি।
পুত্রের কারণে রাজা যজ্ঞভূমি চষি।।
স্বহস্তে ক্ষেতেতে রাজা চষয়ে লাঙ্গলে।
ডিম্ব এক উঠে তাঁর লাঙ্গল শিরালে।।
ডিম্ব ভাঙ্গি জনক করিল খানখান।
কন্যারত্ন দেখে তাহে লক্ষ্মীর সমান।।
উঙা উঙা করি কান্দে যেন সৌদামিনী।
আচম্বিতে আকাশে হৈল দৈববাণী।।
…………………………………………

পরমা সুন্দরী কন্যা যেন হেমলতা।
শিরালে হইল জন্ম নাম রাখে সীতা।।

রামের জন্মবৃত্তান্তে তিনি পুত্রেষ্টি যজ্ঞের কথা বলেননি। বলেছেন পুত্র না থাকায় মনের দুঃখে দশরথ অনশনে বসেছিলেন। তখন এক সাধু এসে দশরথের হাতে একটা ফল দিয়ে বলেন রানিদের খাওয়াতে। কৌশল্যাকে দিলে তিনি তিন ভাগ করে, তিনজনে খান এবং গর্ভবতী হন। অর্থাৎ রামের জন্মকথাও প্রচলিত গল্প থেকে পাল্টে গেছে।

সীতার স্বর্ণমৃগ দর্শন। কাঁথাস্টিচ। শিল্পী: মহামায়া শিকদার

 

৪.

দ্বিতীয় বা পরবর্তী পরিচ্ছেদে আছে সীতার বারোমাসী। সীতা এবং রামের জন্মের পর, দুজনের বড় হয়ে ওঠা, বিবাহ, পিতৃসত্য রক্ষার জন্য চোদ্দ বছরের বনবাস, সীতা অপহরণ, লঙ্কাকাণ্ড এবং অযোধ্যায় ফিরে আসা, এসব সরাসরি লেখেননি। এই বারোমাসীতে সীতার পাঁচসখীর একজন জিজ্ঞাসা করছে, “তুমি যে গেছ্লা গো সীতা এই বনবাসে।/কোন্ কোন্ দুঃখ পাইয়াছিলে গো কোন্ কোন্ মাসে।” সখী শুধু দুঃখের কথা জিজ্ঞাসা করেছে। তার উত্তরে সীতা বলেছেন, তাঁর জন্ম, বিবাহ, বৈশাখ মাসে বনবাস, স্বর্ণমৃগ, অপহরণ, ইত্যাদি প্রতি মাস অনুযায়ী লিখেছেন। পড়ে মনে হয়, সীতা বৈশাখ মাস থেকে চৈত্র মাস অবধি অযোধ্যার বাইরে ছিলেন। অর্থাৎ এক বছর তিনি বইরে ছিলেন। সীতার বারোমাসী পড়ে মনে করা সম্ভব হয় না, এই বারোমাসে চোদ্দ বছরের কথা বলেছেন। এখানেও নতুন রামায়ণ তৈরি হয়। এই পরিচ্ছেদ শেষ হচ্ছে—

সীতার বারমাসী কথা গো দুঃখের ভারতী।
বারমাসের দুঃখের কথা গো ভনে চন্দ্রাবতী।।

 

৫.

অন্তিম বা তৃতীয় পরিচ্ছেদের শিরোনাম— সীতার বনবাসের পূর্ব-সূচনা। অর্থাৎ বনবাসে যাওয়ার আগের ঘটনা। রাম সীতাকে লঙ্কা থেকে উদ্ধার করে অযোধ্যায় নিয়ে এসেছেন। সখীপরিবৃত হয়ে সীতা সব সময়ে থাকছেন। এমত অবস্থায় রাম কী করছেন? রাম পাশাখেলায় বাজি ধরছেন। হারলে হাতের বহুমূল্য আংটি খুলে দেবেন আর জিতলে সীতা “দিবে গো প্রেম-আলিঙ্গন।” এই সময়ে কুকুয়া বলে একজন ননদের প্রবেশ ঘটে। প্রচলিত রামায়ণে শান্তা নামে রাজা দশরথের এক কন্যাসন্তান ছিলেন। ঋষ্যশৃঙ্গ মুনির সঙ্গে যার বিবাহ হয়। এখানে শান্তা নেই, আছেন কুকুয়া। কুকুয়া রাবণের ছবি আঁকতে বাধ্য করছেন সীতাকে, অনিচ্ছা সত্ত্বেও সীতা আঁকছেন এবং অস্বস্তি বোধ করছেন। পাঁচ মাসের গর্ভবতী সীতা দশমুণ্ড রাবণের ছবি আঁকতে আঁকতে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। কুকুয়া রামকে রাজসভা থেকে ডেকে এনে দেখালেন, সীতা রাবণকে আঁচলের তলায় বুকের কাছে নিয়ে শুয়ে আছেন। রাম অবাক হননি, অগ্নিমূর্তি হয়েছিলেন।

কুকুয়াকে তিনি ভালোই জানতেন, ভরতের ছোট বোন, যার শিক্ষা মন্থরার কাছে। সুশিক্ষা তাঁর কিছু হয়নি। এমনকি তিনি শ্বশুরবাড়িতেও থাকতে পারেননি। বাপের বাড়িতেই গত দশ বছর ধরে আছেন। হিংসায় জ্বলতে জ্বলতে সীতার দ্বিতীয়বার বনবাস যাওয়ার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন।

অন্য কোনও রামায়ণে কিন্তু বনবাসে যাওয়ার কারণে রাবণের ছবি আঁকা নিয়ে কোনও গল্প নেই। সেখানে পারিষদদের কাছে রাম জানতে চাইছেন, আমজনতা তাঁর সম্বন্ধে কী বলছেন?

লঙ্কারাজ রাবণকে শুধু নয়, রাক্ষসকুল ধ্বংস করার পর জনগণ তাঁকে কীভাবে দেখছেন, রাম হয়তো সেটাই জানতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পারিষদরা সে বিষয়ে কথা না বলে সীতাদেবীর লঙ্কাবাস নিয়ে কথা বলেছে, যে কথা সমাজ সুন্দরভাবে নেয় না শুধু নয়, গ্রহণযোগ্যতা দেয় না। এবং রাম সীতাদেবীকে গ্রহণ করলে প্রজারাও সেই পথেই হাঁটবেন যা সমাজের পক্ষে ক্ষতিকারক। এই সব কথাই তাঁরা বলেছেন শ্রী রামচন্দ্রকে। রাবণের কোনও ছবি আঁকার কথা নেই। এখানেও চন্দ্রাবতী অনন্য।

রামচন্দ্রের বোনের নাম দিয়েছেন কুকুয়া, এই নামটা কোথাও দেখা যায় না। তাঁর সময়েও নামটা প্রচলিত ছিল মনে হয় না। কোনও অভিধানই শব্দটিকে স্থান দেয়নি। প্রাচীন ও মধ্যযুগের বাংলা ভাষার অভিধান থেকে আমরা পাই ‘কুয়া’ মানে কুহেলিকা, কুকুয়া মানে কুহেলিকার চরম কিছু? চন্দ্রাবতী আমাদের জন্য হেঁয়ালি রেখে গেছেন।

রামের রাজ্যাভিষেক। কাঁথাস্টিচ। শিল্পী: মহামায়া শিকদার

 

৬. 

নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে চন্দ্রাবতী বলছেন,
ধারাস্রোতে ফুলেশ্বরী-নদী বহি যায়।
বসতি যাদবানন্দ করেন তথায়।।
ভট্টাচার্য্য ঘরে জন্ম অঞ্জনা ঘরণী।
বাঁশের পাল্লায় তালপাতার ছাউনী।।
ঘট বসাইয়া সদা পূজে মনসায়।
কোপ করি সেই হেতু লক্ষ্মী ৰাড়ি যায়।।
দ্বিজবংশী বড় হৈল মনসার বরে।
ভাসান গাইয়া যিনি বিখ্যাত সংসারে।।
ঘরে নাই ধান চাল, চালে নাই ছানি।
আকর ভেদিয়া পড়ে উছিলার পানি।।
ভাসান গাইয়া পিতা বেড়ান নগরে।
চাল-কড়ি যাহা পান আনি দেন ঘরে।।
বাড়িতে দারিদ্র-জ্বালা কষ্টের কাহিনী।
তাঁর ঘরে জন্ম নিলা চন্দ্রা অভাগিনী।।
সদাই মনসা-পদ পুজি ভক্তিভরে।
চাল-কড়ি কিছু পান মনসার বরে।।
দূরিতে দারিদ্র দুঃখ দেবীর আদেশ।
ভাসান গাহিতে স্বপ্নে দিলা উপদেশ।।
সুলোচনা মাতা বন্দি দ্বিজবংশী পিতা।
যাঁর কাছে শুনিয়াছি পুরাণের কথা।।
মনসা দেবীরে বন্দি জুড়ি দুই কর।
যাঁহার প্রসাদে হৈল সর্ব্ব দুঃখ দূর।।
মায়ের চরণ মোর কোটি নমস্কার।
যাঁহার কারণে দেখি জগৎ সংসার।।
শিব-শিবা বন্দি গাই ফুলেশ্বরী নদী।
যার জলে তৃষ্ণা দূর করি নরবধি।।
বিধিমতে প্রণাম করি সকলের পায়।
পিতার আদেশে চন্দ্রা রামায়ণ গায়।

চন্দ্রাবতী (১৫৫০-১৬০০) অর্থাৎ ষোড়শ শতাব্দীর কবি। কৃত্তিবাস তাঁর আগের শতকের। নানারকম প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তিনি অন্য রামায়ণ লিখেছেন। ওঁর লেখার মধ্যে বাল্মীকি নেই, কৃত্তিবাস নেই। সমান্য যেটুকু মিল পাওয়া যায তা তেলেগু রঙ্গনাথ রামায়ণ-এর সঙ্গে। ১৩শ শতকে এই রামায়ণ লিখেছিলেন রাজা গোণা বুদ্ধ রেড্ডি, তিনি প্রথম ছ’টি কাণ্ড লিখেছিলেন, শেষ বা উত্তরা কাণ্ড লিখেছিলেন তাঁর দুই ছেলে। এছড়া ওড়িয়া জগমোহন রামায়ণে পাওয়া যায় সীতা রাবণের ছবি এঁকেছেন। এই রামায়ণটি ১৫শ শতাব্দীতে লিখেছিলেন বলরাম দাস। তিনি বাল্মীকির সংস্কৃত রামায়ণ অনুবাদ করেননি। বিভিন্ন লোকগাথা, গান, কথকতা ও পুরোহিতদের থেকে শুনে রামায়ণ লিখেছিলেন। এই রাময়ণ চন্দ্রাবতী পড়েছেন বা শুনেছেন, অথবা শোনেননি বা পড়েননি। সেই কারণেই তিনি ভরতের বোন কুকুয়া নামে একটা চরিত্র বাংলা রামায়ণে সংযুক্ত করেছেন। তামিল কবি কম্বন (১১৮০-১২৫০) চন্দ্রাবতীর অনেক আগের মানুষ। তিনি যুদ্ধকাণ্ডে রামায়ণ শেষ করেছেন। ফলে সীতার বনবাস তাঁর রামায়ণে নেই। সেখানে সীতার ননদ কুকুয়া। সেই সময়ে ঐ অবস্থায় দাঁড়িয়ে এরকম একটা অন্য রামায়ণ লেখা কবি অনন্যতা দাবী করেন।

 

রামায়ণের শব্দার্থ বা প্রচলিত রূপ:

জন্নাথ – আজন্ম আইবুড়ো
রাজত্বি – রাজত্ব
পুষ্কু’ণী – পুষ্করিণী
রাইতে – রাত্রে
তিরভুবনে – ত্রিভুবনে
সাজান – সাজায়
পাক্ না – পাকা
চান্দেরে – চাঁদকে
কপাট – দরজা
খিলি – খিল
চাঁচর – কোঁকড়া, কুঞ্চিত ইঃ
বৈস্যা – বসে
বিশাই – বিশ্বকর্মা
বিরিঞ্চি – ব্রহ্মা
তলইয়ে – পাতিয়ে
রাইক্ষসের – রাক্ষসের
মরত ভুবন – মর্ত্ত্যলোক
বিরম্মন – বিড়ম্বনা
পারা – পাহারা
প্রসবিলাইন – প্রসব করিলেন
পিন্ধনে – পরনে
বিছানী – বিছানা
কটরা – বাক্স জাতীয়
সইলতা – প্রদীপের সলতে
রাইখ্যো – রেখো
আটকুরা – সন্তানহীন
যোড়মন্দির – পাশাপাশি দুটো মন্দির
আচম্বিতে – হঠাৎ
আইল – আসল বা এল
জয়াদি জোকার – আনন্দ জোকার
রাউখ্যাল – রাখাল
কাটরী – চাকু বা ছুরি
তুলপার – তোলপাড়
পুঞ্জি পুঁথি – পঞ্জিকা ও পুঁথি
বারমাসী – বারো মাসের কথা বা বৃত্তান্ত
আগুনী – আগুন
চাইর – চার
আঁখি মেইল্যা – আঁখি মেলে
দাণ্ডাইল – দাঁড়াইল
পইরা – পরে
পইরায় – পরায়
চান্দ – চন্দ্র
মুই – আমি
মৈলান – মলিন
বানর-কটক – বানর সৈন্য
চান্দোর – চাঁদোয়া
আবের পাখায় – অভ্রের পাখায়
শিখায়ে পালিয়ে – শিখিয়ে পেলে
কইরযাছে – করেছে
পিইলে – পান করলে
চিন্তামণি – একরকম বহুমূল্য রত্ন
রড়ে – বেগে

বনেতে আগুনি জ্বলে সায়রে ছোটে বান – বনেতে আগুন লাগলে বা নদীতে বান ডাকলে যেরকম ভয়ঙ্কর ব্যাপার হয়, রামকে সেইরকম দেখাচ্ছিল।

*সীতা রাবণের ছবি এঁকেছেন পাওয়া যায় তেলেগু, কন্নড় ও ওড়িশা রামায়ণে।

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4879 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...