পাঁচটি কবিতা
মায়ামাসি
হয়ত শাশ্বত নয়। ছাতিমতলার তবু শ্বাসকষ্ট থাকে
মোরামের সেই পথ ভবিষ্যতের দিকে বেঁকে
ছোটনাগপুরের গায়ে লেপ্টে আছে…
সেই মেয়ে আলোর ভাঙনে, ভোরে
মাছের বাজারে তার দুই বুক খুলে দেয়
পায়রা ওড়ে চতুর্দিকে পায়রা পায়রা ওড়ে
হয়ত শাশ্বত নয় আড়তমালিক
বাড়ি বাড়ি কাজ থেকে সত্যবতী ঠিক
চলে যেত গোডাউনে।
চারিদিকে তখন দুপুর
পরিত্যক্ত বাড়ি জানে এ কাহিনি।
আর জানে ছোটনাগপুর
পাড়া
কবরের মাটি এই পাড়া।
রাত্রিবেলা যখন সবাই চুপ, তখন দমকা হাওয়া সাড়া দেয় অশরীরী
বলে: আজ পাকা রাস্তা
রাস্তার আলো জানবে না
অজস্র শিশুর মরা এইখানে পোঁতা হত একদিন
যুগনদ্ধ, সঙ্গমকালীন
দম্পতি বোঝে না অই মাথার উপরে
বায়ুদেহে তৈরি এক থিকথিকে ভিড়
শরীর শরীর চায় শরীর শরীর
তারা হায়
বিষণ্ণ পৃথিবীতে বারেবারে জন্ম নিতে চায়
আত্মজীবনী
হাসি নিষেধ
ঘেরাটোপ নেই, শুধু অবিমিশ্র কোলাহল, বোকা গিরগিটি
ভিতরের পশুদল সারি সারি মিষ্টিমুখ, আত্মপ্রতারণা
চাবুকে অভিমুখ থেকে এসে নৈশ ট্রেন
“মিস্টার মুখার্জি নাকি? মিসেস কোথায়?”
একমুখ হাসি-দূরে সমস্ত পৃথিবী
অজস্র হলুদ ফুল, বিরোধী শিবির
আলোর হালকা মুখ, বারেবারে নষ্ট যোনি
“বলো না বলো না বাবা কাকে তুমি ঠিক কবে”
কাউকে কিছুই তুমি বলতে পারোনি
চাপা ছিল পাপ
অপারগ তর্জনীটি ভাঁজ হয়ে তুলেছিল ব্যর্থ ফোটোগ্রাফ
দেবতার গ্রাস — দুই
মেয়েটি যে উত্তমাশা দ্বীপ
অনূর্ধ্ব শহর থেকে দূরে,
দেবতারা জানত সব,
তাদের অব্যর্থ ছিল টিপ…
সমস্ত শ্রাবণ রোদ বিকেলের। বলেছিল, “মাসি মাসি
সাগরে চলেছি আমি,”
ওদিকে যে দেবীমায়া গোধূলিতে টলোমলো করে,
আকাশে সিঁদুর
এমন কপালে এসে বড় হয়…
কোজাগরী রাতে, খালপাড়ময়
টিভি সিরিয়াল থেকে দেবতারা নেমে এসেছিল
পাড়ার সবাই এসে বলেছিল— কী রে?
সে বলেছে
মাসি মাসি দেখ দেখ রাধাবৌদি হয়ে গেছি
সাগরসঙ্গম থেকে ফিরে
একুশ, বিশ
তোমার কী নাম বলো বলো, মৃতদেহ?
পৃথিবী হাওয়ায় ভাসে এত বাল্যকাল!
শেষরাতে, আকাশে দেখছি ঈদের নিখুঁতচাঁদে পা দোলাচ্ছে হাতে দিচ্ছে তাল
একটা প্রশ্ন করো, অন্তত, বেতাল!
আকাশে কী দেখছ, অন্যমন?
পৃথিবী? বত্রিশ সিংহাসন?
এমন হাওয়ার চাঁদ
বৈতরণী নদীজলে ভাসে
অজস্র শিশুরা হাসে, মায়েরা, বৃদ্ধেরা হাসে
গঙ্গায় ভেসে চলে কে ও?
ঈদের এমন চাঁদ দেখে আর ভাসে মৃতদেহ…