শামি কেন আসামি?

পারভেজ খান

 

–ক্যায়া পরভেজ ভাই, তুমারা পাকিস্তান তো কাল জিত গ্যায়া!
–মেরা পাকিস্তান কব সে হো গ্যায়া!
–নেহি ম্যায় মজাক কর রাহা থা, তুম তো সিরিয়াস হো গ্যায়ে হো..
–নেহি তুম, মজাক নেই ইনসাল্ট কার রাহে থে..
–সরি.. চলো ইতনা সিরিয়াস মত হো..
–শুনো, ইন্ডিয়া মেরা হ্যায় অর মেরা রাহেগা। কাল ক্রিকেট ম্যাচমে হার গ্যায়া আর আভি তুমারা আইসে বাত সে ভি হার রাহা হে..

উপরের সংলাপটির বেশিরভাগ অংশ বাস্তবের ঘটনা। আর নতুন কিছু না, বহু মানুষের সাথে হয়েই থাকে। সুক্ষ্ম সুপ্ত সাম্প্রদায়িকতা আর নাম পদবী দেখেই ভেবে নেওয়া ‘এ ব্যাটা নিশ্চিত পাকিস্তান বা বাংলাদেশ’! মোল্লার আবার ভারত হয় নাকি? নেহাতই একটা ক্রিকেট ম্যাচ, আর তাকে ঘিরে দেশপ্রেম আর জাতীয়তাবাদের প্রমাণ দেওয়া। এই ভারতে বসে আমি কল্পনা করতে পারি- বাংলাদেশ ভারতের সাথে কোনো ম্যাচ হারলে নিশ্চই বহু মানুষ সৌম সরকার, অলোক কাপালি কে দুষে এসেছে, পাকিস্তান দানিশ কানেরিয়া কে! নাম পদবীর জেরে সম্মুখীন হতে হয়েছে এরকম প্রশ্নের। এ যে কতো বড় অপমানের যাদের এটার সম্মুখীন হতে হয় তারা জানে। এখানেই হঠাৎ সংখ্যালঘু বোধ এর উপলব্ধি হয়ে যায়। যারা বলেন সংখ্যালঘু সংখ্যাগুরু ধারণাটা আবার কিসের? অবশ্যই থাকা উচিৎ নয়, কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি আর সামাজিক কাঠামো সেই ঔচিত্য কে পিছনে ফেলে দিয়েছে। ঠিক ই তো কাস্ট ফাস্ট কি জিনিস? সবাই তো মানুষ! সেটাই তো, সবাই মানুষ- সেটাই তার একমাত্র পরিচয় হওয়া উচিৎ কিন্তু তা হচ্ছেনা, দলিত বলে উলঙ্গ করে মারা যাচ্ছে, নীচু জাতির ছোঁয়া জল পান করা যাচ্ছেনা, আদিবাসীদের স্তন টিপে রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রমাণ নিচ্ছে তারা মাওবাদী কিনা।হ্যাঁ এটাই বাস্তব। নারীবাদ আবার কি জিনিস? সবাই তো মানুষ- কিন্তু নারী হওয়ার জন্যই বহু বৈষম্যের শিকার হতে হয়। এটাই বাস্তব। তাই নারীর পক্ষ নেওয়া, যেকোনো সংখ্যালঘুর পক্ষ নেওয়া, দলিত-আদিবাসীর পক্ষ নেওয়া আসলে নিপীড়িতের পক্ষ নেওয়া। শারিরীক ভাবে হোক বা মানসিক। তার অধিকারের পক্ষ নেওয়া। জাস্ট তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়া কঠিন বাস্তব থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেওয়া ছাড়া কিছু নয়।

এক সময় ক্রিকেট ম্যাচ ঘিরে যে আগ্রহ ছিলো এখন আর তা নেই। ক্রিকেট সেভাবে আর টানেনা। কালকের শুধু নয় ইদানীং প্রত্যেক ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ ঘিরেই চলে একটা যুদ্ধ যুদ্ধ উন্মাদনা। সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখে নেবো, চমকে দেবো, সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করবো, পুতে দেবো জাতীয় আগ্রাসন। সংবাদ মাধ্যম ও তাই শুধু একটু মার্জিত ভাষায় বোধহয়! না কি সে ব্যারিয়ার ও ভেঙে ফেলেছে! ফেলেছে। বিজ্ঞাপন বা এমন কি হিন্দি কমেন্ট্রি কিছুই বাদ যায়না এ আবহাওয়া থেকে। যে বিষ সমাজে ইতিমধ্যেই ছড়িয়েছে তা থেকে নিস্তার পাওয়া মুস্কিল। মুসকিল আসান করবে কে? ভারতের পুরুষ ক্রিকেট দল কালকের ম্যাচে জঘন্য খেলেছে। আর প্রত্যেক বিভাগে টেক্কা দিয়েছে পাকিস্তান। প্রথম ওভার থেকেই। এটাই সহজ সরল সত্যি। কিন্তু খেলা তো আর খেলা নেই। এখল জিতলে মোদী জেতান আর হারলে সামি ই আসামী বটে। সামি যখন শেষের আগের ওভারে বেদম পেটানি খেলেন আশংকা ছিলোই একটু পরে হারের সমস্ত দায় প্রায় একার কাঁধে নিয়ে মাঠ ছাড়তে হবে তাকে। ভক্তকুল নিরাস করেননি। শুধু ভুলে গেছেন তার অতীতের সমস্ত পারফরম্যান্স আর প্রধান হয়ে উঠেছে তার নাম।

আইপিএল এসেছে। টাকা বেড়েছে। ক্রিকেট ঘিরে বেওসা বেড়েছে। ক্রিকেট টা হারিয়ে যাচ্ছে। পুরোটা হারায়নি এখনো কারণ অস্ট্রেলিয়া আর ইংল্যান্ডের মাটিতে শেষ দুটো টেস্ট সিরিজে মাটি কামড়ে পড়ে থাকা মাঠের ক্রিকেটীয় লড়াইয়ে মুগ্ধ হয়েছি। ক্রিকেট সেসব ই উপহার দিক, বারবার। কিন্তু ক্রিকেট কে ঘিরে এই মেকি অভিজাতীয়তাবাদ, নাম এর ফেরে ভিলেন বানানো বন্ধ হোক। যুবসমাজ দায়িত্ব নেবে কি? না কি বাসের কন্ডাকটর যেমন বলেন- পিছনের দিকে এগিয়ে চলুন.. সেই পিছনের দিকে এগিয়েই চলতে হবে?

 

1 Comment

আপনার মতামত...