ফ্রান্সিস ওয়েড
সাংবাদিক এবং মায়ানমার’স এনিমি উইদিন: বুদ্ধিস্ট ভায়োলেন্স অ্যান্ড দ্য মেকিং অফ আ মুসলিম আদার গ্রন্থের লেখক ফ্রান্সিস ওয়েড গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাকের এই সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন। এটি গত ৬ জুলাই দি নেশন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। বাংলা ভাষান্তর: অমর্ত্য বন্দ্যোপাধ্যায়।
আশির দশকের মাঝামাঝি সময় থেকেই গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক তাঁর কাজের বিস্তৃতিকে দুটি পরিসরে ভাগ করে নিয়েছেন। একদিকে তিনি কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যানিটিজ বিভাগের ইউনিভার্সিটি প্রফেসর, অন্যদিকে তিনি সময় কাটিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের কিছু প্রান্তিক গ্রামাঞ্চলে, কলকাতা থেকে ট্রেনে ও মোটরবাইকে যে অঞ্চলে পৌঁছতে গেলে প্রায় একদিন সময় লাগে। সেখানে তিনি চারটি প্রাথমিক স্কুল তৈরি করেছেন, যেখানকার ছাত্রেরা, এতদিন যাদের কাছে পড়াশোনার অর্থই ছিল অর্থহীন মুখস্থ করা এবং সেই মুখস্থ জ্ঞানকে ওগরানো, তারা এই সমস্ত স্কুলের মাধ্যমে সঠিকভাবে ভাবতে শেখার বা চিন্তা করার পাঠ লাভ করে।
স্পিভাকের গবেষণার পরিধি সুদূর-বিস্তৃত এবং প্রভাবশালী— মার্ক্সিজম, ডিকনস্ট্রাকশন থেকে শুরু করে নারীবাদ ও উত্তর-ঔপনিবেশিকতাবাদ অবধি যার প্রসার। ১৯৪২ সালে কলকাতায় জন্ম, ১৯৬১ সালে স্নাতকস্তরে পড়াশোনা করতে আমেরিকার কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া, এভাবেই গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাকের ছাত্র ও পরবর্তীতে গবেষণা-জীবনের সূত্রপাত। ১৯৭৬ সালে তিনি মূল ফরাসি থেকে জাক দেরিদার ‘দো লা গ্রামাতোলজি’ (অথবা ‘গ্রামাতোলজি প্রসঙ্গে’) বইটির ইংরেজি অনুবাদ করেন। এই অনুবাদেরই সূচনাংশে তিনি অনুবাদকের ভূমিকা হিসেবে একটি রচনা লিখেছিলেন, যা চিন্তক ও গবেষক-সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর বিখ্যাত প্রবন্ধ ‘ক্যান দ্য সাবঅল্টার্ন স্পিক’ (বা ‘প্রান্তিক মানুষেরা কি কথা বলতে পারে?’), যেখানে তিনি নারীবাদী আত্মহত্যা এবং পরিবারের গণ্ডিতে সেটিকে ভুল বোঝা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেন। এটি প্রথমে একটি কনফারেন্স পেপার হিসেবে ১৯৮৩ সালে পঠিত হয়েছিল। ক্রমশ এটি উত্তর-ঔপনিবেশিকতাবাদ বিষয়ের একটি প্রাথমিক পাঠ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে এবং ‘সাবঅল্টার্ন’ বা ‘প্রান্তিক’ ধারণাটিকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়। প্রসঙ্গত, আন্তোনিও গ্রামসি তাঁর ‘প্রিজন নোটবুকস’-এর রচনাগুলিতে প্রথম ‘সাবঅল্টার্ন’ শব্দটিকে ব্যবহার করেছিলেন, এবং তার অর্থ হিসেবে লিখেছিলেন, ‘ইতিহাসের প্রান্তসীমাতে দাঁড়ানো এক সামাজিক গোষ্ঠী’।
আমি স্পিভাকের এই সাক্ষাৎকারটি নিয়েছিলাম এপ্রিল, ২০২১-এ— পশ্চিমবঙ্গ থেকে তাঁর ফিরে আসার ঠিক পরেপরেই। তিনি যে সময়ে পশ্চিমবঙ্গে ছিলেন তখন সেখানে বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছিল। আমরা তাঁর প্রাথমিক স্কুলগুলির বিষয়ে এবং শিক্ষা সম্পর্কিত তাঁর অতীত গবেষণাগুলির বিষয়ে কথা বলেছি। এই প্রসঙ্গেই আলোচনাতে উঠে এসেছে শিশু ছাত্রেরা এবং তাদের শিক্ষকেরা কীভাবে নিজেদেরকে একটি রাষ্ট্রের নাগরিক বা রাষ্ট্রের অন্যতম সদস্য হিসেবে নিজেদের বোধবিবেচনাকে উপলব্ধি করতে পারে। এই আলোচনার পরবর্তী সময় থেকেই সেই নির্বাচনে শাসকের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ও ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস দলের মধ্যে পরের পর রাজনৈতিক সংঘর্ষে বাংলার পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। শেষ অবধি ৩০ এপ্রিল বিপুল জনাদেশ নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস সরকার পুনর্বারের জন্য পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা দখল করেছে।
ফ্রান্সিস ওয়েড: পশ্চিমবঙ্গের গ্রামাঞ্চলগুলিতে, যেমনটা আপনি আগেও বলেছেন, আপনি প্রাথমিক স্তরের শিশুদেরকে ‘গণতান্ত্রিক অভ্যাস এবং সম্পর্কিত অনুষ্ঠান’গুলির বিষয়ে শিক্ষাদান করেন। এই বক্তব্যের মাধ্যমে আপনি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক: এই সমস্ত গ্রামাঞ্চলে আমি যে বৌদ্ধিক সমস্যাটিকে নিয়ে কাজ করছি সেটি হল, কেমনভাবে হাজার হাজার বছর ধরে নির্জীব পড়ে থাকা মানুষদের— যাদেরকে ভাবনার অধিকারটুকুই কোনওদিন দেওয়া হয়নি, তাদেরকে কাল্পনিক অ্যাক্টিভিজমের একটি ধারণার মাধ্যমে সঠিক বৌদ্ধিক ভাবনাচিন্তার অনুশীলনে সক্রিয় বা শিক্ষিত করে তোলা যায়। অথচ আমি আমার ছাত্রদেরকে কিন্তু গণতন্ত্রের উপরে ভাষণ দিচ্ছি না। আমি তাদেরকে শেখাচ্ছি ইংরেজি, বাংলা, অঙ্ক এবং ভূগোল— পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারি পাঠ্যক্রম অনুসারে। কিন্তু আমরা কেমনভাবে সেই বিষয়গুলিকে পড়াচ্ছি, সেটাই এখানে ভাববার বিষয়। আমরা যেটা আমাদের ছাত্রদেরকে বোঝাতে চেষ্টা করি— বুদ্ধিমান ছাত্র মানেই যে, সে কেবলই সবসময় শিক্ষক যা জিজ্ঞাসা করেছেন সেই প্রশ্নেরই হুবহু উত্তর দেবে এমনটা নয়। আমরা যদি ফ্যাননের বক্তব্যকে অনুসরণ করি, আমরা দেখব যে উত্তর-ঔপনিবেশিক সময়ে আমরা কেবলই নেতৃত্বের উপস্থিতি এবং নেতৃত্বলাভের উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে বেঁচে থাকি। এটাই এ যুগের অন্যতম বড় একটা সমস্যা। ফ্যানন যা বলেছেন, আমি যা বলছি এবং গ্রামসিও যা বলেছিলেন— এযুগের প্রতিদিনের, প্রতি মুহূর্তের প্রশাসনিক কাঠামোটাই এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, আমরা যদি এই প্রসঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থাটিকেও দেখি, প্রত্যেকেই যেন সেখানে একটা ‘লিডারশিপ কমপ্লেক্স’ বা ‘নেতৃত্ব লাভের চূড়ান্ত/বিকৃত আকাঙ্খা’য় ভুগছে। এটি সম্পূর্ণরূপে অগণতান্ত্রিক।
পশ্চিমবঙ্গের গ্রামাঞ্চলের অবস্থাটিকে যদি আমরা দেখি, সেখানে সবসময়েই খারাপ একটি নেতৃত্বকে নিয়ে সেখানকার মানুষদেরকে চলতে হচ্ছে; রাজনৈতিক নেতৃত্ব মানেই— অধিকাংশই সেখানে কুটিল চরিত্রের। এমন একটি অবস্থায় আপনি নমনীয় একটি শিশুমনস্তত্ত্বকে কীভাবে গড়ে তুলবেন, তাদের শুকনো ভাষণ না দিয়ে? কেমন করে আপনি তাদেরকে বোঝাবেন যে, কোনও কোনও সময়ে শুধুমাত্র জেতবার জন্যই লড়াই করতে নেই? আমি তাদেরকে বোঝাতে চেষ্টা করি, ক্লাসে সমস্ত সময়ে চটপট উত্তর দিয়ে ক্লাসের মধ্যে ‘ভালো ছেলে’ বা ‘ক্লাসের একজন নেতা’ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাওয়াটা আসলে এক ধরনের বোকামিরই পরিচয়। আমি সেটা ওদেরকে বোঝাই, কখনও কখনও কোনও একটি প্রশ্নের উত্তর নিজে না দিয়ে— যখন ওরা জানে যে আমি উত্তরটা জানি। এটাই গণতান্ত্রিক অভ্যাস। আপনিও এভাবে আমার সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পারবেন যে কেবলই নেতৃত্ব দেওয়ার বা দিতে চাওয়ার অভ্যাসটা কতখানি বোকামি, আপনি নিজেই ক্রমশ নেতৃত্ব দেওয়ার আকাঙ্খা থেকে সরে আসবেন।
ফ্রান্সিস: শিশুরা বা আপনার ছাত্রেরা কি এধরনের পড়ানোর পদ্ধতির সঙ্গে নিজেদেরকে মানিয়ে নিতে পেরেছে? বা ধরুন, আপনার উপস্থিতির বিষয়েই বা তাদের প্রতিক্রিয়া কেমন? কারণ, যতই হোক, আপনি উচ্চবর্ণের প্রতিনিধি, একজন ব্রাহ্মণ, অথচ আপনি কাজ করছেন অত্যন্ত দরিদ্র, প্রান্তিক একটি জনগোষ্ঠীর মধ্যে। কাজেই আপনার এবং আপনার ছাত্রদের মধ্যে পারিপার্শ্বিক অবস্থার এক বিপুল ফারাক রয়েছে— অর্থাৎ আপনি ‘যেখান থেকে গিয়েছেন’, এবং তারা যেখানে রয়েছে…
গায়ত্রী: আমি সেখানে হাতেকলমে কাজ করতে চেষ্টা করছি… আর যেটা চেষ্টা করছি সেটা হল আমার বর্ণের মানুষেরা এতকাল যাবৎ যে ঐতিহাসিক অন্যায় করে এসেছে, সেই পাপ যদি কিছুটা স্খালন করা যায়। আমার বর্ণের মানুষেরা অস্পৃশ্যতার ধারণা তৈরি করেছে এবং এক বিশাল সংখ্যক জনগোষ্ঠী বা জাতির মানুষকে উচ্চবর্ণের মানুষদের দৃষ্টিভঙ্গিতে অন্ত্যজ বলে ভাবতে শিখিয়েছে। আমরা (অর্থাৎ ব্রাহ্মণেরা) এই সমস্ত মানুষদের ছুঁতে অবধি ঘৃণা বোধ করি, আমরা এঁদের জলগ্রহণ করি না। এমনকি চূড়ান্ত গরমের সময়ও আমরা আমাদের জন্য নির্দিষ্ট পুষ্করিণী বা জলাশয় থেকে এঁদের সন্তানদের পর্যন্ত জল নিতে বাধা দিই। এই সমস্ত বিষয়ের কিছুটা কিছুটা করে হলেও উন্নতি হয়েছে, সে কথা সত্যি— কিন্তু, অন্তরের দৃষ্টিভঙ্গিটা এখনও যায়নি। জাতিগত বিদ্বেষ এখনও পুরোমাত্রায় রয়েছে। কেউ যদি জাতিভেদ প্রথাকে নিয়ে সত্যি সত্যি ভাবতে চেষ্টা করেন, যেটা সকলেরই ভাবা উচিত— তাহলে তিনি দেখবেন যে আসল সমস্যাটি হল, এখনও অবধি তাঁরা অন্যান্য জাতির মানুষদের সম্পর্কে এটি মনে করতে ভালোবাসেন যে— হ্যাঁ, এদেরকে নীচে দাবিয়েই রাখা উচিত, ওদের আসল জায়গা ওটাই। কারণ, পূর্বোক্ত মানুষেরা মনে করেন জাতিভেদ প্রথা প্রকৃতই ঈশ্বরসৃষ্ট, মনুষ্যসৃষ্ট নয়। আর ‘গণতন্ত্রের’ মতো একেকটি বিষয়কে নিয়ে আমরা যখন ভাবতে চেষ্টা করি, তখন দেখি যে এমন একেকটি বিষয় আমাদের চারপাশে বহুদিন ধরেই তার অস্তিত্ব বজায় রেখে চলেছে। কিন্তু ওই মানুষগুলির কাছে এমন সমস্ত ধারণাগুলির প্রকৃতপক্ষে কোনও অস্তিত্বই নেই। কারণ তাঁরা এটাই মনে করতে শিখেছেন যে— জগতের ভালো ভালো সমস্ত বিষয় বা ধারণাগুলিই আসলে আমাদের, অর্থাৎ কিনা কেবলই উচ্চবর্ণের আওতাভুক্ত।
ফ্রান্সিস: এমনটা অনেক সময়ই মনে করা হয়, নরেন্দ্র মোদি সরকারের অধীনে হিংসাকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার উদাহরণ ক্রমশই বেড়ে চলেছে। এই সূত্রে যে শিশুদের সঙ্গে আপনি সময় কাটান, হিংসা এবং রাজনীতির মধ্যেকার এই যোগাযোগ সম্পর্কে তাদের কী উপলব্ধি?
গায়ত্রী: আমি সবসময়ই সাম্প্রতিক কোনও একটি ঘটনার উল্লেখ করে আমার ক্লাস নিতে শুরু করি। এবারে যখন গেলাম, নির্বাচনের সময় আসন্ন। আমাদের ক্লাসের মধ্যে বয়সের দিক থেকে সবচেয়ে বড় যে ছাত্রেরা, তাদের বয়স আনুমানিক দশের কোঠায়। আগামী আটবছরের মধ্যে তারা ভোটাধিকার প্রাপ্ত হবে। আমি তাদেরকে জিজ্ঞেস করলাম যে, এই ভোট বা নির্বাচন সম্পর্কে তাদের কী ধারণা। আমার ছাত্রদের মধ্যে সবচেয়ে চৌকস যারা, তাদেরই একজন রাম ভান্ডারি লোহার, ৯ বছর বয়স— ইংরেজিতে জবাব দিল (কারণ আমি তাদের সঙ্গে ইংরেজিতেই কথা বলতে শুরু করি সবসময়), সে বলল “ইলেকশন ইজ (এ) গেম,” নির্বাচন একটা খেলা। “তাই? আচ্ছা আমায় বাংলায় বোঝাও তো কেন এরকম মনে হয় তোমার?”— আমি খুব আস্তে আস্তে জিজ্ঞেস করলাম। সে এবার বাংলাতে বলল— “লড়াই।” আপনি এই কথা শুনে বুঝতে পারবেন, এতটাই হিংসাত্মক রাজনীতির পরিবেশ সেখানে যে ওইটুকু শিশুদের স্তরেও পার্টি পলিটিকস বা দলীয় রাজনীতির সম্পর্কে ধারণা তৈরি হয়ে গিয়েছে। তৈরি না হওয়াটাই অসম্ভব ওখানকার শিশুরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিশুদের মতো শৈশব পায় না।
কিন্তু এই ঘটনাটিই আবার গ্রামাঞ্চলে আমাদের কাজের সাফল্যের একটি উদাহরণ। আমাদের সেই ছাত্রটি এমন একটি বিষয় নিয়ে কথা বলছে যার পরিসরগত বিস্তৃতি বিশাল, অন্তত আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে, আমরা এখানে (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে) বসে যেমনটা বুঝি। কারণ, ওই শিশুটি যে চরম একটি সত্যকে উপলব্ধি করেছে— যার থেকে আমাদের দেশে বা সর্বত্রই কিছু ক্ষমতাসীন মানুষ বা আইনপ্রণেতারা নিজেদের নির্লজ্জভাবে লুকোতে চাইছেন— সেটা হল: নির্বাচনী রাজনীতিতে হিংসার উপস্থিতি এক বিশ্বব্যাপী সত্যে পরিণত হয়েছে। তা কেবলই ওই সুদূরের গ্রামাঞ্চলগুলিতে সীমাবদ্ধ নয়। আমরা ৬ জানুয়ারি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসেও তা দেখেছি (ইউএস ক্যাপিটলের ওপরে ট্রাম্প সমর্থকদের হামলা প্রসঙ্গে)। আমরা ওই শিশুটির জবাবের মধ্যে দিয়ে কেবলই সেই গ্রামাঞ্চলের রাজনীতির হিংস্রতাকে দেখি না, বরং আরও গভীর একটি সত্যকে উপলব্ধি করি।
ফ্রান্সিস: ২০০৪ সালে আপনি একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন, ‘রাইটিং রংস’ শিরোনামে (অর্থে ‘ভুলকে ঠিক করার প্রচেষ্টায়’)। আপনি সেখানে বুকার টি ওয়াশিংটন এবং ডব্লিউ ই বি দ্যু বোয়া-র মধ্যকার সেই দীর্ঘ বিতর্কের প্রসঙ্গে নিজের মতামত ব্যক্ত করেছিলেন। প্রায় শতবর্ষ আগেকার যে বিতর্কের ভিত্তি ছিল কেমনভাবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষেরা সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রতিনিধিত্বকে অর্জন করবে। আপনি লিখেছিলেন, “আমি এই বিষয়ে বুকার টি ওয়াশিংটনের বিপরীতে গিয়ে বরং ডব্লিউ ই বি দ্যু বোয়া-র মতামতের সঙ্গে সহমত পোষণ করি যে, এই সমস্ত জনগোষ্ঠীর মানুষদের জন্য আশু পার্থিব আরামের ব্যবস্থা করার চাইতে তাঁদের বৌদ্ধিক বিকাশ ও কোনও একটি সমস্যার সমাধান প্রসঙ্গে চিন্তা করতে পারার যে ক্ষমতা, সেটিকে গড়ে তোলার ক্ষেত্রেই আমাদের অধিকতর গুরুত্ব দেওয়া উচিত।” এই বিষয়ে আপনি যদি আরও কিছু বলেন…
গায়ত্রী: আমি চিনদেশের ওপরে বেশ কিছু গবেষণা করেছি। বছর দুই আগে ইউনান প্রদেশে সেখানকার বিভিন্ন মহিলা গোষ্ঠীর সঙ্গে আমি কথা বলেছিলাম। সেখানকার যাবতীয় যে সমস্ত প্রাদেশিক উন্নয়নের বিষয়ে তাঁরা আমাকে বলছিলেন, সেগুলির প্রতিটিরই উদ্দেশ্য ছিল আয়বৃদ্ধি, সাদা কথায় অর্থ উৎপাদন। ‘রাইটিং রংস’ প্রবন্ধটিতে আমি যা বলতে চেয়েছি তা হল, দ্যু বোয়া-র বক্তব্য অনুসারে শিক্ষাকে কেবলমাত্র অর্থোপার্জনের মাধ্যম হিসেবে না দেখে যদি শিক্ষাকে কোনও এক ব্যক্তির বৌদ্ধিক বিকাশের মাধ্যম হিসেবে অধিকতর গুরুত্ব দেওয়া হয়, তাহলে একজন ব্যক্তি সেই অধীত জ্ঞানের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতে পারে যে সেই অধীত বিদ্যাকে সে কেবলই অর্থোপার্জনের নিমিত্তে ব্যবহার করবে নাকি আরও অন্য কোনও শুভতর উদ্যোগে লাগাবে। মূল প্রবন্ধে এর ঠিক আগের লাইনটিতেই আমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাবের সমালোচনা করে বলেছি, “কিছু মার্কিনি হিতৈষীর অনুগ্রহ আসলে ফালির তীক্ষ্ণতর দিকের একটি অংশমাত্র যা কিনা আসলে প্রান্তিক ব্যক্তিবর্গকে শোষণের একটি স্বাভাবিক ইচ্ছার জন্ম দেয়।” তাই পাওলো ফ্রেইরি যখন বলেন যে, বঞ্চিতেরা যতদিন অবধি নিজেরাই নিজেদের শিক্ষক হয়ে উঠতে না পারছে— ততদিন অবধি বঞ্চিতেরাও, প্রথাগত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠেও কেবলই ক্ষুদ্রতর এক অর্থে নিজেরাই, তাদেরও নীচেকার মানুষদের ওপরে শোষক হয়ে বসতে চাইবে; একথা শুনলে পরে আমরা বুঝতে পারি ভদ্রলোক গভীরে গিয়ে উপলব্ধি করেছেন। তিনি বঞ্চিতদের অহেতুক রোম্যান্টিসাইজ করছেন না। আমিও ঠিক এই কথাটিই বলতে চেয়েছি, আর এটিই ছিল বুকার টি ওয়াশিংটন এবং দ্যু বোয়া-র মধ্যেকার বিরোধ।
ফ্রান্সিস: একই প্রবন্ধে আপনি আরও একটি অনুচ্ছেদে বিবৃত করেছেন যে কীভাবে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে বারংবার অনুরোধ সত্ত্বেও তারা সামান্য একটি টিউবওয়েলের অবধি ব্যবস্থা করে দেয়নি— এবং এই প্রসঙ্গে আপনি সরাসরি বলেছেন, “আমি চাই না কোনও সুদূরের আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বা সংগঠন এই টিউবওয়েলটির ব্যবস্থা করে দিক, বরং”— আপনি লিখেছেন যে— “আমি চাই শিশুরা প্রশাসনের এই হৃদয়হীনতা সম্পর্কে জানুক, কোনও তাৎক্ষণিক প্রতিরোধ আন্দোলন বা তেমন কোনও প্রসঙ্গকে বাদ দিয়ে।” কেন তাদের এটি জানা প্রয়োজন বলে আপনি মনে করেন?
গায়ত্রী: দেখুন, আমি মনে করি এই জায়গাটিতে আমি একটু ভুল করেছিলাম। আমি যে প্রতিক্রিয়া পেয়েছিলাম (উল্লিখিত গ্রামাঞ্চলের মানুষদের থেকে) তা ছিল বেশ খানিকটা পরিমাণে আবেগতাড়িত। যখন আমি নিজে সেই এলাকাতে গেলাম যেখানে আমার স্কুলগুলি বর্তমানে অবস্থিত— জায়গাটি খাঁটি অর্থে আধুনিক দরিদ্র ভারতবর্ষের মতো, নৃতাত্ত্বিকভাবে সংরক্ষিত কোনও ‘আদিবাসী’ উপনিবেশ নয়, যা কিনা কোনও সামন্তপ্রভুর অধীন— আমার প্রাপ্ত প্রতিক্রিয়া বা প্রমাণগুলির চরিত্র সম্পূর্ণরূপে পালটে গেল। তাই এই প্রশ্নটির জবাবে আমি এখন বরং রোজা লুক্সেমবুর্গের সামাজিক গণতন্ত্রের যে ধারণা তাকে ব্যবহার করতে চাইব— যেখানে রাষ্ট্রকে আদতে ব্যবহার করা হয়, রাষ্ট্রকে কেবলই হৃদয়হীন বা শত্রুপক্ষ না ভেবে, এবং শিশুদেরকে সেই কথা না শিখিয়ে যে— রাষ্ট্র মানেই হৃদয়হীন একটি অস্তিত্ব। সত্যিই, যখন আমরা ব্যবহারিক দুনিয়াতে প্রবেশ করি, যেটি এখন আমার কাছে সবচেয়ে উপযুক্ত গবেষণা-পদ্ধতি, আমরা তখন আমাদের ভুলগুলি থেকেই শিক্ষালাভ করি বা করতে চেষ্টা করি। তাই এখানে আমার সবচেয়ে বড় ভুল হয়েছিল যে আমরা শুধু এটাই বলব বলে ভেবেছিলাম, “আহ, রাষ্ট্র আমাদের শত্রুপক্ষ।” বরং লুক্সেমবুর্গ অথবা গ্রামসি কী বলেছিলেন? যে রাষ্ট্র আদতে একাধারে ঔষধ ও বিষ, দুইই। তোমাকে তাকে ব্যবহার করতে জানতে হবে যাতে করে কিনা সে বিষ হয়ে না ওঠে, তার জন্য শাস্তি পেতে হলেও প্রস্তুত থাকতে হবে। তুমি নাগরিক হয়ে উঠবে এবং ঝুঁকির মুখোমুখি দাঁড়াবে।
তবে আমি এটি বলে থাকি যে, সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিরা যে আমার জন্য নানারকম কাজ করে দেন তার কারণ আমি পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসনের বিভিন্ন মানুষজনের সঙ্গে পরিচিত। তবে আমি সবসময় আমার স্কুলগুলির শিক্ষকদের একথা মনে করিয়ে দিই যে, এঁদের আসলে তোমাদের জন্যই কাজ করা উচিত, কারণ তোমরাই এখানকার নাগরিক। আমি তাদেরকে বলি, “আমি তোমাদের শত্রু নই। আমার অভিভাবকেরাও সচ্চরিত্র মানুষ ছিলেন। কিন্তু কেবল এই দুই প্রজন্মের কাজের মাধ্যমে হাজার বছরের যে শোষণের ইতিহাস তাকে পালটানো অসম্ভব। আমাকে ছাড়াই তোমাদের এ কাজ করে যেতে হবে, করতে পারতে হবে।” অর্থাৎ কিনা রাষ্ট্রের ওপর নিজেদের অধিকারকে কায়েম করতে হবে, এবং বারেবারে সে কাজ করে যেতে হবে। এভাবে সবটা হবে না। কিন্তু আমাদের প্রতিবার চেষ্টা করে যেতে হবে, লড়াই করে যেতে হবে। একথাও এখানে নিশ্চিত করে বলা উচিত যে আমার দুইজন সবচেয়ে পুরনো যে সহকর্মী বা শিক্ষকেরা সেখানে রয়েছেন, তাঁরা সত্যিই নিজেদের উদ্যোগে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নিজেদের দাবিদাওয়াগুলিকে নিয়ে লড়াই জারি রেখেছেন।
ফ্রান্সিস: এই যে ভারতবর্ষে বা অন্যান্য দেশেও শিক্ষাখাতে সরকারি ব্যয়বরাদ্দ ক্রমশই হ্রাস পাচ্ছে বা শিক্ষাখাতে বরাদ্দ নিয়ে সরকারি স্তরে কোনও হেলদোলই যে আজকাল পরিলক্ষিত হয় না, এর কারণ কি শুধুমাত্র দরিদ্র ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাগত বিকাশের ক্ষেত্রে সরকারি অবহেলা নাকি এই মনোভাব আসলে আরও গভীর কোনও উদ্দেশ্যকে লালন করছে— সমাজের শ্রেণিগত বৈষম্য আদতে টিকিয়ে রাখার প্রয়োজনে? এই বিষয়ে আপনার কী অভিমত?
গায়ত্রী: সমস্ত সামাজিক পরিকাঠামোতেই শাসক, শাসক হিসেবেই থাকতে চায়। সবসময়। শিক্ষার মানের বিষয়ে যে বৈষম্য আমি তার কোনও স্পষ্ট কারণ নির্দেশ করতে পারব না। কারণ এমন প্রতিটি আলাদা ক্ষেত্রই, ব্যবহারিক দিক থেকে কিছু কিছু বিশেষ বিষয়ের উপরে নির্ভরশীল থাকে। কিন্তু এটুকু বলাই যায় যে এর উদ্দেশ্য হচ্ছে নির্বাচক জনসংখ্যার বিশাল একটি অংশকে তাঁদের বৌদ্ধিক বিকাশ ও বিবেচনার জায়গাটি থেকে সম্পূর্ণরূপে সরিয়ে রাখা যাতে কিনা নির্বাচন বা ভোটের গুরুত্ব সম্পর্কে তাঁদের কোনও ধারণাই তৈরি না হয়; এবং রাষ্ট্র যে তাঁদের শত্রু নয় বরং তাঁরাই একত্রিত হয়ে আদতে রাষ্ট্রকে নির্মাণ করে এই বোধটিও যেন কোনওভাবে তাঁদের মধ্যে জাগ্রত না হয়। নাগরিকেরাই যে রাষ্ট্রের আসল অধিকর্তা এই খবরটি যেন তাঁদের কাছে অজ্ঞাত থাকে। রাষ্ট্র তাঁদের শত্রু নয়, রাষ্ট্র হল সেই যন্ত্র যাকে তাঁরাই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখবে যাতে করে কিনা সেই যন্ত্র তাঁদের জন্য, তাঁদের হয়ে কাজ করতে পারে।
ভাবনাটা হয়তো এইভাবে যায়— অর্থনৈতিকভাবে ওপরের দিক থেকে নির্বাচক জনসংখ্যার সবচেয়ে বড় অংশগুলিকে পার্থিব সুখসুবিধা প্রদান করো। যাতে কিনা তাঁরা, ওপরের দিকে থেকে আসা এই সমস্ত সামন্ততান্ত্রিক উদারতার মনোবৃত্তিকে নিয়ে খুশি থাকে, এবং তাঁরা অত্যাচারী একনায়কদের নির্বাচিত করে। আমি আমার স্কুলের শিক্ষকদের বলি, রাষ্ট্র তোমাদেরকে ফুটবল দেবে, খেলার জন্য বৃত্তি দেবে— কিন্তু, কখনওই স্বাধীন চিন্তার অনুমতি দেবে না। তাঁরা স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে পারেন না কারণ, হাজার হাজার বছর ধরে তাঁরা সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়ে এসেছে। বর্তমান শাসকদের আমলেও তার কোনও অন্যথা হয়নি। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা নিয়ে ওদের সঙ্গে আলোচনা করা প্রয়োজন— কেমন করে স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে হয়, কেমন করে একেকটি সমস্যার সমাধানকে খুঁজে বের করতে হয়— এগুলিই আলোচনা করা উচিত। আমি এইসবই ওদেরকে শেখাতে চেষ্টা করি।
ফ্রান্সিস: রাষ্ট্র কি সবদিক থেকেই এই সব গ্রামাঞ্চলগুলির বিষয়ে বিস্মৃত হয়ে রয়েছে? কারণ উপেক্ষার এমন একেকটি নজির দেখে তো সহজেই মনে হবে যে, এই সমস্ত এলাকাতে আদতে রাষ্ট্র বা প্রশাসনের কোনও অস্তিত্বই নেই।
গায়ত্রী: একেবারেই না, এই সমস্ত প্রান্তিকেরা মোটেই রাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্ন নন। রাষ্ট্রের তাঁদেরকে প্রয়োজন। রাষ্ট্র তাঁদেরকে ব্যবহার করে। রাষ্ট্র সর্বত্রগামী, সবসময়েই নিজের প্রয়োজনে উপস্থিত। গ্রামাঞ্চলের দিকে, যাতে কিনা মানুষ বিজেপিকে ভোট না দেন, তৃণমূল কংগ্রেস (বিজেপির অন্যতম রাজনৈতিক বিরোধী দল) গ্রামীণ সমস্ত নাগরিকের ভ্যাকসিনেশনের ব্যবস্থা করিয়েছে। খাস কলকাতাতেও ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা অতটাও ভালো ছিল না, কিন্তু আমি অবাক হয়ে দেখেছি গ্রামাঞ্চলে দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর মানুষের ভ্যাকসিনেশন সম্পন্ন হয়েছে। কাজেই রাষ্ট্র সর্বত্র নিজের অস্তিত্ব বজায় রাখে। দরিদ্র মানুষেরা নিজেদের নাগরিক অধিকারকে ব্যবহার করতে না পারলেও, রাষ্ট্র সবসময়েই তাঁদের ব্যবহার করে।
ফ্রান্সিস: আপনি মায়ানমারের গণহিংসা প্রসঙ্গে বারংবার সরব হয়েছেন। এই মুহূর্তে সেখানে সেনা-সরকারের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী একটি গণ-আন্দোলন সংঘটিত হয়ে চলেছে। অথচ সেদেশের সেনা-সরকারের ঔদ্ধত্যও সমস্ত মানবিক সীমাকেই কার্যত লঙ্ঘণ করে গিয়েছে, এই বিষয়ে আপনার বক্তব্য?
গায়ত্রী: মায়ানমারে যা ঘটছে রোজা লুক্সেমবুর্গের ভাষায় তাকে বলব, ‘স্বতঃস্ফূর্ততা’। এ কেবল মানসিক স্বতঃস্ফূর্ততা নয়, এ আসলে এক বৃহৎ অর্থে সামাজিক অনুপ্রেরণার মতো— ক্রমাগত ও নিরবচ্ছিন্ন, দীর্ঘমেয়াদি শোষণের ফলে যার উৎপত্তি। এতখানি হিংসা, এতখানি শোষণ, ও এতখানি দমনের ইতিহাস— এত বিপুল সময়কাল ধরে। মায়ানমারের আন্দোলনকারীরা এমনই এক সময়ের মধ্যে দিয়ে বেড়ে উঠেছেন। মৃত্যুভয় কী জিনিস তা তাঁরা বিস্মৃত হয়েছেন। তাঁরা আক্ষরিকভাবেই আর মরতে ভয় পাচ্ছেন না। এ এক ভারী অদ্ভুত অবস্থা। মনোবিদ হিসেবে ফ্যানন যেমনটা একবার বলেছিলেন, যখন তুমি এমন এক জায়গাতে এসে দাঁড়াও যেখানে জীবনধারণের মূল সাম্যটুকুই তোমাকে দেওয়া হচ্ছে না, সাধারণ একটি সামাজিক সাম্য যা কিনা তোমাকে অন্তত মানুষ বলে চিহ্নিত করে, তখন এর প্রতিক্রিয়াতে চরম হিংসাত্মক এক অবস্থার উৎপত্তি হয়। অন্যদিকে এর সঙ্গে সঙ্গে এমনও একটি অবস্থার সৃষ্টি হয় যেখানে মৃত্যুভয় বলে আর কোনও কিছুরই অস্তিত্ব থাকে না। আসলে প্রান্তিকেরা কথা বলেন তাঁদের মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে, যেমনটা (মহম্মদ) বুয়াজিজি বলেছিলেন (তিউনিশিয়ান ফলবিক্রেতা, পুলিশি অত্যাচারে কার্যত যার মৃত্যুর কারণেই মধ্যপ্রাচ্যের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে ‘আরব বসন্ত’-এর সূচনা হয়), অথবা বলেছিলেন (জর্জ) ফ্লয়েড (ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলন যার মৃত্যুর প্রতিক্রিয়াতেই শুরু হতে পেরেছিল)।