দেবকুমার সোম
কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক
সাহিত্যের পাঠক কারা?
লেখক মাত্রই যেমন সাহিত্যিক হিসাবে স্বীকৃতির দাবিদার নন, পাঠকের ক্ষেত্রেও তেমন স্পষ্ট বিভাজন বাঞ্ছনীয়। নইলে কোনও উৎকৃষ্ট সাহিত্য পাঠ করে পাঠক যেমন কাঙ্খিত সাহিত্যরস থেকে বঞ্চিত থাকবেন, তেমন প্রকৃত সাহিত্যকারও তাঁর পাঠের প্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়া না পেয়ে হবেন আশাহত। অর্থাৎ সকলেই সাহিত্যের নির্ভূল পাঠক এমন শিশুতোষ দাবি করা যায় না।
ফলে প্রথমেই আমরা আমাদের উদ্দেশ্য স্পষ্ট করে নিতে চাইছি। আমরা যেমন লিখিতরূপ যে কোনও নির্মাণকে সাহিত্যের মর্যাদা দিতে পারি না, তেমন পাঠকমাত্রই সমান দায়িত্বশীল এমন সর্বগ্রাহ্য সিদ্ধান্তও সর্বজনীন নয়। ফলে পাঠসংক্রান্ত দায়িত্ব পাঠকের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হিসাবে থেকে যাচ্ছে।
সাহিত্যপাঠ একটা অভ্যাস। এই অভ্যাস থেকে যেমন একজন ব্যক্তির বেঁচেবর্তে থাকা আলাদা করা যায় না; তেমনই আবার একটা গোটা সমাজের ভাবনা-মুকুলের যাবতীয় ধারাবাহিক তত্ত্বতালাশের খোঁজ মেলে ধারাবাহিক সাহিত্যপাঠের মধ্যে দিয়ে। এই চর্চার মধ্যে লেখক, প্রকাশক, পাঠাগার, পাঠক, সাহিত্যপত্রিকার সম্পাদক কিংবা সমালোচক সকলেই নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছেন। তারা একে অন্যের সঙ্গে এমন ঘনিষ্ঠভাবে মিলে-মিশে রয়েছেন, যে একের থেকে অন্যকে বিচ্ছিন্ন করা চলে না। ভালো মানের সাহিত্য সৃষ্টির জন্য সকলের সমান অংশীদারী একান্ত প্রয়োজন। সমান গুরুত্বপূর্ণ। দুঃখের কথা আজকের দিনে সাহিত্যচর্চার এই অভ্যাস আর পাঁচটা ভালো অভ্যাসের মতো বঙ্গীয় সমাজজীবন থেকে চলে গেছে। তার অন্যতম কারণ অবশ্যই রুচির নিম্নগমন।
আজ আমাদের আধুনিক মন অনেকটা বিক্ষুব্ধ। আমরা ছিচকাঁদুনে শিশুর মতো ক্ষণে-ক্ষণে অতৃপ্ত হয়ে উঠছি। হাতের কাছে লব্ধ জিনিসটার প্রতি আজ আমাদের আর কোনও মন নেই। দরদ নেই। ভোগের বাসনাও নেই। কারণ ভোগবাদের স্বভাবধর্ম মেনে তা আমাদের হাতের নাগালে খুব সহজেই চলে আসে। সেটা সম্পদ কিংবা সম্পর্ক যাই হোক। আমরা অবচেতনে এখন ভোগবাদের ক্রীতদাস। ফলে নিজের হাতের জিনিসটার চেয়ে আমাদের বায়না অন্যের অধিকারে যে জিনিসটা আছে সেটার প্রতি। সেই জিনিসটা হস্তগত না হওয়া অবধি আমাদের স্বপনে–শয়ানে কিছুমাত্র শান্তি নেই। জিনিসটা দেশীয় হলে দেশীয়। না হলে বিদেশি। আজকের আমবাঙালির কাছে এটাই বেঁচেবর্তে থাকার চালু রুট। অন্যকে পায়ের তলায় পিষে, মাড়িয়ে, নিজের কাঙ্খিত জিনিসটা পাওয়ার এই লোভ ভোগবাদের চুড়ান্ত লক্ষণ। ফলে জিনিসটা পেতে ছল–চাতুরি থেকে বিবিধ ফন্দি–ফিকির সময়াসময় আমাদের করতে হয়। তাকেই আমরা জাঁক করে বলে থাকি সফলতা। ফলে সফলতার কোনও শেষ নেই। নেই চূড়ান্ত প্রান্তসীমা। কাঙ্খিত জিনিসটা হাতে পেলে সেটা ফেলে আবার নতুন আর একটা চক্চকে জিনিসের পেছনে আমরা দৌড়াই। আজ বাঙালি জীবনে বেঁচে থাকার কোনও সার্থকতা নেই। বরং প্রকট হয়েছে সফলতার বিভিন্ন ভোগবাদী মান্য সূচক। সাফল্যের পেছনে আমাদের দমছুট এই দৌড়ে এখন আমরা আর একদণ্ড স্থির হয়ে ভাবতে পারব না জীবনের সার্থকতা কোথায়? এমন করাল সময়ে আমাদের এই নিত্য–নতুন চাওয়ার মধ্যে সাহিত্যের স্থান কতটুকু? আমাদের কতটুকু সময় দাবি করতে পারে সমকালীন সৃষ্টিশীল সাহিত্য?
আশঙ্কার কথা, এই পচন ধরা সমাজব্যবস্থায় আজ মূলধারার মুনাফাখোর সাহিত্যও এক মেকি জীবন স্রোতের পক্ষে সাওয়াল করে। পণ্যসভ্যতার রূপকে সাহিত্যে রূপান্তর করার ব্যর্থতা বাংলা মূলধারার সাহিত্যের শরীরে বেশ ফুটে উঠছে। ফলে ক্রমশ বদ্ধ জলায় অবনত হয়েছে বণিকসভ্যতা-লালিত আজকের বাংলা উপন্যাস। যেখানে ফরমাইশি উপন্যাসে ঠাসা পূজাবার্ষিকী কিংবা ঈদ সাহিত্য পত্রিকা। আর ধারাবাহিক উপন্যাসের নামে মেকি সমাজের ছলচাতুর্যের বিজ্ঞাপন। এ কেবল পাঠক ঠকানোর আয়োজন মাত্র। সমবেত পাঠকসমাজের কাছে বেনেবৃত্তির এই সহজ সমীকরণ আজ নগ্নভাবে প্রতিষ্ঠিত। ফলে আমপাঠক আজ মুখ ফিরিয়েছেন সাম্প্রতিক বাংলা উপন্যাস পাঠ থেকে।
বণিক সাহিত্যের কারবারিরা তাঁদের মুনাফার জন্য সাহিত্যের ভেতরমহলে কখনও ঢুঁ মারতে চান না। তাঁরা সকলেই নামের পূজারী। নিন্দনীয় হলেও তাঁদের কাছে নামই প্রধান। অথচ, সারা দুনিয়া জানে সৃজনশীল সাহিত্যের বাজারে নামে কিছু যায় আসে না। ব্যক্তি লেখক মৃত হলে তাঁর সাহিত্যকীর্তিও মানুষ বেমালুম ভুলে যায়, যদি না তাঁর লেখনীর মধ্যে সারবত্তা কিছু থাকে। আমাদের হাতের কাছে এমন উদাহরণ কিছু কম নয়। জীবিতকালে যাঁদের জীবনযাপন ছিল শাসকের মতো। তাঁদের সাহিত্য আজ ছুঁয়েও দেখেন না বর্তমান প্রজন্মের পাঠক।
আজকের বণিকসভ্যতা-লালিত উপন্যাসের ভঙ্গিটা বদলে গেছে। এখন সাহিত্যের নামে ভূতের গপ্পো, গোয়েন্দা গপ্পো, হাসির গপ্পো, প্রেমের গপ্পো আর কিছু না জুটলে যৌনতার গপ্পো শিরোনামে উপন্যাস ছাপানো হয়। করোনাকালে মুদ্রিত পত্রিকার রামরাজত্বের প্রায় অবশেষের মধ্যে দাঁড়িয়ে আন্তর্জালের সীমানাহীন ভূগোলে কিংবা বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পাতায় ‘উপন্যাসিকা’, ‘নভেলা’ জাতের যা প্রকাশ পায়, তা যে উৎকৃষ্টতার স্পর্ধা রাখে তেমনটা নয়। তবু পাঠককে দুধের বদলে পিটুলিগোলা পরিবেশন করে আজকের বাংলা সাহিত্যের শত্রুতে পরিণত হয়েছে এইসব আন্তর্জালিক সাহিত্য পত্রিকা। অথচ, যে কোন সাহিত্যই হেতুহীন। বৃষ্টিতে একলা ভেজার মতো নিবিষ্ট আনন্দ। যা খুব আপন। খুব ব্যক্তিগত। ফুলকে যেমন তার সৌরভের জন্য পরাগবাহী পতঙ্গ বা অন্য জীবের কাছে বিজ্ঞাপন করতে হয় না, শিল্প-সাহিত্যও কতক অংশে তেমন। সাহিত্যিক যদি তাঁর সামাজিক মাধ্যমের পাতায় নিজের ঢাক নিজে পেটান, তবে বলতে হবে তাঁর সৃষ্ট সাহিত্যের ওপর তাঁর নিজেরই কোনও আস্থা নেই। আজকের ভুঁইফোড় পত্রিকা-সম্পাদকেরা সেটা জানেন। তাঁরা প্রায় প্রত্যেকেই যেমন সম্পাদক, তেমন লেখকও বটে। ফলে অন্য বন্ধু সম্পাদকদের লেখায় ঠাসা পত্রিকা নিয়ে তাঁরা গলাবাজি করেন। একে অপরের পিঠ চুলকে দেন। অথচ, ‘খুব খানিকটা না রাগিলে, খুব ভালো না বাসিলে, খুব খুশি না হইলে, খুব না কাঁদিলে সাহিত্যের আদিম ভাষা কোথা হইতে উঠিবে?’
আলোচনা প্রসঙ্গে একটা সাধারণ গাণিতিক তথ্য আমরা এখানে রাখতে চাই এটুকু বোঝাতে যে, এ পর্যন্ত বাংলা উপন্যাস জন্মনিয়ন্ত্রণে তার আদল কেমন বদলেছে। বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর সমগ্র সাহিত্যজীবনে মাত্র ষোলখানা উপন্যাস লিখে গেছেন। তার মধ্যে একটি ইংরাজি ভাষায়। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন বঙ্কিমের উপন্যাসগুলো আয়তনে সঠিক। বাংলায় এমন মাপের (অর্থাৎ প্রায় পঞ্চাশ হাজার শব্দ) উপন্যাস রচনা হওয়া প্রয়োজন। যদিও তাঁর গোরা উপন্যাসের বপু বঙ্কিমের প্রায় তিনটে উপন্যাসের সমান। রবীন্দ্রনাথের উপন্যাস সংখ্যা মাত্র এগারো। ‘কথাশিল্পী’ শরৎচন্দ্র রচনা করেছেন চব্বিশটি উপন্যাস। সতীনাথ ভাদুড়ির মাত্র তিনটে উপন্যাসের কথা আমরা জানতে পেরেছি। কমলকুমারের মোট উপন্যাসের সংখ্যা দশের গণ্ডি পার হবে না। এরপর যদি আমরা সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহের সমগ্র সাহিত্যজীবনে চোখ রাখি, তবে দেখতে পাব তাঁর উপন্যাসের সংখ্যা মাত্র তিনটি। ঔপন্যাসিক হিসাবে খ্যাতিমান আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের মোট উপন্যাস দুটি। আর নবারুণ ভট্টাচার্যের আটখানা। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন পেশাদার ঔপ্যনাসিক। তাঁর উপন্যাসের সংখ্যা চল্লিশ। বিপরীতে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মোট উপন্যাসের সংখ্যা দেড়শো ছাড়িয়ে গেছে। হুমায়ুন আহমেদের নামের পাশে দুশো বিয়াল্লিশটা বইয়ের রচয়িতা হিসাবে রেকর্ড রয়েছে।
এত কথা আমাদের এই জন্য বলতে হল যে, ধার–দেনা করে যেমন মধ্যবিত্তের সংসার চলে না, ঠিক তেমন নিজের স্বতন্ত্র আইডিয়া কিংবা দর্শন না থাকলে প্রকৃত শিল্পসাহিত্য সৃষ্টি হতে পারে না। সুস্থ জীবনযাপনের জন্য যেমন সৎ পথে উপার্জন একমাত্র উপায়, তেমনই স্বোপার্জিত মতাদর্শ ছাড়া প্রকৃত সাহিত্যজীবন রচিত হতে পারে না। দূর্ভ্যাগের কথা, আজকের মূলধারার বাংলা সাহিত্যের (যেখানে ভূতের গল্প, গোয়েন্দা গল্প, বাঘের গল্প, অভিযানের গল্প, পরকীয়া প্রেমের গল্প কিংবা যৌনতার গল্প সাধারণ অর্থে সাহিত্যের জঁর) ঔপন্যাসিকেরা বছরে গোটা চার–পাঁচটা উপন্যাস পয়দা করেন। ধৃতরাষ্ট্রের শতপুত্রের মতো তাঁরাও হয়তো এত লেখার জন্ম দিয়েছেন, যে মনেই করতে পারবেন না এতদিন কী লিখেছেন? কত লিখেছেন? এমন পাঠক ঠকানো বেনেবৃত্তিতে প্রকৃত সাহিত্যপাঠের অভ্যাস বাঙালির বরাবরের জন্য পালটে গেছে। আজকের দিনে মাত্র দশ বছর সাহিত্যচর্চা করে একজন ‘সফল’ (??) বাঙালি ঔপন্যাসিক নয়-নয় করে তিরিশটা উপন্যাস আর শ খানেক গল্পের রচনাকার হিসাবে গর্ব বোধ করতে পারেন। বই প্রকাশের সঠিক হিসাবে আমাদের হাতের কাছে থাকলে আমরা হয়তো জোর দিয়েই বলতে পারতাম এতদিনে হুমায়ুন আহমেদের রেকর্ড কোনও জীবিত লেখক ভেঙে ফেলেছেন।
অথচ, সবটাই হতাশার কথা নয় (আর সবটাই হতাশার হলে আমাদের এই আলোচনার কোনও প্রয়োজন থাকে না)। বঙ্গীয় বড় বা মাঝারি মাপের প্রকাশকেরা যেমন নামধারী লেখকদের অপঠ্য উপন্যাস প্রকাশ করে বাংলা সাহিত্যকে ক্রমশ বদ্ধ পাঁকের জলাশয়ে অবনত করেছেন, ঠিক তেমনই খুব ছোট আর প্রান্তিক প্রকাশকেরা বাংলা উপন্যাসে নিয়ে এসেছেন এক ঝাঁক নতুন ঔপন্যাসিককে। যাঁদের সে অর্থে কোনও নাম নেই পণ্যসাহিত্যের বাজারে। যাঁদের পাঠকসংখ্যা নেহাতই হয়তো একশো পার হবে না। তাঁরা সংখ্যালঘু। তাঁদের লেখা উপন্যাসে নেই কোনও ফরমাইশি আয়োজন। বরং আছে নিজেকে প্রমাণ করার তাগিদ। তাঁদের লেখায় রয়েছে নতুন ভাবনার আস্বাদ। আজ বাংলা সাহিত্যের বদ্ধ ডোবাকে পাশ কাটিয়ে বয়ে চলেছে ধীরগতির এই নতুন সাহিত্য। যা বাংলা সাহিত্যকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার। ফলে বণিক সাহিত্যের লেখক ও তাঁদের পৃষ্ঠপোষকদের বহুবিধ চাতুর্য আর শ্রমবিমুখতা আজ সরাসরি চ্যালেঞ্জের মুখে। আজ তাঁরা এতটাই অসহায়, যে নতুন ধারার এই উপন্যাস সাহিত্যের গায়ে তাঁরা ‘সিরিয়াস সাহিত্য’-এর লেবেল সেঁটে নিজেরাই নিজেদের অপমান করছেন। পরোক্ষে স্বীকার করে নিচ্ছেন তাঁদের সাহিত্য, যা তাঁরা বছরের পর বছর পয়দা করেন আর ছাপান তার মধ্যে আর যাই হোক ন্যূনতম সিরিয়াসনেসটুকু নেই।
লেখক তাঁর পাঠক নিজে উপার্জন করেন (আমরা এখনে সচেতনভাবে ‘উপার্জন’ শব্দটি প্রয়োগ করলাম)। তিনি কেবলমাত্র তাঁর সাহিত্যের মাধ্যমেই পাঠকের কাছে গ্রহণযোগ্য হন। উপস্থিত পাঠকসমাজ সাধারণত ভিন্নধারা কিংবা অবাণিজ্যিক লেখক সম্পর্কে উদাসীন থাকেন। কারণ পাঠক তাঁর পূর্ব পাঠ-অভিজ্ঞতা থেকে ধরেই নেন এমন লেখায় তাঁর ইচ্ছেপূরণের কোনও গল্প বা কাহিনি থাকবে না। পাঠকের এমন ধারণা যে ভেজাল মেশানো, তেমনটা বুক ঠুকে বলা চলে না। বলা উচিতও নয়। কারণ এমন সাহিত্য মোটাদাগের জনপ্রিয়তার চালু সমীকরণ মানতে চায় না। ফলে পাঠকের দরবারে এমন সাহিত্যকে যথাযথ পৌঁছে দিতে দরকার এমন প্রকাশককের, যিনি বাস্তবিক আলু-পটল বেচার মতো সাহিত্যের কারবারি নন। যিনি সৃষ্টি এবং তার স্রষ্টা উভয়কেই প্রাপ্য সম্মান এবং সাম্মানিক দিতে প্রস্তুত। এমন প্রকাশকেরা অবশ্যই ব্যবসা করবেন। তবে সস্তা বাণিজ্যে তাঁদের উৎসাহ না থাকাই দস্তুর। তাই সংখ্যালঘু সাহিত্যকে তাঁদের নিজেদের সন্তানের মতো লালন আর পালন করতে হবে। তাঁদেরকে হিম্মত নিয়ে পৌঁছে যেতে হবে সেই পাঠকের কাছে, যিনি প্রকৃত সাহিত্যের অন্বেষণে রয়েছেন। আর একবার তাঁর কাছে যদি সংখ্যালঘুর সাহিত্য পৌঁছে যায়, তবে নিশ্চিত সেই পাঠক দুধ আর পিটুলিগোলার পার্থক্য বুঝবেন আর উপন্যাসের নামে মেইনস্ট্রিম আবর্জনার কাগজ আস্তাকুঁড়ে ফেলবেন।
আলোচনাকে আর একটু প্রাসঙ্গিক করার অভিপ্রায়ে আনুমানিক শতাংশের একটা হিসাব এখানে দেওয়া যেতে পারে। বাংলা সাহিত্যের ৯৫ শতাংশ পত্র-পত্রিকা কিংবা প্রকাশনা সংস্থায় সংখ্যালঘু সাহিত্যকর্ম প্রকাশের কোনও সম্ভাবনা নেই। তাদের দায়ও নেই। এর অর্থ বাকি ৫ শতাংশ অঞ্চলে ভিন্নধারার সাহিত্য ভিড় করে রয়েছে। সেখানেও ৫০ শতাংশ (অর্থাৎ মোট সাহিত্য পাঠকের ২.৫০ শতাংশ) পাঠক লেখা না পড়েই পৃষ্ঠা উলটে চলে যান। থেকে গেলেন সমগ্র বাংলা সাহিত্যের মাত্র ২.৫০ শতাংশ সাহিত্যের পাঠক। এর মধ্যে আবার ২ শতাংশ পাঠক পাঠসংক্রান্ত তাঁদের কোনও মতামত দেবেন না (অর্থাৎ দূরত্ব বজায় রাখবেন)। তাহলে সমগ্র বাংলা সাহিত্যের অতি ক্ষুদ্র অংশ (যা মোট পাঠক সংখ্যার প্রায় ০.৫০ শতাংশ) পাঠকের কাছে সংখ্যালঘু উপন্যাসের গ্রহণযোগ্যতা থাকলেও থাকতে পারে। আশ্চর্য হতে হয় এই গাণিতিক হিসাবটা অমিয়ভূষণ, দেবেশ, সন্দীপন কিংবা মতি নন্দীর উপন্যাসের ক্ষেত্রে মোটামুটি ধ্রুবক হিসাবে থেকে যাচ্ছে। তাঁরা সকলেই মান্য ঔপ্যনাসিক। তবুও সমগ্র বাংলা সাহিত্য মহলের তিন থেকে চার শতাংশ পাঠক হয়তো এঁদের নাম জানেন। কিন্তু এঁদের পাঠ করেন ক জন? ০.৫০ শতাংশ? খুব নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না।
পাশাপাশি আর একটা মোটা হিসাব দেওয়া যায়। যেমন সত্যজিৎ রায়। বাংলা সাহিত্যের একশো শতাংশ পাঠক তাঁর লেখা পাঠ করেছেন। তাঁদের মধ্যে মাত্র ০.৫০ শতাংশ পাঠক হয়তো মানেন সত্যজিৎ রায় কোনও সাহিত্যিক নন। এই প্রসঙ্গে আরও বহু নাম স্মরণে আসে। চটজলদি মনে পড়া নাম সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এবং হুমায়ুন আহমেদ। আমাদের হিসাবে প্রায় ৯৫ শতাংশ পাঠক এই দুই ঔপন্যাসিককে সেরা মেনে নিয়েছেন। সমস্যা হল বাকি ৫ শতাংশ পাঠককে নিয়ে। এই সংখ্যালঘু পাঠকেরা (সাধারণ সমীকরণ মানলে ঔপন্যাসিকের মতো সাহিত্যের পাঠকও সংখ্যালঘু) মৌলবাদীদের মতো। যুগ–যুগ ধরে তাঁদের সিদ্ধান্ত নড়চড় হওয়ার নয়। যেটা বাকি ৯৫ শতাংশের ক্ষেত্রে জোর দিয়ে বলা যায় না। এই গরিষ্ঠ অংশের পাঠক সদাই ভাসমান। শরৎচন্দ্রের সময় শরৎচন্দ্রের পাঠক। সুবোধ ঘোষের কালে সুবোধ ঘোষের পাঠক। সমরেশ বসুর সময় সমরেশ বসুর দিকে তাঁদের ভোট। সেলিনা হোসেনের সময় তাঁরা সেলিনা হোসেনপন্থী। সতীনাথ, মানিক কিংবা ওয়ালীউল্লাহের মতো মাত্র কয়েক ভগ্নাংশ নিবিষ্ট পাঠকের মতো এঁরা নন। ফলে সংখ্যাগুরুর জনপ্রিয়তায় দশ দিগন্ত জয় করা ঔপ্যনাসিকেদের দেখা যায় মৃত্যুর কয়েক বছরের মধ্যেই তাঁদের লেখক জীবনের মৃত্যু ঘটে গেছে। কেউ কেউ আবার রমাপদ চৌধুরী কিংবা নিমাই ভট্টাচার্যের মতো, শারীরিক মৃত্যুর পরে পাঠকের নজরে আসেন এতদিন তাঁরা বেঁচে ছিলেন!
পঙ্গু সভ্যতা থেকে সুস্থ সভ্যতায় উত্তরণের ডাক দিতে হিম্মত দরকার। তা একজন নির্ভীক সাহিত্য রচয়িতার পক্ষে সম্ভব। তবে তার জন্য প্রয়োজন প্রকৃত শিক্ষা আর প্রকাশভঙ্গির মৌলিকতা। কিন্তু কেবল মৌলিকতাই কি এখন যথেষ্ট? দেশের মাটিকে চেনা, ইতিহাসচেতনা আর আলোকিত রাস্তায় উত্তরণের পাকদণ্ডির হদিস সৎ সাহিত্যের কাছে থেকেই পাঠক আশা করে। এমন আশা অসঙ্গত নয়। সাহিত্যের পুনঃপাঠের কার্যকরিতা তাই সকল দেশে সর্বকালে সর্বজনীন সত্য।
আজকের দিনে কাকে বলা হবে সৎ সাহিত্য? এই প্রশ্নটির উত্তর যেমন জটিল, তেমনই বহুমাত্রিক। আপাত নিরীহ এই প্রশ্নটির সর্বমান্য গ্রহণযোগ্য উত্তরের অন্বেষণে হয়তো এই প্রবন্ধের বিবিধ আলোচনা খানিক কার্যকারী হতে পারে। এই প্রবন্ধের বিবিধ আলোচনার মধ্যে দিয়ে আমরা বহুকৌণিক দিক থেকে বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করব এই সময়ের দাবি মেনে আগামী দিনের সাহিত্যের রূপ আর বিকাশ। হয়তো এভাবেই আমরা খানিকটা ছুঁতে পারব সৎ সাহিত্যের সংজ্ঞাকে।
আমরা জানি সৎ সাহিত্য চিরকাল তার আত্মপ্রকাশের জন্য ঘরের কোণে মাথা কুটে মরে। এখন তার ওপর আরও পাঁচটা জিনিসের মতো চালু হয়েছে করপোরেটের একচেটিয়া খবরদারি। যেখানে মুনাফাবাজির বিভিন্ন ছক চোখের ওপর অদৃশ্য দেওয়ালে টাঙানো থাকে। থাকে বিভিন্ন প্যাঁচপয়জার। থাকে সাফল্যের চালু রুট। ফলে কারসাজি করে ‘বেস্ট সেলার’ হয়ে ওঠা কিংবা কোনও বিশেষ পুরস্কার পাওয়া উপন্যাস এখন দেশ কিংবা বিদেশে বণিক সাহিত্যের একমাত্র ঠিকাদার। ফলে পুরস্কার পাওয়ার জন্য চলে বিস্তর লবিবাজি। এর সঙ্গে জুড়ে গেছে আরও কিছু গোলমেলে জিনিস।
মানুষ কেবল সাহিত্যের কারণে বই পড়ে না। জ্ঞান অর্জনের জন্যও তাকে বই পড়তে হয়। নিজেকে জানবার, সমাজকে জানবার, পরিপার্শ্বকে চেনার দায় থেকে সে-সব বই পড়তে হয়। কিংবা নিছক কেরিয়ার তৈরির জন্যও তাকে বই কিনতে হয়। পড়তে হয়। সে–সব বই সাহিত্য বিষয়ক নয়। যাকে ইংরাজিতে আড়ম্বর করে বল হয় ‘নন্ ফিকশন’। কিন্তু আজকের মানুষের কাছে জ্ঞান (knowledge) আর তথ্য (information) এ দুটো শব্দের মধ্যে কোনও অন্তর নেই। নেই আপাত বিরোধ। আজকের বাঙালি জ্ঞানের অন্বেষণ করে না। বরং মুষ্টিমেয় যাঁরা জ্ঞানের সন্ধান করেন, তাঁদের গায়ে ‘আঁতেল’ নামের একটা বিদ্ঘুটে লেবেল সেঁটে দিয়ে সমাজে তাঁদের হাস্যাস্পদ করতে চান সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ। এবং সফলতার সঙ্গেই সেটা তাঁরা করেন। তথ্য অর্থাৎ information-ভিত্তিক এই বাঙালিরা ছন্দ না জেনেও কবিতা লিখতে জানেন। বাংলা ব্যাকরণের বুনিয়াদি শিক্ষা না নিয়েও গদ্যসাহিত্য রচনা করতে পারেন। উইকিপিডিয়া থেকে টুকে লিখে ফেলতে দিতে পারেন জ্ঞানগর্ভী প্রবন্ধ বা ফিচার। অর্থাৎ পুরো ব্যবস্থাটাকেই এই information-প্রেমী বাঙালি অতি সস্তার জায়গায় নিয়ে গেছেন। নিজেদের অগভীরতা দিয়ে বাংলা উপন্যাসের বদ্ধ জলাশয়কে এমন পঙ্কিল করে তুলেছেন যে, এখানে কহ্লার ফুটবে এমন দাবিও কেউ সাহস করে করবেন না।
আজ করপোরেট ব্যবস্থায়— সর্বগ্রাসী পুজিবাদের এক বিশ্বে knowledge-কে আমরা আমাদের ব্যবহারিক জীবন থেকে ছেঁটে ফেলেছি। তাই ফাস্ট–ফুডের মতো জিভের আস্বাদ বাড়ানো চটজলদি কিছু information হাতের কাছে মজুত থাকলেই আমাদের জীবন বেশ হেসেখেলে চলে যায়। আমরা ভুলে যাই যা কিছু মুখরোচক, তা-ই স্বাস্থ্যকর নয়। এখন আমাদের জীবন কোটেশন নির্ভর। এর ফলে আমাদের আজ আর প্রশ্ন করার কোনও দায় থাকে না। কিন্তু যে সমাজ প্রশ্ন করতে চায় না, করতে পারে না, সে সমাজ তো মৃত? সঠিক প্রশ্ন সেই করতে পারে যার মগজের চিন্তাশক্তি আছে। যার সেরিব্রাল কর্টেক্সের ভেতরে ভোগবাদের জঞ্জাল ঠাসা নয়। প্রশ্ন সেই করতে পারে যে থাকে জ্ঞানের ধারাবাহিক অন্বেষণে।
আবার প্রশ্ন করা, ডান হাতের তর্জনী তুলে প্রশ্নবাণে শাসককে বিদ্ধ করার প্রবণতা খুব জটিল আর বিপদজ্জনক এক প্রবণতা। মানুষ প্রশ্ন করলে শাসকের অস্বস্তি হয়। শাসক চায় না তার শোষিত জনগণ প্রশ্ন তুলুক। ফলে করপোরেট পুজিবাদের সঙ্গে মিলে রাষ্ট্র কিংবা ক্ষমতাবানেরা মানুষকে প্রশ্ন করা থেকে ভুলিয়ে রাখতে সাজিয়ে দেয় বিবিধ চকমকে অন্তঃসারশূন্য প্রলোভন। সে প্রলোভন এমন সর্বত্রগামী, যে আজ আমাদের বাথরুম পর্যন্ত তা পৌঁছে গেছে। আমাদের নিরালা, একান্ত ব্যক্তিমানুষটাকে সম্পূর্ণ কবজা করে নিয়েছে পুজিবাদী রাষ্ট্র আর তার ভার্চুয়াল পৃথিবী। যে পৃথিবীতে প্রত্যেকটি মানুষ একই ছাঁচের যন্ত্রণা নিয়ে ভীষণভাবে একা। আজ ব্যক্তিগত গোপনীয়তা আর ব্যক্তিগত নয়। মানুষের অতি ব্যক্তিগত গোপন তথ্যগুলো আজ রাষ্ট্র আর তার দালাল এজেন্সিগুলোর করতলগত। ফলে যে সাহিত্য মানুষের ভাবনার জন্য লেখা হয়, তার পাঠকবৃত্ত থেকে যায় খুব ছোট। এত ছোট, হয়তো বিন্দুসম তার উপস্থিতি বাজার অর্থনীতির ফলাফল মেনে আমসাহিত্যপাঠকের নজর এড়িয়ে যায়। ক্রমে–ক্রমে সেই সাহিত্য প্রত্নতাত্ত্বিক সংগ্রহের বিষয় হয়ে ওঠে।
এর সঙ্গে আর একটা বিষয় থেকে যায়। কেবল জ্ঞানার্জনই কি যথেষ্ট? তার প্রয়োগ? তার থেকে পাওয়া প্রবৃত্তিগুলোর কী হবে? সেখানেও আসে প্রশ্ন করার অধিকার। যে মানুষ জ্ঞান লাভ করেন তাঁকে চুপ করিয়ে রাখা সম্ভব নয়। না রাষ্ট্রের। না পুঁজিপতি করপোরেটের। জ্ঞানমনস্ক মানুষ প্রশ্ন করবেন। সঠিক প্রশ্ন সঠিক সময় করবেন। আজকের প্রকৃত সাহিত্য তাই। আজকের সৎ সাহিত্যপাঠের তাগিদ সেখানেই।
আজকের সিভিলাইজেশন সম্পূর্ণত টেকনোলজি-নির্ভর এবং করপোরেটের ক্রীতদাস। করপোরেট ব্যবস্থার নিয়ম হল সর্বোচ্চ মুনাফা লাভের জন্য বাজার অর্থনীতিকে একচেটিয়া মালিকানায় কবজা করা। ফলে বাজার অর্থনীতিতে দুর্বল টেকনোলজি নির্ভর কিংবা অপর্যাপ্ত পুঁজিনির্ভর প্রতিযোগীর কোনও স্থান নেই। আজ রাষ্ট্রও সিভিলাইজেশনের এই মন্ত্রকে হাতিয়ার করে করোপোরেটের সাহায্যে মুছে দিতে চাইছে প্রান্তিক মানুষের জীবনযাপন। তাঁদের ঐতিহ্য। তাঁদেরকে হয় এথেনিক ক্লিনজিং-এর মধ্যে দিয়ে সাফ করে দিচ্ছে। নয়তো তাঁদেরকে উন্নয়নের নামে প্রিভিলেজড্ ক্লাসের পরিধিরেখার মধ্যে নিয়ে আসছে। যাকে জাঁক করে বলা হচ্ছে উন্নয়ন। আজ খুব দ্রুত পালটে যাচ্ছে মানবিক সম্পর্কগুলো। সামাজিক সমীকরণগুলো। খুব দ্রুত বদলে যাচ্ছে জীবজগতের সঙ্গে হোমো সেপিয়েন্সের সবেক বোঝাপড়া। এখন হররোজ আসছে সস্তা আর চটুল বিনোদনের মডেল। এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর দায় ও দায়িত্ব সাহিত্যের। প্রধানতম দায় উপন্যাস সাহিত্যের। আশার কথা আজকের ক্ষীণতনু বিকল্প যে জলাধার বাংলা সাহিত্যে বয়ে চলেছে, সেখানে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই সমস্যাগুলো। প্রান্তিক মানুষের ঐতিহ্য হয়ে উঠছে এখনকার উপন্যাসের বিষয়। আজ স্থানিক মানুষের পক্ষে কলম ধরেছেন এপার-ওপার বাংলার বেশ কয়েকজন অখ্যাত কিংবা সামান্য খ্যাত ঔপন্যাসিক। এই আলোচনা রচনার প্রাথমিক উদ্দেশ্য সেই সব সাহিত্যের দিকে চোখ ফেরানো। যেখানে মুনাফাবাজি নেই। বরং আছে উত্তর ঔপনিবেশিক ব্যবস্থায় নিজের দেশের আত্মার অনুসন্ধান। অবহেলিত জীবনগুলিকে সাহিত্যে চিরকালের জন্য ঠাঁই দেওয়া। আজকের দিনে তাই পাঠকেরও দায় এই সব সাহিত্যকে খুঁজে বের করা। তাকে পাঠ করা। আর সেখান থেকে প্রকৃত সাহিত্য পাঠের অভ্যাস গড়ে তোলা। সেটা কোনও শাসকের নির্দেশিত পথে নয়। বাজার অর্থনীতির নিয়ন্ত্রকের তর্জনী সঙ্কেতে নয়। ব্যক্তিকে স্ব–ইচ্ছায় করতে হবে জ্ঞানের অন্বেষণ। সৎ সাহিত্য চর্চা। যাতে স্বাধীনভাবে প্রশ্ন করার অধিকার তার জন্মায়। এই ধারাবহিক রচনার যাবতীয় ভাবনার প্রাসঙ্গিকতা কেবলমাত্র এই। অন্যরা scroll করে পাতা ওলটানোর বৃথা পরিশ্রম নাই বা করলেন?
শিল্প–সাহিত্যকে অনিবার্যভাবে স্থানিক হতে হয়। দেশজ হতে হয়। বাংলা সাহিত্যের সমস্যা তার খোলনলচে সবকিছুই পরের। মধুসূদনের কবিতা আর বঙ্কিমচন্দ্রের নভেলের সূত্রসমূহ থেকে এই পর্যন্ত বাংলা ভাষায় আধুনিকতার (এবং উত্তর আধুনিক) নামে যা কিছু লিখিত, সবই পরের জিনিস। সবই বৈদেশিক। আজও আমরা সেই প্রবণতা থেকে বের হতে পারিনি। উপন্যাসের আদল যেমন আমাদের ধার করা। ঠিক তেমনই সাহিত্যের নন্দনতত্ত্বও আমরা স্বহস্তে স্বদেশের জন্য আজ অবধি রচনা করে উঠতে পারিনি। বরং গৃহস্থদোরে ফেলে দেওয়া কার্তিকপ্রতিমার মতো বর্হিবিশ্বের ফেলে দেওয়া নন্দনতত্ত্বগুলোকে কুড়িয়ে এনে স্থান দিয়েছি নিজেদের কুলুঙ্গিতে। তাই এই ধারাবহিক আলোচনাগুলো এক হিসাবে বাংলা উপন্যাসের নিজস্ব নন্দনতত্ত্ব খুঁজে নেওয়ার আগামী দিনের আয়োজনও বলা যায়। এর আর কোনও উদ্দেশ্য নেই।
আবার জানাই সাহিত্যপাঠ একটা অভ্যাস। বিশেষ এক ধরনের অভ্যাস। কেবলমাত্র তাঁদের জন্য, যাঁদের পেটে ভাত, পরনে কাপড় আর মাথার ওপর ছাদ আছে। যাঁরা প্রশ্ন করতে চান। যাঁরা তর্কপ্রিয়। কেবল তাঁদের জন্য।
[ক্রমশ]
খুবই প্রয়োজনীয় লেখা। পাঠক ও লেখক উভয়ের কাছেই। পরবর্তী অংশের অপেক্ষায় থাকব।