শচীন কুমার জৈন
ভূপাল, মধ্যপ্রদেশের ‘ভিকাস সম্বাদ’-এর সচিব ও অধ্যক্ষ শচীন কুমার জৈন ‘রাইট টু ফুড’ বা খাদ্যের অধিকার মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রাজ্য উপদেষ্টা। শচীন মধ্যপ্রদেশ সরকারের সোশাল অডিট সোসাইটির অন্যতম সদস্য। বর্তমান নিবন্ধটি মূল ইংরাজি থেকে অনুবাদ করেছেন সত্যব্রত ঘোষ।
অপুষ্টির চ্যালেঞ্জ ভয়ানক
গুজরাট: ২০১৫-১৬ সালে পাঁচ বছর বয়সের নিচে শিশুদের মধ্যে স্টান্টিং (বয়সের তুলনায় উচ্চতা বা বৃদ্ধি কম; ক্রনিক অপুষ্টির সূচক) ছিল ৩৮.৫ শতাংশ। ২০১৯-২০ সালে তা বেড়ে হয় ৩৯ শতাংশ। চাইল্ডহুড ওয়েস্টিং (উচ্চতার নিরিখে কম ওজন)-এর হার ২৬.৪ শতাংশ থেকে সামান্য কমে ২৫.১ শতাংশ হয়। ৬ থেকে ৫৯ মাস বয়সের শিশুদের মধ্যে রক্তাল্পতার হার এই সময়ের মধ্যে ৬২.৫ শতাংশ থেকে বেড়ে বিপজ্জনকভাবে ৭৯.৭ শতাংশ মাত্রায় পৌঁছায়। একইভাবে, ১৫-৪৯ বছর বয়সী প্রজননক্ষম মহিলাদের ক্ষেত্রেও রক্তাল্পতার হার চিন্তাজনকভাবে ৫১.৩ শতাংশ থেকে লাফিয়ে ৬২.৬ শতাংশ ছুঁয়েছে।
মহারাষ্ট্র: এই সময়ে মহারাষ্ট্রেও শিশুদের মধ্যে স্টান্টিং সূচক ৩৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩৫.২ শতাংশ হয়েছে। চাইল্ডহুড ওয়েস্টিং-এর হার গত ৫ বছরে একই জায়গায় দাঁড়িয়ে— ২৫.৬ শতাংশ। শিশুদের মধ্যে রক্তাল্পতার হারও ৫৩.৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ৬৮.৯ শতাংশ হয়েছে। লক্ষ্যণীয়, প্রজননক্ষম মহিলাদের মধ্যে রক্তাল্পতার হার ৪৯.৩ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ৪৫.৭ শতাংশ।
কর্নাটক: স্টান্টিং সূচক ৩৬.২ শতাংশ থেকে সামান্য কমে ৩৫.৪ শতাংশ হলেও শিশুদের মধ্যে রক্তাল্পতার হার ৬০.৯ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৬৫.৫ শতাংশ। প্রজননক্ষম মহিলাদের মধ্যেও রক্তাল্পতার হার ৪৫.৪৫ শতাংশ থেকে আরেকটু খারাপ হয়ে ৪৫.৭ শতাংশে এসে পৌঁছেছে।
ওপরের এই অঙ্কগুলি থেকেই ভারতে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষুধা এবং খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার ছবি আঁকা যায়। বিশেষ করে উল্লেখ করার— জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষা-৫-এর প্রথম পর্যায়ে ২২টি রাজ্যের ফ্যাক্টশিট থেকে এই স্ট্যাটাস ফিগারগুলি দেওয়া হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর পপুলেশন সায়েন্সেস সমীক্ষাটি চালায় এবং ১২ ডিসেম্বর, ২০২০-তে ভারত সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক থেকে তা প্রকাশিত হয়।
এবার এগোনো যাক। আমি এখানে ৩টি প্রমুখ ভারতীয় রাজ্যের স্ট্যাটাস ফিগারগুলি উল্লেখ করেছি। অন্য রাজ্যগুলির কী অবস্থা? পুরো সমীক্ষার ফলাফলে দেখা যাচ্ছে প্রথম পর্যায়ের সমীক্ষাভুক্ত ২২টি রাজ্যের মধ্যে ১৩টিরই স্টান্টিং সূচক বেড়ে গেছে। ১১টি রাজ্যে ওয়েস্টিং সূচকও বৃদ্ধির প্রবণতা দেখাচ্ছে এবং ১৬টি রাজ্যের ক্ষেত্রে এটির মাত্রা গুরুতর (severe) পর্যায়ের।
বিশ্ব ক্ষুধা সূচক ২০২১
গত ১৪ অক্টোবর ২০২১ ওয়েলহাঙ্গারহিলফে (Welhungerhilfe) এবং কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড (Concern Worldwide) নামে বিশ্বস্বীকৃত দুইটি সংস্থা বিশ্ব ক্ষুধা সূচক (GHI) ২০২১ প্রকাশ করে। রিপোর্টটিতে ১১৬টি দেশের মধ্যে ভারতকে ১০১তম স্থান দেওয়া হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে ২০২১-এর GHI স্কোর গণনায় যথেষ্ট পরিমাণ তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে। অনাকাঙ্খিত হলেও এই তালিকায় ২০২০-তে সারা বিশ্বে ৯৪তম স্থানে থাকা ভারত এই বছরে সাত ধাপ পিছলে নেমে গেছে। ক্ষুধা বিষয়ে ভারতের অবস্থান এখন অ্যাঙ্গোলা, ঘানা, টোগো, মালি, সুদান, ইথিয়োপিয়া, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান সহ আরও কিছু দেশের সঙ্গে ‘গুরুতর’ চিন্তার পর্যায়ভুক্ত। রিপোর্টে জানানো হচ্ছে যে ভারতের স্কোর হয়েছে ২৭.৫। এখানে উল্লেখ্য, মোট ৫০-এর মধ্যে ৯.৯-এর নিচে স্কোর থাকার অর্থ নিম্ন মাত্রার ক্ষুধা, ৯.৯ থেকে ২০.০ হলে মাঝারি মাত্রা, ২০.০ থেকে ৩৪.৯ হলে গুরুতর এবং ৩৫.০ থেকে ৪৯.৯ হলে ক্ষুধার মাত্রা অত্যন্ত গুরুতর।
অবশ্য GHI প্রকাশের পরেই ভারত সরকারের মহিলা ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রক ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল অরগানাইজেশন (FAO)-এর পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে— বলেছে সেটি ‘অবৈজ্ঞানিক’। বলা থাক, FAO যে পদ্ধতি অনুসরণ করে সেটি Gallup World Poll–এর ওপর ভিত্তি করে তৈরি। ‘দ্য স্টেট অফ ফুড সিকিউরিটি অ্যান্ড নিউট্রিশন ইন দ্য ওয়ার্ল্ড ২০২১’ রিপোর্টে FAO পরিষ্কার উল্লেখ করেছিল যে, “দেশ-ভিত্তিক ফলাফল সেই সব দেশেরই প্রকাশিত হয়েছে যে দেশগুলির সরকারি তথ্য অথবা তার অস্থায়ী অনুমান (provisional estimates)-গুলি পাওয়া গেছে। এই সমস্ত তথ্যই সংগৃহীত হয়েছে Gallup World Poll–এর মারফত এবং সেই দেশগুলিরই যাদের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তথ্য প্রকাশের ক্ষেত্রে কোনও আপত্তি তোলেনি।” সুতরাং বোঝাই যায় ‘সমগ্র জনসাধারণের মধ্যে অপুষ্টির চালচিত্র’ বিষয়টি অনুসন্ধানে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের তরফে প্রয়োজনীয় অনুমতি ছিল।
মনে রাখতে হবে GHI কিন্তু নিজেরা তথ্য সংগ্রহ করে না। তার গবেষকেরা FAO, WHO, UNICEF, ইন্টার-এজেন্সি গ্রুপ ফর চাইল্ড মর্টালিটি এস্টিমেশন, দ্য ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক, এবং ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভিস-এর মতো রাষ্ট্রপুঞ্জের সংস্থাদের দ্বারা প্রকাশিত তথ্যই ব্যবহার করেন। GHI যে চারটি সূচক ব্যবহার করে তা তিনটি মাত্রায় বিন্যস্ত। সেগুলি হল শিশুদের অপুষ্টি (Undernutrition), খাদ্য সরবরাহে ঘাটতি (Undernourishment) এবং শিশুমৃত্যু। ফলে সূচকগুলি হল ‘অপুষ্টি’ (Undernourishment): জনসংখ্যার যত শতাংশ অপুষ্ট, অর্থাৎ যাঁরা প্রয়োজনীয় ক্যালরি থেকে বঞ্চিত; ‘শিশুমৃত্যু’ (Child Mortality): পাঁচ বছরের কমবয়সি শিশুদের মৃত্যুহার, এটি একই সঙ্গে পুষ্টির ঘাটতি এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের একটি বিপজ্জনক মিশ্রণের প্রতিফলন; চাইল্ড ওয়েস্টিং (Child Wasting): পাঁচ বছরের কমবয়সি যেসব শিশুদের ওজন উচ্চতার তুলনায় কম— তীব্র অপুষ্টির পরিচায়ক; এবং চাইল্ড স্টান্টিং (Child Stunting): পাঁচ বছরের কমবয়সি যেসব শিশুদের বয়সের তুলনায় উচ্চতা কম— ক্রনিক অপুষ্টির পরিচায়ক।
স্পষ্টতই দেখা যাচ্ছে যে এই সুচকগুলি খাদ্যের নিরাপত্তাহীনতার পরিণামকেই প্রতিফলিত করছে। পদ্ধতির বিষয়টি এর বিবেচ্য ছিল না। GHI–এর ফলাফল বিষয়ক বিবৃতিতে ভারত সরকার অভিযোগ করেছে যে তারা যে ১৯ কোটি ৪০ লক্ষ মানুষকে বিনামূল্যে খাদ্যশস্য দিচ্ছে, মহাত্মা গান্ধি ন্যাশনাল রুরাল এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি স্কিম ইত্যাদি পদক্ষেপ নিয়েছে সেগুলিকে GHI–এর সংস্থাগুলি হিসেবের মধ্যে ধরেনি। কিন্তু প্রশ্ন তো এইসব পদক্ষেপ নিয়ে নয়, প্রশ্ন হল এইসব ঢাকঢোল পেটানো পদক্ষেপের ফল কী ফলছে। GHI–এর রিপোর্ট দেখে এই সিদ্ধান্তে পরিষ্কার আসা যায় যে সরকারের এই পদক্ষেপগুলি নিয়ে যতটা বাগাড়ম্বর আছে ফল তার ধারেকাছে নেই।
এটাও বুঝতে হবে যে GHI-২১ কখনওই কোভিড-১৯ অতিমারির অভিঘাত বা কোভিড-১৯ অতিমারির সময়ে সরকারি পদক্ষেপগুলির অভিঘাত বিশ্লেষণের দাবি তোলেনি। ভবিষ্যতে সেগুলি নিশ্চয়ই উদ্ঘাটিত হবে।
ভারতে ক্ষুধা না ক্ষুধার্ত ভারত!
FAO–র ‘দ্য স্টেট অফ ফুড সিকিউরিটি অ্যান্ড নিউট্রিশন ইন দ্য ওয়ার্ল্ড ২০২১’ রিপোর্ট বলছে, “সংঘাত, আবহাওয়ার চরম অবস্থা এবং আর্থিক মন্দা বিপজ্জনকভাবে খাদ্যব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করে। হয় এগুলি খাদ্য উৎপাদন, খাদ্য সরবরাহ, সামগ্রিক খাদ্য পরিস্থিতি, উপভোক্তার আচরণ ইত্যাদির সবগুলিকেই প্রভাবিত করে, নয় এদের মধ্যে কোনও দুটি বা তিনটিকে বিপর্যস্ত করে তোলে। দুদিক দিয়েই খাদ্যনিরাপত্তা এবং সামগ্রিক পুষ্টি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটি ঘটে বিশেষত সেই দেশে যেখানে খাদ্যব্যবস্থাটিই চালকদের ওপর আসা অভিঘাতে টলমল করে এবং যে দেশে অত্যন্ত বেশিমাত্রায় দারিদ্র এবং অসাম্য সত্ত্বেও পতন রোধ করতে যথেষ্ট পরিমাণে সহায়তা পাওয়া যায় না।” বিশ্লেষণটিতে আরও বলা হচ্ছে যে অত্যন্ত বেশিমাত্রায় খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এবং অপুষ্টির কারণে সেই দেশগুলি সবচেয়ে বেশি ভোগে যেখানে চালকের আসনে বহু ব্যক্তি রয়েছে। ভারত এমন একটি দেশ যেখানে এই তিনটি কারণই গুরুতর মাত্রায় ক্রিয়াশীল— আর্থিক মন্দা, সংঘাত এবং আবহাওয়া সংক্রান্ত দুর্যোগ।
ভারতের অবস্থা বিশ্বের প্রত্যেকটি অংশের জন্যেই উদ্বেগের, কারণ সারা পৃথিবীর মোট অপুষ্ট জনসংখ্যার ৩০.৫ শতাংশ, স্টান্টিং-এর শিকার শিশুদের ২৪.২ শতাংশ এবং ওয়েস্টেড শিশুদের ৪৪.৬ শতাংশ ভারতে বসবাস করে। যদি পৃথিবীকে সাসটেনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল ২.২ অর্জন করতে হয়, যা ২০৩০-এর মধ্যে সমস্ত রকম অপুষ্টি নিবারণে, ২০২৫-এর মধ্যে ৫ বছরের কম বয়সের শিশুদের স্টান্টিং এবং ওয়েস্টিং কমানোতে, এবং কিশোরী, সন্তানসম্ভবা ও স্তন্যদানকারীদের পুষ্টিগত প্রয়োজন মেটাতে আন্তর্জাতিক স্তরে স্বীকৃত এবং প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, সেক্ষেত্রে অন্য দেশগুলির তুলনায় ভারতকে সবচেয়ে বেশি কাজ করতে হবে। ঘটনাচক্রে, ২০২৭ সালে ভারতের ৮০তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত হবে। তাই ভারত কি ২০২৫-এর আগেই সাসটেনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল অর্জনের জন্যে একটি প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (perspective plan) গঠন করবার বিচক্ষণতা দেখাতে পারবে না? এই কৃতিত্ব অর্জন করলে ভারতের ৮০তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন যথার্থ হতে পারে।
কী করতে হবে? এই প্রশ্নটিই সবচেয়ে জরুরি হয়ে উঠেছে। প্রথমত, ভারতকে ইন্টিগ্রেটেড ম্যানেজমেন্ট অফ কমিউনিটি-বেসড ম্যানেজমেন্ট অফ ম্যালনিউট্রিশনের নীতি গ্রহণ করে নিউট্রিশন গভরনেন্স এবং মাল্টিসেক্টোরাল কনভারজেন্স-এর নিয়মগুলিকে প্রয়োগ করতে হবে। হ্যাঁ, এই বিষয়ে সরকারের প্রমুখ সংস্থাগুলি ঝাঁ-চকচকে প্রচার অভিযান আয়োজন করে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা মানুষদের জানাতে চাইবে ১৬টি সরকারি বিভাগ বছরে ৫০০,০০০ কর্মকাণ্ড আয়োজন করে।
GHI ২০২১-এ ব্যবহৃত চারটি সূচকের মৌলিক পরিসংখ্যানগুলি (মিলিয়ন-এ) | ||||||||
সূচক | বিশ্ব | ভারত | পাকিস্তান | বাংলাদেশ | দক্ষিণ আফ্রিকা | ব্রাজিল | শ্রীলঙ্কা | ইন্দোনেশিয়া |
অপুষ্টি | ৬৮৩.৯ | ২০৮.৬ | ২৭.৯ | ১৫.৯ | ৩.৮ | NR | ১.৪ | ১৭.২ |
স্টান্টেড শিশু | ১৪৯.২ | ৩৬.১ | ১০.৩ | ৪.৩ | ১.৩ | ০.৯ | ০.৩ | ৭.৫ |
ওয়েস্টেড শিশু | ৪৫.২ | ২০.১ | ১.৯ | ৫.৭ | ০.২ | NR | ০.৩ | ২.৫ |
রক্তাল্পতায় ভোগা নারী (১৫-৪৯ বছর) | ৫৭০.৮ | ১৮৭.৩ | ২২.৪ | ১৬.৮ | ৪.৮ | ৯.২ | ১.৮ | ২২.৩ |
বহুমাত্রিক দারিদ্র সূচক (MPI) ২০২১ রিপোর্ট অনুযায়ী পৃথিবীতে ১০০-র বেশি উন্নয়নশীল দেশে অত্যাধিক মাত্রায় বহুমাত্রিক দারিদ্র বর্তমান। স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং জীবনধারণের মান— এই তিনটি সমান গুরুত্বের বিষয়সংশ্লিষ্ট ১০টি সূচকে প্রতি ব্যক্তি কতটা অবহেলিত হচ্ছেন, তার ভিত্তিতে এই গণনা করা হয়। কে দরিদ্র এবং কোন দিক থেকে দরিদ্র— সেগুলি চিহ্নিত করে এই সূচকে আন্তর্জাতিক দারিদ্রসীমা ১.৯০ ডলার দৈনিক আয় ধার্য করা হয়েছে।
সাম্প্রতিক MPI রিপোর্ট (২০২১) অনুযায়ী আরব রাষ্ট্রসমূহ, পূর্ব এশিয়া ও প্যাসিফিক দেশসমূহ, ইউরোপ এবং মধ্য এশিয়া, লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ, দক্ষিণ এশিয়া এবং সাবসাহারান আফ্রিকা অঞ্চলে মোট ১২৮ কোটি ৭৫ লক্ষ ৩০ হাজার মানুষ বহুমাত্রিক দারিদ্রের জালে জড়িয়ে দিনাতিপাত করছেন। আর এঁদের মধ্যে ২৯.৬১ শতাংশ অর্থাৎ ৩৮ কোটি ১৩ লক্ষ ৩০ হাজার মানুষের বাস ভারতে। তফসিলি উপজাতি (৫০.৬ শতাংশ) এবং তফসিলি জাতি (৩৩.৩ শতাংশ)-র মানুষদের অবস্থা আরও খারাপ।
যে সব দেশ বিভিন্ন মাত্রায় ক্ষুধার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে, সেখানে লিঙ্গসাম্য প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন আরও অনেক বেশি। এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যখন দেখি ভারতীয় এবং পাকিস্তানি পুরুষেরা মোট জাতীয় আয়ের নিরিখে যথাক্রমে ৪.৬ এবং ৬ গুণ বেশি সুবিধা পায়। ম্যাটারনিটি এনটাইটেলমেন্ট-এর ক্ষেত্রে ভারতকে আরও অনেক বেশি সভ্য নীতি গ্রহণ করতে হবে। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী মাতৃত্ব বন্দনা যোজনায় একটি শর্ত অনুযায়ী প্রথম প্রসবের জন্যই যাবতীয় সুবিধা সীমাবদ্ধ আছে। যে দেশে মহিলাদের প্রজনন সংক্রান্ত অধিকারই নেই, সেখানে এই শর্ত মেনে চলাটা মায়েদের জন্যে শারীরিক শাস্তিরই বরাবর।
আর্থিক সম্পদ বরাদ্দ হওয়ার পদ্ধতিতে অগ্রাধিকারগুলি প্রকৃত অর্থেই নির্ধারিত। দক্ষিণ আফ্রিকায় স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতে জিডিপি-র যত অংশ বরাদ্দ হয় তা সেই দেশের সামরিক ব্যয়ের ১৩ গুণ। অথচ পাকিস্তানে সামরিক ব্যয়ের পরিমাণ স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতে বরাদ্দের প্রায় ৩ গুণ। ভারত তার জিডিপি-র ২.৪ শতাংশ সামরিক খাতে ব্যয় করে, কিন্তু স্বাস্থ্য এবং শিক্ষাখাতে মোট ব্যয় করে মাত্র ৩.১ শতাংশ। এই ব্যাখ্যাকে অবশ্য কেউ কেউ রাষ্ট্রবিরোধী বলেও দেগে দিতে পারে— সে অবশ্য আলাদা কথা।
ব্যয়বরাদ্দ কীভাবে বিশ্ব ক্ষুধা সূচককে প্রভাবিত করতে পারে? আর্থিক সম্পদ বরাদ্দে দক্ষিণ আফ্রিকার অগ্রাধিকার দেশটির স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে তুলনামূলকভাবে ভালো জায়গায় নিয়ে গেছে। সেখানে প্রতি ১০,০০০ মানুষের জন্যে হাসপাতালে ২৩টি বেড রয়েছে। ব্রাজিলও স্বাস্থ্য ও শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে নিজের সামরিক ব্যয়ের তুলনায়। এর ফলে সেখানে প্রতি ১০,০০০ মানুষের জন্যে ২১.৬ জন চিকিৎসক এবং ২১টি বেড রয়েছে। আর ভারতে প্রতি ১০,০০০ মানুষের জন্যে বরাদ্দ মাত্র ৫টি বেড এবং ৮.৬ জন চিকিৎসক।
বিষয় | ভারত | পাকিস্তান | বাংলাদেশ | দক্ষিণ আফ্রিকা | ব্রাজিল | শ্রীলঙ্কা | ইন্দোনেশিয়া |
১. বহুমাত্রিক দারিদ্র (শতকরা হিসেবে) | ২৭.৯ | ৩৮.৩ | ২৪.৬ | ৬.৩ | ৩.৮ | ২.৯ | ৩.৬ |
২. বহুমাত্রিক দারিদ্র (হাজারে) | ৩৮১৩৩৬ | ৮৩১০৪ | ৪০১৭৬ | ৩৬৬৪ | ৮১০৮ | ৬২৩ | ৯৭৯৪ |
৩. মোট জাতীয় আয় (মার্কিন ডলার পিপিপি) | ৬৬৮১ | ৫০০৫ | ৫৩০৮ | ৭০৪৫ | ১৪২৬৩ | ১২৭০৭ | ১১৪৫৯ |
৪. আনুমানিক মোট জাতীয় আয় — মহিলা | ২৩৩১ | ১৩৯৩ | ২৮৭৩ | ৯২৪৮ | ১০৫৩৫ | ৭৪৩৩ | ৭৯০২ |
৫. আনুমানিক মোট জাতীয় আয় — পুরুষ | ১০৭০২ | ৮৪১২ | ৭০৩১ | ১৫০৯৫ | ১৮১২০ | ১৮৪২৩ | ১৪৯৬৬ |
৬. ১৮ বছরে বিবাহিত মহিলা (শতাংশে) | ২৭ | ১৮ | ৫৯ | ৪ | ২৬ | ১০ | ১৬ |
৭. প্রতি ১০০০০ জন পিছু চিকিৎসক | ৮.৬ | ৯.৮ | ৫.৮ | ৯.১ | ২১.৬ | ১০ | ৪.৩ |
৮. প্রতি ১০০০০ জন পিছু হসপিটাল বেড | ৫ | ৬ | ৮ | ২৩ | ২১ | ৪২ | ১০ |
৯. সামরিক খাতে জিডিপি-র বরাদ্দ শতাংশ | ২.৪ | ৪.০ | ১.৪ | ১.০ | ১.৫ | ১.৯ | ০.৭ |
১০. স্বাস্থ্য এবং শিক্ষাখাতে জিডিপি-র বরাদ্দ শতাংশ | ৩.১ | ১.৫ | ৩.৫ | ১৩.৬ | ১১ | ৩.১ | ৭.৪ |
১১. মোট জনসংখ্যায় অপুষ্টির হার | ১৫.৩ | ১২.৯ | ৯.৭ | ৬.৫ | NR | ৬.৮ | ৬.৫ |
১২. ৫ বছরের কমবয়সি শিশুদের মধ্যে ওয়েস্টিং-এর হার | ১৭.৩ | ৭.১ | ৯.৮ | ৩.৫ | ১৫.১ | ১০.২ | |
১৩. স্টান্টিং-এর হার | ৩০.৯ | ৩৬.৭ | ৩০.২ | ২৩.২ | ১৬.৮ | ৩১.৮ | |
১৪. ১৫-৪৯ বছরের মধ্যে মহিলাদের রক্তাল্পতা | ৩৮.৬ | ৪১.৩ | ৩৬.৭ | ৩০.৫ | ৩৪.৬ | ৩১.২ | |
সূত্র:
l ১-৮: মাল্টিডায়মেনশনাল পভার্টি ইনডেক্স ২০২১ (অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি এবং রাষ্ট্রপুঞ্জের ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম-এর মানব উন্নয়ন রিপোর্ট অফিস) l ৯-১০: দ্য নেক্সট ফ্রন্টিয়ার—হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড দি অ্যান্থ্রোপোসিন (মানব উন্নয়ন রিপোর্ট ২০২০, ইউএনডিপি) l ১১-১৪: বিশ্বের খাদ্য নিরাপত্তা এবং পুষ্টির অবস্থা, ২০২১ (রাষ্ট্রপুঞ্জের খাদ্য এবং কৃষি সংগঠন) |
কোন পন্থা সত্যিই কাজ করবে তা শেখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বের খাদ্য নিরাপত্তা এবং পুষ্টির অবস্থা ২০২১ রিপোর্টটিতে যে পন্থাগুলি উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলি হল: স্থানীয় খাদ্যব্যবস্থায় লব্ধ পরম্পরাগত এবং বন্য ধরনের ভোজ্যসামগ্রীর ব্যবহার, ব্যবহারে উৎসাহদান এবং সেগুলি রক্ষা করে আবহাওয়ার প্রতি সহনশীলতা বৃদ্ধির উপায় গ্রহণ। যেমন, ব্রাজিলে স্থানীয় উৎপাদনগুলিকে পাবলিক প্রোকিউরমেন্ট প্রোগ্রাম এবং স্কুল ফিডিং প্রোগ্রামে দেওয়া খাদ্যসামগ্রীর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যার ফলে সেই দেশে ক্ষুধা ও অপুষ্টি নিবারণের ক্ষেত্রে যথেষ্ট গঠনমূলক ফল পাওয়া গেছে। এমনকি, কোভিড ১৯ অতিমারি পরিস্থিতিতেও সরাসরি শিশুদের বাড়িতে যে ইন-কাইন্ড ফুড ট্রান্সফার এবং ফুড কিট সরকার পাঠিয়েছে তাতে ব্রাজিলের স্কুল ফিডিং আইন অনুসারে অন্তত ৩০ শতাংশ স্থানীয় টাটকা খাদ্য অন্তর্গত ছিল। পৃথিবীর বিভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতাগুলি থেকে প্রমাণিত হচ্ছে যে স্কুল ফিডিং প্রোগ্রাম, পুষ্টি বিষয়ে শিক্ষাদান, নিউট্রিগার্ডেনস অথবা হোম গ্রোন স্কুল ফিডিং-এর পাশাপাশি নিউট্রিশনাল এগ্রিকালচার, সামাজিক সুরক্ষা এবং পাবলিক প্রোকিউরমেন্ট প্রোগ্রামগুলিকে একীভূত করলে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় টেকসই পরিবর্তন আনা সম্ভব। ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের রিপোর্টে বিশ্বজুড়ে স্কুল ফিডিং-এর অবস্থা ২০২০-তে দেখা যাচ্ছে যে স্কুল ফিডিং প্রোগ্রামগুলির মাধ্যমে প্রতি ১০০,০০০ শিশুকে খাওয়ানোর জন্যে ১৭০০টি চাকরি সৃষ্টি হয়েছে।
এটা খুবই আনন্দের যে বিশ্বের খাদ্য নিরাপত্তা এবং পুষ্টির অবস্থা ২০২১-এর রিপোর্টে ভারত সরকার অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে ২টি ভাবনার জোগান দিয়েছে। রিপোর্টটি স্বীকৃতিও দিয়েছে যে ভারতে আদিবাসীদের পরম্পরাগত জ্ঞানের ভিত্তিতে যে অ্যাগ্রো-ইকলজিক্যাল প্রোগ্রাম চলেছে তাতে আঙুল বাজরা (finger millet)-র ব্যবহারে উৎসাহদানের মাধ্যমে খাদ্য সুরক্ষায় আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রভাবকে কমানো গেছে এবং ফরেস্ট রাইটস অ্যাক্ট ২০০৬-এর বলে অরণ্যে আদিবাসীদের অধিকার এবং আঞ্চলিক ব্যবস্থাপনায় সুরাহা হয়েছে।
তাই এখন গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে তিনটি আইন— ফরেস্ট রাইটস অ্যাক্ট (সমস্ত বাতিল দাবিগুলিকে আবার তোলা হয়েছে এবং গোষ্ঠীগত অধিকার বিতরণ করা হয়েছে), মহাত্মা গান্ধি ন্যাশনাল রুরাল এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি অ্যাক্ট (মজুরি ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ হয়েছে) এবং ন্যাশনাল ফুড সিকিউরিটি অ্যাক্ট (ভোজ্য তেল অন্তর্গত করা হয়েছে এবং ডাল ও খাদ্যশস্যের এন্টাইটেলমেন্ট বাড়িয়ে ১০ কেজি করা হয়েছে)। এগুলি যদি প্রকৃতই এবং সম্পূর্ণভাবে কার্যকর করা যায় তবে ক্ষুধা নিবারণে SDG 2 লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের দিকে সদর্থকভাবে এগোনো যাবে।
তিক্ত হোক বা মধুর, সত্যিটা হল ধান ও গম ফলনে ভারত আত্মনির্ভর হয়েছে। কিন্তু পুষ্টি বৈচিত্রের কথা উঠলে পরিস্থিতি যথেষ্ট হতাশাজনক। ICMR-ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ নিউট্রিশন-এর ‘হোয়াট ইন্ডিয়া ইটস’ নামের স্টাডি রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতের গ্রামীণ ক্ষেত্রের মানুষেরা তাঁদের ৬৫ শতাংশ শক্তি এবং ৪৮.৪ শতাংশ প্রোটিন জোগাড় করছেন শস্য দিয়ে বানানো রান্না থেকে, যদিও তা ৪০ শতাংশের কম হওয়া উচিত ছিল। তাঁদের খাদ্যের বাকি অংশে থাকার প্রয়োজন ছিল ডাল, ফ্যাট, দুধ, মাংস/ডিম, সবজি এবং ফল। সরকারি সংস্থা অবশ্য বলছে জনসংখ্যার যে আনুপাতিক অংশটি প্রস্তাবিত পরিমাণের থেকেও বেশি শস্য খাচ্ছে তা গ্রামীণ ক্ষেত্রে ৯৭.১ শতাংশ এবং শহর অঞ্চলে ৬৮.৮ শতাংশ। এমন বিপুল পরিমাণে শস্য খেলেই কি ভারত ক্ষুধা এবং অপুষ্টি থেকে মুক্তি পাবে? এটা খুব সত্যি কথা যে, নীতি আয়োগ যতক্ষণ না খাদ্য বৈচিত্রের (১০টি খাদ্যশ্রেণির মধ্যে অন্তত ৫টি খাদ্যশ্রেণিকে দৈনিক আহার তালিকায় আনা নিশ্চিত করার) সিদ্ধান্তটিকে জাতীয় বিষয় হিসেবে অগ্রাধিকার দিয়ে নির্দিষ্ট সময়কাঠামো এবং যথেষ্ট অর্থ বরাদ্দ করছে, ক্ষুধা আর অপুষ্টিতে আক্রান্ত হতেই থাকবে ভারত।
যেহেতু আমরা ভারতে খাদ্য নিরাপত্তা এবং অপুষ্টির বিষয়ের প্রতি মনোযোগ দিয়েছি তাই এটি উল্লেখ করা প্রয়োজন যে অনেকগুলি শতক ধরে বিভিন্নরকমের ডালকে প্রোটিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎস বলে ধরা হয়ে এসেছে। এমনকি সাম্প্রতিকতম পরিস্থিতিতেও প্রতি বছরে মাথাপিছু খরচ হওয়া উচিত ছিল ২০ কেজি ডাল। কিন্তু এই সামান্য ২০ কেজি ডালও বাজারে দাম চড়া হওয়ার ফলে গরিব মানুষদের পক্ষে কেনা সম্ভব হচ্ছে না। ন্যাশনাল ফুড সিকিউরিটি অ্যাক্ট ২০১৩ অনুযায়ী জনগণের মধ্যে বিতরণের জন্য গণবণ্টন ব্যবস্থার মধ্যে ডালগুলিকে আনলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যেতে পারত। ভোজ্য তেলের ক্ষেত্রেও একই ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। ২০১৯-২০ আর্থিক বছরে ভারত ১৫০ লক্ষ টন ভোজ্য তেল আমদানি করেছে কারণ আমাদের দেশ ২৪০-২৫০ লক্ষ টনের চাহিদার সমান ভোজ্য তেল উৎপাদন করতে পারে না। ২০১৮-১৯ থেকে চড়া দাম আর কিনতে অসমর্থ হবার কারণে ভোজ্য তেলের ব্যবহার কমতে শুরু করেছে।
এমন পরিস্থিতিতে ভারতকে ক্ষুধার বিরুদ্ধে লড়াইটিতে অগ্রাধিকার দিতে হবে। বিভিন্নরকমের অনুষ্ঠান এবং প্রকল্প কার্যকর করা হচ্ছে। কিন্তু তিক্ত সত্যিটা এই যে, বৃদ্ধি-নির্ভর উন্নয়নের স্বার্থে সেগুলির মূল উদ্দেশ্যটিকেই বলি দেওয়া হচ্ছে। GHI তৈরি করা হয়েছিল এই ভেবে যাতে সচেতনতা বাড়ে এবং ক্ষুধার বিরুদ্ধে লড়াইটি বুঝতে পারা যায়। এই সূচকটির সাহায্যে বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলের ক্ষুধার মাত্রার তারতম্যগুলিকে তুলনা করা যায় এবং পৃথিবীতে সেই সব ক্ষেত্রগুলিতে ক্ষুধা অপসারণের জন্য অতিরিক্ত সম্পদের প্রয়োজনীয়তার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষিত হয়।
সংঘাত এবং আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রভাবে খাদ্যব্যবস্থার যে সহনশীলতা, তা আরও বাড়ানোর জন্যে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে GHI। তাদের আরও সুপারিশ, খাদ্য ও পুষ্টি সংক্রান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যে প্রেক্ষাপটটি ভালোভাবে বুঝে স্থানীয় প্রচেষ্টাগুলি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এগুলির জন্যে যে নমনীয়, প্রয়োজন-ভিত্তিক, বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে অভ্যন্তরীণ বোঝাপড়া ছাড়াও প্রয়োজন বেশ কিছু বছর নিয়ে পরিকল্পনা এবং ব্যয়ভার বহন। রাজনৈতিক মাত্রায় উঠে যাওয়া সংঘাত রুখতে এবং আন্তর্জাতিক আইনসমূহকে পোক্ত করতে হলে অধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে দায় নিশ্চিত করতে হবে এবং খাদ্যব্যবস্থাগুলির মধ্যে মৌলিক পরিবর্তনের দিশায় নেতৃত্ব দিতে হবে।
কারও পরিশীলিত অহং-এর দিকে ঢিল ছোড়ার আগ্রহ বিশ্ব ক্ষুধা সূচকের নেই। এর কাজ শুধু আয়না দেখিয়ে ভারতকে গভীর নিদ্রা থেকে জাগিয়ে তার পরিপ্রেক্ষিত ও অগ্রাধিকারগুলিকে শুধরে দিতে বলা যাতে সেই অনুযায়ী প্রকল্পগুলিকে প্রকৃতই ফলদায়ী করে তোলা যায়।
এটা সূচক নিয়ে লড়াই করার সময় নয়। এটা ক্ষুধাকে চিরতরে নির্মূল করার লক্ষ্যে লড়াইয়ে নামার সময়। প্রতিটি জীবনই মূল্যবান এবং আমাদের উচিত প্রত্যেকে যেন সম্মানের সঙ্গে সেই জীবন নির্বাহ করতে পারেন তা নিশ্চিত করা।