শমীক ঘোষ
O, that this too, too solid flesh would melt,
Thaw and resolve itself into a dew!”–William Shakespeare, Hamlet (Act 1, Scene 2)
বাখতিন। বাখতিন। বাখতিন। একটা উপন্যাসের শরীর জুড়ে শুধু বাখতিন। তার আত্মা জুড়েও বাখতিন। রাশিয়ান সাহিত্য তাত্ত্বিক, দার্শনিক, রাজনীতিক মিখাইল বাখতিন। আর সেই উপন্যাস লেখা হয়েছে বাংলা ভাষায়। আমাদেরই সমসময়ে।
একই সঙ্গে বাখতিনকে মেনে। বাখতিনকে অস্বীকার করেও।
সায়ম বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম উপন্যাস ‘পুরাণপুরুষ’। ২০১৯ সালে প্রকাশিত। ২০২০ সালে এই উপন্যাসের জন্যই সাহিত্য অকাদেমি যুবা পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। এই উপন্যাসের ‘পুরাণপুরুষ’, কেন্দ্রীয় চরিত্র উনিশ শতকের কলকাতার এক জমিদার, আটচল্লিশ বছরের রাজারাম দেব। উপন্যাসটার শুরু হয় রাজারামের শোয়ার ঘরে। কীসের যেন প্রতীক্ষায় অপেক্ষমান রাজারাম। লেখক সুপ্ত ঈঙ্গিত দেন— মৃত্যুর।
কিন্তু উপন্যাসটাতে এগোতে এগোতে সেই ঈঙ্গিতকেও ভেঙে দেন লেখক নিজেই। রাজারাম আসলে এক ‘কার্নিভাল’-এর অপেক্ষায়। ‘কার্নিভাল’ এমন এক শব্দ যা রাজারাম খুঁজে পেয়েছে দুটো ছেঁড়া অভিধানে। একটি অভিধান স্যামুয়েল জনসনের ১৭৫৫ সালে লেখা ক্লাসিক— ‘আ ডিকশনারি অফ দ্য ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ।’ অন্যটা তারই সংক্ষিপ্ত সংস্করণ, তবে ইংরাজি থেকে বাংলায়। শ্রীরামপুরের মিশানারি প্রেসের রিডার ও কারেক্টর জন মেন্ডিসের করা।
রাজারামের পাওয়া স্যামুয়েল জনসনের অভিধানটা একদম ছেঁড়া। বাঁধাই, সামনের নামপত্র সব হারিয়ে গিয়েছে। শুধু ইংরাজি ‘A’ এবং ‘C’ অক্ষরের মাঝের কিছু শব্দ আছে। আরে সেখানেই সেই শব্দটা খুঁজে পেয়েছিল রাজারাম। যা তাকে চমৎকৃত করেছিল— ‘কার্নিভাল’।
রাজারাম এই ‘কার্নিভাল’ শব্দটাই আওড়াই মাঝে মাঝে। তার কথার মধ্যে ঘোরে এই ‘কার্নিভাল’ শব্দটা।
কিন্তু কেন এই ‘কার্নিভাল’? লেখক নিজেই সে কথা লিখেছেন উপন্যাসের শরীরে। কার্নিভাল শব্দটার ব্যুৎপত্তি লাতিন ‘Carne Vale’। লেখক তার বাংলা করেছেন ‘মাংস বিদায়।’ মাংস শব্দটির একটি মানে উপন্যাসেই লেখা আছে। রোমান ক্যাথলিক ও ইস্টার্ন অর্থোডক্স ক্রিশ্চান ধর্মে সব থেকে বড় উৎসব হল ‘ইস্টার’। এই দিন জিশুর পুনরুত্থান উদযাপন করা হয়। আর তার ঠিক আগের চল্লিশ দিন পালন করা হয় ‘লেন্ট’। উদ্দেশ্য— ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার মাধ্যমে যিশুর ত্যাগ ও কষ্ট পাওয়াকে সম্মান জাগানো। এই চল্লিশ দিন প্রাণীমাংস ভক্ষণ নিষিদ্ধ। আর ‘লেন্ট’-এর ঠিক আগে পালন করা হয় উৎসব। মাংসকে বিদায় জানানোর ঠিক আগে ঘটা করে সেই মাংসরই উদযাপন— ‘কার্নিভাল’।
এই কার্নিভালেরই অপেক্ষা করে রাজারাম। কারণ খোদ শয়তানের প্রতিনিধি ‘মেফিস্টো’ আর তার সঙ্গী কথা বলা হাড়গিলে পাখি ‘বনবিহারী’ তাকে সেই ‘কার্নিভাল’ দেখানোরই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আর এই কার্নিভালের মাহেন্দ্রক্ষণেই নিজের রক্তমাংসের শরীরকে বিদায় জানাতে হবে রাজারামকে। মৃত্যু এক অর্থে সত্যিই এক ‘কার্নিভাল’।
মিখাইল বাখতিন তার সাহিত্য তত্ত্বে বারংবার ‘কার্নিভালেস্ক’-এর প্রসঙ্গ এনেছেন। কখনও দস্তয়েভস্কির লেখায়। আবার ফরাসি লেখক ফ্রাঁসোয়া র্যাবালের লেখার প্রসঙ্গেও। র্যাবালে ছিলেন ইউরোপীয় রেনেসাঁর একজন প্রতিনিধি। তাঁর লেখা মূলত স্যাটায়ার, উদ্ভট-রসের এবং আপাত অর্থে অশ্লীল হাস্যকৌতুক ও গান। অথচ এই র্যাবালের লেখার মধ্যে দিয়েই বাখতিন রেনেসাঁ-পর্বের ইউরোপকে ধরবার চেষ্টা করেছেন।
বাখতিনের বক্তব্য, ‘কার্নিভাল’ হল এমন এক সময় যখন সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি, স্তরের মানুষ উৎসবের স্রোতে এক হয়ে ওঠে। তাদের মধ্যে আর ভেদাভেদ থাকে না। তারা প্রকৃত অর্থেই কৌম হয়ে ওঠে। সমান হয়ে ওঠে। উৎসব তাঁদের শ্রেণি ও ক্ষমতার তারতম্য মুছে দেয়। ‘কার্নিভাল’ এমন এক সময় যেখানে প্রকাশ্যেই ক্ষমতাকে জিভ ভ্যাংচানো যায়, হাস্যাস্পদ করে তোলা যায়। যেখানে কোনও কিছুই নিষিদ্ধ নয়, তাই নিয়মতন্ত্রকে সহজেই বুড়ো আঙুল দেখানো যায়।
দস্তয়েভস্কির উপন্যাসেও চরিত্রগুলো একইভাবে একটি পলিফোনিক ডিসকোর্স বা বহুস্বরীয় প্রকরণ তৈরি করে। যেখানে আগে থেকে নির্ধারিত কোনও খাপে, কোনও মহৎ উদ্দেশ্যে চরিত্রগুলো সীমাবদ্ধ নয়। বরং তারা ‘কার্নিভাল’-এর মতোই বহুস্বরের এবং একই সঙ্গে বহুস্তরকে একীভূত করাও।
এই পলিফোনিক ডিসকোর্স বা বহুস্বরীয় প্রকরণের প্রসঙ্গে বাখতিন ডায়লজিজমের কথা বলেছিলেন। কোনও বক্তব্য বা বোধকে সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ করতে গেলে, শুধু সেটাকেই তুলে ধরলে হয় না। বরং তার পূর্বে ঘটে যাওয়া কোনও কিছুর প্রতিক্রিয়া বা যা তার পরে ঘটতে পারে এমন কিছুর পূর্বানুমানকে এক সঙ্গে তুলে নিয়ে এলেই সেই বক্তব্য বা বোধকে সম্পূর্ণ ভাবে ব্যক্ত করা যেতে পারে। এইখানেই বহুস্বরের প্রয়োজনীয়তাও আসে। ডায়লগের মতো, পাল্টা বক্তব্যের, ঘাত-প্রতিঘাতের প্রয়োজন পড়ে। বিভিন্ন, বহুধাবিভক্ত দৃষ্টিকোণের প্রয়োজন পড়ে।
আর এই ডায়ালজিজমের ঠিক উল্টো মনোলজিজম। অর্থাৎ একটা বক্তব্য বা বোধের একরৈখিক বয়ান। সায়ম বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পুরাণপুরুষ’-এর আখ্যান কৌশল আপাতভাবে বাখতিনের অ্যান্টিথিসিস বলে মনে হতে পারে। কারণ লেখক এখানে একটিই কেন্দ্রীয় চরিত্র (রাজারাম)-কেই অনুসরণ করে গিয়েছেন। বাকি চরিত্রগুলো খুব গৌণভাবে, রাজারামের দৃষ্টিকোণ থেকেই এসেছে।
কিন্তু লেখক এখানে সেই ডায়লজিজম এনেছেন সম্পূর্ণ অন্য এক কৌশলে। গদ্যের ভেতরেই গুঁজে দিয়েছেন রাজারামের নিজস্ব চিন্তা-চেতনা— স্ট্রিম অফ কনশাসনেস। এবং ফন্ট সাইজ বদলে সেটাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছেন। আবার কখনও কখনও মূল গদ্যের ভেতরেই নির্মাণ করেছেন সেই স্ট্রিম অব কনশাসনেস। রাজারামের বিভ্রম বা স্বপ্নদৃশ্যগুলোতে নিয়ে এসেছেন অতিদূর ভবিষ্যতের পৃথিবীর কথা। যেখানে, কানে মোবাইলের ইয়ারফোন গুঁজে, মোবাইলে দৃষ্টি নিমগ্ন রেখে বর্তমান পৃথিবীর মানুষেদের হেঁটে যেতে দেখেন উনিশ শতকের রাজারাম। কিংবা দৃষ্টিবিভ্রমে সে দেখতে পায় পুত্রকে হত্যা করে, সেই রক্ত দিয়ে ভাত মেখে তার মাকে জোর করে খাইয়ে দিচ্ছে হন্তারকরা।
আবার একইভাবে সমকালও চলে আসে রাজারামের ভাবনায়। সে দেখতে পায় একটা কার্নিভাল। যে কার্নিভালের ভেতর ভীষণ ‘গ্রটেস্ক’ হয়ে আসে রাজারামেরই ভগ্নীসমা, যৌনলালসার শিকার কৃষ্ণভাবিনীর নগ্ন দেহ। আর আসে তীব্র রক্তের অনুষঙ্গ।
রাবালের প্রসঙ্গেই বাখতিন ‘গ্রটেস্ক’কেও স্বকীয় ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তাঁর মতে এই ‘গ্রটেস্ক’ আসলে শরীর বা নিম্নাঙ্গের সঙ্গে সম্পর্কিত, যা ক্রিশ্চানীয় শুচিবায়ুতায় অশুচি।
সায়মের রাজারামও এমনই গ্রটেস্ক। সে সম্পূর্ণ নিরাবরণ, নগ্ন হয়ে শুতে যায়। উপন্যাসের প্রথম অধ্যায়েও সে নগ্ন হয়েই কার্নিভালের অপেক্ষা করে।
রাজারাম উনিশ শতকের বাঙালি। সেই উনিশ শতক, যা বাঙালির এনলাইটেনমেন্ট, তার তথাকথিত ‘রেনেসাঁ’র সময়। যা নিয়ে আজও বাঙালি উদ্বেল। রোম্যান্স আক্রান্ত। জমিদার রাজারাম, বড় হতে চায়। নিজের আত্মপরিচয় নির্মাণ করতে চায়। জমিদারি নিয়ে সে খুশি নয়। সে চায় প্রিন্স দ্বারকানাথের মতো ব্যবসায়ী হয়ে উঠতে। দ্বারকানাথের সঙ্গেই ব্যবসা করতে।
তাই বারবার দ্বারকানাথকে চিঠি লেখে সে। অন্তত বিরানব্বইটি। কখনও ইংরাজিতে। কখনও বা বাংলায়। কিন্তু কোনও চিঠিতেই মন ভরে না তার। ঘরকুনো হয়ে, তাই সে ক্রমান্বয়ে চিঠিই লিখে যায়। আর কোনও কাজে উদ্যোগী হয়ে উঠতে পারে না।
এমন কী একদিন যখন খোদ প্রিন্সেরই মৃত্যুসংবাদ এসে পৌঁছায় তার কাছে, সেই দ্বারকানাথকেই আবার চিঠি লেখে সে—
বাবু শ্রীযুক্ত দ্বারকানাথ ঠাকুর মহাশয়
শুনিলাম আপনি মরিয়াছেন…
এই রাজারাম, তার ভগিনীসমা কৃষ্ণভাবিনীকেই ধর্ষণ করে। আবার সেই মুহূর্তে তার নিজের ইচ্ছেই চাপিয়ে দেয় কৃষ্ণভাবিনীর ওপর, নেহাতই পুরুষসুলভ নির্লিপ্ত রুক্ষতায়— ‘তুই নিজে কোনওদিন চাসনি যেন।’
আবার এই কৃষ্ণভাবিনীকে গর্ভপাতের কথা নিঃসঙ্কোচে বলে রাজারাম। আর ঠিক সেই মুহূর্তেই ভৃত্যের কাছ থেকে ফেলে আসা এক বিড়ালছানার কথা জানতে পেরে সেটাকে আশ্রয় দিতে চায়। অর্থহীন অবিমৃষ্যকারিতায় সেই বেড়ালের নাম দেয় ‘সীমন্তিনী’— সিঁদুর পরা নারী। শয়তানের প্রতিনিধি মেফিস্টোর কাছে ‘কার্নিভাল’ দেখার অভীপ্সায় নিজের জীবন বিক্রি করে দিতে রাজী হয়ে, উইল করে সেই বেড়ালটাকে নিজের উত্তরাধিকারী করে যায়।
দ্বারকানাথ ঠাকুরকে চিঠি লেখার সময় প্রথমে ইংরাজি ভাষাকেই বেছে নেয় সে। তারপর নিজের ছেঁড়া-খোঁড়া ইংরাজি সম্পর্কে অবহিত হয়ে লিখতে যায় বাংলায়। আবার মেফিস্টো এসেও, কথায় কথায় সেই ইংরাজিই বলে ফেলে ভালো ইংরাজি না-জানা রাজারামের সামনে। তারপরেই, নিজের ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমাপ্রার্থী হয়ে বলে ওঠে, ‘এই ইংরাজিটা না সব ভাষার মধ্যেই যেন নানা ছদ্মবেশে ঢুকে পড়েছে।’
আবার এই মেফিস্টোর কাছ থেকেই ছেঁড়া অভিধানের রহস্য জানতে পারে সে। রক্ষিতাকে নিজের জারজ সন্তানকে প্রসব করার মুহূর্তে দেখে, উত্তেজিত হয়ে স্যামুয়েল জনসনের অভিধান ছিঁড়ে ফেলেছিল রাজারামেরই বাবা দেবরাম। না ছেঁড়া অংশটার মধ্যে ‘কার্নিভাল’ শব্দটা থেকে গিয়েছিল।
আর সেই শব্দটাই বারবার উচ্চারিত হয় তার মুখে। তেমনই চলে আসে আরও একটা পংক্তি, কথায় কথায়, পুনরাবৃত্তির মতো— ‘রাবণের দশমুণ্ড কাটিলেন শরে/ পুনর্বার উঠে মুণ্ড বিধাতার বরে।’
কার্নিভাল যেমন ইস্টার— যিশুর পুনরুত্থানের ঈঙ্গিতবাহী। রাজারামের বহুউচ্চারিত রাবণের পংক্তিটিও তেমনই এক পুনরুত্থানের ঈঙ্গিতবাহী। তবে রাক্ষস রাবণের। যার মুণ্ডু যতবার কাটা হয়, ততবার জুড়ে যায়। বিনাশ হয় না।
রাজারামেরও বিনাশ হয়নি। তাঁর অবিমৃষ্যকারিতা ফিরে এসেছে তাঁর একবিংশ শতকের উত্তরসূরিদের মধ্যে। কুহকের মধ্যে মোবাইলে নিমগ্ন, কানে ইয়ারফোন গোঁজা যে বাঙালিকে দেখতে পেয়েছিল রেনেসাঁ যুগের আলোকপ্রাপ্তির স্বপ্ন দেখা অথচ ঘরকুনো, নগ্ন রাজারাম। যাঁরা তার মতোই দ্বারকানাথ হয়ে ওঠার স্বপ্ন দেখে। কিন্তু শেষ অবধি কিছুই করে উঠতে পারে না। যাঁদের রাজনীতি থেকে সমাজ সচেতনতা সব কিছুই আবর্তিত হয়ে এক ইভেন্ট থেকে আরেক ইভেন্টে— অন্তত কার্নিভালের বাসনায়। যে কার্নিভাল, বাখতিনের মহিমান্বিত কার্নিভাল নয়, বরং নিম্নমেধার যথেচ্ছাচারের, বোধলুপ্তির কার্নিভাল।
রাজারাম, প্রকৃত অর্থেই সেই বাঙালির পুরাণপুরুষ।
তাই মেফিস্টোর সঙ্গী হয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে আসে এক হাড়গিলে— বনবিহারী। সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়ের ‘আমি ও বনবিহারী’ উপন্যাসের কোনওদিন সিপিএম না-ছাড়া, পার্টি করে বড়লোক হয়ে ওঠা পলিটব্যুরো মেম্বার বনবিহারী। হাড়গিলে পাখির মতোই অধুনা বিলুপ্ত।
আবার রাজারামকে ‘কার্নিভাল’-এ নিয়ে যেতে আসে মেফিস্টোর দুই অনুচর— রোজেনক্রান্টজ এবং গিলডেনস্টার্ন। শেক্সপিয়ারের হ্যামলেটের দুই ছোটবেলার বন্ধু ছিলেন রোজেনক্রান্টজ এবং গিলডেনস্টার্ন। হ্যামলেট পোলোনিয়াসকে খুন করার পর, তাকে ইংল্যান্ডে নিয়ে আসার জন্য এই দুজনকেই পাঠিয়েছিল ক্লডিয়াস। এরা ছিল তৎকালীন রাজনৈতিক দুর্নীতির প্রতীক। আবার একই সঙ্গে খুন করবার পর, ক্রমশ এক কার্নিভালেই যেন ঢুকে পড়ছিল হ্যামলেট।
রাজারামের ‘কার্নিভাল’-এর অপেক্ষার মধ্যেও যেন লুকিয়ে থাকে হ্যামলেটেরই উচ্চারণ।
If it be now, ’tis not to come. If it be not to come, it will be now. If it be not now, yet it will come. The readiness is all. Since no man of aught he leaves knows, what is’t to leave betimes? Let be.
রেফারেন্স, ক্রস-রেফারেন্স, ইন্টারটেক্সচুয়ালিটি, অসংখ্য সিম্বল। উপন্যাসের মধ্যেই মাঝে মাঝে পুনরাবৃত্তি। উত্তরাধুনিক উপন্যাসের ফর্মে লেখা ‘পুরাণপুরুষ’। তার ভাষা, বাংলা উপন্যাসে হালচলতি ভাষার উল্টো অবস্থানে। তৎসম শব্দের বাহুল্যে।
‘কার্নিভাল’-এর অনুষঙ্গ এসেছে মিখাইল বুলগাকভের লেখায়। বাংলা উপন্যাসে নবারুণ ভট্টাচার্যের লেখায়। কিন্তু সেই সব উপন্যাসেই ব্ল্যাক হিউমার এসেছে বারবার। উদ্ভট রস প্রধান রস হয়ে উঠেছে। সায়মের এই উপন্যাসেও ব্ল্যাক হিউমার আছে। কিন্তু তা ভীষণ স্তিমিত। অন্তর্মুখী। অনুচ্চকিত। এই উপন্যাস নিয়ে এটাই একমাত্র অনুযোগ আমার।
‘আপনাকে আমি ঈর্ষা করি।’ প্রথম আলাপেই, ফোনে সায়মকে এই কথাটাই বলেছিলাম। কথাটার আকস্মিকতায় হেসে ফেলেছিলেন সায়ম। কিন্তু উপন্যাসটা পড়ে সত্যিই ঈর্ষা হয়েছিল।
সব লেখক, লেখক নয়। সব পাঠকও, পাঠক হয়ে উঠতে পারেন না। কোনও কোনও লেখক তার পাঠকের সঙ্গে দাবা খেলেন। চালের পর চাল এগিয়ে দিয়ে প্রতিক্ষা করেন প্রতিক্রিয়ার। সায়ম সেই গোত্রেরই লেখক। সব পাঠক, সত্যিই তাঁর পাঠক হয়ে উঠতে পারবেন না।
পুরাণপুরুষ
সায়ম বন্দ্যোপাধ্যায়
দে’জ পাব্লিশিং
২০০ টাকা