সাগর ধাড়া
সাগর ধাড়া নিজের পরিচিতি হিসেবে বলেন— “পুরুষ, উঁচু জাত এবং শ্রেণির প্রতিনিধি, শহুরে চটকসম্পন্ন, এবং যে হিংস্র এবং ভয়ঙ্কর প্রজাতির প্রাণীরা পৃথিবীকে বিপন্ন করে তুলেছে সেই মানবপ্রজাতির একজন সদস্য।” প্রথাগত পরিচিতি হিসেবে তিনি রাষ্ট্রপুঞ্জের এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম-এর প্রাক্তন এনভায়রনমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং কনসালটেন্ট; বর্তমানে গবেষণা এবং লেখালেখি শক্তি, শক্তির রূপান্তর এবং ঝুঁকির বিশ্লেষণ নিয়ে; একজন জৈব কৃষক এবং পরিবেশ আন্দোলনের একজন পরামর্শদাতা ও কর্মী। তাঁর এই বর্তমান নিবন্ধটি নিউজ নাইন পত্রিকায় গত ১১ নভেম্বর ইংরাজিতে প্রকাশিত। বাংলা ভাষান্তর: সোমরাজ ব্যানার্জী।
আমি ঠিক জানি না এটা কেন ঘটছে আমাদের সঙ্গে। আমরা তো কারও কোনও ক্ষতি না করে নিঃশব্দে আমাদের জীবন কাটিয়েছি। অথচ, আমাদের বলা হচ্ছে যে জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের ওপর প্রভাব ফেলবে। আমরা জানি না কীভাবে শহরে জীবিকা অর্জন করতে হয়…
–হুনি কুইন সম্প্রদায়ের এক সদস্য
গত দশদিন ধরে প্রতি সকালে আমি কপ-২৬-এর দৈনিক ওয়েবসাইট খুলে সেইসব ঘটনার খোঁজ করি যেগুলোতে আমার আগ্রহ আছে। আর এইসব খবরের প্লাবন দেখে আমি রীতিমতো ভয়াভিভূত। বেশিরভাগ খবরেই একটা ছক আছে, যেমন— বিশেষ বিশেষ ঘটনা: জলবায়ু ও প্রকৃতিসংক্রান্ত নীতি নির্ধারণে সংসদের ভূমিকা, মিটিং রুম ৪; বহুপাক্ষিক মূল্যায়নে (MA) কার্যরত দল প্রথম ভাগ, মিটিং রুম ৫ ও ৭; কালো ও সবুজ প্রতিনিধিরা: যারা এই অবিস্মরণীয় বছরেও পরিবর্তন ঘটিয়ে চলেছেন, অ্যাকশন হাব। কপ-২৬ এতটাই বড় একটা বিষয় যে আমার প্রায় ১০ দিন সময় লেগে গেছে পুরো কনফারেন্সের ছকটাকে বুঝতে। বিষয়টা অত্যন্ত জটিল।
আমার আগ্রহের ক্ষেত্রগুলোকে খুঁজে পাওয়া যেমন কঠিন ছিল, সেরকমই সমস্যার ছিল প্রতিদিন নীল বলয়ে জড়ো হতে থাকা প্রায় ১০০০০টা জলবায়ু-আক্রান্তের মধ্যে থেকে দুর্বল স্বরগুলোকে খুঁজে বার করা। তবুও আমি কিছু স্বতন্ত্র স্বরের সন্ধান পেয়েছি এবং এখানে সেগুলোর ব্যাপারেই বলব।
হুনি কুইনদের বেঁচে থাকার লড়াই, ব্রাজিলের একারে
পেরুর সীমান্তবর্তী ব্রাজিলের রাজ্য একার ২০৩৬ সালের মধ্যে কার্বননিরপেক্ষ হয়ে ওঠার ব্যাপারে উচ্চাকাঙ্ক্ষী। কপ-২৬-এ বণ্টিত একটি জমকালো সরকারি প্যামফ্লেটে দাবি করা হয় যে একার রাজ্য ২০৩৫ সালের মধ্যে গ্রিনহাউন গ্যাস নিঃসরণ ৪১ শতাংশ কমিয়ে দিতে সক্ষম হবে এবং সেইসঙ্গে ৭.৪১ হেক্টর বনভূমি পুনরুদ্ধার করতে পারবে। কিন্তু আমাজন অরণ্যের গভীরে একারে অবস্থিত ইগ্রেপ দো কাউচ গ্রামে বসবাসকারী জনজাতি হুনি কুইন-দের (আক্ষরিক অর্থ— সত্যিকারের মানুষ) দামিয়াও দে আরাউজো ব্রাজ কাহিনাওয়া ও কসমো দে ব্রাজ কাহিনাওয়ার গল্পটা একটু আলাদা।
হুনি কুইনরা যে নদী সংলগ্ন এলাকায় বাস করে সেই নদীটি ব্রাজিল ও পেরু সীমান্তের উভয় পাশেই তাঁদের সুপ্রাচীন বাসভূমির উপর দিয়ে আড়াআড়িভাবে চলে গেছে। হুনি কুইন সত্যিই একটা বিলুপ্তপ্রায় জনজাতি কারণ তাঁদের জনসংখ্যার মাত্র ৫০০ জন পড়ে আছে ব্রাজিলে আর বাকি ২০০০ জন পেরুতে। দামিয়াও ও কসমোর মতো খুব কম লোকই আছেন যাঁরা নিজেদের মাতৃভাষা কাহিনাওয়ার পাশাপাশি পর্তুগিজ ভাষাতেও কথা বলতে পারেন।
হুনি কুইন উপজাতির মানুষরা নিজেদের মধ্যে খুব ভালো আত্মিক সম্পর্ক বজায় রেখে চলেন এবং তাঁদের জন্য সংরক্ষিত বনভূমির বাইরে খুব একটা বেরোন না। তাঁরা শিকার করেন, ফল ও মাছ সংগ্রহ করেন, সংরক্ষিত জায়গায় চাষবাস করেন এবং স্বভাবতই তাঁরা ভীষণভাবে আত্মনির্ভর। কসমোর কথায়, “আমাদের যা দরকার, অরণ্য আমাদের সবই দেয়। তাই আমরা প্রকৃতির কাছাকাছি থাকি।”
হুনি কুইনদের এই শান্ত সরল জীবনযাত্রায় বিঘ্ন ঘটানোর জন্য উদ্যত হয়েছে কাঠব্যবসায়ী, পশুপালক ও সোনা বা অন্যান্য খনিজের সন্ধানকারী লোকজনেরা। তাদের চোখ পড়েছে সেই জমিগুলোর ওপর যেগুলো হুনি কুইনরা পবিত্র বলে মনে করেন। সাম্প্রতিক সময়ে বলবৎ হওয়া জাতীয় আইন ৪৯০ অনুযায়ী যেসব দেশীয় জমির কোনও রেজিস্টার্ড দলিল নেই, সেইসব জমি অধিগ্রহণ করার জন্য তাদের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য অনেক জনগোষ্ঠীর মতোই হুনি কুইনরাও তাঁদের এই বাসভূমিতে কোনও স্বত্বপত্র ছাড়াই শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বসবাস করছেন। কিন্তু হঠাৎ করেই তাঁদের দলিলের কাগজপত্র দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। তাঁরা এই আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থার সঙ্গে মোকাবিলা করতে একদমই অভ্যস্ত নন এবং সে কারণেই তাঁরা নিজেদের জমি পুনরুদ্ধার করার ব্যাপারে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছেন।
এখন তাঁরা আবার দ্বিতীয় আর একটি বিপদের কথা শুনতে পাচ্ছেন, যেটা হল জলবায়ু পরিবর্তন। আগামী বছরগুলোতে অপর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা বৃদ্ধি, দাবানল, জলসঙ্কট ইত্যাদি বিষয়গুলো তাঁদের চাষবাসের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। কসমো চিন্তিত এই নিয়ে যে যত সংখ্যায় মাছ বা অন্যান্য ছোটখাটো শিকার এখন তাঁরা পান, ভবিষ্যতে আদৌ তা মিলবে কিনা। দামিয়াও-এর প্রশ্ন, “আমি বুঝতে পারি না আমাদের সঙ্গেই এরকম কেন হচ্ছে। আমরা কী ভুল করেছি? আমরা তো কারও কোনও ক্ষতি না করে নিঃশব্দে আমাদের জীবন কাটিয়েছি। অথচ, আমাদের বলা হচ্ছে যে জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের ওপর প্রভাব ফেলবে। আমরা জানি না কীভাবে শহরে জীবিকা অর্জন করতে হয়।”
বনচ্ছেদন ও নিষ্কাশনের জন্য আদিবাসী মানুষদের নিজেদের বাসভূমি থেকে অপসারণ
দামিয়াও ও কসমোর এই দুর্দশা ভাগ করে নিয়েছেন আমাজন বেসিনে বসবাসকারী ৫১১টি উপজাতির মানুষ। একসঙ্গে এইসব উপজাতির মানুষের নিয়ন্ত্রণে আছে ২৪০ মিলিয়ন হেক্টর বনভূমি। সারা পৃথিবীতে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন আদিবাসী মানুষ আছেন (পৃথিবীর জনসংখ্যার ৬ শতাংশ) যাদের মধ্যে ২০ শতাংশ মানুষ ভারতের আদিবাসী উপজাতিভুক্ত। পৃথিবীর বনভূমির ৫০ শতাংশ তাঁদের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও মাত্র ১০ শতাংশের মালিকানা তাঁদের হাতে। কিন্তু তাঁরাই পৃথিবীর বনভূমিকে রক্ষা করে চলেছেন। এই মানুষগুলি অধ্যুষিত দেশগুলির মধ্যে আমাজন বেসিন, মেসোআমেরিকা, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গো আর ইন্দোনেশিয়া পৃথিবীর মাটির ওপরের কার্বন ২০ শতাংশের বেশি ধারণ করে।
আদিবাসী মানুষ অধ্যুষিত বনভূমি পৃথিবীর ৮০ শতাংশ জীববৈচিত্র্যের ভাণ্ডার এবং সেখানেই পর্যাপ্ত পরিমাণে তেল, গ্যাস, কাঠ আর খনিজ পাওয়া যায়। এই প্রাকৃতিক সম্পদকে আত্মসাৎ করার জন্যই অরণ্য ধ্বংস করা ও আদিবাসী মানুষদের উৎখাত করে ফেলা হয়ে থাকে। সরকারও এই বিভেদনীতিতে অনুমোদন দেয় যাতে কর্পোরেশনগুলো তাদের কাজ চালিয়ে যেতে পারে। যেমন, খননকার্য, বৃক্ষচ্ছেদন এবং বনদূষণ, আর বৃহৎ কৃষকদের অরণ্য ধ্বংস করে সেখানে খামার তৈরি। এর ফলস্বরূপ বনচ্ছেদন, মানুষের স্বাধিকারে হস্তক্ষেপ, আদিবাসী মানুষদের প্রান্তিকীকরণ, তাঁদের জীবন ও জীবিকার থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া, সাংস্কৃতিকভাবে বিচ্ছিন্ন করা, দারিদ্র্য আর রোগব্যাধি বৃদ্ধি পাওয়া, ইত্যাদি বিষয়গুলি প্রকট হয়ে পড়ে।
আদিবাসীদের অধিকারে রাষ্ট্রসংঘের স্বীকৃতি সত্ত্বেও উচ্ছেদ
১৩ সেপ্টেম্বর ২০০৭ তারিখে রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সভায় আদিবাসী মানুষদের অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। সেখানে বিস্তারিতভাবে বলা হয়েছে যে আদিবাসীদের ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগতভাবে ভাষা, সংস্কৃতি ও অস্তিত্বের অধিকার আন্তর্জাতিক আইন ও নীতির দ্বারা স্বীকৃত ও রক্ষিত হবে। এর মাধ্যমে আদিবাসীদের বিরুদ্ধে বৈষম্যকে অবৈধ ঘোষণা করা হয় এবং আদিবাসী জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত যেকোনও বিষয়ে তাঁদের সম্পূর্ণ ও কার্যকরী অংশগ্রহণকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। আন্তর্জাতিক লেবার অর্গানাইজেশনও তাদের ইন্ডিজিনাস ও ট্রাইবাল পিপলস কনভেনশন (১৯৮৯)-এ আদিবাসীদের স্বায়ত্তশাসনের অধিকার প্রদান করে।
এতদসত্ত্বেও আদিবাসীদের নিরন্তর আক্রমণের সম্মুখীন হতে হয়। তাই হুনি কুইন ও অন্যান্য উপজাতিরা তাঁদের অধিকারের দাবিতে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য একটি সংগঠন তৈরি করেছেন। এদের মধ্যে ৬০০০ জন সদস্য চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে এই নতুন নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে ব্রাসিলিয়া গিয়েছিলেন।
সারা পৃথিবীর ক্ষেত্রেই আদিবাসী মানুষের লড়াইয়ের চিত্রটা একইরকম। ১৯৭০-এর দশকের শুরুতে মুম্বইয়ের ১০০ কিলোমিটার উত্তরে থানে জেলার বনভূমিতে বসবাসকারী মালহার কোলিস, ওয়ারলিস, কোঙ্কনা ও কাটকারি উপজাতির মানুষেরা ভূমি সেনা নামে একটি ব্যানারের তলায় জড়ো হয়েছিলেন এবং বৃহৎ কৃষক ও মহাজনদের হাত থেকে তাঁদের জমি ফিরে পাওয়ার জন্য লড়াই করেছিলেন। তাঁদের এই সংগ্রাম সফল হয় এবং তাঁরা জমিও ফিরে পান। কিন্তু লড়াই সেখানেই থেমে থাকে না। দেখা যায়, মুম্বই-আমেদাবাদ বুলেট ট্রেনের পথবিন্যাস তাঁদের জমির উপর দিয়েই গেছে। কালু রাম দুধাদে নামক এক অশীতিপর ভূমি সেনা এই বিষয়ে বলেন, “বুলেট ট্রেন দিয়ে আমাদের কী হবে? আমরা তো এতে চড়ব না। কেউ তো আমাদের জিজ্ঞেস করেনি আমাদের আদৌ বুলেট ট্রেন দরকার আছে কিনা। এই প্রকল্প আমাদের উপজাতির মানুষকে এবং এই বনভূমিকে আরও ধ্বংসের পথে ঠেলে দেবে।” ভূমি সেনারা এই বুলেট ট্রেনের বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে তাদের লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।
অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিজিনাস পিপল অফ ব্রাজিলের তরফে সোনিয়া গুয়াজারাজা এই পরিস্থিতির একটি সহজ ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন,
পৃথিবীর কোথাও আমাদের কথা শোনার কেউ নেই।
স্বত্বপত্র জরুরি
আদিবাসী মানুষদের যুক্তি হল এই যে রাষ্ট্রসংঘের ঘোষিত অধিকার প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তাঁদের জমির স্বত্বপত্র থাকা জরুরি। তাঁদের দাবি অনুযায়ী এর ফলে অরণ্য রক্ষা পাবে এবং তার পরিচালনার দিকটাও উন্নত হবে। এর পাশাপাশি জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণও যথাযথভাবে সাধিত হবে কারণ এই মানুষদের সাংস্কৃতিক ও বংশগতভাবে পৃথিবীকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান আছে। তাঁরা এটাও দেখিয়েছেন যে যেসব জায়গায় আদিবাসী মানুষদের হাতে ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগতভাবে জমির স্বত্বাধিকার রয়েছে, সেখানে বনচ্ছেদনের হারও অনেক কম। সর্বোপরি, জলবায়ু পরিবর্তনের কুপ্রভাবের হাত থেকে পৃথিবীকে বাঁচাতে এটাই সবচেয়ে সাশ্রয়ী সমাধান। এবং, যদি তাঁদের স্বত্বাধিকার বা রাষ্ট্রসংঘের বিবৃতিতে কোনও পরিবর্তন আনার দরকার হয়, তাহলে সেটা আদিবাসীদের থেকে আগাম ও স্বাধীন অনুমতি নিয়েই করতে হবে।
যতক্ষণ না আদিবাসীদের জমির উপর তাদের স্বত্বাধিকার দেওয়া হচ্ছে, ততক্ষণ ব্যক্তিমানুষেরা বনভূমির ছোটখাটো অংশ কিনে সেগুলোকে বাঁচানোর চেষ্টা চালাতে থাকবে। আমেরিকার ইশ গ্রুপ অফ ইন্ডিজিনাস পিপলের সদস্য লুকাস নামক একজন নেটিভ আমেরিকান ও তাঁর স্ত্রী চেতনা ভার্জিনিয়ার ব্লু রিজ পর্বতে বাস করেন যেটা আসলে ইশ এলাকারই একটা অংশ ছিল। তরুণ বয়স থেকেই লুকাস এই বনভুমি পুনরুদ্ধার ও রক্ষা করার জন্য লড়াই চালিয়ে গেছেন। বহু বছর ধরে গণ-অর্থসংস্থান এবং চাঁদা তুলে তুলে তিনি বনভূমির একটা অংশ কিনে নিয়েছেন। বর্তমানে তাঁরা প্রায় ৩০০ একর বনভূমি রক্ষা করে চলেছেন। তাঁদের জমির স্বত্বপত্রে তাঁরা এই শর্ত রেখেছেন যাতে ভবিষ্যতে এই কোনও মালিক এই জমির কাঠকে নিজেদের স্বার্থে কাজে লাগাতে না পারেন বা এই বনভূমিকে অন্যান্য জমির শ্রেণিতে ফেলতে না পারেন। এই দম্পতি নিজেদের খাদ্য নিজেরাই চাষ করেন, এবং অবৈধ শিকার, অন্যান্য নিষ্কাশন পদ্ধতি ও উন্নয়নের পীড়ন থেকে বনভূমিকে ব্যাপকভাবে রক্ষা করেন।
জমির স্বত্বাধিকার পাওয়ার জন্য আদিবাসী মানুষদের এই সংগ্রাম যতটা মানবাধিকারের জন্য, ঠিক ততটাই জলবায়ু পরিবর্তনের কুপ্রভাব থেকে পৃথিবীকে বাঁচানো এবং এই মানবসভ্যতাকে সুস্থায়ী উন্নয়নাভিমুখী করার তাগিদে। এই লড়াইতে সকলের সহযোগিতার একান্ত প্রয়োজন। আদিবাসী মানুষদের সহায়ক জীবোইয়ানা নামক এক সংগঠন দামিয়াও ও কসমোকে কপ-২৬-এ এনেছিল যাতে তাঁরা তাঁদের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে পারেন এবং মানুষের কাছে সাহায্য চাইতে পারেন। কপ-২৬-এর বাইরে প্রতীক্ষারত মানুষরাও এই একই জিনিস করছেন কিন্তু একটু ভিন্নভাবে।
সারা পৃথিবী জুড়ে সরকার ও সম্ভাব্য দখলদারদের দ্বারা আদিবাসী মানুষের সংখ্যা ক্রমশ ছেঁটে ফেলা হচ্ছে এবং তাঁদের আপনভূমি থেকে বহিষ্কার করা হচ্ছে। এই আদিবাসী মানুষেরা উপলব্ধি করছেন যে তাঁরা শুধু তাঁদের জমিই হারাবেন তাই নয়, তাঁদের জীবনের স্বাভাবিক ছন্দও হারিয়ে যাবে। কপ-২৬ কি তাঁদের কথা শোনার জন্য আগ্রহী? নাকি তারা এমন কোনও ভাষা ও শৈলীতে তাদের এই যোগাযোগ স্থাপনের প্রক্রিয়া চালিয়ে যাবে যা শুধু আদিবাসীরাই নয়, এমনকি আমারও বুঝতে অসুবিধা হয়ে থাকে।