মেয়েদের পাড়া
১.
সেলফিতে মুণ্ডমালা দেখা যায় না বলে, আমাকে চিনতে পারোনি
রক্তপাতের দিন লুকিয়ে রাখতে হয়, জেনেছি আজীবন!
আলতা সিঁদুরে সেজেছি নিষেকের দিনেও
চেরাপেটের সমান্তরালে শরীর— পোড়ানো ব্যথা চাপা পড়েছে লিপস্টিকের আগ্রহে
শ্মশান এবং যত্রতত্র হতে নখের আঁচড়, দংশন বয়ে, ঘরে ফিরে মধ্যরাতে সেতার বাজাতে বাজাতে লাইভ করেছি—
উদ্যত প্রহারের মুখে আমার পাল্টা মার এখন বিখ্যাত নিষেধের তর্জনী ভেঙে দিতে শিখে গেছি বলে বাগানে-পাড়ায় ঘুরে বেড়াই ইচ্ছেমতো!
আমাদের প্রকাশ্য অট্টহাসিতে অন্ধকার তোলপাড়
ঠাকুরদের কলোনি নিস্তব্ধ— অমাবস্যার অবসরে আমরা রাজপথ দখল করি।
তোমরা এদের পুজো দাও— ভয় পাও—
রোজ রাতে, যখন মেয়েদের ভাত-জলের পাশে শক্তিময়ী প্রদীপ জ্বলে— আমি, তাকেই কালীপুজো বলে জানি।
২.
রাত্রি ৩টে ২৭-এ, যে, তোমাকে ‘ছেড়ে যাব’ বলবে জেনে নিও, সে-ই নিয়তি তোমার!
জেনে নিও, ওই ফজরের আজান কানে আসার মুহূর্তে যে বন্ধু তোমাকে জানাবে, নতুন নিভিয়ার গন্ধে তার তোমাকে মনে পড়ছে, জেনে নিও সে আছে বলে তুমি আত্মহত্যাপ্রবণতা পেরোতে শিখবে একদিন।
রাত্রি ৩টে ২৭-এ, যদি এসি বন্ধ করে দিতে পারো, তবে ভোরে মেঘ করবেই। জেনে নিও, পরবর্তী সন্ধেয় চাঁদ উঠবে। দীপাবলির প্রদীপের মতো মিহি জ্যোৎস্না সাদা কুর্তায় জাফরি এঁকে লিখে যাবে, ঈদ। একে যদি বলো, সকাল ৩টে ২৭, তবে আর ভয় নেই। রাত শেষ হয়ে গেছে!
৩.
মণীষা বাল্মীকি যখন পুড়ে যাচ্ছে, অন্ধকার চিরে আওয়াজ তুলছেন
তনুশ্রী পান্ডে ‘ও কেয়া জ্বল রাহা হ্যায়?’ প্রতিমা মিশ্র
যখন মণীষার মায়ের কাছে পৌঁছনোর জন্য ছুটছেন, –
তার আগেই নীলাঞ্জনা চট্টোপাধ্যায় ফিরে এসেছেন জবানবন্দি দিয়ে
সীমা কুশায়া যখন মণীষার কেস গ্রহণ করে অবরোধ পার হচ্ছেন,
ইন্দ্রা নুয়ি জানিয়ে দিয়েছেন কীভাবে তিনি সাম্রাজ্য সামলান!
প্রতিমা মিশ্র, দৌড়োচ্ছেন— বাংলা ছুটছে, দিল্লি ছুটছে মাথায় রোদ, পায়ের নীচে রক্ত
মণীষা বাল্মীকির হাড় ছাই হতে হতে রয়ে গেছে
স্বরা ভাস্কর তখন যন্তর-মন্তরে, গলা তুলেছেন— ভারতবর্ষ এসে দাঁড়াচ্ছে ভিড়ে-পথে-মিনারে— আমরা গলা তুলছি— ভারতবর্ষ যখন বলছে— ‘ম্যায় চিল্লা নেহি রহি হুঁ, আওয়াজ বুলন্দ কর রহি হুঁ। আওয়াজ বুলন্দ করনে কো চিল্লানে সে কনফিউজ মত কিজিয়ে।’
তখন আমরাই বলছি, এবার চিৎকার করব
প্রতিমা মিশ্র, সারা দেশকে আপনি দৌড় শেখাচ্ছেন
আমরা প্রস্তুত
ভারতবর্ষের হাতে দেশলাই—
আমরা শুরু করেছি— on your mark— get— set— going—
৪.
এই জন্মের পথে, যে সব পাহাড় এসেছিল তাদের প্রতিটি পাথর, আমার হাতিয়ারের খবর রাখে! নুড়ির সামনে মাথা নত করে আছি বলে, ভেবো না অস্ত্রের ধার কমে গেছে!
লুকোনো ঝোড়ার উন্মাদে পা রাখতে ভালবাসা, আদতে আমাদের উত্তরাধিকার— সেখানে বারুদের গন্ধহীন দিনে, চাঁদ নামে
দূর থেকে বাঘের ডাক শুনতে পাই শুনতে পাই ডিনামাইট—
ভূমিকম্পের আগমনবার্তা— ভাত খেয়ে উঠে, দ্রুত ধনুকে জ্যা নির্মাণ করি শয্যা থেকে তুলে নিই খুলে রাখা বস্ত্রসমূহ
উপত্যকা জানে, রক্তের স্বাদ পাওয়া বাঘিনীর থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকা দরকার!
৫.
আমাদের পাড়ায় চাঁদ এলে— তোমাদের ভাত রান্না হয়—
আকাশে বাতাসে কলরব ওঠে
গল্প শুরু থেকে মোহনার পথে যায়—
রক্ত থেকে আগুন নির্মাণ করে আমরা নদীর তীরে বসি
জোয়ারভাঁটায় গর্ভফুল ভেসে আসে…