দেবকুমার সোম
কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক
পূর্ব প্রসঙ্গ: প্রসঙ্গকথা
সহিত শব্দ হইতে সাহিত্য শব্দের উৎপত্তি। অতএব ধাতুগত অর্থ ধরিলে সাহিত্য শব্দের মধ্যে একটি মিলনের ভাব দেখিতে পাওয়া যায়। সে যে কেবল ভাবে-ভাবে ভাষায়-ভাষায় গ্রন্থে-গ্রন্থে মিলন তাহা নহে; মানুষের সহিত মানুষের, অতীতের সহিত বর্তমানের, দূরের সহিত নিকটের অত্যন্ত অন্তরঙ্গ যোগসাধন সাহিত্য ব্যতীত আর-কিছুর দ্বারাই সম্ভবপর নহে। যে দেশে সাহিত্যের অভাব সে দেশের লোক পরস্পর সজীব বন্ধনে সংযুক্ত নহে; তাহারা বিচ্ছিন্ন।[1]
মূল পর্যায় শুরুর আগে আমরা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট করে নিতে চাইছি। ধীমান পাঠকের কাছে অনুরোধ, এই ধারাবাহিক প্রবন্ধের বিভিন্ন আলোচনায় আগাগোড়া আমাদের এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মান্যতা দেওয়া হোক।
ভারতে ঔপনিবেশিক শাসনব্যবস্থা ছিল মাত্র নব্বই বছর। তার আগে মেরেকেটে একশো বছর ছিল দেশীয় রাজা, নবাব, মুঘল সম্রাট আর কোম্পানির মধ্যে ক্রমাগত লড়াই। একশো বছরের মধ্যে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বেনেগিরি ছেড়ে রাইফেলের গুঁতো আর আমাদের ঘরের শত্রুদের যোগসাজশে শাসক বনে বসে। মোটের ওপর বিদেশি সাদা চামড়ার প্রভুত্ব আমাদের ওপর চলে ছিল কমবেশি দেড়শো বছর। তারপর আরও পঁচাত্তর বছর কেটে গেছে। আমরা এখন এক গণতান্ত্রিক আবহাওয়ায় বাস করি। আমাদের কারেন্সি নোটে ‘জাতির জনক’-এর ছবি থাকে। দেখতে দেখতে পৌনে একশো বছর কেটে গেল আমাদের নিজস্ব সংবিধানের বয়স। তবু আমাদের সমাজজীবনে সাদা চামড়ার ছেড়ে যাওয়া কোট-পাতলুনের প্রতি বশ্যতা অপ্রতিদ্বন্দ্বী (এমনকি সংবিধানের বিভিন্ন ধারা–উপধারায়)। তাদের অদৃশ্য প্রভুত্ব ভারতীয় সমাজে এখনও অটুট। অজর। ফলে আমরা এখনও তাদের শিখিয়ে যাওয়া বুলি তোতাপাখির মতো আওড়ে যেতে স্বচ্ছন্দবোধ করি। আমাদের মজ্জার ভেতর থেকে যাওয়া কলোনিয়াল হ্যাংওভার আজও আমাদের কাছে আন্তর্জাতিকতা।
এত কথা বলতে হল, কারণ আমরা এখন একটি বিশেষ শব্দের অর্থের অনুসন্ধান করতে চাইছি। শব্দটা হল ‘আধুনিক’ কিংবা ‘আধুনিকতা’। সেই সূত্রে ‘উত্তর আধুনিক’। ইংরাজি শব্দ ‘modern’ বাংলা অনুবাদে ‘আধুনিক’। এই শব্দটা আমাদের অভিধানে ঔপনিবেশিককালের আগে কখনও ছিল না। থাকার কথাও নয়। কারণ ইংরেজরা আরও বহু কিছুর মতো এটাও আমাদের বিশ্বাস করতে শিখিয়েছে যে, ইংরেজ আসার আগে আমরা ‘আধুনিক’ ছিলাম না। কিন্তু সত্যিই কি তাই? ইংরেজরা এসেই আমাদের ‘আধুনিক’ করে তুলল? দাবিটা কতটা যুক্তিগ্রাহ্য তা প্রমাণের জন্য আমরা নাহয় একবার ‘আধুনিক’ শব্দটাকে নিয়ে নাড়াঘাঁটা করে দেখি?
‘আধুনিক’ শব্দটার ঠিক আগে আর একটা শব্দ আমরা ইংরেজদের কাছ থেকে পেয়েছি। তা হল ‘মধ্যযুগ’। অর্থাৎ ইংরাজিতে যাকে বলে ‘Middle Ages’। ইওরোপীয় পণ্ডিতেরা দিস্তে-দিস্তে গবেষণা প্রকাশ করে প্রমাণ করেছেন মধ্যযুগ ছিল অন্ধকারের যুগ। তাই এখনও পিছিয়ে থাকা কোনও জাতি, কিংবা রীতিনীতি বা ঘটনার তুলনা টানতে আমরা ব্যবহার করি ‘মধ্যযুগীয়’ বিশেষণটি। এর সঙ্গে এও জুড়ে দেওয়া হয় যে, ‘মধ্যযুগ’ থেকে উত্তরণে ইওরোপ (আরও নির্দিষ্টভাবে বললে পশ্চিম ইওরোপ) বাকি দুনিয়াকে আধুনিকতার শিক্ষা দিয়েছে। আমাদের দেশজ পণ্ডিতসমাজও এই দাবিকে কখনও অগ্রাহ্য করেন না। কিন্তু ইওরোপ যাকে ‘মধ্যযুগ’ বলছে, যখন তাদের অঞ্চলে জোয়ান অফ আর্ক কিংবা ব্লাডি মেরি-র মতো ঘটনা ঘটছে, কিংবা পর্তুগিজ আর স্পেনীয় (কাতালান) রাষ্ট্র ঔপনিবেশিকতাবাদের লাগামছাড়া লুটপাটে নেমে পড়েছে, তখন কেমন ছিল আমাদের এই উপমহাদেশ?
পাঠক লক্ষ করে দেখুন সম্রাট আকবর ঠিক এই সময়কার মানুষ। যিনি রাষ্ট্রপ্রধান হয়েও সর্বধর্মসমন্বয়ের জন্য ‘দীন-ই-ইলাহী’ ধর্মমত তৈরি করেছিলেন। ওই মধ্যযুগে আমাদের দেশে তাজমহলের মতো স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়েছিল। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত কিংবা মুঘল মিনিয়েচার পেন্টিং সেই সময়কার বিস্ময়। নানক, কবীর, শ্রীচৈতন্য, মীরাবাই এই সময়কার মানুষ। তথাকথিত এই মধ্যযুগে আমাদের বাংলাভাষায় মঙ্গলকাব্যের মতো সাহিত্য রচিত হয়েছে। পদাবলি লেখা হয়েছে। যেখানে সংস্কৃত বা তৎসম শব্দ নয়, খাঁটি বাংলা শব্দের ব্যবহার তিন-চতুর্থাংশ। আমরা তখন পিছিয়ে ছিলাম কোথায়? আর যদি পিছিয়েই থাকতাম, তাহলে ভারতের সমুদ্রপথ আবিষ্কার নিয়ে তখনকার ইওরোপের অমন আকচাআকচি, প্রতিযোগিতা কেন ছিল? কারণ তাদের মধ্যযুগ লুণ্ঠনের ইতিহাস। নারী নির্যাতনের ইতিহাস। ডাইনিতত্ত্বের ইতিহাস। ফলে তাদের উত্তরণের জন্য, আরও স্পষ্ট করে বললে তাদের ঔপনিবেশিক শাসনব্যবস্থা, দাস আর অস্ত্রব্যবসা টিঁকিয়ে রাখতে ‘আধুনিকতা’র দোহাই তাদের দিতে হয়েছিল।
সেই আধুনিকতার মধ্যে তারা স্টিম ইঞ্জিন কিংবা ছাপাখানা আবিষ্কারকেও সামিল করে দিয়েছে। অথচ, প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে উন্নত সভ্যতার কোনও সাযুজ্য নেই। বরং বৈরিতাই বেশি। মানুষ যত উন্নত প্রযুক্তির নিগড়ে নিজেকে বেঁধে নেবে, ততই সে বিশ্ব-প্রকৃতি থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে। ইতিহাসের অমোঘ নির্দেশ এই। ফলে বাংলা উপন্যাসের অন্দরমহল নিয়ে আলোচনার সময় আমরা ‘আধুনিক’ কিংবা ‘উত্তর আধুনিক’ এমন ধারণাকে প্রশ্রয় না দিয়ে ঔপনিবেশিক কালপর্বের সময়কে ব্যাখ্যা করব আমাদের দেশজ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। আরও ঘনিষ্ঠভাবে বললে, আমরা দেখতে চাইব ইওরোপের আধুনিকতার বহু আগেই আমাদের দেশজ সাহিত্যে উপন্যাস কিংবা নভেলের যথেষ্ট প্রচলন ছিল কি না। হয়তো সেটা আজকের আদমানিকৃত আবরণে ঢাকা ছিল না। ছিল আমাদের জীবনযাপনে মৌখিক আর লিখিত পুথিসাহিত্যের আঙ্গিকে।
‘‘বাঙ্গ্লায় মুদ্রাযন্ত্র সৃষ্টির পর বাঙ্গ্লার… উপন্যাস… জন্মগ্রহণ করিয়াছে।… ইহার পূর্ব্বে ‘উপন্যাস’ বলিয়া বাঙ্গ্লায় কিছু ছিল না।’’ ১৯০৯ সাল নাগাদ এমন সিদ্ধান্ত দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদারের। তাঁর এই সিদ্ধান্ত কতটা যুক্তিগ্রাহ্য তা আমরা বিশ্লেষণ করতে চাই। তার আগে ইতিহাসের খানিক ধারাবিবরণ আবশ্যক।
ভারতে প্রথম ছাপাখানার কাজ শুরু করে পর্তুগিজরা গোয়ায় ১৫৫৬ সালে। বাংলায় মুদ্রণশিল্পের সুচনা ১৭৭৮ সালে হুগলিতে চার্লস উইলকিন্স এবং পঞ্চানন কর্মকারের যৌথ উদ্যোগে ন্যাথানিয়েল ব্রাসি হ্যালহেড প্রণীত অ্যা গ্রামার অব দ্য বেঙ্গলি ল্যাঙ্গুয়েজ বই ছাপার মধ্যে দিয়ে। ১৭৭৯ সালে পঞ্চাননবাবু কলকাতায় চলে আসেন কোম্পানির ছাপাখানা তৈরির কাজে। আর তার পরের বছর জেমস অগাস্টাস হিকি সূচনা করেন তাঁর ইংরাজি সাপ্তাহিক সংবাদপত্র বেঙ্গল গেজেট। যাকে বলা হয় ভারতের প্রথম ছাপা খবরের কাগজ।
বাংলায় ছাপাখানা আসার প্রায় পঁচাত্তর বছর পর ১৮৫২ সাল নাগাদ প্রকাশিত হয় হানা ক্যাথেরিন মুলেন্স-এর রচিত ফুলমণি ও করুণার বিবরণ উপন্যাস। ফলে মিত্র মজুমদারের সিদ্ধান্ত যুক্তিগ্রাহ্য এমনটা আমরা বলতে পারছি না। ছাপাখানা আসার পরে-পরেই যে পুথিসাহিত্য ছাপার মুখ দেখেছে এমনটাও নয়। তার চেয়ে অনেক বেশি কসরত করতে হয়েছে বাংলার নিজস্ব গদ্যভাষা উদ্ভাবনে। যে কাজ প্রথম শুরু করেন রামমোহন রায়। বাংলায় উপন্যাস রচনার পঞ্চাশ বছর আগেই রামমোহন বাংলা গদ্যের একটা আদল তৈরি করে নিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথের মতে রামমোহন জনশিক্ষার প্রয়োজনেই নিজস্ব গদ্যভাষা আয়ত্ত করেছিলেন। তার পরবর্তী সময়ে বাংলা সাহিত্যে গদ্যের ভুবন উন্মোচনে বিদ্যাসাগরের ভূমিকা আমাদের কাছে পরম পাওয়া। আক্ষেপ বিদ্যাসাগর যদি পাঠ্যপুস্তক ও অনুবাদ রচনার পাশাপাশি বাংলা সৃজনশীল গদ্যসাহিত্যে মনোনিবেশ করতেন, তাহলে হয়তো বাংলা সাহিত্যে উপন্যাসের সূচনা আরও আগে হত। বিদ্যাসাগর মহাশয় সেই যুগে ‘রাম বড় সুবোধ’ (বর্ণপরিচয় ২য় ভাগ। সপ্তম পাঠ)-এর মতো সম্পূর্ণ ক্রিয়াপদহীন বাক্য রচনা করেছিলেন। তাঁর গদ্যভাষা ছিল বিস্ময়করভাবে অলঙ্কারহীন। এছাড়া সংস্কৃত সাহিত্যের দীর্ঘ কয়েক শতকের ইতিহাসে বাণভট্টের কাদম্বরী–র মতো উঁচুমানের সাহিত্য প্রমাণ করে গদ্য জিনিসটা মোটেও বিদেশাগত নয়। এর সঙ্গে যদি আমরা মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর সাহিত্যকে রবীন্দ্রনাথের দৃষ্টিকোণ থেকে মেনে নিই, তাহলে বলতেই হয় মুকুন্দরাম ছিলেন বাংলা ভাষার প্রথম প্রাকৃত ঔপন্যাসিক।
দক্ষিণারঞ্জন প্রথাগতভাবে তাঁর সিদ্ধান্তে এসেছিলেন এমন অনুমানের কারণ বঙ্কিমচন্দ্রের জনপ্রিয়তা। নভেল রচনায় তাঁর ধারাবাহিক সফলতা। দক্ষিণারঞ্জনের মতো আরও বহু পণ্ডিত বাংলা উপন্যাসের ক্ষেত্রে বঙ্কিমচন্দ্রকেই সূচনাবিন্দু হিসাবে মান্যতা দিতে চান। এই চাওয়াটার লাগোয়া যে প্রতিপ্রশ্ন আমাদের মগজে আসে তা হল উপন্যাস কাকে বলে? এর উৎপত্তিই বা কোথায়?
বঙ্কিমচন্দ্র এবং তাঁর সমকালীন সাহিত্যিকেরা উপন্যাস লেখার কৌশল শিখেছিলেন ইংরাজি নভেল পাঠের মধ্যে দিয়ে। ফলে এমন একটা আবছা ধারণা দীর্ঘকাল আমাদের জনমানসে থেকে গেছে যে, উপন্যাস বা নভেল মূলত ইংরাজি সাহিত্যের নিজস্ব উৎপাদন। এই ধারণা কতটা যুক্তিযুক্ত? মিগুয়েল দ্য কারভেন্তেস ফরাসি ভাষায় ১৬০৫ সালে লিখেছিলেন নভেল ডন কুইজোট। পশ্চিমা পণ্ডিতেরা বিচার-বিশ্লেষণ করে প্রমাণ করেছেন ডন কুইজোট পৃথিবীর প্রথম সার্থক নভেল বা উপন্যাস। ১৭২৬ সালে আইরিশ অথর জোনাথন সুইফট রচনা করেন গ্যালিভার’স ট্রাভেলস। পনেরো শতকে জোহানেস গুটেনবার্গ তাঁর ছাপার যন্ত্র বাজারে আনেন। ফলে বাণিজ্যিকভাবে ছাপার কাজ শুরু হওয়ার প্রায় একশো বছর পরে ফ্রান্সে প্রথম উপন্যাস লেখা হল। তার প্রায় একশো কুড়ি বছর পরে আইরিশ-ইংরাজিতে লেখা হল উপন্যাস। আর খাঁটি ইংরেজি নভেল আ টেল অফ টু সিটিজ় ১৮৫৯ সালে। বাংলায় প্রথম ছাপার অক্ষরে লেখা উপন্যাস তারও আগে ১৮৫২ সালে।
এর থেকে আমরা দুটো প্রতিপাদ্যে আসতে পারি:
১) ছাপাখানার দৌলতে উপন্যাস রচনা এল তামা-তুলসিপাতা হাতে নিয়ে এমনটা বলা যায় না। বরং ছাপাখানা আসায় মৌখিক সাহিত্য থেকে লিখিত সাহিত্য রচনার ঝোঁক বাড়ল। এল নিরীক্ষার সুযোগ।
২) ইংরেজদের কাছ থেকে আমাদের পূর্বজরা উপন্যাস রচনার কৌশল শিখলেও, জিনিসটা ব্রিটিশজাত নয়। বরং আমরা যেভাবে উপন্যাসের কাঠামো জেনেছি, সেটা মূলত ফরাসি সাহিত্যের অবদান। কারভেন্তেস-কে প্রামাণ্য মেনে নিয়ে জার্মানি, ইতালি, স্পেন কিংবা রাশিয়ায় যে উপন্যাস রচনা শুরু হল, তার অবতলগত কাঠামো এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ উপন্যাসের জনক ব্রিটিশ সাহিত্য নয়। সেখানেও আমাদের মতো জিনিসটাকে আত্মস্থ করা হয়েছে।
ইওরোপ উপন্যাসের এই কাঠামোকে মান্যতা দিয়েছে। ফলে আজও সেই প্রথা চলেছে। এর মধ্যেও জঁ পল সার্ত্র তাঁর নঁসিয়া নভেলে ভিন্ন এক কাঠামো ব্যবহার করে সফল হয়েছেন। আমাদের দেশে রবীন্দ্রনাথ ঘরে বাইরে উপন্যাসে ভিন্নধর্মী এক টেক্সট্ এনেছেন এবং সফলও হয়েছেন। কিংবা সুবিমল মিশ্রের মতো বাংলায় কড়াগোনা কয়েকজন অভিযাত্রী উপন্যাস রচনায় ভিনপথের পথিক হতে চেয়েছেন। তবুও দস্তয়েভোস্কি, তলস্তয় ঘুরে কাফকা কিংবা জয়েস, ফকনার হয়ে মার্কেজ পর্যন্ত সকলেই উপন্যাসের মূল কাঠামোকে নস্যাৎ করতে চাননি। যদিও এ কথা আমাদের স্মরণ রাখতে হয় গদ্যসাহিত্য, বিশেষত উপন্যাস বয়সে নবীন। কবিতার মতো এর অবিকল্প কোনও কাঠামো আজও গড়ে ওঠেনি। কবিতায় সনেট লিখতে গেলে কবিকে সনেটের কাঠামোর মধ্যে থেকে লিখতে হবে। ট্রিওলেট-এ কবিতা লিখতে গেলে তার সঙ্গে হাইকু মিশিয়ে দেওয়া যায় না। উপন্যাসে সে সম্ভাবনা রয়েছে। আর রয়েছে বলেই উপন্যাসের নিজস্ব দেশজ নির্মাণ সম্ভব। নিজস্ব আখ্যানতত্ত্ব বা ন্যারেটোলজি উদ্ভাবন জরুরি। এর জন্য কেবল চাই কলোনিয়াল হ্যাংওভার থেকে নিজেদের দৃষ্টিকে বিচ্ছিন্ন করা।
দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার তাঁর সিদ্ধান্তকৃত মন্তব্যটির বিস্তারিত ব্যাখ্যায় নীচের কথাগুলো বলেছেন:
উপন্যাসের কলাকৌশল, চমৎকারিত্ব, ভাষা এবং বর্ণনাভঙ্গী হইতে চরিত্রচিত্রণ প্রভৃতি এবং উহার কল্পনার নানামুখী গতি— সমস্তই পাশ্চাত্ত্য শিক্ষা এবং পাশ্চাত্ত্য আদর্শের মধ্য দিয়া পরিস্রুত হইয়া আসিয়াছে। ইহার পূর্ব্বে ‘উপন্যাস’ বলিয়া বাঙ্গ্লায় কিছু ছিল না। যাহা ছিল, আমার দেশ তাহাকে ‘কথা’ নাম দিয়াছিল। এই ‘কথা’, বাঙ্গালীর আপন প্রাণের নিতান্ত নিজস্ব সুরে একান্ত সহজ ভাবে বাজিয়া যাইত। অথচ, উপন্যাস এক্ষণে যে ক্ষেত্রে যাহা করিতেছে, তাহারও অপেক্ষা বিস্তৃততর ক্ষেত্রে, গুরু দায়িত্বরাশি এই ‘কথা’গুলির উপর সংন্যস্ত ছিল। আপনার কথা— সরস শব্দে ও সুরের মায়াপ্রবাহে নিতান্ত সরল-হেলায় ইহারা বিস্ময়কররূপে নিজকার্য্য উদ্ধার করিয়াছে।[2]
মিত্র মজুমদারের প্রথম মতের সমর্থনকারীরা কলকাতা নগরকেন্দ্রিক সাহিত্যকেই মান্যতা দেবেন তা সন্দেহ নেই। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে সেদিনের ভারতবর্ষে গ্রাম অর্থনীতির মালিকানায় মধ্যসত্ত্বভোগী একশ্রেণির সামন্তপ্রভুর উদ্ভব ঘটেছিল। উৎপাদনশীলতার বাইরে থাকা এইসব সামন্তপ্রভুরা ছিলেন গ্রামীণ শ্রমজীবী মানুষের ভাগ্যবিধাতা। তাঁরা গ্রামীণ অর্থনীতিকে শুষে নিয়ে কলকাতা শহরে জমিদারিপ্রথার বাড়বাড়ন্তের পথ প্রশস্ত করেছিলেন। বিদেশি বণিক আর দেশজ জামিদারের বংশ বাংলার অর্থনীতিকে কেবল শেষ করে দেয়নি, তার সঙ্গে শেষ করে দিয়েছে গ্রামীণ শিল্প-সাহিত্যকে। কারণ তখন বিদেশি প্রভুদের পদলেহন করে বাঙালি (পড়ুন হিন্দু বাঙালি) ইংরাজি কেতাকে জীবনের মোক্ষ মেনে নিয়েছিল। সাত সমুদ্র পার হয়ে আসা লুটেরা জাতের কাছে বিনা লড়াইয়ে এমন ক্লীব বশ্যতার নজির দুনিয়ায় মেলা ভার। সেদিন আমাদের বিদগ্ধ পণ্ডিতদের দৃষ্টিকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল আমাদেরই গৃহকোণের অতি সাধারণ তুলসিতলার প্রদীপের নীচের অন্ধকার।
ফলে দক্ষিণরঞ্জন মিত্র মজুমদারের সিদ্ধান্ত সর্বান্তকরণে সমর্থন করার কোনও উপায় আমাদের থাকছে না। ছাপাখানা (অর্থাৎ উপনিবেশের কল্যাণে) আসায় বংলায় উপন্যাস লেখা শুরু হয়ে গেল এমনটা নির্ভেজাল সমর্থনযোগ্য নয়। এবার আমরা দেখে নিতে চাইছি সেই বিশেষ ঋতুতে বাংলা উপন্যাস নিয়ে কেমন পরীক্ষানিরীক্ষা চলছিল।
আগেই উল্লেখ করা হল ১৮৫২ সাল নাগাদ প্রকাশিত হয় প্রথম বাংলা উপন্যাস হানা ক্যাথেরিন মুলেন্স-এর রচিত ফুলমণি ও করুণার বিবরণ উপন্যাস। এই উপন্যাসটিকে আমরা কেবল একটা তথ্য হিসাবেই এখানে উল্লেখ করতে চাইছি। কারণ এ উপন্যাস মূলত আধা-সফল সাহিত্যপ্রয়াস। কাহিনির ছায়া বিদেশি। রচয়িতাও অভারতীয়। এবং রচনার উৎকর্ষ সেদিনের উপন্যাসের কাঠামোগত সব শর্তকে পূরণ করেনি। বাংলায় লিখিত প্রথম সার্থক উপন্যাস প্যারীচাঁদ মিত্রের (টেকচাঁদ ঠাকুর) রচিত আলালের ঘরে দুলাল, যা ১৮৫৮ সালে প্রকাশিত হয়। ১৮৬১ সাল প্রকাশিত হল হুতোম প্যাঁচার প্রথম নকশা। যার শিরোনাম ছিল চড়ক। অর্থাৎ ১৮৬৫ সালে বঙ্কিমচন্দ্র রচিত দুর্গেশনন্দিনী উপন্যাসের আগেই বাংলায় সার্থক উপন্যাস লেখা শুরু হয়। যদিও দীর্ঘ কলোনিয়াল সময়কালে বাংলাভাষার প্রথম নভেল হিসাবে দুর্গেশনন্দিনী–কেই মান্যতা দেওয়া হয়েছে।
বাংলায় ছাপাখানা আসার ফলে নাগরিক হিন্দু সমাজের শিক্ষিত অংশ, যাঁরা ততদিনে ইংরাজি সাহিত্যের আস্বাদ পেয়ে গিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে ইংরাজি উপন্যাসের প্রতি একটা স্বাভাবিক ঝোঁক তৈরি হয়। বঙ্কিমচন্দ্রের সাহিত্য প্রতিভা সেদিন নাগরিক হিন্দু সমাজের কাছে জাতীয়তাবাদের প্রতীক হয়ে উঠেছিল। অথচ মজার ব্যাপার এই যে, সেই সাহিত্যের খোলনলচে সবটাই সাদা চামড়ার শাসকের হাতঘুরে আমাদের কাছে এসেছে।
মুদ্রণযন্ত্রের আর্বিভাবের ফলে আঠেরোশো শতকের শেষ দিকে সংবাদপত্র, সাময়িক পত্রিকা ইত্যাদির প্রকাশ নাগরিক বাঙালিদের অন্যতম উদ্যোগ ও সামাজিক কর্তব্য হয়ে ওঠে। সেই ঋতুতে যেমন মহাকাব্য কিংবা পুরাণের অনুবাদ হয়েছে, তেমনই সাময়িক পত্রিকার সূত্র ধরে প্যারীচাঁদ মিত্র কিংবা হুতোমি নকশার নজির আমাদের হাতের কাছে রয়েছে। যা আজকের আখ্যানতত্ত্বের নিরিখে উপন্যাস। কিন্তু সেই নকশাগুলো বা সমাজজীবন থেকে উঠে আসা প্যারোডিগুলো আমাদের এলিট সমাজের কাছে সেদিন যথেষ্ট মার্জিত বোধ হয়নি। আর্নেস্ট বিনফিল্ড হ্যাভেল এবং অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের যৌথতায় গড়ে ওঠা বঙ্গীয় শিল্পকলা আন্দোলনের বিপরীতে অতুল সুর ও হেমেন্দ্রনাথ মজুমদারের জুবিলি আর্ট অ্যাকাডেমির দর্শনগত যে ফারাক, যে দূরত্ব লক্ষ করা যায়, কালীপ্রসন্ন সিংহ কিংবা প্যারীচাঁদ মিত্রের লেখনীর সঙ্গে দুর্গেশনন্দিনী-র ফারাক তার চেয়ে ন্যূন নয়। তখন ভিক্তোরিয়ান মূল্যবোধে ভাসছে নব্যবঙ্গ সমাজ। পাঁচালি, কথকতা, খেউরের নাগরিকত্ব প্রমাণের দায় কেউ নেওয়ার ছিল না সেদিন। আর থাকলেও তার সমালোচনার ঝাঁঝ এত কড়া ছিল যে, বাংলার প্রাচীন লোকসাহিত্যকে সেদিন অশ্লীলতার দায়ে দুষ্ট মনে হয়েছিল ইংরেজি কেতার বাবুসমাজের।
অথচ, এমনটা হওয়ার ছিল কি? ‘বিদ্যাসুন্দর’ কিংবা ‘অন্নদামঙ্গল’-এ কি আমরা খুঁজে পাই না আধুনিক উপন্যাসের বীজ? ক্যাথলিক বা প্রোটেস্ট্যান্টরা কি কল্পনা করতে পারবেন আমাদের কবি ভোলানাথ শিবকে তাঁর স্ত্রী অন্নপূর্ণার কাছে ভিখারি বানিয়ে ছেড়েছেন? কিংবা তারও আগে সেই মঙ্গলকাব্যের সময়কে ভাঁড়ু দত্ত আর মুরারী শীলের চরিত্রচিত্রণ যখন মুকুন্দরাম এঁকেছেন, তখন কোথায় ছিল ছাপাখানা আর কোথায় ছিলেন কারভেন্তেস? অথবা চাঁদ বেনের মতো এক আদ্যোপান্ত ঔপ্যনাসিক চরিত্র? সেদিনের ইওরোপের কল্পনার অতীত সেই কাহিনি। এক দেবী মর্ত্যে তাঁর পুজো পাওয়ার উদ্দেশ্যে কীভাবে মানুষের বৈরী হয়। আর সে মানুষ চোদ্দ ডিঙা ডুবিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েও নতিস্বীকারে বাধ্য হয় না। এই উপন্যাসের উপজীব্যতা আমাদের ঔপনিবেশিক শাসকদের কাছ থেকে শিখতে হবে? রামমোহন কিংবা বিদ্যাসাগরের গদ্যসাহিত্য সেদিন যদি আমাদের পাঁচালি, পালাগানকে মান্যতা দিত, তবে কে বলতে পারে সেদিন বাংলাসাহিত্যে সূর্যোদয় হত না?
দুর্গেশনন্দিনী লেখার পরে বৈদ্যবাটিতে দু দিন ধরে বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর সদ্য লিখিত নভেলটি পাঠ করেন। সেদিনের সেই আয়োজনে শ্রোতাদের মধ্যে যেমন ছিলেন ভাটপাড়ার সংস্কৃজ্ঞ পণ্ডিতদের দল, তেমনই ছিলেন ইঙ্গবঙ্গ সমাজের তরুণ প্রতিনিধিরা। বঙ্কিমচন্দ্রের ছোট ভাই পূর্ণচন্দ্রের স্মৃতিকথা থেকে আমরা জানতে পারি পাঠ শেষে বঙ্কিমচন্দ্র অভ্যাগত পণ্ডিতদের জিজ্ঞেস করেছিলেন তাঁর লেখায় সংস্কৃত ব্যাকরণ বা শব্দের দুষ্টতা রয়েছে কি না? উত্তরে প্রত্যেকেই বলেছিলেন সাধু। সাধু। এর মধ্যে একজন আবার মন্তব্য করেন ব্যাকরণগত দুষ্টতা রয়েছে কি না তা তিনি খেয়াল করেননি। গল্পের গতি এত প্রখর যে, তিনি আপ্লুত ছিলেন। দ্বিতীয় একজনের মন্তব্য ছিল দু–এক জায়গায় তাঁর মনে হয়েছে ব্যাকরণগত কিছু দুষ্টতা থেকে গেছে, কিন্তু সেখানে ভাষা হয়েছে আরও প্রাণবন্ত। আরও মধুর। উল্লেখ থাক, আমাদের মঙ্গলকাব্যে দেশীয় শব্দের ব্যবহার পঁচাত্তর শতাংশ। তৎসম শব্দের ব্যবহার মাত্র পঁচিশ শতাংশ। উলটে বঙ্কিমের সমগ্র উপন্যাস রচনায় সংলাপ অংশ ব্যতীত সবটাই তৎসম নির্ভর। ইতিহাসের প্যারাডক্স হয়তো একেই বলা যাবে।
ভারতবর্ষে অতীতকাল থেকেই বহিরাগত জাতিরা এসেছে। রাজপাট করেছে। এবং সবচেয়ে বড় কথা আমাদের সঙ্গে তারা এমনভাবে মিলেমিশে গেছে, যে সবটা মিলিয়েই তৈরি হয়েছে ভারতীয় সংস্কৃতি। সেই সংস্কৃতিতে যেমন কাশীর বিশ্বনাথ মন্দির রয়েছে, তেমনই রয়েছে কুতুবমিনার। রয়েছে বোদ্ধগয়া। একের থেকে অন্যকে বিচ্ছিন্ন করার আজ আর কোনও উপায় নেই। কিন্তু ইংরেজরা এ দেশে মোটের ওপর দেড়শো বছর শাসনক্ষমতায় থাকলেও আমাদের প্রাত্যহিকতায় তারা মিলে যেতে পারেনি। চায়ওনি। এর কারণ বহুবিধ। এখানে সে আলোচনার অবকাশ নেই। আমরা ইংরেজ শাসনের খোলসটা নিতে পেরেছি মাত্র। শাঁসটা চিরকালের জন্য অধরা থেকে গেছে। গৌতম বুদ্ধ তাঁর বাণী আর উপদেশ দিয়েছিলেন পালি, প্রাকৃতে। সেই উপাদানে পুষ্ট হয়েছে পরবর্তীকালে ভারতের আঞ্চলিক ভাষাগুলি। কিংবা বাবরনামা বইটি চাঘতাই ভাষায় রচিত। সেই ভাষার কোনও অবশেষ পরবর্তী দুশো বছরে আর পাওয়া যায়নি। পরিবর্তে খড়িবলি ভাষা থেকে হিন্দি আর উর্দুর মতো সম্পূর্ণ কৃত্রিম দুই রাষ্ট্রভাষার উদ্ভব ঘটানো হয়েছিল ধর্মীয় মেরুকরণের কারণে। ইংরাজি ভাষার সঙ্গে আমাদের তেমন কোনও সম্পর্ক কখনও গড়ে ওঠেনি। এই না-বনিবনার কারণ প্রসঙ্গে দেবেশ রায় আমাদের জানিয়েছেন:
ইংরেজের কাছে সংস্কৃতি আলাদা উপকরণ ছিল না। ইংরেজের সংস্কৃতি ছিল তার সাম্রাজ্যনীতিরই অপরিহার্য অংশ আর সে-কারণেই ইংরেজের পক্ষে সম্ভব ছিল না শতাব্দীব্যাপী গর্ভধারণ। ভারতীয় সংস্কৃতির ওপর ইংরেজ সংস্কৃতির সেই আরোপকে তুলনা করা যায় ধর্ষণের সঙ্গেই মাত্র— সে–ধর্ষণের ফলে গর্ভাধান হতে পারে বটে কিন্তু সে ভ্রূণ মানবিক শারীরিক নিয়মেই কেবল বড় হয়ে ওঠে না, শরীরের বিকারের নিয়মেও বেড়ে যায়।[3]
দক্ষিণারঞ্জনের সিদ্ধান্তকে মান্যতা দিলে ইংরাজি ‘নভেল’র সঙ্গে বাংলার ‘কথা’র ফারাক খুব স্পষ্ট। তিনি ‘কথা’ প্রসঙ্গে রূপকথা, পুরাণকথা, কথকতা ইত্যাদির উদাহরণ দিয়েছেন। ফলে তাঁর মতে ‘কথাশিল্প’কে যেমন নভেল বা উপন্যাস বলা ভাষার ব্যুৎপত্তিগত দিক থেকে ভ্রান্তি, ঠিক তেমনই ‘কথাশিল্পী’ আর ‘ঔপন্যাসিক’ তর্জমায় এক নয়। অন্তত বাংলার দীর্ঘকালের লৌকিক সাহিত্যের নিরিখে। দক্ষিণারঞ্জন এমন মন্তব্য করলেও সৃজনশীল গদ্যসাহিত্যকে কিন্তু বহু সাহিত্যপণ্ডিত ও প্রাবন্ধিক এযাবৎকাল ‘কথাসাহিত্য’ বলে আসছেন। আর গত প্রায় একশো বছর ধরে আমরা উপন্যাসের জাত নির্বিচারে ‘কথাশিল্পী’, ‘কথাকার’, ‘কথাসাহিত্যিক’ এমন বিশেষণ ব্যবহার করে চলেছি। ফলে আজ আর আমাদের ‘কথা’ শব্দকে কথকতা কিংবা রূপকথার বন্ধনীতে বেঁধে রাখার জো নেই। আমরা কথাসাহিত্য বলতে অবশ্যই উপন্যাসকে বোঝাব। আমাদের দেশজ উপন্যাস।
এই প্রসঙ্গে আমরা আর একটু এগিয়ে গিয়ে বলতে চাই লোকসাহিত্য, লৌকিক কাহিনি যে কোনও সমাজের মূল জীবনস্রোত। তাকে আগ্রাহ্য করে গড়ে ওঠা সাহিত্যের পাঠ মূলত বিনোদনমূলক। ফলে তার গায়ে জীবনযাপনের ছাপটা তেমন গাঢ় হয় না। যে কারণে আমাদের একজন মূলধারার সর্বজনগ্রাহ্য ঔপন্যাসিকের অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে ১৯০৭ সাল অবধি। যে বছর ভারতী পত্রিকায় প্রকাশিত হয় শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বড়দিদি উপন্যাস। যার খোলসটা বিদেশি। যার কাহিনিবিন্যাস ইংরাজি নভেলের অণুকরণ। কিন্তু তার বিস্তার, তার প্রভাব স্থানিক জীবনের গভীরে প্রোথিত।
বাংলা উপন্যাস-সাহিত্যের যেটি মূল প্রবাহ বা মেরুদণ্ড তার সূত্রপাত যদি বঙ্কিমচন্দ্র থেকে শুরু হয়ে থাকে, তবে তা রবীন্দ্রনাথ হয়ে শরৎচন্দ্র অবধি আমাদের পৌঁছে দেয়। বাংলা উপন্যাসের এটাই সর্বমান্য মাইলস্টোন। কিন্তু আমরা আমাদের আলোচনার শুরুতেই ঘোষণা করেছি যে এই মূল প্রবাহের আবরণ, ফর্ম, প্লট, কাহিনি বিন্যাস সবকিছুই ইংরাজি সাহিত্য থেকে আমরা যেমন গ্রহণ করেছি নির্দ্বিধায়, ঠিক তেমনই অশ্লীলতার দোহাই দেখিয়ে সেদিন মান্যতা দিইনি প্যারীচাঁদ মিত্র কিংবা কালীপ্রসন্ন সিংহকে। আমাদের এই পর্বের আলোচনায় আমরা দেখতে চাইছি বঙ্কিমচন্দ্রের সরণি বেয়ে বাংলা উপন্যাসের ধারাবিবরণ স্থির না করে আমরা যদি প্যারীচাঁদ আর কালীপ্রসন্নকে সূচনাবিন্দু ধরে বঙ্কিমচন্দ্র>রবীন্দ্রনাথ>শরৎচন্দ্রের সমান্তরাল মাইলস্টোনের কল্পিত পথ খুঁজতে চাই, তাহলে সেটা কোথায় আমাদের নিয়ে যায়? তার আগে আমরা একবার আলালের ঘরের দুলাল আর হুতোমপ্যাঁচার নকশা-র কুষ্ঠি বিচার করে নিতে চাই।
আলালের ঘরের দুলাল–এর রচনা ১৮৫৮ সালে। বঙ্কিমচন্দ্রের প্রথম উপন্যাসের চেয়ে সাত বছর আগে। এই উপন্যাসে দেশি এবং তদ্ভব শব্দের ব্যবহার যেমন স্বতঃস্ফূর্ত, তেমন বিন্যাসে স্থানিকতাকে প্রাধান্য দেওয়ায় আমাদের দেশকালের জলহাওয়ায় পুষ্ট হয়েছে এর কাহিনি। নভেলের নায়ক মতিলালের বিপরীতে ঠকচাচা চরিত্রটি এবং তার বুকনি এমন সাবলীল আর বাস্তবধর্মী যে কালে–কালে এই উপন্যাসের ভাষা হয়ে উঠেছে বাংলাভাষার বিশিষ্ট এক ভাষাবিন্যাস। যার সঙ্গে বিলেতফেরত বাংলার কিংবা সংস্কৃতের আলোয়ান গায়ে তৎসম কাঁটায় বিদ্ধ মূলধারার বাংলাভাষার কোনও মিল নেই। পণ্ডিতেরা এই ভাষাকে পরবর্তী সময় ‘আলালী ভাষা’র তকমা দিয়ে শিক্ষিত সমাজ থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন। এই নভেলের আবরণ বিদেশি। কিন্তু তার আভরণ খাঁটি স্বদেশি। তার চরিত্রচিত্রণ, সংলাপ ও প্রকৃতির বর্ণনা কোথাও স্থানিকতা থেকে বিচ্যূত নয়। প্যারীচাঁদের মহানতা এখানেই। ধীমান পাঠকের স্মৃতি উসকে তার সামান্য নমুনা:
ঠকচাচা। মুইবি সাতে সাতে থাক্বে, মোকে আদালত, মাল, ফোজদারি, সৌদাগিরি কোন কামই ছাপা নাই। মোর শোনাবি এ সব ভাল সমজে। বাবু! আপসোস এই যে, মোর কারদানি এ নাগাদ নিদ যেতেচে, লেফিয়ে লেফিয়ে জাহের হল না। মুই চুপ করে থাকবার আদমি নয়— দোশমন পেলে তেনাকে জেপটে কেমড়ে মেটিতে পিটিয়ে দি— সৌদাগরী কাম পেলে মুই রোস্তম জালের নাফিক চল্ব।[4]
এরপর আসে কালীপ্রসন্ন সিংহ মহাশয়ের হুতোমপ্যাঁচার নকশা। ১৮৬১ সালে প্রথম চড়ক নকশা প্রকাশিত হয়। খোদ কলকাতা শহরের ফুলবাবুদের চরম অস্বস্তিজনক এই নকশা সেদিন তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে। কালীপ্রসন্ন সিংহের মতো মানুষকে এই রচনার জন্য একটা আড়াল নিতে হয়েছিল। কারণ পুরো বাবুসমাজকে কশাঘাত করতে গিয়ে তিনি নিজেকেও ব্যঙ্গ করতে ছাড়েননি। এইসব নকশা কি কেবল স্যাটায়ারধর্মী ছিল? তা নয়। উনিশ শতকের কলকাতার খুঁটিনাটি, মানুষের স্বভাব-চরিত্র, ইতিহাসের গতিমুখ, সিপাহি বিদ্রোহ কিংবা আওয়ধের নবাব ওয়াজেদ আলির কলকাতায় নির্বাসন, সবকিছু উঠে এসেছে নির্মোহ এক দৃষ্টিতে। খুব দুঃখের কথা, পরিতাপের বিষয় হুতোমপ্যাঁচার নকশাগুলো বাংলা উপন্যাস সাহিত্যের মিউজিয়ামে স্থান পেয়েছে। সংখ্যাগুরু ইংরেজ তোষণকারী বাবুসমাজ বিষবৃক্ষ নিয়ে উত্তাল হয়েছেন। বিতর্ক বাঁধিয়েছেন চোখের বালি, নষ্টনীড় কিংবা দেবদাস-কে কেন্দ্র করে। আর সুকৌশলে বাংলা উপন্যাসসাহিত্য থেকে মুছে দিয়েছেন টেকচাঁদ কিংবা হুতোমপ্যাঁচাকে। মহাভারতের অনুবাদক হিসাবে সেদিন কালীপ্রসন্নকে উঁচুজাতের হিন্দুসমাজ, ভুঁইফোড় বাবুসমাজ সামান্য সম্মানটুকু থেকে বঞ্চিত করতে চেয়েছিলেন। বাংলা ভাষায় সৎ সাহিত্যকে এইভাবে তার জন্মলগ্ন থেকে ঘরের কোণে মাথা কুটে মরতে হয়েছে।
বাঙালির ঘরে-ঘরে বিষবৃক্ষের চারা রোপণের সম্পর্কে সতর্কতা যেমন বঙ্কিমচন্দ্র দিতে পেরেছিলেন, তেমন অথরিটি থেকেও ছিল না কালীপ্রসন্ন সিংহের। কিন্তু যে সাহিত্য সমাজে অন্তর্ঘাত সৃষ্টি করতে চায়, সেই সাহিত্যকে কি দলে-পিষে মেরে ফেলা যায়? ইতিহাস তার সাক্ষী। তার সাক্ষী বাংলা সাহিত্যের পাঠকসমাজ। আমরা কালীপ্রসন্নের সাহিত্যকীর্তির সামান্য নমুনা এখানে রাখতে চাইছি সময়ের কতটা অগ্রবর্তী ছিলেন এই সাহিত্যকার তার নির্দশন হিসাবে:
যে সকল বাবুদের খড়দ, পেনিটি, আগড়পাড়া, কামারহাটী প্রভৃতি গঙ্গাতীর অঞ্চলে বাগান আছে, আজ তাঁদেরও ভারী ধুম। অনেক জায়গায় কাল শনিবার ফলে গেচে, কোথাও আজ শনিবার; কারু কদিনই জমাটি বন্দোবস্ত— আয়েস ও চোহেলের হদ্দ! বাগানওয়ালা বাবুদের মধ্যে কারু কারু বাচ খেলাবার জন্য পান্সী তইরি, হাজার টাকার বাচ হবে। এক মাস ধরে নৌকার গতি বাড়াবার জন্য তলায় চরবি ঘষা হচ্চে ও মাঝিদের লাল উর্দ্দী ও আগু পেচুর বাদসাই নিশেন সংগ্রহ হয়েচে— গ্রামস্থ ইয়ার দল, খড়দর বাবুরা ও আর আর ভদ্রলোক মধ্যস্থ![5]
ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুর চার বছর পরে ১৯২৩ সালে প্রকাশিত হয় ডমরুচরিত। বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর সাহিত্যসৃষ্টিতে কমলাকান্তের দপ্তর সংযোজন করেছিলেন সত্যি। কিন্তু উপন্যাসের বিষয় হিসাবে তিনি কমলাকান্তকে বিচার করতে পারেননি। তাঁর ঔপনিবেশিক দৃষ্টিতে আচ্ছন্ন ছিল বাংলার অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত সমাজজীবন। স্যাটায়ার বা শ্লেষাত্মক নাগরিক উপন্যাস নকশাধর্মিতায় সেদিন নভেল পদবাচ্য হতে পারেনি। ডমরুচরিত সেই দুর্ভাগ্য নিরসন করে হয়ে ওঠে খাঁটি বঙ্গজ এক নভেল। যার পরতে পরতে মাটির গন্ধ, দেশজ সৃজনশীলতা। ফলে আমরা যে সমান্তরাল রেখাটা তৈরি করতে চাইছি, যেটাকে এখন বিকল্প এক ব্যাখ্যানতত্ত্ব হিসাবে দাঁড় করানো যায় তার পরবর্তী মাইলস্টোন ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়। ঔপনিবেশিক সাহিত্যপাঠের অভ্যাস আমাদের সাহিত্যপাঠের অভিরুচি তৈরি করলেও সেই অভিরুচি থেকেই সৃজিত হওয়া উচিত দেশজ সাহিত্য। ইতিহাসের নির্দেশ এই। আজ যখন আমরা স্প্যানিশ সাহিত্যের বিপুল সংগ্রহের দিকে তাকাই তখন দেখতে পাই মূল স্প্যানিশ ভূখণ্ডটিকে আকারে-প্রকারে, অভিনবত্বে ছাড়িয়ে গেছে হিস্পানিয়ান সাহিত্য। ঔপনিবেশিক স্প্যানিশ সাহিত্য। বাংলাভাষার দুর্ভাগ্য সে তার হাজার বছরের সাহিত্যের ইতিহাস থেকে এখনও শিক্ষা নিতে পারেনি। বরং ঔপনিবেশিকতায় আচ্ছন্ন বাংলার সাহিত্যিক, প্রকাশক, পাঠক, সমালোচক সকলেই।
প্যারীচাঁদ মিত্রের পরবর্তী দীর্ঘ সময়কাল তাঁর অনুসৃত পথের কোনও পথিক আমরা পাইনি। শরৎচন্দ্র তাঁর কাহিনি রচনায় গ্রামজীবনকে প্রাধান্য দিলেও তাঁর চরিত্রেরা সকলেই একই ছাঁচে গড়া। দেবেশ রায়ের পর্যবেক্ষণ:
শরৎচন্দ্রের সবচেয়ে শক্তিশালী উপাদান সংলাপ। অথচ, সে-সংলাপ চরিত্রের ব্যক্তিত্বে তৈরি নয়, চরিত্রের শ্রেণী দ্বারা তৈরি। বড়বৌয়ের যেমন কথা বলা উচিত সব উপন্যাসের বড়বৌয়েরাই তা বলে, কখনো-বা সেই বড়বৌ মেজদিদি, কখনো বড়দিদি, কখনো বৌদিদি।[6]
প্যারীচাঁদ মিত্রের স্বজন হওয়ার উপকরণ ছিল জগদীশ গুপ্তের মধ্যে। অন্তত তাঁর অসাধু সিদ্ধার্থ কিংবা লঘুগুরু উপন্যাসে তার লক্ষ্মণ আবিষ্কার করা যায়। কিন্তু তিনি স্বাভাবিকত্ব ছেড়ে চরিত্রের মানবিক দোষ–ত্রুটিগুলোকে কাহিনির অবতলে নিয়ে এলেন। যা ফ্রয়েড এবং তার মনোবিদ্যার প্রভাব। লঘুগুরু-র মনস্তত্ত্ব রবীন্দ্রনাথের সমালোচনার কারণ ছিল মূলত তার বাস্তবতার জন্য। ফলে আমাদের অপেক্ষা করতে হয় একজন তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য। এবং তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশাপাশি আমরা পেয়ে গেলাম আরও দু জন যুগন্ধর অথরকে। তাঁদের একজন যদি হন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, অন্যজন সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ। একটা পদ্মানদীর মাঝি-র জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হল এই সেদিন ১৯৩৪ সাল অবধি। ধাত্রীদেবতা এল ১৯৩৯ সালে। গণদেবতা ১৯৪৩ সালে। আর লালসালু যখন প্রকাশ পেল তখন দুই বাংলা আলাদা হয়ে গেছে। আমরা ঢোঁড়াইয়ের জীবনকথা জানলাম তারও পরে।
বঙ্কিমচন্দ্র থেকে ঔপনিবেশিক দৃষ্টিকাতর উপন্যাস রচনার চল ১৯৪০ দশকে এসে মহানদীতে পরিণত হয়েছে। সেই স্রোতকে মূল স্রোত হিসাবে ধার্য করে বাংলা উপন্যাসের গতি রুদ্ধ হলে তার নতুন দিনের ভগীরথ হলেন তিন বন্দ্যোপাধ্যায় ও ভাদুড়ি। কিন্তু পরিতাপের বিষয় কালের স্রোতে সেই ধারাও কেমন যেন মূলধারার সঙ্গে মিশে গেল। সরে গেল তার নিজস্ব নদীখাত থেকে। আমরা পুনরায় বোধহয় বিচ্যূত হলাম নিজস্ব উপন্যাসের প্রকরণের সন্ধানে।
তিন বন্দ্যোপাধ্যায় ও ভাদুড়ির সৃজনপথে পরবর্তী সময়ে সকলে যে পা রাখেননি তার উদাহরণ ধুর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় (‘স্ট্রিম অফ কনসাসনেস্’), কমলকুমার মজুমদার (ফরাসি সৌরভ), অমিয়ভূষণ মজুমদার (বাংলার নবজাগরণ), সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ (তাঁরও ফরাসি প্রেম: পল এলুয়ার)। সাহিত্যের ভাষা আর বাগধারা ব্যবহারের বিশিষ্টতার সত্ত্বেও এঁরা কেউই তাঁদের জীবিতকালে বাংলা মূলধারার সাহিত্যে জোয়ার আনতে পারেননি। যেমনটা পরবর্তী সময় পারলেন নবারুণ ভট্টাচার্য কিংবা আখতারুজ্জামান ইলিয়াস। তবে বাংলা সাহিত্যে তাঁদের অবদান ব্যর্থ হয়নি। বাংলা উপন্যাসের মূলধারা আজ যখন বদ্ধ ডোবায় অবনত হয়েছে, তখন ভিন্নধারার রচনাকারেরা ধুর্জটিপ্রসাদ, কমলকুমার, অমিয়ভূষণ এবং ওয়ালীউল্লাহকে তাঁদের চর্চায় রেখেছেন। তাঁদের মধ্যেকার বিদেশিপনা আর রেনেসাঁসের প্রকরণগুলোকে বাদ দিয়ে কেবল তাঁদের দেশজ উপাদান, পুরাণকথা আর ইতিহাসচেতনাকে মান্যতা দিয়েছেন পরবর্তী প্রজন্মের সাহিত্যিকেরা। ফলে বঙ্কিমচন্দ্র থেকে সৃষ্ট বাংলা উপন্যাসের আজ যে বন্ধ্যাদশা, তার বাইরে প্যারীচাঁদ আর হুতোমপ্যাঁচাকে রেফারেন্স পয়েন্ট মেনে বর্তমান বাংলা উপন্যাসের এক বিকল্প বহমানতা দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। আমরা সেই উপন্যাসের ভিতরমহলে এবার প্রবেশ করব। তার আগে আমরা এই অধ্যায়ের বৃত্তটি সম্পূর্ণ করে নিতে চাই।
উপন্যাসের আঙ্গিক, চরিত্রনির্মাণ এবং ঘটনাপ্রবাহকে আমরা আমাদের ভাষায় ব্যপক অর্থে কথাসাহিত্য বলতে চাইছি। যার সূত্রপাত মঙ্গলকাব্য থেকে। যেখানে পয়ারের পায়ে-পায়ে ছিল ‘প্রবন্ধ লাচারী’। সেখান থেকে আমাদের দেশজ উপন্যাসের বীজ বপন শুরু এমন প্রস্তাব হয়তো আর নিন্দনীয় হতে পারে না। নন্দিত নাইবা হওয়া গেল, নতুনভাবে কিছু ভাবনার, তর্ক তোলার অবকাশ কি রইল না? আর তা যদি গ্রহণযোগ্য হয় (অর্থাৎ বিতর্ক), তবে তার পথ ধরে অন্নদামঙ্গল (নামে মঙ্গল থাকলেও এই আখ্যান মঙ্গলকাব্যের থেকে পৃথক), বিদ্যাসুন্দর হয়ে আমরা প্রবেশ করছি আলালের ঘরে। হুতোমের ব্ল্যাক হিউমার উপাখ্যানে। সেই রাস্তা নবারুণ, সুবিমল হয়ে পৌঁছে গেছে অন্য এক বিকল্প পথের সন্ধানে।
সেই পথ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা পরবর্তী পর্বে।
[ক্রমশ]
[1] বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষৎসভার বার্ষিক অধিবেশনে পঠিত। বৈশাখ ১৩০২। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। রচনাবলী, ১২৫তম রবীন্দ্রজন্মজয়ন্তী উপলক্ষ্যে প্রকাশিত সুলভ সংস্করণ, চতুর্থ খণ্ড। পৃঃ ৬৬৫–৭৬। বিশ্বভারতী। কলকাতা। পুনর্মুদ্রণ পৌষ ১৪০২।
[2] বঙ্গোপন্যাস বাঙ্গালার গীতকথা ভূমিকা। দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার। ভূমিকা— বাংলার কথা সাহিত্য বঙ্গোপন্যাস ঠাকুরদাদার ঝুলি। পৃঃ ৬। মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স প্রাঃ লিঃ। কলকাতা। ষোড়শ সংস্করণ।
[3] বাংলা উপন্যাস। দেবেশ রায়। উপন্যাস নিয়ে। পৃঃ ১৫। দে’জ পাবলিশিং। কলকাতা। দ্বিতীয় সংস্করণ, জানুয়ারি ২০০৩।
[4] আলালের ঘরের দুলাল। টেকচাঁদ ঠাকুর। চিরায়ত সাহিত্য সংগ্রহ। সম্পাদনা কাঞ্চন বসু। প্রথম খণ্ড। পৃঃ ২০১। রিফ্লেক্ট পাবলিকেশন। কলিকাতা। পঞ্চম মুদ্রণ ১৯৯৫।
[5] হুতোম প্যাঁচার নক্সা: প্রথম ভাগ। কালীপ্রসন্ন সিংহ। চিরায়ত সাহিত্য সংগ্রহ। সম্পাদনা কাঞ্চন বসু। প্রথম খণ্ড। পৃঃ ৯৩। রিফ্লেক্ট পাবলিকেশন। কলিকাতা। পঞ্চম মুদ্রণ ১৯৯৫।
[6] বাংলা উপন্যাস। দেবেশ রায়। উপন্যাস নিয়ে। পৃঃ ৩২। দে’জ পাবলিশিং। কলকাতা। দ্বিতীয় সংস্করণ, জানুয়ারি ২০০৩।
বাংলা উপন্যাসের ইতিহাসকে অণুবীক্ষণযন্ত্রের নীচে ফেলে এই যে ভিন্ন চোখের বিচার- তা খুবই প্রয়োজনীয়। এর সঙ্গে যুক্ত থাকছে বাঙালির সমাজ বিবর্তনের ইতিহাসও। খুবই মূল্যবান লেখা। আগ্রহ নিয়ে পরের পর্বগুলির জিন্য অপেক্ষা করব।
অনেক কিছু জানলাম। ধন্যবাদ।