বিষাণ বসু
চিকিৎসক, প্রাবন্ধিক, গদ্যকার
দেখুন, বিচার-টিচার সোজা ব্যাপার নয়। কবে যেন কে একটা বলেছিলেন, ‘জাস্টিস ডিলেইড ইজ জাস্টিস ডিনায়েড।’ তাই বলে কি সবকিছু অমন সাত-তাড়াতাড়ি করে বসা যায়!!
গুরুদেব বলেছিলেন, ‘বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে।’ আর কান্নার কথা বললেই চন্দ্রবিন্দু-র ওই গানখানা, ‘আমাদের ছাদে কে বসে বসে কাঁদে/ দেখেছিল ঘুঘু আহা পড়ে গেছে ফাঁদে’। কাজেকাজেই, ফাঁদে না পড়তে চাইলে, বাকি কথা বাদ দিন, এমনকি বিচারের বাণী-কেও এদিক-ওদিক ঘাপটি মেরে কাঁদতে দেখলে জাস্ট চেপে যাওয়াই ভালো।
এমন বিধিসম্মত সতর্কীকরণ সারা হলে বলি, ডাক্তারির পোস্ট-গ্রাজুয়েট ভর্তি পরীক্ষা (নিট-পিজি এন্ট্রান্স), তা বারকয়েক পিছিয়ে যাওয়া— পরীক্ষার ফলপ্রকাশের পর সেই তালিকা অনুসারে ভর্তির জন্য কাউন্সেলিং, সেও পিছিয়ে যাওয়া— সেই নিয়ে পরীক্ষায় সফল ছাত্রছাত্রীদের বিক্ষোভ— এই সব জটিল ব্যাপারস্যাপার বুঝতে চাইলে আগের ওই তিনটি উদ্ধৃতির ব্যঞ্জনা ধরতে পারা জরুরি। কিন্তু বর্ষশেষের খোঁয়ারি কাটাতে কাটাতেই বছর শুরুর হাফ-হপ্তা পার হয়ে যায়— এমতাবস্থায় এইসব অপ্রীতিকর কথাবার্তা নিয়ে আলোচনা শুরু করার মানে হয় না। তবু যদি কেউ এ নিয়ে জানতে আগ্রহী হন, তাঁদের জন্যে ব্যাপারটা সংক্ষেপে লিখে রাখি।
অতিমারি যে বিশেষ সঙ্কটজনক পরিস্থিতি সে নিয়ে তো তর্কের অবকাশ নেই। বিশেষত সঙ্কট এমন গভীর, তার মোকাবিলা এমনই চড়া সুরে বাঁধা, যেখানে যাবতীয় উৎসব-পার্বণ মায় কুম্ভমেলা অবধি অবাধে চলতে পারে— গণতন্ত্রের “উৎসব” তো চালাতেই হবে, ভোট, ভোটের প্রচার, বিজয়োল্লাস সবকিছু মিলিয়েই সে এক অপরিহার্য ও অনির্বচনীয় প্যাকেজ— কিন্তু পরীক্ষা-টরীক্ষা বাদ রাখা বাদে উপায় নেই।
এই বিশেষ ক্ষেত্রটিতে— অর্থাৎ ডাক্তারির পোস্ট-গ্রাজুয়েট এন্ট্রান্স— সেখানে তো ব্যাপারটা আরও ইন্টারেস্টিং, কেননা পরীক্ষা যাঁরা দেবেন, তাঁরা সকলেই ডাক্তার। পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট পরীক্ষায় বসার প্রাক-শর্ত পূরণ করার অর্থ, এঁরা ডাক্তারি পাশ করে এসেছেন। অতএব এও নিশ্চিত, এই অতিমারির সঙ্কটকালে তাঁদের অতিমারি-মোকাবিলার স্বার্থে বাড়তি ডিউটি করতে হয়েছে। এমতাবস্থায় হাসপাতালে ডিউটি করার চাইতে পরীক্ষার সেন্টারে দূরে দূরে বসানো কম্পিউটারের সামনে বসে পরীক্ষা দিতে গিয়ে তাঁদের সংক্রামিত হওয়ার আশঙ্কা বেশি— এমনটা ভাবার জন্যে কিঞ্চিৎ বাড়াবাড়ি কল্পনাশক্তির প্রয়োজন হয়। তবে একথা অনস্বীকার্য, সরকারবাহাদুরের কাছে আর যারই অভাব থাক, ওই বস্তুটির কমতি নেই। কল্পনাশক্তির।
জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে যে পরীক্ষা সম্পূর্ণ হয়ে কাউন্সেলিং ইত্যাদি কাজকর্ম সারা হয়ে এপ্রিল নাগাদ নতুন ছাত্রছাত্রী পোস্ট-গ্র্যাজুয়েশনে (এমডি/এমএস করতে) ভর্তি হন, পাছে-সংক্রমণ-ছড়িয়ে-পড়ে যুক্তিতে বছরের প্রথমার্ধে সে নিয়ে বিশেষ উচ্চবাচ্যই হল না। ঘোর অনিশ্চয়তা টালবাহানা ইত্যাদির পর তারিখ ঘোষণা হল। সে তারিখও বারদুয়েক পিছিয়ে যাওয়ার পর শেষমেশ পরীক্ষা হল। সেপ্টেম্বর মাসে। ফলও প্রকাশিত হল।
পরীক্ষা হবে কি হবে না, হলে তার তারিখ নিয়ে টালবাহানা, চূড়ান্ত অনিশ্চয়তা— এসবের মধ্যেই জুলাই মাস থেকে অবশ্য সুপ্রিম কোর্টে শুনানি চলছিল। পরীক্ষার আসন-সংখ্যা নিয়ে। কেননা সরকারবাহাদুর এ বছরেই ডাক্তারির পোস্ট-গ্রাজুয়েট আসনে নতুন সংরক্ষণ ব্যবস্থা চালু করতে চান। চালু ব্যবস্থা যা ছিল, তার ওপর সাতাশ শতাংশ ওবিসি সংরক্ষণ এবং দশ শতাংশ আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়াদের জন্য (ইকোনমিকালি উইকার সেকশন, সংক্ষেপে ইডব্লিউএস)।
শতাংশ ব্যবস্থার সমস্যা হল, সন্ধিবিচ্ছেদ করলে সেটি দাঁড়ায় (এক)শত এবং অংশ। অর্থাৎ আপনি খেয়ালখুশি মতো জুড়ে যেতে চাইলেও সেটি একশোর বেশি হয়ে গেলে মুশকিল। এক্ষেত্রে আবার আরও মুশকিল, সুপ্রিম কোর্ট কবে একটা রায় দিয়ে বসে আছেন, সংরক্ষণ হোক, কিন্তু মোট আসনের অর্ধেকের বেশি যেন সংরক্ষিত না হয়। এদিকে নতুন সংরক্ষণ ব্যবস্থায় ওবিসি ইডব্লিউএস জুড়লে পঞ্চাশ শতাংশ ছাপিয়ে সংরক্ষিত আসন মোট আসনের একেবারে দুই-তৃতীয়াংশে পৌঁছে যাচ্ছে। অতএব, বেশ কয়েকখানা পিটিশন দাখিল হল এবং মহামান্য সর্বোচ্চ আদালত সেই সব আবেদন মন দিয়ে শুনতে শুরু করলেন। আর এদেশে আদালতের নামে যে বদনামই দিন না কেন, তাঁরা ‘বিচার-বিবেচনা’-র পেছনে যথেষ্ট সময় দেন না বা রায় দেওয়ার ব্যাপারে তাঁরা খামোখা তাড়াহুড়ো করেন— এমন অভিযোগ কখনোই তুলতে পারবেন না। মাঝেমধ্যে মাঝরাতে দোকান খুলে বড় খদ্দেরের জন্যে বিশেষ বন্দোবস্ত করতে হয়, অতি তড়িঘড়ি রায় দিতে হয়— কিন্তু অমন এক্সেপশন তো নিয়মকে প্রমাণের স্বার্থেই, তাই না?
এদিকে আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া নিয়েও বিস্তর ক্যাচাল। প্রবলভাবে মেধাপন্থী হয়েও যাঁরা দেশের বিবিধ অসাম্য ও তজ্জনিত সামাজিক বঞ্চনা ইত্যাদি বিষয়ে সচেতন, তাঁরাও আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়াদের জন্য সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করতে পারেন না। সরকারবাহাদুরও আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়াদের নিয়ে ভাবতে বসলেন। বললেন, মাসে পঁচাত্তর হাজার টাকার নিচে (বার্ষিক আট লাখ) যাঁদের আয়, তাঁরা একেবারে হতদরিদ্র— তাঁদের জন্য সংরক্ষণ জরুরি। একটু অপ্রাসঙ্গিকভাবেই মনে করানো যাক, সরকারি হিসেব-নিকেশ ধরলে, গ্রামাঞ্চলে মাসে মোটামুটি হাজারখানেক আর শহরাঞ্চলে চোদ্দশো টাকার মতো আয় করতে পারলেই তিনি আর তেমন সরকারি খাতার গরীব নন এবং এই সংজ্ঞা গত এক দশকে বদলানোর কথা কেউ ভাবেননি।
এমতাবস্থায় মাসিক পঁচাত্তর হাজার অঙ্কটি ভাববিহ্বল করে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। যথারীতি সে নিয়েও আদালতে পিটিশন দাখিল হল। সরকারের কাছে মাননীয় বিচারপতি জানতে চাইলেন, ঠিক কোন হিসেবে এই মাসিক পঁচাত্তর হাজার টাকা আয়কে আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়ার মাপকাঠি ধরা গেল? প্রাথমিক তানাবানার পর সরকারপক্ষের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল জানালেন, নাহ্, তাড়াহুড়ো ভালো দেখায় না, একটু সময় নিয়ে গুছিয়ে উত্তর দেওয়া যাবে’খন। ব্যাপারটা নিয়ে মাসখানেক আলোচনা ভাবাভাবির পর সুচিন্তিত উত্তর দেওয়া হবে। এর আগেই অক্টোবরের শেষাশেষি যে কাউন্সেলিং শুরু হওয়ার কথা, তা স্থগিত হয়ে গিয়েছে। নভেম্বরে সলিসিটর জেনারেলের এমন সময় খাওয়া উত্তরের চোটে পুরোটা ঘেঁটে ঘ হয়ে গেল। কেননা, সরকার (বা আদালতে হাজির যেকোনও পক্ষ) মাসখানেক সময় চাইলে আদালতে তারিখ-পে-তারিখ-এর খেলায় সেটা কমপক্ষে দুমাসে দাঁড়ায় (এক্ষেত্রে নভেম্বরের যে কথাবার্তা হল, সে বিষয়ে পরবর্তী শুনানির তারিখ দাঁড়িয়েছে জানুয়ারির ছয় তারিখ)।
প্রত্যাশিতভাবেই পরীক্ষায় সফল হয়ে যাঁরা ভর্তির জন্যে উদগ্রীব, তাঁরা হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়ে পড়লেন। শুরু হল অবস্থান বিক্ষোভ। মূলত দিল্লিতেই। সরকারের ভাবনাচিন্তা নাকি দিল্লিতে হয়, মেডিকেল শিক্ষাও ব্যতিক্রম নয়। সব গুরুগম্ভীর ব্যাপার নিয়ে আলোচনা, এমনকি পরীক্ষার বন্দোবস্ত কাউন্সেলিং, সব ওখানেই। আশ্চর্যের ব্যাপার এই, দুদিন আগেই যে সরকার আদালতে জানালেন যে আদালতের সিদ্ধান্ত ছাড়া কাউন্সেলিং শুরু করাটা পরবর্তী ক্ষেত্রে বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে, অতএব আপাতত কাউন্সেলিং বন্ধ রাখাই ভালো— অবস্থান বিক্ষোভ শুরু হতেই সেই সরকার ছাত্রছাত্রীদের বললেন, তাঁরা যত দ্রুত সম্ভব কাউন্সেলিং শুরু করবেন, অবস্থান বিক্ষোভ যেন তুলে নেওয়া হয়। সরকারেরও বড় বালাই, কেননা ভর্তির অপেক্ষায় থাকা ছাত্রছাত্রীরা এতদিন কোনও না কোনও হাসপাতালে জুনিয়র ডাক্তার বা হাউসস্টাফ ছিলেন, তাঁদের অনুপস্থিতিতে পরিষেবা চালু রাখাটা সহজ নয়। সরকারের প্রতিশ্রুতি শুনে জুনিয়র ডাক্তাররা অবস্থান তুলেও নিয়েছিলেন, কিন্তু অচিরেই বোঝা যায়, সরকারবাহাদুর ভারতীয় রাজনীতির ঘরানা-অনুসারী প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন মাত্র— যে প্রতিশ্রুতি পূরণের সম্ভাবনা কতখানি, তা ভারতীয় নাগরিক মাত্রেই জানেন। অতএব অবস্থান বিক্ষোভ পুনরায় শুরু হয়।
এ তো গেল যাঁরা ভর্তি হতে পারেননি, তাঁদের কথা। মুদ্রার উল্টো পিঠের গল্পটাও জেনে নেওয়া যাক।
সকলের জ্ঞাতার্থে বলে রাখি, বিশেষজ্ঞ হওয়ার শিক্ষার যে পোস্টগ্র্যাজুয়েট ডাক্তারি ডিগ্রি— এমডি বা এমএস— তার সময়কাল তিন বছর। এই তিনটি বছর— ফার্স্ট ইয়ার, সেকেন্ড ইয়ার এবং থার্ড ইয়ার— তিন বছরে সংশ্লিষ্ট ছাত্র/ছাত্রীর কাজের ধাঁচ আলাদা। শুরুর দিকে রুটিন কাজ বেশি, শেষের দিকের কাজ অনেকখানিই বিষয় অনুসারী। নতুন ছাত্রছাত্রীরা না আসায় যাঁদের ইতোমধ্যে সেকেন্ড ইয়ার হয়ে যাওয়ার কথা ছিল, তাঁদের ফার্স্ট ইয়ার দশা কাটতে পারছে না। থার্ড ইয়ার, যাঁদের এই দুর্বিপাকে সেকেন্ড ইয়ার হিসেবেই ভাবা উচিত, তাঁদের পঠনপাঠনের সময়কাল প্রায় সম্পূর্ণ, তাঁরা ফাইনাল পরীক্ষায় বসবেন মাসতিনেক বাদে। জানুয়ারির শুরুতে শুনানি হয়ে মহামান্য সর্বোচ্চ আদালত হাতেগরম রায় দিলেও, সেই রায় অনুসারে পরবর্তী ধাপগুলো সম্পূর্ণ করা— কাউন্সেলিং ইত্যাদি শেষ করা— খুব চটজলদি হতে পারা মুশকিল। নতুন ব্যাচের ছাত্রছাত্রী খুব তাড়াতাড়ি এসে উঠতে পারবেন না। পরিস্থিতি এমন, আগামী মাসদুয়েকের মধ্যে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে পোস্ট-গ্রাজুয়েট ছাত্রছাত্রী বলতে থাকবেন শুধুই সেকেন্ড ইয়ার, যাঁদের আপনি ফার্স্ট ইয়ার বলেও ডাকতে পারেন।
এদেশের সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থা কেন এমন নড়বড়ে, যাকে স্বাস্থ্য-অব্যবস্থাও বলতে পারেন, সেই অব্যবস্থার পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। চিকিৎসকের ঘাটতি একটি বড় কারণ। সরকার এবং আদালত, দুইয়ের গতিমন্থরতার কারণে প্রায় পঁয়তাল্লিশ হাজার চিকিৎসক হাসপাতালে যোগদান করতে পারছেন না, যাঁদের অর্ধেকের বেশি ছাত্রছাত্রীরই আগামী তিন বছরের জন্যে শিক্ষানবিশ চিকিৎসক হিসেবে সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থায় থাকার কথা ছিল। এমন নয় যে এঁরা নতুন ম্যানপাওয়ার। পোস্ট-গ্রাজুয়েট এই আসনগুলি সংখ্যায় নির্দিষ্ট এবং পূর্বনির্ধারিত— অর্থাৎ হিসেবের মধ্যে এঁদের ধরা থাকে, চিকিৎসকের ঘাটতির যে কথা বললাম সেটা এঁদের উপস্থিতি ধরেই, এঁদের অনুপস্থিতিটা ঘাটতির মধ্যেও বাড়তি ঘাটতি। অতএব এক অপ্রতুল স্বাস্থ্যব্যবস্থার মধ্যে এঁদের ভর্তি হতে না পারাটা মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের সামিল।
এই বিক্ষোভ অবস্থানের কোনও খবরই আপনি রাখেননি। কেননা, মূলধারার মিডিয়া গাছে বেড়াল উঠলে বনদপ্তর কেমন করে তা নামাচ্ছেন সে খবর দিলেও এই খবর দেওয়ার সময় পাননি।
সরকারি তরফে সমাধানের সাম্প্রতিক প্রয়াস, অর্থাৎ সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ এই বিক্ষোভের উপর দিল্লি পুলিশের সহৃদয় লাঠিচালনার খবরও আপনি রাখেননি, যদিও শতাধিক ডাক্তারি ছাত্রছাত্রী কমবেশি আহত। যার মধ্যে একাধিক ডাক্তার-মেয়েও আছেন। পুরুষ-পুলিশ পুলিশ-সুলভ দাপটে নাকি তাঁদের চড়থাপ্পড় মেরেছেন, ধাক্কাধাক্কি করেছেন। যাকগে, সব খবর তো রাখা সম্ভব হয় না। আর এসব খবর রাখা সেভাবে জরুরিও নয়— ‘দাদাগিরি’-র ‘দিনকাল’ বিভাগে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হবে, এমন তো নয়!!
হাসপাতালে জুনিয়র ডাক্তাররা— এই টালবাহানার চোটে যাঁরা প্রায় ক্ষয়িষ্ণু শক্তিতে পরিণত— পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদে তাঁরা কর্মবিরতি শুরু করেছেন। জানেন কিনা, জানি না। জানলেও কতখানি সহমর্মিতা সহকারে জানতে চান, সে জানি না। ইদানীং এক আজব প্রজাতির পাবলিক দেখতে পাই চারপাশে, যাঁরা যেকোনও প্রকার প্রতিবাদ অবস্থান কর্মবিরতিকেই অনুচিত মনে করেন, নিজের কর্মক্ষেত্র বাদে দুনিয়ার কারও কোনও সমস্যা আছে বলে বিশ্বাস করেন না, নিজের সেক্টর বাদ দিয়ে দুনিয়ার সব্বাই কাজ না করে মাইনে পায় বলে বিশ্বাস করেন— এঁদের চোখে সরকারি কর্মী মাত্রেই, যাকগে— কিন্তু দুনিয়ার তামাম বিষয়ে অত্যন্ত জোর গলায় বক্তব্য রাখেন৷ আপনি যদি সেই প্রজাতিভুক্ত হন, তাহলে আপনি ঠিক কী বলবেন, সেটা অতি সহজেই অনুমেয়।
আর যদি ওই দলে না পড়েন, তাহলে মনে করাই— এদেশে ক্ষমতাসীন দল বা সরকারবাহাদুর পুলিশ পাঠাতে বা গাজোয়ারি করতে যতখানি পারঙ্গম, সমস্যার সমাধানে ততখানি নন। আধা-সামন্ততান্ত্রিক আধা-ঔপনিবেশিক শাসনব্যবস্থায় তেমনটিই হয়ত প্রত্যাশিত। কিন্তু বিগত বছরকয়েকে এই গাজোয়ারির যেন কিঞ্চিৎ বাড়াবাড়ি দেখা যাচ্ছে। এখনও ভাববেন না!!
উচ্চতর শিক্ষায় এমন ডামাডোল শুধুমাত্র ডাক্তারি শিক্ষার ক্ষেত্রটিতেই সীমাবদ্ধ থাকবে, এমন তো না। আজ চুপ থাকলে আপনার সেই নীরবতা পরবর্তী প্রজন্মের ভবিষ্যতে— আপনার সন্তানের ভবিষ্যতে— কেমন প্রভাব ফেলতে পারে, ভেবে দেখবেন? বাই দ্য ওয়ে, পোস্ট-গ্রাজুয়েট কম্পিটিটিভ পরীক্ষা নিয়ে এমন অব্যবস্থা কিন্তু শুধুমাত্র সরকারি শিক্ষাব্যবস্থা নয়, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ অথবা পাঁচতারা কর্পোরেট হাসপাতাল যেখানে অল্পবিস্তর পোস্ট-গ্রাজুয়েট সিট আছে সেখানেও পড়াশোনা-পরিষেবা ব্যহত করবে।
এমতাবস্থায় আপনি কী ভাববেন? আদৌ কিছু ভাববেন কি??