কৌশিক কর
কৌশিক কর বাংলা থিয়েটারের তরুণ প্রজন্মের অন্যতম সফল নির্দেশক ও অভিনেতা। দেবেশ চট্টোপাধ্যায়ের নির্দেশনায় দেবী সর্পমস্তা নাটক থেকে যাত্রা শুরু, রাজা লীয়র, চন্দ্রগুপ্ত ইত্যাদি নাটকে নিজের অভিনয়প্রতিভার সুস্পষ্ট ছাপ রেখে যান। মা এক নির্ভীক সৈনিক, পর্ণমোচী, নাটক ফাটক, হাঁসুলি বাঁকের উপকথা তার নির্দেশনায় অন্যতম মঞ্চসফল কয়েকটি প্রযোজনা। সাম্প্রতিক কালে সব ভুতুড়ে সহ বিভিন্ন সিনেমায় তাঁর অভিনয় সমালোচকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে। বর্তমানে তাঁর অভিনীত ও নির্দেশিত বেশ কয়েকটি সিনেমা মুক্তির অপেক্ষায়। হাউজফুল প্রেক্ষাগৃহ ও কৌশিক কর ইদানিংকালে প্রায় সমার্থক শব্দ হয়ে উঠেছে, নিজস্ব স্বতন্ত্র একটা ঘরানা তৈরি করে ফেলেছেন তিনি বিপুল দর্শকসমর্থন সঙ্গে নিয়ে।
মনে হল দায়িত্ব নিয়ে কিছু বলা উচিত। বেড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধার কাজটি আমি করে এসেছি বরাবরই। ছোটবেলা থেকেই ওই গল্পটি পড়ার পরই মনে হত একজন ইঁদুরও পারল না! তো আমার “I am that Rat” নীতিতে জীবনটাকে শুরু করে খারাপ ফল পাইনি। যাই হোক, ভণিতা সেরে আসি মূল কথায়।
সম্প্রতি অথৈ নাটকটি নিয়ে প্রচুর প্রচার/বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। সিটি, করতালি ও ভক্তকুলের ভালোবাসার চোটে নাকি প্রচুর দর্শক বিরক্তি বোধ করেছেন। সে নিয়ে তরজা চলছে।
আমার কথা হল, ক্ষতি কী!
২০১০ সালের আগে পর্যন্ত বাংলা থিয়েটারের হাল নিশ্চয়ই ভোলেননি সকলে। পশ্চিমবঙ্গে সেই সময়টা সিপিএম যাবে যাবে ও তৃণমূল আসবে আসবে এমন পরিস্থিতি। একটা হালকা বিভাজনের আবহাওয়া থিয়েটার মহলে। কে লাল, কে সবুজ এই বিভেদের আবহাওয়া থিয়েটারে পড়ে গেছে। মানের কাজ হওয়া বেশ কিছু বছর স্থগিত প্রায়। কারণ সকলেই রাজনৈতিক অস্তিত্বের লড়াই-এ ভুগছে। ২০১০-এ সরকারি রেপার্টরি তৈরি একটু স্বস্তি এনে দিল থিয়েটারের পরিবেশে। কিন্তু এখানেও রাজনৈতিক বিভাজন স্পষ্ট। কিন্তু মাথায় রাখতে হবে মিনার্ভা রেপার্টরিতে একসঙ্গে এতগুলো ভালো অভিনেতা এবং প্রায় ইচ্ছামতো পরিচালকের বাজেট পাশ, প্রচুর বিজ্ঞাপন ও প্রচার যেগুলো কোনও দল হিসাবে, না আর্থিক-না অভিনেতার জোগান হিসাবে অসম্ভব ছিল। ফলে বদলে গেল চেহারা। ফলত ২০১০ একটা ল্যান্ডমার্ক বাংলা থিয়েটারের ইতিহাসে। একটু ব্যাখ্যা করি কেন ২০১০ ও রাজা লীয়র।
কতগুলি বিশেষত্ব যেগুলি আলাদা করে কিছু কিছু নাটকের ক্ষেত্রে হলেও একসাথে এতগুলি ঘটনা ঘটেনি। সেগুলি হল…
১. বাংলা থিয়েটারে রাজা লীয়রের আগে কোনও নাটকে ১০ লাখের বাজেট ও সেই বাজেটের উপযুক্ত ব্যবহার খুব বেশি হয়নি।
২. এই থিয়েটারে তিন প্রজন্মের সেরা মানুষগুলি কাজ করেছেন একসাথে। লিজেন্ড শ্রী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও সুমন মুখোপাধ্যায়। পাশাপাশি সেরা নতুন রেপার্টরি টিম।
৩. এ নাটকে ভোরবেলা থেকে লাইন পড়ে কাউন্টার খুলতেই টিকিট উধাও হয়ে গিয়েছে (প্রথম ২০০ টাকা থিয়েটারে।)
৪. ১৫ জন সরকারি অভিনেতা মাইনে সহ প্রথম কাজ করেছেন দক্ষতা সহ এ নাটকে। সরকারি অভিনেতা (রেপার্টরি শিল্পী) খায় না গায়ে মাখে এটাই জানত না অনেকেই। যাদের অনেকেই আজ প্রতিষ্ঠিত রেপার্টরির আনুগত্যেই।
৫. এ নাটকের সরকারি বিজ্ঞাপনের বড় বড় হোর্ডিং সারা শহর প্রায় ছেয়ে ফেলেছিল। এত প্রচার ক্ষমতা বেসরকারি কোনও দল পেয়েছে? সম্ভবও নয়।
৬. পর পর লাগাতার হাউসফুল, কলামন্দির, রবীন্দ্রসদন সর্বত্র গিজগিজে ভিড় বারবার।
৭. নাটকে থিয়েটারের তাবড় তাবড় মাথা একসাথে কাজ করেছেন আয়োজক, উপদেষ্টামণ্ডলী এবং প্রয়োগের নানান ধারায় (প্রথম সরকারি শিল্পী নির্বাচনসহ)।
৮. সারা রাজ্য থেকে সেরা অভিনেতা নিয়ে গঠিত হয়েছে এ নাটক।
৯. এ নাটক সম্পর্কে একের পর এক বড় বড় পত্রিকায় মায় সম্পাদকীয় পাতাতেও বিরাট বিরাট প্রতিবেদন লেখা হয়েছে।
১০. বাংলা সংবাদ চ্যানেলগুলিতে লাইভ অনুষ্ঠান হয়েছে দিনের পর দিন।
১১. সর্বভারতীয় স্তরে খুব কম নাটক এর আগে রাজ করে এসেছে এত বিরাট সফলতার সঙ্গে।
১২. আলো, মঞ্চ, পোষাকে এত মহারথী কোনও নাটকে কাজ করেননি।
১৩. এমনকি বন্ধ হয়ে যাবার পরেও দীর্ঘদিন কোনও নাটক নিয়ে বাংলা থিয়েটার দ্বিধাবিভক্ত হয়ে এত তরজা করেনি।
আরও আরও আছে। ফলে মানুষ আবার থিয়েটারে ভিড় করতে লাগল। বাংলা থিয়েটারের সমৃদ্ধ ইতিহাস আবার অক্সিজেন পেল। কাজ দেখতে শুরু করল। এর ফাঁকে এল “অভিনেতার মাছের বাজারে মার খাওয়া” এবং তদজনিত লাল মিছিল এবং তার পালটা নাট্যস্বজন-এর সবুজ মিছিল। সিনিয়র বুদ্ধিজীবীদের দিশেহারা (আমার মতে কলঙ্কিত অধ্যায়) অবস্থায় থিয়েটার-ফিয়েটার মাথায় তখন। হাতে গুণে কয়জন পরিচালক কাজ করছেন, যারা অপেক্ষাকৃত সুবিধাজনক পরিবেশে নিজেকে সবুজ করে ফেললেন। অবশ্য সেই নাট্যস্বজন এবং তার স্বজন ফেস্টিভ্যাল ধ্বংস হয়ে গেছে কয়েক বছরেই। কারণ মাছের বাজারে মার খাওয়া ও তার কাউন্টার হিসাবে যে সঙ্ঘের জন্ম, তা আর যাই হোক, থিয়েটারের কারণে ছিল না। তাই তার পতনও অবশ্যম্ভাবী ছিল।
মিনার্ভা রেপার্টরি থিয়েটারের দুটি প্রযোজনা : বাঁদিকে সুমন মুখোপাধ্যায়ের নির্দেশনায় রাজা লীয়র, এবং ডানদিকে দেবেশ চট্টোপাধ্যায়ের নির্দেশনায় দেবী সর্পমস্তা
ওদিকে রাজা লীয়র এর পর দেবী সর্পমস্তা, চন্দ্রগুপ্ত এনে দিল থিয়েটারের এক ঝাঁক নতুন মুখ, নতুন কমিটমেন্ট, নতুন উদ্যম। লোকে বুঝল, মানুষকে সঠিক জিনিস দিলে মানুষ আবার হৈ হৈ করে আসবে, হল ভরাবে।
পাশাপাশি থিয়েটার দলগুলিও যেন নতুন চ্যালেঞ্জ পেল, তারাও একের পর এক তৈরি করল মহাকাব্য, লোকগাথা, শেক্সপীয়র থেকে শুরু করে বড় টিমের দলগত পারফর্মেন্স-এর কাজ। এই নতুনের হাত ধরেই এল এক ঝাঁক নতুন পরিচালক। তাদের নাটক এন. এস. ডি., নান্দীকার ফেস্টিভ্যাল সহ বহু জায়গায় আদৃত হল। সবথেকে বড় কথা নতুন ছেলেমেয়েরা থিয়েটারকে পেশা হিসাবে নেবার কথা ভাবতে শুরু করল মিনার্ভার সাফল্যের পর। টাকাপয়সা রোজগারের পাশাপাশি থিয়েটারচর্চা– উভয় একই স্থানে মিলতে লাগল উপযুক্ত নাট্যচর্চা করতে থাকা ছেলেমেয়েদের। বলাই বাহুল্য এর আগে বাংলা থিয়েটারে ছিল গ্রান্ট পাওয়া দলগুলির টাকাকড়ি নিয়ে অস্বচ্ছতা। পরিচালকেরা দলের সদস্যদের নামে টাকা তুলতেন কেন্দ্রের কাছে, আর নিজেদের গাড়ি বাড়ি বানাতেন। সে বঞ্চনার ইতিহাস নিয়ে অন্য লেখা হতে পারে।
বাঁদিকে হাওড়া ব্রাত্যজনের ‘ইঁদুর ও মানুষ’, নির্দেশনা– দেবাশিস বিশ্বাস; ডানদিকে কোলকাতা রঙ্গিলার ‘মা এক নির্ভীক সৈনিক’, নির্দেশনা– কৌশিক কর
তো যাই হোক, নতুন মুখ, নতুন ভাবনার পাশাপাশি চলে এল এই সূত্রেই পুরানো দর্শকের সাথে নতুন দর্শক। কারণ খুবই স্বাভাবিকভাবেই, প্রথমে অভিনেতাদের পরিচিত বন্ধুবান্ধবেরা আসেন, ভালো লাগলে থেকে যান, না লাগলে হলমুখো হন না। কিন্তু এদের ভালো লাগল, এরা পরেরবার নিয়ে এল তাদের বন্ধুদের। যারা হয়ত বিনোদন হিসাবে টিভি বা সিনেমা দেখেই মন ভরাত। এরা আবার থিয়েটারে একটা অন্য স্বাদ পেল। ঝাঁকে ঝাঁকে নতুন দর্শকের মুখ দখল করল আকাদেমি, মিনার্ভা, তপনের চত্বর। দলে দলে আসতে লাগল এ ওকে নিয়ে, সে তাকে নিয়ে। এল ফেসবুক, এল আরও সুলভ প্রচার.. এল সামান্য স্টারডম। নতুন ছেলেমেয়েরা ভাবল ক্ষতি কী! থিয়েটার করেও তো সব পাওয়া যায়। ক্রমে দল বাড়তে লাগল। সঙ্গে বাড়তে লাগল তাদের নিজস্ব দর্শক, ক্রমে দর্শক এক্সচেঞ্জ হল, কমন ফ্রেন্ড (ফেসবুক) আরও সহজে নিজের বন্ধুর বাইরেও অন্য ভালো থিয়েটারের সাথেও পরিচিতি ঘটাল। বাড়ল দর্শক এভাবে। রিভিউকাররা মুখ ঘোরালেন, এক সময়ের বাঁধাধরা নির্দেশকের বাইরে নতুন পরিচালকদের নাম, কাজ ছাপতে থাকল পত্রপত্রিকায়। সুদিন এল নতুনের। এমতাবস্থায় মাথায় রাখতে হবে আর এক বিদেশি থেকে গেলেন আমাদের বাংলা থিয়েটারের ইতিহাসে, তাঁর অজান্তেই। তিনি জুকারবার্গ। অথবা জানতেন, সব যোগাযোগের রাস্তা হিসাবেই তো বানানো ফেসবুক। থিয়েটারটাও তাতে থেকে যাবে, এটা অসম্ভব কী! যাই হোক, আমার বিচারে লেবেদেফ থাকলে তিনিও থাকবেন। থাকতে বাধ্য।
এই প্রসঙ্গে অনেকে ভাববেন, এই আলোচনার সাথে সিটি তালির কী সম্পর্ক! বলবেন বাংলা নাটকের সমৃদ্ধ ইতিহাসে এরকম বহু নিদর্শন আছে। কিন্তু সিটি তালি নেই। আসলে নতুন এক জেনারেশন এসে পড়েছে যাদের আগমনেই এই নতুন প্রকাশ। কিন্তু আমি কেন এদের সমর্থক? বলি…
প্রাকস্বাধীনতায় বিনোদনের মাধ্যম হাতে গোনা, কালের নিয়মেই এবং বিজ্ঞানের অবদানের ওপরেই। হাতে গোনা উত্তম কুমারের, সত্যজিৎবাবুদের ছবি, কিছু বলিউড, ফুটবল সহ আরও কিছু হয়তো। টিভি এল আরও পরে, একটি দু’টি চ্যানেল। বাংলা থিয়েটারে এই সময় যে বিখ্যাত বিখ্যাত থিয়েটারগুলি ছিল সেগুলি ছিল মানুষের বিনোদন ও শিল্পচর্চার আর এক মাধ্যম। অর্থাৎ খুব বেশি পাল্লা দিতে হয়নি আজকের বহুমুখী বিনোদনের মাধ্যমগুলির সঙ্গে।
এবারে ২০০০ সাল নাগাদ ছেয়ে গেল ঘরে ঘরে টিভি। মানুষ ঘরে বসেই বিনোদনের উপায় পেয়ে গেল। পাশাপাশি থিয়েটার ও ফিল্ম। বই পড়াকে আমি আপাতত বাদ রাখছি। ২০১০-এর আশেপাশে ভাবুন। ১০০০ চ্যানেল, ঝাঁ চকচকে রিয়ালিটি শো-এর বন্যা, সেই ধূপ জ্বেলে রামায়ণ দেখার জমানা নেই, এখন ৪০টা চ্যানেলে শুধু রামায়ণই হয় হরেকরকম। সিনেমার বন্যা। চারিপাশে নাইট ডিস্কো, ফেসবুকের হাতছানি, শপিং মলের ভ্রমণ, পার্ক, প্রেম অপ্রেমের খেলা সবকিছুকে পাল্লা দিয়ে থিয়েটারে দর্শক আনার চ্যালেঞ্জ শুধু নতুনের নয়, পুরানোর কাছেও আসল। কিন্তু বিশেষ যে কারণে আমি নতুন দর্শকদের মাথায় করে রাখব সেটি আর এক বিপ্লব। এবারে সেই কথায় আসি।
২০১৬ সাল। ভারতবর্ষের ইতিহাসে ইন্টারনেট দুনিয়ায় বিপ্লব আনলেন আম্বানি। মানুষের পকেটে চলে এল বিনোদনের ২৪ ঘণ্টা। এরা ইচ্ছা করলে যেকোনও সময়ে পকেট থেকে বের করে বিনোদনে ডুবে যেতে পারে শর্ট ফিল্মে, মজার ভিডিওতে, ভিডিও কলে, পুরষ্কার বিজয়ী ছবিতে, পর্নে, ভিডিও গেমে… কী চাই বলুন, সবেতে। হাজার হাজার অপশনের ঘেরাটোপ পেরিয়েও যে মানুষগুলো থিয়েটার দেখতে এসে সিটি দিচ্ছে, আবেগ দেখাচ্ছে এঁদের আমি ফেলে দেব? এঁদের? যারা মুহূর্তে পকেট থেকে নিজের সামনে বিনোদনের ডালি সাজিয়ে ফেলতে পারে? তাঁদের?
লেখকের নির্দেশনায় এবং কোলকাতা রঙ্গিলার প্রযোজনায় ‘নাটক ফাটক’ নাটকের দুটি দৃশ্য
আসি সিটি, তালিতে। মাথায় রাখতে হবে এঁরা নতুন, এরা নতুনের স্বাদ পেয়ে এসেছে ভিড় করে। এঁদের সিটি, এঁদের তালি বদ্ধ হয়ে পড়েছিল ওই মুরগি-করা সিরিয়ালে, ক্যাওড়ামোর সিনেমায় আর জীবনবিমুখী গানে– অথবা অতিরিক্ত আঁতলামোতে (আমি বলি হাইলি ইন্টেলেকচুয়াল, অর্থাৎ যাহা দেখিতে ও বুঝিতে হাই ওঠে)। অথবা ভাঁড়ামো করা শিল্পে। কারণ ইন্টারনেট-এর দুনিয়ায় এরা বহির্পৃথিবীর স্বাদ পেতে শুরু করেছে ইতিমধ্যে। লোকাল বিনোদনগুলি তাদের কাছে ক্লান্তিকর।
এখন প্রশ্ন হল সেদিনের সিটি তালিতে এত বিতর্ক কেন! কারণ সব কিছুর একটা সীমা থাকে। সেই সীমা কে করছে, কারা করছে, কতটা করছে এসবের ওপর নির্ভর করে। আর নির্ভর করে আমি একজন পরিচালক হিসাবে কী দিচ্ছি, কী চাইছি এসবের ওপরেও। মনে পড়ে ফ্যাতাড়ুর কথা, পুরন্দর ভাটের একের পর এক খিস্তি আর ছড়ায় সিটি পড়ে, মনে পড়ে উইঙ্কল টুইঙ্কল, রাজনৈতিক উস্কানি আর জ্বালা-মেটানো সংলাপে মানুষ ফেটে পড়ে। তাতে সীমা লঙ্ঘিত হয়েছে এমন বিতর্ক হয়নি।
কারণ, ওই যে বললুম সীমা। মনে রাখতে হবে সেদিনের শো-এ এই নতুনেরা ছিল ঝাঁকে ঝাঁকে। তাঁদের আবেগ, নতুন দেখা, নতুন চমকে ভালোলাগার বহিঃপ্রকাশে এমন হয়ে গেছিল।
এবারে কথা হল, কীভাবে এগুলি এড়ানো যায়, কমানো যায়। আমার মতে কমিয়ে লাভ নেই। এরা নতুন। এদের আবেগে থিয়েটারের বুকে হোক না এক একটা বিস্ফোরণ, উড়ে যাক সব নিয়মের বেড়াজাল, ভেঙ্গে যাক সব নিয়মনীতি আর সঠিক পথের সারাক্ষণের ভড়ভাড়ানি– আর ভাল্লাগে না। একটু অনিয়ম আসুক, একটু অসাবধানীরা হৈ চৈ-এ মাতুক। সময়ে এরাই শান্ত হবে। জোর করে এদের থামিয়ে দিলে এরা আর আসবেই না।
পাশাপাশি পরিচালক বন্ধুদের ভাবতে হবে। আমি জানি এই হল্লাবাজদের কমবেশি তোমরা চেন। ক্ল্যাপস তোলানোর ইতিহাস কমবেশি অনেকেই চর্চায় রাখে আজও। আমি অনেক বড় পরিচালক ও অভিনেতার ক্ল্যাপ তোলার সাঙাতগুলিকে চিহ্নিত করেছি বিভিন্ন সময়ে। তাই বাংলা থিয়েটারের মান এবং ব্যালান্স উভয়ই তোমাদের হাতে। যদি না চিনে থাকো, চিনে চিহ্নিত কর। এত ভালো ভালো কাজ করছ সবাই এটাই অনেক। ওইটুকুতেই ভরসা থাকুক। সুদিন এসেছে। আরও আসবে।
এই সামান্য আলোচনার পর আমার ওপরে আক্রমণ আসবে জানি। তাতে ক্ষতি নেই। এক-দু পার্সেন্ট যদি কিছু পাওয়া যায় তো রেখে দিও বন্ধুরা, না পাওয়া গেলে ফেলে দিও। ভাবের ঘরে চুরি তো আজকালের স্বাভাবিক ব্যাপার। আমরা অনেকে ভুলেই যাই যে সেথায় চুরি চলছে। যাই হোক, আমি কিন্তু আজও হাততালি থামিয়ে বলে যাব, যেমন প্রতি শো-এ বলি, “দাঁড়ান, সব শেষে সমবেত তালি দিন। এটা দলগত কাজ। একক সমর্থন-এর অভ্যাস ছাড়ুন।” কিন্তু কোনওভাবেই নতুনকে দমিয়ে দেব না।