শিবাশীষ বসু
প্রাবন্ধিক, ইতিহাস-অন্বেষক
চার.
আদি ব্রাহ্মসমাজের মুখপত্র তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার মাঘ ১৩১৮ (জানুয়ারি ১৯১২) সংখ্যায় গানটি প্রকাশিত হল, নাম দেওয়া হল ‘ভাগ্যবিধাতা’। গানটির নিচে পরিচয় হিসেবে লেখা হল ব্রহ্মসঙ্গীত। তত্ত্ববোধিনীর সম্পাদক ছিলেন তখন রবীন্দ্রনাথ নিজেই। প্রবোধচন্দ্রের মতে, “তাতেই বোঝা যাচ্ছে, স্বয়ং পরমব্রহ্মই ভাগ্যবিধাতা এ কথা প্রকাশ করাই ছিল রচয়িতার অভিপ্রায়।”[1] প্রত্যক্ষভাবে ইংলিশম্যান বা স্টেটসম্যানের রিপোর্টের প্রতিবাদ না করলেও এইভাবে যেন রবীন্দ্রনাথ একটি পরোক্ষ প্রতিবাদ করে গেলেন। এরপর ১১ মাঘ (২৫ জানুয়ারি ১৯১২) কলকাতার মহর্ষিভবনের মাঘোৎসবে গানটি আবার গাওয়া হল স্বয়ং রবীন্দ্রনাথের পরিচালনায়। পরবর্তীকালে গানটি রবীন্দ্রনাথের রচিত ব্রাহ্মসমাজের গানের গ্রন্থ ‘ধর্ম্মসঙ্গীত’ এবং গীতবিতানের স্বদেশ পর্যায়ের গীতিগুচ্ছতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। ব্রহ্মসঙ্গীতের পর্যায়ভুক্ত হলেও গানটি যে দেশভক্তির সে বিষয়ে বোধহয় কারও কোনও সন্দেহ নেই। ওই বছরই ‘ভারতী’ পত্রিকার মাঘ ১৩১৮ সংখ্যায় ‘কনগ্রেস’ নামে কংগ্রেসের ছাব্বিশতম অধিবেশন নিয়ে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। প্রতিবেদক লেখেন, “গত ২৬, ২৭, ২৮শে ডিসেম্বর তারিখে জাতীয় সম্মেলনীর অধিবেশন হয়, সভার কার্য আরম্ভ হইবার পূর্ব্বে প্রতিদিনই জননী জন্মভূমির গৌরবগাথা গীত হইত। প্রথম দিন ভারতবর্ষের সুজলা শ্যামলা মাতৃমূর্ত্তির, দ্বিতীয় দিন মানব জাতির অদৃষ্ট বিধাতা যিনি— পরিত্রাণায় সাধুনাম বিনাশায়চদুষ্কৃতাম ধর্ম্ম সংস্থাপনার্থায়— যুগে যুগে আত্মপ্রকাশ করেন সেই ত্রিলোকনাথের; এবং তৃতীয় দিন অতীত গৌরবস্মৃতি ঐশ্বর্য্যের চিরন্তন খনি হিন্দুস্তানের বন্দনাগান হইয়াছিল।”[2] প্রবোধচন্দ্রের মতে, “এর থেকে অতি সঙ্গতরূপেই অনুমান করা যায় যে, ধর্মের বৃহৎ ভূমিকায় যিনি বিশ্বেশ্বর বা মানবভাগ্যবিধাতা, দেশপ্রীতির পটভূমিকায় তিনিই ভারতভাগ্যবিধাতা বলে অভিহিত হয়েছেন।”[3] বস্তুত, ভারতী পত্রিকার একই সংখ্যায় প্রকাশিত ‘দিল্লীর দরবার’ প্রবন্ধে সরলা দেবীর মন্তব্য, যাতে তিনি লিখেছেন, “হে ঈশ্বর, হে ভারতের ভাগ্যবিধাতা, এ হৃদয়বান প্রজারঞ্জক রাজাকে রক্ষা কর!”[4] শুনতে অত্যন্ত ব্রিটিশ পদলেহনকারী লাগলেও ‘ভাগ্যবিধাতা’ শব্দটির অর্থ দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হয়ে ওঠে। প্রবোধচন্দ্রের মতে, “বস্তুত রবীন্দ্রনাথের অনেক স্বদেশী গানের মূলেই আছে ভক্তিমিশ্র দেশাত্মবোধের প্রেরণা।”[5] এই কারণেই রবীন্দ্রনাথ পরবর্তীকালে এই গানটি গীতবিতানের স্বদেশ পর্যায়ের অন্তর্ভুক্ত করেন। এই গানের মূল প্রেরণা যে দেশাত্মবোধ তা রবীন্দ্রনাথ নিজেই স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন বালিদ্বীপ থেকে ১৯২৭ সালের ৩১ আগস্ট কনিষ্ঠা কন্যা মীরাকে লিখিত চিঠিতে, “আমি কয়েক বছর আগে ভারতবিধাতার যে জয়গান রচনা করেছি তাতে ভারতের প্রদেশগুলির নাম গেঁথেছি— বিন্ধ্য হিমাচল যমুনা গঙ্গার নামও আছে। কিন্তু, আজ আমার মনে হচ্ছে, ভারতবর্ষের সমস্ত প্রদেশের ও সমুদ্রপর্বতের নামগুলি ছন্দে গেঁথে কেবলমাত্র একটি দেশপরিচয় গান আমাদের লোকের মনে গেঁথে দেওয়া ভালো। দেশাত্মবোধ বলে একটা শব্দ আজকাল আমরা কথায় কথায় ব্যবহার করে থাকি, কিন্তু দেশাত্মজ্ঞান নেই যার তার দেশাত্মবোধ হবে কেমন করে।”[6]
রবীন্দ্রজীবনীকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের লেখা থেকে জানা যায়, সরকারের দৃষ্টিতে কবি একজন ‘দাগী’ ছিলেন। রবীন্দ্রনাথের গতিবিধির ওপর নজর রাখতে ২৭ জুলাই ১৯০৯ তারিখে কলকাতার স্পেশাল ব্র্যাঞ্চের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল এফ সি ডালি একটি নির্দেশ জারি করেছিলেন। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় থেকে বিশেষত বিপ্লবী অরবিন্দ ঘোষের উদ্দেশ্যে ‘নমস্কার’ কবিতাটি লেখবার পর থেকেই শান্তিনিকেতনের ব্রহ্মচর্য আশ্রমও পুলিশের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। রবিজীবনীকার প্রশান্তকুমার পাল রথীন্দ্রনাথকে লেখা রাজলক্ষ্মী দেবীর চিঠি উদ্ধৃত করে দেখিয়েছেন, অন্তত দুইবার ব্রিটিশ পুলিশের চর ছদ্মবেশে শান্তিনিকেতনে এসেছিল বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ডের খোঁজখবর নিতে। পুলিশের সন্দেহভাজন কালীমোহন ঘোষ, নেপালচন্দ্র রায় ও হীরালাল সেনকে বিদ্যালয়ের শিক্ষকপদে নিয়োগ করা ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের পছন্দ হয়নি। ৯ নভেম্বর ১৯১১, রবীন্দ্রনাথ ‘মর্ডান রিভিউ’ ও ‘প্রবাসী’র সম্পাদক রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়কে লিখেছিলেন, “আমাদের বিদ্যালয়ের ’পরেও এতদিন পরে গোপনে রাজদণ্ডপাত হইয়াছে। হঠাৎ পূর্ব্ববঙ্গের রাজকৰ্ম্মচারীদের ছেলেরা বিদ্যালয় হইতে সরিতে আরম্ভ করিতেছে। এমনকি, টেলিগ্রাফযোগে তাহাদিগকে সরানো হইতেছে। আমাদের শান্তিনিকেতন আশ্রমের উদ্দেশ্যের প্রতিই একান্তভাবে লক্ষ রাখিয়া আমি ঘোরতর উত্তেজনার সময়েও বিদ্যালয়ে কোনোপ্রকার অশান্তিকর আলোচনা ঘটিতে দিই না। বস্তুত আমি ছাত্রদের মন সেদিক হইতে একেবারে ফিরাইয়া দিয়াছি— সেজন্য আমাকে নিন্দা সহ্য করিতে হইয়াছে। কিন্তু ইহা স্পষ্ট দেখা যাইতেছে ধৰ্ম্মপ্রচার হউক অথবা অন্য যে কোনো হিতকৰ্ম্মই হউক— কোনো কিছু গড়িয়া তুলিতে গেলেই দেশের রাজার নিকট হইতে বাধা পাইতে হইবে। এ সম্বন্ধে মুখামুখি একটা বোঝাপড়ায় নামা যাইবে সে রাস্তাও বন্ধ— মেঘনাদের মত মেঘের মধ্যে অদৃশ্য থাকিয়া যখন রাজশক্তি অস্ত্রপাত করে তখন তাহার জবাব দিবারও যো নাই নিজেকে বাঁচাইবারও পথ বন্ধ।”[7]
জনগণমন কাণ্ডের অব্যবহিত পরেই ১৯১২ সালের জানুয়ারি মাসে প্রচারিত হল একটি গভর্নমেন্ট সার্কুলার। পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশের শিক্ষাবিভাগের ডিরেক্টর দ্বারা প্রদত্ত এই সার্কুলারটিতে সরাসরিভাবে সরকারি চাকুরীজীবীদের সন্তানদের শান্তিনিকেতনের ব্রহ্মচর্য আশ্রমে পড়াতে নিষেধ করা হয়েছিল। পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশের ডিরেক্টর অফ পাবলিক ইনস্ট্রাকশন মিঃ শার্প একটি গোপন সার্কুলারে প্রায় শাসিয়ে জানালেন, “It has come to my knowledge that an institution known as the Santiniketan or Brahmacharyasrama at Bolpur in the Birbhum district of Bengal, is a place altogether unsuitable for the education of the sons of Government servants. As I have information that some Government servants in this province have sent their children there, I think it is necessary to ask you to warn any well-disposed Government servant whom you may know or believe to have sons at this institution or to be about to send sons to it, to withdraw them or refrain from sending them as the xase may be ; any connection with this institution in question is likely to prejudice the future of the boys who remains pupils of it after the issue of the present warning.”[8] সার্কুলারটি ১৯১২ সালের ২৬ জানুয়ারি বেঙ্গলী পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ভেবে দেখুন, মাত্র দেড়মাস আগেই কংগ্রেসের সম্মেলনে জনগণমন গাওয়া হয়েছে। গানটি আদৌ যদি পঞ্চম জর্জের প্রশস্তিতে লেখা হত তাহলে ভারত সরকারের একটি দপ্তর রবীন্দ্রনাথ পরিচালিত শান্তিনিকেতনের বিরুদ্ধে এই সার্কুলার দিত? মুশকিলটা হল, কেউ এটা ভেবে দেখেন না, যে রবীন্দ্রনাথ জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের পরে মহাত্মা গান্ধি ও চিত্তরঞ্জন দাশের মতো জননেতা নীরব থাকা সত্ত্বেও এককভাবে প্রতিবাদ জানিয়ে নাইটহুড ত্যাগ করেছিলেন, তাঁর পক্ষে এরকম ব্রিটিশরাজের প্রশস্তি লেখা আদৌ সম্ভব নয়। স্পষ্টতই খোদ ব্রিটিশরাই এই অপপ্রচারটি বিশ্বাস করেনি। জনগণমন সংক্রান্ত ঘটনাটি শুনে ইংরেজ কবি ইয়েটস নাকি বিন্দুমাত্র বিশ্বাস না করে রবীন্দ্রনাথের এক ছাত্রের কাছে সত্যিটা জানতে চেয়েছিলেন। এবং আমেরিকান কবি এজরা পাউন্ড গোটা ঘটনাটিকে ‘ভোলতেয়ারোচিত রসিকতা’ বলে মন্তব্য করেছিলেন। এজরা পাউন্ড ১৯১৩ সালের জানুয়ারি মাসে পিতা হোমার এল পাউন্ডকে একটি চিঠিতে লেখেন, “There is a charming tale of the last durbar anent R.T. one Bengali here in London was wailing to W.B.Y. ‘How can one speak of patriotism of Bengal, when our greatest poet has written this ode to the King?’ And Yeats taxing one of Rabindranath’s students elicited this response. ‘Ah! I will tell you about the poem. The national committee came to Mr. Tagore and asked him to write something for the reception. And as you know Mr. Tagore is very obliging. And all that afternoon he tried to write them a poem, and he could not. And that evening the poet as usual retired to his meditation. And in the morning he descended with a sheet of paper. He said, ‘Here is a poem I have written. It is addressed to the deity. But you may give it to the national committee. Perhaps it will content them. The joke, which is worthy of Voltaire, is for private consumption only, as it might be construed politically if it were printed.”[9] প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য, এজরা পাউন্ড কথিত ন্যাশনাল কমিটি নামক বস্তুটি কলকাতায় সম্রাটের আগমন উপলক্ষে তৈরি হওয়া সরকারি কমিটি, না কি জাতীয় কংগ্রেসের নিজস্ব কমিটি, তাও স্পষ্ট নয়।
পাঁচ.
১৯১৭ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত কলকাতার কংগ্রেস অধিবেশনের তৃতীয় দিনে অর্থাৎ ২৮ তারিখে রবীন্দ্রনাথের উপস্থিতিতে আবারও গাওয়া হল জনগণমন। গানটির পরিবেশনের বিবরণ পাওয়া গেল ৩০ ডিসেম্বরের বেঙ্গলি পত্রিকায়, “The congress chorus then chanted the magnificent song of sir Rabindranath Tagore, Jana-Gana-Mana, Maharaja Bahadur of Natore himself joining in aid of the instrumental music.”[10] অমৃতবাজার পত্রিকায় লেখা হল, “The Indian National Congress sat today at 11-30 A.M., the proceedings commencing with an inspiring patriotic song of Rabindranath, sung as usual in chorus, the Maharaja of Natore joining in the instrumental music.”[11]
তবে সবচেয়ে বড় পালটি খেল স্টেটসম্যান। তারা লিখল, “A national song composed by Sir Rabindranath Tagore having been sung the following resolution was moved.”[12] কৌতুকের বিষয় হল, ১৯১১ সালের প্রতিবেদনে ‘স্টেটসম্যান’ এই গানটিকে বলেছিল সম্রাটের প্রশস্তিমূলক গান; আর এবার দেখা গেল, সেই ‘স্টেটসম্যান’ই ১৯১৭ সালে গানটিকে অভিহিত করেছে ‘দেশপ্রেমের গান’ বলে।
“১৯১১ সালে ইংলিশম্যান ও স্টেটসম্যানের মতে যা ছিল রাজভক্তির গান, ১৯১৭ সালে তাই দেশভক্তির গান বলে বর্ণিত হল!”[13] লিখেছেন প্রবোধচন্দ্র।
কংগ্রেস মঞ্চ থেকে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ এই গানটি সম্পর্কে অভিমত প্রকাশ করে বললেন, “Brother delegates, at the very outset I desire to refer to the song to which you have just listened. It was the song of the glory and victory of India.”[14] এই প্রসঙ্গে বেঙ্গলি পত্রিকায় বলা হল, “Mr C R Das desired to refer to the song which they had just listened to. It was the ‘song of the victory of India’ (hear, hear). They stood there that day on platform for the glory and victory of India (hear, hear).”[15] স্পষ্টতই, ছয় বছর আগে লেখা গানটি যদি রাজবন্দনারূপে রচিত হত তাহলে ১৯১৭ সালের কংগ্রেস অধিবেশনে ওটি সর্বসম্মতিক্রমে দেশভক্তির গান হিসেবে গীত হত না।
ছয়.
১৯১৭ সালে কলকাতায় জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনে গীত হবার পর ‘জনগণমন’-র উল্লেখ আবার দেখা যাচ্ছে ১৯১৯ সালে। তবে তার আগেই ১৯১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ‘মর্ডান রিভিউ’ পত্রিকাতে গানটির ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশিত হয়। ১৯১৮-১৯ খ্রিস্টাব্দে অন্ধ্রপ্রদেশের চিত্তুর জেলার মদনাপল্লী শহরের বেসান্ত থিওজফিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ জেমস কাজিনস রবীন্দ্রনাথকে সেখানে কয়েকদিন অতিবাহিত করার আমন্ত্রণ জানান। কাজিনস ছিলেন আইরিশ ভাষার একজন বিতর্কিত কবি এবং রবীন্দ্রনাথের বিশিষ্ট বন্ধু। ২৮ ফেব্রুয়ারি একটি ছাত্র সম্মেলনে তিনি কাজিনস-এর অনুরোধে বাংলায় ‘জনগণমন’ গানটি গেয়ে শোনান। শোনা যায়, গানটির কথা ও সুর শুনে মুগ্ধ শিক্ষক, ছাত্র ও অন্যান্য দর্শকেরা কবিকে অনুরোধ করেন ইংরেজিতে গানটির মানে বলে দেওয়ার জন্য। রবীন্দ্রনাথ গানটির অনুবাদ স্বহস্তে লিখে অধ্যক্ষকে উপহার দেন। গানটি সেই কলেজের দৈনিক প্রার্থনা সঙ্গীত হিসেবে ব্যবহার করার অনুমতিও চেয়ে নেন কলেজের অধ্যক্ষ। পরে কলেজের পত্রিকায় কবির হস্তাক্ষরের প্রতিলিপিসহ প্রকাশিত হয় ‘জনগণমন’-র ইংরেজি অনুবাদ ‘দ্য মর্নিং সং অফ ইন্ডিয়া’। কবি-কৃত এই অনুবাদটির কিছু অংশ তুলে দিয়েছেন আমিনুল ইসলাম, তাঁর প্রবন্ধে—
Thou art the ruler of the minds of all people,
Thou Dispenser of India’s destiny.
The name rouses the hearts
of the Punjab, Sind, Gujrat and Maratha,
of Dravid, Orissa and Bengal.
It echoes in the hills of the Vindhyas and Himalayas,
Mingles in the Jumna and Ganges.
and is chanted by the waves of the Indian Sea.
They pray of thy blessing and sing thy praise,
Thou Dispenser of India’s destiny,
Victory, Victory, Victory to thee.[16]
১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভ্রমণকালে মস্কোয় পাইওনিয়ার্স কমিউনের অনাথ বালক-বালিকারা রবীন্দ্রনাথকে একটি গান গাইতে অনুরোধ করলে, তিনি তাদের জনগণমন গেয়ে শোনান।
‘জনগণমন’ পুনরায় সংবাদপত্রের হেডলাইন হয়ে উঠল ১৯৩৭ সালে। ইতিমধ্যে গানটির জনপ্রিয়তা ভারতের অন্যান্য অংশে বিশেষত কংগ্রেস নেতাদের মধ্যে বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৩৭ সালে যখন ভারতের জাতীয় সঙ্গীত নির্বাচনের প্রশ্ন উঠল, রবীন্দ্রনাথ নিজে ‘বন্দেমাতরম’ গানটির সপক্ষে ব্যাট ধরলেও জহরলাল নেহেরু এবং সুভাষচন্দ্র বসুর আসক্তি প্রকাশ পায় ‘জনগণমন’ গানটির অনুকূলে। জাতীয় সঙ্গীত সন্ধানের কাজ শুরু হতেই সেই প্রশ্নটি আবার উঠল। যে গান ইংলন্ডেশ্বরের বন্দনার জন্য রচিত, সেই গানকে কী করে স্বাধীন দেশের জাতীয় সঙ্গীত করা যায়? কলকাতায় নিখিল ভারত কংগ্রেস কমিটির সভায় ভারতবর্ষের জাতীয় সঙ্গীত কী হতে পারে, তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। সেই বিতর্কে বহু চিন্তাবিদ মত প্রকাশ করেন। সেই সময় কাজিনসও তাঁর মত প্রকাশ করেন। ১৯৩৭ সালের ৩ নভেম্বর ‘ম্যাড্রাস মেল’ পত্রিকার সম্পাদক সমীপেষু বিভাগে তিনি একটি দীর্ঘ চিঠি লেখেন। চিঠির বিষয় ছিল, ভারতবর্ষের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে কেন ‘জনগণমন অধিনায়ক’ গানটি নির্বাচিত হওয়া উচিত। সে দিন ‘ম্যাড্রাস মেল’-এর পাতায় কাজিনস লেখেন, “একটা সম্পূর্ণ জাতির আশা আকাঙ্ক্ষা ও উচ্চতম কল্যাণের প্রতীক এই গান সমস্ত দেশে সুপরিচিত। এর সুর ও ছন্দ এমনই, নিশ্চিত উৎসাহের সঙ্গে সমবেত কণ্ঠে এই গান গাওয়া চলে। … ভারতবর্ষে মানবজীবনের যে বৈচিত্র্য, তা এই জনগণ গানে যেমন ফুটেছে, তেমনি তার অন্তঃশায়ী সত্য ঐক্যের সন্ধান দিয়েছে। বহিরঙ্গের অসম্ভব মিলনের কথা বলেনি, উচ্চারণ করেছে তার সত্যিকারের আত্মিক মিলনের বাণী, যা ফুটে উঠেছে বৈশ্বিক জীবনের সঙ্গে মিলনের প্রতি তাঁর সার্বিক আকাঙ্ক্ষার মধ্যে দিয়ে, যে জীবনে আমাদের সকলেরই অংশ আছে … এই গানে যে প্রার্থনা ধ্বনিত হয়েছে, তাতে যে কোনও ধর্মে বিশ্বাসী মানুষ নির্দ্বিধায় যোগ দিতে পারেন।”[17] “My suggestion is that Dr. Rabindranath’s own intensely patriotic, ideally stimulating, and at the same time world-embracing ‘Morning Song of India’ (Jana-gana-mana) should be confirmed officially as what it has for almost twenty years been unofficially, namely the true National Anthem of India.”[18]
বিতর্ক তখনও মেটেনি। তা মিটল ওই বছরেরই ২০ নভেম্বর যখন ছিয়াত্তর বছরের রবীন্দ্রনাথ ঊনত্রিশ বছরের এক যুবক পুলিনবিহারী সেনের কৈফিয়তের উত্তরে একটি চিঠি লিখলেন। চিঠিটি পরবর্তীকালে একটি ঐতিহাসিক দলিলে পরিণত হয়। রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, “জনগণমনঅধিনায়ক গানটি কোনো উপলক্ষ্য-নিরপেক্ষ ভাবে আমি লিখেছি কিনা তুমি জিজ্ঞাসা করেছ। বুঝতে পারছি এই গানটি নিয়ে দেশের কোনো কোনো মহলে যে দুর্বাক্যের উদ্ভব হয়েছে তারই প্রসঙ্গে প্রশ্নটি তোমার মনে জেগে উঠল। তোমার চিঠির জবাব দিচ্ছি কলহের উষ্মা বাড়াবার জন্য নয়, ঐ গান রচনা সম্বন্ধে তোমার কৌতূহল মেটাবার জন্যে। … সে বৎসর ভারতসম্রাটের আগমনের আয়োজন চলছিল। রাজসরকারে প্রতিষ্ঠাবান আমার কোনও বন্ধু সম্রাটের জয়গান রচনার জন্যে আমাকে বিশেষ করে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। শুনে বিস্মিত হয়েছিলুম, সেই বিস্ময়ের সঙ্গে মনে উত্তাপেরও সঞ্চার হয়েছিল। তারই প্রবল প্রতিক্রিয়ার ধাক্কায় আমি জনগণমনঅধিনায়ক গানে সেই ভারতভাগ্যবিধাতার জয় ঘোষণা করেছি, পতনঅভ্যুদয়বন্ধুর পন্থায় যুগ যুগ ধাবিত যাত্রীদের যিনি চিরসারথী, যিনি জনগণের অন্তর্যামী পথপরিচায়ক— সেই যুগযুগান্তরের মানবভাগ্যরথচালক যে পঞ্চম বা ষষ্ঠ বা কোনো জর্জই কোনোক্রমেই হতে পারেন না সে কথা রাজভক্ত বন্ধুও অনুভব করেছিলেন। কেন না তাঁর ভক্তি যতই প্রবল থাক, বুদ্ধির অভাব ছিল না। আজ মতভেদবশত আমার প্রতি ক্রুদ্ধ ভাবটা দুশ্চিন্তার বিষয় নয়, কিন্তু বুদ্ধিভ্রংশটা দুর্লক্ষণ।”[19] রবীন্দ্রনাথের চিঠিটি ‘বিচিত্রা’ পত্রিকার পৌষ, ১৩৪৪ সংখ্যায় প্রকাশিত হল।
শুধু পুলিনবিহারী সেনকেই নয়, জনগণমন বিষয়ে ১৯৩৯ সালের ২৯ মার্চ রবীন্দ্রনাথ সুধারাণী দেবীকেও লেখেন, “শাশ্বত মানব-ইতিহাসের যুগযুগধাবিত পথিকদের রথযাত্রায় চিরসারথী বলে আমি চতুর্থ বা পঞ্চম জর্জের স্তব করতে পারি, এরকম অপরিমিত মূঢ়তা আমার সম্বন্ধে যাঁরা সন্দেহ করতে পারেন তাঁদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া আত্মাবমাননা।”[20] এমনকি, ১৯৪১ সালের এপ্রিল মাসে, মৃত্যুর কয়েক মাস আগেও ‘কাছের মানুষ রবীন্দ্রনাথ’ গ্রন্থের লেখক নন্দগোপাল সেনগুপ্তকে কবি লিখেছিলেন, “গানটি সম্বন্ধে আমার বক্তব্য আগেই বলেছি। বলেছি পতনঅভ্যূদয়বন্ধুর পথে যে চিরসারথির রথ যুগ যুগ ধরে চলেছে, তিনি কোনো দেশ বিদেশের জর্জ নন। কিন্তু শিরঃপীড়া যাঁদের প্রবল, তাঁরা স্বস্তি পাচ্ছেন না। এদের রসনা আমি কি দিয়ে শান্ত করব?”[21] কিন্তু যতবারই লিখুন বা বলুন, গানটি নিয়ে অহেতুক সমালোচনার শেষ হয়নি কখনওই। নন্দগোপাল লিখেছেন, “আর একদিন আমাদের দেশের এই রুচিহীন আক্রমণশীলতা নিয়ে কথা হয়েছিল। সেদিন কবি অন্য একটা ব্যাপারে আগে থেকেই একটু উত্তেজিত হয়ে ছিলেন। হঠাৎ শুনলেন তাঁর ‘জনগণ-মন-অধিনায়ক’ গানটি দিল্লীর দরবার উপলক্ষে সম্রাট পঞ্চম জর্জ্জের উদ্দেশ্যে লেখা বলে কোন কাগজ মন্তব্য করেছে। উত্যক্ত হয়ে কবি বললেন, ‘দেশের অসংযত রসনা চিরদিন শুধু আমার উদ্দেশ্যে বিষই উদ্গার করে চলেছে। আমার সমস্ত কাজ, সমস্ত প্রচেষ্টাকে হীন প্রতিপন্ন করার কি অদম্য উৎসাহ! কোনো একটা বিষয়ে যদি মনের মতো হয়ে চলতে না পারলাম, তাহলেই সারা জীবনে যা-কিছু করেছি, সঙ্গে সঙ্গে তা ধুলিসাৎ করে দিতে কারুর বাধে না। যৌবনে লিখেছিলাম, সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে— যাবার আগে ঐ পঙক্তিটি কেটে দিয়ে যাবো আমার রচনা থেকে।’ দেশ সম্বন্ধে এই ধরণের একটা ক্ষোভ তাঁর মুখ দিয়ে সময়-অসময়েই বেরুতো।”[22]
সাত.
পরবর্তীকালে নেতাজি কীভাবে জনগণমন-কে আজাদ হিন্দ বাহিনির জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে স্বীকৃতি দেন, সে ইতিহাস সকলেরই জানা। বাস্তবিকই, নেতাজি সুভাষচন্দ্র একাই এই গানের গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করে দিয়েছিলেন, সারা ভারত ও বহির্বিশ্ব জুড়ে। ১৯৪১ সালে জার্মানির বন শহরে ‘দ্য ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্স লিগ’-এর কার্যালয় স্থাপন হওয়ার পর ২ নভেম্বর তার প্রথম অধিবেশনে গৃহীত হয়েছিল ব্রিটিশ-বিরোধী যুদ্ধের শপথ ‘জয় হিন্দ’ এবং জাতীয় সঙ্গীত ‘জনগণমন-অধিনায়ক’। ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের ৫ জুলাই আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠনের কথা ঘোষণা করা হয় এবং সেইদিনই প্রথম জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে ‘জনগণমন’ গাওয়া হয়।
শেষপর্বে পুনরায় ফিরে আসি ডঃ বর্তকের বক্তব্যে। আরও দুটি উল্লেখযোগ্য ত্রুটি তিনি খুঁজে পেয়েছিলেন, রবীন্দ্রনাথ এবং তাঁর গানে। রবীন্দ্রনাথের ইংরেজ-প্রীতি বোঝাতে তিনি অভিযোগ করেছেন, ইংরেজভক্তির কারণেই নাকি রবীন্দ্রনাথ নিজের নামের পদবি ‘ঠাকুর’ থেকে ‘টেগোর’ করেছিলেন! “Ravindranath imitated British style and changed his name to Tagore! By 1911 A.D., the Indians were greatly influenced by the British. Ravindranath Thakur (Tagore) also was equally influenced. In keeping with the British style, he discarded his original surname ‘Thakur’ and adopted a new name ‘Tagore’. It was a sheer psychological slavery.”[23] হায়, চরম ইতিহাস-অচেতন এঁরা জানেন না যে রবীন্দ্রনাথের জন্মের বহু আগে থেকেই তাঁর পারিবারিক পদবি ভারতে আসা ইংরেজদের উচ্চারণের মহিমায় টেগোর হয়ে গিয়েছিল— তাঁর ঠাকুরদা দ্বারকানাথ ঠাকুর যখন ইউরোপে গিয়েছিলেন, সেই সময় থেকেই।
বর্তকের আরেকটি হাস্যকর ন্যারেটিভ হল, “Pak province in India’s anthem— a rank denigration! … India was partitioned in 1947. The entire Sindh, half of Punjab and half of Bengal had gone to Pakistan. How did they get a place in India’s national anthem?”[24] সত্যি বটে, রবীন্দ্রনাথের বোঝা উচিত ছিল তাঁর মৃত্যুর পর ভারতবর্ষ ভাগ হবে, ভারতের মানচিত্র পালটে যাবে!
শেষ করব জনগণমন বিতর্ক প্রসঙ্গে সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক একটি মন্তব্য দিয়ে। মন্তব্যটি করেছিলেন সৈয়দ মুজতবা আলী। স্বভাবসিদ্ধ রসিকতাময় ভঙ্গিতে জনগণমন গানে ‘স্নেহময়ী তুমি মাতা’ লাইনটির উল্লেখ করে তিনি লিখেছিলেন, ব্রিটিশ সম্রাট একথা শুনে লম্ফ দিয়ে সিংহাসন ত্যাগ করে কম্পিত কণ্ঠে বললেন, “আমি এখখুনি ফিরে যাচ্ছি দেশে। সব সইতে পারি। কিন্তু আমি মা, আমি স্ত্রীলোক! বুঝেছি লোকটার ইনসলেন্স। বলতে চায়, কূটনৈতিক কারণে, রাষ্ট্রের কল্যাণের জন্য— raison d’etat— আমি মাগী হওয়া সত্ত্বেও মেগডনাল্ড বলডুইন আমাকে মদ্দার বেশে সাজিয়েছে। আসলে আমি মেনি, ওরা পরিয়েছে হুলোর ছদ্মবেশ! … আমি কি বাকিংহাম প্যালেসে নিভৃতে পেটিকোট পরি, ঠোঁটে নখে আলতা মাখি! ওঃ! অসহ্য অসহ্য!”[25]
[1] সেন, প্রবোধচন্দ্র। ভারতপথিক রবীন্দ্রনাথ। এ মুখার্জী অ্যান্ড কোং। ১৯৬২। পৃঃ ২৪১।
[2] ভারতী পত্রিকা। মাঘ ১৩১৮ সংখ্যা। স্বর্ণকুমারী দেবী সম্পাদিত। পৃঃ ৯৯৬-৯৯৭।
[3] দ্রষ্টব্য, টীকা ১। পৃঃ ২৪২।
[4] দ্রষ্টব্য, টীকা ২। পৃঃ ২০২৮।
[5] দ্রষ্টব্য, টীকা ১। পৃঃ ২৪৩।
[6] ঠাকুর, রবীন্দ্রনাথ। জাভা-যাত্রীর পত্র। বিশ্বভারতী গ্রন্থনবিভাগ। ১৯৮৬। পৃঃ ৫৭-৫৮।
[7] ঠাকুর, রবীন্দ্রনাথ। চিঠিপত্র, দ্বাদশ খণ্ড। বিশ্বভারতী গ্রন্থনবিভাগ। ১৯৮৬। পৃষ্ঠা ১৪।
[8] পাল, প্রশান্তকুমার। রবিজীবনী, ষষ্ঠ খণ্ড। আনন্দ পাবলিশার্স। ২০১৮। পৃঃ ২৪৬।
[9] দ্রষ্টব্য, টীকা ৮। পৃঃ ২৫৭।
[10] বন্দ্যোপাধ্যায়, দেবজিত। সুরে ইমনকল্যাণের সহজ গীতময়তা। আনন্দবাজার পত্রিকা। ২৭ ডিসেম্বর ২০১১।
[11] ইসলাম, আমিনুল। ‘জনগণমন’ জাতীয়তাবাদ ও বঙ্গসমাজ: পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ। নবজাগরণ ডট কম। ৮ ডিসেম্বর ২০২০।
[12] পূর্বোক্ত।
[13] দ্রষ্টব্য, টীকা ১। পৃঃ ২৪৭।
[14] দ্রষ্টব্য, টীকা ১০।
[15] দ্রষ্টব্য, টীকা ১। পৃঃ ২৪৭।
[16] দ্রষ্টব্য, টীকা ১১।
[17] জাতীয় সঙ্গীত বিতর্ক এবং কবির চিঠি। সম্পাদকীয়। আনন্দবাজার পত্রিকা। ২৫ জানুয়ারি ২০২০।
[18] ঘোষ, সেমন্তী। প্রেক্ষিতকে ছাপিয়ে যাওয়া ‘জনগণমন’ আজ, ২৭ ডিসেম্বর, শতবর্ষে পদার্পণ করল। আনন্দবাজার পত্রিকা। ২৭ ডিসেম্বর ২০১১।
[19] ঠাকুর, রবীন্দ্রনাথ। সংগীত-চিন্তা। বিশ্বভারতী গ্রন্থনবিভাগ। ১৯৬৬। পৃষ্ঠা ২৪৬-২৪৭।
[20] পূর্বোক্ত। পৃঃ ২৪৭।
[21] দ্রষ্টব্য, টীকা ১১।
[22] সেনগুপ্ত, নন্দগোপাল। কাছের মানুষ রবীন্দ্রনাথ। বেঙ্গল পাবলিশার্স। ১৯৪৪। পৃঃ ৮৮।
[23] বর্তক, ব্রহ্মর্ষি ডঃ পি ভি। জন গণ মন… : প্রেইজ ফর ভারতমাতা অর গ্লোরিফিকেশন অফ ব্রিটিশ কিং। হিন্দুজাগ্রুতি ডট অর্গ। ২৭ ডিসেম্বর ২০১১।
[24] পূর্বোক্ত।
[25] আলী, সৈয়দ মুজতবা। গুরুদেব ও শান্তিনিকেতন। মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স। ২০১৪। পৃঃ ১৪০।