সন্ধে-আলোর মেয়ে-পতঙ্গ
১)
হাত মুড়ে মাথায় শুয়ে আছ উদাস
দূরে আকাশের সমাধি দেখা যায়
তারাদের জানালায় জেগে টের পাই সধবা-হাওয়া
হাতের ভাঁড়ারে জলআয়না, ফুলদানি
অন্যের তুমি
তবু
মায়া হয়
তোমার মেঘ করা চা-বাগান চোখে তাকালে।
শেষ বিকেল শেষ হয়ে এল
এইবার মুখ তুলে দেখি
বুক এমন উঠোন হয়েছিল সিঁদুর ঝরে গেলে
রেলটিকিটে কুড়িয়ে নেওয়া যেত সিঁথির অনন্তে
(২)
মাথায় বেলের আঠা হাতে ভিক্ষা
আমার ধান ছিল তোমার সাথে
এখন পাখি গলে গেছে জলে
একলা ব্যাধ নীল হয়ে আছি
আনন্দ কারিগর নলকূপ গড়েছে
তাতে ধুয়ে নাও সকল শ্রম ও তৃষা
তবু একদিন আমার আঙুল ছিল
তোমার পায়েসচামচ পদ্মগন্ধে ভরা
ব্যথিত ছেলের একা একা ঠোঁট
পুরনো উইঢিবির মতো করুণ
ওইখানে চাঁদ, শিয়াল ডাকের বাঁশবন
জানি ধবল আমলকীমেয়ে প্রিয়তমা এখন
(৩)
জর্দার রঙে মাথা ঘুরে গেছে বিকেলের
আমি সামান্য বসে আছি সন্ধ্যা-ঘরবাড়িহীনা
তুমি এসেই
চলে গেছ
শুধু অপূর্ব রোগাঠ্যাং মনে পড়ে
মুখ গুঁজে ঘুমোতাম রাতের দিকে
(৪)
তিসিফুল মা আমার পিতা শ্রীযুক্ত পাটগাছ
তুমি কেন শীতকালে কোলে ঢেলে দিল নাচ?
কেন জাগিয়ে দিলে হাত দিয়ে নাভির জবা
এখন অন্নপানি ছাড়া ঘুমিয়ে পড়েছি আকূল মশারি
তোমার চাবুক কত লুকিয়ে বেড়াব আঁচলে
জলজঙ্গলের মেয়েলি-অশ্ব আমি
এসো, ঘোটকী জনম সার্থক করো
দোহাই, মুখে তোলো ফেনা…
(৫)
মাথা ধাঁ করে ঘুরে গেল
অবাক জ্যোৎস্নার নীচে মরে থাকত মায়াভরা পতঙ্গ
কিন্তু মাসুদ তুমি জামরুলরঙের হাত দিয়ে কেন
শুঁড়ে ঢেলে দিলে শুশ্রূষার নুনজল
বেঁচে উঠল আমার পাখনা পোয়াতি গাছের নীচে
টুকটুক করে এগিয়ে চলেছে পৃথিবী, আহ্নিকগতি ঠেলে ঠেলে আসছি তোমার কাছে
(৬)
মাটির রাস্তা বেঁকে গেছে হাটে
জানি আমাদের ভাসান লেখা জলের অক্ষরে
দোকানে এসেছি
ও কোপাই, আবার মাছ ভুলেছ
সিগারেট আর খেও না
খাবার ফ্রিজে ঢোকাও
বেতের মোড়ায় সেতার শোয়ানো
কলের কাছে বাদুড় খাওয়া গড়ানো ফল
রাতের কুয়োর পাশ থেকে ডুবিয়ে দিলে সব গান
জোনাকি ধরেছিলাম
ওলটানো কুঁজোর ঢঙে সাজিয়েছিলাম সংসার
ও বাসায় আর যাব না কোনওদিন
এই কথাটুকু আমার চোখ পলিতে গেঁথে দেয়