দেবাশিস সেনগুপ্ত
ক্রীড়াপ্রেমী, অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ককর্মী
এতদিনে, বিশেষত ১৫ মে, ২০২২ নামে চিহ্নিত তারিখটির পরে আমরা সবাই প্রায় জেনে গেছি যে টমাস কাপ (ছেলেদের জন্য) আর উবের কাপ (মেয়েদের জন্য) ব্যাডমিন্টনে দলগত বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপের জন্য চিহ্নিত দুটি কাপের নাম। এই লেখার আলোচনা মূলত টমাস কাপ নিয়েই।
একটা সময়, মানে আমাদের কৈশোরে শীতের শুরুতে পাড়ার মাঠে ব্যাডমিন্টন খেলার প্রস্তুতি শুরু হত। এমনিতে ফুটবল আর ক্রিকেট খেলা হওয়া মাঠটাই হয়ে যেত ব্যাডমিন্টন কোর্ট। ইন কাটা হত, তার উপর চুন পড়ত, দুপাশে স্ট্যান্ড এবং সেই স্ট্যান্ডে নেট টাঙানো হত। শীতের সন্ধেগুলো রমরমিয়ে চলত গা গরম করা ব্যাডমিন্টন, পুরো শীতকাল। তখনও ভারতের ১৯৮৩র ক্রিকেট বিশ্বকাপ জিততে অনেকটাই দেরি, কলকাতা ময়দানের “তারা”দের উজ্জ্বলতায় তখনও ফুটবলই ছিল প্রধান ও প্রথম খেলা। তারপর আস্তে আস্তে বড় হওয়া, মাঠ ফুরনো আর কোর্ট জুড়নো এবং পেশায় জড়িয়ে পড়া।
আচমকা ১৯৮০ সালে অল ইংল্যান্ড ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে হইহই ফেলে দিলেন ততদিনে বিখ্যাত হয়ে যাওয়া ক্রিকেটার সুনীল গাভাসকারের এক বন্ধু। নাম প্রকাশ পাড়ুকোন। ফাইনালে ইন্দোনেশিয়ার লিয়েম সুই কিংকে ১৫-৩, ১৫-১০ ফলে উড়িয়ে দেওয়া প্রকাশ পাড়ুকোন সেবার প্রতিযোগিতার ৫ ম্যাচের একটি গেমেও পরাজিত হননি। ফাইনালের আগে রাউন্ড অফ ৩২-এ সুফিয়ান আবু বেকারকে ১৫-৭, ১৫-১২ পয়েন্টে, রাউন্ড অফ ১৬-তে হাদিয়ান্তোকে ১৫-০, ১৫-১০ পয়েন্টে, কোয়ার্টার ফাইনালে প্রিকে ১৫-৪, ১৫-৪ পয়েন্টে আর সেমিফাইনালে ফ্রস্ট হ্যানসেনকে ১৫-৮, ১৫-১০ পয়েন্টে হারিয়ে দিয়েছিলেন প্রকাশ পাড়ুকোন। যেমনটা হয়, তখন ভারতে একটু হলেও জনপ্রিয়তা বেড়েছিল ব্যাডমিন্টনের, মনে আছে। কিন্তু ব্যাডমিন্টন আজও সেভাবে ভারতের আমজনতার খেলা হতে পারল না। প্রকাশ পাড়ুকোনকে আজও চিনতে হয় অভিনেত্রী দীপিকা পাড়ুকোন-এর বাবা হিসাবে। এবং তখন, ৩১ বছরের যুবক টমাস কাপ নিয়ে ভারত নামের দেশটায় কোনও আলোড়ন ছিল না।
২০০১ সালে সেমিফাইনালে সুইজারল্যান্ডের পিটার গেডকে ১৭-১৪, ১৭-১৫ পয়েন্টে হারিয়ে এবং তারপরে চিনের চেন হংকে ফাইনালে ১৫-১২, ১৫-৬ পয়েন্টে হারিয়ে দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে অল ইংল্যান্ড ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছিলেন পুল্লেলা গোপীচাঁদ। ততদিনে ৫২ বছরের মাঝবয়সি হয়ে গিয়েছিল টমাস কাপ। ভারতে ব্যাডমিন্টন নিয়ে সাময়িক উন্মাদনা তখনও হয়েছিল, যেমন হয়। তবু সেবারও টমাস কাপ নিয়ে কোনও হেলদোল ছিল না ভারতে।
এর মাঝখানে আশির দশকের দ্বিতীয় অর্ধে লখনউর একটা বিয়োগান্ত ঘটনা ভারতের ব্যাডমিন্টনের এক সম্ভাবনাময় খেলোয়াড়ের সঙ্গে সঙ্গে শেষ করে দিয়েছিল ভারতের ব্যাডমিন্টনের অগ্রগতিকেও, তখনকার মতো। সৈয়দ মোদির মতো ব্যাডমিন্টন-প্রতিভা তো আর রোজ রোজ জন্মান না ভারতে!
থাকবেই বা কী করে? ১৯৪৯ সালে শুরু হওয়া পুরুষদের ব্যাডমিন্টনে দলগত বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপের এই আসরে তখনও ভারত ছিল নাবালকের মতোই। তখন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ইন্দোনেশিয়া আর মালয়েশিয়ার সাম্রাজ্য হয়ে উঠছিল টমাস কাপ। তখন অবধি ৩১ বছরে ১১ বার আয়োজিত হয়েছিল টমাস কাপ— ১৯৪৯, ১৯৫২, ১৯৫৫, ১৯৫৮, ১৯৬১, ১৯৬৪, ১৯৬৭, ১৯৭০, ১৯৭৩, ১৯৭৬, ১৯৭৯ সালে। তার মধ্যে ৪ বার জিতেছিল মালয়েশিয়া (১৯৪৯, ১৯৫২, ১৯৫৫, ১৯৬৭) আর বাকি ৭ বার জিতেছিল ইন্দোনেশিয়া (১৯৫৮, ১৯৬১, ১৯৬৪, ১৯৭০, ১৯৭৩, ১৯৭৬, ১৯৭৯)। পরে ধীরে ধীরে সেই সাম্রাজ্যে হাত বাড়ায় ডেনমার্ক আর চিন এবং অনেক পরে জাপানও। প্রথমবার অংশ নিয়েই টমাস কাপ জিতেছিল এশিয়ার তিন শক্তি ইন্দোনেশিয়া (১৯৪৯), মালয়েশিয়া (১৯৫৮) এবং চিন (১৯৮২)।
১৯৪৯ থেকে ১৯৮২ অবধি ত্রৈবার্ষিক ছিল এই টমাস কাপের প্রতিযোগিতা (৩৩ বছরে আয়োজিত হয়েছিল মোট ১২ বার), যে সময় ৪ বার জিতেছিল মালয়েশিয়া, ৭ বার জিতেছিল ইন্দোনেশিয়া আর ১ বার জিতেছিল চিন। আর ১৯৮৪ থেকে এই প্রতিযোগিতা হয়ে যায় দ্বিবার্ষিক। দ্বিবার্ষিক হয়ে যাওয়ার পর থেকে ২০১২ অবধি এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে ১৫ বার, যার সবকটিতেই জিতেছে আগে দেখা তিনটি দেশই— মালয়েশিয়া (১ বার), ইন্দোনেশিয়া (৬ বার) আর চিন (৮ বার)। এর মধ্যে পরপর ৫ বার এই কাপ জিতেছিল ইন্দোনেশিয়া (১৯৯৪, ১৯৯৬, ১৯৯৮, ২০০০ ও ২০০২) আর চিন (২০০৪, ২০০৬, ২০০৮, ২০১০ ও ২০১২)। এরপরে আসে নতুন বিজয়ী, পরপর ২ বার, ২০১৪তে জাপান আর ২০১৬তে ডেনমার্ক। ২০১৮ সালে চিন এবং ২০২০তে ইন্দোনেশিয়া আবার চ্যাম্পিয়ন হবার ট্র্যাকে ফিরে এসেছিল।
১৯৪৯ থেকে ২০২০, এই ৭১ বছরে টমাস কাপের যে ৩১টি ধুন্ধুমার এডিশন দেখেছিল দুনিয়া সেই ৩১টি এডিশনের চ্যাম্পিয়নরা সীমাবদ্ধ ছিলেন ৫টি দেশের মধ্যে। ১৪ বার ইন্দোনেশিয়া, ১০ বার চিন, ৫ বার মালয়েশিয়া আর ১ বার করে জাপান আর ডেনমার্ক জিতেছিল এই চ্যাম্পিয়নশিপ। ১৯৫৮ সালে প্রথমবারের জন্য খেলে ২০১০ অবধি টানা ২৩ বার অন্তত সেমিফাইনালের গন্তব্যে পৌঁছে গিয়েছিল ইন্দোনেশিয়া, ২০১২তে প্রথম ও শেষবারের জন্য সেমিফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হওয়ার আগে। তার পরেও আজ অবধি ৫ বার হওয়া টমাস কাপেও অন্তত সেমিফাইনালে উঠতে পেরেছিল ইন্দোনেশিয়া। এই মোট ২৮ বারের মধ্যে তারা ফাইনাল খেলেছে ২১ বার আর সেমিফাইনালে হেরেছে ৭ বার।
লিয়েম সুই কিং, রুডি হরতানোদের কাঁধে ভর দিয়ে ইন্দোনেশিয়া, মিসবান সিদেকদের উপর ভর দিয়ে মালয়েশিয়া, লিন ডাং, চেন লংদের উপর নির্ভরশীল চীন, মর্টেন ফ্রস্টদের হাত ধরে ডেনমার্ক নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেছিল ব্যাডমিন্টন বিশ্বের অন্যতম সুপারপাওয়ার হিসেবে। আর কোনওদিন কাপ না জিতেও সিঙ্গাপুর আর দক্ষিণ কোরিয়াও হয়ে উঠেছিল এই প্রতিযোগিতার অন্যতম বড় শক্তি, প্রায়শই কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনাল এমনকি ফাইনালেও পৌঁছে গিয়ে।
কিন্তু ভারত যেন কিছুতেই টমাস কাপের এলিট শক্তি হয়ে উঠতে পারছিল না। কারণ একক কেউ নয়, বেশ কিছু দক্ষ খেলোয়াড় একসঙ্গে থাকলে তবেই এ কাপ ঘরে তোলা সম্ভবপর হত। তাই ২০২২-এও কেউ আশা করেননি যে প্রকাশ পাড়ুকোন ও গোপীচাঁদের মতো ব্যক্তিগতভাবে প্রবল দক্ষ খেলোয়াড়রা যা পারেননি, ব্যাঙ্কক থেকে সেই টমাস কাপ জিতে ফিরবেন ভারতের প্রতিনিধিরা, যাঁদের নাম ছিল সিঙ্গলসে লক্ষ্য সেন-কিদাম্বি শ্রীকান্ত-হাসিনা সুনীলকুমার প্রণয়-প্রিয়াংশু রাজাওয়াত এবং ডাবলসে সাত্ত্বিকসাইরাজ রানকিরেড্ডি-চিরাগ শেঠী-রামচন্দ্রন অর্জুন-ধ্রুব কাপিলা-কৃষ্ণপ্রসাদ-বিষ্ণুবর্ধন গৌড়। কিন্তু ২০২২-এর টমাস কাপ কোনও একক ব্যক্তি নন, খেলেছিল ‘টিম ইন্ডিয়া’। এতটা ঐক্যবদ্ধ ভারত দল বানাবার পিছনে ছিল কোচদের সমন্বয়। ভারতের কোচের দায়িত্বে ছিলেন বিমলকুমার, ম্যাথিয়াস বো (ডেনমার্ক), ইয়াংসাং (দক্ষিণ কোরিয়া), সিয়াদাতুল্লা এবং বিজয়দীপ সিং।
এমনই একটা আবহে ব্যাঙ্ককে ভারত আশাতীতভাবে শুরু করে ৮ মে ২০২২ তারিখে ‘সি’ গ্রুপের প্রথম ম্যাচে জার্মানিকে ৫-০ ফলে ও দ্বিতীয় ম্যাচে ৯ মে ২০২২ তারিখে কানাডাকেও ২-০ ফলে হারিয়ে। গ্রুপের শেষ ম্যাচে ১১ মে ২০২২ তারিখে অবশ্য চাইনিজ তাইপে-র কাছে হেরে যায় ভারত ২-৩ ফলে। এবং এর ফলে তারা গ্রুপে রানার্স হয়। ১২ মে ২০২২ তারিখে কোয়ার্টার ফাইনালে তাদের সামনে পড়ে শক্তিশালী মালয়েশিয়া। ২টি সিঙ্গলস আর ২টি ডাবলসের পরে ২-২ অবস্থায় (সিঙ্গলসে লক্ষ্য সেন হেরে যান আর জেতেন শ্রীকান্ত, ডাবলসে জেতেন সাত্ত্বিক-চিরাগ জুটি, হেরে যান কৃষ্ণ-বিষ্ণু জুটি) শেষ সিঙ্গলস ম্যাচে প্রণয় ২১-১৩ ২১-৮ পয়েন্টে হারিয়ে দেন মালয়েশিয়ার লিয়ং জুন হাওকে। অতএব ৩-২ ফলে কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ জেতে ভারত।
প্রথমবারের জন্য সেমিফাইনালে উঠে সেখানে ১৩ মে ২০২২ তারিখে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল আর এক শক্তিশালী প্রতিপক্ষ ডেনমার্ক। এখানেই ২টি সিঙ্গলস আর ২টি ডাবলসের পরে ২-২ অবস্থায় (সিঙ্গলসে লক্ষ্য সেন ১৩-২১, ১৩-২১ হেরে যান ভিক্টরের কাছে আর শ্রীকান্ত ২১-১৮, ১২-২১, ২১-১৫ জেতেন অ্যান্ডার্সের বিরুদ্ধে, ডাবলসে ২১-১৮, ২১-২৩, ২২-২০ কিম-ম্যাথিয়াসের বিরুদ্ধে জেতেন সাত্ত্বিক-চিরাগ জুটি আর কৃষ্ণ-বিষ্ণু জুটি ১৪-২১, ১৩-২১ হেরে যান অ্যান্ডার্স-ফ্রেডেরিক জুটির বিরুদ্ধে) শেষ সিঙ্গলস ম্যাচে প্রণয় ২১-৯, ২১-১২ পয়েন্টে হারিয়ে দেন ডেনমার্কের রাসমাস জেমকাকে। ৩-২ ফলে সেমিফাইনাল ম্যাচ জিতে প্রথমবারের জন্য ফাইনালে ওঠে ভারত। সেখানে ১৪ বারের চ্যাম্পিয়ন ইন্দোনেশিয়ার বিরুদ্ধে একটি জয় প্রয়োজন ছিল ভারতের প্রথম টমাস কাপ জেতার জন্য।
এইবার প্রবল উৎসাহ সৃষ্টি হয় ভারতে। ১৫ মে ২০২২ তারিখ নির্দিষ্ট ছিল ভারত বনাম ইন্দোনেশিয়ার ২০২২ টমাস কাপ ফাইনালের জন্য। প্রথম টাই-তে সিঙ্গলসে লক্ষ্য সেন পিছিয়ে পড়েও অ্যান্টনিকে হারিয়ে দেন ৮-২১, ২১-১৭, ২১-১৬ পয়েন্টে। দ্বিতীয় টাই-তে ডাবলসে সাত্ত্বিক-চিরাগ জুটিও পিছন থেকে এসে কেভিন-আহসান জুটিকে হারিয়ে দেন ১৮-২১, ২৩-২১, ২১-১৯ পয়েন্টে। ২-০ এগিয়ে যাওয়া ভারত বাকি তিন টাইয়ের যে কোনও একটি টাই জিতলেই টমাস কাপ ভারতের, এই অবস্থায় অসম্ভব মাথা ঠান্ডা রেখে কিদাম্বি শ্রীকান্ত ২১-১৫, ২৩-২১ পয়েন্টে হারিয়ে দেন জোনাথন ক্রিস্টিকে। গোটা টমাস কাপ জুড়েই অবিশ্বাস্য ও অতিমানবিক ব্যাডমিন্টন খেলেছেন শ্রীকান্ত। একটি গেমেও তাকে হারাতে পারেননি কেউ।
শ্রীকান্ত ও লক্ষ্য সেন এবং বাকি খেলোয়াড়রা ও কোচসহ পুরো ভারতীয় দলকে ধন্যবাদ। ১৭৬টি দেশ যে খেলাটা খেলে, সেই খেলায় বিশ্বকাপের সমতুলনীয় একটা সম্মান দেশকে এনে দেওয়ার জন্য। তাদের উপযুক্ত সম্মান দেওয়া উচিত। ব্যাডমিন্টনে পি ভি সিন্ধু, সাইনা নেহাওয়ালরা দেশকে গৌরবান্বিত করেছেন একাধিকবার। এবারেও অল ইংল্যান্ড চ্যাম্পিয়নশিপে রানার্স হয়েছিলেন লক্ষ্য সেন, ডেনমার্কের ভিক্টর অ্যাক্সেলসেনের কাছে ২১-১০, ২১-১৫ পয়েন্টে হেরে গিয়ে।
ব্যাডমিন্টনে, ১৯৮০ সালে প্রকাশ পাডুকোন ও ২০০১ সালে পুল্লেলা গোপীচাঁদ যথাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় ভারতীয় হিসাবে অল ইংল্যান্ড চ্যাম্পিয়নশিপ জেতেন। ১৯৮০তেই অলিম্পিক হকির শেষ সোনা জেতে ভারত, মস্কোতে। তারপরে ১৯৮৩র সেই অলৌকিক বিশ্বকাপ জয় কপিলদেবের দলের, যা গোটা দেশকে উন্মাদনায় নাচিয়ে দিয়েছিল। এটা পরে ২০১১ সালে আবার করে দেখিয়েছিল ভারত, মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে। ২০০৮ সালে বেজিং থেকে অভিনব বিন্দ্রা শুটিংয়ে প্রথম ভারতীয় হিসাবে অলিম্পিকের ব্যক্তিগত সোনা জেতেন। ২০২১-এর টোকিও অলিম্পিকে জ্যাভেলিন ছোড়ায় দ্বিতীয় ভারতীয় হিসাবে ব্যক্তিগত সোনা জিতে গণনায়ক হয়ে যান নীরজ চোপড়া, হইহই করে ওঠে দেশ তাঁর কৃতিত্বে। ৪০ বছর পর সেই টোকিওতেই হকির পদক আবার ছুঁয়ে ফেলে ভারত। পাঁচবারের দাবা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন বিশ্বনাথন আনন্দ এবং পাঁচবারের বক্সিং বিশ্বচ্যাম্পিয়ন মেরি কমও ব্যক্তিগত কৃতিত্বে ভারতের খেলাধুলোকে গৌরবান্বিত করেছেন।
এটাই হয়ত অদূর ভবিষ্যতে ভারতের কোনও সর্বোচ্চ খেতাব জেতার সেরা সুযোগ ছিল। শ্রীকান্ত, প্রণয় বা প্রণীত সেরা সময় পিছনে ফেলে এসেছেন, বলাই যায়। মালয়েশিয়ার লি চং উই এবং চিনের লিন ড্যান-এর সমসাময়িক হওয়ায় ভারতের সবচেয়ে আক্রমণাত্মক খেলোয়াড় শ্রীকান্ত কোনও বড় প্রতিযোগিতার সর্বোচ্চ খেতাব পাননি। লক্ষ্য সেন এখন ভারতের সেরা খেলোয়াড় কিন্তু ভিক্টর অ্যাক্সেলসেন এখনও তাঁর কাছে অজেয়। ভবিষ্যতে আর একটু পাওয়ারপ্লে শারীরিক ভারসাম্যয় অতুলনীয় লক্ষ্য সেনকে অপ্রতিরোধ্য করে তুলতে পারে। সাত্ত্বিকসাইরাজ রানকিরেড্ডি ও চিরাগ শেট্টিরও এখন উঠে আসার পালা।
ভারতে সব খেলারই (ব্যতিক্রম ক্রিকেট, যা অলিম্পিকে অন্তর্ভুক্ত নয়) সাফল্য আমরা বিচার করি অলিম্পিক পদক জেতার মাপকাঠিতে। তবে বিভিন্ন খেলায় আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার সাফল্য যদি বিচারের মাপকাঠি হয়, তবে পরিস্থিতি অনেকটাই সহনীয় মনে হতে পারে। সেটা যার যার বিচার করার ব্যাপার। তবে বিচারের মাপকাঠি যাই হোক না কেন, এই টমাস কাপ জেতা ব্যাডমিন্টন শুধু না, ভারতের সামগ্রিক খেলাধুলোতেই এক রুপোলি রেখা। ভবিষ্যতে ভারতের উজ্জ্বল ব্যাডমিন্টনের আকাশ দেখার আশা আমরা করতেই পারি এবং সেই আশায় অনুঘটকের কাজ করবে ভারতের ‘শাটলার’দের ২০২২-এর টমাস কাপ জয় এবং ১৫ মে ২০২২ তারিখটা।