শান্তা সিনহা
ভারতে শিশু-অধিকার আন্দোলনের একেবারে সামনের সারিতে যাঁরা রয়েছেন, শান্তা সিন্হা তাঁদেরই একজন। শিশুশ্রম ও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে তাঁর অগ্রণী ভূমিকা ও দীর্ঘমেয়াদি লড়াইয়ের কথা সারা বিশ্ব জানে। পেশায় হায়দরাবাদ কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপিকা, ও মামিদিপুড়ি বেঙ্কটরঙ্গাইয়া ফাউন্ডেশন-এর প্রতিষ্ঠাতা শ্রীমতি সিন্হা ২০০৭ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত দু’দফায় জাতীয় শিশু অধিকার কমিশন-এর (NCPCR) চেয়ারপার্সনের দায়িত্ব পালন করেছেন। শিশু-অধিকার অন্দোলনে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য পদ্মশ্রী সম্মান পেয়েছেন ১৯৯৮-এ।
আমি এ-বছর এমন ৮০টিরও বেশি মেয়ের সঙ্গে কথা বলেছি, যারা বাল্যবিবাহের শিকার হিসেবে তাদের অভিজ্ঞতার কথা আমাকে শুনিয়েছে। প্রতিটি মেয়েই নানারকম হিংস্রতা সহ্য করে বিধ্বস্ত – তাদের শরীর, যৌনতা, এবং মন সবই হিংসার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। প্রতিটি মেয়েই অকথ্য অত্যাচারের শিকার এবং এমন এক অন্ধকূপে নিমজ্জিত, যেখান থেকে বেরনোর কোনও পথ নেই। পথ নেই, কারণ, কাজের চাপ, খিদের জ্বালা এবং অনাহার, অসুস্থ শরীর, যাবতীয় ঝুঁকি-সহ বারংবার সন্তানধারণ, শ্বশুরবাড়ির অত্যাচার এবং একাকিত্ব— এ সবই তাদের নিত্যসঙ্গী। এই কিশোরীরা দিনে এবং রাতে কার্যত এক যুদ্ধক্ষেত্রের মধ্যেই বসবাস করে – অসম যুদ্ধ, এবং সবাই জানে, সে যুদ্ধে কে জিতবে আর কে হারবে।
রোজাকে যখন আমি দেখি তখন সে স্বামী-পরিত্যক্তা এবং বাবা-মাও তাকে ত্যাগ করেছে। রুগ্ন, শুকনো, ফ্যাকাশে একটি মেয়ে, প্রতিবেশীদের কাছ থেকে ভিক্ষে করে খায়। রোজা জানায়: “পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চেয়েছিলাম আমি। বাবা-মা’র কাছে কাকুতিমিনতি করেছিলাম, যেন বিয়ে না দেয়। কিন্তু দিয়ে দিল জোর করে বিয়ে। নবম শ্রেণিতে পড়ি তখন। ১৪ বছর বয়স। পড়াশোনার স্বপ্নের ওখানেই ইতি। বিয়ের পর সে একটা আলাদা জগৎ। চাষের কাজ আগে কখনও করিনি তেমন। কিন্তু শিগগিরই তুলো তোলা, পরাগ সংযোগ ঘটানো, ধান রোয়া, আরও সব চাষের কাজের পাশাপাশি ঘরের কাজও শিখে নিতে বাধ্য হলাম। বিয়ের দু’মাসের মধ্যে পেটে বাচ্চা এল, আর বাচ্চা আসার চার মাসের মধ্যে গর্ভপাত। খুব দুর্বল লাগত। ডাক্তার দেখাতে তিনি এত অল্প বয়সে গর্ভবতী হওয়ার জন্য বকাবকি করলেন এবং নিজের শরীরের যত্ন নিতে বললেন। বললেন, আমার রক্তাল্পতা রয়েছে। তাই ঠিকঠাক খাবার খাওয়া প্রয়োজন, এবং পুরো বিশ্রাম দরকার। কিন্তু বিশ্রামের সময় কই? দু’বছরের মধ্যে চারবার গর্ভপাত হল আমার। এবং এই একবারের গর্ভাবস্থাতেও কোনওরকম চিকিৎসা হয়নি। প্রতিটি গর্ভপাতই চুপচাপ সহ্য করতে হয়েছে বাড়িতে বসে। সবার অজ্ঞাতে, এবং কারও কোনও সাহায্য ছাড়াই। প্রতিটি গর্ভপাতের পরেই ভয়ানক রক্তপাত হত। প্রচুর খাটতে হত, শরীর খারাপ হয়ে যাচ্ছিল, আমি পুরো শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম। শ্বশুরবাড়িতে আমার দিকে তাকানোর কেউ ছিল না। এই কিছুদিন হল বাবা-মায়ের কাছে চলে এসেছি, এবং আমি আর ফিরে যেতে চাই না।”
নাগাম্মার যখন মল্লেশের সঙ্গে বিয়ে হয় তখন তার বয়স ১২। মল্লেশের তখন ২২, এবং ডিভোর্সি। নাগাম্মা আমায় বলেছিল: “আমার যখন বিয়ে হয় তখন আমি ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ি, তখনও আমার ঋতুও শুরু হয়নি। আমাকে রান্না করতে হত, ঘর ঝাঁট দিতে হত, জল আনতে হত, ভেড়ার খোঁয়াড়, যেখানে ২০০টা ভেড়া থাকত, সেটা পরিষ্কার করতে হত…। আমার শাশুড়ি আমাকে এক মিনিটের জন্যও বসতে দিত না। ছ’মাস পর থেকে আমার ঋতু শুরু হয়, আর সেই সঙ্গে সত্যিকারের দুশ্চিন্তাও। আমার স্বামী আমার কাছে শরীর দাবি করল। সে আমায় মারত, আঁচড়াত, রীতিমতো আক্রমণ করত প্রতি রাতে। আমি খুব ভয়ে-ভয়ে থাকতাম। আমার শাশুড়ি খুব চিন্তা নিয়ে খোঁজ নিত, আমার কোনও ঋতু বাদ পড়ল কিনা। সে আর আমার ননদ, দু’জনেই আমাকে খুব গালাগাল করত। আমি বাঁজা বলে দোষারোপ করাও শুরু করল। অভিযোগ করার মতো কেউ ছিল না আমার। পুরো একা হয়ে গিয়েছিলাম। আমার মাকে কী করে এসব অত্যাচারের কথা বলতাম আমি? আমি তো জানি বাবা-মা আমাকে ছয় তোলা সোনা, রুপো এবং নগদ দেড় লাখ টাকা পণ দিয়ে বিয়ে দিয়েছে।
ঋতু শুরু হওয়ার চার মাস পর আমার পেটে বাচ্চা আসায় শ্বশুরবাড়ির লোকেরা একটু আশ্বস্ত হল। আমি খুব দুর্বল হয়ে পড়েছিলাম, কারণ কোনও বিশ্রাম পেতাম না, খাবারও ছিল না। প্রসবের জন্য বাড়িতে এলাম। ডাক্তার বললেন, খুব সমস্যা হতে পারে। সিজার হল, আর একটা বাচ্চা মেয়ে হল। কেউ খুশি হল না।
আমার স্বামী এবং পুরো পরিবারই ভেড়া চরাতে অনেকদিনের জন্য দূরে-দূরে যেত। আমিও যেতাম তাদের সঙ্গে, কোলে বাচ্চা নিয়েই। বাচ্চাটাকে কাপড় দিয়ে দোলনা করে গাছে ঝুলিয়ে কোনওরকমে সামলাতাম। কেউ সাহায্য করত না। লোকগুলো আগের মতোই অত্যাচার করত। দু’মাসের মধ্যে আবার গর্ভবতী হলাম। তারপর থেকে যেহেতু আমার পেটে বাচ্চা, তাই ওরা যখন ভেড়া চরাতে যেত আমাকে একা বাড়িতে রেখে যেত। আমাকে একা হাতে কাজ করে পয়সা রোজগার করতে হত, বাচ্চা সামলাতে হত, ঘরের সমস্ত কাজও করতে হত। কোনও বন্ধু ছিল না, কেউ সাহায্য করার ছিল না। খুব দুর্বল হয়ে পড়েছিলাম। এবার ডাক্তার আমাকে খুব কড়াভাবে বকাবকি করলেন এতটা অসতর্ক হওয়ার জন্য। বললেন আমার রক্ত নেই শরীরে, এবং এই বাচ্চা হতে গিয়ে আমি মরেও যেতে পারি। আবার সিজার হল, আর এবার ছেলে হল। অত্যাচার কিন্তু কমল না সে জন্য। আমি কিছু বলতে পারতাম না। আমার কোনও স্বাধীনতা ছিল না…
“…আমার বোন কেজিবিভি (কস্তুরবা গান্ধি বালিকা বিদ্যালয়)-তে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। আমি আমার সর্বশক্তি দিয়ে ওকে বাঁচাব, যাতে পড়া শেষ হওয়ার আগেই ওকে জোর করে বিয়ে দিয়ে দেওয়া না-হয়…”
আমরা একবিংশ শতাব্দীতে বাস করলেও বাল্যবিবাহের মতো বর্বর প্রথা দেশে রমরম করেই চলছে। ২০১১-র জনগণনায় ৩৩.৮ মিলিয়ন (তিন কোটি ৮০ লক্ষ) বাল্যবিবাহের ঘটনা নথিভুক্ত। যার মধ্যে ১৯.৫ মিলিয়নের (এক কোটি ৯৫ লক্ষ) বয়স ১৪-র নীচে, এবং বাকি ১৪.৩ মিলিয়ন (এক কোটি ৪৩ লক্ষ) ১৫ থেকে ১৯-এর মধ্যে।
সুপ্রিম কোর্ট নাবালিকা বধূর সঙ্গে সঙ্গমকে ধর্ষণ বলে অভিহিত করে সম্প্রতি যে যুগান্তকারী রায় দিয়েছে, তাতে একটি সুনিশ্চিত এবং গভীর বার্তা রয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ আদালত খুব স্পষ্ট জানিয়েছে, ১৮ বছর বয়সের আগে পর্যন্ত প্রত্যেক মেয়েই নাবালিকা – সে বিবাহিত নাবালিকা, অবিবাহিত নাবালিকা, ডিভোর্সি নাবালিকা, স্বামী-পরিত্যক্তা নাবালিকা বা বিধবা নাবালিকা, যাই হোক না কেন।
বলতে দ্বিধা নেই, এদের প্রত্যেকের জন্যই সুপ্রিম কোর্টের এই রায় অত্যন্ত সন্তোষজনক।
সুপ্রিম কোর্টের রায়
ভারতীয় পেনাল কোড-এ ধর্ষণের বিষয়ে একটা ছাড় দেওয়া আছে। ১৫ বছরের ঊর্ধ্বে বিবাহিত মেয়েরা তাদের স্বামীর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনতে পারে না। সাম্প্রতিক রায়ে সুপ্রিম কোর্ট এই ব্যতিক্রমটি উল্লেখ করেছে। একইসঙ্গে কিন্তু এ-কথাও বলতে হবে যে, নাবালিকাদের ক্ষেত্রে ‘সম্মতি’ কথাটির আইনে কী অর্থ হবে সেই ব্যাখ্যা দিয়ে কোর্ট কিন্তু বৈবাহিক ধর্ষণের বৈধতার প্রশ্নটি এড়িয়ে গিয়েছে। আদালতের ব্যাখ্যা, যদি কোনও পুরুষ কোনও নাবালিকার সঙ্গে যৌনসঙ্গমে লিপ্ত হন, তবে বিবাহের প্রশ্নটি সেক্ষেত্রে বিবেচ্যই হবে না।
আইপিসি-র ৩৭৫ নম্বর ধারার ২ নম্বর ব্যতিক্রম সম্বন্ধে বলতে গিয়ে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে যে, এটি সংবিধানের ১৫ (৩), ২১ এবং ১৪ নম্বর ধারার বিরোধী। বিশেষ করে, সর্বোচ্চ আদালতের মতে, ১৫ (৩) ধারার অন্তর্নিহিত দর্শনে শিশুকন্যাদের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখার যে নীতিকে ভিত্তিপ্রস্তর হিসেবে মান্যতা দেওয়া হয়েছে, ব্যতিক্রমটি তাকে লঙ্ঘন করছে। একই সঙ্গে লঙ্ঘন করছে ২১ নং ধারায় উল্লেখিত শিশুকন্যার সম্মান এবং পূর্ণ শারীরিক স্বাধীনতার সঙ্গে বেঁচে থাকার মৌলিক অধিকারের শর্তও। আদালত দ্ব্যর্থহীন ভাষায় এটাও জানিয়েছে যে, যে সমস্ত বিশেষ আইন শিশু এবং নারীদের স্বার্থ সবচেয়ে ভালোভাবে সুরক্ষিত রাখার চেষ্টা করে, সেগুলিকেই পূর্বদৃষ্টান্ত হিসেবে আইপিসি-র উপরে স্থান দিতে হবে।
এই রায়ে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব রয়েছে, যা ভারতের শিশু এবং শিশুদের তত্ত্বাবধান সংক্রান্ত আইনের ওপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে।
প্রথম প্রস্তাবে বলা হয়েছে, একজন নাবালককে (অর্থাৎ শিশু, যার বয়স ১৮ বছরের কম) কখনওই একজন পূর্ণবয়স্ক বা এমন একজন যে তার ক্ষমতা এবং দক্ষতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল, তার মতো করে গণ্য করা চলবে না।
দ্বিতীয় প্রস্তাবটি হল, কোনও পরিস্থিতিতেই অনূর্ধ্ব-১৮ বছরের কোনও নাবালিকা যৌন সঙ্গমের জন্য সম্মতি দিতে, ইচ্ছা প্রকাশ করতে অথবা পরোক্ষ ইঙ্গিত দিতে পারে না। অর্থাৎ এর পর থেকে ১৮ বছরের নীচে কেউ যৌন সঙ্গমের ঘটনায় জড়িত থাকলে আইনের চোখে আর সম্মতিসূচক যৌন মিলনের কোনও প্রশ্ন উঠবে না।
শেষত, বিবাহিত এবং অবিবাহিত নাবালিকাদের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করার স্বপক্ষে আদালত কোনও যুক্তি খুঁজে পায়নি। এতদিন আইনের চোখে বিষয়টি ছিল এমন যে, কোনও পুরুষ যদি তার ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সী স্ত্রীর সঙ্গে সম্মতির অপেক্ষা না-করে যৌন সঙ্গমে লিপ্ত হয় তবে তা নির্দোষ বলে গণ্য হবে, কিন্তু সেই পুরুষই যদি সেই কাজটি কোনও অবিবাহিতা নাবালিকার সঙ্গে করে তবে তা অপরাধ বলে গণ্য হবে। এই পৃথকীকরণ, সর্বোচ্চ আদালতের সাম্প্রতিক ব্যাখ্যায়, নাবালিকাটির অধিকারের পরিপন্থী, যে অধিকারের কথা সংবিধানের ১৫(৩) ধারায় উল্লেখিত।
সংবিধানের ১৫(৩) ধারার অন্তর্নিহিত তাৎপর্যকে সামনে নিয়ে এসে সুপ্রিম কোর্ট ভারতীয় সংবিধানে বিধৃত এক অতি মৌলিক মূল্যবোধকেও পুনরাবৃত্ত করেছেন। আদালতের ব্যাখ্যা, ‘একজন নাবালিকা কন্যার তরফে কোনও ইতিবাচক পদক্ষেপকে শুধু যে অকুণ্ঠভাবে উপস্থাপন করতে হবে তাই নয়, যে কোনও আইন যা নাবালিকা কন্যাদের প্রাপ্য অধিকারগুলিকে খর্ব করার চেষ্টা করে তাদের ঊর্ধ্বে সেটিকে স্থান দিতে হবে।’ ফলত, আদালত শিশুকন্যাদের সাংবিধানিক অধিকারকেই সর্বোচ্চ মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছে। রায় দিতে গিয়ে মহামান্য বিচারপতিরা জানিয়েছেন, “প্রতিটি শিশুকন্যার শারীরিক স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রয়েছে, এবং আইপিসি-অনুমোদিত কোনও আইন বা চিরাচরিত প্রথা তাকে ধ্বংস করতে পারে না।”
এই রায় সমস্ত মেয়েদের তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে আশা জোগাবে। “নাবালিকাদের, সে তারা বিবাহিত হোক বা না-হোক, মানবাধিকারের প্রশ্নটি যথেষ্ট পরিমাণে সক্রিয়। প্রশ্নটির স্বীকৃতি এবং গ্রহণযোগ্যতা প্রাপ্য।” স্পষ্টতই, এই রায় সংবিধানের ১৪ এবং ১৫ নং ধারার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে আমাদের দেখিয়ে দেয় যে, ১৫-১৮ বছরের মধ্যে বিবাহিত মেয়েদের ক্ষেত্রে অধিকারের সাম্য লঙ্ঘিত হচ্ছিল এবং বৈষম্য ঘটছিল।
এই রায়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আইপিসি-র ৩৭৫ নম্বর ধারার ২ নম্বর ব্যতিক্রম-এর সংশোধিত পাঠ এখন এরকম দাঁড়াবে: “স্ত্রীর বয়স ১৮-র বেশি হলে স্বামী যদি তার সঙ্গে যৌন সঙ্গম বা যৌন ক্রিয়াকলাপে লিপ্ত হয়, তাকে ধর্ষণ বলা হবে না।”
নাবালিকা মেয়েদের সর্বোচ্চ অধিকার সুনিশ্চিত করতে আইপিসি, শিশুদের যৌন নির্যাতন থেকে সুরক্ষা আইন (প্রোটেকশন অফ চিলড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেন্সেজ অ্যাক্ট, ২০১২), অপ্রাপ্তবয়স্কদের বিচার আইন (জুভেনাইল জাস্টিস কেয়ার অ্যান্ড প্রোটেকশন অফ চিলড্রেন অ্যাক্ট, ২০১৫ অ্যামেন্ডমেন্ট) এবং বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ আইন (প্রোহিবিশন অফ চাইল্ড ম্যারেজ অ্যাক্ট, ২০০৬)এবং প্রাসঙ্গিক অন্যান্য সমস্ত আইনগুলির মধ্যেই সমন্বয় বিধান জরুরি।
এক নতুন পথ
সুপ্রিম কোর্টের রায় ঘোষণার দিনটি ঘটনাচক্রে মিলে গিয়েছে আন্তর্জাতিক শিশুকন্যা দিবসের সঙ্গে। হয়তো সমাপতন, কিন্তু নিশ্চিতভাবেই এটি আমাদের দেশের লক্ষ-লক্ষ বিবাহিত মেয়ের স্বাধীনতা এবং সম্মান অর্জনের লক্ষ্যে এক নতুন এবং ঐতিহাসিক পথ খুলে দিয়েছে। বিলম্বিত হলেও, কখনও না-হওয়ার চেয়ে তো ভাল। আমি এটুকুই শুধু বলতে পারি, এই রায় আগে বাস্তবায়িত হলে আমাদের দেশের আরও কয়েক লক্ষ নাবালিকাকে হয়তো সুবিচার দেওয়া যেত।
বাল্যবিবাহ সম্পর্কে আমাদের নীতি ও আদর্শগত অবস্থানকেও এই রায় এক সুস্পষ্ট গ্রহণযোগ্যতা দিয়েছে। রাষ্ট্রের একদম সূচনাতেই একে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা উচিত ছিল। আদালত উল্লেখ করেছে, দেশের সব রাজ্যেই এ-সংক্রান্ত আইনের মূল অভিমুখটির উচিত এই লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে ওঠা। আমি ধারাবাহিকভাবে এটাই বলে এসেছি যে, বাল্যবিবাহ নিষিদ্ধ করার বিষয়টি নিয়ে কোনও আপোষ চলতে পারে না। এ-প্রসঙ্গে কোর্টের এই সুস্পষ্ট উচ্চারণ আমাদের দেশের শিশুদের সুবিচার সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
তবুও, ‘সম্মতি’র এই স্পষ্ট ব্যাখ্যার ফলে বয়ঃসন্ধিকালের মেয়েরা তাদের শরীর এবং যৌনতার উপর থেকে কর্তৃত্ব হারাতে পারে। কোর্ট সঠিকভাবেই যৌন সঙ্গম এবং বিবাহের সম্মতির প্রশ্নদুটিকে পৃথক করেছে, কিন্তু বয়ঃসন্ধিকালীন যৌনতার একটি পূর্ণাঙ্গ সমালোচনামূলক গবেষণা এখনও বাকি রয়ে গেল। রোজা এবং নাগাম্মার মতো লক্ষ-লক্ষ মেয়েদের কাছে এই রায় এখন সুবিচারের প্রত্যাশা তৈরি করেছে। কিন্তু এই মেয়েদের শারীরিক সুখ এবং আনন্দ উপভোগ করার অধিকারও প্রাপ্য, যে অধিকার থেকে আইন দীর্ঘদিন তাদের বঞ্চিত করে রেখেছে। আশা করা যাক, ভবিষ্যতে এই বিষয়টিও যুক্তিনিষ্ঠ আলোচনার বৃত্তে উঠে আসবে।
অসাধারণ লেখা। সমৃদ্ধ হলাম….
Bhishon informative ebong gurutyopurno lekha.