তুই চইল্যে যা ভাংগা সাইকিলে

তুই চইল্যে যা ভাংগা সাইকিলে | শিবাংশু দে

শিবাংশু দে

 

আমাদের ছোটবেলায় কলকাতায় এলে দেখতুম কেউ সাইকেলে চড়ে না। মানে আমাদের বয়সী বন্ধুবান্ধবরা। তারা ‘রিকশা’ চড়ে। সেটা মধ্য ষাটের পরের সময়। আমরা আট-নবছর বয়সের মধ্যে ‘হাফপ্যাডেলে’ সাইকেল চালাই। বাঁহাতে হ্যান্ডল, ডান হাতে ক্রসবার আর শরীরের ভার সাইকেলে সিটে। পাঁই পাঁই করে রাস্তায় চালাচ্ছি। বাবা ছিলেন দীর্ঘকায় মানুষ তাঁর সাইকেল ছিল চল্লিশ ইঞ্চি। সেটায় পা পৌঁছোতে অনেক সময় লেগেছিল। তবে হাফপ্যাডেলে চালিয়ে নিতুম। সাতক্লাসে পড়ার সময় আমি দশ পেরিয়েছি। বাড়ির ধরন অনুযায়ী লম্বা হতে শুরু করেছিলুম। পাশের বাড়ি থাকত সোমেন। তার বাবার একটা বাইশ ইঞ্চি সাইকেল ছিল। তার থেকে ধার নিয়ে প্রথম সিটে বসে সাইকেল চালানো। একটাই ভাবনা আসত মনে। ‘আমারে বাঁধবি তোরা, সে বাঁধন কি তোদের আছে?’

আমাদের সাবেক ভদ্রাসন ছিল দক্ষিণবিহারের সেই শহরে। যাকে সবাই এদেশের প্রথম ‘কসমোপলিটান’ জনপদ হিসেবে চেনে। পাহাড় জঙ্গল কেটে টাটাবাবা মানুষের বসত বসিয়েছিলেন। বিএনআর, অর্থাৎ বেঙ্গল নাগপুর রেললাইনের একটা নির্জন হল্ট স্টেশন। গ্রামের নামেই তার নাম, ‘কালিমাটি’। নিচু প্ল্যাটফর্মের থেকে কয়েক পা দূরে একটা কুঠুরি। যার মধ্যে স্টেশনমাস্টার থেকে অপেক্ষার ঘর সবাই জায়গা ভাগ করে নেন। তার থেকে একটু সরে তাঁবু খাটানো। যেমন দূর-দূরান্তরের মাঠেঘাটে দেখা যায় ভূতাত্ত্বিকদের খাটানো তাঁবু। সেরকমই। বাদামপাহাড়, গরুমহিষানি-র আকরিক খাদান থেকে প্রায় একশো কিমি উত্তরে কালিমাটিতে তৈরি হচ্ছে দেশের প্রথম লোহা কারখানা। লালমাটির সেই জঙ্গলমহালে মাথায় ফেল্ট হ্যাট, কোমরে হাফ প্যান্ট, উঁচুনিচু পাহাড়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়ান আমাদের পূর্বপুরুষরা। তাঁদের বাহন, বাইসাইকেল। হ্যান্ডেলে লণ্ঠন, রডে হাওয়া পাম্প, পিছনের ক্যারিয়ারে বাঁধা কারখানার হেলমেট। সাইকেল তখন থেকেই এই গ্রামের স্ট্যাটাস সিম্বল।

ইতিহাস বলছে, গত শতকের শুরুতে এদেশে পঁয়ত্রিশ হাজার সাইকেল আমদানি করা হয়েছিল। সেসব সাহেব কোম্পানি, বিএসএ, রাজ আর র‌্যালে কোম্পানির তৈরি করা যন্ত্র। আমার পিতামহ ছিলেন যাদবপুর ইঞ্জিনিয়রিং কলেজের পূর্বসূরি বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের ছাত্র। সেখান থেকে উনিশশো কুড়ি-বাইশ নাগাদ ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়রিং পাশ দেন। অতি অনুগত শিষ্য ছিলেন আচার্য প্রফুল্লচন্দ্রের। সঙ্গত কারণেই স্বদেশিদের সম্পর্কে পুলিশের রিপোর্ট ভালো থাকত না। কিন্তু কীভাবে যেন তিনি ঢুকে পড়েছিলেন ভারতীয় রেল কোম্পানিতে। পোস্টিং ছিল ইলাহাবাদের কাছে নইনিতে। হঠাৎ এক বন্ধুর চিঠিতে তিনি জানতে পারেন পুলিশ জেনে ফেলেছে তিনি তাদের এড়িয়ে সরকারি কাজ পেয়ে গেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। চাকরি তো যাবেই। আরও কিছু শাস্তি হতে পারে। তিনি তখন পঁচিশ-ছাব্বিশ। বিয়েথাওয়া করেননি। ভাবলেন, আপাতত কলকাতা হয়ে ‘বাড়ি’ ফিরে যাই। অবস্থা একটু ঠান্ডা হলে ভাবা যাবে। ইলাহাবাদ হয়ে ফেরাটা নিরাপদ নয়। তাই তিনি নাগপুর হয়ে কলকাতা ফিরে আসার প্ল্যান করলেন। একদিন সকালবেলা নাগপুর ফেরত ট্রেনটি এসে দাঁড়াল কালিমাটি হল্ট স্টেশনে। ওখানে গাড়ি দাঁড়ালেই টাটা কোম্পানির এজেন্টরা প্রতি কামরায় ঢুকে জিজ্ঞেস করতেন, কেউ টাটার নতুন কারখানায় চাকরি করতে ইচ্ছুক কি না? সচরাচর কলকাত্তাই বাঙালিরা কেউই এই পাহাড়ি বনজঙ্গলময় গ্রামে চাকরি করতে উৎসুক থাকতেন না। বিশেষত যাঁদের কারিগরি উচ্চশিক্ষার সুযোগ ঘটেছে। তাঁদের জন্য তো কলকাতায় অঢেল চাকরির সুযোগ।

ঠাকুরদার মনে হল, দেখা যাক। যদিও তাঁরা দীর্ঘকাল ধরে আগমার্কা উত্তর কলকাতার বাসিন্দা। কিন্তু সেটা নিয়ে তাঁর কোনও পিছুটান ছিল না। মালপত্র নিয়ে নেমে পড়লেন কালিমাটিতে।

টাটা কোম্পানির মালিকরা ঠিক এই রকম ভারতীয় যুবকদের জন্য দু হাত বাড়িয়ে অপেক্ষা করতেন। বিশেষত যাঁদের নামে ব্রিটিশ পুলিশের অভিযোগ আছে, তাঁরা তো রীতিমতো কুলীন। বড় শহর, অর্থাৎ কলকাতা, বম্বে, ম্যাড্রাসের বাইরে, সাহেবি মালিকানাহীন বলার মতো কলকারখানা তখন তো ছিলই না। মহারাষ্ট্রে টাটাদেরই কিছু কাপড় মিল, যেমন স্বদেশি মিল, ইত্যাদি তৈরি হয়েছিল। কিন্তু টাটা আয়রন অ্যান্ড স্টিল কোম্পানি ছিল আদত ভারতীয় শ্রমশক্তিকে মর্যাদা দেওয়ার প্রথম উদযাপন। যাঁদের লভ্যাংশ নিজেদের পুঁজি বাড়াতে নিবেশ করা হত। মহারানির সিন্দুকে যেত না। ‘এমপাওয়ারমেন্ট’ বলে একটা শব্দ আজকাল সবাই যখন-তখন আওড়ান। ভারতীয় ভারিশিল্প ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে টাটা কোম্পানি এই ব্যাপারটা এদেশে প্রথম করে দেখিয়েছিলেন। তাঁদের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা কর্মচারীকুল ‘এমপাওয়ার্ড’ হয়েছিলেন একটি বিলিতি যন্ত্রের আমদানিতে। তার নাম বাইসাইকেল। কালিমাটি থেকে জামশেদপুর হয়ে ওঠার পিছনে বাইসাইকেল নামক গতিযানটির একটি বড় অবদান আছে। মানুষের নিত্য জীবনযাত্রার জরুরি অংশ ছিল বাইসাইকেলের সওয়ারি। ঠাকুরদারও প্রথম ঐহিক সম্পত্তি ছিল একটি বাইসাইকেল। তৎকালীন পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয়, নটিংহ্যামের র‌্যালে কারখানায় তৈরি সারসমুখো লোগো দেওয়া সাইকেলটি ছিল তাঁর নিত্যসঙ্গী। সেকালের বিচারে তার দাম ছিল যথেষ্ট। অবশ্যই সাধারণ শ্রমিকদের ক্ষমতার বাইরে। কিন্তু নতুন তৈরি হতে থাকা দেশের প্রথম শিল্পশহরে মোটামুটি পদস্থ বাঙালিদের একমাত্র বাহন ছিল সাইকেল। বড় সাহেবসুবোদের দু-চারজনের কাছে অবশ্য গাড়িও থাকত। অস্টিন, মরিস, হিলম্যান। কিন্তু শহরটির ‘সত্তানির্মাণ’ প্রক্রিয়ায় সাইকেল যন্ত্রটি ছিল অবিচ্ছেদ্য হাইফেন।

জামশেদপুরে ভূপ্রকৃতিটি পাহাড়িয়া। ছোটনাগপুরের মালভূমির অন্যান্য জায়গার মতো রাস্তাঘাটগুলিতে প্রচুর চড়াই-উৎরাই। রিকশা নামক যানটি ছিল বঙ্গদেশের শহরাঞ্চলে সাধারণ মানুষের প্রধান অবলম্বন। হয়তো এখনও অনেক জায়গায় আছে। কিন্তু আরোহীর ভারসহ অবলীলায় রিকশ চালানোর তাকত এখানকার দরিদ্র লোকের বিশেষ ছিল না। কারখানা থেকে কোয়াটার্স, দোকানবাজার বা লৌকিকতা রক্ষা, অথবা জায়মান বাঙালির সাংস্কৃতিক জীবন গড়ে তোলার তাগিদ, সব কাজেই জীবন ছিলো সাইকেলনির্ভর। নিজস্ব, ব্যক্তিগত  চলাফেরা করার জন্য সাইকেলই ছিল কালিমাটির মানুষের জন্য অন্ধের যষ্টি।

সে অর্থে জামশেদপুর কখনও ‘শহর’ ছিল না। সাজানোগোছানো, পাকা রাস্তা, পাকা বাড়ি, সুপ্রচুর বিজলি আর জল আর প্রকৃতির দাক্ষিণ্যে সম্পন্ন একটা চমৎকার বাসভূমি। সারা দেশ থেকে লোকজন এখানে ‘চাকরি’ করতে এসেছিলেন। কেউই ‘থাকব’ বলে আসেননি। আমার পিতামহ তো তাঁর পেশাগত ভারিক্কি পরিচয়ের দৌলতে টাটা কোম্পানি থেকে শহরের কেন্দ্রস্থলে একটি লোভনীয় ভূসম্পত্তির অধিকারী হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি ‘অনেকদিন থেকেছি। আর বেহারে থাকব না’ ‘জেদ’ ধরে জমিটি তাঁর এক সুহৃদের নামে করে দেন। ছেলেদের কথায় কান দেননি। অন্যান্য প্রদেশের লোকজনও চাকরি ফুরোবার পর ‘নিজের’ দেশে চলে যেতেন। পিতামহও তাঁর শিকড়ে ফিরে গেলেন। অন্যদিকে মাতামহ ছিলেন ওপার বাংলার লোক। সারা চাকুরিজীবন ধরে যথাসর্বস্ব উপার্জন দিয়ে ফরিদপুর-বাজিতপুরে ভূসম্পত্তি বাড়িয়ে গিয়েছিলেন। এক চমৎকার ‘সুপ্রভাতে’ তিনি জানতে পারলেন সব ‘মায়া’ হয়ে গেছে। তুমি কার, কে তোমার। এই ধাক্কাটি সামলানো এই আরামে অভ্যস্ত, পদস্থ মানুষটির সাধ্যের অতিরিক্ত হয়ে গেল। অবিলম্বে সন্ন্যাসরোগে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে মানুষটি পৃথিবীর মায়া কাটালেন। পাঁচটি অনূঢ়া কন্যা এবং এক নাবালক পুত্রকে নিয়তি ঠাকরুনের ভরসায় ফেলে দিয়ে। একমাত্র মামা পিতৃহারা হয়েছিলেন এগারো বছর বয়সে। পিতার উত্তরাধিকার বলতে পেয়েছিলেন ‘বাঙালে’ গোঁ আর একটি র‌্যালে সাইকেল। তাঁর মতে সাইকেলটিই তাঁকে বাঁচিয়ে দিয়েছিল। এক পিতৃবন্ধুর দয়ায় সদ্য ইশকুল পাশ দেওয়া সতেরো বছরের ছেলেটা একদিন টাটার মোটর কারখানায় কনিষ্ঠ কেরানির চাকরি পেয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এই কাজটি করা তাঁর পক্ষে সম্ভব হত না, যদি না তার পিতৃদেব সাইকেলটি রেখে যেতেন। দিনে বাইশ থেকে চব্বিশ কিমি যাতায়াত। সাধারণ মানুষের প্রয়োজনীয় জনতা পরিবহণ ব্যবস্থা চিরকালই এই শহরে অপ্রতুল। একমাত্র পৈতৃক উত্তরাধিকার সাইকেলটি আমার মামা নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলেন। প্রতিষ্ঠিত চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হয়ে ওঠার পরেও বহুদিন। আমাদের শহরে যাবতীয় ‘গতিশীলতা’র প্রতীক দুচাকার এই বিস্ময়। সাইকেল।

টাটাবাবার কারখানা তৈরি হওয়ার পর এখানকার আদি উপজাতিক অধিবাসীরা ধীরে ধীরে টাটার জমিদারি সীমানার বাইরে নিজেদের সরিয়ে নেন। গ্রামের ঠিক মাঝখানে কারখানা। তাকে ঘিরে চারদিক জুড়ে কলোনি কালচার। রেলস্টেশনটি শহরের দক্ষিণে। তার কাছকাছি মোহল্লা বার্মা মাইনস। জামশেদপুরের প্রাচীন বাসিন্দারা সবাই দেখেছি কখনও না কখনও বার্মা মাইনসে থাকতেন। সেখান থেকে আমাদের চৌরঙ্গি, বিষ্টুপুর বা আমাদের শ্যামবাজার, সাকচি তো অনেক দূরে। এ শহরের শিরাপ্রণালীতে অনন্ত সাইকেল কাফিলা রক্তের মতো বয়ে যেত। একমাত্র ভরোসেমন্দ সওয়ারি।

দাদুর সাইকেল একটাই। বাবারা আট ভাই। তাঁদের মধ্যে সাইকেল চড়তে সক্ষম অন্তত চারজন। দাদু ছিলেন খুব স্বাস্থ্যসচেতন। বছর চল্লিশ বয়স হতে তিনি কোম্পানির গাড়ির সেবা নেওয়া বন্ধ করলেন। বড়সাহেব সাইকেল চড়ে গেলে হয়তো পদমর্যাদা সামান্য ‘ক্ষুণ্ণ’ হয়। তিনি চিরকাল, শীতগ্রীষ্ম বারোমাস, ভোর পাঁচটার মধ্যে প্রাতঃভ্রমণ সেরে বাড়ি ফিরে আসতেন। ছেলেরা যদি তখনও শয্যাত্যাগ না করে থাকে তবে রীতিমতো মিলিটারি ইস্টাইলে তাদের বিছানা ছাড়ানোর জন্য হাঁকডাক শুরু হয়ে যেত। বাবা বলতেন বেলুড় হস্টেলে তাঁদের ওয়ার্ডেন, পরবর্তীকালে যিনি স্বামী তেজসানন্দ হয়েছিলেন, ভোর চারটের সময় কাঁসি বাজিয়ে তাঁদের বিছানাছাড়া করতেন। কিন্তু বাবার বিশেষ অসুবিধে হত না। পুরনো অভ্যেস। সকাল সাড়ে ছটার মধ্যে দাদুর স্নান, প্রাতরাশ শেষ। তিনি জুতো মসমস করে পদব্রজেই কারখানার দিকে হাঁটা দিতেন। সাইকেল বাড়িতে। অনেক উমেদার। প্রথম দিকে জ্যাঠামশাই আর বাবা সাইকেলে ডবল রাইড, টিনপ্লেট কলোনি থেকে তুইলাডুংরিতে আর ডি টাটা হাই স্কুল। জ্যাঠামশাই ঐ স্কুলের প্রথম ব্যাচ। বাবা দ্বিতীয়। আমিও বহুকাল পরে ঐ স্কুলেরই ছাপ।

জ্যাঠামশাই আর বাবা যখন বাইরে পড়তে চলে গেলেন, তখন সহজ উত্তরাধিকারে সাইকেলটি এসে গেল সেজকাকা আর ন-কাকার দখলে। সেজকাকা ছিলেন খুব শান্ত আর সুবোধ বালক। কিন্তু ন-কাকা ছিলেন মারকুট্টে টাইপ। রোজই এদিক-ওদিক মারপিট করে বেড়াতেন। শাস্তিস্বরূপ দাদু সাইকেলের অধিকার থেকে তাঁকে বঞ্চিত করলেন। সে এক তুমুল পারিবারিক অন্তর্কলহ। শাহজাহানের ছেলেরাও হয়তো অতটা এগোননি। তবে দাদু ছিলেন চেঙ্গিজ খান। কোনও বিদ্রোহই দানা বাঁধতে পারত না। শেষে সেজকাকু দাদুকে লুকিয়ে ন-কাকাকে সাইকেলের ‘ভাগ’ দিতেন। সাইকেলের উত্তরাধিকার নিয়ে এই জটিল ইতিহাস স্যার যদুনাথ থেকে ইরফান হাবিব, কেউই ঠিকঠাক বিশ্লেষণ করতে পারবেন না। গাঁ-ঘরের মতো জমিজায়গা ভাগবাঁটোয়ারার কোনও সিন ছিল না। আমাদের শহরে ‘বাপের সম্পত্তি’র ওয়ারিশানের লাইন শুরু হত বাবার সাইকেলের দখল দিয়ে।

আমাদের কৈশোরে দীনেন গুপ্তের একটা সিনেমা হয়েছিলো ‘নতুন পাতা’। সেখানে একটা সিন ছিল নতুন জামাই বিয়ের পর যৌতুকলব্ধ সাইকেলটির ঘন্টা বাজাতে বাজাতে বৌয়ের সঙ্গে বাড়ি ফিরছে। এটা রেওয়াজ ছিল তখন। যে মেয়ের বাপ বিয়েতে সাইকেল দিত, সে মেয়ের হাঁকও বেশি হত। আমাদের আধা শহরটিও কোনও ব্যতিক্রম ছিল না। কিন্তু আমার ‘সর্বহারা’ দিদিমার মেয়ের বিয়েতে সাইকেল যৌতুক দেওয়ার সঙ্গতি ছিল না। অবশ্য ‘ক্ষমতা’ থাকলেও ব্যাপারটা ছিল একেবারেই অসম্ভব। আমার ঠাকুরদা ছিলেন আচার্য প্রফুল্লচন্দ্রের সংশপ্তক। যৌতুক নিয়ে ছেলের বিয়ে? খুনোখুনি কেস হয়ে যেত হয়তো। দাদুর সাইকেলটি ছিল র‌্যালে কোম্পানির। ফলে এই ব্র্যান্ডটিই হয়ে গেল দেবায়তনের সিগনেচার। বাবার বিয়ের সময় এই সাইকেলের দাম ছিল ষাট টাকা। ভাবা যায়? সোনা তখন আঠেরো টাকা ভরি। ফলে বাবাকে বহুদিন দাদুর সাইকেল ধার নিয়ে চালাতে হয়েছে। ষাট সালে দাদু জামশেদপুরের বাস তুলে ‘বাড়ি’ ফিরে গেলেন। তাঁর বহুব্যবহৃত সাইকেলটি লাভ করলেন সেজকাকু। বাবা কিনলেন নতুন সাইকেল। র‌্যালে কোম্পানির রবিনহুড। আমি তখন চার বছর। সাইকেলের রডে একটি বাচ্চাদের সিট লাগানো হল। দাদুর সাইকেলে ওটা ছিল না। আমি বাবার সাইকেলের সামনে বসে টানা বেল বাজাবার কাজটি যত্ন করে করতুম তখন।

দাদুর ‘বাড়িফেরা’র পর টিনপ্লেট কলোনি থেকে আমরা চলে গেলুম এগ্রিকো কলোনিতে। সেখান থেকে বাবার তুমুল সাইকেল-জীবন শুরু হয়ে গেল। চাকরি করেন টেলকোতে। যেটা পরে টাটা মোটর্স হয়েছে। এগ্রিকো থেকে ন-দশ কিমি দূরে। যাওয়া-আসা প্রায় কুড়ি কিমি। সমতলে এই দূরত্বটি কোনও ব্যাপার নয়। কিন্তু জামশেদপুরের পাহাড়ি নকশায় মেহনত হয় অন্তত চার গুণ বেশি। ঘন্টাখানেকের বেশি লেগে যায়। হাঁসফাঁস করতে করতে বাড়ি ফিরেই স্নান করে তিনি বেরিয়ে যেতেন কলেজে পড়াতে। শহরের একেবারে পূর্বপ্রান্ত থেকে ফিরেই পশ্চিম প্রান্তে জামশেদপুর কোঅপারেটিভ কলেজ। জুবিলি পার্ক পেরিয়েও অনেকটা। বাড়ি ফিরতে রাত দশ-সাড়ে দশ। মানসিক তো ছেড়েই দিই। সারাদিন কোম্পানির লাভলোকসানের হিসেব রেখে সূর্যাস্তের পর চর্যাপদ থেকে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে তিন-চার ঘন্টা কথা বলা। সব মিলিয়ে তিরিশ-চল্লিশ কিমি সাইক্লিং। বাইরে থেকে লোকজনরা ঐ শহরে গিয়ে অভিযোগ করতেন জলে লোহা বেশি। বোধ হয় সেজন্যই সেখানে ‘খেটে’ খাওয়া লোকেদের স্ট্যামিনা অসীম। বাবা তো তবু ছিলেন অফিসের লোক। কারখানায় ছিল নারকীয় পরিবেশ। বাইরের তাপমাত্রা যদি বেয়াল্লিশ, প্ল্যান্ট ফ্লোরে চুয়াল্লিশ-পঁয়তাল্লিশ। সঙ্গে অসম্ভব শব্দ আর ধোঁয়ার প্রদূষণ। তবু ও শহরে বাঙালির প্রাণশক্তির কোনও অভাব ছিল না। দূরদূরান্ত থেকে মানুষেরা আসতেন সাইকেলে চড়ে কাজ করতে। সাইকেল, তাঁদের অনন্ত স্ট্যামিনার হাওয়ামোরগ। কানু ছাড়া গীত হতেও পারে। কিন্তু জামশেদপুরে সাইকেল ছাড়া কিছুই হতে পারে না।

পঁয়ষট্টি সালের এক সন্ধে। রোববার। বেঙ্গল ক্লাবে চলন্তিকার সাহিত্য অধিবেশন ছিল। আমরা যাইনি। বাবা একাই গিয়েছিলেন। ফিরতে অনেক দেরি হল। মা খুব উদ্বিগ্ন। তখন শহরে গাড়িগোড়া কম চলত বটে। কিন্তু সাইকেলে দুর্ঘটনা বিরল ছিল না। বাবা ফিরলেন। একেবারে বিধ্বস্ত অবস্থা। মা জিজ্ঞেস করেন, কী হয়েছে? তিনি কিছু বলেন না। উঠোনে বাবা সাইকেলটি স্ট্যান্ড করতে দেখি এটা তো আমাদের সাইকেল নয়। খুব পুরনো, একটা প্রায় ভাঙা যন্তর। মা বুঝতে পারেন। শুধু বলেন, কীভাবে হল? বাবা অসংলগ্নভাবে বলেন, ওখানে সাইকেলটা রাখছি, মলয় এসে বলল তাড়াতাড়ি করো। অনুষ্ঠান শুরু হতে যাচ্ছে। বোধহয় তালা মারতে ভুলে গিয়েছিলুম। এই সাইকেলটা কার? অমুকের একটা পুরনো রাখা ছিল বাড়িতে। ওটাই দিল। কদিনের জন্য। বাবার চোখেমুখে নিকট আত্মীয়বিয়োগের বিপন্নতা। সাইকেলটা যে তাঁর জন্য কতটা জরুরি আর আপন, সেটা বুঝতে আমারও দেরি হল না। আট-ন বছর বয়সে সেই আমার প্রথম ‘আত্মীয়বিয়োগে’র অনুভূতি লাভ।

সাকচিতে তখন বড় সাইকেল দোকান দুটি। পূরনমল আর নব ঘোষ। পূরনমলের মালিক বাবার পুরনো ছাত্র। কোনওকালে ইশকুলে বাবার কাছে অংরেজি পড়েছিলেন। মাস্টারসাহেবের প্রতি শ্রদ্ধাবশত কোনওরকম লাভ ছাড়া সাইকেল দিতে প্রতিশ্রুত হলেন। তাও রবিনহুড সাইকেলের দাম পড়বে দুশো টাকার উপর। পঁয়ষট্টি সালের দুশো টাকা। ঐ শহরে অনেক বাঙালি মধ্যবিত্তের সারামাসের বেতনই হয়তো অতটা। অ্যাটলাস বা অ্যাভন নিলে কম দাম। বাবা বলেন, একটা পুরনো সাইকেলই দেখি না হয়। মা বলেন, না। বাবার মতো লম্বা-চওড়া চেহারায় উঁচু, ভারি সাইকেল দরকার। নয়তো রোজ চল্লিশ কিমি-র সাইকেলযাপন আরও অনেক বেশি কষ্টকর হয়ে যাবে। হাল্কা বা পুরনো সাইকেলের দ্বারা সেকাজ হবার নয়।

কীভাবে টাকা জোগাড় হল, তা আমি জানি না। বাবাও হয়তো জানতেন না। মায়ের কাজই এমন ছিল। সবই ‘হয়ে’ যেত। নতুন সাইকেল এল বাড়িতে। একেবারে নতুন একটা রবিনহুড। লোগোটা চেনা। কোমরে হাত দিয়ে ‘দস্যুরাজ’ রবিনহুড তাঁর রাজপাট ‘পরিদর্শন’ করছেন। পরনে শেক্সপিয়রের মতো পোশাক। সামনে ফর্কের উপর, পিছনে মাডগার্ডে রক্ষীর মতো দাঁড়িয়ে রবিনহুড পাহারা দিচ্ছেন বাবার সাইকেল। মা শুধু বললেন, তালাটা মারতে আর ভুলো না। বাবা তো তালাচাবির জগতের লোক ছিলেন না। মানসিকভাবে ঠিক যে কোথায় থাকতেন, তিনিই জানেন। হয়তো তিনিও জানতেন না। তিনি মাটির পৃথিবীতে থাকতেন কমই। তাঁর অন্তঃপুর বইয়ের পাতার গভীরে। মায়ের বাপের বাড়ির লোকজন বলতেন, তোর শিবের মতো স্বামী। শিবকে সামলানো যে কী বালাই তা মাকে অনেক কষ্ট করে জানতে হয়েছিল। তাঁর ছেলে সেসব জানল, যখন সে শিবকে নিয়ে বই লেখার অজুরা পেল। প্রবীণ বয়সে।

আমার উপর দায়িত্ব পড়ল রোজ নতুন সাইকেলটি ধুয়ে মুছে পরিষ্কার রাখার। খুব প্রিয় কাজ ছিল আমার। সাইকেলের রড, হ্যান্ডেল, ক্যারিয়ার, সিট, প্যাডেল সব ঘষে ঘষে সাফ করতুম রোজ। এমনকি প্রতিটা স্পোকও। বাবাকে এক-দুবার অস্ফুটে মাকে বলতে শুনেছি, বুঝলে, নতুন সাইকেলটা ভারি সুন্দর চলে। খুব স্মুদ। মা এসব কথার উত্তর উহ্য রেখে দিতেন। শুধু বলতেন, তালাটা মারতে ভুলো না। আমাদের লোককবি বলেন, ‘মা আমাদের অন্নপূর্ণা, বাবা মোদের অন্ন পায় না’। আমার বাবাও অবিকল সেই গোত্র ছিলেন। তাঁর অন্নগ্রহণও ছিল অন্যমনে, একেবারে অন্য দুনিয়ায় বসতি করা মুসাফির। সে হেন একজন মানুষ সাইকেলবিহনে কত অসহায় হয়ে যান, সে ঘটনাটি থেকে অনেক শিখেছি আমি। এ জীবনে কত্ত দু-চাকা, চার-চাকা কিনলুম, চড়লুম, তার হিসেব মনেই থাকে না। কিন্তু বাবার হারিয়ে যাওয়া সাইকেল বুঝিয়ে দিয়েছিল ওই ‘নিষ্প্রাণ’ যন্ত্রটির প্রতি প্রাণের টান কী বস্তু।

টেলকো কলোনিতে চলে আসার পর বাবার অফিস একেবারে হাঁটা পথ। পাঁচ মিনিট। তাঁর আর সাইকেল লাগে না। আমি দশ-এগারো। বাবার উঁচু সাইকেলের সিটে বসলে প্যাডেলে পা পৌঁছোয় না। হাফপ্যাডেলই সই। এক হাতে হ্যান্ডেল, অন্য হাতে ক্রসবার, আমি উড়ন্ত। গতিই যে মুক্তি, জীবনের এই বিরাট শিক্ষাটা পেয়ে গেলুম মুফতে। তখন ছিল রেশনের জমানা। গম, চিনি, কেরোসিন সব কিছুর জন্যই রেশন দোকানে ভোররাত থেকে লাইন দিতে হয়। রাত থাকতেই সাইকেলে হাফপ্যাডেল মেরে রেশনের দোকানে ইট পাতা। গমের বস্তা তুলে সাইকেলে প্যাডেলের উপর চড়িয়ে নিয়ে আটাকলে ভাঙাতে দেওয়া। কয়লা-টালে ভোরবেলা কয়লা নিয়ে লরি এসেছে। টের পেয়েই সাইকেল উড়িয়ে সোজা। ক্যারিয়ারের দুদিকে বস্তা ঝুলিয়ে ঠেলতে ঠেলতে দেশের জন্য সিয়াচেন জীবন। ধীরে ধীরে প্যাডেলে পা পৌঁছে যায়। নিজেকে রাজার মতো লাগে। সাইকেল আমাকে বড় করে দিল।

কলেজ আমার বাড়ি থেকে ঠিক চোদ্দো কিমি। পুরো রাস্তাটাই রাজপথ। ভারি ভারি যানবাহন। জামশেদপুরের সাইকেল আরোহীদের জন্য যমদূত ছিল নতুন তৈরি হওয়া টাটা ট্রাকের কনভয়। ওখানে বলা হয় চ্যাসিস। প্রায় প্রতিদিনই এক-আধ জন সাইকেল আরোহী তাদের বলি হতেন। ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত মা সাইকেলে কলেজ যাওয়ায় বিরুদ্ধে অর্ডিন্যান্স লাগিয়ে রেখেছিলেন। তবে অন্য জায়গায় মানা ছিল না। বন্ধুদের সঙ্গে ডানা মেলা মানেই সাইকেল। ‘বাবার পয়সা’য় সিনিমা দেখা ছিল মস্তো ট্যাবু। তবু এদিকওদিক করে স্টুডেন্ট কনসেশনে এক টাকা চার আনায় অমিতাভ বচ্চনকে চেনা। আনন্দ, অভিমান, নমকহরাম। নটরাজ টকিজ থেকে সিনেমা দেখে ফেরার সময় সাইকেল যেন ওড়ে। বিপ্লবস্পন্দিত বুকে মনে হয় আমিই অমিতাভ। ছুটির দিনে সাইকেলে পটমদা, হাতিখেদায় পিকনিক। নয়তো হাতা, হলুদপুকুর। বা ঘোড়াবাঁধা, গিট্টিসাই। সাইকেলে একঝাঁক বন্ধু। একদিন কলেজ থেকে ফিরছি। জুবিলি পার্ক হয়ে। হঠাৎ দেখি দূর থেকে একজন বিপুলদেহী ব্যক্তি যেন সিটের উপর দাঁড়িয়ে সাইকেল চালাচ্ছেন। আমার সঙ্গে ডবল রাইডে আরেক বন্ধু। চমৎকৃত হয়ে তাকিয়ে আছি আমরা। কাছাকাছি আসতে দেখি তিনি সুনীল পণ্ডা। আমাদের শহরের সাড়ে সাতফুট দীর্ঘ ভালোমানুষ ‘দৈত্য’। জাতীয় দলের বাস্কেটবলার। আমরা হাত নাড়ি। তিনিও। জুবিলি পার্কে সন্ধের বাতিগুলি জ্বলে ওঠে। আমরা দুজন অনার্স ক্লাসের নিপীড়িত ছাত্র। চার ঘন্টা প্র্যাকটিক্যাল করে হা-ক্লান্ত ডবল প্যাডেলে পাহাড়ি শহরের চড়াই ভাঙছি। গোঁফ স্পষ্ট হয়ে উঠল, ঘাসের মতো দাড়ি। সিগারেট টানিনি কখনও। সাইকেলে হেলান দিয়ে নটরাজের মোড়ে ওমেনস কলেজের মেয়ে দেখার এলেমও হয়নি কখনও। তবু সবটাই তো এত পবিত্র নয়। আমার সাইকেল সব জানে।

কলেজ পাশ দিয়েই চাকরি। চাইবাসায়। অতি ছোট্ট মফস্বল। যে কোনও দিকে মিনিট দশেক সাইকেল চালালেই পাহাড় জঙ্গলে পৌঁছে যাওয়া। প্রথম চাকরি, প্রথম নিজের টাকা। যত সামান্যই হোক। ‘নিজের’ টাকা। আমার অনেক বন্ধুরই তখনও ‘বাবার পয়সা’য় পড়াশোনা। দুনিয়াটার বদলে যাওয়া পলকে। আমি তখন কুড়ি পেরিয়েছি। বছর তিনেক পরে ‘বাড়ি’ ফিরে আসা। কিছুদিনের মধ্যেই তেলে চলা দুচাকা। রবিনহুড ধুলো মেখে দাঁড়িয়ে থাকেন উঠোনের এককোণে। মাঝেমধ্যে সেন্টুদার সাইকেল দোকানে নিয়ে গিয়ে ওভারহলিং করিয়ে আসা। কিন্তু না চড়লে কোনও দুচাকাই বাঁচে না। আমাদের পারিবারিক রজক একদিন মাকে বললেন, মাজি, ই সাইকিল পড়ে পড়ে সড় জাই। হমনিকো দেহি দিজিয়ে। মেহর্বানি হই। মা বলেন, কী করবি? ক্যারিয়ারে কাপড়ের বিরাট পোঁটলা চড়িয়ে দশরথ রজক রবিনহুডকে নিয়ে চোখের আড়াল হয়ে যান। কষ্ট হয়েছিল। সত্যিকারের আত্মীয়বিচ্ছেদ। এ শহরে সাইকেল প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের ‘আদরিণী’ হতে শুরু করে দিয়েছিল। আমরা তো নিমিত্ত মাত্র।

বাবু বাঙালিরা সাইকেলকে ত্যাগ করা শুরু করলেও সিংভূমের ভূমিজ মানুষদের কাছে সেটি তখনও মহান সম্পদ। তাঁরা তো সপরিবারে সাইকেল ভ্রমণ করতেন। ক্রসবারে পুত্র, ক্যারিয়ারে গৃহিণী, তাঁরা স্বচ্ছন্দে পরমানন্দ। মকর সংক্রান্তির দিন টুসু পরবের ঝুমতা হুয়া মহফিল। মৌয়ার সঙ্গে সেদিন অনুপানে কচ্চিপক্কির এতোলবেতোল ঘুরনি। দো মুহানিতে নদীর সঙ্গমে বালুবেলা, নয় গালুডিহের টানা সুবর্ণরেখায় পাথরের সঙ্গে জলের লুকোচুরি জুড়ে টুসু মেলা। মত্ত মংলি কুই ততোধিক প্রমত্ত সোমরা মারান্ডিকে নেচে নেচে শোনায় তার ছদ্ম প্রত্যাখ্যান, ছলনাময় গরম খুনের ডাক। তাদের দৈবী সাইকেলবাহিত রমণীয় আসঙ্গের রাত নেমে আসে সংক্রান্তির শীত, হেমন্ত অন্ধকারে। উষ্ণ, মাদক, অনন্ত রাত সব—

তুকে দেইখলে আমার গা জ্বলে,
তুকে দেইখলে আমার গা জ্বলে,

তুই চইল্যে যা ভাংগা সাইকিলে…

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4879 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...