সেখ সাহেবুল হক
লেখক, সাংস্কৃতিক কর্মী
আমরা যারা সংখ্যালঘু, মানে যারা চাই চারপাশের বিদ্বেষ, হানাহানি, হিংসা থেমে যাক, সমাজের মূল ইস্যুতে রাজনীতি হোক— সেই সুস্থ চিন্তার মানুষরা ক্রমশ আরও বিব্রত ও কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন৷ বাসে-ট্রেনে-চায়ের দোকানে-হোয়াটসঅ্যাপে বিদ্বেষ, পারস্পরিক ক্ষোভ এবং ‘উচিত শিক্ষা’ দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। এসব দেখলে মনে হয়, না সত্যিই আর কিছুই হওয়ার নয় এই পোড়া দেশের৷ ধর্মে ধর্মে লড়িয়ে ক্ষমতা কায়েম রাখবে একটা শক্তি, আর তাদের নিপুণ চৌকিদারিতে দেশটাকে লুটবে শিল্পপতিরা৷ তখন গ্যাসের দাম, আর দুমুঠো খাবারের চিন্তার চেয়ে বেশি তাগিদ ধর্মরক্ষায় ব্যয় হবে৷ হচ্ছেও তাই! ক্ষুধার চেয়ে ধর্মরক্ষা গুরুত্ব পাচ্ছে বেশি৷ এই পরিস্থিতিতে নুপূর শর্মা ইস্যুর কয়েকটি দিক নিয়ে আলোচনা করা যাক।
তাহলে কি ‘ধর্মে মাতিয়ে রাখো‘ রাজনীতির ভিন্নরূপ নুপূর শর্মার বক্তব্য?
গভীরভাবে লক্ষ করলে দেখা যাবে বিষয়টা তেমনই। নুপূর শর্মাদের হেটস্পিচ মুসলিমদের মধ্যে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে৷ এতে প্রথমেই মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মান্ধ অংশ, অতি ভাবাবেগসম্পন্ন অংশ ওই বক্তব্যেই ফোকাস করে৷ মন্তব্য এবং পালটা মন্তব্যে ধর্মসর্বস্ব রাজনীতির রাস্তা সুগম হয়৷ বিরোধী দল, এমনকি কমিউনিস্টরাও বাধ্য হন এই জাতীয় ঘটনায় বিবৃতি দিতে৷ অর্থাৎ মূল ইস্যু নিয়ে প্রশ্ন তোলার বদলে সম্পূর্ণভাবে বিজেপি পরিচালিত ইস্যু নিয়েই জেরবার নাগরিকরা৷ বিজেপির যখনই কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিল আনে, কিংবা জনমানসে সরকারের গণবিরোধী কার্যকলাপ নিয়ে অসন্তোষের সৃষ্টি হয়, ঠিক তখনই এই জাতীয় কার্যকলাপ নজরে আসে৷ নবী মহম্মদ ১৪০০ বছর আগে কী করেছেন, সেই বিষয় নিয়ে যে এতবছর পরেও রাজনীতির রুটি সেঁকা যেতে পারে, লোক খ্যাপানোর রাজনীতি হতে পারে সেটা করে দেখিয়েছে বিজেপি৷
নুপূর শর্মার বক্তব্য কি হিন্দুত্ববাদীদের একজোট করল?
অবশ্যই তাই৷ নুপূর শর্মার বক্তব্যে আরব দেশগুলি প্রাথমিক পদক্ষেপ নিলেও, বৃহত্তর ব্যবসায়িক স্বার্থে তারা আর বেশিদূর এগোয়নি৷ অপ্রিয় হলেও সত্যি, নবীর অসম্মানে আরব দেশগুলি যতটা বিব্রত ছিল, ভারতের মুসলিমদের উপর নিপীড়নে তাদের সামান্যতম তৎপরতা চোখে পড়েনি গত কয়েকবছরে৷ নবীর অসম্মান তাদের মাথাব্যথার কারণ, ব্যস ওইটুকুই৷ এই ইস্যুতে গালফ কান্ট্রিগুলির নাক গলানো হিন্দুত্ববাদীদের একজোট করেছে৷ ‘ওরা একজোট হচ্ছে’ ন্যারেটিভ খুব সহজেই গিলিয়ে দেওয়া গেছে৷
ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ-দীর্ঘ অবরোধ ইত্যাদি কি ভুল স্ট্র্যাটেজি ছিল সংখ্যালঘুদের?
নবীর সম্মানরক্ষায় বাংলা-সহ ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভ হয়৷ কিছু ক্ষেত্রে সেই বিক্ষোভ হিংসার পথ নেয়৷ হাওড়ার পাঁচলা, ডোমজুড় প্রভৃতি জায়গায় জাতীয় সড়ক অবরোধ, বাসে অগ্নিসংযোগ এবং প্রায় ১১ ঘন্টার অবরোধের পন্থা বেছেছিলেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষরা৷ অতীতে কর্নি সেনা বা অন্যান্য ক্ষেত্রেও এমন হিংসাত্মক প্রতিবাদ হয়েছে৷ কিন্তু এক্ষেত্রে যেহেতু শুধু মুসলিমরা এই কাজে যুক্ত ছিলেন, তাই বিজেপির পক্ষে মুসলিমবিরোধী প্রচার অনেক সহজ হয়ে গেছে৷ ‘জাতীয় সম্পদের ক্ষতি’— প্রচার দিয়ে মুসলিমদের সবাইকে ক্রিমিনাল দাগিয়ে বিজেপি ফায়দা তুলেছে৷ শয়ে শয়ে ছবি এবং ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে আইটি সেলের মাধ্যমে। যা দিয়ে বোঝানো হচ্ছে, ‘এখনই হিন্দুদের একজোট হতে হবে, নইলে মুসলিমরা সব দখল করে নেবে।’ মুসলিমদের অতি ভাবাবেগ এবং ভাঙচুরের সিদ্ধান্ত পুরো বিষয়টাকে বিজেপির পক্ষে নিয়ে গেল৷
প্রতিবাদের ভাষা কেউ ঠিক করে দিতে পারে নাকি?
অবরোধ বিষয়টা প্রতিবাদের একটা পন্থা অবশ্যই৷ কিন্তু জাতীয় সড়ক ১১ ঘন্টা ধরে অবরোধ করাটা কোনও সুস্থ চেতনার ব্যাপার হতে পারে না৷ নবীকে ভালোবাসলে তাঁর আদর্শকেও তো ভালোবাসতে হবে! মানুষকে নাজেহাল করে, ভাঙচুর করে আর যাই হোক নবীর সম্মান বৃদ্ধি হয় না৷ উল্টে হিন্দুত্ববাদীদের বিদ্বেষের রাজনীতির পালে হাওয়া লাগে৷
নবী সম্পর্কে কটূক্তি করলেন নুপুর শর্মা, আর তার ফল ভোগ করলেন বাংলার হাজার হাজার নিরীহ মানুষ৷ এটা যদি ইসলাম হয়, তাহলে তো আর কিছুই বলার নেই৷
পয়গম্বরের অনুগামীদের আচরণে নুপূর শর্মাই জিতে গেলেন৷ কারণ যত অশান্তি হবে, মুসলিমদের ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তত বিজেপির লাভ। মিডিয়াও বিষ উগরে দেওয়ার টপিক পাবে। এটা মানতেই হবে মানুষ দেখল যে নবী নাকি শান্তির কথা বলতেন, তাঁর অনুগামীরা অশান্তির মাধ্যমে নবীর ইজ্জতরক্ষার চেষ্টা করছেন৷ টায়ার জ্বালিয়ে, অবরোধ করে যদি নবীর সম্মান রক্ষা করতে হয়, তাহলে ধর্মালম্বীদের ইমানেই সমস্যা রয়েছে। বিদ্বেষের উত্তর পাল্টা ‘হইহল্লা’ কখনওই সমাধান হতে পারে না৷
তাহলে প্রতিবাদ কেমন হতে পারত?
নজরুল নবীর প্রশংসা করতে গিয়ে লিখেছিলেন, “মানুষে মানুষের অধিকার দিল যে-জন।” সুতরাং পয়গম্বর এসেছিলেন মানবসভ্যতার জন্য। মানুষকে নতুন পথের সন্ধান দিতে।
এমন মানুষের সম্মানরক্ষা করতে এসব? যেখানে মানুষকে অতিষ্ঠ করে তুলতে হয়!!
মানুষের অসুবিধা না করে জমায়েত করা যেত কোথাও৷ পাড়ায় পাড়ায় শান্তিপূর্ণ মিছিল করা যেত। স্লোগান, প্ল্যাকার্ড ইত্যাদি প্রতিবাদের পন্থা হতে পারত। মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করা যেত৷ রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে লিখিতভাবে তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করা যেত৷ সর্বোপরি নুপুর শর্মার বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার রাস্তাও খোলা ছিল৷ সেসব না করে যা হল, তাতে খুব একটা ভালো বার্তা গেল না সমাজের কাছে৷ আরব দুনিয়ার চাপে এমনিই ব্যাকফুটে ছিল নুপূর শর্মার ক্যাম্প। রাজনৈতিকভাবে নুপূর শর্মাদের প্রতিরোধ প্রয়োজন ছিল, তা না করে ধর্মের লাইনে এগোলেন মুসলিমরা৷ আর ধর্মের লাইনে বিজেপির সঙ্গে পেরে ওঠা অসম্ভব৷
নুপুর শর্মা ইস্যুতে একশ্রেণির সাধারণ মুসলমানের উভয়সঙ্কট?
সাধারণ মুসলমানরা কোনওপ্রকার হইহল্লায় না জড়ালেও ধরে নেওয়া হয় ‘তাঁরা হইহল্লাকে সমর্থন করছেন। খুশি হচ্ছেন।’ যেন মোটামুটিভাবে শিক্ষিত-সুস্থচিন্তার হয়ে অপরাধ করে ফেলেছেন৷ এই ঘটনায় কেউ গ্রেফতার না হলেও বহুদূরে বসে থাকা মুসলমানকে ঘুরিয়ে কৈফিয়ত দিতে হবে৷ অপমান করা হবে। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার দায়ও তাঁদেরই৷ কারণ তিনি জন্মগতভাবে হোক বা বিশ্বাসের জায়গা থেকে মুসলমান৷ এইসব হইহল্লায় তাঁরা কতখানি ব্যথিত, চিন্তিত, বিরক্ত, ক্ষতিগ্রস্ত— সেটুকু বোঝার জায়গায় নেই কেউ। সুস্থভাবে বাঁচাই যাঁদের প্রায়োরিটি, তাঁদের ওই হল্লাকারীদের গোত্র বলেই ধরে নেওয়া হবে৷
ধর্মকে ধর্মের জায়গায় রেখে সুস্থভাবে বাঁচতে চাওয়াও দুষ্কর। সুস্থতার কথা বলাও অনেকের গাত্রদাহের কারণ। হল্লাকারীদের মদতদাতারা আওয়াজ দিয়ে বলবেন, “ওহে গুড মুসলিম।”
যোগীর বুলডোজার রাজনৈতিক গুণ্ডামি এবং বিচারব্যবস্থার অবমাননা?
নুপূর শর্মার বক্তব্যের প্রতিবাদ মিছিলে সামিল ব্যক্তিদের বাড়ি ভেঙে দেয় যোগী প্রশাসন। তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। সংবিধান, বিচারব্যবস্থা এবং বিচারপ্রক্রিয়াকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে শুধু ‘অভিযোগের ভিত্তিতে’ তাৎক্ষণিক সাজা দেওয়ার এই যে প্রক্রিয়া তা সংবিধান এবং বিচারব্যবস্থার অবমাননা।
হিংসাত্মক প্রতিবাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার একটা পদ্ধতি হয়, প্রমাণ করার ব্যাপার থাকে। বিরোধী কণ্ঠ রুখতে বুলডোজার দিয়ে আফরিন ফাতিমার বাড়ি গুড়িয়ে দেওয়া হল। আশ্চর্যের ব্যাপার এ ক্ষেত্রে আফরিনের বিরুদ্ধে হিংসার প্রমাণ পেশ করতে পারেনি পুলিশ। জেএনইউ-এর মেধাবী ছাত্রী আফরিন অতীতে সিএএ এবং এনআরসি-র আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন৷ সেই প্রতিবাদী মুখ হয়ে ওঠার কারণে ‘গর্হিত’ অপরাধ করে ফেলায় তাঁকে ‘সবক’ শেখাতেই বুলডোজার পাঠিয়েছেন শাসক৷
এতে বড় অংশের সংখ্যাগুরুরা হাততালি দিচ্ছেন! অন্যের ঘর ভাঙছে দেখে খুশি হচ্ছেন দায়িত্বশীল সহনাগরিক। এতটাই নিম্ন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে দেশের রাজনীতি৷
নুপুর শর্মারা ‘উদয়পুর‘ জাতীয় ঘটনা চান?
অবশ্যই চান। নুপুর শর্মার বয়ানের প্রতিক্রিয়া হিসেবে রাজস্থানের উদয়পুরের নিন্দনীয় ঘটনা প্রকাশ্যে এল। নুপুর শর্মার সমর্থনে প্রচার চালানো এক বিজেপি সমর্থক, কানহাইয়া লালকে প্রকাশ্য দিবালোকে গলা কেটে খুন করা হল। প্রায় একইভাবে খুন করা হল অমরাবতীর এক ফার্মাসিস্ট, উমেশ কোলহেকে। এইসব ঘটনার বিরুদ্ধে কোনও নিন্দাই যথেষ্ট নয়, কিন্তু ঘটনাগুলি বিজেপির রাজনীতির সম্পূরক হিসেবে কাজ করল। যদিও বিভিন্ন মহল থেকে নানা অভিযোগ উঠছে, এই ঘটনায় বিজেপি সংখ্যালঘু সেলের অন্তর্ভুক্ত এক ব্যক্তির যোগসাজশের। সে যাই হোক হোক না কেন, এমন ঘটনায় হিন্দুত্ববাদীরা আরেকবার ‘মুসলিমরা বর্বর’, ‘এজন্যই এনআরসি চাই’ ইত্যাদি দাবিকে পুনরায় মূলস্রোতে আনল৷ স্বভাবতই বিজেপি চায় রাজস্থানের নির্বাচন, এবং ২০২৪ এর নির্বাচনের আগে মেরুকরণের রাস্তা প্রশস্ত হোক। ধর্ম বনাম ধর্মের ভোট হলে মেজরিটিকে তুষ্ট করতে বিরোধী দলগুলিকেও হিন্দুত্ববাদের রাস্তা ধরতে হবে৷ যেখানে বিজেপির সমকক্ষ কেউ নেই৷
বাড়ছে ইসলামি মৌলবাদের চর্চা?
হ্যাঁ, নুপুর শর্মা ইস্যুতে ইসলামি মৌলবাদের আভাস পাওয়া গেল৷ গোপনে লালিত হচ্ছে অতিভাবাবেগ৷ নবীর ইজ্জত রক্ষায় প্রাণ দেওয়া-নেওয়ার কাজে প্ররোচিত করছে ধর্মগুরুদের একাংশ৷ বাংলাদেশের রগরগে উগ্র ওয়াজের ভূমিকা এখানে গুরুত্বপূর্ণ৷ ২০২২-এ দাঁড়িয়ে কিছু লোকজন বলছে এবং ভাবছে নবীর অবমাননার একমাত্র সাজা হল শিরচ্ছেদ!
উন্মাদের মতো বলছে—
“Gustakh E Nabi Ki Ek Saza
Sar Tan Se Juda Sar Tan Se Juda.”
এই চেতনার মানুষরা মানবতার শত্রু৷ এই ধরনের ‘অতি ভাবাবেগ’ তামাম বিশ্বের মুসলমানকে আরও রসাতলে নিয়ে যাবে। প্রতিটি সুস্থচিন্তার মুসলমানকে লজ্জিত হতে হবে প্রতিনিয়ত। বাস্তবে হচ্ছেও তাই৷
মুসলিম সমাজকে এই অতিভাবাবেগ কীভাবে ক্ষতি করছে?
মুসলমানকে ছেঁদো ভাবাবেগ কমাতে হবে, নিজের বিশ্বাস নিজের কাছে রাখতে হবে৷ নইলে ‘শান্তির ধর্ম’ দাবিটা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় রসিকতা হয়ে উঠবে৷
যে নবী নাকি সারাজীবন মানবকল্যাণের কথা বলে গেছেন, তাঁর উম্মতরা অন্যের কল্লা কেটে নবীর সম্মান রক্ষার কথা ভাবছেন! এর চেয়ে ভয়ঙ্কর কী হতে পারে৷ শম্ভুলাল রেগরদের চেতনা মুসলিম সমাজে লালিত হলে তা দেশের পক্ষে একইরকম বিপজ্জনক হবে।
হাতির দাঁত দেখানোর জন্য, খাওয়ার দাঁত আলাদা
নুপুর শর্মা ইস্যুতে এই উদাহরণই সবচেয়ে যথাযথ হতে পারে৷ কারণ আইওয়াশ হিসেবে বিজেপি নুপুর শর্মাকে বরখাস্ত করল ঠিকই৷ কিন্তু দিনের শেষে নুপুর শর্মার আদর্শই বিজেপির আদর্শ৷ ফলে আগামীতে নুপুর শর্মা স্বমহিমায় দলে ফিরবেন এবং বিজেপির নির্বাচনী মুখ হবেন তা বলাই বাহুল্য৷ নবীর অবমাননায় তাঁর গ্রেফতারি হল না, উল্টে তিনি হয়ে উঠলেন হিন্দুত্ববাদীদের পোস্টার গার্ল— বিদ্বেষপন্থীদের ‘শেরনি’। বিজেপি পেল আগামীর এক সর্বভারতীয় নেত্রী, যাঁর পেছনে রয়েছে বিপুল জনসমর্থন।
নুপুর শর্মার ঘটনায় জুবেইরকে গ্রেফতারের ছুতো পেল বিজেপি?
২০১৭ সালে প্রতীক সিনহার সঙ্গে ‘অল্ট নিউজ’ নামে একটি পোর্টাল তৈরি করেন৷ যা যাবতীয় ফেক নিউজের কাউন্টার করে সত্যি খবরটা মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়।
মহম্মদ জুবেইর দীর্ঘদিন ধরে বিজেপির মিথ্যে প্রোপাগান্ডার বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছিলেন। মিথ্যে খবর ছড়িয়ে ধর্মীয় বিদ্বেষ তৈরির চেষ্টার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন অতন্দ্র প্রহরীর মতো। হোয়াটসঅ্যাপ ইউনিভার্সিটির ভুয়ো প্রচারের বিপরীতে আসল সত্যিটা মানুষের সামনে পৌঁছে যাচ্ছিল।
হৃষিকেশ মুখার্জির ছবির একটি দৃশ্যের অংশ ট্যুইট করেছিলেন জুবেইর। আর শুধু এজন্যই ‘ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত’— এই ছুতোয় জুবেইরকে গ্রেফতার করা হয়েছে৷
এদিকে দাঙ্গায় অভিযুক্তরা ক্লিনচিট পাচ্ছেন। প্রকাশ্যে হেটস্পিচ দেওয়া ব্যক্তিরা বহাল তবিয়তে দিন কাটাচ্ছেন, সমাদৃত হচ্ছেন— পদোন্নতি হচ্ছে।
মিথ্যের বিরুদ্ধে সত্যের পক্ষ নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন, তাই গ্রেফতার করা হল। এদিকে নুপুর শর্মার বিরুদ্ধে একই গুরুতর অভিযোগ থাকার পরও তাঁকে গ্রেফতার করা হয়নি৷
পুনশ্চ
নুপুর শর্মা ইস্যু কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়৷ ইসলামবিরোধী এবং সংখ্যালঘুবিরোধী হেটস্পিচ দেওয়া হয় মূলত দুটি কারণে— প্রথমত, মুসলিমদের ক্ষেপিয়ে তোলার স্ট্র্যাটেজি নিয়ে। দ্বিতীয়ত, হিন্দুদের একজোট করার মনোবাঞ্ছা নিয়ে৷ দুটিই মিলেমিশে বিজেপি উগ্র ধর্মীয় রাজনীতির কৌশল হিসেবে কাজ করে৷ সংখ্যালঘুদের আবেগ সরিয়ে রাজনৈতিকভাবে এটার মোকাবিলা করতে হবে৷ পাল্টা অস্ত্র ধরলে বা হিংসার আশ্রয় নিলে মেরুকরণ বাড়বে৷ যার ফসল উঠবে বিজেপির খামারে৷ আর এই দেশটাকে দ্রুত হিন্দুরাষ্ট্র বানাতে গেলে সেটাই বিজেপির একমাত্র কাম্য।
টিভি সঞ্চালক, গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।প্রতিদিন, এই ধরণের পারস্পরিক বিদ্বেষমূলক ‘টক শো’! লক্ষ্য একটাই টিআরপি ।এই ধরণের অনুষ্ঠান সম্পর্কে কড়া বিধি, কঠিন নিষেধাজ্ঞা জরুরি।গণসংযোগ মাধ্যম,সংবাদপত্রগুলিও আশ্চর্য রকম চতুর।কপটও বটে।
এবড়ো কঠিন সময়। বড়ো কঠিন ।
Bastob kotha sir
এই ধর্মীয় বিষয়ে স্পর্শকাতরতা এখন খুবই বাড়াবাড়িরকম হাস্যকর পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। আপনি যে কোনও হিন্দু বা ইসলামী ধর্মগুরুদের দেখবেন বিভিন্ন ওয়াজ-মাহফিল বা ধর্মসভায় কি বিশ্রী ভাবে আধুনিক মানুষের যুক্তিবাদ বা বিজ্ঞানচেতনাকে আঘাত করছে, কত অজস্র পেটবানানো কথা বলে যাচ্ছে, কত কুরুচিকর মিথ্যা কথা বলে যাচ্ছে, না- এটা ধর্মবিশ্বাসীদের একেবারে মৌলিক অধিকার। এখানে কোনও মানুষের যুক্তিবোধ বা বিজ্ঞানচেতনায় যেন আঘাত লাগে না। এবার কোরান, হাদিস বা গীতা-ভাগবতে কৃষ্ণ বা তথাকথিত কোনও মহামানব সম্বন্ধে যা বিবৃত আছে তাই উল্লেখ করেই যদি আপনি সেই মহাপুরুষের সমালোচনা করেন, তাহলেই হয়ে গেল। অর্থাৎ এদের মতে, তাদের ধর্মপুস্তক যা দেড় বা তিন হাজার বছর আগেকার সেই সময়ের জ্ঞানগম্যির ওপর ভিত্তি করে লেখা– তা একেবারে সর্বকালের সব জ্ঞানের আধার মনে করে বসে থাকজতে হবে, কোনও সমালোচনাই এদের সহ্য হবে না। আশ্চর্য।