তিষ্য দাশগুপ্ত
সমাজকর্মী, গদ্যকার
সন্ধ্যা তখন হব হব, পশ্চিম আকাশে সূর্য অস্ত যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে ব্যস্তসমস্ত হয়ে— নর্মদা নদীতীরে আকাশের বুক ফেঁড়ে দাঁড়িয়ে থাকা একাকী এক বৃদ্ধ নীরবে নিস্পলকে তাকিয়ে আছেন তাঁর অখণ্ড মাতৃভূমির দিকে। ঠিক একই সময়, বছর তিয়াত্তর আগে— সন্ধের আধো অন্ধকারে তুলসিমঞ্চে প্রদীপ জ্বালাচ্ছেন মা, এই তো শেষ প্রদীপ— এরপরই রাতের অন্ধকারে পারি দিতে হবে অজানার উদ্দেশে, কিছুতেই ওরা যেন টের না পায়। সহসা আজানের শব্দ সীসার গোলকের মত কানে এসে বেঁধে, অবশ্য ভুখা মানুষের কী-ই বা হিন্দু, কী-ই বা মুসলিম। এই কি তোমার স্বাধীন দেশ সর্দার?
বল্লভভাই জাভেরিভাই প্যাটেল, ভারতবর্ষের একতা ও অখণ্ডতার প্রতীক— তিনি কতটা “ধর্মনিরপেক্ষ” কংগ্রেসি অথবা কত আউন্স “সহি” হিন্দুত্বের পতাকাবাহক, এই দড়ি টানাটানির খেলায় বারবার উঠে আসে সেই অপ্রিয় প্রশ্নটা— দেশভাগের সম্পূর্ণ দায় কি জিন্না-নেহেরুর? নাকি তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার প্যাটেলই এই রক্তাক্ত কাটাকুটি খেলার অন্যতম মুখ্য কারিগর?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে আমাদের হাঁটতে হবে পরাধীন ভারতের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ক্রমান্বয়ে। “ক্রনোলজি” মেইনটেইন করা হয়ত সম্ভব হবে না, তবু আগুপিছু করে কতকগুলি ঘটনাক্রমের মাধ্যমে চেষ্টা করব একটা সমঝোতায় এসে পৌঁছতে। আপাতত আমরা চলে যাই ১৯৪৬ সালের কলকাতায়, আগস্ট মাসে। মুসলিম লীগ শাসিত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী সোহরাওয়র্দি সাহেব প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছেন— প্রয়োজনে সন্ত্রাসের পথ বেছে নেওয়া পুণ্যের কাজ, যদি তা অভীষ্ট লাভের পাথেয় হয়। কোথাও “মুসলিম” ধর্ম ট্রামলাইনের কানেক্টর বক্সে খুলি জুড়ে দিয়ে বিধর্মীর মৃত্যুযন্ত্রণার পৈশাচিক আনন্দে উল্লসিত আবার কোথাও বা শিক্ষিত হিন্দু ইঞ্জিনিয়ার পরধর্মী বালককে নগ্ন করে বাঁশের লগা দিয়ে পুকুরে চেপে ধরে সময় মাপছে— ধর্মের অন্তিম শ্বাস ঘড়ির কাঁটার কত আবর্তনে নিঃশেষিত হয়। ঐতিহাসিক ভন টুজেলম্যানের বিবরণী হুবহু মিলে যায় দেশীয় শিক্ষাবিদ, ঐতিহাসিক নীরদ সি চৌধুরীর বর্ণনার সাথে। মার্কিন চিত্রসংবাদিক মার্গারেট হোয়াইট, যিনি ঠিক তার আগের বছর বিভিন্ন নাৎসি কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের লিবারেশনের সাক্ষী— তিনি ছেচল্লিশের কলকাতার রাস্তার তুলনা করছেন কুখ্যাত কনসেনট্রেশন ক্যাম্প বুখেনওয়াল্ড-এর সঙ্গে। না, ছেচল্লিশের দাঙ্গার ভয়াবহতার ধারাবিবরণী এই প্রবন্ধের মূল আলোচ্য বিষয় নয়— আমরা বরং বুখেনওয়াল্ড-রূপী কলকাতা থেকে পশ্চিম পাঞ্জাব নামক “আউসউইৎজ”-এর দিকে যাত্রা করি একটি ক্যাটল কারে, রাস্তার দুপাশে জ্বলতে থাকা জনপদগুলির শোভা উপভোগ করতে করতে— কিছুক্ষণের মধ্যেই যে ট্রেনে সওয়ার হবেন দুই গুজরাটি ব্যারিস্টার, বল্লভভাই প্যাটেল আর মহম্মদ আলী জিন্নাহ।
জিন্না এবং সর্দার প্যাটেল— যেন সমান্তরাল দুটি রেললাইন— উৎস এক, পথচলা পাশাপাশি, এমনকি গন্তব্যও একই— কিন্তু একে অপরকে মেলানো যায় না কিছুতেই। দুইজনেরই জন্ম ও প্রাথমিক শিক্ষা অখণ্ড ভারতবর্ষে। একজনের করাচির ওয়াজির ম্যানসনের তেতলার ঘরে, আরেকজনের গুজরাটের খেড়া জেলার নাদিয়ারে। ছোটবেলা থেকেই ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত দুজনেরই উচ্চশিক্ষা ও ব্যারিস্টারিতে পারদর্শিতা লাভ ইংল্যান্ডে, এবং পরবর্তীকালে দেশে আগমন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের টালমাটাল পরিস্থিতিতে জিন্না যখন বিক্ষিপ্ত ভারতীয় রাজনীতির টুকরোগুলোকে একত্রিত করে ১৯০৬ সালে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত মুসলিম লীগকে সুসংহত করার সাধনায় নিমগ্ন, তখনও বল্লভভাই-এর সেইভাবে অভিষেক ঘটেনি কংগ্রেসের রাজদরবারে। ১৯২০-পরবর্তী সময় থেকেই গান্ধি-নেহরু জুটির ঔজ্জ্বল্যে কিছুটা ম্রিয়মাণ জিন্নাহ পৃথক মুসলিম ল্যান্ডের জিগির তোলেন নিজেকে এবং নিজের দলকে রাজনীতির মূল স্রোতে ভাসিয়ে রাখার জন্য। ভারতবর্ষের স্পিরিচুয়াল অভিভাবক মহাত্মার অবিসংবাদকে খর্ব করার জন্য “মহাত্মা গান্ধি”কে “মিস্টার গান্ধি” হিসেবে প্রতিফলিত করার চেষ্টায় যেমন কসুর ছিল না জিন্নাহর, তেমনি ঠিক তার উল্টোপিঠে মহাত্মা নামক বটগাছের ছত্রচ্ছায়ায় ক্রমশ প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছিলেন বল্লভভাই। ক্ষমতার দ্বন্দ্ব খুব সম্ভবত তখন থেকেই, এবং অন্তিমে তারই প্রতিফলন দুটি বিবদমান আধখাওয়া রাষ্ট্রের জন্ম— কারণ রাজনৈতিক কেরিয়ারের ঊষাকালে একাধিকবার জিন্নাহ তাঁর সহকর্মীদের কাছে একান্তে মত প্রকাশ করেছেন যে পৃথক রাষ্ট্রের জিগির কেবলমাত্র মুসলিম লীগকে প্রাসঙ্গিক এবং কংগ্রেসকে চাপে রাখার তাসমাত্র, এর বাস্তবায়ন সম্পর্কে ভাবনাচিন্তা খুব একটা ছিল না সেই সময়। এবং দেশভাগ একান্ত প্রয়োজনীয় হয়ে উঠলেও তা হবে ভাষা, সংস্কৃতি এবং অনেকটাই ডেমোগ্রাফিকাল কারণে, ধর্মের ভিত্তিতে নয়। ভাবতে অবাক লাগে, বিলিতি শিক্ষায় শিক্ষিত, আদ্যন্ত সেকুলার, হুইস্কিপ্রেমী, কালেভদ্রে মসজিদের ছায়া মাড়ানো জিন্নাসাহেব কখন কোন পরিস্থিতিতে একটি আদ্যন্ত ধর্মপ্রধান দেশের সর্বেসর্বা হয়ে উঠলেন। মুসলমান দেশের নায়ক জিন্নাহ আর “হিন্দু” হৃদয় দিয়ে গড়া স্বাধীন ভারতের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার প্যাটেল, আর মাঝখানে ক্ষমতার অভিলাষে রক্তাক্ত একটা ক্ষতবিক্ষত ভূখণ্ড।
মোটামুটি ১৯৪০-পরবর্তী সময়কাল থেকেই ভারতবর্ষে ব্রিটিশসূর্যের অস্তগমনের ইঙ্গিত ছিল সুস্পষ্ট, কেবল বাকি ছিল বিবদমান দলগুলিকে এক ছাতার তলায় এনে একটি সুসংহত সরকার গঠন এবং প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর সম্পন্ন করা। ভীর সভারকার এবং হিন্দু মহাসভার সেই ১৯৩৫-৩৭ সাল থেকেই “হিন্দি হিন্দু হিন্দুস্থান”-এর আওয়াজে যে লীগ ঘোলা জলে মাছ ধরতে উৎসাহিত হয়নি একথা ভাবা ভুল। বরং কংগ্রেসকে চাপে রাখার ট্রাম্পকার্ডটি কখন একটি ধর্মীয় জিগিরে পরিণত হল তা বোধহয় জিন্নাসাহেবও আঁচ করতে পারেননি। যদিও বিশ শতকের গোড়ার দিকের অগ্ন্যুৎপাতী সময়ে হিন্দু মহাসভা, মুসলিম লীগ এবং অবশ্যই কমিউনিস্ট পার্টির সেইভাবে স্বদেশব্রতের মহা দীক্ষালাভ করে মৃত্যুঞ্জয়ী হওয়ার খুব একটা আগ্রহ ছিল না, কিন্তু চারের দশকে রাজনীতির ঘোলা জলে মাছ ধরতে কারও অনাগ্রহ চোখে পড়েনি। সুতরাং দেশভাগ ছিল একটি অবশ্যম্ভাবী ঘটনা— সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দের ভাগের মার গঙ্গাপ্রাপ্তির সুনির্দিষ্টকরণের জন্যই। ধর্ম নামক ঘি এই যজ্ঞের অনুঘটক, যা সাফল্যের হারের সহিত সমানুপাতী। আহত ব্রিটিশ সিংহ তাদের ভাঙাচোরা গর্ব নিয়ে পদানত একটি জাতির মেরুদণ্ড শেষবারের মত ভেঙে দিতে উৎসাহ বোধ করতে অনাগ্রহী হয়নি একথা বলাই বাহুল্য।
রক্তাক্ত চারের দশক এবং সর্দার বল্লভভাই-এর দিকে তাকালে আমরা দেখব ততদিনে “হিন্দু হৃদয়” বল্লভভাই কংগ্রেসি রাজদরবারে সসম্মানে প্রতিষ্ঠিত এবং নেহেরু খুব ভালভাবে জানতেন যে সর্দারের মত চারিত্রিক দৃঢ়তা বা গ্রহণযোগ্যতা কোনওটাই তাঁর নেই, কিন্তু তাঁর কাছে আছে “মহাত্মা” নামক বিপুল এক অন্ধ পক্ষপাতিত্ব। সেই পক্ষপাতিত্বের ঠেলায় ১৯৪৬-এর কংগ্রেসের বিপুল ভোটে জয়লাভকারী প্রেসিডেন্ট বল্লভভাই-এর প্রেসিডেন্ট পদ খোয়ানো এবং নেহেরুর ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী পদেরও স্থায়ীকরণ। এই ঘটনার পর গান্ধিজি ও তাঁর মতাদর্শের প্রতি কিছুটা প্রচ্ছন্ন অভিমান যে প্যাটেলের তৈরি হয়েছিল সেকথা ইতিহাস স্বীকার করে। কিন্তু এ নেহাত আবেগের কথা, গান্ধি-বিরোধিতাই যে সর্দারের মনে দেশভাগের বীজে জলসিঞ্চন করেছিল এই কথা ভাবা নেহাতই বালখিল্যতা, বরং তার দেশভাগের প্রতি আগ্রহ ও তাকে রূপায়িত করা অনেকটাই কর্তব্যের খাতিরে, খণ্ডিত ভূখণ্ডের অখণ্ডতা রক্ষার তাগিদে। কিন্তু কী সেই কর্তব্য? আসছি সেই কথায়।
স্বাধীন ভারতের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী এবং জওহরলালের অন্ধ সমর্থক মৌলানা আবুল কালাম আজাদ সাহেব তাঁর “ইন্ডিয়া উইন্স ফ্রিডম” বইতে সর্দারকে তুলোধনা করে লিখেছেন যে প্রথমে জিন্নাহ সাহেব পৃথক রাষ্ট্রের জিগির তুললেও পরবর্তীকালে প্যাটেলই হয়ে উঠেছিলেন পার্টিশনের প্রধান মুখ। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে “হিন্দু সর্দার”-এর চিত্রকে রাজনৈতিক মানচিত্রে প্রতিষ্ঠিত করা সত্যের অপলাপ এবং পক্ষপাতদোষে দুষ্ট। তিনি যা করেছিলেন সবটাই একটা টলোমলো পায়ে হাঁটতে শেখা শিশু রাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর চশমা পরে। ১৯৪৬ সালের আগ্রাসী মুসলিম লীগের কর্মকাণ্ড এবং তৎপরবর্তী ঘটনাপরম্পরায় প্যাটেল বুঝতে পেরেছিলেন যে লীগের সঙ্গে মিলিজুলি মন্ত্রিসভার স্থায়িত্ব ক্ষণজন্মা এবং গরল-উদ্গারী। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্লেমেন্ট এটলির ডাকে তৈরি ক্যাবিনেটে সর্দার সাহেবেরই প্রবল বিরোধিতায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের বদলে অর্থমন্ত্রক লাভ করেন লীগের লিয়াকত আলী খান এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক লাভ করেন সর্দার। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, বুদ্ধিমান জওহরলাল তাঁর অন্যতম রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের “গৃহপ্রবেশে” আপত্তির বদলে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছিলেন, কারণ তিনি জানতেন টালমাটাল দাঙ্গাধস্ত দেশের স্বার্থে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষমতা তাঁর নিজের ছিল না। এবং হলও ঠিক তাই, সোহরাওয়র্দি সাহেবের উস্কানিমূলক বক্তৃতা ও ১৯৪৬ সালের ১৬ আগস্ট লীগের ডিরেক্ট অ্যাকশন ডে-র ঘোষণার পরেই শুরু হয় কলকাতার দাঙ্গা, যার বিষবাষ্প ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে পূর্ব ও পশ্চিম পাঞ্জাবে। প্রখ্যাত জীবনীকার রাজমোহন গান্ধির “প্যাটেল, আ লাইফ” বই থেকে আমরা জানতে পারি ততদিনে প্যাটেল দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করছেন যে যেখানে ইতোমধ্যে বাংলা ও পাঞ্জাবে একটি “ডি ফ্যাকটো” পাকিস্তান অবস্থান করছে সেখানে একটি “ডে জুরে” পাকিস্তানের আশু প্রয়োজন, যা লীগকে আরও দায়িত্বশীল করে তুলবে এবং খণ্ডিত ভারতবর্ষও তার বাকি টুকরোগুলোকে এক মালায় গাঁথতে মনোনিবেশ করতে পারবে। এই পর্যবেক্ষণের ঐতিহাসিক এবং রাজনৈতিক গুরুত্ব যে কতটা অতলস্পর্শী তা ভবিষ্যৎ মনে রেখেছে। অতএব ধর্মীয় অবিশ্বাসের কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন ভারতবর্ষে ১৯৪৬-এর ডিসেম্বরে প্যাটেল এবং সংশ্লিষ্ট নেতৃত্ব পার্টিশনের প্রতি সম্মতি জানালেন এবং যার ফলশ্রুতি ১৯৪৭ সালে ইসলামিক পাকিস্তান এবং ধর্মনিরপেক্ষ ভারতবর্ষের জন্ম। এই প্রসঙ্গে সর্দারের কর্তব্যবোধের কথা না বললে অর্ধসত্য বলা হয়, স্বাধীন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বহু ক্ষেত্রে দাঙ্গাধস্ত মুসলমান নাগরিককে উদ্ধার করেছেন উন্মত্ত হিন্দু জনতার হাত থেকে, এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তিনি ধর্মকে রেয়াত করেননি। ভারতবর্ষের মুসলিম জনসমাজের প্রতি তাঁর বার্তা ছিল খুব পরিষ্কার, কেউ পাকিস্তানে যেতে চাইলে স্বচ্ছন্দে যেতে পারে কিন্তু ভারতবর্ষে মুসলমানদের বসবাসে যেমন রাষ্ট্রের কোনও আপত্তি নেই তেমনি দেশের সংহতি রক্ষার দায়ও তার নাগরিকদের, সে তিনি যে ধর্মাবলম্বীই হোন না কেন। ১৯৪৬ সালে দূরদর্শী সর্দারই প্রথম সীমান্ত বিন্যাসের চেয়েও আগে অতিরিক্ত গুরুত্ব দিতে চেয়েছিলেন হিন্দু ও শিখদের ভারতে এবং ইচ্ছুক মুসলিমদের পাকিস্তানে সুষ্ঠুভাবে প্রত্যর্পনের বিষয়ে। তখন সর্দারকে পাত্তা না দেওয়া কংগ্রেস নেতৃত্ব ও মাউন্টব্যাটেন সাহেবকে সেই তেতো ওষুধটিই পরে গিলতে হয়েছিল, হাজার হাজার তাজা প্রাণ ও চিরস্থায়ী সাম্প্রদায়িক অবিশ্বাসের বিনিময়ে।
অতএব অখণ্ড দেশের রাজনৈতিক মাথাদের স্বার্থ ও ক্ষমতাদখলের আগ্রহেই রক্তক্ষয়ী দেশভাগ। সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল যে পার্টিশনের পক্ষে ছিলেন একথা যেমন সত্যি তেমনই একথাও অত্যন্ত সত্য যে “হিন্দুহৃদয়” “মুসলিমের বন্ধু” সর্দার সাহেব দেশভাগের গরল গলায় নিয়ে নীলকণ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন কেবলই ভারতবর্ষ নামক শিশুটির পায়ের তলার জমি শক্ত করার স্বার্থে।
আসলে ২০২২ হোক কি ১৯৪৭, যখনই আধপেটা ভুখা মানুষ সর্বস্বান্ত হয়ে ধর্মরূপী ছাতার তলায় আশ্রয় খুঁজতে যায়, ভেকধারী ধর্ম তখন আশ্রয়ের পরিবর্তে সজোরে ছোবল মারে নিজ ক্ষমতা প্রদর্শনের অহঙ্কারে। নর্মদাতীরের “স্ট্যাচু অফ ইউনিটি”র খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসুন সর্দার সাহেব, আজ যে আপনার মত মানুষকে খুব প্রয়োজন!