রিমি মুৎসুদ্দি
ওয়ান টু চা চা চা… লেটস গো চা চা চা… এক দো চা চা চা…
হাতের পাতায় একটা চাপ অনুভব হতেই ঘুম ভেঙে যেত, আর আকাশের দিকে তাকিয়ে বেলা বোঝার চেষ্টা করতে করতে গানের লাইনগুলো মনে রাখার চেষ্টা করতাম। পাশের ঘরে চা চা চা কে চাপা দিতেই খুব জোরে রবীন্দ্রসঙ্গীত চালিয়ে দিত শুভ্রাকাকি। আমার একমাত্র কাকি। মারা গেছে আজ চারবছর। ছেলেমেয়ে ছিল না। সঙ্গী বলতে উঁচু দেওয়ালের তাকে বসানো একটা পোর্টেবল কালার টিভি। কাকা মারা যায় আমার ক্লাস এইটে পড়ার সময়। কাকি মারা যাওয়ার আগে অবশ্য কাকির একমাত্র সঙ্গী টিভিটাও বিদায় জানাতে সম্পূর্ণ বিগড়েছিল। মাঝেমাঝে ভাবি টিভি ছাড়া কাকি থাকল কী করে শেষ কটা দিন?
মুসুর ডাল ফোঁড়নের গন্ধে মনটা এক ফুরফুরে লাগলেও ভয় হত, কারণ, ছাদের ওপর মিন্টুকাকা ঘুড়ি ওড়াচ্ছে। এক্ষুণি কাকি আর ওপাশের চিনুজ্যাঠা দুজনে একজোট হয়ে ঝগড়া শুরু করবে। ‘ছাদের ওপর দাপাদাপি হলে আমরা যাই কোথায়?’
–আরে কাকা, বছরে তো দুদিন ঘুড়ি ওড়াই। বিশ্বকর্মাপুজো আর অক্ষয় তৃতীয়া। এত ঝাঁট জ্বালাও কেন?
–বিশ্বকর্মাপুজোয় তো লোকে কারখানায় যায়, পুজো দেয়। তুই কাঠবেকার। তোর আবার দিন-অদিন কী? তুই নামবি না আমি আসব?
–বেশি চিল্লিও না। নামব না। দেখি কার বাপের সাধ্য নামায়?
–সকালেই চড়িয়েছিস?…
শুরু হয়ে যেত। খিস্তি আর উপখিস্তির বর্ষণ। তা মিন্টুকাকা, চিনুজ্যাঠা, আমার কাকি এই তিনজনের ঝগড়া কোনও নতুন ঘটনা ছিল না আমাদের নিমতলাঘাট স্ট্রিটের পুরনো বাড়িতে। বিশ্বকর্মাপুজোর দিন সকাল থেকে তোতনদাদার মাইকের দোকানে একের পর এক গান বাজছে। বোধহয় বাড়িতে এসে ঝগড়টা শুনে গেছে তোতনদাদা। তাই মাইকের শব্দ এত জোরে বাড়িয়ে দেয় যে চা চা চা–এর সঙ্গে কাকির গলার স্বর আমার কাছে আ আ আ হয়ে এল। আসলে বলতে চাইছিল বোধহয়, ‘আমার ঘর, আমার ছাদ, আমার অসুবিধা হলে আমি আমার মতো প্রতিবাদ করবই।’ রোজই একই কথা বলে। কিন্তু সেদিন আর কিছু বিশেষ শোনা যেত না।
বছরে ঐ একটা দিন আমাদের বাড়িতে কোনও রান্না হত না। কাঠগোলায় গৌরকাকুর শ মেশিনের কারখানায় বিশ্বকর্মা পুজো হত। প্রতিবার বিরিয়ানি মাংস আসত ঐ দিন। নীল স্কার্ট সাদা মোজা বিনুনিতে সাদা ফিতে ঝুলিয়ে হোলিচাইল্ড স্কুলে যাওয়ার পথে স্কটিশের নীলু (নামটা সত্যিই ভুলে গেছি) হাতে একটা চিঠি ধরিয়ে দিয়েছিল একবার। ‘আমাদের কারখানায় আজ পুজো। বিকেলে গানের স্কুলে যাওয়ার পথে এসো একবার। প্রসাদ রেখে দেব তোমার জন্য।’
মাইকে, ‘হাজার কবিতা বেকার সবিই তা…।’ আর পাশ দিয়ে কালো ধোঁয়া উড়িয়ে এক এক করে চলে যাচ্ছে লরিগুলো।
সে বয়সে চিঠি পেলে ভাল লাগারই কথা। কিন্তু তার বদলে ভয় ও লজ্জা দুটোই পেলাম। না, যা ভাবছেন তা নয়। ঠিক লজ্জাবতীসুলভ লজ্জা নয়। তবে ভয়ের কথাটাই লিখি আগে। ভয় আমার মাকে। এ চিঠি হাতে পেলে আগে বিনুনি থেকে একেবারে বয় কাট হয়ে যাব। ছোট থেকেই মাথার চুল খুব ঘন ছিল। বিনুনি যে কী ভাল লাগত। কিন্তু মা ধরেবেধে বয়কাট করাতে নিয়ে যেত মায়ের চেনা এক সস্তার পার্লারে। চুল কেটে দিত যে দিদি মাকে লুকিয়েই তাকে কাতর অনুরোধ করতাম, সামনে একটু লকস মতো যেন রাখে।
এইবার লজ্জার কারণটাও বলি। বিশ্বকর্মাপুজোর প্রসাদ মানেই বিরিয়ানি জানতাম। কারণ, বাড়িতে তো ওইদিন বিরিয়ানিই আসত। ফল মিষ্টি যে প্রসাদ হয় তা জানতাম না। ওইদিন স্কুলে কখনও ছুটি দিত না। বিশ্বকর্মার হাতে তিরধনুক, হাতুড়ি আর বাহন হাতিকে ফুল মালায় সজ্জিত দেখে স্কুল যাই আর বিকেলে ফিরে এসে বিরিয়ানি মাংস খাই। প্রসাদ বলতে বিরিয়ানিই বুঝি। নীলু তাহলে বিরিয়ানি খাওয়ার জন্যই আমাকে আসতে লিখেছে। আশ্চর্য! আমি যে পেটুক, বিরিয়ানি খেতে খুব ভালবাসি আর তাই এক নয় দুপ্যাকেট অনায়াসেই খেয়ে ফেলতে পারি, এই খবরটা নীলুর কানেও পৌঁছে গেছে? এই ছিল লজ্জার কারণ। অবশ্য লজ্জা বেশিক্ষণ স্থায়ী থাকত না। বিকেলে এক্সট্রা বিরিয়ানি পাওয়ার আশায় গানের স্কুলে যেতাম। গানের স্কুলের উল্টোদিকেই নীলুদের আটাচাক্কি, আরও কিসব ভাঙাইয়ের মেশিন আবার লেদ মেশিন বসানো কারখানাও আছে। এখন ভাবি। পাত্র হিসাবে নীলু নেহাত মন্দ ছিল না। বেশ অনেকগুলো মেশিনের মালকিন হয়ে বাড়ি বসে সারাদিন প্রচুর পড়তাম আর লিখতাম। মাঝেমাঝে সভাসমিতিতে যেতাম, নিজের খরচে সাহিত্য অনুষ্ঠানও করতাম, বই ছাপাতাম প্রচুর। একেবারে সাহিত্যসেবায় নিয়োজিত প্রাণ হত হয়ত?
–তুমি নীলুদের কারখানায় গেছিলে? প্রসাদ নিচ্ছিলে?
–কে বলল? আর প্রসাদ দিতে ডাকল তাই। কেন কী হয়েছে?
–হুম। খুব একটা সুবিধার নয় নীলুর বাবা। জাত-কংগ্রেসি।
–আরে বাবা, কংগ্রেসি তো কী হয়েছে?
–মুখে মুখে শুধু তর্ক। ডাবুয়া বলল, গণেশদা আপনার বড় মেয়ে হেসে হেসে কী গল্পই না করছে স্বপনের ছেলের সঙ্গে।
নীলুর বাবার নাম সেদিন প্রথম শুনলাম। ডাবুয়া আর বাদলকাকু বাবার সঙ্গে সবসময় থাকে। বাবার বাড়ি ফিরতে দেরি হলে, আমাদের না জানিয়ে মিটিঙে-মিছিলে গেলে ডাবুয়া আর বাদলকাকুর কাছেই খোঁজ নিতে যেতাম। ওরাও অবশ্য বাবার সঙ্গী। ওদের বাড়ি থেকেই জানতাম, আজ অমুক জায়গায় মিটিং, অমুক মিছিল এইসব।
সেদিন বাবা আমাকে অদ্ভুত কথা বলেছিল,
–তুমি জানো আমাদের একটা প্রেস্টিজ আছে এখানে।
ছোট থেকেই ঠাকুমা-পিসির ধারা পাওয়া, তেড়েফুঁড়ে তর্ক করা মন আমার। বলেছিলাম,
–তুমিও তো ডাবুয়ার সঙ্গে থাকো সারাক্ষণ।
–ডাবুয়াকাকু বলো। ডাবুয়া আমাদের পার্টির ছেলে। পার্টির জন্য খুব খাটে ও।
–তো? পুতুল বলছিল রোজ ওকে গালাগাল দেয়, উঠে যেতে বলে তোমার ডাবুয়া।
–আঃ! যা বোঝো না তাই নিয়ে কথা? পুতুলের এখনও ভোটার কার্ডই হয়নি। আমি বলেছিলাম পার্টি অফিসে, পুতুলের কথা। ও আমাদের ভোটার নয় তো। আমি কী করে সাহায্য করব ওকে?
–আশ্চর্য! সাহায্য করতে গেলে ভোটার হতে হবে? তুমি ডাবুয়াকে বারণ করো। পুতুলকে গালাগাল দিলে আমি একদিন তেড়ে ঝগড়া করব ওর সঙ্গে।
–উফফ, দিন দিন পিসি-ঠাকুমার মতো ঝগড়ুটে হচ্ছিস।
শেষ ফোড়নটা মা-ই কাটল। পুতুল আমাদের বাড়িতে কাজ করত। ওর স্বামী মারা যেতে পাঁচটা বাচ্চা নিয়ে ওর স্বামীর ভাড়া নেওয়া একচিলতে মুদির দোকানে এসে উঠেছিল। নাহ, দোকনটা রাখতে পারেনি। ওখানেই ভাড়া থাকত। খুব রুগ্ন, একেবারে ধুঁকছে। পরে জেনেছিলাম, দীর্ঘদিন না খেয়ে গ্রামে পড়েছিল। আর ওর বর এখানে কলকাতায় নিজের ভাগ্নীর সঙ্গে ঘর করত। মা অবশ্য পুতুলকে মায়ের স্কুলে আয়ার কাজ দিয়েছিল। এখন অবশ্য সেই পুতুলের ছেলে মোহন, যার নাক দিয়ে শিকনি গড়াতে দেখলেই আমি বলতাম, ‘যাও, পেহলে ঘর যাকে সাফ হোকে আও।’ সে অবশ্য রাস্তার ওপরেই নাক ঝেড়ে নাকের ফুটোয় শুকনো শিকনি নিয়ে আবার এসে বসত, মায়ের ছাত্রদের মাঝে। চারবছর আগে কাকি মারা যাওয়ার আর মোহনের ডাক্তারিতে চান্স পাওয়ার খবর একসঙ্গে পেয়েছিলাম।
মোহনের ডাক্তারিতে চান্স পাওয়ার খবরে খুব একটা চমকাইনি। শুধু অবাক হয়েছি ভেবে ওর মা ও ছেলের অধ্যাবসায় দেখে। তবে বাবার কাছে প্রতি বিশ্বকর্মাপুজোর দিন যে স্মৃতিচারণ শুনতাম, তা শুনে প্রকৃতপক্ষেই অবাক হতাম তখন। শরিকি বাড়িতে সবাই এক-আধখানা টুকরো যেন কেটে নিয়ে নিজের মতো ছিল। ডিডি ২-তে শনিবারের হিন্দি সিনেমা আর দূরদর্শনে রবিবারের বাংলা সিনেমা দেখতে আমাদের ঘরে ভিড় উপচে পড়ত সেই কোন ছোটবেলায়। খাটের এক কোণায় গুটিশুটি মেরে রেখার নাচ দেখতাম। তারপর তো টেলিভিশনের বিপ্লব শুরু হল। ঘরে ঘরে টিভি এল। আর সিনেমা দেখার যৌথতাও ভেঙে যেতে থাকল। অবশ্য ভিসিপি-ভিসিআর, ক্যাসেট আরও একবার পাড়া ও পুরনো পরিবারের সদস্যদের মধ্যে এক সোফায় অথবা খাটে চাপাচাপি করে বসার উষ্ণতাটুকু কিছুদিনের জন্য ফিরিয়ে দিয়েছিল।
সেবার সোমবার ছিল। ক্লাস সেভেন কি এইট। সুপারহিট মুকাবলায় আমির খানের দিল, আলিশা চিনয়র মেড ইন ইন্ডিয়া আর বাবা সায়গলের সারে জাঁহা সে আচ্ছা। নটা বাজলেই টিভির কাছে। মা দেখতে না দিলে ঠিক ওই সময় টয়লেট যাওয়ার হিড়িক পড়ত দু বোনের। শরিকি বাড়িতে টয়লেট ছিল একটু দূরে। যাওয়ার পথে শুভ্রাকাকি বা অন্য কারও ঘরে টুক করে ঢুকে অন্তত আমির খানকে একবার চোখের দেখা দেখে আসতাম। ধরা পড়ে কতবার মা দু-হাতে দু-বোনের চুলের মুঠি ধরে হিড়হিড় করে ঘরে নিয়ে এসেছে। রাতের রুটিচচ্চড়ির সঙ্গে গিলে নিতাম চোখের জল।
সে যাক, বলতে চাইছি বসন্ত ফ্যাক্টরির কথা। বাবা একবার বিশ্বকর্মাপুজোর দিন বুড়ো শিবতলা দিয়ে নিয়ে যেতে যেতে বলেছিল, ‘এখানে যে এত কাঠের গোলা দেখছিস, এখানে আগে আমাদের ‘বসন্ত ফ্যাক্টরি’ ছিল। সেই যে দেশভাগের আঁচ পেয়েই জ্যাঠামশাই মাখনলাল দে রায় ঢাকা থেকে সব বেচেবুচে চলে এল আর এখানে এসে এই ১৫, নম্বর নিমতলাঘাট স্ট্রিটে আস্তানা গাড়ল। সঙ্গে এল তার নিজের সাত ভাই আর খুড়তুতো, জ্যাঠতুতো, মামাতো মিলে প্রায় জনা চল্লিশ জ্ঞাতিগুষ্টি। সবাই মিলে মাখনলালের নিমতলাঘাট স্ট্রিটের ঠিকানায় এসে উঠল। আর ঘরও আছে বটে এই দুমহলা বাড়িতে। সবাই ধরেও গেল। তোর দাদু, আমার বাবা ধীরেন্দ্রনাথ দে রায় ছিল সবচেয়ে ছোট। বাবার বিয়ে তো এখানেই হল। তোর ঠাকুমা সিমলে স্ট্রিটের মিত্তিরবাড়ির মেয়ে।’
হ্যাঁ। ওইজন্যই ঠাকুমার এত মেজাজ। ঠাকুমা বলেছে আমাকে। ‘তোর দাদু তো ঠকিয়ে বিয়ে করেছে আমাকে। নাহলে মিত্তিরবাড়ির মেয়েকে বিয়ের পর সত্তরজনের রান্না একা রাঁধতে হত? আর তোর দাদু দাদার ভয়ে রাত্রে পর্যন্ত শুতে আসত না ঘরে।’
নাহ, দুগগা রানি দে রায়ের কথা ও তার মেজাজের পাঁচালি এখন থাক। বরং ‘বসন্ত ফ্যাক্টরি’-তে ফিরে আসি। বাবার জ্যাঠামশাইয়ের আমলে যৌথ সংসার, যৌথ ব্যবসা, যৌথ পুজোপার্বণ। এক একটা পার্বণের গল্প লিখতে গেলে কাহিনি হয়ে যায়। বিশ্বকর্মাপুজোর দিন কর্মচারীদের জন্য ও বাড়ির লোকের জন্য আলাদা করে খাসি কেনা হত। আমার দাদু দাঁড়িয়ে থেকে সেই মাংস কাটাতেন। কারখানায় বাড়িতে উৎসব। এভাবেই বাবারা বড় হয়েছে। আমরা বড় হয়ে বিরিয়ানির প্যাকেটে বিশ্বকর্মাপুজোর আনন্দ খুঁজে পেয়েছি।
একসময় আমাদের আনন্দময়ীতলা কালীবাড়ির পাশ দিয়ে গঙ্গা বয়ে যেত। কালী আর গঙ্গা দু-বোনের তখন প্রায়ই দেখা হত। জাহাজ, নৌকা নোঙর করার জন্য লোহার আংটাগুলো এখনও সেখানে রয়েছে। তবে গঙ্গা স্বাভাবিকভাবেই সরতে সরতে অনেক দূরে সরে গেছে। আর একটু দূরেই স্ট্র্যান্ড ব্যাঙ্ক রোড। আগে অবশ্য কী নাম ছিল জানি না। ছিল একটা ট্রামলাইন আর একটা রেললাইন। বাবাদের ছোটবেলায় সেই রেললাইন দিয়ে শুধু মালগাড়ি বোঝাই কাঠ আসত। সেইসব লগি চলে যেত স্ট্র্যান্ড ব্যাঙ্ক রোডের শ মেশিনের কারখানাগুলোতে। কাঠ চেরাই, পালিশ হত। এরপর সেই ট্রামলাইন চলে গেল। আর মালগাড়ির বদলে সেখানে দিয়ে যেতে শুরু করল কলকাতার বিখ্যাত চক্ররেল।
এত ইতিহাস লিখলাম, কারণ এইসব জায়গায় তখন একসঙ্গে সব ব্যবসায়ীরা ঘটা করে বিশ্বকর্মাপুজো করত। শ মেশিন বসানো কারখানাগুলোর পুজো বাবারা ছোটবেলায় একসঙ্গে হতে দেখেছিল। খাসির মাংস ঠিকঠাক ভাগ করার জন্য আমার দাদুর মতো মানুষেরও নিশ্চয়ই অভাব ছিল না! এরপর সবই টুকরো টুকরো হতে লাগল। পুজো আলাদা হয়ে গেল স্ট্র্যান্ড ব্যাঙ্ক রোডে। আর আমাদের দে রায় পরিবারের যে যার আলাদা সংসার নিয়ে ভাগ বুঝে নিতে চাইলে, বাবার জ্যাঠামশাই মাখনলাল দে রায় কারখানা বেচে দিলেন এক পারসি ব্যাবসায়ীকে। ‘বসন্ত ফ্যাক্টরি’-র শীত আর পোহানো হল না পরবর্তী প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের।
গঙ্গার পাড় ঘেঁষে হয়ত হরেক পুজো, বিসর্জনের ধুম কিন্তু বিশ্বকর্মাপুজো আর সেভাবে হয় না। কলকারখানাগুলোতে তো বহুদিন বিসর্জনের কাঠি পড়ে গেছে। শোরুম, মাল্টিপ্লেক্স, শপিং মল, দুর্গোপুজো, হুল্লোড়ে ঠাসা শহরে উৎপাদন কোথায়? চোরাই কাঠ ও থাইল্যান্ড, মালেয়শিয়া আর ভিয়েতনামের ঘন জঙ্গল থেকে কী একরকম কাঠ আসে। যার জন্য অনেক দেশি ব্যাবসায়ী তাদের ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন। শ মেশিনগুলো সব কাজ না করে করে অকেজো হয়ে কেবল পাড়ার মোড়ে গঙ্গাজলের কলে বগবগ করে আসা সাদা দুধের মতো জলের বদলে সরু ঘোলা জলের ধারা দেখতে থাকে। বিয়ে হয়ে আসা নতুন বিহারি বউ হয়ত তখুনি স্নান সেরে ভিজে কাপড়ে একবালতি জল নিয়ে ফিরে যাচ্ছে…