একটা সাইনবোর্ড চাই-ই?

একটা সাইনবোর্ড চাই-ই? | রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য

রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য

 

চলে গেলেন রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য— চিন্তক, দার্শনিক ও আমাদের সময়ের এক আপসহীন মার্কসবাদী। বাংলাভাষা তথা ভারতবর্ষের জ্ঞানচর্চার ইতিহাসে তাঁর কাজের যথার্থ মূল্য কী— তা আমরা এখনও সম্যক অনুধাবন করতে পারিনি৷ আশা করব, আগামীদিনে তাঁর লেখালেখি নিয়ে যথাযোগ্য চর্চা আমাদের মননকে আরও সমৃদ্ধ করবে৷ চার নম্বর প্ল্যাটফর্মের অক্টোবর ২০২২ সংখ্যায় আমরা পুনঃপ্রকাশ করলাম রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্যের একটি অন্য স্বাদের লেখা, যে ধরনের রচনায় তিনি মার্কসবাদ, রাজনীতি ও সমাজনীতির নানা জটিল তাত্ত্বিক ও মনস্তাত্ত্বিক বিষয় সাধারণের জন্য অতি সহজবোধ্য ভাষা ও প্রকরণে উপস্থিত করতেন। নিচের লেখাটি একই গোত্রের, প্রকাশিত হয়েছিল আজ থেকে প্রায় তিন দশক আগে, অর্কিড পত্রিকায়, ১৪০০ বঙ্গাব্দে। বানান যথাসম্ভব অপরিবর্তিত রাখা হল।

 

এইসব বিসংবাদের কুশীলবদের সকলেই চেনেন।

আশাবাদী— মাঝবয়িসি ভদ্রলোক। জীবনে অনেক ঠেকেছেন, তবু কোনো শিক্ষা হয়নি।

জিজ্ঞাসু— বয়েস কুড়ির কোঠায়। জ্ঞানের আকাঙ্খা প্রবল কিন্তু আত্মবিশ্বাসের কিঞ্চিৎ অভাব আছে।

বাচাল— জিজ্ঞাসু-রই বয়িসি। মুখে কথা ফোটা অবধি যেটুকু সবুর করতে হয়েছিল। তারপর আর মুখ কখনও থামেনি। জানুক বা না-জানুক— কিছু একটা বলা চাই-ই।

সবজান্তা— জিজ্ঞাসু-রই বয়িসি। মহাবিশ্বের সব ব্যাপারেই প্রায় নিশ্চিত ধারণা আছে।

সংশয়ী— আশাবাদীরই বয়িসি, বা দু-এক বছরের বড়ো। যত-না ঠেকেছেন, শিখেছেন তারও বেশি। কিছুতেই যে কিছু হওয়ার নয়- এ বিষয়ে স্থিরমতও হতে পারেন না, ঝোঁকটা যদিও সেই দিকে।

‘তবু আশা জেগে থাকে…’ আলাপে আরও দুজন এসেছেন:

করিতকর্মা— আশাবাদীর প্রাক্তন বন্ধু। বয়সে একটু ছোটো। চুলগুলো পেকে গেছে বলে বুড়োটে দেখায়। চনমনে লোক, সমাজে-সংসারে সফল।

চালিয়াত— বয়েস কুড়ির কোঠায়। করিতকর্মার ডান হাত না-হলেও তার বুড়ো আঙুল। বুক-পকেটে সর্বদাই একটা কচি ক্যালকুলেটর উঁকি মারে।

***

 

সংশয়ী: আজকাল আর কিছুই ভালো লাগে না। এই যে রোজ রাত্তিরে আমরা ক’জন জড়ো হই, তাতেও আর উৎসাহ পাই না। শুধুই মনে হয়: বুড়ো হওয়ার আগেই বাতিলের দলে চলে গেলুম।
বাচাল: সত্যি। কিছুই ভালো লাগে না। প্রত্যেকেই নানা কাজে আছি বটে— পত্রিকা, গ্রুপ থিয়েটার, বিজ্ঞান ক্লাব, নাগরিক অধিকার রক্ষা— যা-ই করি না কেন, সবেতেই মিইয়ে যাচ্ছি।
সবজান্তা: ভেবেছিলুম, পার্টতে যখন থাকা গেল না, তখন এগুলোই বিকল্প হিসেবে কাজে দেবে। কিন্তু এখন দেখছি… মনের মধ্যে একটা ফাঁকা জায়গা রয়েই গেছে।
সংশয়ী: মাঝে মাঝে মনে হয় আরও মৌলিক ধরনের কিছু করতে পারলে ভালো হতো।
আশাবাদী: যেমন?
সংশয়ী: এই ধরুন, শ্রমিক-বস্তিতে বা দিনমজুরদের সঙ্গে থেকে… বা ঐ ধরনের কিছু। যাতে ভিতের মানুষজনের সঙ্গে যোগ থাকবে, তাঁদের সঙ্গে থেকে কিছু করা যাবে৷
বাচাল: আরে, আপনি-ও তা-ই ভাবেন? আমিও তো তা-ই ভাবি।
আশাবাদী: যদি তা-ই ভাব, তবে করছ না কেন?
বাচাল: বুঝতেই তো পারেন। কোনো পার্টির সঙ্গেই আর যোগ নেই। সেটা না-থাকলে ওসব আর করাও যায় না। একেবারেই দিবাস্বপ্ন। আবার এতকাল যা করে এসেছি তাতেও ঠিক স্বস্তি হয় না। সর্বদাই মনটা খচখচ করে: সাহিত্যপত্রিকা, গণতান্ত্রিক অধিকার, বিজ্ঞানচেতনা— এসব করেই বা কী হবে? রাজনীতিটাই যেখানে ঘেঁটে গেছে, সেখানে সবকিছুই মায়া।
আশাবাদী: পার্টিতে থেকে ঐ কাজগুলো করলে সব ঠিক হয়ে যেত?
বাচাল: হ্যাঁ— মানে, না— মানে— আসলে কী হয় জানেন? যতক্ষণ কোনো পার্টির মধ্যে আছি, ততক্ষণ নিজেকে একটা টিম-এর অংশ বলে মনে হয়। অন্যরা অন্যান্য ফ্রন্ট-এ কাজ করছে, আমি আমার ফ্রন্ট-এ করছি। সব মিলিয়ে একই লক্ষ্যের দিকে এগোচ্ছি।
সবজান্তা: যে-মুহূর্তে আপনি পার্টির বাইরে, তকখুনি সেই আস্থাটা হারিয়ে যায়। মনে হয়: আমার একার সাধ্যে কী-ই বা কুলোবে।
বাচাল: যা-ই বলুন আর তা-ই বলুন, পার্টি মানে একটা আশ্রয়। শুধু যে নিজেকে কোনো ভাবনাচিন্তা করতে হিয় না, তা-ই নয়। দুনিয়ার সব ব্যাপারেই কী বলতে হবে তার গ্যারান্টি থাকে…
সংশয়ী: ভাববার সময়ই বা থাকে কোথায়? পার্টি মানে আজ মিটিং, কাল মিছিল, পরশু কনভেনশন, তারপর রিভিউ— একটার পর একটা প্রোগ্রাম।
সবজান্তা: আর এখন, পার্টিছাড়া লোক হয়ে খুবই দুরবস্থায় পড়তে হয়েছে। মনে নানা প্রশ্ন ওঠে— ভিড় করে আসে৷ কাউকে সেসব বলতেও পারি না। আবার নিজেরও অত এলেম নেই যে, সব জবাব নিজেই ঠিক করতে পারব।
আশাবাদী: ‘এ কী কথা শুনি আজ মন্থরার মুখে?’ খুবই ডাউন হয়ে আছ, মনে হচ্ছে? নইলে তোমার তো এমন হওয়ার নয়।
সবজান্তা: (লজ্জা পেয়ে) যতক্ষণ নিজেকে পার্টির প্রতিনিধি বলে জানা থাকে, ততক্ষণ কোনো ব্যাপারেই ‘জানি না’ বলতে লজ্জা করে। মনে হয়, তাতে পার্টির ইজ্জত চলে যাবে। এখন…
আশাবাদী: পার্টিকে অমন সর্বজ্ঞ বলে ধরে নিয়েছিলে কেন?
সবজান্তা: ধারণাটাই যে ঐর’ম ছিল। পার্টিতে ঢুকেছিলুম কলেজে পড়ার সময়ে, মামুলি সেপাই হয়ে। ভরসা ছিল: আমি না-জানতে পারি, ওপরের নেতারা নিশ্চয়ই জানেন।
সংশয়ী: কাজের বেলায় দেখা গেল: খুব একটা বেশি জানেন না।
বাচাল: সেটা বুঝতেও সময় লাগল অনেক।
আশাবাদী: অর্থাৎ গোড়ায় গলদ। সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের মতো পার্টিকে একটা আধা-সাকার আধা-নিরাকার সত্তা বলে ধরে নিয়েছিলে। আসলে পার্টির নামে যাঁরা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তাঁরা আমাদেরই মতো কিছু ব্যক্তি। বয়েস ও সেই সুবাদে অভিজ্ঞতায় নিশ্চয়ই বড়— কিন্তু অভ্রান্ত নন। কারও পক্ষেই তা হওয়া সম্ভব নয়। তাঁদের ব্যক্তিগত বা সমষ্টিগত প্রজ্ঞাকে সর্বদাই নির্ভুল বলে ভাবতে কেন?
সবজান্তা: কেন যে ভাবতুম— তার উত্তর ঠিক গুছিয়ে দিতে পারব না। খানিকটা শ্রমবিভাগের মতো ব্যাপার আর কী। ভাবার কাজটা নেতাদের, করার দায়িত্ব আমাদের। তাঁদের ভাবনায় যে কোনো ভুল থাকতে পারে, এটাই কখনও মাথায় আসেনি।
বাচাল: নিজেদের যে কোনোদিন ভাবতে হবে— সেটাও কখনও ভাবিনি। নেতা হওয়ার কোনো মতলবও ছিল না।
সবজান্তা: তারপর হঠাৎ একদিন খালাসের হুকুম হয়ে গেল। পার্টি থেকে কাউকে তাড়িয়ে দিল, কেউ-কেউ মানে মানে বিদায় নিল— যথেষ্ট আনুগত্য দেখানো যাচ্ছিল না, তাই। কিন্তু সেই জীবনটা এমনই অভ্যেস হয়ে গেছে যে নিজেদের এখন অসম্ভব অসহায় লাগে।
বাচাল: জয়া মিত্র-র ‘হন্যমান’ পড়েছেন তো?
আশাবাদী: নিশ্চয়ই।
বাচাল: তাতে একটা বাচ্চার কথা আছে— না? খালাসের হুকুম হচ্ছে জেনে যে তার মা-কে জিগ্যেস করেছিল: ‘মা, ওয়ার্ডার না গেলে, ঘরে আমাদের কে লকাপ কইরবে?’
আশাবাদী: (হেসে) বন্ধনের মধ্যেই মুক্তি ছিল? পার্টি সম্পর্কে এই যে পরম নির্ভরতা— পার্টিই যেন মা-বাপ— এই ভাবটা এখনও কাটছে না?
বাচাল: বললুম তো, ওটা সর্বদাই জুতোর পেরেকের মতো বিঁধতে থাকে। পার্টিতে থাকলে তবেই কিছু করছি বলে মনে হয়। পার্টির বাইরে আমি কে? মহাসমুদ্রে এক ফোঁটা জল মাত্র।
আশাবাদী: দ্যাখো, পার্টির কারবার রাজনীতি নিয়ে। তার কিছু রোজানা কাজ থাকে— সভা-শোভাযাত্রা ইত্যাদি। সেই কারণেই সমাজের সব অংশ-র মধ্যে তাকে ছড়িয়ে পড়তে হয়। তার মানে এই নয় যে পার্টির কাজ করা মানেই রাজনীতি করা।
বাচাল: তা বটে। বন্ধুর কবিতার বই-এর প্রুফ দেখা আর পার্টির কাগজের প্রুফ দেখা— কাজের তফাতটা কোথায়?
আশাবাদী: পার্টিতে থাকতে যা করতে, এখনও তো তা-ই করছ: বিজ্ঞান মেলা, বিপ্লবী নাটক, সাহিত্যপত্রিকা। তার জন্য চাঁদা তোলা৷ মাচা বাঁধা। তফাত কোথায়?
সবজান্তা: হুঁ। নদীয়ায় কোন কমরেডের ছেলের টিবি— তার চিকিৎসার ব্যবস্থা আর আমাদের পাড়ার একেবারে অ-রাজনৈতিক লোকের হেমোফিলিয়া— তার জন্য রক্ত জোগাড় করা— কাজ তো একই।
আশাবাদী: পার্টির তরফে হলে বিপ্লবের কাজ, জনগণের সেবা, তার বাইরের লোক হলে কিছু নয়? এমন ভাবার পেছনে কোনো যুক্তি আছে?
সংশয়ী: তফাত একটা থাকেই। মানে, বাইরের তফাত নয়, ভেতরের তফাত। পার্টিতে থেকে এসব করলে যে-ভাবটা আসে, যেমন অনুভূতি হয়— বাইরে থাকলে সেইটে ঠিক আসে না।
আশাবাদী: তার মানে, কাজগুলো করার চেয়ে পার্টির সঙ্গে জড়িয়ে আত্মপরিচয়ের সমস্যাটাই আসল।
সবজান্তা: এক্কেবারে ঠিক তারে ঘা দিয়েছেন। এখন যেটা হয়েছে সেটা হলো আইডেন্টিটি ক্রাইসিস। পার্টিতে থাকতে সেটা ছিল না।

[জিজ্ঞাসু এতক্ষণ চুপ করে বসে সকলের কথা শুনছিল। এবার মুখ খুলল।]

জিজ্ঞাসু: আমি অবশ্য কোনো পার্টির মধ্যে ঢুকিনি। তবে নাটক করার টানে (সবজান্তা ও বাচালকে দেখিয়ে) ওদের সঙ্গে ভিড়েছিলুম। আমারও একটা ভরসা ছিল: সাধ্য অনুযায়ী আমিও জনগণের জন্যে কিছু করছি।
আশাবাদী: এইটেই তো আসল কথা। একাই হোক বা দল বেঁধেই হোক— মানুষের মুক্তির জন্যে কিছু করব— এর জন্যেই তো বাঁচা।
জিজ্ঞাসু: কিন্তু ওদের পার্টি তো এখন ভেঙে টুকরো-টুকরো হয়ে গেছে। আমাদের আলাদা-আলাদা কাজগুলোকে গুছিয়ে তুলবে কে? সেই অভাবটা আমাকেও আজকাল পেড়ে ফেলেছে।
আশাবাদী: বুঝেছি। পার্টি বলতে তোমরা বোঝ একটা সাইনবোর্ড। সেটা না-থাকলেই চোখে অন্ধকার দ্যাখ।
সংশয়ী: (আহত হয়ে) পার্টি নিয়ে অমন হালকা কথা বলবেন না। পার্টি মানে গণফৌজ, স্বপ্ন দেখা হত লং মার্চ-এর…
আশাবাদী: ছাড়ুন তো মশাই। যার যেটা কাজ সেটা ঠিক করে করতে পারে না, শুধু খোয়াব দেখে দিন কাটায়। আমি তো পার্টিছাড়া হয়ে আছি পঁচিশ বছর। আমায় কেউ তাড়িয়ে দেয়নি, আমিই বেরিয়ে এসেছিলুম। কিন্তু যে-লক্ষ্য নিয়ে পার্টিতে ঢুকেছিলুম, তা-ও ছাড়িনি, কাজও বন্ধ করে দিইনি। কারণ: আমি কখনোই ভাবিনি যে আমি পার্টিতে নেই। এখনও আমি বিশ্বাস করি: আমি পার্টিতে আছি।
সংশয়ী: কী যে সব গোলমেলে কথা বলেন!
সবজান্তা: হ্যাঁ, কেমন যেন ধাঁধার মতো শোনাচ্ছে।
আশাবাদী: প্রথম-প্রথম প্রচণ্ড একটা সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে আমাকেও যেতে হয়েছিল। নিতাইদা বলতেন-না, পরহিতবাদী কাজপাগলা লোকের অনেক জ্বালা। তায় আবার যদি তাকে কমিউনিজম-এর ক্যানসারে ধরে— আর নিস্তার নেই।— সেটা আমি হাড়ে হাড়ে বুঝেছিলুম। কয়েক বছর তো শ্যাওলার মতো শুধুই ভেসে বেড়ালুম। একবার এটা ধরি-ওটা ছাড়ি, আবার ছাড়াটা ধরি, ধরাটা ছাড়ি। সে যে কী দিন গেছে!
বাচাল: (অসহিষ্ণুভাবে) পার্টিতে না-থেকেও কী করে পার্টিতে থাকা যায়— সেইটে একটু বুঝিয়ে বলুন।
আশাবাদী: (নরম হয়ে) বলছি। ‘বেদনাবিহীন অসাড় বিরাগ’ কাকে বলে, বোঝ?
বাচাল: (ঘাবড়ে গিয়ে) বোধহয় বুঝি।
আশাবাদী: ঐ সময়টায় আমি কথাটার সত্যিকারের মানে বুঝেছিলাম।
জিজ্ঞাসু: (অধৈর্য হয়ে) তারপর? কী করলেন?
আশাবাদী: আমি তো আর রবীন্দ্রনাথ নই যে সেই ভাবটাকে ভাষা দেওয়ার চেষ্টা করব। কোনো অ-রাজনৈতিক মনোবিদের সাধ্যি নেই যে এই অবস্থাটা বুঝবে৷ শেষ পর্যন্ত নিজেই নিজেকে সারালুম।
বাকি সবাই: (সাগ্রহে) কী করে? কী করে?
আশাবাদী: জানো তো, ১৮৪৭-এ মার্কস কমিউনিস্ট লিগ বলে একটা একটা পার্টি তৈরি করেছিলেন। নভেম্বর ১৮৫২-য় তিনি নিজেই সেটা ভেঙে দেন। অনেক পরে, ২৯ ফেব্রুয়ারি ১৮৬০-এ একটা চিঠিতে তিনি লেখেন: ‘আমি আর কখনও কোনো গোপন বা প্রকাশ্য সমিতিতে থাকিনি। সম্পূর্ণ এই অর্থে পার্টি তাই আট বছর আগেই আর আমার কাছে ছিল না।’
সবজান্তা: কোন প্রসঙ্গে এটা বলা হয়েছিল?
আশাবাদী: মার্কস-এর একটা লেখায় ‘পার্টি’ শব্দটার ব্যবহার নিয়ে কিছু প্রশ্ন তুলেছিলেন তাঁর এককালের সহকর্মী, কবি ফার্ডিনাণ্ড ফ্রাইলিগ্রাট। তার উত্তরে মার্কয়া জানিয়েছিলেন, ‘পার্টি’ বলতে আমি আট বছর আগেই মরে-যাওয়া সেই লিগ-এর কথা বলিনি, বা যে-পত্রিকার সম্পাদকমণ্ডলী বারো বছর আগেই ভেঙে দেওয়া হয়েছিল তার কথাও বলিনি। বাই পার্টি, আই মেনট দ পার্টি ইন দ ব্রড হিস্টরিকাল সেনস।
সবজান্তা: দারুণ কথা তো! সম্পূর্ণ ক্ষণস্থায়ী অর্থে পার্টিতে আজ কেউই নেই, কিন্তু ব্যাপক ঐতিহাসিক অর্থে তো সকলেই আছি।
আশাবাদী: এই কথাটা ঠিকমতো বোঝার পর সব অস্থিরতা সেরে গেল। একদিনে নয়, আস্তে আস্তে। তারপরেও কখনোই যে কোনো অস্থিরতা আসেনি এমন নয়, কিন্তু সে ধর্তব্যের মধ্যে পড়ে না। কাজে কম্মে থাকলে অমন তো হয়ই।

[আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলেন, বাচাল থামিয়ে দিল।]

বাচাল: দাঁড়ান— দাঁড়ান। পার্টির এই দুটো মানের কথা কোনোদিন তো জানতুম না। বেশ ধাক্কা দিলেন। একটু ভাবতে দিন।
আশাবাদী: হ্যাঁ ভাবো। নিজে ভাবো। ভাবার নিরিখটা পেয়ে গেলে আর ভাবতে অসুবিধে হবে না, কাজকম্ম করার ব্যাপারে মন থেকে সাড়া পাবে। সাইনবোর্ড-এর অভাবে আর হেদিয়ে উঠবে না।


*মার্কস-এর ঐ চিঠির প্রাসঙ্গিক অংশ পাওয়া যাবে মার্কস-এঙ্গেলস, কালেক্টেড ওয়ার্কস, খণ্ড ৪১, মস্কো: প্রগ্রেস পাবলিশার্স, ১৯৮৫, পৃ. ৮১, ৮৭-তে।

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4879 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...