পাঁচটি কবিতা
রৌদ্রশাখা
বিরল তীক্ষ্ণ রৌদ্রশাখা
বল্লম হয়ে গেঁথে যাচ্ছে
পাঁজরের খাঁজে
বিরল তীক্ষ্ণ রৌদ্রশাখা
আমার হয়ে ছুটে আসছে
আমার কাছে
সাধগাঙ্গার দুকূল ছাপিয়ে
ঘুরে যাচ্ছে অবাধ্য স্বর
নিদ্রিত একা
বিরল তীক্ষ্ণ রৌদ্রশাখা
রাত্রিনামা কুয়াশা চোখে
নি-চিত্র আঁকা
ধাও উদাত্ত, ধাও গান গাওয়া
দূর প্রাণপারে হু হু আনন্দ
এভাবে কখন উঠছে ফুলকি
গানহারা নাচ, নাচের দুলকি
বিরল তীক্ষ্ণ রৌদ্রশাখা
আমাকে নেবে না
নিয়ে যাবে পাখা
হাওয়ার উৎসব
জানি, ভ্রমণ আয়োজন সাজিয়ে তুলছে তার মুখ
একটানা গেয়ে যাচ্ছে মগ্ন যাত্রার গান
পৃথিবীর ঘড়িতে এখন কটা বেজে কত
যদি ঠিক ঠিক বলতে পারো, তাহলে একদিন
সত্যি সত্যি চলে যাব তোমাদের দেশ ছেড়ে
না হেসো না। এটা হতে পারে
জেদি মানুষের কিছু অবুঝ ইশারা থাকে
পাখা ঝাপটানো প্রার্থনায় ঝরে পড়ে সেসব
যেদিন রাতগুলো দুহাত খুলে এগিয়ে গিয়েছিল
কিছু শ্লীল-অশ্লীল শব্দের দিকে
শব্দেরা বাঁক বদল করে ঘুমোতে চেয়েছে
অত সব বুঝতে চায় না তারা
শুনতে পাই কণ্ঠস্রোত, হাওয়ার উৎসব
তুষারের বুকে এঁকে যাওয়া পদচিহ্নের উপর পা ফেলি
বলি, পৌঁছে দাও অভ্রান্ত দিনের কাছে
ভাল থেকো শীত দেশে একান্ত চাওয়া উষ্ণতাটুকু
সহিষ্ণু দিন শেষে অন্ধকারে শুয়ে থাকা আলোর চিবুক
জলপাই পাতার মুকুট
ঠিকানা খুঁজতে গিয়েছিলাম ভূমধ্যসাগর পাড়ে
তোমার কি মনে আছে, পথে পথে গ্রিক কফি
কোলাহলহীন আবর্তে রঙিন মেঘলা চিঠি কিংবা
দীর্ঘশ্বাসের সঙ্গে জুড়ে দেয়া দূরপাল্লার ছবি, আজ
মনে করো, মনে করো ভুল করে বাড়াতেই হাত
পৌরাণিক আলো এসে গিলে ফেলে চোখের মণি
এসবই তো সেদিনের কথা! জিউসের জন্মক্ষণে
নেমে আসা শরতের ফিনফিনে কুয়াশা। ভাসিয়েছে
আয়ুষ্মান তরী। এ-ঘাটের কুলে ঠেকে ও-ঘাটের স্মৃতি
হার্পের নতুন সুরে অলিম্পাস জেগে ওঠে। সম্মোহন
আনন্দে জলপাই পাতার মুকুটে সাজিয়েছ প্রতিকৃতি
তার নামে জাদুকর ঋতু বয়ে যায় দিনান্তের দিকে
হে লক্ষ্যভেদী বর্ণিল তরঙ্গ, শনশন হেমন্ত বাতাসে
ঝরাপাতার গুচ্ছ উড়ালে হারানো নাম ফিরে আসে
ভিজে পায়ের খোঁজে
মাঝে সব নদীর শব্দ ভুলে গিয়েছিলাম
দুটি ভিজে পায়ের খোঁজে মাইলের পর মাইল
নদীরই পাশে পাশে হেঁটেছিলাম
সে এক অনাদিকালের হাসি হেসে মৃদু অবজ্ঞায়
উষ্ণ আর্দ্রতা টেনে রেখেছিল
কোনওদিন যে ভালবাসায় ছিলাম তাও ভুলে গিয়ে
ঊর্ধ্বশ্বাস ছুটেছিলাম, দেখেছিলাম হরেক খেলা
কার কতটা কী ঘটেছে
কে কতটা নিচ্ছে দিচ্ছে
সব অঙ্ক ভুল প্রমাণিত
উত্তরের দোটানা হাওয়া হাজার লোকের ভিড়েও
ভিড়িয়েছে তরী। নিচে তার জল ছলছল। আজও
ভুলে যাওয়া নদীর শব্দ থেকে শুরু হয় নতুন লেখা
নতুন শব্দ খোঁজা
বহুদূরের মাটিচাপা গান বারবার ফিরে যাচ্ছে
কয়েকটি লুকানো দৃশ্যের কাছে
দেখেছি— কতটা আপন করে টেনে নিয়ে
কে কতটা পিছন থেকে ছুরি বসিয়ে দেয়!
প্রথম দিনের সংসার
প্রথম দিনের সংসার ভেসে যায়
প্রথম দিনের সংসার দম খায়
দেবদূত অপেক্ষা, অন্তর বাজে রোদের সঙ্গে দরকষাকষি করে
বিজলি বোন তোর হাতের রান্না করা সালুন পাঠিয়ে দিস
আমার রাঁধতে ভাল লাগে না। ঝিমধরা লাটিমের শব্দ— বোঁ-ও-ও-ও
সারা রাত ভোঁ-কাট্টা কথাবার্তার স্রোত
উড়ে যায় চারকোণায় খাটানো মশারির ফ্রক
একটু দেরি হয়ে গেল, প্রথম দিনেই ভুলভাল প্রথম দিনের সংসার
আপাদমস্তক ডুবে যাচ্ছে, ভেসে যাচ্ছে। নামতা চক্রে বাঁক নিচ্ছে
একটি ফসলি মাঠের অনুঘ্রাণে আপাদমস্তক একা একা পাক খায়
কে যে আছে, কে নেই, জানা নেই
সমুদ্র উপকূলে ঝিনুক কুড়াবে বলে
একদিন গান ধরেছিল, সেখানে ঘোড়দৌড়
অবাধ্য ঘূর্ণি ঝোঁকে কথার চাবুক
কে আছ ওকে ধরো, ওকে টেনে তোলো