–তাহলে জীবনানন্দ কি বরিশাল থেকে স্থায়ীভাবে কলকাতা চলে যাওয়ার সময়ে, তার মাঝারি মাপের ট্রাঙ্কে করে তার সব খাতাপত্র নিয়ে যাননি?
–হতে পারে।
বরিশাল বিএম কলেজের বাংলার বিভাগের অধ্যাপক বি. চক্রবর্তী বললেন।
–জীবনানন্দ তার চেয়ার-টেবিল-আসবাবপত্র– এসব তো আর নিয়ে যেতে পারেননি। কিন্তু তার স্নেহভাজন ছাত্রকে দেয়া খাতাটির কথা তার স্মরণে থাকবে না– এ হতে পারে না। খাতায় তো রূপসী বাংলা বাংলার ত্রস্ত নীলিমা হিসেবে আছে। যা পরে সিগনেট প্রেসের দিলীপ কুমার গুপ্ত (ডি.কে) রূপসী বাংলা নামে প্রকাশ করেন।
এত যুক্তি-পাল্টা যুক্তির পরও আমি আমার বক্তব্যে অটল।
–কিন্তু স্যার, সবচে‘ রোমাঞ্চকর বিষয় হল, ঘটনা যা দাঁড়াচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে, তিনি রূপসী বাংলা বা বাংলার ত্রস্ত নীলিমার কবিতাগুলো একটি খাতায় নয়, দুইটি খাতায় লিখেছিলেন। কেননা জীবনানন্দের স্নেহভাজন ছাত্রের কাছ থেকে আমার উদ্ধার করা খাতাটির প্রথমেই লেখা ছিল বাংলার ত্রস্ত নীলিমা-২ এবং জীবনানন্দ চেয়েছিলেন শুধুমাত্র সনেট জাতীয় কবিতা নিয়ে বাংলার ত্রস্ত নীলিমা বইটি প্রকাশিত হতে পারে, যা প্রকাশক রূপসী বাংলা নামে কবি জীবনানন্দ দাশের মৃত্যুর পরে অনুজ অশোকানন্দ দাশের অনুমতি নিয়েই প্রকাশ করেন। অথচ দ্বিতীয় খাতাটির কবিতাগুলো সনেট নয়, এজন্যেই এ খাতাটি জীবনানন্দ তার ছাত্রকে দিয়েছিলেন, এবং তা কোনও কারণে আর ফেরত নেননি। আর, ইদানীং অগ্রন্থিত বলে যা বেরুচ্ছে, জীবনানন্দ ওগুলো বাতিল ট্রাঙ্কে ফেলে রেখেছিলেন। আবার সন্দেহ জাগে, কেউ লিখে দিচ্ছে কিনা! সৌমিত্র মজা পেয়ে হেসে উঠল খুব জোরে।
–এ নিয়ে হেনরীদার সঙ্গে আলাপ করতে হবে… বলে, উঠে পড়ল সৌমিত্র।