প্রবুদ্ধ ঘোষ
প্রাবন্ধিক, সাহিত্য-গবেষক, দাবা-প্রশিক্ষক
আমরা কী জানলাম? পুলিশ, বিশাল সংখ্যক পুলিশ সন্ধে থেকে ব্যূহ প্রস্তুত করেছে চাকরিপ্রার্থী টেট-পাশ যুবক-যুবতীদের ঘিরে। আমরা কী শুনলাম? রাত ১২টায় অনশনরত প্রতিবাদীদের এবং ধর্নায় বসা শিক্ষকপদপ্রার্থীদের সরে যেতে বলছে পুলিশ; সংবাদমাধ্যমকে জায়গা ফাঁকা করে দেওয়ার আবেদন করছে। আমরা কী দেখলাম? পুলিশ বলপ্রয়োগ করছে আন্দোলনকারীদের ওপর, টেনে-হিঁচড়ে প্রিজন ভ্যানে তুলছে, কারও চুলের মুঠি ধরে টানছে, কাউকে চ্যাংদোলা করে গাড়িতে তুলে নিচ্ছে। স্লোগান দিচ্ছেন প্রতিবাদীরা, গণতন্ত্রের বিপন্নতার কথা বলছেন এবং নিজেদের দাবির ন্যায্যতা নিয়ে প্রাণপণে কিছু বার্তা সবাইকে পৌঁছে দিতে চাইছেন। শাসকের বয়ানে, অশান্ত করুণাময়ী চত্বরকে শান্ত করা গেল। সংবাদমাধ্যমের বয়ানে, টেট পাশ চাকরিপ্রার্থীদের ৮৪ ঘণ্টার আন্দোলন মাত্র ১৫ মিনিটে তুলে দিল পুলিশ। শাসকঘনিষ্ঠদের বয়ানে, শাসন মসৃণ রাখতে গেলে বেআইনি জমায়েত হঠিয়ে দিতে হয় পুলিশকে দিয়ে। আর, চাকরিপ্রার্থীদের বয়ানে, তাঁদের আন্দোলন জারি থাকবে যতদিন না তাঁরা ন্যায়বিচার পান তথা মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া প্রতিশ্রুতিমতো চাকরি পান।
উপরের এই ঘটনা ও বয়ানগুলি কি অভূতপুর্ব? শাসিত বঙ্গবাসী আগে কখনও এমন নিপীড়ন দেখেনি? মাঝরাতে পুলিশ নামিয়ে প্রতিবাদীদের মেরে-ধরে টেনেহিঁচড়ে প্রিজন ভ্যানে তুলে আন্দোলন দমিয়ে দেওয়া কি নতুন পদ্ধতি? রাষ্ট্রের কি দায় আছে কোনও বিক্ষুব্ধ ধর্নার অবস্থানকে সম্মতি দিয়ে গণতন্ত্রের অন্যতম উপাদান ‘প্রতিবাদ’কে ন্যায্যতা দেওয়ার? না, নেই। কারণ, প্রতিবাদের অধিকারকে সম্মতি দিলে রাষ্ট্রীয় অহং আহত হয়। যোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের বিক্ষোভ অবস্থান করার অনুমতি দিলে সরকারকে প্রকারান্তরে নিজের ব্যর্থতা মেনে নিতে হয়। এই ব্যর্থতার জগদ্দল বোঝা কি কম? চাকরিপ্রার্থী টেট-পাশ যুবকযুবতীদের আন্দোলন কয়েক বছর ধরে সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। বিগত কয়েকমাস ধরে সরকারি প্রতিনিধিদের একের-পর-এক দুর্নীতি প্রকাশ্যে এসেছে— শিক্ষকতার চাকরি দেওয়ার পদ্ধতিতে সমুদ্রপ্রমাণ অস্বচ্ছতা— মন্ত্রীর ঘরে লুকোনো টাকার পাহাড়— শিক্ষাদপ্তরের বড়-মেজ কর্তারা অসততার নবসংজ্ঞায়ন করছেন। বাংলার শিক্ষাব্যবস্থার স্তরে স্তরে ঘূণের খবর যখন শিরোনামে, তখন শিক্ষকপদে নিযুক্ত হতে চাওয়া যোগ্য প্রার্থীদের অনশন অবস্থান সরকারকে স্বস্তি দেয় না। আইন আদালতের ওপরে ভরসা করেন অবস্থানকারীরা, কিন্তু সেই প্রক্রিয়াতেও বছরের পর বছর কাবার হয়ে যায়। কেসের ’পরে কেস জমতে থাকে। তাঁদের বয়স বিপদসীমা পেরোতে থাকে, আর্থিক সঙ্গতি কমতে থাকে। অন্যদিকে, সরকারকে আইনি ও বেআইনি দুটি পথই খোলা রাখতে হয় নিজেদের অস্তিত্ব জাহির করতে। মাঝরাতে পুলিশ পাঠিয়ে আন্দোলনকারীদের পেটানো ও বন্দি করা সেই অস্তিত্ব জাহির করার অবিচ্ছেদ্য অংশ। আর, পুলিশের ভূমিকা? শাসকের হুকুম তামিল করা ছাড়া উপায়ান্তর নেই তাদের। কোনওদিন ছিল কি? ‘মানবিক’ পুলিশ শব্দবন্ধটি পুলিশের ফেসবুক পেজে কালেভদ্রে ভেসে ওঠা দু-একটি আত্মশাবাসি পোস্ট ছাড়া বাস্তবে সত্যিই কেউ দেখেছে? কখনও রাত নামলে গেঞ্জি-পুলিশ আর উর্দি-পুলিশ একসঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের পেটাবে, কখনও সন্ধে ঘনালে কোনও প্রতিবাদীকে ভুয়ো কেস সাজিয়ে তুলে নিয়ে আসবে থানায় কিংবা কখনও প্রতিবাদীদের মিছিলে জলকামান থেকে লাঠি থেকে টিয়ার গ্যাসের অনায়াস প্রয়োগে উল্লাস করবে। ক্ষমতাহীনকে শোষণ করে চাপ দিয়ে কেসে-কেসে জড়িয়ে দেবে আর ক্ষমতাবানের অতিক্ষমতার পথ মসৃণ করে দেবে। এগুলিই তো হয়ে এসেছে বরাবর। অপশাসন হবেই। প্রতিবাদীর সংখ্যা বাড়বেই। আর, পুলিশ তাদের পেটাবেই। আর্থিক থেকে শ্রেণিগত থেকে বর্ণগত— বহু বৈষম্যে ভরা সমাজে নির্বাচনে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অপশাসন নতুন নয়। অতএব, প্রতিবাদ আর পুলিশি জুলুমও চলবেই। এটাই দস্তুর। এটাই ক্রমশ স্বাভাবিক হয়ে আসে নি-রাজনৈতিক সময়ে ও নীতিহীন সমাজকাঠামোয়। আর, এই স্বাভাবিক হয়ে আসাটাই গণতন্ত্রের পক্ষে যন্ত্রণার। এই পশ্চাৎবাদী সমাজপদ্ধতিকে যখন আমরা দস্তুর বলে মেনে নিই, তার চেয়ে অন্ধকার আর কিচ্ছু হয় না। এখন সেই অন্ধকারের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে চলেছি আমরা।
***
খুব বেশি চাহিদা ছিল এই আন্দলনকারীদের? তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পরে ২০১২, ২০১৪ আর ২০১৭ তিনবার টেট পরীক্ষা হয়েছে। তৃণমূলের জমানায় নিয়োগপ্রক্রিয়া যতবার হয়েছে, তার প্রত্যেকটিতেই অস্বচ্ছতার প্রচুর অভিযোগ। নিয়োগের প্যানেল হল, দুবার। কিন্তু যথাযোগ্য মেধাতালিকা প্রকাশ হল না। ২০১৪ সালের টেট-উত্তীর্ণদের ৮০ শতাংশকে নিয়োগ করা হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ২০২১ সালে। ভারতের সংসদীয় নির্বাচনী ব্যবস্থার জন্ডিস হচ্ছে এই ঢালাও প্রতিশ্রুতি! আশু ভোট-বৈতরণী পার হওয়ার জন্য বাস্তবের সঙ্গে সঙ্গতিহীন প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দেয় সবকটি রাজনৈতিক দল। ভোট মিটলে অনন্ত শূন্যতায় নির্বাচকরা দেখেন যে, প্রতিশ্রুতির সঙ্গে বাস্তবের যোজন ফারাক। তবু, তাঁরা সংসদীয় ভোটবাজদের পরের প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস করতে মুখিয়ে থাকেন। এই এক খেলা— গণতান্ত্রিক খেলা। যাই হোক, ২০২০-র ডিসেম্বরে ও ২০২১-এর নভেম্বরে ২০১৪-র টেট-উত্তীর্ণদের চাকরির প্যানেল তৈরি হল, কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি পালিত হল না; নিয়োগতালিকায় ধোঁয়াশা রয়ে গেল। ২০১৪ সালের ফলাফলের ভিত্তিতে নিয়োগে ৮৬ জন টেট-ফেল পরীক্ষার্থী চাকরি পেয়েছেন, এমন অভিযোগ উঠল ২০২২ সালের জুন মাসে। টেট পাশ করলেন যাঁরা, তাঁদের অনেকেই স্বচ্ছ নিয়োগের দাবি তুললেন পুনরায় এবং মুখ্যমন্ত্রীকে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করার কথা মনে করিয়ে দিলেন। ইতোমধ্যে পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য দুর্নীতিতে অভিযুক্ত। বিচারপতির আদেশে প্রায় ষাট হাজার শিক্ষকের মেধাতালিকা সহ সম্পূর্ণ নিয়োগ প্রকাশ করতে হবে পর্ষদকে। অনশনে বসলেন চাকরিপ্রার্থীরা। বিগত কয়েক মাসে শিক্ষাক্ষেত্রে অন্যান্য নিয়োগেও একাধিক দুর্নীতি প্রকাশ্যে এসে গেছে। শিক্ষকদের মেধাতালিকায় টাকার বিনিময়ে স্থান পাইয়ে দেওয়া, অযোগ্য মন্ত্রী-ঘনিষ্ঠকে জোর করে মেধাতালিকাভুক্ত করা এবং যোগ্য প্রার্থীকে বঞ্চিত করা— সরকারের অপরাধভার বেড়েছে। প্রাথমিক এবং উচ্চ-প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের দুর্নীতি ভারতীয় রাজনীতির অন্যতম আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছে। যে কোনও শাসকই চায় যে, শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে তার আধিপত্য কায়েম হোক— শিক্ষা এমনই এক মতাদর্শগত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান (শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী থেকে পাঠ্যবই থেকে পরীক্ষাপদ্ধতি সবই এর অন্তর্ভুক্ত) যার মধ্যে দিয়ে শাসক-মতাদর্শকে চারিয়ে দেওয়া যায় সমাজের গভীরে এবং শাসক নিজের পছন্দসই জ্ঞানকাণ্ড প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে দিতে পারে। তৃণমূল সরকার শাসকের সেই চিরাচরিত চটিতে পা গলাতে গিয়ে স্থলকূল হারিয়ে ফেলল— ক্ষমতার অপপ্রয়োগ মাত্রাছাড়া। হবু শিক্ষকরা মার খেয়ে রাস্তায় লুটোলেন, হবু শিক্ষকরা আদালতের চক্কর কেটে কেটে ক্লান্ত হলেন। শিক্ষকদের অপমানে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিবাদী হলেন যাঁরা, তাঁদের ওপরে নির্বিচার শাস্তির খাঁড়া নেমে এল, ধরপাকড় চলল।
ভারতবর্ষ নেতা-মন্ত্রী-আমলাদের দুর্নীতির দেশ। কোনও না কোনও স্ক্যামের গন্ধে দেশবাসী মাতোয়ারা থাকে বছরভর। তবু, প্রত্যেকবার নতুন নতুন স্ক্যামের পরে “কী সাঙ্ঘাতিক, এমন হল?!”, “ইশ্! এত বড় দুর্নীতি!”, ইত্যাদি বিস্ময়চিহ্নের পরে ভোটঘুমে চলে যাই আমরা। একদিনের ভোটোৎসবে অংশ নিয়ে বাকি ৩৬৪ দিন গণতান্ত্রিক অনুশীলনের পাঠ ভুলে থাকি। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় শাসিতের অনুশীলন প্রতিমুহূর্তে শাসককে শাসনের ঠিক-ভুল মনে করিয়ে দেওয়া। শাসককে সদাসন্ত্রস্ত রেখে অধিকার বুঝে নিতে চাওয়া এবং অধিকার পর্যাপ্ত না-হলে প্রতিবাদে জেগে থাকা— শাসিতের ক্ষোভে-প্রতিরোধে গণতন্ত্র প্রাণ পায়। আমরা কি সেই অনুশীলন করতে পারলাম? শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি, শিক্ষামন্ত্রীর ঘরে অগাধ কালো টাকা কিংবা এসএসসির আমলাদের ক্ষমাহীন অপরাধের পরেও অর্থাৎ অন্যতম প্রধান মৌলিক অধিকার শিক্ষাব্যবস্থার মাজা ভেঙে যাওয়ার পরেও তেমন রাগে ফেটে পড়ছি কি আমরা? করুণাময়ীতে পুলিশি নির্যাতনের পরেও মুখ্যমন্ত্রী-পুলিশমন্ত্রী চুপ। নীরবতা হিরণ্ময় নয়, কর্দমাক্ত। যে কোনও শাসনামলে নাগরিকদের কিছু ভাগ দেখা যায়— একদল যারা শাসককে গাল দিয়ে ফের তাকেই ভোট দেয়, একদল শাসককে তাৎক্ষণিক নিন্দেমন্দ করে তার অন্য গুণাগুণের তথ্য পাড়তে থাকে, একদল চক্রান্ততত্ত্ব খাড়া করে অর্থাৎ নকশালদের উস্কানিতেই পরিবেশ অশান্ত হচ্ছে, একদল থাকে যারা সেই অতিপ্রাচীন যুগ থেকে আজ অবধি কোথায় কোন শাসক কী অত্যাচার করেছে তখন কোন বিরোধী চুপ ছিল এইসবের তুলনামূলক তথ্যনথি ঘাঁটতে থাকে, আরেকদল শাসকের অনুগ্রহে এতই মাতাল হয়ে থাকে যে নতজানুভঙ্গি ছেড়ে উঠতে পারে না। নাগরিকদের সাংস্কৃতিক-বৌদ্ধিক চিন্তায় প্রভাবিত করার কথা যাদের, তাদের অনেকে ‘আমি কিচ্ছুটি জানি না’ বলে কুলুপ আঁটে মুখে। এরাই আমাদের চারপাশে। এরাই আমাদের পরিচয়-প্রতিবেশ থেকে মতামত অনেকটা অধিকার করে রেখেছে। এদের প্রত্যাখ্যান করে জেগে থাকা জরুরি। গণতন্ত্রের স্বার্থে।
***
বাংলার হবু-শিক্ষকরা চাকরির দাবিতে আন্দোলন করছে বিগত কয়েক বছর ধরে। ঝড়-জল-রোদ উপেক্ষা করে দিনের পর দিন অবস্থানে বসেছেন শহরের রাজপথে, শিক্ষাদপ্তরের সামনে। কিন্তু, স্বচ্ছ নিয়োগ তো দূরের কথা, নিরন্তর অস্বচ্ছতার পাঁকে জড়িয়ে গেছে নিয়োগকারীরা। অবিরাম কেশভার তৃণমূলের মাথা আরও নিচু করে দিয়েছে। কিন্তু, হবু শিক্ষকদের প্রহৃত হওয়া আর তাদের ওপরে নেমে আসা মাঝরাতের পুলিশি বর্বরতাই কি নাগরিকদের ক্রোধের একমাত্র কারণ হতে পারে? তা যদি হয়, তাহলে সেই ক্রোধ বরফ হতে বেশিদিন লাগবে না। একবিংশ শতকে এমন শোক ও ক্রোধের আয়ু বড়জোর কয়েকটি দিন— সোশ্যাল মিডিয়ার আধিপত্যের যুগে পরের ইস্যুতে যেতে যেতে ক্রোধ-শোক ভুলে যাই আমরা। অবিরাম ইস্যু এসে গুলিয়ে দেয় আমাদের প্রতিক্রিয়াপাঠ। কোন অবিচারে শাসকের বিরুদ্ধে কত ক্ষোভ নির্ণায়ক ভূমিকা নিতে পারে, সেসব দিশাহীন হয়ে যায়। বেশিরভাগ সময়ে সংবাদমাধ্যমের খবর পরিবেশনের পদ্ধতি ঠিক করে দেয় যে, কতটুকু শাসকবিরোধিতা করব আমরা এবং কতটা ক্রোধচেতনা নিয়ে কতবড় মিছিল সাজাব। কোন ইস্যু কত বড় হয়ে উঠে কতদিন জের রাখবে। এই পছন্দসই ইস্যুতে ইস্যুতে দ্রোহী হয়ে ওঠাও একরকম অসুখ— গণতন্ত্রের অদৃশ্য অসুখ। গোপনে গোপনে প্রতিরোধের ভিতে ক্ষয় ভরে দেয়। আর, শহুরে পরিসরের আন্দোলন এখনও সবটুকু আলো কেড়ে নেয়। রাজনীতিগত বিশুদ্ধির দেখনদারির যুগেও এমনটা হয়। রাজধানীর বাইরেও অসংখ্য ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত, যেখানে অপশাসন স্পষ্ট। তথাকথিত ভদ্রবৃত্তের (কোন পেশা সাদা-কলার কোন পেশা ধুলোমলিন সেটাও নির্ণয় করে শাসক মতাদর্শবাহী সামাজিক নীতি) পেশার বাইরের মানুষদের ক্ষোভ দমন করতে পুলিশি বর্বরতার নমুনা কিছু কম না। তাঁদের ওপরে প্রশাসন-সরকার যখন আক্রমণ করে, রাতের অন্ধকারে বা প্রকাশ্য দিবালোকে, এমন করেই কলকাতার নাগরিক সমাজ মিছিল করে কি? সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সংবাদমাধ্যম ঠিক এতগুলি শব্দ ব্যয় করে কি? বা, এভাবে আবেগাপ্লুত হয়ে অত্যাচারের ‘লাইভ টেলিকাস্ট’ ছড়িয়ে পড়ে কি? যদি না পড়ে, তাহলে শাসকবিরোধী আগুনের আঁচ মিইয়ে যেতে বাধ্য। টুকরো টুকরো কিছু ক্ষোভের অগ্নিশলাকা জ্বলবে, কিন্তু শাসকের ঘুম ছুটিয়ে দেওয়া দীর্ঘস্থায়ী গণআন্দোলন গড়ে উঠবে না। সমস্ত শাসিতের মনে তা দ্রোহস্বর জাগাবে না। তা জাগানোর দায়িত্ব নাগরিক সমাজের রাজনৈতিকভাবে অগ্রণী অংশের। গণসংগঠনগুলির। রাস্তায় পুলিশের দ্বারা নির্যাতিত হওয়ার অপমানগুলিকে, শাসকের দুচ্ছাইবয়ানকে জড়ো করে নির্দিষ্ট অভিমুখ দেওয়ার।
***
আমাদের কোনও বিকল্প থাকে না। আমাদের কোনও চয়েস থাকে না। এমনটাই বোঝানো হয় আমাদের, সম্মতি নেওয়া হয়। আমরা এমনটাই রীতি বলে মেনে নিতে শিখি। অথচ, চয়েস থাকে। বিকল্প থেকে যায় সবসময়েই। ক্ষীণদৃষ্টিতে তা চোখে পড়ে না বা, মতাদর্শগত অন্ধতায় ঢাকা পড়ে যায়। বিরুদ্ধতা। শাসকের রাজনীতি চিনে নেওয়ার অবস্থান। এত লাঞ্ছনা এবং নির্যাতনের পরেও নিরাজনৈতিক ঘুমে ঢলে পড়ার স্বস্তিক্ষেত্র শাসকই মজুত করে রাখে। সেগুলিকে চিনে নিয়ে প্রত্যেক স্বরকে সমস্বরে পরিণত করতে পারা একটি রাজনৈতিক বিকল্প তো বটেই। আর, রাজনৈতিক হয়ে ওঠা ছাড়া, এই সময়ের অন্য কীই-বা অভিমুখ হতে পারে? There is always a choice— a choice to rebel to protect the democracy.
অত্যন্ত জরুরি লেখা।
হীরক সেনগুপ্ত