অভিজ্ঞান সরকার
তথ্যচিত্র নির্মাণকর্মী, আংশিক সময়ের অধ্যাপক
চিন্তন শিবিরে মোদিজি হুঙ্কার দিয়েছেন বন্দুকধারী ও কলমধারী নকশালদের উৎখাত করা হবে। আধা-সামরিক বাহিনি, বিএসএফ, নাগা ব্যাটেলিয়ন ইত্যাদি দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে বন্দুকধারী নকশালদের নিশ্চিহ্ন করার জন্য সামরিক অভিযান চালাচ্ছে, রাষ্ট্রের কালো তালিকায় তারা অনেকদিন ধরেই আছে। কিন্তু কলমধারী নকশালদের উদ্দেশ্যে মোদিজির হুমকি আলোড়ন ফেলেছে প্রগতিশীল মহলে।
প্রশ্ন হল, মোদিজি কি কিছু ভুল বলেছেন? সরোজ দত্ত, মুরারী মুখোপাধ্যায়, দ্রোণাচার্য ঘোষ, তিমির বরণ সিংহ (ও অন্যান্য)— সত্তর দশকের এইসব কবি, সাংবাদিক, প্রবন্ধ লেখকরাও এনকাউন্টারে খুন হয়ে যাওয়া কলমধারী। পুরুষোত্তম— ১৯৯৬ সালে হায়দ্রাবাদ শহরে নিজের বাড়িতে গ্রে হাউন্ডের গুলিতে শহীদ কবি। সাকেত রাজন— যার লেখা কর্ণাটকের ইতিহাস বই পড়ানো হয় ওখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ে, ২০০৫ সালে এনকাউন্টারে মৃত। কলমধারী নকশালরা ধারাবাহিকভাবে রাষ্ট্রের কাছে বিপজ্জনক ছিল ও আছে। মোদিজি বলছেন এঁদের কলম যুবসমাজের মস্তিস্ক দূষিত করতে পারে, বিপথগামী করতে পারে, তাই এঁরাও সমানভাবে বধ্য। নকশাল মতাদর্শের মধ্যে এক বিশেষ রাষ্ট্রবিপ্লবের ধারণা নিহিত আছে, যে রাষ্টবিপ্লব প্রচলিত সংবিধান, আইন আদালত, পুলিশ সেনাবাহিনি, সংসদ, মোটের উপর এই প্রচলিত ব্যবস্থাকে বিনাশ করে ধ্বংসস্তূপের উপরে নতুন কিছু নির্মাণ করতে চায়। পাঁচ দশক আগে নকশালরা এই সব বলত, এখনও কিছু নকশাল সেই বক্তব্যই রাখে। নকশাল সম্বন্ধে মোদিজির দৃষ্টিভঙ্গি রাস্ট্রের সাবেকি শ্রেণি-সংঘর্ষের ধারণা থেকে বিশেষ আলাদা কিছু নয়।
তবে মোদিজির আমলে কিছু বিচিত্র অগ্রগতি ঘটেছে, সংসদীয় বিরোধীদেরও নকশাল বলে দাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। ২০১৮ সালে ভীমা কোরেগাঁও মামলায় বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মীদের অনৈতিক গ্রেপ্তারের সঙ্গে সঙ্গে মোদিজিদের তরফে ‘আরবান নকশাল’ শব্দবন্ধের ব্যাপক ব্যবহার শুরু হয়। স্বরাষ্ট্র দপ্তরের বয়ান ছিল “The Home Minister directed the CRPF to carry out an effective and decisive campaign against Left Wing Extremism in the next six months. Action needs to be taken against Urban Naxals and their facilitators.” সূচনাটি করেছিলেন মোহন ভাগবত ২০১৮-র অক্টোবরে, বলেছিলেন দেশবিরোধী শক্তিদের সমর্থনে দেশের অভ্যন্তরে ঘৃণা ছড়াচ্ছে ‘আরবান মাওবাদী’রা। এখানে একটি বিষয় মাথায় রাখা প্রয়োজন, ‘আরবান নকশাল’ বলে যাঁদের টার্গেট করা হয়েছে তাঁরা নকশাল নন, নকশালপন্থার পরিধির বাইরের লোক। নকশালদের রাজনৈতিক মোকাবিলা করবার জন্য পুলিশ, আদালত, আধাসেনার ব্যবহার হয়। আরবান নকশাল বলে যাঁদের চমকানোর চেষ্টা হচ্ছে তাঁদের উপর সহজে পুলিশ লেলিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়, তাঁরা প্রচলিত রাষ্ট্রকাঠামোর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, অন্তত এতদিন ছিলেন।
খুব হাস্যকর শোনালেও এটা ঘটনা যে বিজেপি নেতা মনোজ তেওয়ারি অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে ‘আরবান নকশাল’ বলেছিলেন ২০১৮ সালে। ২০২২-এর ফেব্রুয়ারি মাসে নরেন্দ্র মোদি পার্লামেন্টে বলে বসলেন কংগ্রেসে পার্টি আরবান নকশালদের ফাঁদে আটকে আছে, কংগ্রেসের চিন্তাপ্রক্রিয়া আরবান নকশালদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। কংগ্রেস সদস্যরা লজ্জায় অপমানে কক্ষ ত্যাগ করেন। গত সেপ্টেম্বর মাসে মেধা পাটেকরকেও দেশের উন্নয়নের বিরোধী ও আরবান নকশাল বলে দাগিয়েছেন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র পটেল, মেধা নর্মদা ড্যাম বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্বে ছিলেন। এর পরপরই মোদিজি একটি ভিডিও কনফারেন্সে ফের বললেন আরবান নকশালরা ভারী বদ, উন্নয়ন পরিকল্পনার বিরোধিতা করে, সর্দার সরোবর প্রকল্পের ক্ষেত্রেও করেছিল।
আমরা জানি মোদিজিরা বিরোধী স্বরকে নস্যাৎ করতে সমালোচকদের পাকিস্তান বা চিনের দালাল, টুকরে টুকরে গ্যাং ইত্যাদি আখ্যায় ভূষিত করেছেন, ইউএপিএ লাগিয়ে জেলে পুরে দিয়েছেন। গত আট বছরে এইরকম হাজার উদাহরণ রয়েছে। কংগ্রেসকে নকশাল বলাটা খানিক বাড়াবাড়ি রকমের বিরোধালঙ্কার, তবে মোদিজিরা যখন কোনও একটি প্রচার তুঙ্গে ওঠান তার বিশেষ উদ্দেশ্য থাকে, হাওয়ায় কোনও কিছু করেন না। পদ্ধতিগত উপায়ে, মিডিয়াকে সুচারুভাবে ব্যবহার করে মোদিজিরা দেশের শত্রু রূপে, হিন্দুদের শত্রু রূপে কিছু মানুষ চিহ্নিত করেছেন— সেটা কখনও মুসলমান, কখনও লিবারেল-সেকুলাররা, কখনও এনজিওগুলি। কংগ্রেস পার্টি গত পঁচাত্তর বছর ধরে এই ক্ষতিকর অংশের তোষণ করে এসেছে, তাই মোদিজিরা বারবার কংগ্রেসমুক্ত ভারত গঠনের মাধ্যমে দেশের প্রকৃত বিকাশ সম্ভব দাবি করেন। কংগ্রেস তথা বিরোধী সংসদীয় রাজনীতিক দলকে জনসমক্ষে কলঙ্কিত করতে তাদের উপর এমন পরিচয় আরোপ করা জরুরি যা রাষ্ট্রের সংজ্ঞায় নাশকতামূলক, ধ্বংসাত্মক। কংগ্রেস-সত্তার সঙ্গে নকশাল জুড়ে দিলে মোদিজিদের রাজনৈতিক লাভ আছে, নির্বাচনে ফল দেবে নিশ্চিত। পাশাপাশি প্রধান বিরোধী দল নকশালদের দ্বারা প্রভাবিত এই বক্তব্য ভারতের সংসদীয় রাজনীতির ইতিহাসে নতুন সংযোজন। নকশালদের আত্মতৃপ্ত হওয়ার মত বিষয় বটে।
কংগ্রেস অবশই বিষণ্ণ হবে— নকশালদের মেরে ধরে সত্তর সালে সংসদীয় ব্যবস্থাকে রক্ষা করেছে তারাই। যে কংগ্রেসের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ কড়া নকশালদের (মাওবাদী) দেশের সবচেয়ে বড় অভ্যন্তরীণ বিপদ বলে চিহ্নিত করেছিলেন, সেই কংগ্রেসকে নকশালদের সঙ্গে একাসনে বসিয়ে দিলেন মোদিজিরা! এই কংগ্রেসই নকশাল মেরেছে, আবার দেখিয়েছে কীভাবে প্রথাগত ব্যবস্থায় বামপন্থীদের আত্তীকরণ করা যায়— উদারনৈতিক বুদ্ধিজীবীদের বিভিন্ন কমিটিতে স্থান দিয়েছে, অভিজাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুদ্ধিবৃত্তির চর্চাতে বিশেষ বাধা দেয়নি বরং বহুস্বরীয় ভাবনায় উৎসাহ দিয়েছে, প্ল্যানিং কমিশনে অ্যাক্টিভিস্টদের বসিয়েছে। সব মিলিয়ে আধুনিক রাষ্ট্র পরিচালনার শর্তগুলি পূরণের চেষ্টা করেছে।
মোদিজিদের অবশ্য অন্য অ্যাজেন্ডা রয়েছে, কংগ্রেসি ঘরানার পাঁচমেশালি রাষ্ট্র তাঁরা চান না। তাঁরা গঠন করতে চান এমন একটি হিন্দু রাষ্ট্র যা নিও-লিবারেল অর্থনীতিকে সেবা করবে। মোদিজির রাজনৈতিক গুরু গোলওয়ালকর বলেছিলেন হিন্দুদের তিন অভ্যন্তরীণ শত্রু আছে— মুসলমান, খ্রিস্টান ও কমিউনিস্ট। ত্রিপুরায় ক্ষমতা দখল করে মোদিজি খুব উত্তেজিত হয়ে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন যে লাল ঝান্ডার বিরুদ্ধে মতাদর্শগত সংগ্রাম চলতেই থাকবে। নকশালরাও লাল ঝান্ডাধারী, একটু কড়া পাকের— আদি নকশালরা সংসদীয় পথ বর্জন করে সশস্ত্র কায়দায় ক্ষমতা দখলের কথা বলে। গণমাধ্যমে তারা চরমপন্থী সন্ত্রাসবাদী রূপে পরিচিত। হিন্দুত্ববাদের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক সাপে-নেউলে। বিভিন্ন ধারার কমিউনিস্টদের মধ্যে নকশালরা তাই কালো তালিকাভুক্ত।
এখন, হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিবাদী রাজনীতির বিরোধিতা নানা মতাদর্শের মানুষ করছেন, করবেনও— তার জন্য নকশালপন্থী নীতিতে বিশ্বাসী হওয়ার প্রয়োজন হয় না। সব ক্ষারকই যেমন ক্ষার নয়, সব হিন্দুত্ববাদ বিরোধী, ফ্যাসিবাদ বিরোধী সত্তাই নকশাল নয়। কিন্তু মোদিজিরা স্থির করেছেন সমস্ত বিরোধীকেই তারা নকশাল বলে চিহ্নিত করবেন, কালো তালিকাভুক্ত করবেন— তাঁদের পরিকল্পনা আর শুধুমাত্র অগণতান্ত্রিক শাসনের স্তরে নেই। পরিবেশ আন্দোলনকর্মী, লিঙ্গবৈষম্যর বিরোধী সংগঠন, শ্রমিক ইউনিয়ন, দলিত অধিকার রক্ষার আন্দোলনকারী, কৃষক সংগঠন, স্বাধীন সংবাদমাধ্যম, মোদিজিদের প্রস্তাবিত উন্নয়নের মডেলের বিরোধী স্বর ইত্যাদি সব স্তরের সামাজিক রাজনৈতিক বিরোধীকে একই পংক্তিতে নিয়ে আসাটা নিশ্চিতভাবেই ফ্যাসিবাদী শাসন পরিকল্পনার অঙ্গ। বন্দুকধারী ও কলমধারী নকশাল সম্বন্ধীয় বক্তৃতায় মোদিজি কলমধারীদের শায়েস্তা করতে ইউএপিএ আইনের কঠোর প্রয়োগের কথা বলেছেন। মেধা পাটেকর বা অপূর্বানন্দ বা সুজাত ভদ্র বা দুষ্যন্ত দাভেকেও নকশাল বলে জেলে ঢোকাবার পূর্বশর্ত তৈয়ার করে রেখেছেন মোদিজি।
মোদিজিদের আগ্রাসী মেরুকরণের রাজনীতির চাপে এমনিতেই বিরোধীরা দিশেহারা। ওঁদের নির্ভুল ছককষা হিন্দুত্বকেন্দ্রিক জাতীয়তাবাদী রাজনীতির কাউন্টারে সংসদীয় বিরোধী নেতানেত্রীরা রাজনৈতিক দেউলিয়াপনার নব নব দুর্দান্ত দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন— রাহুল গান্ধি শিবপুজো করছেন, পৈতে আছে তার প্রমাণ দিচ্ছেন; কেজরিওয়াল হনুমান মন্ত্র জপ করছেন, কদিন আগে সাংবাদিক সম্মেলন করে টাকার একপিঠে লছমিজি আর গণেশজির ছবি ছাপানোর দাবী জানাচ্ছেন— পিছনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতা চলছে। মোহন ভাগবত গর্ব ভরে কদিন আগে সাক্ষাৎকারে বলেছেন নির্বাচনে বিজেপি হেরে গেলেও সেটা হিন্দুত্বের পরাজয় নয়— মোটামুটি সবকটি বিরোধী সংসদীয় দলই হিন্দুত্বর অ্যাজেন্ডাকে মেনে নিয়েছে। হিন্দুত্ববাদের বিরোধিতার অক্ষটি সংসদীয় রাজনীতির বাইরে, সিভিল সোসাইটি, পলিটিকাল সোসাইটির মধ্যে অবস্থান করছে বলেই লেখকের ধারণা (দক্ষিণভারতের কিছু সংসদীয় দল অবশ্যই মোদিজির হিন্দুত্ববাদের প্রবল বিরোধী)।
এইখানে একটি বিষয়ে প্রসঙ্গ উল্লেখ করা জরুরি, নকশালবাড়ি আন্দোলনের পরবর্তীতে নকশালদের মধ্যে অনেক বিভাজন হয়েছে। নকশালপন্থীদের একটি বড় অংশ সংসদীয় নির্বাচনে পুনরায় অংশগ্রহণ করেছেন, কোনও কোনও গ্রুপ কিছু সাফল্যও পেয়েছে। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী নকশালদের মধ্য বর্তমানে সবচেয়ে সফল সিপিআইএমএল (লিবারেশন)। তাদের সর্বোচ্চ নেতা সম্প্রতি স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে জাতীয় পতাকাকে ঘরে ঘরে টাঙানোর আহ্বান রেখেছেন। এর বেশ কিছুদিন আগে রামনবমীর মিছিলে তাদের বিধায়কের উপস্থিতি দেখা গেছে। জাতীয়তাবাদী ঘরানার হিন্দুত্ব ও ফ্যাসিবাদী বিপদ সম্বন্ধে তাঁরা যথেষ্ট ওয়াকিবহাল, এবং বিজেপির বিরুদ্ধে তাঁরা তাঁদের ফ্রন্টে লড়ছেন। সংসদীয় রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক থাকার জন্য ও জনপ্রিয়বাদী রাজনীতির দাবিতে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীদের নানা ধরনের সিম্বলিক অ্যাক্ট করতে হয় একথা স্মরণ রেখেই বলছি— নকশালবাড়ির সত্তা ও রাজনীতির সঙ্গে এই ধরনের চটুল রাজনৈতিক আহ্বান খাপ খায় না। দ্বিতীয়ত, মোহন ভগবতদের ময়দানে ওঁদের সঙ্গে পাল্লা দেওয়া কারও পক্ষেই সম্ভব না। বরং সম্পূর্ণ নস্যাৎ করে দেওয়ার মধ্যেই সফল বিরোধিতার সম্ভাবনা রয়েছে। ‘নকশালদের হাতে জাতীয় পতাকা ধরিয়ে দিয়েছে মোহন ভাগবতরা’— আরএসএসের সাফল্য বর্ণনা করতে গিয়ে এক বন্ধু বলেছিলেন, অ্যান্টি-সিএএ আন্দোলনের সময়, পার্কসার্কাস ময়দানে। কলমধারী নকশালদের নিয়ে মোদিজির বক্তব্য অবশ্য উলটো ইঙ্গিত দিচ্ছে, সব নকশাল জাতীয়তাবাদে আকৃষ্ট হয়নি।
বিপ্লবাকাঙ্খী নকশালরা বিভিন্ন বিষয়ে কলম পেষেন— সবচেয়ে কমদামী ছাপাখানায় ফ্যাসফ্যাসে বিবর্ণ কাগজে কয়েক হাজার লিফলেট ছাপিয়ে, ভোম্বলদার সাইকেলে চোঙা লাগিয়ে ও ফুঁকে সেই লিফলেট অকাতরে বিলোতে থাকেন। এপিঠ-ওপিঠে খুদে খুদে অক্ষরে নানা রাজনৈতিক দার্শনিক মতামত ঠেসে জনতাকে সতর্ক করার উদ্যম প্রচেষ্টা— জ্যোতিষের বিজ্ঞাপনের ফ্লায়ারগুলিও নকশালদের লিফলেটের চেয়ে বেশি আকর্ষণীয় হয়। ব্যস্ত নাগরিক পথিক একদণ্ড চোখ বুলিয়ে উড়িয়ে দেয়, শব্দেরা লাশ হয়ে পড়ে থাকে রাস্তায়। রিকশাওয়ালা, অটোওয়ালা চেয়ে নিলে নকশালদের তৃপ্তির অনুভূতি হয়, বাস থেকে কেউ হাত বাড়ালে একছুটে জানালায় গুঁজে দেয় একগুচ্ছ লিফলেট। খোঁচরেরা অবশ্য গুরুত্ব দিয়ে সংগ্রহ করে, তারাই সবচেয়ে সিরিয়াস পাঠক। ‘রণে মেতে’ থাকা নকশালরা ডেরায় ফেরে, আবার নতুন কোনও ইস্যুতে সরকারকে বিদ্ধ করার পরিকল্পনা আঁটে— শব্দে, লিফলেটে, পত্রিকায়। তবুও বারবার এক প্রশ্নের জন্ম হয়— কী লাভ হয় এই রাজনৈতিক লেখালেখি করে? ভারতবর্ষের কথা ছেড়েই দিই, কলকাতা শহর বা জেলার মফস্বলের জীবনসংগ্রামে ক্লান্ত মানুষের মনে দাগ কাটতে পারে নকশালদের শব্দবাক্য? আপামরের কাছে কতটুকু পৌঁছায় তাদের বার্তা? অনেকেই সোশাল মিডিয়ায় লেখালেখি করেন, সেখানেও অ্যালগরিদমের খেলায় গণ্ডির বাইরে বেরোনো যায় না। বহুবার নকশাল বন্ধুদের এই নিয়ে প্রশ্ন করেছি, নকশালরাও নিশ্চয় নিজেদের কাছে প্রশ্ন করেছেন। যে সাধারণ উত্তরে নিজেকে সন্তুষ্ট রাখতে পেরেছি তা হল— নকশালরা মদন তাঁতির উত্তরসূরি, বিনিসুতোয় তাঁত বুনে যাওয়ার মতই নিরন্তর রাষ্ট্রকে প্রশ্ন করে যাওয়া নকশালদের দায়। দায় পালনে চোঙা ফোঁকা, লিফলেট ছড়ানোর পুনরাবৃত্তি করে চলে নকশালরা।
মাঝখান থেকে মোদিজি ফের স্বীকৃতি দিয়ে দিলেন এই নকশালি কর্মকাণ্ডের। সেই সব বিবর্ণ লিফলেট, রসকষহীন ইস্তেহারের মধ্যে বিস্ফোরণ ঘটানোর শক্তি রয়েছে যা মোদিজিরা জানেন, বোঝেন— কলমধারী নকশালদের নিয়ে তাদের প্রবল ভয় ও আশঙ্কা। চারু মজুমদার নিশ্চয় অলক্ষ্যে মিটিমিটি হাসছেন।