মানস চক্রবর্তী
ভূতপূর্ব অধ্যাপক, বিজ্ঞান প্রচারক, প্রাবন্ধিক
মৌসুমি পাখি, মৌসুমি ফুল-ফল এমনকী মৌসুমি আত্মীয়-পরিজন (যাঁদের সুখের সময় পাশে পাওয়া যায় কিন্তু দুঃখের সময় যাঁরা হারিয়ে যান)— এদের কথা আমরা সবাই জানি। কিন্তু মৌসুমি বিজ্ঞানীদের কথা শুনেছেন কি? তাও আছে। অবশ্যই এ ক্ষেত্রে ‘মৌসুমি’ কথাটির প্রয়োগ নিন্দার্থে নয়। এই বিজ্ঞানীদের বিজ্ঞানসাধনা নিরলস এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু মিডিয়ার কল্যাণে এঁরা শুধুমাত্র বছরের একটি নির্দিষ্ট সময় জনপরিসরের আলোচনায় উঠে আসেন। প্রতি বছর অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে বিশ্বের সব বিজ্ঞানীরা ও শিক্ষিত ও জ্ঞানপিপাসু মানুষেরাও সংবাদমাধ্যমের দিকে নজর রাখেন শুধুমাত্র জানার জন্য যে, এই বছর কে বা কারা বিভিন্ন বিষয়ে বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার অর্থাৎ ‘নোবেল পুরস্কার’ পেলেন এবং তাঁদের বিজ্ঞানচর্চায় তাঁদের অবদানই বা কী? আমি রসায়নবিদ, তাই রসায়নের নোবেল পুরস্কারেই আমার আগ্রহ বেশি। এই বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে যাঁরা রসায়নে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন, তাঁদের কাজকর্ম, অবশ্যই বৈজ্ঞানিক কাজকর্ম এবং সংক্ষিপ্ত জীবনী— আপনাদের কাছে সংক্ষেপে তুলে ধরতে চাই। কিন্তু লেখাটা যেহেতু নোবেল পুরস্কার নিয়ে, তাই নোবেল পুরস্কারের ইতিবৃত্তটা নিয়ে প্রথমেই সংক্ষেপে কিছু জানাতে চাই। বিজ্ঞজনেরা এই ধৃষ্টতা মার্জনা করবেন।
১৮৩৩ সালের ২১ অক্টোবর সুইডেনের স্টকহোমে ইম্মানুয়েল নোবেল ও অ্যানড্রিয়েট্টে অ্যালসেল নোবেলের এক পুত্রসন্তান জন্মায়, যার নাম তাঁরা রাখেন আলফ্রেড নোবেল। পরে প্যারিসে পড়াশোনা করার সময় আলফ্রেড নোবেল এক ইটালিয়ান রসায়নবিদের সাক্ষাৎ পান, যিনি কয়েকবছর আগে বিস্ফোরক ‘নাইট্রোগ্লিসারিন’ আবিষ্কার করেছিলেন। এই বিস্ফোরক ব্যবহার করা বিপজ্জনক ছিল বলে, আলফ্রেড এর সঙ্গে ‘কিসেলগুড়’ (‘Kieselgurh’) মিশিয়ে ওটাকে প্রথমে পেস্ট ও পরে রডের আকারে ‘ডিনামাইট’ আবিষ্কার করেন। ইউরোপের ২০টির বেশি দেশে ও ৯০টি বিভিন্ন জায়গায় তাঁর ডিনামাইট তৈরির কারখানা ছিল। ১৮৯৬ সালের ১০ ডিসেম্বরে ইটালির সান রেমোতে আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যু হয়। তাঁর মোট ৩৫৫টি পেটেন্ট ছিল। মৃত্যুর আগে তিনি উইল করেছিলেন যে, তাঁর অর্জিত অর্থের বেশিরভাগ ব্যয় করতে হবে সেইসব মানুষকে পুরস্কৃত করার জন্য, যাঁরা পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, শারীরবিদ্যা বা চিকিৎসাবিজ্ঞান, সাহিত্য ও বিশ্বশান্তির পক্ষে মানবজাতির জন্য সবচেয়ে বেশি উপকার করবেন। স্বভাবতই, আলফ্রেডের আত্মীয়-পরিজনেরা এই উইল মানতে চাননি। চার বছর লেগেছিল তাঁর উইলের ওপর সমস্ত বিতর্কের অবসান ঘটতে। তাই ১৯০১ সাল থেকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া শুরু হয়— প্রথম চারটি বিষয়ের পুরস্কার সুইডেনের স্টকহোমে ও শান্তি পুরস্কার নরওয়ের ক্রিস্টিয়ানিয়া (বর্তমানে অসলো)-তে। এটাই নোবেল পুরস্কারের সংক্ষিপ্ত ইতিবৃত্ত।
এবারে বর্তমানে ফিরে আসা যাক। ৫ অক্টোবর, ২০২২-এ রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস ২০২২ সালের রসায়নে তিনজন নোবেল প্রাপকের নাম ঘোষণা করেন। ওই তিনজন প্রাপক হলেন ক্যারোলাইন আর বার্তোজ্জি (স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, ক্যালিফোর্নিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র), অধ্যাপক মর্টেন পি মেলডাল (কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়, কোপেনহেগেন, ডেনমার্ক), এবং কে ব্যারি শার্পলেস (স্ক্রিপস রিসার্চ, লা জোলা, ক্যালিফোর্নিয়া)। এঁরা পুরস্কৃত হন ‘ক্লিক কেমিস্ট্রি ও বায়ো-অর্থোগোনাল কেমিস্ট্রি-র বিকাশ’-এর জন্য। পুরস্কারের অর্থ ১০ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনার (প্রায় ৯,৭০,০০০ মার্কিন ডলার) তিন বিজয়ী সমানভাবে ভাগ করে পাবেন।
নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান জোহান আকভিস্টের মতে রসায়নে এই বছরের নোবেল পুরস্কারপ্রাপকদের কাজ প্রমাণ করেছে যে, অত্যন্ত জটিল গঠনবিশিষ্ট রাসায়নিক যৌগদেরও সহজ সরল পথে তৈরি করা যায়। নোবেল কমিটির আরেক সদস্য ওলোফ র্যামস্ট্রোম মন্তব্য করেছেন, “এই আবিষ্কারের সবচেয়ে ভাল দিক হল যে, এটি প্রায় সবকিছু তৈরির জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।” আবিষ্কৃত পদ্ধতিটি ওষুধের অণু, পলিমার ও নতুন উপকরণ তৈরিতে এবং বিভিন্ন কোষের মধ্যে বায়োমলিকিউল অর্থাৎ জৈবযৌগকে অনুসরণ করার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
এই কাজের শুরু হয়েছিল বিংশ শতাব্দীর শেষদিকে। আমরা জানি যে, গাছপালা, প্রাণী ও বিভিন্ন অণুজীবে অনেক গঠনমূলকভাবে সরল ও অত্যন্ত জটিল রাসায়নিক যৌগ থাকে। আধুনিক রসায়নের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে রসায়নবিদেরা প্রকৃতিতে থাকা অনেক জটিল জৈবযৌগ তৈরি করার চেষ্টা করেছেন। তারা সফলও হয়েছেন, তবে সেগুলি ‘ধাপে ধাপে সংশ্লেষণ’। এই ধাপে ধাপে পদ্ধতিগুলোর দুটি সমস্যা আছে। প্রথমত, প্রায় প্রতিটি ধাপে এক বা একাধিক উপপণ্য (বাইপ্রোডাক্ট) তৈরি হয়। এদের থেকে প্রয়োজনীয় যৌগকে আলাদা করতে এবং উপপণ্যগুলোকে সঠিকভাবে দেখভাল করার জন্য অনেক সময় লাগে। দ্বিতীয়ত, এর ফলে কাঙ্খিত যৌগটির উৎপাদন খুব কম হয় এবং তা আর্থিকভাবে সাশ্রয়কারী হয় না।
ধাপে ধাপে সংশ্লেষণের থেকে উন্নত পদ্ধতি হিসাবে ব্যারি শার্পলেস ২০০০ সালের গোড়ায় ‘ক্লিক কেমিস্ট্রি’ পদ্ধতির উদ্ভব ও বিকাশ ঘটান। এই পদ্ধতিতে দুটি ভিন্ন ভিন্ন অণুকে (যাদের নিজস্ব কার্বন-কার্বন কাঠামো আছে) অক্সিজেন বা নাইট্রোজেন-সেতু ব্যবহার করে অক্সিজেনের (বা বায়ুর) উপস্থিতিতে জলীয় দ্রবণে দ্রুত বা কার্যকরভাবে সংযুক্ত করা যায়। এই পদ্ধতি ব্যবহার করে জৈবযৌগের শিল্পোৎপাদন অনেক কম সময়ে ও সস্তায় করা যায়। এই কাজের জন্য শার্পলেস ২০০১ সালে রসায়নে তাঁর প্রথম নোবেল পুরস্কারটি পান, অন্য দুজন বিজ্ঞানীর সঙ্গে যৌথভাবে।
একই সময় ডেনমার্কে মর্টেন মেলডাল জৈবিক স্ক্রিনিং-এর জন্য বড় বড় আকারের যৌগের সংগ্রহে (মলিকুলার লাইব্রেরি) লিপ্ত ছিলেন। তিনি কিউপ্রাস আয়ন (অর্থাৎ Cu+) ও অল্প পরিমাণ প্যালাডিয়ামের উপস্থিতিতে একটি অ্যালকাইনের (-C≡C-) সঙ্গে একটি অ্যাজাইড-যুক্ত (-N=N+=N–) একটি অ্যাসাইল হ্যালাইডের বিক্রিয়া করানোর চেষ্টা করছিলেন। তিনি দেখলেন যে অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটছে। ফলে একটি ১,২,৩-ট্রায়াজোল জাতীয় যৌগ তৈরি হয়েছে যার ১ ও ৪ নম্বর পরমাণু প্রতিস্থাপিত। যেহেতু ট্রায়াজোল যৌগরা বিভিন্ন রকম ওষুধ ও কৃষি-রাসায়নিক হিসাবে বহুল ব্যবহৃত হয়, এই ধরনের কপার (I)-অণুঘটক-নিয়ন্ত্রিত অ্যাজাইড-অ্যালকাইন সাইক্লোঅ্যাডিশন বিক্রিয়া CuAAC বিক্রিয়া হিসাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ২০০২ সালে তিনি তাঁর কাজ একটি বিজ্ঞান জার্নালে প্রকাশ করেন।[1]
ঘটনাচক্রে, ওই বছরেই শার্পলেস একটি উন্নত পদ্ধতির উদ্ভব করেন। কিউপ্রাস আয়নের (Cu+) পরিবর্তে তিনি কিউপ্রিক আয়ন (Cu2+) ও CuAAC বিক্রিয়ার একটি বিজারক (সোডিয়াম অ্যাসকরবেট) একসঙ্গে ব্যবহার করেন এবং বিক্রিয়াটি টারট-বিউটানল-জল মাধ্যমে ঘটান। শার্পলেসের মতে এটি একটি আদর্শ ক্লিক বিক্রিয়া যেখানে অ্যাজাইড একটি লোডেড স্প্রিং-এর মতো কাজ করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে তৈরি কিউপ্রাস আয়ন থেকে বল নির্গত হয়। এই বিক্রিয়ার বিশাল সুবিধা হল (১) কিউপ্রাস আয়ন (সরাসরি বা সদ্যোজাত) বিক্রিয়াটিকে বহুগুণে ত্বরান্বিত করে, (২) বিভিন্ন প্রকারের অ্যাজাইড ও অ্যালকাইন ব্যবহার করা যায়, (৩) অ্যালকোহল-জলের মিশ্রণ ছাড়াও বিভিন্ন দ্রাবক ব্যবহার করা যায়, (৪) বিক্রিয়া থেকে ট্রায়াজোলগুলোকে ক্রোমাটোগ্রাফি পদ্ধতির সাহায্য ছাড়াই আলাদা করা যায়, এবং (৫) স্থিতিশীল বলে ট্রায়াজোলগুলোকে বিভিন্ন ধরনের বিক্রিয়ায় ব্যবহার করা যায়। শার্পলেস তাঁর এই কাজ ২০০২ সালেই প্রকাশ করেন।[2]
এবার বার্তোজ্জি-র অবদানের কথায় আসা যাক। ১৯৯০-এর দশক থেকে বিজ্ঞানীরা কোষ (cell) কীভাবে কাজ করে তা বোঝার জন্য জিন ও প্রোটিন-এর ম্যাপিং করছিলেন। কিন্তু তাঁরা গ্লাইক্যান (Glycan) নামের এক ধরনের জটিল কার্বোহাইড্রেটকে এ ব্যাপারে এড়িয়ে যেতেন, কারণ কোষে গ্লাইক্যানকে ট্র্যাক করার কোনও উপায় ছিল না। গ্লাইক্যানরা খুব গুরুত্বপূর্ণ কারণ তারা প্রায়শই প্রোটিন ও কোষের পৃষ্ঠে বসে থাকে এবং অনেক জৈবিক প্রক্রিয়ায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
১৯৯০-র দশকে বার্তোজ্জি ইমিউন কোষ নিয়ে কাজ করার সময় জানতে পারেন যে এক জার্মান বিজ্ঞানী কোষ থেকে এক পরিবর্তিত সিয়ালিক অ্যাসিড পেয়েছেন যা গ্লাইক্যানদের এক উপাদান। বার্তোজ্জি-র উদ্দেশ্য ছিল একইভাবে কোষ থেকে ‘রাসায়নিক হ্যান্ডেল’-সহ একটি পরিবর্তিত সিয়ালিক অ্যাসিড তৈরি করা, কিন্তু রাসায়নিক হ্যান্ডেলটিকে যথেষ্ট নিষ্ক্রিয় হতে হবে যাতে ওটা কোষের মধ্যে উপস্থিত অন্যান্য পদার্থের সঙ্গে বিক্রিয়া না করতে পারে। কারণ একমাত্র সেক্ষেত্রেই ওই হ্যান্ডেলসহ সিয়ালিক অ্যাসিডকে কোষের মধ্যে গ্লাইক্যানকে ম্যাপ করার জন্য ব্যবহার করা যাবে।
২০০০ সালে বার্তোজ্জি অ্যাজাইড-কে রাসায়নিক হ্যান্ডেল হিসাবে চিহ্নিত করলেন। পরিচিত ‘স্টাওডিঙ্গার বিক্রিয়া’-কে ব্যবহার করে তিনি অ্যাজাইডের সঙ্গে ফ্লুওরেসেন্ট যৌগ যুক্ত করলেন। এই অ্যাজাইড আগে থেকেই কোষের গ্লাইক্যানের মধ্যে ঢোকানো ছিল। এই বিশেষ ধরনের বিক্রিয়াকে বার্তোজ্জি ‘বায়োঅর্থোগোনাল বিক্রিয়া’ নামে অভিহিত করেন। এই ধরনের বিক্রিয়া কোষের মধ্যে উপস্থিত কোনও কিছুর সঙ্গে বিক্রিয়া করে না ও কোনও কিছুর দ্বারা প্রভাবিতও হয় না।
এই সময় তাঁর মনোযোগ মেলডাল-শার্পলেস ক্লিক বিক্রিয়ার প্রতি আকৃষ্ট হয়। কিন্তু CuAAC বিক্রিয়ায় তামা (কিউপ্রাস আয়ন) ব্যবহার করা হয় যা যে কোনও কোষের পক্ষে বিষাক্ত। তাই তিনি ওই উন্নত ক্লিক বিক্রিয়াও তাঁর কাজে লাগাতে পারলেন না। অনুসন্ধান করে জানতে পারলেন, কয়েক দশক আগে প্রকাশিত এক তথ্যের কথা, যেখানে বলা হয়েছিল যে কোনও অ্যালকাইন চক্রাকার হলে এটি তামার অনুপস্থিতিতেও অ্যাজাইডের সঙ্গে মসৃণভাবে সাইক্লোঅ্যাডিশন করে। সেক্ষেত্রে সাইক্লোঅ্যাডিশনের সময় যে শক্তি (সাইক্লো-অ্যালকাইনের মধ্যে যা নিহিত থাকে) মুক্তি পায়, তা-ই হল ওই সাইক্লোঅ্যাডিশন বিক্রিয়ার মূল চালিকাশক্তি।
তিনি এই তামা-মুক্ত স্ট্রেইন-প্রমোটেড অ্যালকাইন-অ্যাজাইড সাইক্লোঅ্যাডিশন (SPAAC) বিক্রিয়া তাঁর জৈবিক গবেষণায় সফলভাবে প্রয়োগ করেন ও ২০০৪ সালে তাঁর কাজ প্রকাশ করেন।[3] এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে বার্তোজ্জি কোষের মধ্যে গ্লাইক্যানকে সফলভাবে ট্র্যাক করেন।
এত কিছু পড়ার পর সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে যে এই বছর রসায়নে যারা নোবেল পেলেন তাঁদের গবেষণা সাধারণ মানুষের অর্থাৎ আমজনতার কী কাজে লাগল। বিজ্ঞানের ভাষায়, এই বছর নোবেলজয়ী রসায়নবিদ-ত্রয়ীর উন্নত ক্লিক কেমিস্ট্রি ও বায়োঅর্থোগোনাল কেমিস্ট্রি ব্যবহারের ফলে নিম্নলিখিত সাফল্যগুলি লাভ করা গেছে:
- নানা ধরনের এনজাইম ইনহিবিটর, রিসেপ্টর লাইগ্যান্ড, ফার্মাসিউটিক্যালস, উদ্ভিদনাশক, ফটো-স্টেবিলাইজার, ডায়াগনস্টিক্স ইত্যাদির বিকাশ ঘটেছে;
- অনেক বিশালাকায় পদার্থ যেমন জেল, পলিমার ইত্যাদির উদ্ভব হয়েছে; এবং
- জটিল জৈবিক প্রক্রিয়াগুলিকে ম্যাপিং করা গেছে।
সুইডিশ অ্যাকাডেমির ভাষায়—
ক্যারোলিন আর. বার্তোজ্জি, মর্টেন পি. মেলডাল, এবং কে ব্যারি শার্পলেস-এর কৃতিত্ব ও আবিষ্কারগুলি আমাদের সমাজে প্রচুর প্রভাব ফেলেছে। … তাঁদের অসাধারণ কৃতিত্বগুলি আমাদের বিশ্বকে উন্নত করতে এবং আমাদের জীবনকে আরও উন্নত করার উপায় বাড়িয়েছে— সত্যিই মানবজাতির উপকারে।
এই তিন প্রাপকের সংক্ষিপ্ত জীবনী আমাদের জানা উচিত।
ক্যারোলাইন রুথ বার্তোজ্জি ১৯৬৬ সালের ১০ অক্টোবরে বোস্টন, ম্যাসাচুসেটস-এ জন্মগ্রহণ করেন৷ তিনি ১৯৮৮ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে গ্র্যাজুয়েট হন এবং ১৯৯৩ সালে বার্কলেতে অবস্থিত ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নেই ডক্টরেট হন। বর্তমানে তিনি ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়েরই অধ্যাপিকা। বার্তোজ্জি রসায়নে তাঁর অবদানের জন্য বহু পুরস্কার পেয়েছেন এবং ৬০০-র বেশি বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ লিখেছেন। একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশক থেকে শুরু করে তিনি আজ পর্যন্ত অনেকগুলি (অনধিক দশ) নতুন ব্যবসার প্রতিষ্ঠা করেছেন— কিছু এককভাবে, কিছু যৌথভাবে। এই প্রসঙ্গে একটা কথা লেখা শিষ্টাচারসম্মত হবে কিনা জানি না। বার্তোজ্জি ঘোষিতভাবেই সমকামী এবং ২০০৭ সালে তিনি ‘এলজিবিটিকিউ সায়েন্টিস্ট অফ দ্য ইয়ার’ পুরস্কার পান ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর গে অ্যান্ড লেসবিয়ান সায়েন্টিস্টস অ্যান্ড টেকনিকাল প্রফেশনালস-এর কাছ থেকে।
মর্টেন পিটার মেলডাল ডেনমার্কে ১৯৫৪ সালের ১৬ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। টেকনিকাল ইউনিভার্সিটি অফ ডেনমার্ক থেকে তিনি কেমিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ বিএস, এমএস এবং ১৯৮৩ সালে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি এরপর পোস্ট-ডক্টরাল গবেষণা করেন যথাক্রমে টেকনিকাল ইউনিভার্সিটি অফ ডেনমার্ক, কেমব্রিজের এমআরসি ল্যাবরেটরি এবং পরে কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ২০১৯ সালে তিনি যৌথভাবে একটি প্রতিষ্ঠানের সূচনা করেন, কিন্তু সেটি ২০২১ সালে উঠে যায়। তিনি ভ্যালেরি ভি. ফোকিন ও কে বি শার্পলেসের সমসময়ে কিন্তু স্বাধীনভাবে CuAAC ক্লিক বিক্রিয়ার উদ্ভব করেন। বর্তমানে তিনি কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক।
কার্ল ব্যারি শার্পলেস ১৯৪১ সালের ২৮ এপ্রিল পেনসিলভানিয়ার ফিলাডেলফিয়াতে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৮ সালে তিনি স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জৈব রসায়নে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন৷ তিনি স্ট্যানফোর্ড ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্ট-ডক্টরাল গবেষণা করেন৷ তিনি প্রথমে এমআইটি-তে ও পরে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন। বর্তমানে তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার লা জোলা-তে অবস্থিত স্ক্রিপস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক। বেশ কয়েকটি রাসায়নিক বিক্রিয়া তাঁর নামে নামাঙ্কিত আছে। তাঁর সব গবেষণাই খুব উচ্চমানের (২০০২-এ এইচ. সূচক ১৮০/১২৪)। ১৯৭০ সালে এমআইটি-তে সহকারী অধ্যাপক থাকাকালীন ল্যাবরেটরির এক দুর্ঘটনায় তাঁর একটি চোখ নষ্ট হয়ে যায়। তিনি রসায়নের জীবনব্যাপী নানা অবদানের জন্য অনেক পুরস্কার পেয়েছেন— দুবার নোবেল পুরস্কার ছাড়াও ১৯৮৮ সালে এতেহা থেকে পাওয়া প্রেলগ মেডাল (তাঁর মতে সবচেয়ে সুন্দর) এবং ১৯৯৫ সালে পাওয়া কিং ফইসাল প্রাইজ ফর সায়েন্স মেডাল (তাঁর মতে আর্থিকভাবে সবচেয়ে দামী) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
[1] j.org.chem. 67(9). 3057-3064 (2002).
[2] Angewandte.chem.int.ed. 41(14). 2596-2599 (2002).
[3] j.am.chem.soc. 126(46). 1506-1547 (2004).
ব্যাতিক্রমী লেখা কোন নিরিখে বলা যাবে না,কিন্তু একটি অসাধারণ তথ্যবহুল লেখা। যে কোন আগ্রহী পাঠক এই লেখা পড়ে উপকৃত হবেন।আমার ভালো লেগেছে।
আপনার ভালো লেগেছে এটাই আমার কাছে যথেষ্ট।