হীরক সেনগুপ্ত
১.
বুদ্ধু অনেকক্ষণ এসেছে। দাঁড়িয়েছিল। এখন মুরগি উবু। পোঁদে ভয়ের হাম্পু নিয়ে বসে। এক কোণে।
২.
বাবু খুব ব্যস্ত। বাবুর চারদিকে লোক। বাবু, লোডু সিং। ভগওয়ান। বুদ্ধুর অবশ্য তাড়া নেই। দেখছে বসে।
৩.
লোডু সিং আয়েসি। শৌখিনও। কিন্তু সিম্পল ব্র্যান্ড, প্লেন ড্রেস। পায়ে নীল সাদা ফটফটিয়া। হাতের আঙুল ভর্তি আংটি। নেই। সোনা রূপো পান্না হীরে। আরও কত কী। অন্ধকারেও ঝকমকে। নেই। প্রকাশ্যে।
আজ লোডুর জন্মদিন। রোজই ভিড়। আজ একটু বেশিই। ফুল মালা রাখতে রাখতে পাহাড়। এখন ধুপধাপ, কেলিয়ে পড়ছে। অবশ্য চামচে আছে। ঝটপট সরাচ্ছে। বাবু আজ দরাজ। কল্পতরু।
৪.
সবাইকেই ঢের সওগাত। মিঠাই। দারু। কাপড়া। অউর কেয়া কেয়া চিজ। চমকদার।
বুদ্ধু চেনেও না।
ঠিকই শুনেছিল। আজ বাত হি কুছ অলগ। ওহি হিম্মৎ সে বুদ্ধু ভি এসেছে।
৫.
বুদ্ধু, বাবুর টেবিল দেখে। ঝিম ধরে। চক্কর লেগে যায়।
উঃ! একটা কামড় দেওয়া বান পাউরুটি।
লালচে বাদামি। গোল। কামড়ের মাঝখানে লাল চেরি। ফুটফুটে। নরম কিসমিস বাবু। শীতে, বিড়ির আগুন। দেখতে দেখতে বুদ্ধুর খিদেও পেয়ে যায়।
আঃ!
সুরুৎ করে লালা টানে। ছিঃ। লোভ দিতে নেই।
৬.
বেলা গড়ায়। এখন লোকজন কমেছে। লোডু সিং-এর নজর গেল। বুদ্ধুর দিকে। হাঁক ছাড়লেন।
–হেঃ তুই! তোর আবার কী চাই?
বাবুর গলা, খুশবু। তোল্লাই পায় স্যাঙাতরাও।
৭.
জড়সড় বুদ্ধু। উঠে দাঁড়ায়। শুয়ে পড়ে। সাষ্টাঙ্গে প্রণাম। আবার দাঁড়ায়। এক সাকরেদ গুণ টানে।
–বল্, কী চাস?
বুদ্ধু ভয় খায়। ঘাড় চুলকায়।
–লজ্জা কী? বল্…
ঘর এখন মোটামুটি ফাঁকা। লোডু একটু চুমুক দেয়।
–আজ কোনও ভয় নেই। বল্ বল্। এ সুযোগ বারবার পাবি?
৮.
–একঠো সিঁড়হি…
৯.
বুদ্ধুর কথাটা সাঁইইই….. মাথার উপর দিয়ে। গভীর মহাকাশে। খানিকক্ষণ স্তব্ধতা।
–ক্কী! কী বলছিস?
শায়লা মৌজ ছুট্ গ্যয়ে! কুণ্ঠিত বুদ্ধু।
–কী বললি?
জয় বজরংবলি।
–একঠো সিঁড়হি। হ
১০.
এতক্ষণে মগজ সচল। বিচিত্র কথা।
–সিঁড়ি!
একঘর হাসি। লোডু হাসছে। অন্যরাও কানকি মারছে।
–সিঁড়ি! অ্যাঁ? সিঁড়ি দিয়ে কী করবি? উপরে উঠবি?
হাসি, শ্যাম্পেন। গড়াচ্ছে। লোডুর মুখচোখ লাল। রগুড়ে কথা। অনেকদিন পর শুনল।
১১.
বুদ্ধু থতমত। ভাবে, বাবুজি কুছু বত্তেমিজি হইয়ে গেল.. তবে চুপ। অপেক্ষা করে।
–আচ্ছা বেশ। সিঁড়ি দেব, বেয়ে উঠবি?
বুদ্ধুর দিলে, চাক্কু চলছে। ঘ্যাঁস.. ঘ্যাঁস ঘ্যাঁস… ঘ্যাঁস… হামার ‘কোথা’টা কুছু ইধর উধর হইয়েছে, জরুর… হায় রাম! বুদ্ধু থই পায় না।
বাবুর আবার খোঁচা—
–কী রে… বল?
–হ। বাবু… সিঁড়হি। লগাইব।
–হুঁ হুঁ বুঝলাম। লাগাবি, লাগাবি। তা তোর বাড়ি কোথায়? সিঁড়ি চাইছিস যে!
–গাড়হি মে… লগাইব
–গাড়িতে সিঁড়ি! তাজ্জব কথা বললি!…
খ্যা খ্যা খ্যা! আবার খিল্লি।
–ব্বাঃ! বেড়ে বলেছিস!
–জী!
–কী রে, বল?
–জী বাবু, ওহি সচ্… মৈলার গাড়হি,.. হাঁ বাবু… উ গাড়হি… বহোত উঁচা আছে… মৈলা ভিৎরে ডালা… মুশকিল কাম…
১২.
নিরীহ আবদার। জন্মদিনে! কেউ করেনি।
–আচ্ছা। পাবি। সামনের সপ্তাহে।
১৩.
লোডু সমাজসবী। গেঁড়ি-গুগলি, সবার। হেব্বি খাতির, আশমান তক। হোমড়াচোমড়া লোকেরাও সব সুসু, জুজু। যে কাজ হবে না, লোডু ভুরু নাচালেই ম্যাজিক। লোডু সিং, ঘ্যামচ্যাক লোক। ম্যাজিকওলা।
ভোটে হারছ? লোডুকে বলো। কুঁড়েঘর? লোডু ঘাড় হিলিয়েছে। সাততলা বাড়ি।
পঁচিশ বিঘা পুকুর সমেত পেল্লায় তাজমহল? লোডু হাঁটলে গড়ের মাঠ।
বিয়ে আটকে? লোডুর তুড়ি, বর হাজির।
বাচ্চা হচ্ছে না? লোডুর ধমকি। বাচ্চা, স্রেফ সময়ের অপেক্ষা।
ইঃ টাকা ঝেড়েছে! লোডুর কাঠিবাজি। অ্যাকাউন্ট ফটাফট, ৩০০ কোটি।
পরীক্ষায় বছর বছর ডাব্বা। লোডুর সুঙ্কুমুঙ্কু। পরীক্ষায় ফার্স্ট।
এমনিতে লোডু বেকার। কিন্তু বচ্ছরভর পোটেকসনের কাজ। বসে বসেই। দৌড় করাচ্ছে।
আজকাল ভরপুর ক্রাইসিস, কাজ হাইফাই।
বন্যায় ভাসছে চারদিক। লোডু কোমরে গামছা। বন্যা উধাও। শুকনো খটখটে।
দাঙ্গায় আগুন, লোডুর হাই। দাঙ্গা, আগুন.. ফুসসস্ ফুঃ।
বিষমদে টেঁসেছ, ক্ষতিপূরণ ঝেঁপেছে। লোডু হিসু করে। বিষমদ, অমৃত। মরাগুলো লাশকাটা ঘরে হাসে। ঠ্যাং দুলিয়ে গুলতানি, হেঁটে বাড়ি ফিরে যায়।
ওভারব্রিজ ভেঙে পড়বে? তার আগে ফিস ফিস ফিস… দু-তিনদিন। ওরে বাবা! লোডু আছে। এখন না, পরে।
চন্দ্রযান থ্রি থেকে ল্যান্ডার আবার ধ্যাড়াচ্ছে? লোডু চুক্কি, সব ওক্কে। ডিরেকটার ভেউ গঙ্গা। লোডুর পায়, লাট খায়।
লোডুর হাতে তুলি। ছবি আঁকল বলে। ক্যানভাসের নিলামে, বেটিং শুরু।
৭০০০ কোটি। ৭০০০ কোটি এক… দুই…
৯০০০ কোটি। ৯০০০ কোটি এক… ছবি ফটাফট লুভ্যেরে…!
বিচিত্তা-নুষ্ঠান? লোডু জাজ। সবাইকে স্বর্ণ-মূষিক এবং নামের আগে ‘চন্দ্রবিন্দু’, উপহার।
লোডু হাসছে। ঝাড়পিট বনধ, গায়েব।
১৪.
আর বুদ্ধু! মাকাল আদমি? লোডুর কাছে মই চাইছে? ছ্যা ছ্যা। অপমান অপমান।
১৫.
বুদ্ধু পুলকিত। আবার সাষ্টাঙ্গে প্রণাম। বুদ্ধু বিদেয় হল।
লোডুর হাতে গোনা অ্যাসিস্টেন্ট ফেউ আছে। ভরপেট্টা কাঁচি। মন খুলে দিলদার।
লোডুর বাণী—
–দ্যাখ্, মইফই সিম্পিল জিনিস। লোডুর অনেস্টিতে আঁচড়। খোকা-পেটির কি টানাটানি?
–তবে কী হব্বেক?
–হাল্লা হব্বেক
–হাল্লা!
–চারিদিকে এসস্প্রে কর। লোডুই একমাত্ত। গরিব-দুঃখীর বাপ-মা! বুদ্ধুকে মই-ই দেব। তবে সোনার।
–ববা। সোওওন্নাআআর মই! লোকে ডিং হয়ে যাবে
–যাবে যাবে! লোডু সিংয়ের ওয়াদা। ডিসিসন ইজ ডিসিসন
হাক্কা-গ্রেভির বোল ফুটল।
–লোডু সিং
–পার করেগা
–আসচে বচ্ছর
–আব্বার হবে
১৬.
যেমন কথা, তেমন কাজ। স্ট্রেট ব্যাট। আড়ং ডেলিভারি।
ট্রেন-ফেন বন্ধ। কেবল লাইন কাটা। দশচাকা টাটার রেলাবাজি। প্রেস ল্যাজ তুলে ছুটছে। সিগন্যাল ফিগন্যাল সব লাল। কালো চশমায় ওয়াকিটকি। গাছ-ফাছ ঘচাং ফু। এই এল। এই এল।
মোড়ে মোড়ে পাবলিক, দাঁত কেলিয়ে কাত।
অ্যামপ্লিফায়ারে ছয়লাপ।
অ্যাঙ্কার ঘিরে চুঙ্কু মামনিরা। মিনমিন, মিনমিন…
–বোন্দুগন আর কিছুক্ষণের মধ্যেই। আমাদের চোক্ষু সাত্তোক হবে। এ সুযোগ হারাবেন না। ধৈজ্জো ধরুন…
১৭.
ঘোষক অমৃত কথা খেয়ে গেল। অ্যাসিস্টেন্ট ফেউ ঘোষকের ক্ষার মারাচ্ছে,
–দূর বা****। খা*** ছেলে! মাজাকি হচ্চে? লোডু সিংকে ডিলিট? হারামজাদা তোর বাকত্তেলা ঝাড়ছিস?… পাবলিক এজন্ন টুসকি খেয়ে বডি ফেলেছে..!
–সরি! সরি… বোন্দুগন। সুনলে মাল… ইয়ে, আপনাদের পৈত্রিক সম্পত্তি… সশ্রিং করে লেঙ্কা-বেঙ্কি ইনসিডেন হবে… বিস্যের সব্বো পোতম। ফুল অমিতাভ্ হাইট। পুরো ঝিনচ্যাক। সুনেচেন: সোওওওন্নাআআআর হরিণ। থেকেচেন: সোওওওওন্নাআআআর কেল্লায়।… এবার… লুটলে। দেকবেন: পুরেএএএ সোওওওন্নার চিকনা মইইইইই… পোদান করবেন… আমাদের সনমানি গুউ, যাবতীয় উৎসাহের মনুমেন্ট… অনুপ্পানিত দুক্ষীর বোন্দু… সিমান লোডু সিং।… কাকে দেবেন? না, এক্কেবারে এঁড়ে দুক্ষীজন… ভাগাড়ওলা, সিমান বুদ্ধুকে!… মিত্রোঁওওওও… জ্যরা শোচিয়ে… কিতনা বড়িয়া দিল… ওহ দিল দিয়া দর্দ লিয়া… সমাজসেওবা কে লিয়ে… লোকাল সে ভোকাল… ইস জমানে কে রবিনহূ… মাপ করনা কিরিস রিত্তিক রোশন… লোডু সিইইইং… আউর বচ্চেলোগ…
হাততালির উৎসব।
১৮.
সোনার মই অবশেষে। দেখে সব্বার পুটকি জ্যাম!! দশচাকা টাটার ট্রলিতে। চায়না এলইডি স্পার্ক… হ্যালোজেন। আলোর কাওয়ালি।
তাসা লেগেছে। গাড়ল ব্যাঞ্জোয় আশা।
–এক বুঁদ মুঝে ভি পিলাদো…
ডিজিটাল সাউন্ড। ঢিক্ ঢিক্। সেলফির বামাল। বর্নভিটা চামকি। ইলু ইলু। ব্যান্ড-এডে গ্যানাওলা বৌদি। কনুইওলা কাকু। ভিড়ের মধ্যে হামটি-ডামটিও। গাঁজার ধুনকি। ফ্লাইং উমম… ম্মা। পুরো ঝাক্কাস।
১৯.
লোডু সিং অ্যান্ড কোম্পানি আজ ব্যস্ত।
সোনার মই বুদ্ধুর হাতে তুলে দেবেন। কিন্তু চিন্তা অন্য। মই কি বুদ্ধু ব্যবহার করবে? রাখবেই বা কোথায়! সোনার মই বলে কথা। যা-তা মই নয়… কমপ্লিট অ্যান্টি-ম্যাটার। ফুল ব্ল্যাক হোল কেটে বের করা সোওওন্নার মই।
বাঁশের মই তো নয়। লাইটপোস্টে ঠেকিয়ে দেবে। বা রাস্তার ধারে। ড্রেনের ওপর ফেলে রাখবে। এ তো স্পেশাল। ট্রিটমেন্টও আলাদা।
অবশ্য নিন্দুকেরা বলছে, তামার মই। সোনার জল করা। শ্লা, গরুর দুধ চটকানো সোনা, বলে কিনা তামা! ঠিক হ্যায়…
হম দেখেঙ্গে, হম দেখেঙ্গে… সব কানে গেছে।
সামলাবে, আব তক ছপ্পন, ক্যুরিয়ার সার্ভিস। ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে, সার্জিক্যালি, কোমরে দড়ি।
লোডু বলেছিল সাতদিন। পাঁচদিনেই কাজ গুটিয়ে এনেছে।
এখন বুদ্ধুকে চাই। উঁচু মঞ্চ। লাইট, সাউন্ড রেডি। শুধু অ্যাকশনটা মহার্ঘ। বকেয়া।
২০.
খোচর ছুটল। বুদ্ধুর বাড়ি। বুদ্ধু আজ বাবু। বাড়ি মানে ধাঙরপট্টি। গু-মুতের কারবারির কাছে। বুদ্ধু নেই। বউ বলল হাসপাতালে।
২১.
সেকি! এত আয়োজন, ভোগে? লোডুর চোখ লাল হয় না। হাসপাতালের খবরে লোডু শান্ত।
জানতে চাইল,
–কোন হাসপাতাল?
–বস, ফ্রিকিক্।
অভিযান ‘ফ্রিকিক’। লোডু দেখে বুদ্ধু মাটিতে। লাট খাচ্ছে। জুনিয়র ডাক্তারকে আদর করল। লোডুর আশীর্বাদধন্য ইন্টার্ন, রোমাঞ্চিত।
২২.
বুদ্ধু ফুটে গেল। সেপ্টিসেমিয়ায়।
পাখোয়াজ স্যাঙাতরা ফিউজ।
–সব শওযন্ত। চক্কান্ত। কী হবে বস? পোকোল্পে গ্যামাক্সিন?
–কভভি নেহি!
–তব্বে!
–দেখ-লেঙে
–মাল তো এখন সসানে যাবে।
–বুদ্ধুকে আমি সসান ঘুরিয়ে আনব।
বাম্পার ডায়লগ। হাতে গরম। হাততালিয়াঁ।
–লেকিন ওহ সিঁড়হি?
–শোহিদ-পোতীক হবে।
–অ্যাম্বুলেন্সে খবর দিই?
–না
–তব্বে?
–আমার সাদা ল্যান্ডরোভারে যাবে।
ওহঃ জিও! লোডু আজ শারজার জাভেদ মিঁয়াদাদ!
–বল্লো হরি…
–আরে বা**… এ মাল খটুয়া। রামনাম… তারপর?
–ক্যাঁৎ! না সৎ?
–এঃ রামনাম… আর ক্যাঁৎ! পাশাপাশি!! উদোম ক্যালাবে… ‘সৎ’ই হবে
২৩.
শ্মশান এখন টইটুম্বুর। চেলা-চামুন্ডা। নন্দী-ভৃঙ্গী। ডি-ভোটার। ভুতুড়ে-ভোটার। পার্শ্ব-রাখাল। সিভিক-খ্যাচাঁকল। কে নেই?
২৪.
বৃদ্ধ ঘাটবাবু তটস্থ। বুদ্ধু না লোডু? নাকি দুজনকেই! জামাই আদর? নাকি আশীর্বাদ!
পেশাগত ঝামেলা, মালুম হয়নি আগে। মড়া-ফড়া নিয়ে কারবার। আদরই বা কী, লাথালাথিই বা কী।
শ্মশানে সাম্য সংস্থান। আদর্শ জায়গা। বৃদ্ধ বয়সে কী গেরো! এখন উভয়সঙ্কট! কী অপ্রস্তুত। প্রকৃত প্রস্তাবে, কাকে আবাহন? কাকেই বা বিসর্জন! একজন মৃত। একজন জীবিত।
কোন লৌকিকতায় ড্রিবল্ করবেন? এক যাত্রা, পৃথক ফল! তাও আবার শ্মশানে। হে মা শ্মশানকালী।
২৫.
হুঙ্কার ছাড়ল না লোডু। তবে ঘাটবাবু কানে খাটো। হুঙ্কারই লাগল।
–ঘাটবাবু!
–আজ্ঞে?
–কতক্ষণ লাগবে?
–ইয়ে… এ শুকনো ছোবড়া। চল্লিশ মিনিট…
–আঃ! এত সময় কিসে লাগবে?
–আচ্চা টেম্পারেচার বাড়িয়ে দিচ্চি। কুড়ি মিনিট…
–মানে?
–ওর কমে যে হবে না…
–কী হবে না?
–আজ্ঞে দাহ।
–দাহ!!
–হ্যাঁ দাহ!
–কার দাহ?
২৬.
ভড়কে গেলেন ঘাটবাবু। বেকায়দা প্রশ্ন, কী বলেন?
সত্যিই তো! কাকে জ্বালাবেন!
শ্যাম, না কুল! ঘাটবাবু মাথা চুলকে অস্থির।
২৭.
এদিকে বার্নিং ঘাট, লাশে লাশে হাউসফুল।
বুদ্ধিমান ডোমরা ফিল্ডে নামে। ওরা বুঝেছে। মালটা ভরপুর টং। এদিকওদিক হলেই ক্যাচাল। তাছাড়া বিস্তর বাংলু বরকন্দাজ। ঘুরঘুর ঘুরঘুর।
২৮.
–বাবু! এনার জাতফাত কি আর মানবেন? দাহ বললে, দাহ। আর গোর বললে, গোর। এখন সব একাকার।
ভারি দার্শনিক অনুসিদ্ধান্ত। বল ঠেলেছে লোডুর কোর্টে।
–আপনার কী ইচ্ছে?
২৯.
লোডু ভারি খুশি। ঘোঁৎ ঘোঁৎ করে।
সাঙ্গপাঙ্গরা হুইসিল চেনে। ধাং ধাং হাজির।
আনন্দ মোচ্ছব। তেরে কেটে ধিন।
–জিনা ইঁহা মরনা ইঁহা…
–লোডু সিং
পার করেগা
লোডু সিং
পার করেগা
৩০.
হেব্বি টানটান ওভার। ডোমরাও কম হারামি না।
লোডু হাত ঘোরায়,
–বস, একবার চুল্লিটা খোলো দেখি…
–ও দাহ?
–না
–তবে?
–দেখব
–ইল্লিক! কী বলছে মাইরি! জম্মে শুনিনি
লোডুর মটকা গরম…
–হেঃ শুনে রাখ… আমি লোড্ডু… লোড্ডু সিইইং! অসাদ্দ সাদন… কঈ! ম্যাজ্জি… ক্ক জাঁ ই। তোমা…রা কেঁও ম্যাজ্জি…ক্ক জাঁ ও…
৩১.
ডোমরা জানে, গরম থাকতে লোহা প্যাঁদাও।
এখন লোহা গরম। চুল্লির পাল্লা তোলে। ঘাটবাবু হাস-ফাঁস করে। দৌড় লাগায়।
৩২.
চুল্লির ভেতর ঠা ঠা করছে। জবাকুসুম সঙ্কাশং! চুল্লিতে ব্যাপক হুল্লোড়… গর্জন ভরা ইডেন। শত শত গুচ্ছমূল, ঠেসমূল, মিছিল। মানুষের ঢল। হাত উঠছে। হাত নামছে। মানছি না, মানব না। জ্বালিয়ে দাও। পুড়িয়ে দাও।
লোডু তাঝ্ঝিম মাঝ্ঝিম। তাকিয়ে দেখে। কত চেনা মুখ। কত চেনা লোক। ডাক দিয়ে যাচ্ছে।
–আয়। আয়…
৩৩.
লোডু ল্যান্ডরোভারে গিয়ে বসে। গিয়ার পাল্টায়। বুদ্ধু, টাল খেয়ে উঠল।
৩৪.
সাঁৎ। ঢুকে গেল চুল্লিতে।
আরে বাহ! অভিনব ভাষা, অনবদ্য, লেখা।
প্রৈতি সেন