স্বকৃত নোমান
প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্র থেকে বিতাড়নের বহু বহু এবং বহু বছর পর কবিকুল প্রথম যে বিদ্রোহটি করেন সেটি গ্রিসে নয়, মহিঙ্গদেশে। বিদ্রোহের সূত্রপাত মহিঙ্গ জাতির মননের প্রতীক ‘ভাষা একাডেমি’ থেকে প্রকাশিত মাসিক সাহিত্যপত্রিকা কলমচাষ-এর একটি বিশেষ সংখ্যা প্রকাশকে কেন্দ্র করে। সাম্প্রতিক সময়ের সাতান্নজন কবির কবিতা নিয়ে সংখ্যাটি প্রকাশের পর ভাষা একাডেমির ফেসবুক পেজে যেদিন সংখ্যাটির প্রচ্ছদ পোস্ট করা হয় সেদিন থেকেই মূলত বিদ্রোহের শুরু।
প্রথম প্রতিক্রিয়াটি জানান এমন একজন কবি বয়সে যিনি তরুণ, যার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা দুই, কবিসমাজে যার নাম একটু একটু করে ছড়াচ্ছে এবং যিনি স্বপ্ন দেখেন একদা প্লেটো তাঁর আদর্শ রাষ্ট্র থেকে যেসব কবিকে অপমান করে বের করে দিয়েছিলেন সেসব কবির বংশধররাই একদিন এই মহিঙ্গদেশে কবিশাসন প্রতিষ্ঠা করবেন। মার্জিত ভাষায় তিনি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলেন, ‘ভাষা একাডেমি থেকে প্রকাশিত কলমাচাষ’র সংখ্যাটির সূচিপত্র দেখলাম। আমি খুবই মর্মাহত যে গুরুত্বপূর্ণ এই সংকলনে সাম্প্রতিক সময়ের অন্তত দশজন শক্তিমান কবির কবিতা নেই।’ বাদপড়া কবিদের নাম উল্লেখ করে তিনি সবশেষে লিখলেন, ‘ভাষা একাডেমির উচিত ছিল আরও সময় নিয়ে একটি কমিটি গঠন করে কলমচাষ’র বিশেষ সংখ্যাটি বের করা।’
পরবর্তী প্রতিক্রিয়াটি লিখলেন প্রায় পঁয়তাল্লিশ বছর বয়সী এক কবি, যিনি কবিসমাজে মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত বলা চলে এবং কলমচাষ’র এই বিশেষ সংখ্যায় যিনি বাদপড়া কবিদের একজন। ফেসবুকের পোস্টে তিনি যে প্রতিক্রিয়াটি লেখেন তার সারসংক্ষেপ এই, ‘জনগণের অর্থে পরিচালিত ভাষা একাডেমি যা ইচ্ছে তাই করতে পারে না। সমকালীন কবিদের নিয়ে এমন একটি সংখ্যা বের করার আগে কবিসমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বসা উচিত ছিল। কলমচাষ সম্পাদক ও সহযোগী সম্পাদক যা করলেন তা স্বেচ্ছাচারিতা ছাড়া আর কিছু নয়। স্বেচ্ছাচারিতারও একটা সীমা থাকা উচিত। একদিন জাতির কাছে এই স্বেচ্ছাচারিতার জবাব দিতে হবে। সেদিন আর বেশি দূরে নয়। অবিলম্বে সংখ্যাটি বাজার থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।’
তার স্ট্যাটাসটিতে কমেন্ট করলেন বাদপড়া আরেক গুরুত্বপূর্ণ কবি জাহান আলমগীর। কলমচাষ’র সম্পাদনা সহযোগী নওশের আলম, কথাসাহিত্যিক হিসেবে যার পরিচিতি, কলমচাষ’র সম্পাদক ও সহযোগী সম্পাদকের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী কবিদের কাছ থেকে কবিতা সংগ্রহ ও প্রুফ দেখা ছাড়া যার আর বিশেষ কোনও ক্ষমতা নেই― তার নাম উল্লেখ করে জাহান আলমগীর লিখলেন, ‘নওশের তো আমার কাছ থেকে কবিতা নিয়েছিলেন। সম্ভবত ছাপানোর যোগ্য মনে করেননি, বাছাইয়ে বাদ পড়েছে। হি হি হি।’
জাহান আলমগীরের কমেন্টের নিচে পড়ন্ত যৌবনের কবি আসগর আলী, সবসময় যার মেজাজের তাপমাত্রা থাকে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যিনি নিজেকে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কবি হিসেবে দাবি করেন, মন্তব্য করলেন, ‘ভাষা একাডেমিতে কিছু পাঁঠা চাকরি করে, তারা সারাদিন বসে বসে কাঁঠালপাতা চিবায়। তারা কবিতার ‘ক’ও বোঝে না। এই পাঁঠারা নিজেদের খেয়াল-খুশিমতো মুখচেনা কবিদের কবিতা নিয়ে কলমচাষ’র তথাকথিত বিশেষ সংখ্যাটি প্রকাশ করেছে।’ তিনি সন্দেহ ব্যক্ত করে আরও লেখেন, ‘যাদের কবিতা ছাপা হয়েছে তারা কি আদৌ কবি? তাদের মধ্যে অন্তত দশজন ক্ষমতাসীন সরকারের দালাল, সাতজন মুদি দোকানদার, তেরজন কবিনামধারী ধান্ধাবাজ এবং অন্তত সাতজন সাবেক কবি। ছাগলদের দিয়ে হালচাষ করালে যা হয় আরকি। এসব পাঁঠাদের কান ধরে ভাষা একাডেমি থেকে বের করে দেওয়া উচিত।’
এই কমেন্টের কারণে প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ কবিদের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে গেলেন আসগর আলী। তার কমেন্টের নিচে প্রথম মন্তব্য করলেন এক তরুণ কবি। শব্দচয়নে আসগর আলীকে দুর্বল হিসেবে উল্লেখ করে তিনি লিখলেন, ‘ব্যবহারই বংশের পরিচয়। ভাষা একাডেমিতে কর্মরত কর্মকর্তাদের আপনি যে ভাষায় আক্রমণ করলেন তা কোনও কবির ভাষা হতে পারে না। ট্রাক ড্রাইভাররা এই ভাষায় কথা বলে। আপনার ব্যবহৃত ভাষা ট্রাক ড্রাইভারের ভাষার চেয়েও নিকৃষ্ট। কিসের কবিতা লেখেন আপনি? কবিতা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা স্বাস্থ্যকর। কিন্তু সমালোচনার নামে গালাগালি নিন্দনীয়। সেইম! সেইম!’
সন্ধ্যা নাগাদ কলমচাষ’র বিশেষ সংখ্যাটি প্রকাশের খবর ভাইরাল হয়ে গেল ফেসবুকে। প্রবাদ, কাকের চেয়ে কবির সংখ্যা বেশি। আরও প্রবাদ, মহিঙ্গদেশের যে-কোনও রাস্তার মোড়ে একটা লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে লাঠিটা ঘোরানো শুরু করলে অন্তত পাঁচজন কবি আহত হবে। প্রচলিত এসব প্রবাদেই বোঝা যায় মহিঙ্গদেশে কবির সংখ্যা বিপুল। স্বাভাবিকভাবেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকও বলতে গেলে কবিদের দখলেই। ফেসবুকে শুরু হয়ে গেল প্রতিক্রিয়া-পাল্টা প্রতিক্রিয়ার ঝড়; ঘণ্টায় যার গতিবেগ ১১৭ থেকে ১৩০ কিলোমিটার। দুই ভাগে ভাগ হয়ে পড়লেন দেশের কবিকুল। একদলের প্রতিক্রিয়া, ‘ভাষা একাডেমি কখনও তারুণ্যবান্ধব ছিল না, কলমচাষ পত্রিকাটির মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে তারুণ্যবান্ধব হয়ে উঠছে। সাম্প্রতিক সময়ের কবিতা নিয়ে কলমচাষ’র বিশেষ সংখ্যা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক ধন্যবাদ। আশা করি এই ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।’ আরেক দল কবির প্রতিক্রিয়া, ‘ভাষা একাডেমি একটি ব্যর্থ প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানে এত এত কর্মকর্তা-কর্মচারীর কী প্রয়োজন? রাষ্ট্রের বিপুল অর্থের শ্রাদ্ধ করা ছাড়া কী ঘোড়ার ডিমটা পাড়ে তারা? অবিলম্বে এই ব্যর্থ একাডেমি বন্ধ করে দেওয়া হোক।’
সংকলনে বাদপড়া এক তরুণ কবি স্ট্যাটাস দিলেন, ‘বাঁইচা গেছি সংকলনে আমার কবিতা নাই বলে। সংকলন খ্রাপ। ভাষা একাডেমি খ্রাপ! পড়ুম না কলমচাষ।’ বাদপড়া আরেক ক্ষুব্ধ কবি পর পর দুটি স্ট্যাটাস দিলেন। প্রথম স্ট্যাটাসে তিনি লিখলেন, কলমচাষ’র সংকলনে আমি কবি খুঁজে পেয়েছি আড়াইজন।’ পরবর্তী স্ট্যাটাসে সংখ্যাটির সম্পূর্ণ দায় চাপিয়ে দিলেন কলমচাষ’র সেই সম্পাদনা সহযোগীর উপর, সম্পাদক ও সহযোগী সম্পাদকের নির্দেশে কবিতা সংগ্রহ, প্রুফ দেখা ছাড়া যার বিশেষ কোনও ক্ষমতা নেই। তিনি লিখলেন, ‘খুব খারাপ শর্তে ভাষা একাডেমি তরুণ সাহিত্যিকদের চাকরি দেয়। চাকরি স্থায়ী ও পদোন্নতি পেতে উপরের মহলের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য তারা একাডেমিতে ঢুকে সাহিত্যিক রাজনীতি শুরু করে দেয়।’ তার এই স্ট্যাটাসের নিচে এক কবি কমেন্ট করলেন, ‘একাডেমিটা বলদদের খোঁয়াড়ে পরিণত হয়েছে। এটা নিয়ে কথা বলে লাভ নেই।’ আত্মগোপনকারী কবি নামধারী এক প্রতিক্রিয়াশীল কমেন্ট করলেন, ‘ইগুলা সরকারের দালাল। ধরি আনি মারি ফালান।’ গুরুত্বপূর্ণ এক প্রবাসী কবি কমেন্ট করলেন, ‘না বুঝেই হে হে করলাম। ধন্যবাদ।’
একটি সাহিত্য পত্রিকার বিশেষ সংখ্যা প্রকাশকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হবে কেউ চিন্তাও করতে পারেনি। পত্রিকাটি প্রকাশের প্রথম দুদিন কবিদের আলোচনা-সমালোচনা আর কবি যশোপ্রার্থী বা কবি নামধারীদের গালাগাল-খিস্তিখেউড় চলছিল ফেসবুকে। অর্থাৎ আন্দোলন সীমাবদ্ধ ছিল ভার্চুয়াল জগতে। তৃতীয় দিন সকালে আন্দোলন শুরু হল একচুয়াল জগতে। সেদিন সকালে বাদপড়া চার গৌণ কবির নেতৃত্বে রাজধানীর গণগ্রন্থাগার প্রাঙ্গনে রাজধানী ও আশপাশের জেলা-উপজেলাগুলো থেকে আসা শ দেড়েক কবি সমবেত হলেন। সংকলনে বাদপড়া দশ গুরুত্বপূর্ণ কবিকে, যাদের ছয়জন প্রথমদিন ফেসবুকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে চুপ মেরে গেছেন, সমাবেশে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তারা এলেন না। বারবার মোবাইল নম্বরে ফোন দেওয়া হল, তারা রিসিভ করলেন না। একজন রিসিভ করে বললেন, ‘এসব আন্দোলন-ফান্দোলন করে কবিতা লেখা যায় না মিয়া।’ বলেই তিনি লাইন কেটে দিলেন।
সমাবেশটির উদ্দেশ্য ছিল কলমচাষ’র বিশেষ সংখ্যাটি বাতিল ঘোষণা করতে ভাষা একাডেমি কর্তৃপক্ষের উপর চাপ প্রয়োগ করা। সমাবেশের নেতৃত্বদানকারী চার কবির একজন তমাল অনার্য স্বভাবে অতিবিপ্লবী। গ্রন্থাগারের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে তিনি একটা জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিয়ে কবিদের রক্ত গরম করে তুললেন। মুষ্টিবদ্ধ হাত উর্ধে তুলে কবিকুল স্লোগান দিতে শুরু করলেন, ‘স্বৈরাচারীর আস্তানা/জ্বালিয়ে দাও পুড়িয়ে দাও। কবিতা নিয়ে রাজনীতি/চলবে না চলবে না…’ ইত্যাদি ইত্যাদি।
স্লোগান দিতে দিতে মিছিল নিয়ে গ্রন্থাগার প্রাঙ্গন থেকে তারা রাজবাগ চৌরাস্তার মোড়ের দিকে এগুতে লাগলেন। পূর্বঅনুমতি ব্যতীত রাজধানীতে এত বড় একটা মিছিল দেখে সতর্ক হয়ে উঠলেন ডিউটিরত গোয়েন্দারা। তারা ভাবলেন, নিশ্চয়ই এরা সরকার-বিরোধী গোষ্ঠী। নইলে মিছিলে স্বৈরাচারীর আস্তানা জ্বালিয়ে দেওয়ার স্লোগান দেবে কেন? মুহূর্তে খবর পৌঁছে গেল মহানগর পুলিশ কমিশনারের কন্ট্রোল রুমে। অল্প সময়ের মধ্যেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হল দাঙ্গা পুলিশের একটি বাহিনী। এক এসআই কবিনেতাদের সঙ্গে দেখা করে বললেন, ‘রাজবাগ শহরের একটি ব্যস্ততম এলাকা। রাস্তা বন্ধ করে এখানে এভাবে সমাবেশ করা বেআইনি। আপনারা সমাবেশ বন্ধ করুন।’
কবিকুল কি এসআইর কথা পাত্তা দেন? তাদের মাথায় তখন শিল্পতেজ। ভাষা একাডেমি কর্তৃপক্ষের স্বজনপ্রীতি ও স্বৈরাচারী কর্মকাণ্ডের জবাব না দিয়ে তারা থামবে না। জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিয়ে কবি তমাল অনার্য কবিদের দ্বিগুণ উত্তেজিত করে তুললেন। স্লোগান দিতে দিতে তারা রওনা হলেন ভাষা একাডেমির দিকে। কারুকলা ইনস্টিটিউটের গেট অতিক্রম করে স্লোগানমুখর কবিকুল হঠাৎ দেখতে পেলেন নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএসসি চৌরাস্তার মোড়ে একটি জলকামানের গাড়ি, একটি রায়টকার ও স্পেশাল ফোর্স ‘ক্যাব’-এর একটি নীল ভ্যান। কবিকুল কি আর শান্ত থাকতে পারেন? হৈচৈ শুরু করে দিলেন― আমরা জঙ্গি, না সন্ত্রাসী? গণতান্ত্রিকভাবে আমরা ভাষা একাডেমি কর্তৃপক্ষের স্বৈরাচারী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করতে মিছিল করছি, অথচ আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী কিনা আমাদেরকে বাধা দিচ্ছে! আরও জোরে স্লোগান দিতে শুরু করলেন তারা। কবিনেতা তমাল অনার্য অভয় দিয়ে বললেন, ‘ভাইয়েরা, আপনারা ঘাবড়াবেন না, শিল্পশক্তির কাছে পেশি শক্তি দাঁড়াতে পারবে না। মানুষের ইতিহাস শিল্পের ইতিহাস, কবিতার ইতিহাস। আপনারা এগিয়ে চলুন, জয় আমাদের হবেই।’ কবিকুল ‘জয় কবিতার জয়’ বলে তার বক্তব্য সমর্থন করে জোর কদমে এগিয়ে চললেন।
পিএসসি মোড়ে গিয়ে কবিকুল যখন ভাষা একাডেমির দিকে অগ্রসর হতে চাইলেন, পঞ্চাশেরও বেশি পুলিশ তখন মিছিলটির দুদিকে ব্যারিকেড দিল। শুরু হল কবিকুলের সঙ্গে পুলিশের বাকবিতণ্ডা। একপর্যায়ে ব্যারিকেড ভেঙে মিছিলটি যখন অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করল তখন কবিকুলের সঙ্গে পুলিশের ধ্বস্তাধস্তি শুরু হয়ে গেল। পুলিশের তো লাঠি আছে, চার্জ করতে দেরি করে না; আচমকা লাঠিচার্জ শুরু করল তারা। বিক্ষুব্ধ কবিকুল খানিকটা পিছু হটলেন। স্লোগান ধরে আবার যখন সামনে অগ্রসর হতে চাইলেন পুলিশ অমনি চালিয়ে দিল জলকামান। ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়লেন কবিকুল। আবার জড়ো হয়ে যখন ভাষা একাডেমির দিকে অগ্রসর হতে চাইলেন, তমাল অনার্যের তো মাথা গরম, ফুটপাত থেকে একটা ইঁট খুলে তিনি পুলিশকে লক্ষ করে ছুড়ে মারলেন। ব্যস, অমনি শুরু হয়ে গেল টিয়ারশেল নিক্ষেপ। ধোঁয়ায় অন্ধকার হয়ে উঠল চারদিক। যেসব কবি জলকামান ও টিয়ারশেল উপেক্ষা করে এগিয়ে যাচ্ছিলেন তাদের উপর চড়াও হয়ে পুলিশ আবারও লাঠিচার্জ শুরু করল। তাতে আহত হলেন অন্তত কুড়িজন এবং গ্রেপ্তার হলেন সাতজন কবি।
টেলিভিশন, অনলাইন নিউজপোর্টাল ও ফেসবুকের মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ল রাজধানীতে কবিদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশি হামলার খবর। কবিদের আর কে রোখে! দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠল, জেলায়-উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে গেল। ‘বল বীর চির উন্নত মম শির’ স্লোগানে মুখর হয়ে উঠল রাজপথ। পুলিশের মধ্যে যেমন অতিউৎসাহী থাকে তেমনি কবিদের মধ্যেও থাকে। রাজধানীর পর দেশের যে জেলাটিতে সবচেয়ে বেশি সাহিত্য-সংস্কৃতির চর্চা হয় সেই জেলায় কবিদের মিছিল থেকে কোনও এক অতিউৎসাহী কবি হয়ত পুলিশকে লক্ষ করে ঢিল ছুঁড়লেন। কিংবা ছোঁড়েননি, পুলিশই হয়ত বিনা উস্কানিতেই কবিকুলের বিক্ষোভ মিছিলে চড়াও হয়ে লাঠিচার্জ শুরু করল। তাতে এক কবি গুরুতর আহত হন। দ্রুত তাকে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হল। মুহূর্তের মধ্যে খবরটি ছড়িয়ে পড়ল সারাদেশে। জেলায় জেলায় কবিদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ল অসন্তোষ। আবারও শুরু হল বিক্ষোভ মিছিল, সংঘাত, সংঘর্ষ।
পুলিশি হামলার এই ন্যক্কারজনক ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠল ফেসবুক, কলমচাষ’র সম্পাদক ও সহযোগী সম্পাদকের পদত্যাগের দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠলেন কবিকুল। টক-শোজীবীরা সরগরম করে তুললেন টেলিভিশনগুলো। কেউ কবিদের পক্ষে, কেউ বিপক্ষে। এক টক-শোবিদ চ্যানেল বিটিএন-এর রাত সাড়ে দশটার নিয়মিত টক-শো অনুষ্ঠানে বললেন, এই ঘটনার পেছনে বিরোধী দলের ষড়যন্ত্র রয়েছে। তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিনি সরকারের কাছে দাবি জানান। সে-রাতে আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী চার কবি দেশের শিল্প-সাহিত্য চর্চা কেন্দ্র জহির সুপার মার্কেটে সংকলন থেকে বাদপড়া কবিদের নিয়ে বৈঠক করলেন। বৈঠকে কবি তমাল অনার্যকে আহ্বায়ক ও চয়ন ইসলামকে সদস্যসচিব করে ‘কবিতা রক্ষা কমিটি’ নামে একুশ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে পরদিন ভাষা একাডেমি ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করলেন।
পরদিন দৈনিক পত্রিকাগুলো শিরোনাম করল, ‘দেশব্যাপী কবিদের বিক্ষোভ ॥ পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত দেড় শতাধিক, গ্রেপ্তার ১৫২।’ স্বাভাবিকভাবেই বিরোধীদল ও ধর্মবাদী রাজনৈতিক দলগুলোর ইস্যুগুলো চাপা পড়ে গেল এই খবরের নিচে। দীর্ঘদিন ধরে কর্মসূচিহীন বিরোধীদল কড়া প্রতিবাদ জানানোর মতো একটা ইস্যু খুঁজে পেল। দুপুর নাগাদ দলের চেয়ারপার্সন স্বাক্ষরিত বিবৃতি পাঠানো হল গণমাধ্যমে। বিবৃতিতে তিনি বললেন, ‘গণতন্ত্রহীনতার কারণে দেশে আজ এই অরাজকতা। এই ফ্যাসিস্ট সরকার কবিদেরকেও সম্মান করতে জানে না। এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার বিকল্প নেই। আমরা ক্ষমতায় গেলে কবিদের মর্যাদা সুপ্রতিষ্ঠিত করব এনশাল্লাহ।’
ওদিকে বছর পাঁচ আগে হঠাৎ গজিয়ে ওঠা ধর্মবাদী সংগঠন ‘ধর্ম রক্ষা কমিটি’র নেতারা পড়ে গেলেন মহাদুশ্চিন্তায়। তাদের ইস্যু ছিল মহিঙ্গদেশের সর্বোচ্চ আদালতচত্বরে স্থাপিত একটি ভাস্কর্য অপসারণের দাবি। ধর্মরক্ষা কমিটির চাপে পড়ে ভাস্কর্যটি মধ্যরাতে সরিয়ে ফেলেছিল সরকার, কিন্তু কবি-সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের চাপে স্থান বদল করে পরদিন ভাস্কর্যটি পুনঃস্থাপনে বাধ্য হয়। ভাস্কর্য পুনঃস্থাপনকে ইস্যু করে মাঠ গরম করতে চেয়েছিল ধর্মরক্ষা কমিটি, অথচ কবিকুলের এসব হাঙ্গামার কারণে তাদের ইস্যুটি চাপা পড়ে গেল। প্রধান বিরোধীদলের দেখাদেখি তারাও তাড়াহুড়োজনিত কারণে আঞ্চলিক শব্দের মিশেলে গণ্যমাধ্যমে একটি বিবৃতি পাঠিয়ে দিল। দেশের গণমাধ্যমগুলোর সম্পাদক ও বেশিরভাগ সাংবাদিক প্রগতিশীল। মৌলবাদী এই সংগঠনের বিবৃতিটি তারা ছাপলেন না। কিন্তু একটি অনলাইন নিউজপোর্টাল হিট বাড়ানোর স্বার্থে বিবৃতিটি প্রকাশ করে দিল। ধর্মরক্ষা কমিটির মহাসচিব স্বাক্ষরিত ওই বিবৃতির উল্লেখযোগ্য কথা এই, ‘দেশে ধর্মীয় হুকুমত না থাকায় মুরতাদ নাস্তেক কবিরা নৈরাজ্য শুরু করি দিইয়্যে। তথাকথিত ‘কবিতা রক্ষা কমিটি’ গঠন করিয়ারে আঁরার তরুণ প্রজন্মঅক্কলরে কবিতার প্রতি আকৃষ্ট করিবার অপচেষ্টা করছে। কবিতা লেখা আমাদের ধর্মে বিলকুল হারাম। এসব হারাম কর্মকাণ্ড বন্ধ করা হোক। পাশাপাশি স্কুল-কলেজের পাঠ্যপুস্তকে ধর্মীয় কবিতা অন্তর্ভুক্তির জন্য সরকারের কাছে আঁরা জোর দাবি জানাইয়ের।’
বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো কি আর মুখে আঙুল দিয়ে বসে থাকতে পারে? তারা তো বহু দল-উপদলে বিভক্ত। পশ্চিমপন্থী কয়েকটি বামপন্থী ছাত্র সংগঠন কবিদের উপর ন্যক্কারজনক পুলিশি হামলার নিন্দা জানালেও পূর্বপন্থী একটি বামদলের একজন শীর্ষনেতা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলেন, ‘এটি একটি সাম্রাজ্যবাদী ষড়যন্ত্র। সাম্রাজ্যবাদ কখনও পণ্যের নামে, কখনও শিল্পের নামে, কখনও ধর্মের নামে তাদের এজেন্ডা নিয়ে হাজির হয়। মেহনতি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা ঠেকাতে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি কবিদের মধ্যে বিভাজন তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে। সাম্রাজ্যবাদীদের এই ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে।’
সেদিন সকাল থেকেই যথারীতি ‘কবিতা রক্ষা কমিটি’র ব্যানারে কলমচাষ’র বিশেষ সংকলনে বাদপড়া কবিকুল উপস্থিত হতে লাগলেন ভাষা একাডেমি চত্বরে। বেলা এগারোটা নাগাদ প্রায় হাজারখানেক কবি জড়ো হলেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কড়া নির্দেশ দেওয়া আছে, কোনও অবস্থাতেই যেন কবিকুলের উপর হামলা করা না হয়। কেননা এটি প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্র নয়, এটি গণপ্রজাতন্ত্রী মহিঙ্গ রাষ্ট্র। সকল নাগরিকের মতো কবিদেরও অধিকার আছে নিজেদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন-সংগ্রামে অংশ নেওয়ার। গতকালের হামলায় সরকার এমনিতেই বিব্রত। হামলার ঘটনায় বিশ্বের মানবাধিকার সংস্থাগুলো উদ্বেগ জানিয়েছে। তাছাড়া নানা কারণে সরকার এমনিতেই বিব্রত। এই মুহূর্তে কবিদের সঙ্গে ঝামেলা এড়াতে চায় সরকার। অতএব, সাবধান!
জুনের ভয়াবহ গরমে প্রাণ উষ্ঠাগত। দরদর করে ঘামছেন কবিকুল। সাড়ে এগারোটার দিকে ভাষা একাডেমির ‘ইমরুল মঞ্চে’ দাঁড়িয়ে ‘কবিতা রক্ষা কমিটি’র আহ্বায়ক কবি তমাল অনার্য ঝাড়া একটা ভাষণ দিলেন। তার ভাষণে উত্তেজিত কবিকুল কঠিন শপথ ব্যক্ত করলেন, কলমচাষ’র বিশেষ সংখ্যাটি বাতিল ঘোষণা না করা পর্যন্ত একাডেমির মহাপরিচালককে দপ্তরে অবরুদ্ধ করে রাখা হবে। ‘জয় কবিতার জয়’ ধ্বনি উঠল চতুর্দিকে। একাডেমির পক্ষ থেকে জনৈক পরিচালক মঞ্চে এসে কবিনেতাদের সঙ্গে দেখা করলেন। বোঝানোর চেষ্টা করলেন, ‘দেখুন, সংকলন কাউকে কবি বানাতে পারে না, কবিত্বশক্তি ভেতরে থাকতে হয়।’ তার কথা শুনে হৈহৈ করে উঠলেন বিক্ষুব্ধ কবিকুল। তাকে লক্ষ করে শুরু হল পানির বোতল নিক্ষেপ। কবিদলে ঢুকে পড়া কবি নামধারী এক তরুণ প্রতিক্রিয়াশীল গালাগাল শুরু করল তাকে। লম্বাচুলঅলা এক কবি খিস্তি করলেন, ‘মূর্খ কোথাকার! আমাদেরকে কবিতা শেখাতে এসেছে!’ তোপের মুখে মঞ্চ ত্যাগ করতে বাধ্য হলেন পরিচালক।
তখন বিকেল পাঁচটা। ভাষা একাডেমি ছুটি হয়ে গেছে। কবিকুলের অবরোধের কারণে অফিস থেকে বেরুতে পারছেন না কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ওদিকে মেঘ সঞ্চারিত হচ্ছে আকাশে। বহুদিন বৃষ্টি হয় না। গরমে কাঁহা কাঁহা অবস্থা। কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হল ঝুম বৃষ্টি। কবিকুল নিরাপদে সরে পড়তে লাগলেন। কী করেন তমাল অনার্য? বৃষ্টির কারণে কি সব পরিকল্পনা ভণ্ডুল হয়ে যাবে? কমিটির সদস্য সচিব চয়ন ইসলামের পরামর্শ চাইলেন তিনি। চয়ন ইসলাম বৃষ্টিস্নানে ব্যস্ত। কদিন ধরে তিনি ঘামাচির জ্বালায় অতিষ্ঠ। বৃষ্টির জল ঘামাচি দূর করে।
একাডেমি ভবনের নিচতলার সেমিনার হলে বিকেলে একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। হলের সামনে একটি ল্যাপটপ, দুটি মাইক্রোফোন এবং বড় বড় দুটি সাউন্ডবক্স রাখা। কবিকুলের অবরোধের কারণে সেমিনারটি ভণ্ডুল হয়ে গেছে। বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে সাউন্ডবক্স দুটি চালু করলেন তমাল অনার্য। মাইক্রোফোনটি মুখের সামনে ধরে সমবেত কবিকুলের উদ্দেশে বললেন, ‘আপনারা নিজ নিজ অবস্থানে দাঁড়িয়ে থাকুন। বৃষ্টি কেন, বন্যা হলেও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা অবরোধ উইথড্র করব না।’ তার আহ্বানে কবিকুল আবার সমবেত হয়ে স্লোগান দিতে শুরু করলেন।
তখন, তমাল অনার্য যখন বেরিয়ে এলেন, কে জানে কে, হয়ত একাডেমির কোনও কর্মকর্তা, কিংবা সেমিনার আয়োজকদের কেউ হবে, ল্যাপটপটি চালু করে বাজিয়ে দিল মহাকবি সূর্যরাজ ঠাকুরের গান : ‘বরিষ ধরা মাঝে শান্তির বারি/শুষ্ক হৃদয় লয়ে আছে দাঁড়াইয়ে/ঊর্ধ্বমুখে নরনারী…।’ বৃষ্টির ঝরঝর শব্দ চাপিয়ে চড়াসুরে গানটি বাজতে লাগল। ধীরে ধীরে থেমে যেতে লাগল কবিকুলের স্লোগান। কবি তমাল আচার্য স্লোগান জারি রাখার চেষ্টা করেন, কিন্তু সুরের কারণে ঠিক জমিয়ে তুলতে পারেন না। এক পর্যায়ে স্লোগান থামিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে ঠোঁট মিলিয়ে গানটি গাইতে লাগলেন শিল্পসংবেদনশীল কবিকুল।
গানটি যখন শেষ হল, অপেক্ষাকৃত তরুণ কবিদের একটি দল সিঁড়ি বেয়ে একাডেমির মহাপরিচালক ও কলমচাষ সম্পাদক প্রফেসর ডক্টর আসাদুল হক চৌধুরীর দপ্তরের উঠে গেলেন। দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতে চাইলে বাধা দিল ডিউটিরত পুলিশ। ভেতর থেকে সম্পাদক আসাদুল হক হাঁক দিয়ে বললেন, ‘তাদের ভেতরে আসতে দিন।’ তরুণ কবিদল ভেতরে ঢুকলে তাদের সম্ভাষণ জানিয়ে তিনি বললেন, ‘আপনারা আরও আগে এলেন না কেন? কেন এতক্ষণ বৃষ্টিতে ভিজলেন? বসুন বসুন।’ তখন এক তরুণ কবি বললেন, ‘আমরা বসব না স্যার। আপনি আমাদের সঙ্গে বাইরে চলুন।’ মহাপরিচালক বললেন, ‘বাইরে কেন? বাইরে তো বৃষ্টি!’ তরুণ কবি বললেন, ‘আপনাকে নিয়ে আমরা বৃষ্টিতে ভিজব স্যার।’
প্রফেসর ডক্টর আসাদুল হক চৌধুরীকে নিয়ে তরুণ কবির দলটি যখন নিচে নামলেন বৃষ্টির গতিবেগ তখন আগের তুলনায় দ্বিগুণ। তাকে দেখে, কী আশ্চর্য, হর্ষধ্বনি দিতে শুরু করলেন কবিকুল। একাডেমির কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ডিউটিরত পুলিশেরা তো তাজ্জব। যে দাবি নিয়ে এত আন্দোলন সংগ্রাম, সে-দাবির কথা ভুলে গিয়ে, যার বিরুদ্ধে দিনভর এত এত স্লোগান, বিদ্রোহ, অবরোধ― তাকে দেখে কিনা কবিকুল হর্ষধ্বনি দিচ্ছেন! এক এসআই তার অধীনস্থ কনস্টেবলের কানে কানে বললেন, ‘রসুন দেখেছ তো? কোঁয়াগুলো আলাদা, কিন্তু পুটকিটা ঠিক এক জায়াগায়, বুঝলে?’ কনস্টেবল মাথা দোলায়।
হাত ধরে ডক্টর আসাদুল হক চৌধুরীকে মাঠে নামিয়ে আনলেন তরুণ কবিদল। বয়সের ভারকে উপেক্ষা করে বৃষ্টিস্নানে মেতে উঠলেন তিনি। অবিরাম বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে কবিকুল সমবেত কণ্ঠে গান ধরলেন : না থাকে অন্ধকার, না থাকে মোহপাপ/না থাকে শোকপরিতাপ/হৃদয় বিমল হোক, প্রাণ সবল হোক/বিঘ্ন দাও অপসারি/কেন এ হিংসাদ্বেষ, কেন এ ছদ্মবেশ/কেন এ মান-অভিমান/বিতর বিতর প্রেম পাষাণহৃদয়ে/জয় জয় হোক তোমারি/বরিষ ধরা মাঝে শান্তির বারি…।’
বৃষ্টির গতিবেগ বাড়তে থাকে। শান্তির বারিপাত ভাসিয়ে দিতে থাকে চারদিক।
০১.০৬.২০১৭