দেবকুমার সোম
কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক
'অপমান' এই বোধ সব সময় ব্যক্তিগত নাও হতে পারে। অপমান-কে দুটো ভাগে ভাগ করে নেওয়া যায়। প্রথমটা ব্যক্তিগত। দ্বিতীয়টা সামাজিক
কথায় বলে যার নেই মান, তার আবার অপমান? ঘুরিয়ে বললে বলতে হয় মানী লোক না হলে অপমানিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। যদিও আমাদের ব্যবহারিক জীবনে ‘মান’-নির্বিশেষে অপমানের পালা চলতে থাকে। ফলে মান না থাকলে অপমানও অসাড় এমনটা নয়। অপমানের প্রসঙ্গে কথা বলতে গেলে সম্মান, অভিমান ইত্যাদি কৃৎ প্রত্যয় যোগের শব্দগুলোও পাশাপাশি এসে দাঁড়ায়, তখন বলার কথাটাও ঘেঁটে যায়। ফলে শব্দকল্পদ্রুম-এর কানাগলিতে না ঢুকে আমি সরাসরি অপমান নিয়েই কিছু আলোচনা করতে চাইছি।
‘অপমান’ হল বোধ কিংবা অনুভূতি, সেটা আর পাঁচটা অনুভূতির মতোই ব্যক্তির অন্তর্গত ব্যাপার। অর্থাৎ অপমানের মিটার বাড়াকমা নির্ভর করে নির্দিষ্ট ব্যক্তির বোধের ওপর। যে কারণে ধরেই নেওয়া হয় অপমান বড় বেশি আপেক্ষিক এবং তাৎক্ষণিক। সংবেদনশীল মন যার, তার দুনিয়াটা অপমানে অপমানে ভরপুর। সামান্য কারণে সেই মানুষটা অপমানিত বোধ করে থাকে— এ বড়ই ব্যক্তিগত এক অনুভূতি। আবার সংবেদনশীলতাই একজনের অপমানিত হওয়ার মিটার নয়, প্রখর আত্মসচেতন মানুষও বিভিন্ন ক্ষেত্রে অপমানিত বোধ করে থাকে। সংবেদনশীলতা, আত্মসচেতনতার বাইরে আরও একটা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কারণে মানুষ অপমানিত বোধ করতে পারে— সেটা হল আত্মগরিমা। এসব নিয়ে পরে আলোচনা করা যাবে, আগে অপমানের জাতপাত ব্যাপারটা দেখা যাক।
রবীন্দ্রনাথের ‘অপমানের হতে হবে তাহাদের সবার সমান’ সাব-অল্টার্ন বিষয় হিসেবে ধরে নিলেও এটা বলা বোধহয় সরলীকরণ যে, অপমান সর্বার্থে ব্যক্তিগত এক অনুভূতি। নিশ্চিত তেমনটা হলে অপমান নিয়ে এমন সাতকাহনের দরকারই হত না— বরং অপাচ্য এবং ‘একান্ত ব্যক্তিগত’ এমন ট্যাগ লাগিয়ে বলা যেত Not for Sale। ব্যক্তিমানুষ ছাড়াও জাতি, ধর্ম, সমাজ, রাষ্ট্র, এমনকি ঐতিহাসিক চরিত্রের ক্ষেত্রও অপমান খুব গভীরে অনুপ্রবিষ্ট। ফলে জাতধর্মের অপমান, দেশ-সমাজ কিংবা বর্ণভেদের অপমান, চামড়ার রঙের কারণে অপমান, ঐতিহাসিক চরিত্রের নবমূল্যায়নের নামে অপমান (বিদ্যাসাগরের মূর্তিভাঙা কিংবা টিপু সুলতানকে হিন্দুবিদ্বেষী দাগিয়ে দেওয়া ইত্যাদি)— এসবের কোনও সুরাহা হয় না। তাই এমন অপমান নিয়েও কিছু কথাচালাচালি করতে হবে।
বলা হয়ে থাকে শিল্পীরা সংবেদনশীল, ফলে তাঁরা প্রতিটা অপমান কুড়িয়ে নিয়ে, গুছিয়ে রাখেন— যেন ওয়ারড্রোবে গুছিয়ে রাখা ব্যক্তিগত জামাকাপড়। এর মধ্যে সাহিত্যে, বিশেষত কবিতায় এই অপমান তীব্র হয়ে ওঠে। কবিরা জাঁক করে বলেন তাঁরা নিত্যদিনের পাওয়া অপমানের ফুলগুলো নিয়ে মালা গাঁথেন; এদিক থেকে সুরকারেরাও দলছুট নন। এর দরুন কবিতা কিংবা গানে অপমান বিষয় হিসেবে স্বতঃস্ফূর্ত। গদ্যসাহিত্যও অপমান থেকে নির্মিত হয়ে থাকে, তবে চিত্রশিল্পের মতো এখানেও ব্যক্তিগত অপমানগুলোর চাইতে সামাজিক অপমানগুলো বৃহত্তর ক্যানভাস হয়ে ওঠাই দস্তুর।
এই পর্যন্ত এসে আমি বোধহয় বোঝাতে পারছি যে ‘অপমান’ এই বোধ সব সময় ব্যক্তিগত নাও হতে পারে। আমি আলোচনার সুবিধার জন্য অপমান-কে আপাতত দুটো ভাগে ভাগ করে নিচ্ছি। প্রথমটা ব্যক্তিগত। দ্বিতীয়টা সামাজিক।
ব্যক্তিগত অপমানের তারতম্য নিয়ে আগেই বললাম একটা মিটার আছে— যাকে বলব সংবেদনশীলতা, আত্মসচেতনতা, আত্মগরিমা এমন। এটা নির্ভর করে ব্যক্তির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ওপর। ফলে মিটারের বাড়াকমা সংবেদনশীলতা, আত্মসচেতনতা কিংবা আত্মগিরমা এই তিনটের একটা বা একাধিক বৈশিষ্ট্যের ওপর নির্ভরশীল। এর দরুন একই ঘটনার প্রতিক্রিয়া দুজন মানুষের কাছে দু-ধরনের অভিঘাত আনতে পারে। ফলে তা অপমান কিংবা অপমান নয় এটা আপেক্ষিক হয়ে যায়। ধরা যাক আমি আর আপনি দুজনে একই ব্যাঙ্কের একই শাখায় গেছি পাসবই আপডেট করতে। যিনি আপডেট করবেন তিনি আজ ছুটিতে, ফলে অন্য কারও ঘাড়ে বাড়তি বোঝা হিসেবে চেপে বসেছে কাজটা। তিনি অবহেলা করে কাজটা করছেন— বিরক্তি প্রকাশ করছেন। আপনি এমন আচরণকে স্বাভাবিক এক সামাজিক বিচ্যুতি হিসেবে মেনে নিলেন, কিন্তু আমি পারলাম না। আমার মনে হল ব্যাঙ্কের ওই কর্মী আমাকে অপমান করলেন, যার কোনও তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া না থাকলেও আমি অপমান থেকে সিদ্ধান্ত নিলাম এবার থেকে অন্য কোনো ব্যাঙ্ক/শাখায় যাব, কিংবা ওখানে যেতে বাধ্য হলেও উদ্দিষ্ট কর্মীকে এবার থেকে এড়িয়ে যাব। অপমানিত হলেও আমি কিন্তু কর্তৃপক্ষের কাছে সংশ্লিষ্ট কর্মীর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ জানাব না। এখানে এটা খেয়াল রাখতে হবে অপমানিত ব্যক্তি তার বোধ বা অনুভূতিকে সচরাচর স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রকাশ করে না, যদিনা বাইরের কোনও শর্ত বা ইন্ধন থাকে। তাই, ব্যাঙ্ককর্মীর অপমানকে আমায় মেনে নিতে হবে, মানিয়ে নিতে হবে; কারণ ব্যক্তিগতভাবে এমন অপমানের বদলা নেওয়া অবাস্তব একটি ধারণা।
খতিয়ে দেখলে বোঝা যাবে আমার এই অপমানবোধের কারণ আমার সংবেদনশীলতা নয়, বরং আত্মসচেতনতা আর আত্মগরিমার মিলমিশ। আত্মসচেতনতা আর আত্মগরিমা দুটোই মানুষের ভেতরকার চারিত্রিক উপাদান হলেও তা গড়ে ওঠে সামাজিক কাঠামোর ওপর। বিষয়টা একটু ভেঙে দেখা যাক। আত্মসচেতন মানুষকে আমরা বলি ইমেজ কনসাস। কোথাকার ইমেজ? না, সামাজিক এবং পারিবারিক। আত্মসচেতন মানুষ নীরবে অন্যের কাছ থেকে সম্মান যাচ্ঞা করে। সে তার সামাজিক বৃত্তে কাজে-কথায়-আচরণে বাকিদের থেকে একটু আলাদা, বিশিষ্ট এমন একটা প্রতিমা খাড়া করে তোলে অনেকটা খোলসের মতো। আত্মসচেতন মানুষ অপমানিত হলে ভুলে যায় না, কিংবা বাথরুমে বসে কাঁদে না। বরং পারলে সেই অপমানটা পরিচিতবৃত্তে ছড়িয়ে দিয়ে ‘বদলা’ নেওয়ার প্রস্তুতিও জানিয়ে দেয়। কারণ যে ঘটনাটাকে সে অপমান বলছে, সেটা তার ব্যক্তিমানুষের আত্মপরিচয়ের সঙ্কট হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই কারণে যেটা অপমান বলে ধরা হল, সেটা আর ঠিক অপমান না থেকে ব্যক্তির খামতি বা ত্রুটি হিসেবে চিহ্নিতকরণ করা যায়। যেমন ব্যাঙ্কের ঘটনাটায় শুধু ওই কর্মীই নন, তাঁর ব্যাঙ্কের ইমেজের ওপরও প্রশ্নচিহ্ন তুলে দিতে পারে আমি যদি সামাজিকভাবে ক্ষমতাশালী কিংবা সুবিধাজনক জায়গায় থাকি। অর্থাৎ বদলাটা তখন অসন্তোষে পরিণত হয়।
এবার দেখা যাক যার আত্মগরিমা আছে তার ক্ষেত্রে ব্যাপরাটা কেমন? মানুষটা ক্ষমতাবান হলে তো কথাই নেই— সুযোগমতো এর বিহিত করবে কিংবা করার চেষ্টা করবে। আর ক্ষমতাহীন হলে অপমান তাকে ভেতর থেকে কুড়ে কুড়ে খাবে নিস্ফলের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ার মতো। যেমন শিশুরা অপছন্দের শিক্ষকের কাছে কিংবা আত্মীয়-পরিচিতজনদের কাছ থেকে সরে থাকতে চায়, অমনোযোগী হয়ে পড়ে। তারাও অপমানিত বোধ করে, তবে সেটা আত্মগরিমার অভাব থেকেই অভিভাবকদের বলে উঠতে পারে না। মানে আমি বলতে চাইছি বয়সনির্বিশেষে সব মানুষেরই অপমানবোধ থাকে। বলা ভাল আত্মগরিমা একটা পর্যায় পর্যন্ত মানসিক সুস্বাস্থ্যের সূচক হলেও সেটাই যখন বেড়ে-চড়ে যায়, তখন তা মানসিক দৈন্য কিংবা অসুখ হয়ে দাঁড়ায়। যে কারণে ‘সুস্থ আত্মগরিমা’র মানুষেরা অপমানিত হলে সেটা আড়ালে রাখতে চায়, বিষয়টা নিয়ে বড় একটা কথা বলে না। যদিও বদলা না নেওয়া অবধি অপমান তাদের কাছে অপাচ্য থেকে যায়।
যেখানে ব্যক্তিগত অপমানগুলো সংবেদনশীলতার ওপর দাঁড়িয়ে থাকে, সেখানে সূক্ষ্ম ভাগ-বাঁটোয়ারা রয়েছে। সংবেদনশীলতা শিশুমনে সবচেয়ে প্রখর। যারা বেড়ে উঠে বুড়ো হয়ে মরতে বসলেও মনের ভেতর তাদের শৈশবকে লালন করে, তাদেরও সারাজীবনের ভবিতব্য নিরবচ্ছিন্ন অপমানে অপমানে জর্জরিত হওয়া। উদাহরণ দিই: সামাজিক অনুষ্ঠান-বাড়িতে ভোজের আয়োজন হয়েছে। বাবা-মায়ের সঙ্গে তিনবছরের শিশুটাও খেতে বসেছে। কিন্তু বাবা-মা তার জন্য আলাদা কোনও প্লেট না নিয়ে মায়ের প্লেট থেকেই তাকে খাওয়াচ্ছেন। সে খাবে না। সে মা-বাবার অবাধ্য হচ্ছে। কাঁদছে। বাইরের লোকের কাছে নিজেরই বাবা-মাকে অপদস্থ করছে। এমন ঘটনা আমরা হরহামেশাই দেখি। বাবা-মায়ের যুক্তি এইটুকু বাচ্চার জন্য আলাদা প্লেট নেওয়া মানে খাবার নষ্ট, সেটা খুব স্বাভাবিক যুক্তি। কিন্তু শিশুটার সংবেদনশীল মন বলছে সেও একজন আমন্ত্রিত, তাই সব আমন্ত্রিতের জন্য যেমন ব্যবস্থা, তারও সেটা প্রাপ্য। এখানে এই ‘প্রাপ্য’ শব্দটার দিকে আমরা একবার নজর দিই। এই প্রাপ্তি কিন্তু সম্মানপ্রাপ্তি, মানুষ হিসেবে সম্মান আবার ব্যক্তি হিসেবেও সম্মান। সংবেদনশীলতার কারণে মানুষ যখন অপমানিত হয়, তখন তার আত্মসম্মানবোধে আঘাত লাগে বলেই সে আহত হয়। আবার দেখুন আত্মসম্মান ব্যাপারটা আত্মসচেতনতার পিঠোপিঠি। একজন তিন বছর বয়সের শিশুর আত্মসচেতনতা তেমন প্রখর নয়, তার সংবেদনশীলতা এখানে কাজ করছে। আর যে মানুষটা যথেষ্ট বড় আর বুড়ো হয়েও সংবেদনশীল, তার মধ্যে কিন্তু নীরবে এই সচেতনতা প্রবল হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ফলে মানুষটা যেমন অন্যদের সম্মান করতে স্বচ্ছন্দ, তেমনই বিপরীতে আশা করে অমন ব্যবহার তারও প্রাপ্য। তবে বাস্তবে যেটা দাঁড়ায় সেটা হল যাকে সম্মান করা হচ্ছে, সে কিন্তু ব্যাপারটাকে আদৌ তেমন পাওনাগণ্ডার মধ্যে আনতে চায় না। এখানে তাই লাগসই বাক্যটা ইংরাজিতেই বলতে হয়: Taken to be granted। উদাহরণে আসি: বইমেলার ভরা মাঠে একজন তরুণী-কবি বয়স্ক-অনামী এক লেখকের সঙ্গে কথা বলতে বলতে হঠাৎ একজন প্রভাবশালী কবিকে পেয়ে বয়স্ক লেখককে দাঁড় করিয়ে রেখে চলে গেলেন। অথবা, পারিবারিক পরিসরে স্ত্রী তাঁর কোনও সমস্যার কথা স্বামীকে বলছেন, তখন স্বামী মোবাইলে ফেসবুক করছেন। এই দুটো আচরণ মূলত উপেক্ষা, যা এক ধরনের ব্যক্তিগত অপমান।
আমি এই যে ‘উপেক্ষা’ শব্দটা ব্যবহার করলাম, এই উপেক্ষা এক অর্থে অপমান হয়ে দাঁড়ায় সংবেদনশীল মানুষের কাছে। সংবেদনশীলতা ছাড়াও স্পর্শকাতরতাও তখন বিচার্য বিষয় হয়ে যায়। আমরা বলি ফুলের ঘায়ে মূর্চ্ছা যাওয়া। স্পর্শকাতরতা মানুষের একটা আবেগ; কোনও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নয়। আমরা প্রত্যেকেই কোনও-না-কোনও বিষয়ে স্পর্শকাতর। বিশেষত ধর্মীয় ব্যাপারে আর নরনারীর প্রেমের ক্ষেত্রে। যে কারণে এই দুই ক্ষেত্রে সহিংসা খুব স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। বাকি আবেগগুলোর মতো মানুষের স্পর্শকাতরতাও খুব সামান্য সময়ের ব্যাপার— স্ফুলিঙ্গ বলা যায়। ফলে ওই বিশেষ মুহূর্তে সংবেদনশীল না হয়েও কেউ অপমান বোধ করতে পারে। যেমন প্রেমের সময় প্রেমিকার মুখে যদি অন্য পুরুষের নাম বারবার উচ্চারিত হয়, কিংবা উলটোটা, তবে অন্যজনের কাছে অজান্তেই এমন ব্যবহার অপমানজনক হয়ে ওঠে। সবার সামনে নিজেকে জাহির করতে চেয়ে অন্যকে বিনা কারণে হেয় করার মধ্যেও অপমানের একটা চলন থাকে। যাকে উপেক্ষা করা সংবেদনশীল মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। আবার একটা উদাহরণ দিই— একজন অধ্যাপক নিজের ছাত্র কিংবা ঘনিষ্ঠ পরিসরে যখন কোনও সহকর্মী সম্পর্কে কু-মন্তব্য করেন, তখন সেখানে উপস্থিতদের মধ্যে যারা সংবেদনশীল তারাও অপমানিত বোধ করতে পারে। এ তো গেল নির্দিষ্ট আচারণগত অপমান। মানুষের সার্বিক চরিত্রগত কারণেও অন্য কেউ অপমানিতবোধ করতে পারে। যেমন দুজন মানুষ একজন সরকারি আমলা, অন্যজন বেসরকারি সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তা। দুজনে কোনও একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির কাছে কাজের প্রয়োজনে গেছেন। দেখা গেল আমলা মানুষটাকে প্রভাবশালী ব্যক্তিটি সম্মান জানাতে যেমন উদগ্রীব হলেন, অপরজনের জন্য তেমনই রইল নীরব অবহেলা। দ্বিতীয়জনের কাজটা আমলা মানুষটার কাজের থেকে কম গুরুত্বপূর্ণ তেমন নয়, বরং হয়তো বেশিই, তবু ব্যক্তিস্বার্থের কারণে তিনি অপমানের স্বীকার হলেন। নীরবে মেনেও নিলেন এমন অসম ব্যবহার, কারণ তাঁর ক্ষমতা সীমিত অথবা চরিত্রগত দিক থেকেই তিনি তেমন প্রখর ব্যক্তিত্বসম্পন্ন নন।
ব্যক্তিগত পরিসরের অপমানগুলো দু-ধরনের। একটা অপমানকারীর অজান্তেই ঘটে যায়; মানে তার অনবধানের কোনও আচরণ বা চলন উলটোদিকের মানুষটাকে বেজায় অপমানের মধ্যে ফেলে। এই অনবধান একটা বিচ্যুতি সেটা নিয়ে সন্দেহ নেই, তবে এর মধ্যেও আবার দুটো ভাগ রয়েছে। একজনের স্বভাবই এমন যে সে অন্যদের ধারাবাহিকভাবে অপমান করে ফেলে। এটা ঘটে মূলত আত্মগরিমা যখন মানসিক ব্যাধি হয়ে ওঠে তখন। ‘সে সুন্দরী, ফলে ডাঁটে থাকে।’ ‘আমার প্রচুর টাকা আমি কাউকে পাত্তা দিই না।’ এগুলো হল মনের ভেতর তৈরি হওয়া ক্ষত, যা শেষমেশ উলটোদিকের মানুষকে আচরণগতভাবে অপমান করে বসে। আর দ্বিতীয় ধরণটা তাৎক্ষণিকভাবেই ঘটা, যা সচরাচর ঘটে না। যেমন বইমেলার ঘটনা, অথবা পারিবারিক ক্ষেত্রে বাবা আর সাবালক ছেলের মধ্যেকার আচরণ। এখানে যে অপমানিত হল সে যদি পালটা দু-কথা শুনিয়ে দেয় তবে সেটা অবশ্য আর অপমান না হয়ে সাংসারিক অশান্তি হয়ে দাঁড়ায়। আত্মগরিমা যখন ব্যাধি হয়ে ওঠে, তখন মানুষটা আর অপমানিত হয় না, বরং অন্যকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের মধ্যে দিয়ে অপমান করে চলে। যেমন— ‘ও কিছু জানে না’ বা ‘বাপ-মায়ের শিক্ষা’ নেই এমনতর তাৎক্ষণিক মন্তব্য।
এবার বলি অপমানের আর একটা দিক। অপমান সবসময় যে তাৎক্ষণিক তা নয়। পরিকল্পিতভাবেও অপমান করা যায়। আমাদের ব্যক্তিগত পরিসরে এমন পরিকল্পনার ঊর্বর জমি হল সংসার আর কর্মক্ষেত্র। আমরা এই দুই জায়গায় তাদেরকেই অবিরত অপমান করে থাকি যারা অপেক্ষাকৃতভাবে দুর্বল। যেমন বাপের ঘর ছেড়ে আসা নতুন বউকে ফুলশয্যার পরদিন থেকেই পরিকল্পিতভাবে অপমান করা শুরু, কিংবা স্বামীর তার আর্থ-সামাজিক অবস্থানের জায়গা থেকে স্ত্রীকে প্রতিনিয়ত অপমান করা। অসবর্ণ কিংবা ভিনধর্মে বিয়ের কারণে শ্বশুরবাড়িতে বউ কিংবা জামাইকে নিচু নজরে দেখা। এসবই পরিকল্পিত অপমান হয়ে ওঠে সংবেদনশীল মানুষের কাছে। একইভাবে সেলস টার্গেট অ্যাচিভ করতে না পারা এক্সিকিউটিভ কিংবা বস-কে খাতির না করে চলা কর্মী অফিসে সবসময় অপমানের টার্গেট হয়ে যায়। সংবেদনশীল মন তখন হয় বাথরুমে গিয়ে চোখে জলের ঝাপটা দেয়, কিংবা খুব নিকট ভেবে কারও কাছে আত্মসমর্পণ করে। আবার বলি এগুলো (অর্থাৎ ব্যক্তিগতস্তরে পরিকল্পিত) অপমান কিনা, তার বিচার কোনও আদালতে হওয়ার জো নেই; এটা সম্পূর্ণ ব্যক্তিমানুষের মানসিক কাঠামোর ওপর দাঁড়িয়ে।
পরিকল্পিত ব্যক্তি-অপমানের আর একটা দিক আছে, সেটা হল টেকনোলজি-নির্ভর। আমি পরিকল্পিতভাবে কাউকে অপমান করতে চাই, তাকে মোবাইল ফোনে কিংবা সামাজিক মাধ্যমে ব্লক করে দিলাম। কিংবা তার সম্পর্কে সামাজিক মাধ্যমে কুৎসা রটাতে লাগলাম এমনভাবে, যাতে পরিচিতজনেরাই কেবল বোঝে উদ্দিষ্টজন কে। আবার এও হতে পারে সেই মানুষটা আমাকে ফোন করছে, বা হোয়াটস্অ্যাপ, আমি উত্তর দিচ্ছি না। এমন অপমান পরিকল্পিত হলেও তা করা যায় তাকেই যে সামাজিক নিয়মে আমার সমগোত্রীয়। সে যদি সামাজিক মাপকাঠিতে আমার চেয়ে উঁচু কিংবা নিচু হয়, তবে সেটা ঠিক ওভাবে করা যায় না। তাই এমন পরিকল্পিত অপমান বন্ধু, সহকর্মী, ছাত্র-ছাত্রী, প্রেমিক-প্রেমিকাদের মধ্যেই আকছার দেখা যায়।
টেক্সট বইয়ে পড়া রবীন্দ্রনাথের বহুখ্যাত কবিতার লাইনটা শুরুতেই বলেছি। এবার আমি সেই পরিসরে অপমান কীভাবে কাজ করে একটু দেখে নিতে চাইছি। সামাজিক ক্ষেত্রে অপমান সবসময় পরিকল্পিত। অর্থাৎ সামাজিক অবস্থান থেকেই আমরা একে অপরকে প্রায় কোনও কারণ ছাড়াই অপমান করে থাকি। এই অপমান বহু ক্ষেত্রেই প্রবল হওয়া সত্ত্বেও আমরা অপমান হিসেবে চিহ্নিত না করে বৈষম্যের ব্র্যাকেটে ফেলতে চাই, কিন্তু ব্যাপারটা তেমন সরল নয়। দুজন খদ্দের একই মাছওলার কাছ থেকে মাছ কিনছেন। একজন মাছের দিকে আঙুল দেখিয়ে বলে যাচ্ছেন— ‘ওটা এক কেজি দাও, ওটা পাঁচশো। আরে এত দিও না পাঁচশোই দাও’ ইত্যাদি। মাছওলা বিগলিত হয়ে তাঁরই সেবা করছেন। আর অন্য লোকটা ছোট ছোট কয়েকটা মাছ বেছে অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছেন, বলছেন— ‘দাদা, ও দাদা এটা একটু ওজন করে দিন না।’ লক্ষ করে দেখুন দুজনের মাছ কেনার ধরনের সঙ্গে আত্মসচেতনতাও কীভাবে কাজ করছে। একজন অবলীলায় তাঁর চেয়ে বয়সে বড় মাছওলাকে ‘তুমি’ সম্বোধন করে নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছেন, আর মাছওলা তাঁর কথা পালন করছেন। উলটোদিকে অন্যজন মাছওলাকে সম্মান জানিয়ে একটা অনুরোধ রাখছেন, সেটা অগ্রাহ্য হচ্ছে। এর অর্থ এই নয় যে, তিনি আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা মানুষ। বরং একজন শিক্ষিত আত্মসচেতন নাগরিক, যিনি শিশুবয়স থেকেই হয়তো শিখেছেন মানুষকে ‘আপনি’ বলে সম্মান জানাতে হয়। ধরে নেওয়া যায় মাছওলা তাঁর শিক্ষাগত কারণে এতটা ভাবতে পারেন না। কিন্তু ওই মানুষটি? তিনি যদি সংবেদনশীল হন, তবে কি তিনি অপমানিত বোধ করবেন না?
একইভাবে আমরা আমাদের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি অপব্যবহার করে শবর-লোধাদের চোর-ডাকাত বানিয়ে দিয়েছি। বাঙাল-ঘটি ভাগ করে নিয়েছি। মুখ্যুসুখ্যু মানুষকে গেঁয়ো-ভূত, ওডিশার লোকেদের উড়ে, বিহারের লোকেদের খোট্টা আর পাহাড়ের মানুষদের নির্বিচারে নেপালি বলে ব্যঙ্গ করতে শিখেছি। জাতিগতভাবে এমন অপমানে প্রতিপক্ষকে ধরাশায়ী করা সভ্যতার এক সামাজিক ব্যাধি, যা থেকে সাদা-কালো, পূর্ব-পশ্চিম কেউ বাদ যায় না।
ধর্মের ক্ষেত্রেও তাই। ‘নেড়ে’ কিংবা ‘মালাউন’ শব্দদুটো ধর্মগুরুদের সৃষ্ট শব্দ। সমস্যা হল এগুলোকে ঠিক সামাজিক অবজ্ঞা বা অপমান হিসেবে আমাদের চিনতে দেওয়া হয় না। এই একই সূত্রে রাজনীতির কথাও তো এসে যায়। আমরা ভোটে একটা নির্দিষ্ট দলের বিরুদ্ধে অন্য একটা দলের প্রার্থীকে জেতালাম। আর সেই জয়ী প্রার্থী কী করলেন? ক্ষমতায় থাকার জন্য জিতেই সেই দলে চলে গেলেন, যে দলের বিরুদ্ধে আমরা দল বেঁধে ভোটটা দিয়েছিলাম। এটা ভোটারদের প্রতি অপমান নয়? এমন আচরণ নৈতিকতার স্খলন বলে ব্যাখ্যা করে লঘু করা যায় না। কারণ গণতন্ত্রে ভোটারই শেষ কথা এমনটা বলে থাকে দেশের নির্বাচনব্যবস্থা। একইভাবে ক্ষমতাসীন সরকারের আর্থ-রাজনৈতিক আর ধর্মীয় মেরুকরণ বিপরীত ধর্মের মানুষজনকে পরিকল্পিতভাবে ধারাবাহিক অপমান করে যাওয়ার নজির। খবরের কাগজ, সিনেমার পরিচালক/প্রযোজক, লেখক/প্রকাশক, অধ্যাপক/বিজ্ঞানীরা তাঁদের কাজের জায়গায় এবং সামাজিক মাধ্যমে তথ্যের বিকৃতি ঘটিয়ে এমন পরিকল্পিত অপমানগুলোকে মান্যতা দেন। একইভাবে ভোটের কৌশল হিসেবে অসহায় কিংবা গরিব মানুষদের পাইয়ে-দেওয়া রাজনীতির শিকার বানানো মানবতার অপমান।
এবার আসা যাক ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব কিংবা সৌধের প্রতি অপমান। ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বদের বিভিন্ন সময়ের প্রেক্ষিতে বিচার-বিশ্লেষণ করা হয়, হবেও। তবে সেই ব্যক্তি কিংবা তাঁর কীর্তিকে অপমান করার লঘু উদ্দেশ্য নিয়ে এমন বিচার-বিশ্লেষণ করলে তাকে ইতিহাসের অপমান বলতে হয়। ইতিহাস এমন একটা বিষয়, যাকে পালটানো যায় না, তাকে বিচার করা যায় না, কেবল বিশ্লেষণ করা যায় আর তার থেকে শিক্ষা নেওয়া যায়। এর উলটোটা হলে সভ্যতার কল্যাণ হয় না, হতে পারে না। মানুষের সভ্যতা, কিংবা একটা জাতি বা দেশের সভ্যতা ঠিক কোন দিশায় যাবে, তা বহুলাংশে ঠিক হয় সেই সভ্যতা বা জাতির ইতিহাসচেতনা থেকে, সেটা খুব সামান্য জিনিস নয়। ঐতিহাসিক ভুলগুলোকে বিশ্লেষণের নামে রায়দান করলে সামাজিক পতন অবশ্যম্ভাবী।
অপমানিত ব্যক্তির প্রতিক্রিয়া কেমন হতে পারে? প্রথমে বলে নেওয়া ভাল প্রতিটা মানুষ অপমানের বদলা নিতে চায়, এটা মানুষের একেবারের ভেতরে বোঝাপড়া। যারা নিতান্ত অহিংস, তারাও অপমানকে হেলাফেলা করে না, করতে পারে না। শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলেই অপমানের বদলা নেয়। দেশ-জাতি-ধর্মও নেয়। যেমন নেয় প্রকৃতি। প্রকৃতির মধ্যেই আছে বদলা নেওয়ার এই প্রক্রিয়া।
এখন কথা হল একজন মানুষ অপমানিত বোধ করলে তার মধ্যে দুটো প্রতিক্রিয়া প্রত্যাশিত। মানুষটা যদি অন্তর্মুখী স্বভাবের হয়, তবে সে অপমান চুপচাপ হজম করে নেবে। সামনে কোনও প্রতিক্রিয়া দেখাবে না। দুই, বহির্মুখী স্বভাবের হলে প্রকাশ করে ফেলবে। যে কারণে অন্তর্মুখীর প্রতিক্রিয়া পরিকল্পিত পথেই সফল বা ব্যর্থ হয়।
যারা অসহায় তারা এমন অপমান মুখ বুজে সহ্য করে। তারপর একদিন তার নিজস্ব সহ্যের সীমাটা পার হলে মুখোমুখি হয়। তখন তার হাতে অদৃশ্য ক্ষেপণাস্ত্র। তবে এমনটা কেবল দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কের ক্ষেত্রেই ঘটতে দেখা যায়। আর যারা সহ্য করতে পারে না, তাদের গলার কাঁটার মতো থেকে যায় অপমানগুলো, তারা উলটোদিকের মানুষটাকে বিন্দুমাত্র বুঝতে না দিয়েই নিজেদের গুটিয়ে নেয়, সরে যায়, সম্পর্কের ব্যাপারে আর তেমন স্পর্শকাতর থাকে না। এককথায় এমন ধারাবাহিক অপমানের কারণে তারা সম্পর্ক থেকে মানসিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কে ধারাবাহিক (প্রায়শ পরিকল্পিত) অপমানের এই হল অবশেষ। সামাজিক ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা তেমন, তবে সেখানে প্রত্যাঘাত দেরিতে এলেও খুব মর্মান্তিক হয় সে বিষয় কোনও সন্দেহ নেই— ইতিহাস তার সাক্ষী।
যেখানে এমন কোনও দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক নেই, সেখানে অপমানিত ব্যক্তির প্রতিক্রিয়া কেমন দেখা যাক। এমন জায়গায় যেখানে পারস্পরিক সম্পর্কটা আলগা, সেখানে অপমানের তেতো থুথু গলধঃকরণ করে মানুষটা হয় সরে আসে, সে তার আবেগগুলো গুটিয়ে নেয়— এটা ঘটে সংবেদনশীল মানুষের ক্ষেত্রে। কিংবা অপমান সহ্য করতে না পেরে হিংস্র হয়ে ওঠে। ষড়যন্ত্র তৈরি করে— এক অপমানের জবাবে দশরকম অপমানের ব্যবস্থা করে।
এর বাইরে আর একটা প্রতিক্রিয়া থাকে, সেটা হল নিঃশব্দে অপমানের বদলা। একজন মানুষ উদ্যমী এবং সৃষ্টিশীল এই দুটোর মিশেল হলে সে সত্যিই তার ওপর ঘটে যাওয়া যাবতীয় অপমানকে গলার মালায় পরিণত করতে পারে। এই পৃথিবীতে সাফল্যের মূল সূত্র এক হিসেবে অপমানকে বিষের মতো কণ্ঠে ধারণ করে নীলকণ্ঠ হওয়া। অঙ্কে শূন্য পেয়ে সকলের সামনে কানমলা খাওয়ার অপমান থেকেই গণিতশাস্ত্রের পণ্ডিত হওয়া যায়। পারিবারিক বা সামাজিক পরিবেশে প্রতিনিয়ত অপমানিত হয়ে সেগুলোকে কাজ লাগিয়ে নিঃশব্দে লক্ষ্যে পৌঁছে যাওয়া কোনও ইন্দ্রজাল নয়।
অপমান সবসময় প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা-নির্ভর নাও হতে পারে। শিশুকালে মায়ের প্রতি বাবা কিংবা পিসি-ঠাকুমার অপমান বড় বয়স পর্যন্ত বহু মানুষকে তাড়িয়ে বেড়ায়। তারা মায়ের অপমানের বদলা নিতে পারিবারিক কাঠামোকেই অস্বীকার করে (মানে ‘কে দাদু? কেইবা পিসি?’ এমন ভাব)। আবার জাতিগত বিদ্বেষ থেকে সাদা চামড়ার মানুষদের আমাদের অপমান করার অধিকার, কিংবা আবাসনের লিফটম্যান, কিংবা ক্যুরিয়ার সার্ভিসের ছেলেটাকে অপমান পরোক্ষ। সেখানে যাকে অপমান করা হয় ঘটনার জন্য সে দায়ী না হয়েও অপমানের ভাগিদার।
শুরু করেছিলাম ব্যক্তিগত অপমান নিয়ে। যে অপমানগুলো একজন সৃজনশীল মানুষকে শিল্পী হিসেবে পূর্ণতা দেয় কিংবা একজন উদ্যমী পুরুষকে সাফল্য। শেষ করি এমন এক অপমানের ঘটনা দিয়ে, যা ব্যক্তিগত হয়েও কীভাবে যেন একটা দেশের, সময়ের সামগ্রিক অপমান হয়ে উঠেছিল। ১৮৯৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার পিটারমারিটজবার্গ রেল স্টেশনে কালো চামড়ার মানুষ বলে জনৈক মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধিকে যে অপমান করেছিল ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তি, তাই পরবর্তীকালে হয়ে উঠল সত্যাগ্রহ— অপমানিত, অবহেলিত মানুষের অস্ত্র। আমেরিকার ফার্স্ট লেডি ইলিনর রুজভেল্ট যেমনটা বলেছিলেন, ‘No one can insult you without your permission.’ তেমন বুকের পাটা সংবেদনশীল-স্পর্শকাতর মানুষদের থাকার কথা নয়। বরং তারা মনে মনে প্রার্থনা করে— ‘আমাকে সম্মান তুমি নাই করতে পারো; অপমান করার কোনও অধিকার তোমার নেই।’