বিশ্বদীপ চক্রবর্তী
পূর্ব প্রকাশিতের পর
চাতকপ্রাণ
এক.
পিসি একটা কাঠের বাক্সে ছবি রাখত। বেশ অনেকগুলো। সাদা কালো। না, না কিছু আবার সাদা আর বাদামী যেন। রং বদলে যাওয়া বাদামী নয়। সে তো কিছু ছবি হলদে হয়ে গিয়েছিল। সে অন্যরকম। কেন বাদামী ছবি পিসি বলতে পারেনি। কিন্তু শানু জিজ্ঞেস করেছিল পিসিকে সেই কথাটা স্পষ্ট মনে আছে। কী করে সেটাই অদ্ভুত। তার নাকি কিছু মনে থাকে না। কত সময় সে কথা হাতড়ে বেড়ায়, লোকের নাম ভুলে যায়। কিছুতেই মনে করতে পারে না। অথচ পিসির সঙ্গে এক সন্ধ্যায় বসে ওই বাক্স খুঁজে খুঁজে ছবি দেখছে সেসব পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মনে আছে, সিনেমার মত। পিসি কুরুশের সেলাই করছিল চেয়ারে বসে। শানু বাক্স থেকে একটা একটা করে ছবি বের করে দেখছিল। গোটা দশেক হবে হয়তো। পিসি যখনই আসত ওদের বাড়ি, বাক্সটা সঙ্গে করে নিয়ে আসত। বলত এসব না দেখলে পিতৃপুরুষকে তো ভুলে যাবে সুতপা। এও একরকমের তর্পণ। কথাগুলো অবধি মনে আছে কেমন গোটা গোটা, যেন কালকের ঘটনা। কান পাতলে পিসির গলার স্বরের ওঠানামাও কি ধরতে পারবে? মনের কান বাড়িয়ে শোনার চেষ্টা করল শানু। অনেকটা খেলার মত। একদিন সুকুর সঙ্গে খেলতে হবে এই খেলাটা। না, অতটা মনে নেই। কিন্তু তবুও! কেন অনেক কথা সে একদম ভুলে ছটফট করে যন্ত্রণায়, টিনের মুড়ির মত মাথা ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়েও হদিশ করতে পারে না, আবার কিছু কথা বায়োস্কোপের মত মনের পর্দায় ভেসে থাকে? ডক্টর সেনকে একবার জিজ্ঞেস করেছিল, কেন এরকম? সেও আজকে নয়, অনেকদিন আগে। প্রথম প্রথম যখন ওঁর কাছে যেত। কলকাতায়। ডাক্তার সেন বলেছিলেন, এটা সিলেক্টিভ মেমোরি লস। ডাক্তারি নাম ডিসোসিয়েটিভ অ্যামনেসিয়া। এরকম হলে কিছু কথা ভাল করে মনে থাকে, আবার কিছু একদম হারিয়ে যায়। আটকে থাকে মনের বন্ধ কুঠুরিতে। শানুর কত দরকারি কথা যে এমনিভাবে হারিয়ে গেছে। কিন্তু পিসির সঙ্গে সেই সন্ধ্যাটা যেন পাঁচশো ওয়াটের আলোর মত জ্বলজ্বল করছে একদম। স্পষ্ট।
পিসি কুরুশের কাজ করতে ভালবাসত। সাদা সুতো দিয়ে ঢাকনা বানাত। জলের গ্লাসের ঢাকনা, খাবারের ঢাকনা, টিপয়ের ঢাকনা, খাবার টেবিলের জন্য। তাদের বাড়িতেও রেখে গেছিল এরকম কত। ফুলকাটা, জাফ্রির মত। জালি জালি। কিন্তু কোথায় গেল সেগুলো? দেখেনি তো বহুদিন। খুব অস্থির লাগছিল শানুর। মা, মা!
সুতপা রান্নাঘরে ছিল। শানুর চিৎকারে কেমন আতঙ্কগ্রস্তের মত ছুটে এল। কী হয়েছে? কী হয়েছে রে শানু? শানুর জন্য একটা ত্রাস থেকেই যায়। এর আগে দুই-একবার এইভাবে ডাকতে ডাকতে পড়ে গেছে। আবার সাড়া না পেলে অস্থির হয়ে জিনিসপত্রও ছোড়াছুড়ি করেছে। হাত খালি থাকলে তাই শানুর ডাকে দেরি করে না সুতপা।
—কী হয়েছে শানু? কী হল?
—মা, পিসির দেওয়া অনেকগুলো কুরুশের ঢাকনা ছিল, কোথায় সব ওগুলো? খুব জরুরি দরকারি নথিপত্র হারিয়ে যাওয়ার ব্যস্ততা শানুর গলায়।
—আছে একটা ট্রাঙ্কে তোলা। খুব বিরক্ত লাগল সুতপার। এর জন্য এমন করে চেঁচিয়ে বাড়ি মাথায় তোলে কেউ?
হা হা করে হাসল শানু। বেশ বলেছ মা, মাথায় তোলে বাড়ি। কিছু একটা মনে পড়ে গলার মধ্যে একটা মজা ঘুরপাক খেল ঘূর্ণি হাওয়ার মত। সুকুমার রায়ের একটা কবিতা ছিল জানো, শুনবে? সুতপার বলার অপেক্ষা না করেই গড়গড় করে বলতে থাকে শানু—
—পরীক্ষাতে গোল্লা পেয়ে
হাবু ফেরেন বাড়ি
চক্ষু দুটি ছানাবড়া
মুখখানি তার হাঁড়ি
রাগে আগুন হলেন বাবা
সকল কথা শুনে
আচ্ছা করে পিটিয়ে তারে
দিলেন তুলো ধুনে
মারের চোটে চেঁচিয়ে বাড়ি
মাথায় করে তোলে
শুনে মায়ের বুক ফেটে যায়
হায় কী হল বলে।
যেন খুব আনন্দ তাই হাতে নাড়ু পাকাতে পাকাতে বলছিল শানু। অথচ চোখ চিকচিক করছে জমে থাকা কষ্টে। পঁয়ত্রিশ বছরের আধপাগল ছেলেকে নেচে নেচে বাচ্চাদের ছড়া বলতে দেখে ছটফট করছিল সুতপার অন্তরাত্মা। জোর করে ওকে থামানো যায় না, পারলে বুকে জড়িয়ে থামিয়ে দিত। সে চেষ্টা তো করেছে অনেক, কিছু হয় না। কিছু হয়নি। কী যে মেধাবী ছেলে ছিল তার, সারা দুর্গাপুরের গর্ব। এখনও কেমন গড়গড় করে কবিতা বলছে। কে বলবে মাথা খারাপ হয়ে গেছে, সব ভুলে ভুলে যায়? ছোটবেলা থেকে যা পড়ত, একবার দেখলেই হয়ে যেত। এমন যার মাথা, কোথা থেকে যে কী হয়ে গেল সেই ছেলের! আবার অস্বস্তিও হচ্ছিল সুতপার। জানে পরমেশ শুনতে পাচ্ছে পাশের ঘরে। বাঁচোয়া মুখ থেকে পেপার সরিয়ে এখনও নড়েনি। চেয়ারের আওয়াজ পায়নি তো একবারও। সকাল সকাল ছেলে আর বাবার তুলকামাল শোনার কোনও ইচ্ছে তার নেই। এইসব কবিতা সকাল সকাল না বললেই কি নয়?
হঠাত থমকে থেমে গেল শানু। ঠিক যেন আমার গল্প, তাই না মা। আমি যখন হায়ার সেকেন্ডারিতে গোল্লা পেয়ে— না গোল্লা কোথায় পেলাম আর। কিন্তু রেজাল্ট আদতে গোল্লার মতই। বাবা পিটিয়ে আমায় মাটিতে ফেলে দিল। তুলোধোনা করল, তাই না মা? মনে আছে তোমার? তোমার কি সেদিন বুক ফেটে গেছিল মা আমার জন্য? বলো না গো।
সুতপা শুধুই দাঁড়িয়ে থাকে। তার চোখে তো আর জল নেই। বুক যদি ফেটে থাকে সে তো সেই কবে। তার টুকরোগুলো দুহাতে জড়ো করে তবু তো বেঁচে আছে। যদি একে বেঁচে থাকা বলে। কিন্তু এতদিন বাদে সেই কষ্ট ছেলেকে দেখাবার কিছু আর নেই। নিষ্পলক চেয়ে থাকে শুধু।
মায়ের দিকে তাকিয়ে নিজের থেকেই থমকে গেল শানু। কী কথা বলার জন্য ডাকল যেন মাকে? ঠিক বলেছে মা। সে তো কবিতা শোনানোর জন্য ডাকেনি মাকে।
—কী কথা যেন বলছিলাম মা আমি?
—দিদির বানানো কুরুশের ঢাকনাগুলোর কথা।
—হ্যাঁ, হ্যাঁ মনে পড়েছে। ওগুলো কেন পাতো না আর? কত সুন্দর লাগে দেখতে।
অন্য ঘর থেকে এতক্ষণে উঠে এসেছে পরমেশ। খুব বিরক্ত গলায় বলল, হ্যাঁ হ্যাঁ সব সাজিয়ে রাখতে হবে ওনার জন্য। খুব আনন্দের দিন দেখছি কি না আমরা?
—আহা, তুমি কেন আবার এলে। অনেক আগে এমনভাবে সুতপা বলতে পারত না পরমেশকে। এখন একটু একটু পারে। কারণ ছেলে যখন একদম হিসেবের বাইরে চলে যায়, সামলাতে হয় সুতপাকেই। ঠিক আছে রে শানু, সামনের কোনও রোববার করে একদিন ট্রাঙ্কটা খুলে সব বের করে আনব।
তাদের জীবনে শনি রবি বা যে কোনওদিনই প্রায় সমান। সুতরাং রবিবারে বের করায় বিশেষ কোনও সুবিধা নেই। সুতপা বলল কারণ একটা এরকম কিছু না বললে শানু এই কথার মধ্যেই ঘুরপাক খেতে থাকবে। এখন বলে দিল। কবে কোন রবিবার আসবে, শানুর মাথায় এই কথা থাকবে কিনা কে জানে। তখন যদি বের করতে হয় সে না হয় দেখা যাবে।
অসহায় গলায় বলছিল শানু। কেন সবকিছু এরকম? একটু সাজিয়েগুছিয়ে থাকলে কেমন ভাল লাগে না? তাদের বাড়িতে সবকিছুতে বড় অবহেলার ছাপ আজকাল। সবকিছু দায়সারা, যেন বেঁচে থাকার জন্য যতটুকু দরকার। শিউলিদের ছোট্ট বাড়িটাও কেমন যত্নে গুছানো থাকে। ছবির মতন। চোখে খুব আরাম হয় শানুর। মন অনেক শান্ত থাকে।
ওর মনে পড়ে গেল সে আসলে ছবির কথা ভাবছিল। পিসির কাঠের বাক্সে রাখা ছবি।
—আচ্ছা মা, পিসির কাছে একটা কাঠের বাক্সে অনেক ছবি ছিল। সেগুলো কোথায়?
—সেসব আমাদের বাড়িতে কীভাবে থাকবে? কখন যে তোর কী চাই আমি বুঝি না।
সুতপা রান্নাঘরে ফিরে যেতে শানু জানালার পাশে চেয়ারটা টেনে বসল। ছবির ভাবনাটা ঘুরছিল তবু মাথায়। একটা ছবি ছিল ওদের বাংলাদেশের বাড়ির। সে ছবি শুধু একটা। অনেক লোক সেই ছবিতে। একদম মাঝখানে দাদু বসে আছে। সামনে কোনওদিন দেখেনি শানু, শুধু ছবিতেই। চওড়া মোটা গোঁফ। দেখতে নাকি বাবার মতন, পিসি বলেছিল। ছবি দেখে শানুর সেরকম বোঝেনি। ওখানে বাবা, কাকু, পিসি সবাই ছিল। ওদের ছোট বয়সের। কাকু ইজের প্যান্ট পরা। আচ্ছা, ওর নিজের ছোট বয়সের ছবিগুলো কোথায়? সেগুলো তো বাড়িতেই থাকবে।
—মা, মা— এবার দ্রুত পায়ে নিজেই চলে গেল রান্নাঘরে। মা আমাদের বাড়িতে একটা অ্যালবাম ছিল। একটা না তো। দুটো। সেগুলো কোথায়?
—সেগুলোর আবার কিসের দরকার পড়ল আজ?
—অনেক কথা ভুলে ভুলে যাই। ছবি দেখলে ঠিক মনে পড়ে যাবে।
অস্থির ভঙ্গিতে রান্নাঘরের বাইরে পাইচারি করছিল শানু। সাদা ঢোলা পায়জামা। চেক কাটা নীল শার্ট। মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। মাঝখানে কেটে ফেলেছিল। এখন আবার বড় হচ্ছে।
—দাড়ি কাটছিস না কেন রে শানু? একদিন কেমন কেটে আসলি, কত সুন্দর লাগছিল মুখটা।
—দিচ্ছেই না কেটে। গোমড়া মুখে বলল শানু। সময়ই হচ্ছে না তার।
—কার সময় হচ্ছে না? কোন সেলুনে যাস?
—সেলুনে আমার দাড়ি কাটতে চায় না মা। বড্ড বাজে বাজে কথা বলে।
—কেন বেশ তো কেটেছিল। এত লম্বা নোংরা দাড়ি পুরো সাফ করে দিয়েছিল।
—সে তো সেলুন নয় মা, ওটা তো… বলতে গিয়ে থমকে গেল শানু। জুলজুল করে চেয়ে রইল মায়ের মুখের দিকে।
—সেলুন না তো কোথায় কাটলি দাড়ি?
—পরে একদিন বলব মা।
মুখের কথাটা গিলে নিল শানু। একদিন গুছিয়ে বলবে মাকে। মনে মনে ফিক করে হাসল শানু। সে কেমন কথা লুকাতে পারছে। একটু তাহলে কম পাগল এখন।
—এখন আমায় অ্যালবামদুটো বের করে দাও দেখি। অস্থিরভাবে পা নাচাতে নাচাতে বলল শানু।
—তোর কি সকালবেলা আর কোনও কাজ নেই? একবার কুরুশের কাজ, একবার অ্যালবাম! পাগল করে রেখেছিস আমায়।
বলেই থমকে গেল সুতপা। পাগল শব্দটা এড়িয়ে চলে সুতপা, ছেলে পাগল বলেই হয়তো। না, না বালাই ষাট, অনেক ভাল আছে এখন শানু। আগের থেকে অনেক।
মুখে কিছু না বললেও ঘোড়ার খুড়ের মত পায়ে দুবার খটখট করল শানু। ওর এই অস্থির ভাবটাই বেশি চিন্তায় ফেলে সুতপাকে। তাড়াতাড়ি আঁচলে হাত মুছে চাবি নিয়ে আলমারি খুলতে চলে এল। দেখা হয়ে গেলেই দিয়ে দিবি আবার।
ওই স্মৃতিটাই তো আছে শুধু, জীবনের সুন্দর সময়ের ছবি। যখন জীবনটায় নানা রং ছিল, সাদাকালো ছবিতেও ছলকে উঠত আনন্দের রংঝারি।
একটা অ্যালবাম আমেরিকার। সেটায় বেশ কিছু রঙিন ছবিও আছে, তবে বেশিরভাগ সাদাকালো। প্রথমে সেটা খুলে বসল শানু। প্রথম ছবিটা তাদের গ্র্যানবেরি অ্যাপার্টমেন্টের ঠিক সামনে। শানু মায়ের কোলে। বাবার কোট প্যান্ট আর টাই। মাও শাড়ি পরেনি, প্যান্ট শার্ট। এই ছবিটা যতবার দেখেছে অবাক লেগেছে। বড় হয়ে অব্দি মাকে শাড়ি ছাড়া কিছু পড়তে দেখেনি। তার পরের ছবিটা মার একার। এখানেও প্যান্ট শার্ট, চোখে সানগ্লাস। একটা গাড়ির সামনে দাঁড়ানো।
শানু বুঝতেও পারেনি কখন সুতপাও এসে দাঁড়িয়েছে। সুতপা যখন বলল, এই গাড়িটার নাম কী ছিল মনে আছে? হাডসন হর্নেট, যখন তোর বাবা কিনেছিল তখনই প্রায় দশ বছরের পুরনো। কিন্তু কি মজবুত গাড়ি, এখনও এই দেশে এমন গাড়ি পাবি না। সুতপার জীবনে ওই কটা বছর বড্ড আদরের, ভালবাসার। লেবুরঙের এই গাড়িতে করে তারা কত ঘুরেছে দুজনে। এখন মনে হয় গতজন্মের কথা।
এর পরেই শানুর একটা একার ছবি। সুতপা ঝুঁকে পড়ে দেখল। এটা তোর প্রথমদিন স্কুলে যাওয়ার ছবি। বাড়ির দরজার সামনে দাঁড়িয়ে শানু, এক হাতে স্কুল ব্যাগ। কোন এক সুদূর ঝকঝকে সকালে যার ছবি ঘোলাটে হয়ে এসেছে এখন।
একটা ক্লাস ফটো। এটা তোর এলিমেন্টারি স্কুল শেষ হওয়ার ছবি।
শানু ঝুঁকে পড়ে দেখছিল। শুধু চোখ দিয়ে নয়, ছবির ওপর আঙুল বুলিয়ে বুলিয়ে। যেন সেই সময়ের জীবনের স্পন্দন অনুভব করতে চায়। এইসব ছেলেমেয়েগুলো আমেরিকায় বা তার মত অন্য কোনও দেশে। কারও কাছে আছে কি এই ছবি। শানুকে আজও দেখতে পায় তারা? মনের মধ্যে কী এক উত্তেজনা। শানু কি এদের কাউকে চিনতে পারবে? নাম মনে করার কী প্রচণ্ড চেষ্টা করছিল শানু। কোনও নাম মনে এল না। বিহ্বল চোখে তাকাল মায়ের দিকে।
খাটের ওপর বসে পড়েছিল সুতপা। সে তার ডানহাত বাড়িয়ে শানুর মাথায় রাখতে চাইছিল। কিন্তু সাহস পাচ্ছিল না। মরে যাওয়া কষ্টগুলো জীবন্ত হয়ে উঠছে বড় বেশি বেশি। এই টানে ভেসে যেতে চায় না সুতপা। যখন কোথাও আর যাওয়ার নেই। জোর করে উঠে দাঁড়াল খাট থেকে। আমার অনেক কাজ আছে শানু, এখন বসে থেকে ছবি দেখার সময় নেই আমার।
শানু প্রতিটা ছবি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিল। আমেরিকার ছবি, দুর্গাপুরের ছবি। বড় নিমগ্ন হয়ে সেই দেখা। যেরকম দেখায় ঘূর্ণায়মান পৃথিবীটা দাঁড়িয়ে পড়ে। আর অতীতটা হয়ে যায় চলমান ছবি। সেই সময়ের স্পর্শ গন্ধ আবেগ ছবি থেকে টেনে হিঁচড়ে বের করতে চাইছিল ছবির ওপর ঘুরে বেড়ানো শানুর আঙুলগুলো, কিন্তু ব্যর্থতার নিষ্ফল আক্রোশে শানু এবার ক্রমশ মুঠি পাকাতে থাকে। কিছুতেই সেই সময়ের মধ্যে ঢুকতে পারছে না। এই ছবি যেন তার নিজের জীবনের নয়, সে শুধু দেখতে পারে বাইরে থেকে। কোথাও একটা তার ছিঁড়ে গেছে, আর জোড়া লাগানো যাচ্ছে না।
বিহ্বল শানু খোলা জানালার পাশে অ্যালবাম নিয়ে বসে রইল।
দুই.
তোতন কথা রেখেছিল।
সাইকেল নিয়ে ফেরত আসার পরে পাখি দেখতে যাওয়ার কথা শানুর মাথা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল। ওটাই তো তার অসুখ। কথাগুলো পাখির মত উড়ে উড়ে চলে যায়। কখনও ফিরে আসে, কখনও ছেড়ে যায় বরাবরের মত। কত কথা যে মাথার মধ্যে দপদপ করে। কোনও কথা কালো বাদুড়ের মত ছাদ থেকে হেঁটমুণ্ড হয়ে ঝোলে। কখনও প্রজাপতির মত রংবেরঙের পাখা মেলে। দুহাতে জড়িয়ে কথাগুলোকে নিজের করে নেওয়ার আগেই হাত ফসকে কোথায় চলে যায়। নতুন শব্দ, অর্থ আর রঙমিলন্তির নিরন্তর খোঁজ চলতেই থাকে শানুর। তার এই যাত্রা এক অশান্ত নদীতে দুলতে থাকা পানসির মত। কখনও ঢেউয়ের মাথায় ওঠার আনন্দে বিভোর করে, পরক্ষণেই আছড়ে ফেলে নাকানিচোবানি খাওয়ায়।
এমনি এক সকালে শিশিরের বিন্দুভেজা জানালার শিক পেরিয়ে প্রানের স্পন্দন খুঁজছিল শানু। রান্নাঘর থেকে মার কথা হাওয়ায় ভাসছে— লক্ষ্মীর মা, কাঁচালঙ্কার বুকগুলো একটু চিরে দিও। বাবা রেডিওতে আকাশবাণী। শানুর আকাশের রঙে এ সবই আবহসঙ্গীত। পাঁচিলঘেঁষা আমগাছের ডগায় একটা কাটাঘুড়ি লটকে গেছে। পেটকাটি। সকালের হাওয়ায় গাছের ডালে সুতো আটকে পতপত করে উড়ছে তবুও। শানুর মনে হচ্ছিল আসলে উন্মুক্ত আকাশে ওড়ার জন্য ছটফট করছে। ঠিক তার মত। ডানা মেলতে চায়, কিন্তু ওড়াবার মত লাটাই নেই। ভাবনার সিঁড়ি বেয়ে কবিতার একটা দমকা হাওয়া এল, গুমগুম করে উঠল শানুর গলায়।
Before the kite plunges down into wood
And the line goes useless
Take in your two hands, boys, and feel
The strumming, rooted, long-tailed pull of grief.
You were born fit for it.
Stand in here in front of me
And take the strain
সেই স্ট্রেনটাই নিতে পারল না বলে তার লাটাই হারিয়ে গেছে। তার ঘুড়ি গোঁত্তা খেয়েছে গাছের মগডালে। এইরকম একটা নিশ্চিত ভাবনা অকস্মাৎ মনোকষ্টের লাভাস্রোত হয়ে শানুর আপাদমস্তক ঢেকে দিল। কোনও প্রস্তুতি ছাড়াই, ঢেউয়ের মাথা থেকে আছড়ে পড়ার মত। খুব ভয় করছিল শানুর। এই কষ্টগুলো বাড়তে বাড়তেই তার মনের ক্ষতগুলো গভীর হয়। তখন শানু যন্ত্রণায় পাগলের মত করে। কেউ তার কষ্টটা বুঝতে পারে না, শুধু তার পাগলামিটা দ্যাখে। খুব দ্রুত সেই খাদের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল শানু। তোতন এসে বাঁচিয়ে দিল।
তোতন পাখির ডাক জুড়ে জুড়ে একটা মিউজিক পিস তৈরি করছিল। তার জন্য বহুদিন ধরে অনেকরকমের পাখির ডাক সংগ্রহ করা, জোড়া এইসব কাজে আটকে ছিল। কিন্তু মাথায় ছিল শানুর কথাটা। কাজ শেষ হতেই বাইক নিয়ে শানুর বাড়ি হাজির।
দিনটা শানুর জন্য হঠাৎ ভাল হয়ে গেল। কেউ তো ওর জন্যে আর ভাবে না। পারলে এড়িয়ে চলে। মুখে বলে অনেক কিছু, কিন্তু তারপরে অবলীলায় ভুলে যায়। অর্ধেক কথা শানুর নিজেরই মনে থাকে না, সেটা সবার জানা হয়ে গেছে। শানুর ভাগ্যে তাই শুধু ফাঁকি। অথচ কবে কী কথা হয়েছিল তোতন তার বাড়ি বয়ে পাখি দেখতে যাওয়ার কথা বলতে এসেছে! একটু আগের দুঃখ ভুলে শানুর আনন্দে হইহই করতে ইচ্ছে হল।
—যাবি নাকি বল? আমার কাজটা শেষ হয়ে গেছে, আমি তোকে নিয়ে যেতে পারি।
—তুই সেইজন্য এসেছিস? এখনো বিশ্বাস করতে পারছিল না শানু।
—তো? কথা হল যে তোর সঙ্গে। কাউকে কথা দিয়ে কথা রাখার মধ্যে একটা তৃপ্তি আছে। সেই শ্লাঘা বিন্দু বিন্দু হয়ে ছড়িয়ে পড়ল তোতনের হাসিতে। ব্যস্ত থাকলে অন্য কোনওদিন…
শানু বহুদিন ব্যস্ত থাকেনি। শব্দটা ট্রেন ছেড়ে আসা অচেনা প্ল্যাটফর্মের মত যেন। বেভুল হয়ে চেয়ে রইল শানু।
—ফাঁকা থাকলে তৈরি হয়ে চল।
শানুর জীবন তো ফাঁকাই। চারদিক ধু ধু জমি। আর তৈরি হওয়া ব্যাপারটা সফল লোকেদের জন্য। শানু তার ঢলঢলে পাজামা আর নীল চেক জামায় সব সময়ে তৈরি।
শানুকে দেখে তোতন ফিক করে হেসে বলল, তুই সবসময় এমনি নীল চেক জামা পড়ে থাকিস কেন রে?
নিজের দিকে অত কিছু তাকায় না শানু। মাথা নিচু করে নিজেকে দেখে বিড়বিড় করে বলল, কেন খারাপ? নীল রং তো আমার ভাল লাগে।
তোতন ওর জামার চেক দেখিয়ে বলল, তাহলে এমন জানালাবন্দি করে রাখিস কেন? দমবন্ধ লাগে না?
কথাটা শানুর খুব পছন্দ হল। ঠিক বলেছিস তো। এমন খাঁচার মত জামা দেখলে পাখিরা কাছেই আসবে না। জামাটা খুলে নিই? শানুর বলার মধ্যে একটা সততা ছিল। সত্যিই চিন্তায় চোখদুটো কুঁচকে গেছিল। কাঁধে হাত রেখে তোতন সান্ত্বনা দিল। আরে না, না। পাখি তো আর আমাদের হাতে এসে বসছে না। দূর থেকেই দেখব আমরা। ওরাও আমাদের দেখবে। জামার জন্য কিছু এসে যাবে না।
নিশ্চিন্ত হয়ে বাইকের পিছনে বসতে যাচ্ছিল শানু। তোতন জিজ্ঞেস করল, বাড়িতে বলে এসেছিস?
—না তো।
নিজে থেকে সেভাবে বলাকওয়ার কথা কি মনে থাকে শানুর। মা নিজেই খেয়াল রাখে। এত সকালে মা রান্নাঘরে থাকে, তাই নজরে পড়েনি। তোতন শানুকে জোর করে পাঠাল। ভালই হল। সুতপা রুটি-তরকারি বানিয়েছিল। পাখি দেখতে যাচ্ছে শুনে বাক্সে ভরে সঙ্গে দিয়ে দিল। বেরিয়ে এসে তোতনকে দেখল। ওকে নিয়ে একটু সাবধানে বাবা। সবসময়ে নিজের খেয়াল রাখতে পারে না।
—আমি জানি মাসিমা। ওকে কি আজ থেকে দেখছি আমরা। পাখি দেখে আজ ওর মন ভাল হয়ে যাবে দেখবেন।
শানু মাথা নিচু করে বিরক্তির সঙ্গে পা ঠুকছিল। পাখির কথা শুনে আরও চঞ্চল হয়ে উঠল। তাড়াতাড়ি চল তোতন, পাখিরা চলে যাবে।
—এত সকাল সকাল পখি কোথায় চলে যাবে রে? স্টার্ট দিতে দিতে হাসল তোতন। মাসিমা নিশ্চিন্ত থাকুন আমি নিজে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে যাবো।
পিছন থেকে দাঁড়িয়ে সুতপা খুশির শ্বাস ছাড়ল। যাক, একটু ঘুরে আসুক। মন ভাল থাকলেই মানুষের শরীর ভাল হয়।
—কোথায় যাব রে তোতন?
উত্তেজনায় টগবগ করছিল শানু। একটা বিশেষ দিন আজ। কতদিন বাদে কোথাও যাচ্ছে। ছোটবেলায় কত জায়গায় গিয়েছে। আমেরিকায়। এদেশে এসেও। কিন্তু গত বিশ বছরে ডাক্তারের কাছে ছাড়া কোথাও যায়নি।
—কোথায় আবার? গড় জঙ্গলে। পাখি দেখবি বলেছিলি তো।
—হ্যাঁ, হ্যাঁ গড় জঙ্গলে। ওখানে কি পাখি আছে রে তোতন?
—চল না, তোকে একটা একটা করে চিনিয়ে দেব।
—তুই সব পাখি চিনিস?
—এই এলাকার পাখিদের তো চিনি, এতদিন ধরে দেখছি।
—পাখিরা তোকে চেনে?
শানুর এরকম প্রশ্নে হা হা করে হেসে উঠল তোতন। বেড়ে বলেছিস তো, পাখিরা কি আমাকে চেনে? কিছুক্ষণ ভেবে বলল, না চিনলেও, জানে বোধহয়। আমাকে দেখে একটুও ভয় পায় না আর।
সেটা হয়তো ঠিক। বাইক রেখে ওরা যখন জঙ্গলের মধ্যে ঢুকল, চারদিকে কতরকমের পাখি। ওই দ্যাখ শানু মুনিয়া। একেবারে এক ঝাঁক।
পাখির ডাক শোনাটা দেখার থেকে কিছু কম নয়। একসঙ্গে কতরকমের ডাক মিশে একটা ঐকতান। এই কথাটা বলতেই তোতনের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। ঠিক তাই। এইজন্যেই তো আমি শুধু পাখির ডাক জুড়ে জুড়ে এমন একটা মিউজিক বানালাম।
—তুই কি পাখির ডাক নিয়ে গবেষণা করিস তোতন? খুব অবাক চোখে তাকাল শানু। তোতনকে দেখে এমনটা কক্ষনও মনে হয়নি।
—ধুর, আমি হলাম হায়ার সেকেন্ডারি ফেল। আমি আবার কী গবেষণা করব।
হা হা করে হেসে উঠল শানু। আমাদের কি মিল রে, আমরা দুজনেই হায়ার সেকেন্ডারি ফেল।
—তুই তো ফেল করিসনি শানু।
—ওই একই হল, ওই এক হার্ডলসে আমরা দুজনেই কুপোকাত। আমি সেই যে চিৎপটাং হয়ে পড়লাম, মাথাটাই বিগড়ে গেল। চোখ সরু করে শানু তাকাল তোতনের দিকে। তুই পাগল হলি না তো। তোকে বোধহয় কেউ মারেনি।
শানুর কষ্টটা বুকের ভিতরে নিতে নিতে তোতন বলল, মার আমরা সবাই খাই। ভাগ্যের হাতে। আর আমার তো পাথরচাপা কপাল। সেই পাথর সরাতে বহু বছর লেগে যায় শানু। কিন্তু একবার যদি সরাতে পারিস তারপর দেখবি উন্মুক্ত আকাশ। বলতে বলতে তোতনের চোখ ঘুরছিল চারদিকে। হঠাত কথা থামিয়ে ঠোঁটে আঙুল ছোঁয়াল তোতন। শানুর খুব মজা লাগছিল। কেমন একটা গোয়েন্দা গোয়েন্দা ভঙ্গি ফুটে উঠল তোতনের হাবভাবে। ফিসফিস করে বলল, শুনেছিস?
—কী?
—ওই যে ডাকছে, বউ কথা কও। শোন স্বরের ওঠানামা। ওঁই যে তিরতির করে কাঁপছে শালগাছের পাতা, লেজ দেখতে পাচ্ছিস না? খুব লাজুক হয় এই পাখি।
বউ কথা কও! হ্যাঁ, বউ কথা কও। সব মনে পড়ে যাচ্ছে। একটা ছটফটে ভাব হঠাৎ উথালপাথাল ঢেউ তুলছিল শানুর মধ্যে। তোর মনে আছে তোতন আমি সেদিন একটা কথা খুঁজে বেড়াচ্ছিলাম। উত্তেজনায় গলার পর্দা উঁচুতে চলে গেছিল শানুর। পাখিটা ডানা ঝাপ্টে উড়ে গেল।
—যাঃ ভাল করে দেখা গেল না। নিজের জন্য তোতনের আফশোস নেই কোনও। অনেক দেখেছে, শানুকে দেখাতে পারল না।
কিন্তু শানু এখন এক্সাইটেড। আমি জানি এই পাখিটা। সেদিনও ডেকেছিল। আমি সাইকেল করে যাচ্ছিলাম, আমার সাইকেলের রডে বসেছিল মেয়েটা। ওর নাম রেখা। আমি রেখাকে বললাম, দেখছিস পাখিটা কী বলছে? আমি তার আগেই রেখাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ও আমাকে ভালবাসে কিনা। রেখা কিচ্ছু বলছিল না। ওর চুল উড়ে উড়ে আমার মুখে পড়ছিল। কিন্তু আমি ওর মুখটাও দেখতে পাচ্ছিলাম না। পাখিটা আবার ডাকল। আমি তখন জোর করে রেখার মুখ ঘুরাতে গেলাম। খুব রেগে গেছিল রেখা। কলের ট্যাপ বন্ধ হওয়ার মত কথা আচমকা থমকে থেমে গেল। রেখা কোথায় জানিস তোতন?
শানুর কথায় তোতন একটু চমকে গেছিল। আবার কষ্টও। শানুর সঙ্গে রেখার একটু ভাবসাবের খবর পেয়েছিল, কিন্তু কতদূর কিছু জানত না। কী কপাল! একজন হয়ে গেল পাগল, আর একজন অ্যাসিডে মুখ বিকৃত করে দুর্গাপুর ছেড়েই কোথায় চলে গেল। দুজনকেই তো চেনে, সব ঘটনাই জানে। আজকের কথা নয়। তবু কষ্টটা নতুন করে ফিরে এল। তোতন কথা ঘুরাতে চাইল। শানুর হাত ধরে টেনে তুলল। দ্যাখ কেমন পাখির ডাকে তোর হারিয়ে যাওয়া একটা কথা পেয়ে গেলি। চল অজয়ের ধারে যাই। জল খেতে অনেক পাখি জড়ো হয়, আজ দেখবি তোর কত কথা মনে পড়ে যাবে।
কিন্তু শানুর গোঁ এড়ানো গেল না। আগে বল রেখা কোথায়? আমার ওকে কিছু দরকারি কথা বলার আছে। আমার কত কিছু মনে পড়ে গেল আজ। খুব অন্যায় করেছি ওর সঙ্গে।
—আহা তোর তো কিছু মনে ছিল না, তুই কী করবি!
—না রে তোতন, এটা তারও আগে। তখন আমার সব মনে ছিল, কিন্তু আমি রেখাকে তবু কষ্ট দিলাম। ভয় পেয়ে। খুব।
—আচ্ছা এসব কথা পড়ে হবে, এখন তো পাখি দেখি।
—আমার মাথার মধ্যে এখন এই কথাটাই ঘুরে বেরাবে, মাথা দপদপ করবে। আগে বল রেখা কোথায়?
—আমি জানি না রে। আমরা কেউ জানি না। ওরা দুর্গাপুর ছেড়ে চলে গেছে আজ দশ-বারো বছর তো হবেই। ইচ্ছা করেই কেন গেছে সেই কথাটা উহ্য রাখল। শানু হয়তো জানে, কিংবা জানে না।
শানুর মুখের আলোটা দপ করে নিভে গেল যেন। চলে গেছে? কেউ জানে না?
—তাই তো শুনেছি। হীরুটাও খোঁজ করত এত, কোনও খবর পায়নি।
নিরাশ চোখে আকাশের দিকে তাকাল শানু। আমার জীবন থেকে সবাই হারিয়ে যায়। সেদিন পুরনো ছবি দেখছিলাম। কোনও সময়ে আমার বন্ধু ছিল, এখন কেউ নেই। কোথায় আছে জানিই না। জীবনটা এমন সরতে সরতে যায়, একটা সময় পেরিয়ে গেলে চেনা মানুষগুলোকে আর ছোঁয়া যায় না।
—জীবন একটা মহাসাগর শানু। সমুদ্রে জানিস তো কিছু ছুড়ে দিলে আবার কখনও ঢেউয়ের সঙ্গে ঠিক ফিরে আসবে। ডুবে যাওয়া মানুষের শরীরও অমনি ফিরে আসে। জীবনে যাদের মনে করছিস হারিয়ে গেছে, তাদের অনেককে দেখবি কোনদিন আবার ঠিক পাশটিতে।
—সত্যি? চোখে অদ্ভূত বিশ্বাস নিয়ে তাকাল শানু। জীবনের হাতে এত মার খাওয়ার পরে হয়তো শুধু পাগলরাই এমন বিশ্বাস রাখতে পারে।
তোতন জানে নেহাতই সান্ত্বনা দিয়ে কথা সাজাচ্ছে, এমন হওয়ার গ্যারান্টি তো দিতে পারবে না। কিন্তু ভাবতে দোষ কী। হয় তো এমন, হয় না কি? সত্যিমিথ্যের মধ্যেকার এই ধুসর পথ বেছে নিয়ে তোতন আর শানু হাতধরাধরি করে অজয়ের দিকে রওনা দিল। এখনও অনেকটা দূর। কিন্তু স্রোতের কুলুকুলু শব্দ পাওয়া যাচ্ছে এখান থেকেই।
[আবার আগামী সংখ্যায়]