শুভোদয় দাশগুপ্ত
প্রশ্নটা উপাচার্যদের নিয়োগ বিতর্ক নয়, প্রশ্ন হল শিক্ষার স্বাধিকারের। এ-রাজ্যে বেশ কিছুকাল যাবৎ রাজ্যপালের পরিবর্তে মুখ্যমন্ত্রীকে আচার্য পদে নিয়ে আসার তৎপরতা চলেছে। বিষয়টা দৃষ্টিভঙ্গির। যতদিন না একজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ হওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য হওয়ার একমাত্র যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হবে ততদিন এই সঙ্কট থেকে শিক্ষাব্যবস্থার মুক্তি নেই
মাননীয় রাজ্যপাল সম্প্রতি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে জাতীয় শিক্ষানীতির উপযোগিতা এবং অবিলম্বে এই শিক্ষানীতি চালু করার প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করছিলেন আর এ-রাজ্যের মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী এই শিক্ষানীতি চালু করায় অগ্রণী ভূমিকা নিলেন। তাই শিক্ষামন্ত্রী ও রাজ্যপালের তথাকথিত সংঘাত নিয়ে খটকা তো লাগেই! প্রাথমিকভাবে জাতীয় শিক্ষানীতির তীব্র বিরোধিতা করে রাজ্যে বিকল্প শিক্ষানীতি প্রণয়নের লক্ষ্যে বারংবার কমিটি গঠন করে শেষপর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ করল রাজ্য সরকার। স্নাতক স্তরে চার বছরের কোর্স এই শিক্ষাবর্ষে চালু হবে না এই মর্মে আশ্বাসবাণী পাওয়ার পরও এই সিদ্ধান্ত দুর্ভাগ্যজনক। সর্বোপরি সম্পূর্ণ নামগোত্রহীন (তারিখ, সই, স্ট্যাম্প) এই ঘোষণা বিস্ময়ের উদ্রেক করে!
আমরা কি ভানুমতীর খেল দেখছি? এই কিছুকাল আগে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী মহামান্য রাজ্যপালের সঙ্গে বসে সাংবাদিক বৈঠক করে এ-রাজ্যে তদানীন্তন অস্থায়ী উপাচার্যদের নিয়োগ সংক্রান্ত অসম্পূর্ণতা দূর করলেন একযোগে। এক কথায় “আঁটি গড়াগড়ি খেল”।
উপাচার্য নিয়োগে ব্যতিক্রম/অনিয়ম নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য একটা সমঝোতা হয়ে গেছে এমন একটা বার্তা জনমানসে গেল। তার সঙ্গেই যথার্থ সাযুজ্যপূর্ণ পদক্ষেপ জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০-কে মান্যতা দিয়ে রাজ্য সরকারের এই শিক্ষাবর্ষ থেকেই চার বছরের স্নাতক কোর্স চালু করে দেওয়া পরিকাঠামো গঠন এবং অর্থের জোগানের দায় না নিয়ে। জাতীয় শিক্ষানীতির অন্যতম বিপদের জায়গা এটাই। পরিকাঠামো ও আর্থিক দায় থেকে সরকারি প্রতিশ্রুতি কৌশলে প্রত্যাহার করা। সেটা যখন জলের মতো স্বচ্ছ হয়ে উঠল আবার এক বিভ্রান্তি রচনা করা হল রাজ্যপালের সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের নির্দেশিকা ঘিরে। রাজ্যপালের এই নিয়োগের এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলব কী করে! কারণ কালই যদি আবার দেখি আমে-দুধে মিশে গেছে!! বিধির প্রশ্ন তুলেছে রাজ্য সরকার। আচার্যের এই অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী। বিধিভঙ্গের রূপকথা তো রচনা করেছে রাজ্য সরকার শিক্ষাব্যবস্থা পরিচালনায় বিগত এক দশকে! অভিযোগ উঠেছে প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষায় নিয়োগ থেকে পদোন্নতিতে, ট্রান্সফারেও নজিরবিহীন বেনিয়ম ও দুর্নীতির পীঠস্থান হয়ে উঠেছে রাজ্যে শিক্ষার প্রশাসনিক দপ্তরগুলো। আধিকারিকদের একটা বড় অংশ অকথ্য শিক্ষকবিরোধী আচরণ করেছেন, অপমান/নির্যাতন করেছেন শিক্ষকদের ন্যায্য দাবিদাওয়ার প্রশ্নে, পদোন্নতির প্রশ্নে। তাঁদের অনেকেই বিগত এক দশক ধরে শিক্ষার প্রশাসনিক দপ্তরগুলোতে দাপটের সঙ্গে সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছেন।
অন্যদিকে স্কুলশিক্ষকদের নিয়োগ-দুর্নীতি আজ আন্তর্জাতিক কেচ্ছা। কলেজশিক্ষকদের নিয়োগ এবং বদলিতে চরম দুর্নীতি নিয়েও নানা কথা শোনা যাচ্ছে, কিছু কিছু আন্দোলনও দানা বাঁধছে ইতস্তত। অভিযোগ উঠেছে কলেজশিক্ষক নিয়োগের ইন্টারভিউতে এক্সপার্টদের কাউকে কাউকে পেনসিলে নম্বর দিতে বলা হয়েছে। একথা যদি সত্যি হয় তো আমরাই অর্থাৎ কোনও কোনও শিক্ষকই সব আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে এই পাপকাজ করে এসেছি পেনসিলে নম্বর দিয়ে।
এই সরকারের শাসনকালে স্কুলে শিক্ষক নিয়োগে শুধু নয়, বিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষার বিভিন্ন নীতিনির্ধারক সংস্থায় বিভিন্ন পদে নিয়োগেও বেনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি আবার বর্তমান শাসকদলের শাসনকালে এমন অনেকে অবলীলায় উপাচার্য হয়েছেন যাঁরা সচরাচর উপাচার্য পদে আসীন হওয়ার সুযোগ পেতেন না। আর এইসব উপাচার্যদের রাজ্য সরকার যে অসম্মানজনক আনুগত্যের বেড়াজালে বেঁধে রেখেছেন তা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তথা রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থার ভাবমূর্তি কলুষিত করেছে দেশেবিদেশে। আরও পরিতাপের বিষয়, এই সময়কালে কোনও কোনও উপাচার্য তাঁদের পদ যাতে না খোয়াতে হয় তার জন্য যে হীন জায়গায় ওই পরম সম্মানীয় পদের মর্যাদাকে নামিয়ে এনেছেন, তা এককথায় অচিন্ত্যনীয়।
এই শাসনকালে বিগত এক দশকে দিকে দিকে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যখন অধ্যাপক, অধ্যক্ষরা শারীরিকভাবে আক্রান্ত হয়েছেন, লাঞ্ছিত হয়েছেন, সুশীল সমাজ তখন নীরব থেকেছেন। শিক্ষাঙ্গনকে, শিক্ষকদেরকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নিগ্রহ ও সন্ত্রস্ত করা শাসকদলকে আজও কোনও মূল্য চোকাতে হয়নি। এটাই বাস্তব! আজকাল হামেশাই শোনা যায় এরাজ্যে শিক্ষাকে শেষ করে দিয়েছে বর্তমান শাসকদল, কিন্তু তার কোনও মূল্য চোকাতে হয় না তাদের।
স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলির পরিচালনব্যবস্থায় কোনও গণতান্ত্রিক পরিসর নেই বিগত এক দশক ধরে। স্কুল এবং কলেজের শিক্ষকদের ঐতিহ্যবাহী সংগঠনগুলোকে নিষ্ক্রিয় রেখে দেওয়ার ধারাবাহিক চেষ্টা চালিয়ে গেছে শিক্ষাদপ্তর। এইসব সংগঠনকে বিগত এক দশকের বেশি সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অন্দরে সভা করতে দেওয়া হয়নি। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রধানশিক্ষক এবং অধ্যক্ষরা এইসব শিক্ষক সংগঠনের স্মারকলিপি গ্রহণ করেননি। এইসব শিক্ষক সংগঠনের প্রকাশ্য সভা-সমাবেশে পুলিশ-প্রশাসনের অনুমতি মিলতে হিমসিম খেতে হয়েছে। শাসকদল পৃথক পৃথক শিক্ষক সংগঠন গড়েছে, কিন্তু শিক্ষকদের দাবিদাওয়ার প্রশ্নে তাদের ভূমিকা নৈরাশ্যজনক।
অধ্যক্ষ ও উপাচার্যদের অবশ্য গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে কার্যত শাসকদলের প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্য সুনিশ্চিত করে। আর এই আনুগত্য যাঁরা দেখিয়েছেন তাঁদের অনেকেই, বিশেষত অধ্যক্ষদের একটা অংশ নিজের নিজের কর্মক্ষেত্রে এক-একজন প্রবলপ্রতাপ ডিকটেটর হয়ে উঠেছেন, শিক্ষকদের একাংশের সঙ্গে তাঁরা ভৃত্যের মতো আচরণ করে তৃপ্ত হয়েছেন। বিগত একদশকে এই রাজ্যের বহু কলেজে বহু অধ্যাপক-অধ্যাপিকার সঙ্গে যে অমানবিক, অসম্মানজনক এবং প্রতিহিংসাপরায়ণ আচরণ করেছেন তাঁরা, তার বিস্তারিত খতিয়ান লিপিবদ্ধ আছে অসম্মানিত, নির্যাতিত অধ্যাপকদের কাছে, সেই নির্যাতন যাঁরা প্রত্যক্ষ করেছেন তাঁদের কাছে, এবং স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়-শিক্ষকদের শিক্ষক সংগঠনগুলোর কাছেও। এই সময়কালে এক বৃহৎ অংশের শিক্ষকদের প্রতি বিদ্যালয়, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় তথা রাজ্য সরকারের শিক্ষাপ্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরের অকথ্য অপমান ও মানসিক নির্যাতন কালো অক্ষরে লেখা থাকবে ইতিহাসে। ইতিহাস এই ক্ষমতালোলুপ, স্বৈরাচারী, অত্যাচারী প্রশাসকদের ক্ষমা করবে কিনা সেটা সময়ই বলবে।
আর কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক পরিচালনব্যবস্থাকে রুদ্ধ করে দলীয় আনুগত্যের বিনিময়ে যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনায় স্বৈরাচারের ছাড়পত্র দেওয়া হয় তখন তার পরিণাম হয় ভয়ানক।
আজ এ-রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের বৈধতা নিয়ে রাজ্য সরকারকে যে আইনি প্রশ্ন তুলতে হচ্ছে, যে কাঁদুনি গাইতে হচ্ছে, তার বোধহয় প্রয়োজনই পড়ত না যদি না রাজ্যের শাসকদল ২০১০ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে শিক্ষাব্যবস্থাকে এমন নীতিহীনভাবে যখন-তখন যে কোনও বিধি ভঙ্গ করে পরিচালনা না করত। বেনিয়ম আর অনিয়মের নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হয়েছে। আর, পদ এবং ক্ষমতার লোভে এ-রাজ্যে শিক্ষাজগতের অনেক ব্যক্তি সব নিয়ম ও যোগ্যতার বেড়াজাল টপকে অক্লেশে সব আত্মসম্মান জলাঞ্জলি দিয়ে সেই সব পদে আসীন হয়েছেন, ক্ষমতা ভোগ করেছেন এবং ক্ষেত্রবিশেষে সীমহীন দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে অনেকে জেলেও গিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষাজগতে এহেন কদর্য পরিস্থিতি ইতিহাসে কালো অক্ষরে লেখা থাকবে। রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থার এই ধ্বংসলীলায় প্রত্যক্ষে এবং নেপথ্যে জড়িত হলেন যাঁরা ইতিহাস ক্ষমা করবে না তাঁদেরকেও। এ-রাজ্যে অনেক উত্থানপতন অনেক রাজনৈতিক টানাপোড়েনের ইতিহাসেও রাজ্যের শিক্ষার উৎকর্ষ ও শিক্ষার্থীদের মেধার যে সর্বজনীন স্বীকৃতি ছিল সারা দেশে, তাকে ধ্বংস করায় বর্তমান শাসকদলের এবং তার অনুগত তথাকথিত শিক্ষাবিদদের অপরাধকে ইতিহাস ক্ষমা করবে না।
এই আবহেই রাজ্যপাল তথা আচার্যের উপাচার্য নিয়োগে কিছু ‘বিতর্কিত’ পদক্ষেপ। যেন তিনি এইসব পদক্ষেপের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিচ্ছেন এ-রাজ্যে সরকারের শিক্ষা বিষয়ে নিয়োগ ইত্যাদি প্রশ্নে নিয়ম ও বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা অন্তত সাজে না। তাই মাননীয় রাজ্যপালের উপাচার্য নিয়োগ সংক্রান্ত পদক্ষেপ ও সিদ্ধান্ত জেনেবুঝে শাসকদলের এ-রাজ্যের শিক্ষাজগতে লাগামহীন বেনিয়ম ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে এক কৌশলী বার্তা কিনা সেটাও ভেবে দেখার বিষয়। ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বর্তমান শাসকদলের শিক্ষাব্যবস্থায় যে সীমাহীন স্বৈরাচার, বেনিয়ম ও সন্ত্রাস, তাকে অংশত মান্যতা দিতে এ-রাজ্যে জারি হয় পশ্চিমবঙ্গ উচ্চশিক্ষা প্রশাসন ও নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৭, যা উচ্চশিক্ষার যাবতীয় স্বাধিকার খর্ব করে সামগ্রিক সরকারি নিয়ন্ত্রণ কুক্ষিগত করবার নজিরবিহীন এক কালাকানুন। মাননীয় রাজ্যপাল তথা আচার্যের এই সবকিছুই গোচরে থাকার কথা। একথা স্মরণ করা বাঞ্ছনীয় যে বিগত তিন-চার বছর ধরে বিকাশ ভবন থেকে যে-কটা শিক্ষকদের বিপাকে ফেলা অদেশনামা বের হয়েছে তার প্রত্যেকটিতে এই সর্বনাশা শিক্ষা আইনের কোনও না কোনও অনুচ্ছেদ উল্লেখ করা হয়েছে। আর এইসব আইন কার্যকর করে আনন্দে আত্মহারা হয়েছেন বিকাশ ভবনের শিক্ষা-অধিকর্তাদের একটা অংশ যাঁদের কেউ রাজ্য সিভিল সার্ভিসের ক্যাডার, কেউ আইএএস, কেউ প্রোমোটি আইএএস আর বাকি সবাই ডব্লুবিইএস অর্থাৎ সরকারি কলেজের শিক্ষক। বর্তমান শাসকদল শিক্ষাদপ্তরে এভাবেই অবাধ কর্তৃত্ব তুলে দিয়েছে আমলাদের হাতে। এর অন্যতম কারণ বর্তমান শাসকদলের শিক্ষাব্যবস্থা পরিচালনায় যোগ্য লোকের অপ্রতুলতা ও অনীহা। সেই কারণেই বর্তমান সরকার শিক্ষাব্যবস্থা পরিচালনায় আমলাদের উপর এতটা নির্ভরশীল। আর এই আমলাদের একটা অংশও তাই অবাধ স্বেচ্ছাচারিতা চালিয়ে গেছেন শিক্ষকদের উপর।
প্রশ্নটা উপাচার্যদের নিয়োগ বিতর্ক নয়, প্রশ্ন হল শিক্ষার স্বাধিকারের। এরাজ্যে বেশ কিছুকাল যাবৎ রাজ্যপালের পরিবর্তে মুখ্যমন্ত্রীকে আচার্য পদে নিয়ে আসার তৎপরতা চলেছে। বিষয়টা দৃষ্টিভঙ্গির। যতদিন না একজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ হওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য হওয়ার একমাত্র যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হবে ততদিন এই সঙ্কট থেকে শিক্ষাব্যবস্থার মুক্তি নেই।
স্থায়ী-অস্থায়ী উপাচার্যদের নিয়োগ নিয়ে যখন বিতর্ক নতুন নতুন মাত্রা নিচ্ছে রাজ্যে তথা সারা দেশে শিক্ষা তখন মহাপ্রস্থানের পথে। শিক্ষায় খুব দুঃসময় আসছে যাঁরা বলছেন তাঁরা বলুন শিক্ষায় চরম দুঃসময় ইতিমধ্যেই এসে পড়েছে। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০ পূর্ণাঙ্গভাবে রূপায়িত হয়ে গেছে। শিক্ষা সাধারণ মধ্যবিত্ত তথা দরিদ্র ছাত্রছাত্রীদের নাগালের বাইরে চলে গেছে। এই শিক্ষানীতি বহিরঙ্গে অত্যাধুনিক মার্কিন সাজে মোহজাল বিস্তার করে বাণিজ্যিক প্রয়োজনে, কিন্তু তলায় তলায় ধর্মের ভিত্তিতে মানুষে মানুষে বিভাজনের চক্রান্ত করে। বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদী চিন্তাধারাকে নস্যাৎ করে শিক্ষার সর্বনাশ করে। আইআইটির মতো বিশ্ববন্দিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির পীঠস্থানের ক্যালেন্ডারে সংস্কারাচ্ছন্ন অবৈজ্ঞানিক তত্ত্বের জয়গান গাওয়া হয়। বিশ্বভারতীর মতো ঐতিহ্যবাহী কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য একজন চরম স্বৈরাচারী প্রশাসক হিসেবে থেকে-থেকে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের জীবন দুর্বিষহ করেও কোনও শাস্তি পান না কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে। অমর্ত্য সেনের মতো দেশের গর্বকেও তাঁর এই অতি-বৃদ্ধ বয়সে মানসিক নির্যাতন করে হয়তো কোনও ‘অস্বাভাবিক’ তৃপ্তি পান উপাচার্য, আর বিশ্বভারতীর আচার্য নীরব থাকেন। এই ঘোর দুঃসময়ে দাঁড়িয়ে আজকে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা।
আর এ-রাজ্যের শিক্ষার হাল তো কারও অজানা নয়।
*মতামত ব্যক্তিগত