উন্মেষ মিত্র
প্রধান সেবকের ‘অত্যাধুনিক আধ্যাত্মিক শৈল শহর’ পরিকল্পনার বিরুদ্ধে ভূতত্ত্ববিদ এসপি সাটির মতে, যে কোনও ধরনের ভারী নির্মাণকাজ এই হিমবাহ উপত্যকার জন্য বিপজ্জনক। অধ্যাপক মহেন্দ্র প্রতাপ সিং বিস্ত এবং তাঁর দুই সহকর্মী মনীশ মেহতা এবং এসকে নাউটিয়াল জানাচ্ছেন বদ্রিনাথ অঞ্চলে প্রাকৃতিক বিপর্যয় অবশ্যম্ভাবী, কারণ পুরো শহরটিই দাঁড়িয়ে রয়েছে আলগা নুড়ি-কাঁকড়, মাটির ওপর। অতি ভয়ঙ্কর বিপর্যয় এড়ানোর জন্য তাঁরা বদ্রিনাথ অঞ্চলে যে কোনওরকম নির্মাণকাজ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার পরামর্শ দেন
১৯৭৩ সালে ডিসেম্বর মাসে এক কনকনে ঠান্ডার রাতে উত্তরাখণ্ড (তৎকালীন উত্তরপ্রদেশ) গোপেশ্বর জনপদে চণ্ডীপ্রসাদ ভাটের সঙ্গে আলাপ হল জনৈক কাঠমিস্ত্রি মহম্মদ ইয়াকুবের। চণ্ডীপ্রসাদ ভাট পাহাড়ি অঞ্চলের পরিচিত মুখ। তিনি একদিকে শ্রমিক সমবায় সংস্থা, দাশোলি গ্রাম স্বরাজ্য সংঘের প্রতিষ্ঠাতা, অন্যদিকে সর্বোদয় আন্দোলনের একনিষ্ঠ কর্মী এবং জনপ্রিয় ‘ভূদান’ পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত, পৃথিবীপ্রসিদ্ধ ‘চিপকো আন্দোলনে’র অন্যতম মুখ এই মানুষটি। সাধারণ আলাপচারিতায় ভাটসাহেব মহম্মদ ইয়াকুবকে জিজ্ঞেস করলেন যে, সে কী কাজ করে? উত্তরে ইয়াকুব জানাল, বিগত কয়েক মাস ধরে বদ্রিনাথ মন্দিরে কাজ করছে সে। কৌতূহলী ভাটসাহেব তখন জানতে চাইলেন যে, মন্দির রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলছে কিনা? উত্তরে ইয়াকুব জানাল, “আজ্ঞে না হুজুর। মন্দিরের চারিপাশে অনেক বড় মাপের নির্মাণের কাজ চলছে।” বিস্মিত হলেন চণ্ডীপ্রসাদ ভাট। তারপরের দু ঘন্টার কথাবার্তায় তিনি যা জানতে পারেন তার সারমর্ম হল, বিড়লা শিল্পগোষ্ঠীর জয়শ্রী ট্রাস্টের অর্থানুকূল্যে ‘বদ্রিনাথ সংস্কার প্রকল্প’ শুরু হয়েছে সকলের অগোচরে। সেই প্রকল্পের অঙ্গ হিসাবে সিমেন্ট ও স্টিল নির্মিত বড় বড় দেওয়াল দিয়ে ঘিরে ফেলা হচ্ছে বদ্রিনাথ মন্দির, ঘিরে ফেলা হচ্ছে মন্দিরের গর্ভগৃহ, ইতিমধ্যে ভেঙে ফেলা হয়েছে সভামণ্ডপ। ভাটসাহেব বুঝতে পারলেন, হারিয়ে যেতে বসেছে তার আজন্মপরিচিত মন্দিরের চেহারা। অতি সংবেদনশীল হিমালয়ের বুকে এই বৃহৎ নির্মাণকাজের ভূপ্রাকৃতিক বিপদ অনুধাবন করে মনে মনে প্রমাদ গুনলেন তিনি। আগেই বলেছি, সময়টা ১৯৭৩ সালের ডিসেম্বর মাস, তুষারপাতে বন্ধ বদ্রিনাথ যাওয়ার সমস্ত রাস্তা। ইচ্ছা থাকলেও ১৯৭৪ সালের এপ্রিল মাসের আগে বদ্রিনাথ পৌঁছাতে পারলেন না ভাটসাহেব।
মন্দিরের সিংহদুয়ারের সামনে পৌঁছে প্রথমেই দেখতে পেলেন বিড়লা পরিবারের মন্দির নির্মাণের বিশালাকার বিজ্ঞাপন, যেখানে মৌর্য সম্রাট অশোকের সঙ্গে বিড়লা গোষ্ঠীর কাজের তুলনা করা হয়েছে। মন্দিরের ভিতরে ঢুকে দেখতে পেলেন হুবহু একই দৃশ্য, যা মহম্মদ ইয়াকুব নামের একজন কাঠের মিস্ত্রি চার মাস আগে বর্ণনা করেছিল। চারিদিকে কংক্রিটের আভিজাত্যে মুখ লুকিয়েছে ছোট্ট পাহাড়ি মন্দির। পাশ দিয়েই বয়ে চলেছে অলকানন্দা নদী, স্রোতস্বিনী পাহাড়ি নদীর ভঙ্গুর তীরে অবস্থিত একফালি মন্দির কি বহন করতে পারবে এই বিপুল স্টিল, কংক্রিটের ওজন? নির্মাণকাজের আগে পরামর্শ নেওয়া হয়েছে বিশেষজ্ঞদের? ভবিষ্যৎ কী এই মন্দিরের? প্রতিটি প্রশ্নেই মুখে কুলুপ আঁটল মন্দির কমিটি।
তবে চুপ রইলেন না চিপকো আন্দোলনের নেতা চণ্ডীপ্রসাদ ভাট, শপথ নিলেন যে, সংস্কারের নামে এই ধ্বংসযজ্ঞের শেষ দেখে ছাড়বেন। পাশে পেলেন, চিপকো আন্দোলনের সহযোদ্ধা, জোশিমঠের তৎকালীন ব্লক প্রধান, কমিউনিস্ট পার্টির নেতা গোভিন্দ সিং রাওয়াতকে। সঙ্গী হলেন তরুণ আইনজীবী বালকৃষ্ণ ভাট, সাংবাদিক ধনঞ্জয় ভাট। শুরু হল সংবাদপত্রে লেখালেখি। ১৯৭৪ সালের মে থেকে জুলাই মাসের মধ্যে একাধিক হিন্দি এবং ইংরেজি পত্র-পত্রিকায় এই বিষয়ে সংবাদ ও প্রবন্ধ প্রকাশিত হল। দেশের বৃহৎ অংশের মানুষ সংস্কারের নামে এই ধংসযজ্ঞের আসল চেহারা দেখতে পেলেন। জনমত গড়ে উঠল, প্রতিবাদ আসতে শুরু দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। এতকিছুর মধ্যেও টনক নড়ল না মন্দির কমিটি বা বিড়লা গোষ্ঠীর, একই গতিতে চলতে থাকল নির্মাণকাজ। দমলেন না চণ্ডীপ্রসাদ ভাট। সটান হাজির হলেন অবিভক্ত উত্তরপ্রদেশের রাজধানী লখনৌ শহরে, দেখা করলেন মুখ্যমন্ত্রী হেমবতী নন্দন বহুগুনার সঙ্গে। ঘটনার বিবরণ শুনে ক্ষুব্ধ হলেন মুখ্যমন্ত্রী বহুগুনা, তিনি ভাটসাহেবকে অনুরোধ করলেন একটি স্মারকলিপি পেশ করার জন্য। ততক্ষণে সক্রিয় হয়েছে বিড়লা গোষ্ঠীর মদতপুষ্ঠ চক্র। তাদের ষড়যন্ত্রে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি পেশ করতে ব্যর্থ হলেও উত্তরপ্রদেশ বিধানসভার বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী বিধায়কের কাছে সেই স্মারকলিপির কপি পাঠাতে তিনি সক্ষম হলেন। বিধানসভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের একাধিক বিধায়ক সরব হলেন বদ্রিনাথকে রক্ষা করার দাবি নিয়ে। অবশেষে ১৩ জুলাই মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভাকে আশ্বস্ত করে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী নারায়ন দত্ত তিওয়ারির নেতৃত্বে অনুসন্ধান কমিটি গঠন করার নির্দেশ দিলেন। ততদিনে মন্দিরের চারিপাশে ২২ ফুট উচ্চতার দেওয়াল নির্মাণ হয়ে গেছে এবং দ্রুতগতিতে কাজ চলছে। শুধু রাজনেতাদের ওপর ভরসা করে নয়, গণআন্দোলনের পোড়খাওয়া নেতা ভাটসাহেব সংগঠিত করলেন সাধারণ মানুষকে। পাশে পেলেন সাধারণ গ্রামবাসী, মন্দিরের পূজারি, ডিমরী, আইনজীবী এবং স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতাদের। কিন্তু, মন্দির ও প্রকৃতি বাঁচানোর এই মহৎ কাজে বিরোধিতা শুরু হল বিড়লা গোষ্ঠীর অর্থে বিক্রি হয়ে যাওয়া মন্দিরের পাণ্ডাদের কাছ থেকে। কমিউনিস্ট সংসর্গের কারণে চণ্ডীপ্রসাদ ভাটকে দাগিয়ে দেওয়া হল ‘চিনের দালাল’ বলে। হাজারো উস্কানি সত্ত্বেও শান্তি বিঘ্নিত হতে দিলেন না আন্দোলনকারীরা। আন্দোলনে সংহতি জানাল আশেপাশের সব গ্রামের মানুষ। গণআন্দোলন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা আর চণ্ডীপ্রসাদ ভাটের অনমনীয় মনোভাবের ফলাফল হিসাবে বিধানসভায় পেশ হল তিওয়ারি কমিটির রিপোর্ট। সেই রিপোর্টের প্রস্তাব অনুসারে ভেঙে ফেলা হল দৈত্যাকৃতি কংক্রিটের সব নির্মাণ, ঐতিহ্যের মন্দিরকে ফিরিয়ে দেওয়া হল আগের রূপে, রক্ষা পেল ভূপ্রকৃতি, জীবন ফিরে পেল বাস্তুতন্ত্র।
দুই.
‘উন্নয়ন’ হার মানল না। ফিরে এল ভারতের ‘বিকাশ পুরুষ’ শ্রী নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদির হাত ধরে। ২০২০ সালে ভারতীয় জনতা পার্টি শাসিত উত্তরাখণ্ড সরকার ঘোষণা করল মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প হিসাবে বদ্রিনাথের ‘সৌন্দর্যায়ন’ এবং তীর্থযাত্রীদের ‘স্বাচ্ছন্দ্যে’র উদ্দেশ্যে অতি শীঘ্রই ৪২৪ কোটি টাকা ব্যয় করে ‘বদ্রিনাথ মাস্টার প্ল্যান’-এর কাজ শুরু করা হবে। এই ‘উন্নয়ন যজ্ঞ’ তিনটি পর্যায়ে সম্পন্ন হবে। বদ্রিনাথস্থিত শেষনেত্র এবং বদ্রিস হ্রদ ‘কংক্রিটায়ন’ এবং ‘কৃত্রিমায়ন’-এর মাধ্যমে শুরু হবে প্রথম পর্যায়। মন্দির এবং মন্দির সংলগ্ন অঞ্চলের ‘সৌন্দর্যায়ন’ হবে দ্বিতীয় পর্যায়ে। তৃতীয় এবং শেষ পর্যায়ে শেষনেত্র হ্রদ থেকে মন্দির পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ করা হবে। এছাড়াও মন্দির সংলগ্ন ছোট জলাভূমিগুলিরও ‘সৌন্দর্যায়ন’ করা হবে, নির্মাণ করা হবে অত্যাধুনিক গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা। ইতিমধ্যে, বিকাশ পুরুষের ‘উন্নয়ন’ যজ্ঞের প্রত্যক্ষ বলি হয়েছেন মন্দির সংলগ্ন ব্যবসায়ীরা এবং স্থানীয় বাসিন্দারা। অতি অল্প সময়ের নোটিসে এবং বিনা ক্ষতিপূরণে ভেঙে ফেলা হয়েছে তাঁদের বাড়ি, দোকানঘর। রুটি-রুজি হারিয়েছেন কয়েকশো ছোট ব্যবসায়ী। প্রশাসনের পক্ষ থেকে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করা হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সরকারি কাগজের ফাইলের মধ্যে সে সব চাপা পড়ে থেকে গেছে।
তবে এসবের মধ্যে, আমাদের ‘স্মার্ট’ প্রধান সেবকের ‘অত্যাধুনিক আধ্যাত্মিক শৈল শহর’ পরিকল্পনায় কুমন্তব্য করেছেন কিছু ভূতত্ত্ববিদেরা। ইতিহাসে প্রতি পদে পদে প্রমাণ আছে, যারা বেশি পড়াশোনা করে, তাঁরা তত বেশি রাজবিরোধিতা করে। এরকমই একজন ‘উন্নয়ন’-বিরোধী ভূতত্ত্ববিদ এসপি সাটি, তেহরির ফরেস্ট্রি কলেজের অধ্যাপক। ওঁর মতে, বদ্রিনাথের অবস্থান কিছুদিন আগে সংবাদ শিরোনামে উঠে আসা জোশিমঠের থেকেও বিপজ্জনক। মাত্র ১৫ বছর আগেও বদ্রিনাথ অঞ্চলে হিমবাহের উপস্থিতি ছিল। জোশিমঠ ‘V’ আকৃতির হিমবাহ উপত্যকা হলে, বদ্রিনাথ হল ‘U’ আকৃতির হিমবাহ উপত্যকা। মোদ্দা কথাটা হল, জোশিমঠের তুলনায় বদ্রিনাথের দুপাশের পর্বত আরও খাড়াখাড়িভাবে অবস্থান করছে, যা ভূমিধসের সম্ভবনাকে আরও বেশি বাড়িয়ে দেয়। আর বদ্রিনাথ শহরটি পুরোপুরি অস্থিতিশীল গ্রাবরেখার (Moraine— হিমবাহের সঞ্চয় কাজের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ) ওপর অবস্থান করছে। অধ্যাপক সাটির মতে, যে কোনও ধরনের ভারী নির্মাণকাজ এই হিমবাহ উপত্যকার জন্য বিপজ্জনক। এরকমই আরেকজন ‘উন্নয়ন’-বিরোধী অধ্যাপকের নাম মহেন্দ্র প্রতাপ সিং বিস্ত, গাড়োয়ালের হেমবতী নন্দন বহুগুনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনি বিগত কয়েক দশক ধরে ভূতত্ত্ব পড়াচ্ছেন। ইনি এবং এঁর দুই সহকর্মী মনীশ মেহতা এবং এসকে নাউটিয়াল ২০০৫ সালে ‘হিমালয়ান জিওলজি’ নামক একটি গবেষণা পত্রিকায় একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। বিভিন্ন ধরনের ভূতাত্ত্বিক পরীক্ষা করে তাঁরা দেখতে পান বদ্রিনাথ অঞ্চলে প্রাকৃতিক বিপর্যয় অবশ্যম্ভাবী, কারণ পুরো শহরটিই দাঁড়িয়ে রয়েছে আলগা নুড়ি-কাঁকড়, মাটির ওপর। অতি ভয়ঙ্কর বিপর্যয় এড়ানোর জন্য সেই গবেষণাপত্রে তাঁরা বদ্রিনাথ অঞ্চলে যে কোনওরকম নির্মাণকাজ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার পরামর্শ দেন। ভূমিক্ষয় রোধের জন্য স্থানীয় বৃক্ষরোপণের পরামর্শ দেখা যায় সেই গবেষণাপত্রে। অবশ্য এইসব গবেষণার ফলাফলকে নস্যাৎ করতে সরকারি সুযোগ-সুবিধায় লালিত পালিত, ঠান্ডা ঘরের ভূতত্ত্ববিদদের ‘manufactured’ রিপোর্ট হাজির করতে প্রশাসন বেশি সময় নষ্ট করেনি। অর্থাৎ উন্নয়নের বুলডোজার চলছে বদ্রিনাথের বুক জুড়ে। কুৎসা-অপপ্রচারকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ‘নয়া ভারত’-এর বিকাশ উৎসবে সেজে উঠছে বদ্রিনাথ।
তিন.
ঘুম উড়ে গেছে সচেতন সাধারণ মানুষের। গত কয়েকবছরে জলস্ফীতিতে ভেঙে গেছে অলকানন্দার দুধারের অনেক ঘাট। প্রতিদিন অল্প অল্প করে খসে পড়ছে ঝুরো মাটি। ওই অঞ্চলের বয়স্ক মানুষদের নজর এড়াচ্ছে না কিছুই। এই মাটিতে জন্ম থেকে বেড়ে ওঠা মানুষেরা জানেন নদী কথা বলে, মাটির চরিত্রে লুকিয়ে থাকে বিপদের নির্ঘণ্ট। ২০১৩ সালের কেদারনাথ বিপর্যয় কিংবা এবছরের জোশিমঠের ঘটনা এখনও টাটকা। তার ওপর পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অপ্রত্যাশিত অতিবর্ষণ, ঘটছে ছোটখাট মেঘ-বিস্ফোরণের ঘটনা। বিপদের বাণী শোনাচ্ছেন ৯০ বছরের যুবক চণ্ডীপ্রসাদ ভাট। নব উন্নয়নের জোয়ার দেখে নবতিপর ভাটসাহেব প্রমাদ গুনছেন। তাঁর স্পষ্ট কথা, ৫০ বছর আগে মানুষ, বিজ্ঞানী এবং সরকারের সদিচ্ছাতে বাঁচানো গিয়েছিল দেবভূমিকে, কিন্তু তিনি ব্যর্থ হয়েছিলেন ২০০৯ সালে। যখন তিনি বারংবার চিঠি দিয়ে সতর্ক করেছিলেন কেদারনাথের সম্ভাব্য বিপর্যয় বিষয়ে, তাঁর সমস্ত চিঠিকে উপেক্ষা করেছিল তৎকালীন সরকার, যার ফলাফল ২০১৩ সালের মহা বিপর্যয়।
২০২৩ সালে দাঁড়িয়ে আমরা স্মরণ করছি ৫০ বছর আগের গণ আন্দোলনের ইতিহাসকে। কিন্তু এবার কে বাঁচাবে দেবভূমিকে? মানুষ? কোন মানুষ? যারা উত্তরকাশীতে ‘দেবভূমি রক্ষা অভিযান’-এর নামে মুসলিম খেদানোর ডাক দেয়? নয়ডা মিডিয়ার অনুপ্রেরণায় ‘লাভ জিহাদ’-এর ধুয়ো তুলে ভাতে মারার চেষ্টা করে নিজের সহনাগরিকদের? বিশেষজ্ঞরা? সরকারি পদ আর ফান্ডের লোভে যারা কিলো দরে বেচে দেয় নৈতিকতাকে? সরকার? থাক, এ প্রসঙ্গে শব্দ খরচ না করাটাই শ্রেয়।
আশা করব আগামীতে এমন দিন না আসুক যেদিন লিখতে হবে,
বিপদ, তোমার সাক্ষাৎ পেয়ে কিছু করতে পারিনি বলে
বদ্রিনাথ ভেসে গেল অলকানন্দা জলে।
(ক্ষমা করবেন জয় গোস্বামী)
*মতামত ব্যক্তিগত