মনসারুল হক
এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে যা আমাদের চোখে পড়ছে ও ক্রমশ আরও বেশি করে চোখে পড়বে তা হল গ্রামবাংলার নিচের তলার পিছিয়ে থাকা মানুষের ঘুরে দাঁড়ানো, দুর্নীতিবাজ শাসকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। এই মানুষদের একটা বড় অংশ আদিবাসী এবং খেটে খাওয়া লুঙ্গি পরা মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ। এঁদের আত্মবলিদানের মর্যাদা কি উপরের তলায় বসে সামগ্রিক রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করা ব্রাহ্মণ্যবাদী নেতারা দেবেন? এই যুগের বাম নেতৃত্ব কি সাচার কমিটির রিপোর্টের ঊর্ধ্বে উঠে সত্যিই কিছু করতে ইচ্ছুক?
পঞ্চায়েত ভোট দুয়ারে। ঈদে বাড়ি গিয়ে দেখি এই ভোট-উৎসবে চারিদিকে সাজো-সাজো রব। অন্যান্য উৎসবের সঙ্গে এই উৎসবের পার্থক্য হল বাকিগুলোতে আনন্দ থাকে, খুশি থাকে, আর এই গণতন্ত্রের উৎসবের আগে বহু মানুষের প্রচণ্ড ভয় বাসা বাঁধে। বিশেষ করে বিরোধী রাজনীতি অর্থাৎ বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ করা মানুষগুলো প্রতি মুহূর্তে গভীর আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করেন— কী হয়, কী হয়। আতঙ্কিত হওয়ারই কথা৷ এখনও অবধি পঞ্চায়েত ভোট-উৎসবে শুধুই রক্তপাত দেখেছি আমরা। শেষ খবর পাওয়া অবধি আমাদের রাজ্যে সম্ভবত ১২ জন সাধারণ মানুষ হিংসার বলি হয়েছেন এই ভোট-উৎসবের হাঁড়িকাঠে। তবে শুধুই কি আতঙ্ক রয়েছে?
না, শুধুমাত্র আতঙ্ক নয়। আতঙ্কের সঙ্গে সঙ্গে এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রাক্কালে সাধারণ মানুষের মনে রয়েছে রুখে দাঁড়ানোর অদম্য ইচ্ছা, সবার ভোট সবাই নিজেই দেবে এই আশা। পাশাপাশি দীর্ঘ কয়েক বছর পরে বহু জায়গায় ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার আশা নিয়ে বুক বাঁধছে বিরোধী রাজনৈতিক দলের সমর্থকরা। শেষবার এরকম পঞ্চায়েত ভোট খুব সম্ভবত আমরা ২০০৮ সালে দেখেছিলাম, শাসকদলের বিরুদ্ধে সবরকম লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত ছিল রাজ্যের তৎকালীন বিরোধীরা।
বলা দরকার, এই খুনোখুনির বাইরেও এবারের পঞ্চায়েত ভোটের বেশ কিছু বিশেষত্ব রয়েছে। একটা বড় বিশেষত্ব হল— একটা বড় অংশের মুসলিম ভোটারদের তৃণমূলের থেকে দূরে সরে যাওয়া। মূলত মালদা, মুর্শিদাবাদ, দিনাজপুর, উত্তর এবং দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা, হুগলি, সঙ্গে দুই বর্ধমান এবং বীরভূমে এই মুহূর্তে বিরোধী ঝান্ডা পতপত করে উড়ছে। অকুতোভয় মুসলমান যুবকদের একটা বড় অংশের তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতি মোহভঙ্গ হয়েছে এবং তারা শাসকদলের ২০১৮-র পঞ্চায়েত ভোটের টেকনিককে পাল্টে দিতে প্রস্তুত। যার ফলে বহু জায়গায় শাসক দল তৃণমূলকে এবার আমরা পিছু হটতে দেখেছি। মালদা, মুর্শিদাবাদে মুসলমান যুবকেরা তৃণমূলকে হারিয়ে কংগ্রেসের হাতে পঞ্চায়েত তুলে দিতে ইচ্ছুক। বিরোধীরা মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, শাসকের চোখে চোখ রেখে কথা বলছে, আর তাই এবারের পঞ্চায়েত ভোটের প্রাক্কালে বিরোধী দলে সমর্থকের প্রথম লাশটা পড়েছে মালদাতেই। অপরদিকে সদ্য বিধায়ক হওয়া পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির নতুন এক্স ফ্যাক্টর নওশাদ সিদ্দিকির সমর্থকরা উত্তর এবং দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার বিভিন্ন জায়গায় পাল্টা লড়াই দিতে প্রস্তুত। ফলস্বরূপ, আমরা দেখেছি ভাঙড়ে, ক্যানিং-এ আইএসএফ-এর সমর্থকেরা মাথায় কাফন বেধে শাসকদলের মদতপুষ্ট গুণ্ডাবাহিনির বোমা ও গোলার সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছেন। ফলে এখানেও রক্ত ঝরেছে, কিন্তু এবার যেন তৃণমূল গুণ্ডাবাহিনির জুলুম বনাম বিরোধীদের জেদের লড়াই। বর্ধমান এবং বীরভূমে বামেদের শক্তিশালী হওয়ার পিছনেও মূলত এই মুসলমান এবং আদিবাসী যুবকদের সাহস এবং আত্মত্যাগের প্রস্তুতি এবারের পঞ্চায়েত ভোটকে রাজনৈতিকভাবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।
এবারের পঞ্চায়েত ভোটের আরেকটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল বিজেপির ২০১৯-২১-এর সমর্থক-বেস থেকে নিম্নবর্গের হিন্দু অর্থাৎ শিডিউল কাস্ট এবং ওবিসি ভোট ফ্লোটিং হয়ে আবার বামপন্থীদের কাছে ফিরে আসা। আদতে এরা প্রাক্তন বাম পরিবারের পরবর্তী প্রজন্মের লোকজন যাদের একটা বড় অংশ মুসলিম বিদ্বেষের প্রভাবে এবং স্থানীয় তৃণমূলের অত্যাচারে ২০২১-এর বিধানসভা ভোটে বিজেপিকে তাদের উদ্ধারকর্তা ভেবে নিয়েছিল। ভেবেছিল, বিজেপি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারিয়ে রাজ্যে ক্ষমতায় আসবে এবং পশ্চিমবঙ্গে যোগী মডেল নিয়ে আসবে। সেটা সম্ভব হয়নি কারণ ২০২১-এ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২১৩টি আসন জিতে তৃতীয়বারের জন্য মসনদে ফিরেছেন, ফলে নিচের তলার একদা-বাম সমর্থকদের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে। তাই পঞ্চায়েত স্তরে ক্ষমতার স্বাদ পেতে তারা আবার লাল ঝান্ডার দিকেই ফিরে আসছেন। এরা নিঃসন্দেহে সুবিধাবাদী ও সুযোগসন্ধানী। এদের বেশিরভাগের ভোটই হয়তো আগামী লোকসভা নির্বাচনে আবার হিন্দু-হৃদয়-সম্রাটের পক্ষেই যাবে। এই ব্যর্থতার দায় নিতে হবে আমাদের রাজ্যের বাম নেতৃত্বকেই, কারণ তারা নিজেরাই ক্ষমতার মোহে নিজেদের নিচুতলার ভোটারদেরকে বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির বিষ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করতে অসমর্থ হয়েছিল।
উদাহরণস্বরূপ, পূর্ব বর্ধমান জেলায় আমার নিজের পঞ্চায়েত এলাকার কথাই বলি। আমাদের পঞ্চায়েতে ১৯টা বুথ, যার মধ্যে ৭টা মুসলমান ভোটার-নিয়ন্ত্রিত আর বাকি ১২টা নিম্নবর্গের হিন্দু এবং আদিবাসী মূলত বাউরি, বাগদি, এবং মাঝি ইত্যাদি সম্প্রদায়ের মানুষদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এই ৭টা বুথে লড়াইটা হাড্ডাহাড্ডি, বোমা-গুলি খেয়েও মুসলমান যুবকরা ঠিকঠাক ভোট দিতে পারলে ফল হবে তৃণমূল ৩/৪ আর সিপিআই(এম) ও কংগ্রেস ৪/৩। বাকি ১২টা বুথের ৮০ শতাংশ ভোটার গত লোকসভা এবং বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে ভোট দিয়েছিল। কিন্তু এবারের পঞ্চায়েতে তাদের ভোটের অন্তত ৪৫-৫০ শতাংশ ভেসে ভেসে বামফ্রন্টেই ফিরে আসবে। তাই ওই ১২টার মধ্যে অন্তত ৮টাতে বামফ্রন্ট বনাম তৃণমূলের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে৷ বাকি ২টো বুথে বিজেপি আর ২টোয় সিপিআই(এম) অনায়াসে জিতছে।
যদিও বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দু উদ্বাস্তুদের জন্য নিজেদের শাসনকালে সবচেয়ে বেশি কাজ করা বামফ্রন্ট আজ নিজেদের অনুগত বাঙাল ভোটারদের ধরে রাখতে অক্ষম। পাশাপাশি, একসময়ের ভোটব্যাঙ্ক মতুয়ারাও ক্রমে দূরে সরে গেছেন। নদীয়ায় বিজেপির বাড়বাড়ন্তের মূল কারণ হল বামেদের দুর্বল হয়ে পড়া এবং সেই ভোট মূলত উদ্বাস্তু হিন্দুদের মুসলিমবিদ্বেষের কারণে বিজেপির কাছে চলে যাওয়া। ঠিক যেমন আমার পাশের পঞ্চায়েত রামনগর, যার ৮৫ শতাংশ ভোটার ওপার বাংলা থেকে উঠে আসা। বিজেপি সেখানে কোনও সংগঠন, মিটিং-মিছিল ছাড়াই জিততে চলেছে অথচ এই উদ্বাস্তুদের জমি দিয়ে বাড়ি-ঘর করে থাকতে দেওয়া, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার ব্যবস্থা করা— একসময় সমস্তটাই করেছিল বামফ্রন্ট সরকার।
২০২৩-এর পঞ্চায়েতের আরেকটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিক— এই নির্বাচনে আদিবাসী ভোটারদের ভূমিকা। মূলত ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাকুড়া এবং মেদিনীপুরের একটা বড় অংশের আদিবাসীরা এবারের পঞ্চায়েতে আবার লাল ঝান্ডার তলায় ফিরছে। আদতে এসব জায়গায় পঞ্চায়েত ভোট মূলত এইসব আদিবাসী এবং মুসলমান যুবকদের বলিদানের ফলাফল। খুব ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি, মুসলমান যুবকেরা কীভাবে বোমা-গুলি খেয়েও সুষ্ঠ ভোট করায় আর গণনার দিন আদিবাসী পুরুষেরা ব্লক অফিসের সামনে তীর-ধনুক হাতে নিয়ে ব্যালট পাহারা দেয়। এই আ-মু কম্বিনেশন অর্থাৎ আদিবাসী-মুসলমান যুগলবন্দি এবারের ভোটে বিরোধীদের অক্সিজেন সিলিন্ডার।
আমার নিজের গ্রাম বিষ্ণুপুরের (থানা— আউসগ্রাম, জেলা— পূর্ব বর্ধমান) সিপিআই(এম)-এর পার্টি অফিস গত ১২ বছর ধরে বন্ধ। বাম জমানার মধ্যগগনে যারা ক্ষমতা ভোগ করতেন, সেইসব উঁচু জাতের হিন্দুদের কেউ আর কখনও ফিরে এসে লাল ঝান্ডা তুলে নিয়ে ধুলো সরিয়ে পার্টি অফিসটার দরজা খোলার কোনও চেষ্টা করেননি। এবারে মূলত গ্রামের মুসলমান এবং আদিবাসী যুবকেরা সাহস করে সেই অফিস খুলছে, পাড়ায় পাড়ায় লাল পতাকা বাঁধছে।
এবার আসি এবারের ভোটে স্থানীয় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে কিছু কথায়। আশ্চর্য ঘটনা, বিভিন্ন জায়গায় রাজ্যের পুলিশ বিরোধীদের প্রতি যেন কিছুটা ধনাত্মক ভূমিকা পালন করছে, যা গতবার অর্থাৎ ২০১৮-তে আমরা দেখিনি। ২০১৮-তেও আমরা দেখেছি রাজ্য পুলিশ শাসক দলের তরফে সরকারি গুণ্ডাবাহিনি হিসেবে কাজ করেছে। এবার এখনও অবধি তাদের সেই ভূমিকায় দেখা যায়নি। এর কারণ কী? এ কি রাজ্যজুড়ে বিরোধীদের ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার আভাস? নাকি এর পেছনে আরও বড়, আরও গূঢ় কোনও কারণ রয়েছে? এ ব্যাপারে একটু তলিয়ে ভাবলে অনেকগুলো সম্ভাব্য কারণের মধ্যে থেকে একটা বড় সম্ভাবনার আভাস বেরিয়ে আসবে।
কংগ্রেস ভেঙে বেরিয়ে আসা তৃণমূলও তার জনক দলের মতোই পরিবারতন্ত্রকে প্রাধান্য দেয়। আগামীর নেতা হিসেবে অভিষেক বন্দোপাধ্যায়কেই এগিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তাঁর নেতৃত্বে নতুন তৃণমূল গঠন করার বা নবজোয়ারের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আসলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ভাল করেই জানেন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে সম্ভবত এটাই তার শেষ টার্ম। এরপর যদি অভিষেককে মসনদে বসাতে হয় তাহলে সামনের লোকসভা নির্বাচন তাঁর অগ্নিপরীক্ষা। এদিকে তৃণমূলের ইমেজের পক্ষে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় কাঁটা হল নিচের তলার চরম দুর্নীতিগ্রস্ত নেতৃত্ব যাদের অপকর্মের গিঁট উপরতলায় অণুব্রত মণ্ডল, পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবধি বাঁধা থাকত। তাই পুরো রাজ্যে ছড়িয়ে থাকা এই বিপুল পরিমাণ দুর্নীতির জাল ছেঁড়া অর্থাৎ দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদেরকে সরানো যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ ও কষ্টসাধ্য কাজ। এমনকি তা করতে গেলেও তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব শুরু হয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে এই পঞ্চায়েত ভোট অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুকূলে একটা ছাঁকুনির কাজ করতে পারে। এবারের পঞ্চায়েত ভোটের আগে গ্রামবাংলার সাধারণ মানুষ তৃণমূলের নিচের তলার আকণ্ঠ দুর্নীতিতে ডুবে থাকা নেতাদের বিরুদ্ধে ভোট দিতে দলে দলে বিরোধী ঝান্ডা হাতে তুলে নিচ্ছে, ঠিক একইভাবে পঞ্চায়েত ভোটে জয়ী বিরোধী প্রার্থীদের ভোটের পরে তৃণমূলের ঝান্ডা হাতে তুলে দিয়ে তৃণমূলে ফিরে আসতে বলা হবে। এটাই এখন তৃণমূলের নয়া ‘বায়রন বিশ্বাস মডেল’। এই যে এখন স্থানীয় পুলিশ বিরোধীদের বিরুদ্ধে কোনও কেস দিচ্ছে না বা হয়রানি করছে না, ভোটে জেতার পরে তৃণমূলে যোগ না দিলেই তাকে চাপ দেওয়ার ও ভয় দেখানোর প্রক্রিয়াগুলো শুরু করে দেওয়া হবে৷ এতে এক ঢিলে তিন পাখি মারবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এক, এর ফলে তিনি নিজের দলের এখনকার আদ্যন্ত দুর্নীতিগ্রস্ত নিচুতলার বেশ কিছু নেতাকে সহজে ঝেড়ে ফেলতে পারবেন, তাতে অভ্যন্তরীণ অসন্তোষ ও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কোনও সম্ভাবনা থাকবে না৷ দ্বিতীয়ত, জেতা প্রার্থীকে দলে নেওয়ার মাধ্যমে পঞ্চায়েত স্তরে তৃণমূলের ক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রণ কায়েম রাখা। এবং তৃতীয়ত, নতুন জনাদেশ পেয়ে জিতে আসা নেতাদের নিজের দলে টেনে নিয়ে দলের একটা অপেক্ষাকৃত স্বচ্ছ ভাবমূর্তি নির্মাণ করার চেষ্টা, যদিও তাতে জয়ী প্রার্থীদের বিশ্বাসযোগ্যতা কতখানি বজায় থাকবে তা সন্দেহের বিষয়। সে যাই হোক না কেন, এইবার বিরোধীদের পঞ্চায়েত ভোটে জেতার চেয়েও বড় চ্যালেঞ্জ হতে চলেছে জেতা আসনে নিজেদের বিজয়ী প্রার্থীগুলোকে ধরে রাখা। মানুষের ভোটে সদ্য নির্বাচিত, ‘তাজা’ ও ‘দাগহীন” জনপ্রতিনিধিদের দলে এনে আগামী লোকসভা ভোটের আগে দুর্নীতিমুক্ত নতুন তৃণমূলের মোমেন্টাম তৈরির একটা মরিয়া চেষ্টা অভিষেক বন্দোপাধ্যায় অবশ্যই করবেন— এটা বলাই যায়।
সবকিছুর পরেও এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে যা আমাদের চোখে পড়ছে ও ক্রমশ আরও বেশি করে চোখে পড়বে তা হল গ্রামবাংলার নিচের তলার পিছিয়ে থাকা মানুষের ঘুরে দাঁড়ানো, দুর্নীতিবাজ শাসকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। এই মানুষদের একটা বড় অংশ আদিবাসী এবং খেটে খাওয়া লুঙ্গি পরা মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ। এঁদের আত্মবলিদানের মর্যাদা কি উপরের তলায় বসে সামগ্রিক রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করা ব্রাহ্মণ্যবাদী নেতারা দেবেন? এই যুগের বাম নেতৃত্ব কি সাচার কমিটির রিপোর্টের ঊর্ধ্বে উঠে সত্যিই কিছু করতে ইচ্ছুক? নাকি মুসলমান আর আদিবাসীদের লাশের উপরে বসে পঞ্চায়েত দখল করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘দুধেল গাই’ মডেলেরই নতুন একটা রূপভেদ তাঁরা দেখাতে চায় মাত্র? ভোটের মুখে আক্রান্ত হওয়া নিচের তলার সাধারণ কর্মীদের প্রতি ঠান্ডা ঘরে বসে মিডিয়াকে বাইট দেওয়া উপরতলার নেতাদের অনীহা সেই আশঙ্কাকেই আরও শক্তিশালী করে তুলছে।
*মতামত ব্যক্তিগত