অভিজ্ঞান সরকার
যেইদিন ছেলেটির মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছিল, সেইদিন থেকেই যাদবপুরের বিবেকি ছাত্রছাত্রীরা তীব্র আওয়াজ তুলেছে অভিযুক্তদের শাস্তির দাবিতে, র্যাগিং নামক কুৎসিত সংস্কৃতির বিরুদ্ধে। ছেলেটির বিচারের লড়াই-এর পাশাপাশি যাদবপুরের ছাত্রছাত্রীদের লড়তে হচ্ছে আরও কিছু দানবের বিরুদ্ধে। যাদবপুর একটি পাবলিক ইউনিভার্সিটি। পাবলিক ইউনিভার্সিটি শাসক চায় না, নিও-লিবেরাল দাসেরা পাবলিক ইউনিভার্সিটিগুলিকে প্রাইভেটে রূপান্তর করার নিরন্তর চেষ্টা চালাচ্ছে। হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিস্টরাও পাবলিক ইউনিভার্সিটি চায় না, তাদের যুক্তি হল সরকারের টাকায় পড়াশোনা করে শাসকের সমালোচনা ও বিরুদ্ধতার স্পর্ধা তারা মানবে না
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিং ও দুর্ভাগ্যজনক ছাত্রমৃত্যুর ঘটনা সমাজে ফের একটা আড়াআড়ি বিভাজন তৈরি করেছে। সমাজের বিরাট সংখ্যক ব্যক্তি, রাজনৈতিক দল ও সংখ্যাগরিষ্ঠ মিডিয়া যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, সেখানকার পরিবেশ ও রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে উত্তেজক আক্রমণ করছেন। যাদবপুরের হোস্টেল ও ক্যাম্পাসে র্যাগিং-এর ঘটনার নিন্দা করার পাশাপাশি এখানে দেশদ্রোহীদের বসবাস, এখানে মেয়েছেলে সিগারেট-মদ খায়, যাদবপুরের ঝোপেঝাড়ে নারীপুরুষকে অশ্লীল আচরণ দেখা যায় ইত্যাদি অভিযোগে সোশাল মিডিয়ার এক অংশের জনতা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া মুখে ফেনা তুলে ফেলেছে। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী ধুয়ো তুলে দিয়েছেন যে মার্কসবাদীরা র্যাগিং করে মেরে ফেলেছে ওই ছেলেটিকে। অর্থাৎ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বামপন্থী (এবং উগ্রবাম/নকশাল) পরিচয় ওতপ্রোতভাবে যুক্ত এবং যে-কোনও দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার জন্য কমিউনিজম দায়ী! সমাজের একটি বড় অংশ কুযুক্তি দিয়ে এইভাবে একটি প্রতিষ্ঠানকে আক্রমন করছে— এর অর্থ হল সমাজে প্রতিক্রিয়াশীল মতাদর্শ প্রবল শক্তিশালী। এই প্রতিক্রিয়াশীল অংশ আস্থা রাখে পুরনো ফরাসি প্রবাদটিতে— তুমি যদি তোমার কুকুরটিকে মারতে চাও, আগে প্রমাণ করো কুকুরটি পাগল। জেএনইউ-র ক্ষেত্রে ২০১৬ সালে এইরকম একটি সংগঠিত ষড়যন্ত্র আমরা দেখেছিলাম। ‘কাশ্মির মাঙ্গে আজাদি’র স্লোগানকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছিল দেশদ্রোহী, টুকরে টুকরে গ্যাং ইত্যাদি তকমা লাগানোর সুচারু প্রয়াস— এবং পরিশেষে জেএনইউ-র ইউনিয়নকে অকেজো করে সেখানে জাতীয়তাবাদী হিন্দুত্বকে স্থাপন। যাদবপুরেও ইলেকট্রনিক মিডিয়া শকুনের উৎসাহে পথেঘাটে কন্ডোম, গাঁজা, গর্ভনিরোধক ট্যাবলেট খুঁজছে ও বীভৎস সব স্টোরি উৎপাদন হচ্ছে। প্রতিক্রিয়াশীলদের চিল্লামেল্লির এই মধ্যবর্তী সময়টায় যুক্তিসঙ্গত কিছু তর্ক করা অসম্ভব। বরং নিজেদের মধ্যে আলোচনা, সমালোচনা ও আত্মসমালোচনাগুলিকে সংহত করা জরুরি।
যাদবপুরের ক্যাম্পাস ও হোস্টেলে র্যাগিং হয় দীর্ঘদিন ধরে এই সত্যটি মেনে নিয়ে যাবতীয় আলোচনা করা উচিত। শুধু র্যাগিং কেন, জাতি-বর্ণভিত্তিক নিপীড়ন, সংখ্যালঘুদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক ব্যবহার, যৌন হিংসার ঘটনা, অহরহ পিতৃতান্ত্রিক বিষাক্ততা, আভিজাত্যসঞ্জাত হেনস্থা সবই ঘটেছে এখানে— তিন দশক আগে গ্রাম থেকে আসা ইতিহাসের এক ছাত্রী ফটরফটর করে ইংরেজি বলতে না পারার অপরাধে শিক্ষিকার কাছে অপমানিত হয়ে আত্মহত্যা করেছিল। যাবতীয় অসুস্থ সামাজিক চেতনার শরিক যাদবপুর, এইসব সযত্নে লালিত পাপ গেটের বাইরে খোলসের মতো ত্যাগ করে কেউ আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকি না। আবার আমাদের প্রতিক্রিয়ার ভাবনাগুলি ধাক্কা খায় নানান প্রগতিশীল উদ্যোগে, পত্রপত্রিকার লেখা পড়ে, আড্ডায়, তর্কাতর্কিতে, রাজনৈতিক প্রোগ্রামে, ব্যারিকেডে। প্রতিক্রিয়াশীল ও প্রগতিশীলতার ভাবনার দ্বন্দ্বমূলক সংঘাত ঐতিহাসিক সত্য, সামাজিক বিকাশ এইভাবেই হয়। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সংঘাত একটা সময়ে প্রবলভাবে ছিল, অন্যান্য কলেজ-ইউনিভার্সিটিতেও ছিল। অন্যান্য কলেজ-ইউনিভার্সিটিতে শাসক দলের ক্ষমতা যত কেন্দ্রীভূত হয়েছে, প্রতিক্রিয়ার একরৈখিক অনুশীলন তত নর্মালাইজ হয়েছে, বিশেষত আশির দশক থেকে। তথাকথিত সাধারণ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধিক দাদাগিরির ঘটনা, র্যাগিং, ছাত্র ইউনিয়ন ও নির্বাচনে মারামারি, সন্ত্রাস, খুনের ঘটনা কখনও-সখনও খবরে আসে, আবার মিলিয়ে যায়, সামাজিক উত্তেজনা তৈরি হয় না। অধিকাংশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে সুস্থ প্রগতিশীল বিরোধীদের অনুপস্থিতির কারণে সেগুলি বর্বর দুর্নীতিগ্রস্ত ক্ষমতাবানদের বৃন্দাবনে পরিণত হয়েছে, তা নিয়ে সামাজিক স্তরে বিশেষ উচ্চবাচ্য নেই। উলটোদিকে, অনেক ক্ষয়ের পরেও যাদবপুরে শাসক মতাদর্শের দল এখনও সরাসরি দাপাতে পারেনি। শাসক দলগুলির অসুস্থ, সমস্ত অনৈতিকতাকে নর্মালাইজ করে দেওয়ার রাজনীতি এখনও কল্কে পায়নি যাদবপুরে। এখন বাসরঘরে ছিদ্র খুঁজে পেয়ে বিষাক্ত ফণা তুলেছে তৃণমূল-বিজেপির নেতারা। চোর-ছ্যাঁচ্চর, ঘুষখোর, নারীবিদ্বেষী, দাঙ্গাবাজরা গলার শিরা ফুলিয়ে যাদবপুরের ছাত্রছাত্রীদের পুলিশ লেলিয়ে, মামলা মোকাদ্দোমায় জড়িয়ে ঠান্ডা করে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। দিলীপ ঘোষের শেষ সংযোজন— কাশ্মিরের মতো যাদবপুরের ‘নপুংসক’দের মিলিটারি দিয়ে সিধে করে দেওয়া হবে। কাশ্মিরের মতো স্পর্শকাতর ও প্রায় যুদ্ধক্ষেত্রের মতো অঞ্চলের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনা থেকে বোঝা যায় যাদবপুর সম্পর্কে হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিস্টদের দৃষ্টিভঙ্গি।
র্যাগিং-এর মতো ঘৃণ্য অপরাধ ও একটি ছাত্রের মর্মান্তিক মৃত্যু সকলকে শিহরিত করেছে, ব্যথিত করেছে। যাদবপুরের নব্বইভাগ ছাত্রছাত্রী র্যাগিংকে ঘৃণা করে বলেই লেখকের বিশ্বাস। এবং যাদবপুরের ছাত্রছাত্রীরা এই জঘন্য অপরাধীদের খুঁজে বার করা ও দোষীদের উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে লড়ে যাচ্ছে। কিন্তু নানা কারণে যাদবপুরের ছাত্রছাত্রীরা তাদের দাবির ন্যায্যতা হারিয়েছে, অন্তত বৃহৎ জনপরিসরে। তার কারণ বোধহয় যাদবপুরের ছাত্রসংগঠন ও তাদের রাজনীতির আপসমূলক অবস্থান, যে আপস বাইরে থেকে নজর করা যায় না। আপাতভাবে যাদবপুর প্রগতিশীল রাজনীতি ও মুক্তচিন্তার প্রতীক হলেও কোথায় ক্ষয় হয়েছে সেটা পর্যালোচনা জরুরি।
গত দুই দশকে একাধিকবার একাধিক আন্দোলনে মুখর হয়েছে যাদবপুর, কখনও পুলিশের লাঠি চালানোর বিরুদ্ধে (২০০৫), কখনও ভিসির পদত্যাগের দাবিতে (হোক কলরব, ২০১৪)। এগুলি ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ বিষয়কে কেন্দ্র করে। এছাড়া সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের সময় উচ্ছেদ-বিরোধিতায়, রোহিত ভেমুলার মৃত্যু, জেএনইউতে উমর খালিদ=কানহাইয়া কুমারের উপর হিন্দুত্ববাদীদের আক্রমণের বিরুদ্ধে, এনআরসি ও সিএএ-বিরোধী আন্দোলনের সময় যাদবপুরের ছাত্রছাত্রীরা প্রবলভাবে প্রগতিশীল রাজনৈতিক অবস্থান নিয়েছিলেন। এই প্রগতিশীলতার পর্যায় বাদ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ বিষয়ের আন্দোলনগুলিকে কাঁটাছেঁড়া করলে হয়ত যাদবপুরের রাজনীতিকে বোঝা সম্ভব।
২০০১ সালে যাদবপুরে ‘ফি হাইক’ হয়, তার বিরুদ্ধে ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির ক্ষমতাসীন ডেমোক্রাটিক স্টুডেন্টস ফ্রন্টের (ডিএসএফ) নেতৃত্বে বেশ ভালরকম আন্দোলন শুরু হয়েছিল। একাধিক ছাত্র সংগঠন (এআইএসএ, এআইডিএসও, ডিএসসি, পিডিএসএফ, আরএসএফ) শিক্ষার বেসরকারিকরণের ও পণ্যবাজারে শিক্ষার মূল্যনির্ধারণের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলে, যা সেইসময়কার নিও-লিবেরালিজমের বিরুদ্ধে প্রগতিশীল বামদের যুক্তস্বর ছিল। এসএফআই ‘ফি হাইক’-এর পক্ষে ছিল। সেইসময় ফার্স্ট ইয়ারে ঢুকেছি, হোস্টেল থেকে ডিপার্টমেন্টের দিকে যাচ্ছি, তখন স্টুডেন্টস হলের সামনে আন্দোলন ও অবস্থান চলছিল। সেই সময় হোস্টেলের বিখ্যাত আবাসিক অর্ফিউস মুকোটি রাস্তায় ঘাড় ধরে গর্জন করে উঠল, এই বাচ্চা, কোথায় যাচ্ছিস! আন্দোলনে আয়। মহানন্দে ক্লাস কাটিয়ে আমি সেই আন্দোলনের আনন্দসাগরে ডুব দিলাম। এখন বিষয়টা হচ্ছে, ব্যক্তিগত পক্ষপাতমূলক অবস্থানকে সামগ্রিক ফার্স্ট ইয়ারের মতামত বলে চালানো সম্ভব নয়। অনেক ফার্স্ট ইয়ারই ‘ফি হাইক’-বিরোধী আন্দোলনে উপস্থিত থাকার চেয়ে ক্লাস করতে আগ্রহী ছিল, সন্ধ্যাবেলা ঘরে ফিরতে, আবাসিকরা হোস্টেলে ফিরতে। ফি বিরোধী আন্দোলন ছিল একটি বৃহৎ অর্থনৈতিক আক্রমণের বিরুদ্ধে নীতিগত লড়াই। সেই সময় আন্দোলনের একটি অন্যতম ফর্ম হয়ে ছিল প্রশাসনিক ভবনে অবস্থান ও ঘেরাও। দিনের বেলা ডে-স্কলার আন্দোলনকারীরা ঘেরাও-এ অংশগ্রহণ করত, রাতে হোস্টেল আবাসিকরা। ফি হাইক পরবর্তী বড় আন্দোলনের ঘটনা ছিল ২০০৪-এ, সেমিস্টার সিস্টেমের ভুল প্রয়োগে ও অফিশিয়াল গলদে একাধিক ছাত্রের সাপ্লি আসে, সেই নিয়ে আন্দোলন করতে গিয়ে প্রবল গণ্ডগোল বাধে অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের সঙ্গে। এবং প্রশাসনিক ভবনে ভাঙচুরের ঘটনায় ২০০৫ সালে পাঁচ ছাত্রকে বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কারের বিরুদ্ধে বিরাট আন্দোলন শুরু হয়, আমরণ অবস্থানে পুলিশ লাঠি চালায়। কর্তৃপক্ষ বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত ফিরিয়ে নেয়। এই সময়ও হোস্টেলের আবাসিকরা দিনে ও বিশেষ করে রাতে আন্দোলনের সমর্থনে মাটি কামড়ে পড়ে থেকেছে।
এই সময়কালে একটি বিশেষ রাজনৈতিক পরিবর্তন হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের, উপরোক্ত সেন্ট্রাল অর্গানাইজেশনগুলির (এআইএসএ, এআইডিএসও, ডিএসসি, পিডিএসএফ, আরএসএফ ও অন্যান্য) সমান্তরালে আরও একটি সংগঠনের উত্থান, তারা সেন্ট্রাল অর্গানাইজেশনগুলির বিরোধিতা করে, সেন্ট্রাল অর্গানাইজেশনের ভার্টিকাল স্ট্রাকচারের বিরুদ্ধে হরাইজন্টাল স্টাকচারের প্রচার করে (ভার্টিকাল ও হরাইজন্টাল স্ট্রাকচারের বিতর্ক এই প্রবন্ধের সুযোগের বাইরে), প্রবলভাবে অরাজনীতির সংস্কৃতিকে তোল্লাই দিয়ে, ছাত্ররাজনীতিকে সামাজিক আন্দোলন থেকে ক্রমাগত দূরে ঠেলার আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়ে, তার জন্য আলফাল যুক্তিবিন্যাস তৈরি করে, এবং জেনারেল বডি মিটিংকে সর্বোচ্চ গণতান্ত্রিক অনুশীলনের নামে সংখ্যাগরিষ্ঠ ও পূর্বনির্ধারিত মতামতকে চাপিয়ে দেওয়ার জঘন্য খেলায় নেমেছিল। তখন সংগঠনটির নাম ছিল ছাত্র আন্দোলন প্রস্তুতি। জেনারেল বডি (জিবি) মিটিং-এর মাধ্যমে যাদবপুরের ছাত্র আন্দোলনের যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া শুরু হয়, যেগুলিতে একশো-দেড়শো ছাত্রছাত্রী উপস্থিত থাকত, যা যাদবপুরের হাজার পাঁচেক ছাত্রছাত্রীর মতামত বলে চালানো হত। প্রথম পর্যায়ে, সাংগঠনিক বিস্তারকালে ছাত্র আন্দোলন প্রস্তুতির নেতারা ছাত্রছাত্রীদের প্রতিনিধিত্বমূলক অংশ অর্থাৎ অফিস-বেয়ারার ও প্রগতিশীল অংশের ঘনীভূত রূপ অর্থাৎ সেন্ট্রাল অর্গানাইজেশনগুলিকে অকেজো করার প্রক্রিয়া শুরু করে। যেহেতু সেন্ট্রাল অর্গানাইজেশনগুলি রাজনৈতিকভাবে সংখ্যালঘু, সেন্ট্রাল অর্গানাইজেশনগুলির অধিকাংশ রাজনৈতিক অবস্থান (যেমন র্যাগিং নিয়ে বিরোধিতা, নারীবিদ্বেষ নিয়ে বিরোধিতা, বাৎসরিক ফেস্ট ও তার অভিমুখ, প্রগতিশীল রাজনীতির প্রচার, জঙ্গি শ্রমিক আন্দোলন ও আরও অসংখ্য রাজনৈতিক অবস্থান) গণমানসে জনপ্রিয় নয়, সেই অবস্থানগুলিকে ফল্টলাইন ধরে প্রতিক্রিয়াশীল সংখ্যাগরিষ্ঠের মানসিকতাকে তুষ্ট করার কৌশল নেয় ছাত্র আন্দোলন প্রস্তুতির নেতারা, ওইভাবেই তাদের সদস্য ও সমর্থক সংখ্যা বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। জিবি হয়ে ওঠে যাবতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের কেন্দ্র, জিবিতে সত্তর-আশিজনের প্যাকে এসে ছাত্র আন্দোলন প্রস্তুতির সদস্যরা গণতান্ত্রিকভাবে চিৎকার চেঁচামেচি করে নিজেদের সুবিধাজনক সিদ্ধান্ত পাশ করিয়ে যাদবপুরের গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল রাজনীতির বারোটা বাজানো শুরু করেছিল ২০০৫ থেকে। কিন্তু সেসময় তাদের সেইভাবে অফিস-বেয়ারার ছিল না, তার জন্য ডিএসএফ মিটিং-এ ইউনিয়ন ইলেকশনের আগে গাদা গাদা মেম্বার ঢোকানো শুরু করেছিল, যাদের রাজনৈতিক বোধ আদৌ ডিএসএফ-এর মতো অনুচ্চ প্রগতিশীল অবস্থানের সঙ্গেও খাপ খেত কিনা সন্দেহ। ২০০৬-এ ডিএসএফ-এর দুইখানি প্যানেল পড়েছিল। পরবর্তীতে ডিএসএফ দখল করে ছাত্র আন্দোলন প্রস্তুতি, এবং গত দেড় দশকে ডিএসএফ-এর রাজনৈতিক অস্তিত্ব মুছে ফেলে।
প্রতিক্রিয়ার রাজনীতিকে তোল্লাই দেওয়ার ফল ফলতে শুরু করে ২০০৭ নাগাদ, হোস্টেলের র্যাগিং-এর ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই ছাত্রকে বহিষ্কার করে কর্তৃপক্ষ। হোস্টেল থেকে দাবি উঠতে শুরু করে এই বহিষ্কার প্রত্যাহার করাতে হবে ইউনিয়নকে। যুক্তি আসে প্রতি বছর ইলেকশনের বৈতরণী পার হয় হোস্টেলের সমর্থনে, রাত জেগে ঘেরাও-এর সময় হোস্টেলের ছেলেদের নিয়ে যাওয়া হয়, তো হোস্টেলের ছেলেদের বাঁচানোর দায়িত্ব ইউনিয়নের। এই দাবির কারিগর ছিল হোস্টেলের ছাত্র আন্দোলন প্রস্তুতির নেতারা, এবং ইউনিয়নের অফিস বেয়ারাররা বাধ্য হয় ডেপুটেশন দিতে। ছাত্র আন্দোলন প্রস্তুতির দুই নেতা সেই সময় অত্যন্ত পলিশড ভাষায় একখানা প্যাম্ফলেট বার করেছিল যার মোদ্দা বক্তব্য ছিল র্যাগিং-এর অভিযোগে অভিযুক্তদের শাস্তি দেওয়া যাবে না।
হোস্টেলের বকলমে ছাত্র আন্দোলন প্রস্তুতির ওই দাবির কাছে নতিস্বীকার পরবর্তীতে হোস্টেলে ঘটে যাওয়া অপরাধগুলিকে ধামাচাপা দেওয়ার ক্ষেত্র তৈরি করেছিল। আমরা ২০১৪-র ‘হোক কলরব’ আন্দোলন নিয়ে আজও উচ্ছ্বসিত হই, যদিও সেই আন্দোলনের পূর্বস্মৃতি খুবই অন্ধকারাচ্ছন্ন। হোস্টেলের গেস্টরুমে এক আবাসিক ও তার বান্ধবীকে নিগ্রহ ও শ্লীলতাহানি করেছিল অন্য কিছু আবাসিক। মেয়েটির বিচার চেয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানানোর পর কালেকটিভের নেতৃত্ব প্রায় মেয়েটির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে নির্যাতিতাকেই প্রশ্নের মুখোমুখি ফেলে দেয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ছাত্র আন্দোলন প্রস্তুতি ততদিনে নাম বদলে ‘কালেকটিভ’ হয়েছে, তাদের মাথাগুলি একই ছিল। কালেকটিভের নেতা ও তৎকালীন ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিয়নের জেনারেল সেক্রেটারি ‘একটু পড়তে অনুরোধ করছি’ শীর্ষক ফেসবুক নোটে অদ্ভুত সব প্রশ্ন রেখেছিল যার কিছুটা অবিকৃতভাবে তুলে দিচ্ছি: ‘গুজরাট, কামদুনি, নন্দীগ্রামে ঘটে যাওয়া যৌননিগ্রহ/ধর্ষণের সঙ্গে এই ঘটনার তুলনা চলে না। কারণ ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যের’, ‘অভিযোগকারিণীর পক্ষ থেকে কোনও অভিযোগ ফেটসুতে আসেনি। ইঞ্জিনিয়ারিং বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রীই অভিযোগ নিয়ে সংশয় ব্যক্ত করেছিলেন’, ‘অভিযোগ সম্পূর্ণত বা অংশত যদি রাষ্ট্রীয়-প্রশাসনিক-কর্তৃপক্ষীয় বিচার পদ্ধতিতে ভুল বা মিথ্যা প্রমাণিত হয়… সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র শাস্তি বা নিন্দার মাধ্যমে হাত ধুয়ে ফেলা চলবে না’ ইত্যাদি ইত্যাদি। ডিএসএফ থেকেও প্রায় অনুরূপ একটি লিফলেট প্রকাশিত হয়, যাতে ‘অভিযোগের সত্যাসত্য (পূর্ণ বা আংশিক) যাচাই-এর দায়িত্ব আমাদের কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের হাতে ছাড়তে হচ্ছে’ বলে অনুযোগ করা হয়। সেইসময় দুটি শিবিরে ভাগ হয়ে গেছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা— একটি অংশ লড়ে যায় নিগ্রহকারীদের শাস্তির দাবিতে, অন্য অংশ অর্থাৎ কালেকটিভের নেতৃত্ব ও হোস্টেলের একদল বলতে থাকে কোনও যৌন নিগ্রহ হয়নি। অরবিন্দ ভবনে পুলিশের সন্ত্রাসের পরবর্তীতে ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির ইউনিয়ন ফেটসু ও কালেকটিভের নেতারা আন্দোলনের অভিমুখ সম্পূর্ণ ঘুরিয়ে দিয়ে ভিসির পদত্যাগের দাবিতে স্থির হয়ে থাকে ও ছাত্র আন্দোলনের জয় ঘোষণা করে। ২০১৪-র পরবর্তীতেও র্যাগিংকে কেন্দ্র করে অভিযোগ ধামাচাপা দিতে সক্ষম হয়েছে হোস্টেলের একটি বিশেষ অংশ ও কালেকটিভ সংগঠনের নেক্সাস। বলা ভাল র্যাগিং অথবা যৌন হেনস্থায় অভিযুক্তদের আড়াল করার ব্যবস্থাটিকে ইনস্টিটিউশনালাইজ করে ফেলেছিল এরা। অভিযোগ উঠলেই দলবল নিয়ে জিবি করে, সংখ্যাধিপত্যবাদের জঘন্য উদাহরণ সৃষ্টি করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হত যে কিছুই ঘটেনি। এইবার ছাত্রটির নির্মম মৃত্যু না হলে হয়তো এক্ষেত্রেও সবই আড়ালে থেকে যেত।
প্রশ্নটা হল, খালি কালেকটিভ বা ছাত্র আন্দোলন প্রস্তুতিতে দোষ দিয়ে কি আমরা হাত ঝেড়ে ফেলতে পারি? অন্যান্য সেন্ট্রাল অর্গানাইজেশনগুলির কি দায় বর্তায় না? বিশেষত ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টিতে রাজনীতি করা সেন্ট্রাল অর্গানাইজেশনগুলির? ডিএসএফ-এর মধ্যে আধিপত্য ও ইউনিয়নের অফিস বেয়ারার পদের দখল নিয়ে অতীতেও সংঘাত হয়েছে সেন্ট্রাল অর্গানাইজেশনগুলির, সংখ্যার সমীকরণ ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু সেই আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ছিল সহনশীলতার মধ্যে। ছাত্র আন্দোলন প্রস্তুতি সংখ্যার সমীকরণের খেলাটি ধরে ফেলে, হোস্টেল সেন্টিমেন্টকে কাজে লাগিয়ে সবচেয়ে সুবিধাবাদী অংশকে ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিয়নের ক্ষমতা দখলের কাজে লাগায়, এবং সবচেয়ে প্রতিক্রিয়াশীল অংশকে প্রগতিশীল রাজনীতির চালিকাশক্তিতে বসিয়ে দিয়ে ডিএসএফ-এর নৈতিক পতনের ভিত্তিভূমি তৈরি করে ফেলেছিল। আমরা যখন হোস্টেলে থাকতাম সেই সময় র্যাগিং হত, আবার র্যাগিং বিরোধী আওয়াজও ছিল প্রবল, একাধিক রুম ছিল প্রথম বর্ষের ছাত্রদের শেল্টার যেখানে ঢুকলে ওই অত্যাচার থেকে মুক্তি পাওয়া যেত। এবং অভিযুক্তদের রক্ষা করার দাবি তোলার স্পর্ধাও কারও ছিল না। ছাত্র আন্দোলন প্রস্তুতির সমর্থনে হোস্টেলের একটা অংশ ‘র্যাগিং-এ অভিযুক্তদের বাঁচাতে হবে’ এই ভয়াবহ সংস্কৃতির জন্ম দেয় ২০০৭-এ। ইউনিয়নের তৎকালীন অফিস বেয়ারাররা যারা হোস্টেলের সেই অংশ ও ছাত্র আন্দোলন প্রস্তুতির প্রবল চাপে কর্তৃপক্ষকে ডেপুটেশন দিতে বাধ্য হয়েছিল, পরবর্তীতে পদত্যাগ করে। কিন্তু সেই ট্র্যাডিশন চলতে থাকে। প্রশ্নটা হল, ২০০৭-এর পরবর্তী সময়ে সেন্ট্রাল অর্গানাইজেশনগুলি এই বিষয়ে রাজনৈতিক প্রতিরোধ গড়তে পারত না? ২০১৫ সালেও যাদবপুর মেইন হোস্টেল থেকে দুটি ছেলেকে মেরে বার করে দেওয়া হয় র্যাগিং-এর বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলার জন্য, সেসময়ও সেন্ট্রাল অর্গানাইজেশনগুলি নীরব ছিল। অফিস বেয়ারার পদের মায়া, সংখ্যালঘু হয়ে যাওয়ার ভয়, নির্বাচনে হেরে যাওয়ার ভীতি, হোস্টেলে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা এবং ডিএসএফ-এর নামমাহাত্ম্য বোধহয় সেন্ট্রাল অর্গানাইজেশনগুলিকে কালেকটিভ/ছাত্র আন্দোলন প্রস্তুতির বিকৃত দর্শনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে বাধা দিয়েছিল। মনে রাখা দরকার ডিএসএফ গত ৪৬ বছর ধরে ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিয়নের ক্ষমতায়। দীর্ঘদিনের ইউনিয়নকেন্দ্রিকতা ও ক্ষমতার অভ্যাস ডিএসএফ-এর মধ্যে স্থিতাবস্থার জন্ম দিয়েছে বহু আগেই— যদিও ডিএসএফ-এর শুরুর ইতিহাস ছিল অন্যরকম প্রতিস্পর্ধী।
ছাত্র আন্দোলন প্রস্তুতির আগমন ও বিকাশ এমন একটি সময়ে যখন নিও-লিবেরালিজিম ও তার দর্শন ধীরে ধীরে গেঁড়ে বসছে আমাদের সমাজে, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ ও পণ্যরতির ঘোরে বেঁধে বেঁধে থাকার স্বপ্ন ছিন্নবিচ্ছিন্ন হচ্ছে। নিও-লিবেরাল দর্শনের আড়ালে উত্তর-আধুনিকতা কখনও আমাদের চেতনাকে মুগ্ধ করেছে, কখনও সংগঠিত শ্রমিকশ্রেণির রাজনীতিকে আক্রমণ করেছে, কখনও অতি-গণতন্ত্রের অলীক বাণী ছড়িয়েছে। ছাত্র আন্দোলন প্রস্তুতির মাথারা হরাইজন্টাল, প্যারালাল সংগঠন ইত্যাদি ধোঁয়াটে কথাবার্তায় শ্রমিকশ্রেণির সংগঠনের মূল ভিত্তিকে আক্রমণ করে ও ছাত্রছাত্রী স্তরে সেই আক্রমণকে নিয়ে গিয়ে বিভিন্ন কমিউনিস্ট রেভোলিউশনারি পার্টি ও গ্রুপের ছাত্র সংগঠনগুলির (সেন্ট্রাল অর্গানাইজেশন) বিরুদ্ধে অরাজনীতির সংগঠনকে খাড়া করে— জিবির নামে অতি-গণতন্ত্রের মোড়কে নৈরাজ্যকে প্রতিষ্ঠা করে। ছাত্র আন্দোলন প্রস্তুতি/কালেকটিভের রাজনীতি দক্ষিণপন্থী প্রতিক্রিয়াশীলদের আশ্রয়স্থল। প্রগতিশীল রাজনীতির ব্যর্থতা হল গত দেড় দশক ধরে এদের সঙ্গে অনৈতিক আপস করে চলা, ইউনিয়নের ক্ষমতা ভাগাভাগি করার দায়ে চোখ বন্ধ করে রাখা। কী লাভ হয়েছে ডিএসএফকে চোখের মণির মতো করে রক্ষা করে, ইউনিয়নসর্বস্ব রাজনীতি করে? যাদবপুরের ছাত্রছাত্রীদের সংগ্রামী ইতিহাসের যাবতীয় অর্জন বর্তমানে প্রশ্নের মুখোমুখি। হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে খুব কাছে, অবক্ষয়ের রাজনীতি গ্রাস করতে আসছে বিশ্বচরাচর, এখন ইউনিয়ন সর্বস্বতার মধ্যপন্থা দিয়ে কি এই ধস আটকানো সম্ভব? সংখ্যালঘু ও অ-জনপ্রিয় হলেও মৌলিক বিষয়ে ফেরা উচিত সেন্ট্রাল অর্গানাইজেশনগুলির।
যেইদিন ছেলেটির মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছিল, সেইদিন থেকেই যাদবপুরের বিবেকি ছাত্রছাত্রীরা তীব্র আওয়াজ তুলেছে অভিযুক্তদের শাস্তির দাবিতে, র্যাগিং নামক কুৎসিত সংস্কৃতির বিরুদ্ধে। মনে রাখা দরকার ছেলেটির মৃত্যুর পর পরই হোস্টেল ও কালেকটিভের একটি অংশ বলতে শুরু করে র্যাগিং-এ মৃত্যু হয়েছে কিনা দেখতে হবে, ছেলেটি আত্মহত্যা করেছে কিনা বুঝতে হবে ইত্যাদি। ন্যারেটিভ বদলে দিতে ওস্তাদরা অবশ্য এই প্রচার চালানোর সুযোগ পায়নি বেশিসময়। ছেলেটির বিচারের লড়াই-এর পাশাপাশি যাদবপুরের ছাত্রছাত্রীদের লড়তে হচ্ছে আরও কিছু দানবের বিরুদ্ধে যারা আদা-নুন খেয়ে নেমেছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের অস্তিত্বের ন্যায্যতাকেই উড়িয়ে দিতে, পঠন-পাঠনের ঐতিহ্যকে ধ্বংস করতে। মনে রাখা দরকার, যাদবপুর একটি পাবলিক ইউনিভার্সিটি— দুই হাজার চারশো পঞ্চাশ টাকা বার্ষিক ফি দিয়ে এখানে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে আসে সাধারণ ঘরের ছেলেমেয়েরা— আর্টস বিভাগে আরো কম। পাবলিক ইউনিভার্সিটি শাসক চায় না, নিও-লিবেরাল দাসেরা পাবলিক ইউনিভার্সিটিগুলিকে প্রাইভেটে রূপান্তর করার নিরন্তর চেষ্টা চালাচ্ছে। হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিস্টরাও পাবলিক ইউনিভার্সিটি চায় না, তাদের যুক্তি হল সরকারের টাকায় পড়াশোনা করে শাসকের সমালোচনা ও বিরুদ্ধতার স্পর্ধা তারা মানবে না। এমনিতেই কেন্দ্রীয় অনুদান দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ আছে যাদবপুরে। এই কঠিন পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ কোনদিকে যাবে তা নির্ভর করছে ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের উপর, তাঁরা কীভাবে সামাজিক ব্যাধিগুলোকে দৃঢ়তার সঙ্গে মোকাবিলা করছেন তার উপর— যে ব্যাধি শুধু র্যাগিং নয়, যাবতীয় অন্যায়, অসাম্য, অত্যাচার, নির্মম ক্ষমতারও উৎস।
*মতামত ব্যক্তিগত