প্রবুদ্ধ ঘোষ
এই বিশ্বকাপ থেকে প্রজ্ঞার অর্জন? এক বাক্যে লেখা যাবে না। প্রজ্ঞানন্দ রমেশবাবু বিশ্বনাথন আনন্দের পরে দ্বিতীয় ভারতীয় দাবাড়ু হিসেবে ক্যান্ডিডেটস দাবায় খেলার যোগ্যতা অর্জন করলেন। কিন্তু, তার থেকেও বড় কথা প্রথম রাউন্ড থেকে ফাইনাল রাউন্ডে তাঁর এই অবিস্মরণীয় যাত্রাপথ। শেষপর্বের ব্যর্থতা তাঁকে নিশ্চয়ই অনেক কিছু শেখাবে। কার্লসেনের মতো অবিসংবাদী অপরাজেয়র বিরুদ্ধে ফাইনাল ম্যাচ খেলতে গেলে তাঁকে ব্যক্তিগত স্তরে আরও বহু উন্নতি করতে হবে। প্রজ্ঞা নিজেও তা জানেন
২০১৪। পুনে শহরের বিখ্যাত একটি হোটেলে বিশ্ব জুনিয়র দাবার আসর বসেছে। ১৮ জন গ্র্যান্ডমাস্টার, ২০ জন ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার সহ অনূর্ধ্ব-১৯ বয়সের তাবড় প্রতিযোগীরা অংশ নিয়েছেন। প্রতিযোগিতার গড় রেটিং ২২২৫! একাদশ রাউন্ডে ভেন্যুর মাঝামাঝি একটা বোর্ডে ভিড় জমে গেল। ন-বছরের একটা বাচ্চা ছেলে ১৯ বছরের ইউক্রেনীয় আইএমকে নাস্তানাবুদ করছে। বাচ্চাটার রেটং ১৯৪০ আর আইএমের রেটিং ২৩১৬। প্রায় ৪০০ এলো-রেটিং পার্থক্যে অত সিনিয়র একজন দাবাড়ুকে মিডল গেমে কৌশলী শস্ত্রে ধরাশায়ী করা চাট্টিখানি ব্যাপার নয়। ছেলেটি প্রতিভাবান নিঃসন্দেহে। ছটফটে, চোখেমুখে দুষ্টুমি। কিন্তু বোর্ডে বসলে চোখদুটো জ্বলজ্বল করে। বড় বড় চোখের ভাষায় প্রতিপক্ষের যাবতীয় চিন্তাভাবনা পড়ে ফেলতে চায়।
এই খেলাটির মিডলগেমে পিস-পন খাওয়াখাওয়ি হয়েছে প্রচুর। কিন্তু, প্রত্যেকটা খাওয়াখাওয়ি বাচ্চাটি করেছে সময়োপযোগী দানে। ‘টাইমিং’ দাবায় খুব গুরুত্বপূর্ণ— বিশেষ করে ওপেন গেমে টাইমিং-এর ভুলচুকে খেলার ভাগ্য বদলে যায়। ন-বছরের বাচ্চাটি ভুল করেনি। সুবিধাজনক অবস্থান (অ্যাডভান্টেজ) থেকে জেতার অবস্থানে পৌঁছেছে খেলার নিয়ন্ত্রণ নিজের কাছে রেখে।
যদিও প্রতিযোগিতায় র্যাঙ্ক হল অনেক পরের দিকে, তবু ১৫৮ এলো-রেটিং বাড়িয়ে নিল বাচ্চাটি। আর, একটি আশ্চর্য বিষয় লক্ষ করলেন কেউ কেউ— ছেলেটি ভুল শুধরে নিতে জানে। হারে, কিন্তু পরের খেলায় একই ভুলের পুনরাবৃত্তি করে না। খেলার ধরনে অন্তর্ঘাতী আক্রমণ নীতি রয়েছে। আচমকা আঘাতে বিপক্ষের ব্যূহ ছিন্নভিন্ন করে দিতে পারে। তখনও তার নামে তেমন শোরগোল পড়েনি। আর, বিশ্বদাবায় আনন্দকে দ্বিতীয়বার হারিয়ে সবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কার্লসেন-রাজ। কার্লসেন জমানা আধিপত্য বিস্তার করল। ওই বাচ্চা ছেলেটি নিষ্ঠা, শ্রম, অনুশীলন আর মেধায় তৈরি করতে লাগল নিজেকে। ঠিক ন-বছর পরে কার্লসেনের বিরুদ্ধে ফাইনালে মুখোমুখি হবে ছেলেটি। দাবা বিশ্বকাপের ফাইনাল।
প্রজ্ঞানন্দ রমেশবাবু। বয়স ১৮ বছর ১৫ দিন। এই মুহূর্তে ভারতীয় তথা বিশ্বক্রীড়ার অন্যতম সর্বালোচিত ক্রীড়াবিদ। দাবায় প্রজ্ঞানন্দ এক অভূতপূর্ব কৃতিত্ব অর্জন করেছে। বিশ্বদাবার ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে ফিডে ওয়ার্ল্ড কাপ ফাইনালে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সম্মান অর্জন করেছে। না, প্রজ্ঞানন্দ দাবা বিশ্বকাপ জিততে পারেনি। ফাইনালে তার পরাজয় ঘটেছে সর্বকালের সেরা দাবাড়ু ম্যাগনাস কার্লসেনের বিরুদ্ধে। কিন্তু, প্রজ্ঞার অর্জন ও সম্মান তাতে বিন্দুমাত্র খর্ব হয় না। কারণ, ফাইনালে ওঠার পথে প্রজ্ঞা একের পর এক ছিটকে দিয়েছে বিশ্বের তাবড় দাবাড়ুদের। বিশ্বনাথন আনন্দের পরে দ্বিতীয় ভারতীয় দাবাড়ু প্রজ্ঞা দাবা বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠল। মাঝে প্রায় দু-দশকের ব্যবধান। বিশ্বনাথন আনন্দের পরে ভারত আরও কয়েকজন প্রতিভাবান দাবাড়ুকে পেয়েছে। পেন্টালা হরিকৃষ্ণ, শশীকিরণ, কনেরু হাম্পি, সন্দীপন চন্দ, সূর্যশেখর গাঙ্গুলি অনেকেই। কিন্তু, সুপার গ্র্যান্ডমাস্টারদের মধ্যে বা বিশ্বদাবার সমকালীন সেরাদের শীর্ষ-প্রতিযোগিতাগুলিতে আনন্দের উজ্জ্বলতায় পৌঁছতে পারেননি তাঁরা। হরিকৃষ্ণ কিছুটা ব্যতিক্রমী, তিনিই একমাত্র (গুকেশ সেই রেকর্ড পার করেছেন সম্প্রতি) বিশ্বনাথন আনন্দের এলো-রেটিং টপকে ভারতের শীর্ষ রেটিংধারী হয়েছিলেন। কিন্তু, তা স্থায়ী হয়নি। ভারতের অন্যান্য দাবাড়ুরা নিঃসন্দেহে দারুণ, কিন্তু আনন্দ ভারতীয় তথা বিশ্বদাবার যে শিখরে বিরাজ করেন, সেখান থেকে বেশ দূরেই ছিলেন তাঁরা। বিশ্বনাথন আনন্দের পরে ক্যান্ডিডেটস দাবায় (ক্যান্ডিডেটস দাবার বিজয়ী বিশ্বচ্যাম্পিয়নকে প্রত্যাহ্বান জানায়) ভারতের আর কোনও দাবাড়ু অংশ নেননি। ভারতীয় দাবার বর্তমান তরুণ প্রজন্ম এই অনেক না-পারা, না-হওয়ার বিরুদ্ধবয়ান নির্মাণ করছেন। প্রজ্ঞানন্দ, গুকেশ দোম্মারাজু, নিহাল সারিন, বিদিত গুজরাতি, অর্জুন এরিগাইসি, বৈশালী রমেশবাবু, বন্তিকা আগরওয়ালদের মতো তরুণ দাবাড়ুরা আন্তর্জাতিক দাবার শীর্ষস্তরের প্রতিযোগিতায় নিয়মিত দুর্দান্ত পারফর্ম করছেন। তার প্রমাণ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উত্তীর্ণ হওয়া বিশ্বের মোট আট দাবাড়ুর মধ্যে চারজনই ভারতীয়। দোম্মারাজু গুকেশ অনবদ্য ক্রীড়াসৌকর্যে লাইভ এলো-রেটিং ২৭৫৪ পার করেছিলেন। অর্থাৎ তিনি এই মুহূর্তে ভারতের শীর্ষ দাবাড়ু। আর, প্রজ্ঞানন্দ শুধু রানার-আপই হলেন না, তিনি আগামী ক্যান্ডিডেটস দাবায় নিজের স্থানটিও পাকা করে ফেললেন।
So I just told Pragg, we all want to be like you today!
—ম্যাগনাস কার্লসেন
প্রজ্ঞানন্দ ফাইনালে পৌঁছানোর পথে যাঁদের পরাজিত করেছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই বিশ্বদাবার সমীহ জাগানো নাম। দ্বিতীয় রাউন্ডে লাগার্দ, তৃতীয় রাউন্ডে ডেভিড নাভারা প্রজ্ঞার শিকার হলেন। চতুর্থ রাউন্ডে প্রজ্ঞা মুখোমুখি হলেন নাকামুরার। হিকারু নাকামুরা। এই মুহূর্তে বিশ্বদাবায় দ্বিতীয় স্থানাধিকারী। প্রজ্ঞার থেকে প্রায় ১০০ বেশি এলো-রেটিং তাঁর। ২০২২ সালের ক্যান্ডিডেটস দাবাতেও ভাল পারফর্ম করেছিলেন নাকামুরা। অভিজ্ঞ তো বটেই। বুলেট (১ মিনিটের দাবা) এবং ব্লিৎজ (৫ মিনিটের দাবা) দাবায় সেরা। দ্রুত দানগণনা করতে পারেন, ঝুঁকি নিতে জানেন এবং জটিল মিডলগেম থেকে জয়ের রাস্তা খুঁজে নিতে পারেন। অত্যাধুনিক দাবা-ওপেনিং (হাইপারমডার্ন চেস ওপেনিং) নাকামুরার দক্ষতায় নতুন সম্ভাবনা উন্মুক্ত করেছে। দাবা বিশ্বকাপের নিয়মানুযায়ী প্রত্যেক রাউন্ডে দুজন দাবাড়ু একে-অপরের বিরুদ্ধে দুটি করে গেম খেলবেন। যদি দুটি গেমে দুজনেই সমপয়েন্ট অর্জন করেন, তাহলে টাইব্রেকারে গড়াবে খেলা। সেখানেও দুটি খেলা হবে। টাইব্রেকারে প্রত্যেক দাবাড়ুর জন্য বরাদ্দ ২৫ মিনিট এবং প্রত্যেক দানে ১০ সেকেন্ড করে বাড়তি সময় যোগ হবে। ধ্রুপদী আঙ্গিকের দুটি গেমই ড্র হল। টাইব্রেকারে প্রথম গেমে প্রজ্ঞা কালো আর নাকামুরা সাদা।
শুরু থেকেই কি নাকামুরার দানপর্যায় গণনায় ভুল হচ্ছিল? নাকামুরা নিজেও তেমনটাই বলেছেন। তাঁর দানপর্যায়ে সংশয়ের ছাপ পড়ছিল, প্রস্তুতি নেওয়া রকমফের (ভেরিয়েশন) থেকে বিচ্যুত হচ্ছিলেন নিজেই। 5. Nd5 দানে নিজের প্রস্তুতি থেকে বেরিয়ে গেছিলেন নাকামুরা। তিন দান পরে দুর্গ সাজিয়ে আবারও প্রজ্ঞাকে কিছুটা সংশয়ে ফেলতে চাইলেন নাকামুরা। যেহেতু র্যাপিড দাবা, ভাববার সময় বেশি নেই, অতএব চেনা দানপর্যায়ের বাইরে দান দিলে প্রতিপক্ষ ভাবতে বেশি সময় নেবে এবং টাইমপ্রেশারে পড়বে। নাকামুরা কি সেই সুযোগটাই নিতে চেয়েছিলেন? ৮ নম্বর দানে দুর্গনির্মাণের (ক্যাসলিং) থেকে ভাল দান তাঁর হাতে ছিল। কালোর যে বিশপটা বিরক্ত করছে, তাকে তাড়িয়ে দেওয়া এবং মাঝছক (সেন্টার) দখল করা। নাকামুরা কিছুটা স্পেস দিলেন প্রজ্ঞার পিসগুলিকে। প্রজ্ঞা সেই সুযোগ নিলেন। তারপর একটি অনবদ্য দান 8… g5!
প্রজ্ঞা আর গুকেশ দোমারাজুর দাবানীতির সবচেয়ে ভাল ব্যাপারটি হল— পজিশনে পিছিয়ে না-যাওয়া এবং ভয় না-পাওয়া। যেদিকে রাজার দুর্গ, সেদিকের পন বাড়িয়ে আক্রমণ। ঝুঁকি থাকে। কারণ বিপক্ষ সুযোগ পেয়ে যায় ওপেন ফাইল দিয়ে আক্রমণ শানানোর। প্রজ্ঞা সেই ঝুঁকি নিলেন তো বটেই, সাঙ্ঘাতিক শাণিত করে রাখলেন কালো-স্কোয়ারের বিশপটিকে। উল্টোদিকে নাকামুরার কালো-স্কোয়ারের বিশপ (g3 স্কোয়ারে বসে থাকা) ‘নিজ দোষে হতেছে একেলা’। এমন খোলা-নীতির গেমে গুরুত্বপূর্ণ বিশপ আটকে যাওয়া মানে যুদ্ধের মূল অস্ত্রপ্রয়োগ করার মন্ত্র ভুলে যাওয়া। নাকামুরা পিস বলিদান দিয়েছিলেন, যাতে আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়ানো যায়। সফল হননি। ধীরে ধীরে নাকামুরার পজিশন গ্রাস করে নিলেন প্রজ্ঞা।
কার্লসেন অনেকক্ষণ ওঁদের ম্যাচ দেখছিলেন। কার্লসেনকে প্রায়ই দেখা যায় নিজের বোর্ড ছেড়ে উঠে আশেপাশের বোর্ডে খেলা দেখছেন। কোনও প্রিয় প্রতিদ্বন্দ্বীর বোর্ডের দিকে তাকিয়ে দানগণনা করছেন। এই খেলাটির শেষে প্রজ্ঞাকে অভিনন্দন জানালেন কার্লসেন। কোনও এক সময়ে এই বিস্ময়বালকের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে, নিশ্চয় তা আন্দাজ করেছিলেন তিনি।
সেমিফাইনাল
কোয়ার্টার ফাইনালে প্রজ্ঞা স্বদেশীয় অর্জুন এরিগাইসিকে হারালেন। অর্জুনও ভারতীয় তরুণ ক্রীড়াপ্রজন্মের প্রতিনিধি। ঝুলিতে রয়েছে বহু অর্জন। প্রজ্ঞার থেকে কিছুটা সিনিয়র। সেমিফাইনালে প্রজ্ঞা যাঁকে হারালেন, সেই ফ্যাবিয়ানো কারুয়ানাকে তাঁর সেরা দিনে স্বয়ং কার্লসেনও শ্রদ্ধা করেন। ২০১৮ বিশ্বখেতাবি লড়াইয়ের সবকটা ধ্রুপদী আঙ্গিকের খেলায় কার্লসেনের সঙ্গে ড্র করেছিলেন কারুয়ানা।
ক্লাসিকালের প্রথম গেমে ৭৮ দান স্নায়ুর লড়াই লড়লেন প্রজ্ঞা। কালো ঘুঁটি নিয়ে। তত্ত্বগত ড্র। কিন্তু, শেষ অবধি স্নায়ুর চাপ সামলে ঠান্ডা মাথায় সমতা বজায় রাখতে পেরেছেন প্রজ্ঞা। ক্লাসিকালের দ্বিতীয় গেমেও ড্র। কারুয়ানা চাপ বাড়িয়েছিলেন মিডলগেমে। প্রায় ১০০ এলো-রেটিং নিচে থাকা প্রতিপক্ষকে, সর্বোপরি প্রথমবার ফিডে ওয়ার্ল্ডকাপের সেমিফাইনালে ওঠা প্রতিপক্ষের দুর্গ ভাঙতে চেষ্টার কসুর করেননি কারুয়ানা। প্রজ্ঞার কৃতিত্ব এটাই যে, একবারের জন্যও ম্যাচ থেকে সরে যাননি। কারুয়ানাকে সুবিধাজনক অবস্থান পেতে দেননি।
তারপর টাইব্রেকার। প্রথম দুটি টাইব্রেকার ড্র। প্রজ্ঞানন্দ কারুয়ানার রেটিং আর অভিজ্ঞতার কাছে নিতান্তই অনভিজ্ঞ। ক্যান্ডিডেটস, বিশ্বকাপ, বিশ্বখেতাবি লড়াই— কার্লসেন জমানার অন্যতম সেরা তিনি। তবে, প্রজ্ঞানন্দই স্পর্ধা দেখালেন। তৃতীয় টাইব্রেকার। সময়ের নিয়ম পাল্টে গেল। প্রত্যেক দাবাড়ু পাবেন ১০ মিনিট করে সময় এবং প্রত্যেক দানের পরে ১০ সেকেন্ড সময় যোগ হবে ঘড়িতে। আরও দ্রুত দান ভাবতে হবে। দানগণনা দ্রুত ও নিখুঁত করতে হবে। বুঝে নিতে হবে প্রতিপক্ষের অতিসম্ভাব্য দান। মগজ ও গণনাপদ্ধতির সঙ্গে প্রত্যুনপন্নমতিত্ব এক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকরী। কারুয়ানা নভেলটি দিলেন। জিততে মরিয়া। টাইব্রেকারে নভেলটি মুভ দেওয়া মানে প্রতিপক্ষকে চিন্তায় ফেলে দেওয়া। 14… g6। নিঃসন্দেহে কারুয়ানাকে এই মুহূর্তে বিশ্বের অন্যতম সেরা প্রস্তুতিসম্পন্ন দাবাড়ু বলা হয়। এই g6 দানটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ের শীর্ষস্তরে খেলার আগে নিশ্চয়ই তিনি প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। তবে, প্রজ্ঞা সামলে নিলেন। এই খেলাটিও ড্রয়ের দিকেই গড়াচ্ছিল। অন্তত ২৮ নম্বর দান অবধি। সাদা বা কালো কারও পক্ষেই প্রতিপক্ষের ব্যূহভেদ সম্ভব হচ্ছিল না। কারুয়ানার ঘড়িতে বাকি ১ মিনিট ১৬ সেকেন্ড আর প্রজ্ঞার হাতে রয়েছে মাত্র ৩৯ সেকেন্ড সময়। পজিশনাল মিসটেক করলেন কারুয়ানা।
মাত্র সাত সেকেন্ড সময়ে প্রজ্ঞার প্রত্যুত্তর। ম্যাচ ঢলতে শুরু করল প্রজ্ঞার দিকে। জয়ের গন্ধ পেয়ে গেলে প্রজ্ঞা যে কী ভয়ঙ্কর চাপে পিষ্ট করতে থাকেন নিপক্ষের পজিশনকে, তা দেখা গেল আবার। ম্যাচটা যখন শেষ হল, প্রজ্ঞার দুটো ক্যুইন! মানে, বিশ্বের দ্বিতীয় সেরার বিরুদ্ধে পন প্রোমোট করে অতিরিক্ত ক্যুইন বানিয়ে নিয়েছিলেন প্রজ্ঞানন্দ। পরের ম্যাচে কারুয়ানার সামনে ফিরে আসার সুযোগ ছিল। কারুয়ানার ফিরে আসার দক্ষতা সুবিদিত। বিশ্বকাপের তৃতীয় স্থান নির্ণায়ক ম্যাচে আবাসভের বিরুদ্ধে পিছিয়ে পড়েও ফিরে এসেছেন। প্রত্যাঘাত। সেই প্রত্যাঘাতের সম্ভাবনা নাকচ করতে লাগলেন প্রজ্ঞানন্দ। জুওকো পিয়ানো বা ইটালিয়ান ওপেনিং থেকে ব্যূহ মজবুত করলেন। ড্রয়ের দিকে ঠেলতে লাগলেন টাইব্রেকারের শেষ ম্যাচ। ৮২ দানে পৌঁছে রুক+বিশপ বনাম রুক+নাইট এন্ডগেমে কারুয়ানা ড্র করে নিতে বাধ্য হলেন। যেকোনও খেলোয়াড়ের জেতার খিদেটা আসল। প্রতিপক্ষকে না-হারিয়ে ম্যাচ থেকে সরব না, এই জেতার খিদেটা একজন প্রতিভাবান খেলোয়াড়কে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দিকে নিয়ে যায়। প্রজ্ঞানন্দ, গুকেশদের এই জরুরি খিদে রয়েছে, তার প্রতিফলন পড়ে তাঁদের গেমে।
ফাইনাল
প্রজ্ঞানন্দের বাবা চাননি তাঁর ছেলেও দাবা খেলুক। বড় মেয়ে বৈশালী একটি দাবাস্কুলে শিখতে যেত। আগ্রহ বাড়ে। প্রশংসাও। প্রজ্ঞানন্দের আগ্রহও সেখান থেকেই শুরু। কিন্তু, অর্থাভাব। দাবা প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার খরচ আছে, দূরের প্রতিযোগিতায় যাওয়ার খরচ আছে, এমনকি ভাল প্রশিক্ষকের কাছে প্রশিক্ষণ নেওয়ার খরচ আছে। ‘চেসবেস’-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অকপট রমেশবাবু জানাচ্ছেন যে, তাঁর সামর্থ্য ছিল না এই বিপুল খরচ সামলানোর। বৈশালী আর প্রজ্ঞানন্দের সাফল্যই দিশা জোগাল। তাঁদের প্রতিভার খোঁজ পেয়ে দু-একটি সংস্থা স্পনসর করতে এগিয়ে এল। চেন্নাইয়ের ভেলামল স্কুল এমন শিক্ষার্থীদের সর্বতোভাবে সাহায্য করে, যারা ক্রীড়াকে প্রাধান্য দেয় এবং সাফল্যের সঙ্গে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় শীর্ষস্থান দখল করে। নাগালক্ষ্মী এবং রমেশবাবু দুজনেই বারবার অশেষ কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন প্রজ্ঞার দাবা-প্রশিক্ষক রামচন্দ্রন রমেশকে। একজন প্রশিক্ষক শুধু প্রশিক্ষক না, তিনি অভিভাবক এবং ছাত্র/ছাত্রীর সুখদুঃখের আত্মজন— রমেশ প্রজ্ঞাকে যথার্থ অর্থে গাইড করতে পেরেছেন। প্রজ্ঞানন্দ যখন গ্র্যান্ডমাস্টার হব-হব করছেন, তখন নাগালক্ষ্মী ‘চেসবেস’-এ দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে, তিনি মাঝেমাঝেই বাসে করে দাবাস্কুলে পৌঁছে দিতেন ছেলেমেয়েকে। মাটির কাছাকাছি থাকা অভিভাবকরা ছোট ছোট স্বপ্নে বাঁচেন— সেই স্বপ্নপূরণ হলে আরেকটু বড় স্বপ্ন— বাস্তবের মাটি ছুঁয়েই তাঁরা সন্তানের সাফল্যের আশা রাখেন। রমেশবাবু আর নাগালক্ষ্মীর আশা ছিল প্রজ্ঞানন্দ গ্র্যান্ডমাস্টার হবে। বৈশালী আর প্রজ্ঞানন্দ ভাল খেলুক প্রতিযোগিতায়, জিতুক— বাবা-মার এটুকু আকাঙ্খাকে অনেক বড় উত্তরণে পৌঁছে দিলেন প্রজ্ঞা আর বৈশালী। বিশ্বকাপ ফাইনালের আগে প্রজ্ঞানন্দের সঙ্গে তার মায়ের হাসিমুখের ছবি ছড়িয়ে পড়ল সমাজমাধ্যমে। মুখে অমলিন হাসি।
ফাইনালে কার্লসেন। কোয়ার্টার ফাইনালে হারালেন ভারতেরই অন্যতম সেরা দাবাপ্রতিভা গুকেশকে, যে গুকেশ এই প্রতিযোগিতাতেই ভারতের সেরা দাবাড়ুর মুকুট আনন্দের থেকে ছিনিয়ে নিয়েছেন। কার্লসেন চাইতেন তাঁর পরের দাবা-প্রজন্মের প্রতিনিধিদের প্রত্যাহ্বানের মুখোমুখি হবেন। গত বিশ্বখেতাবি লড়াই থেকে স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়িয়েছিলেন কার্লসেন। মুকুটরক্ষার লড়াই না লড়ে মুকুট নামিয়ে রেখেছিলেন। কার্লসেন যদিও বলেছিলেন যে, তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি আলিরেজা ফিরুজা ক্যান্ডিডেটস জিতলে তবেই তিনি নিজের খেতাব রক্ষার যুদ্ধে নামবেন। না, আলিরেজা জেতেননি। জাঁ ডুডা, ড্যানিল ডুবভ, আলিরেজা ফিরুজা, নদির্বেক আব্দুসাত্তোরভ, রিচার্ড র্যাপো— তরুণ প্রজন্ম দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। ভারতের তরুণ প্রজন্মের কথা তো লিখেইছি আগে। এঁদের মধ্যে থেকে কার্লসেনকে দাবা বিশ্বকাপে প্রত্যাহ্বান জানালেন প্রজ্ঞানন্দ। কার্লসেনের ইচ্ছেপূরণ হল। নতুন প্রজন্মের বিরুদ্ধে নিজেকে পরীক্ষা করে নিতে চেয়েছিলেন কার্লসেন। আগামী কয়েক বছরে তাঁর শ্রেষ্ঠত্বে কেউ চিড় ধরাতে পারে কিনা তা মেপে নিতে চেয়েছিলেন। তাঁর নিরঙ্কুশ সাম্রাজ্যে কেউ ভাগ বসাতে পারে কিনা, দেখে নিতে চাইছিলেন। প্রজ্ঞানন্দ বনাম কার্লসেন। ১৮ বনাম ৩২। কিন্তু, ফাইনালে কি কার্লসেন নিজের সেরাটা দিলেন? যে শস্ত্রপ্রয়োগের জন্য তিনি স্বনামধন্য, যে দাবাবেত্তার জন্য তাঁকে বলা হয় ফিশার, কারপভ এবং কাসপারভের সম্মিলিত দাবাশক্তির অধিকারী, সেই নীতিকৌশলের সর্বোত্তম প্রয়োগ কি করলেন প্রজ্ঞার বিরুদ্ধে? না।
দুটো ক্লাসিক্যাল গেমে কার্লসেনের শরীরীভাষা ঠিক কার্লসেনোচিত ছিল না। বিশেষ করে দ্বিতীয় রাউন্ডে কার্লসেন বেছে নিলেন ড্র-প্রবণ ওপেনিং। ফোর নাইটস ওপেনিং-এর যে শাখা কার্লসেন বেছে নিলেন, তাতে শুরুতেই দ্রুত মেজর-পিস খাওয়াখাওয়ি হয়ে যায়। পন-কাঠামোর ভারসাম্য টাল খায় না। উদ্ভাবনী কৌশল প্রয়োগের বেশি সুযোগ নেই। গ্র্যান্ডমাস্টার স্তরের কিছু প্রাথমিক প্রস্তুতিতে মিডলগেম অনায়াস। তারপর দ্বৈত বিশপ বনাম দ্বৈত বিশপ। প্রথম ৪৫ মিনিটের মধ্যেই এমন পরিস্থিতি চলে এল ৬৪ ঘরের ভেতর। তারপর দ্রুত এন্ডগেমে যাত্রা। প্রায় প্রতিসম পন-কাঠামো। ড্র।
কার্লসেন খুব একটা চাপ দিলেন না প্রতিপক্ষের পজিশনে। তিনি স্বনামধন্য হয়ে উঠেছেন যে নীতিকৌশল প্রয়োগে, সেগুলো খুব একটা যেন প্রয়োগ করতে চাইলেন না। দাবার মিডলগেমে অসাম্য প্রয়োজন হয়। অসাম্য থেকেই ঝুঁকি নেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। জটিলতা বাড়ে। জটিলতা থেকে মুক্তি খুঁজে বিজয়ী হয় একজন। কার্লসেন পজিশনে এই অসাম্য তৈরি করে গেম বের করে নেওয়ায় সুদক্ষ। সুদক্ষ না, অতিদক্ষ। পজিশনে অসাম্য তৈরি করে উদ্ভাবনী কৌশলের প্রয়োগ করার উদাহরণ গুকেশের বিরুদ্ধে কার্লসেনের খেলাতেই পাওয়া যাবে।
তবু, কেমন ‘সাদামাটা’ গেম হল ফাইনালের ধ্রুপদী আঙ্গিকের দুটি গেমে। ফিডে ওয়ার্ল্ড কাপের ফাইনালে বেশ অপ্রত্যাশিত ব্যাপারটা। কার্লসেন যেন অপেক্ষা করেই ছিলেন টাইব্রেকারের। ধ্রুপদী আঙ্গিকের গেমে ‘অযথা’ মানসিক শক্তিক্ষয় আর স্নায়ুর চাপ এড়িয়ে পরিচিত ঝলক দেখালেন টাইব্রেকারের প্রথম গেমে। বিশ্বচ্যাম্পিয়নের থেকে যুদ্ধের নীতি শেখার এও এক পদ্ধতি বটে। মাপা গেমে প্রতিপক্ষের সামনে অযাচিত শক্তি বা দৌর্বল্য দেখানোর প্রয়োজন নেই। নিজের বিশেষ দক্ষতার ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষকে টেনে নিয়ে এসে মোক্ষম সময়ে আঘাত করার নীতি। সেটাই করলেন। প্রজ্ঞানন্দ কিন্তু আগের সেমিফাইনালটাই দীর্ঘ টাইব্রেকে জিতে এসেছেন। তাঁর মানসিক শক্তিক্ষয় হয়েছে বা অপ্রস্তুত, তা বলা যাবে না। কিন্তু, কার্লসেন যে সেরার সেরা তা টাইব্রেকের প্রথম গেমের মিডলগেম থেকে ফের প্রতীয়মান হল।
এর আগে এয়ারথিংস মাস্টার্স প্রতিযোগিতায় প্রজ্ঞা কালো ঘুঁটিতে খেলে কার্লসেনকে হারিয়েছিলেন। সাদা কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে থাকলেও (পন বেশি ছিল কার্লসেনের) ৩২ নম্বর দানে কৌশলগত ভুল করে ফেলেন কার্লসেন। প্রজ্ঞা সাদার ওপরে চেকমেটের ত্রাস সঞ্চার করে একটি পিস জিতে নেন। সর্বকনিষ্ঠ প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে কার্লসেনকে হারানোর বিরল কৃতিত্ব অর্জন করেন ১৬ বছরের প্রজ্ঞানন্দ।
প্রথম টাইব্রেকারে কার্লসেন আর প্রজ্ঞানন্দ দুজনের শরীরীভাষায় যেন বদল ঘটল। প্রজ্ঞানন্দ চাপে পড়লেন। সময় নিতে লাগলেন দানপর্যায় বিশ্লেষণে। পজিশনে চাপ বাড়ালেন কার্লসেন। দু-একটা ছোট পজিশনাল ভুল করলেন প্রজ্ঞা। প্রজ্ঞা কালোর রাজার দিকে কুইন নিয়ে গিয়ে আক্রমণ করছিলেন। কার্লসেন বরফশীতল মস্তিষ্কে দুর্গ সামলালেন। বিশেষ করে 16… Kg7 দান দিয়ে একদিকে কালোর রাজা সাদার পনের আক্রমণ (f file দিয়ে) প্রতিহত করল। অন্যদিকে, কালোর রুক যাতে h-file দিয়ে আক্রমণ শানাতে পারে ভবিষ্যতে, তার বন্দোবস্ত করলেন। এই দানের আশু গুরুত্বের থেকেও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা শিক্ষণীয়। তারপরেই কুইন বদলাবদলি হল। এরপর সাদা এবং কালো দুজনেই পিস ও পনের যে মহড়া সাজালেন, তাতে আপাতদৃষ্টিতে পজিশনে সমতা রইল। কিন্তু, খুব সূক্ষ্ণ কিছু সুবিধা অর্জন করলেন কার্লসেন। সাদার বিশপের অবস্থানজনিত অসুবিধে এবং কালোর জন্য অর্ধ-উন্মুক্ত (semi-open) h-file কার্লসেনকে চেনা ছন্দে ফেরাল। কার্লসেন টাইমপ্রেসারে ফেললেন প্রজ্ঞাকে। চাপে পড়ে ভুল বাড়ল প্রজ্ঞার। স্নায়ুযুদ্ধ। কার্লসেন অভিজ্ঞ। বহু যুদ্ধের পোড়খাওয়া বিজয়ী। তাই Nf4-এর অবস্থান ও Rh3-র অবস্থানে অন্তিম শিকারের গন্ধ পেয়ে গেলেন। আর কি রোখা যায়? প্রজ্ঞার শেষ ভুল 42. a6 এবং 43. Ba4।
নাঃ, বিশ্ববিজয়ী কার্লসেন দ্বিধা করেননি শত্রুর ওপরে শেষ আঘাত হানতে।
দ্বিতীয় গেম ড্রয়ের দিকে গেল। কার্লসেন সাদা নিয়ে ড্রয়ের দিকেই নিয়ে গেলেন। চাপ প্রজ্ঞার দিকে। ক্লাসিক্যালের গেম দুটোর শরীরীভাষা আর নেই কার্লসেনের। বিশ্বকাপের গন্ধ পেয়ে গেছেন। শান্ত। অপেক্ষা করছেন শিকারের ওপর শেষ লাফটা দেওয়ার। সিসিলিয়ান অ্যালাপিন। প্রজ্ঞার জেতার রাস্তাগুলো একটু একটু করে আটকাতে থাকলেন। মিডলগেমের শেষ পর্যায়ে ছবিটা পরিষ্কার। কার্লসেনের কাছে এতদিন অধরা ছিল ফিডে বিশ্বকাপ। এই একটিই পালক তাঁর মুকুটে ছিল না এতদিন। তাঁর মতো সেরা ক্রীড়াবিদের অহং এতে আহত হয় বৈকি! যতক্ষণ না অহং শান্ত হচ্ছে, তৃপ্ত হন না। কার্লসেন বিশ্বকাপ জিতলেন। কিছুদিন আগেই বলেছিলেন যে, এমন আঙ্গিকের প্রতিযোগিতায় আর উৎসাহ পাচ্ছেন না। ধ্রুপদী দাবায় তেমন বিনোদন উপভোগ করছেন না! এসব পেরিয়ে শেষ হাসিটা তাঁরই।
আর, প্রজ্ঞার অর্জন? এক বাক্যে লেখা যাবে না। প্রজ্ঞানন্দ রমেশবাবু বিশ্বনাথন আনন্দের পরে দ্বিতীয় ভারতীয় দাবাড়ু হিসেবে ক্যান্ডিডেটস দাবায় খেলার যোগ্যতা অর্জন করলেন। কিন্তু, তার থেকেও বড় কথা প্রথম রাউন্ড থেকে ফাইনাল রাউন্ডে তাঁর এই অবিস্মরণীয় যাত্রাপথ। শেষপর্বের ব্যর্থতা তাঁকে নিশ্চয়ই অনেক কিছু শেখাবে। কার্লসেনের মতো অবিসংবাদী অপরাজেয়র বিরুদ্ধে ফাইনাল ম্যাচ খেলতে গেলে তাঁকে ব্যক্তিগত স্তরে আরও বহু উন্নতি করতে হবে। প্রজ্ঞা নিজেও তা জানেন। কার্লসেন দাবার প্রত্যেকটা শস্ত্র ও অস্ত্রপ্রয়োগে পারদর্শী। দাবা তো শুধু ৬৪ বর্গক্ষেত্রে ৩২টি পিস-পনের মহড়া না। দাবা স্নায়ুর লড়াই। শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতার চূড়ান্ত নিদর্শন এবং মনস্তাত্ত্বিক অবস্থানে শত্রুর ঠিক-ভুল আন্দাজ করতে পারার ক্ষমতা। সেইসঙ্গে উদ্ভাবনী নীতিকৌশলের প্রয়োগ এবং প্রয়োজনীয় অসাম্যের মধ্যে থেকে বিজয়ের পথ খুঁজে নেওয়ার ঝুঁকিপ্রবণ দৃঢ়তা। প্রজ্ঞা অদূর ভবিষ্যতে নিশ্চয়ই শিখবেন দাবাযুদ্ধের সমস্ত শস্ত্র ও অস্ত্রের প্রয়োগ। নিজেকে আরও ক্ষুরধার করে তুলবেন। দোম্মারাজু গুকেশ, অর্জুন এরিগাইসি, প্রজ্ঞানন্দ রমেশবাবু, নিহাল সারিন, বৈশালী রমেশবাবু, কনেরু হাম্পি, দ্রোনাভালি হরিকারা ভারতীয় দাবাকে অনেক অনেক দূর নিয়ে গেছেন এবং যাবেন। এই যাত্রাপথ উজ্জ্বলতর হবে, ভারতীয় ক্রীড়াপ্রেমীরা এই বাস্তবোচিত স্বপ্ন দেখতেই পারেন।