সুমিত গঙ্গোপাধ্যায়
বেদি ছিলেন বাঁহাতি অফ স্পিনার অর্থাৎ লেফট আর্ম অর্থোডক্স। এই ধাঁচের ধ্রুপদী ঘরানার বোলাররা ডান পা-টা রিটার্ন ক্রিজ আর পপিং ক্রিজ বরাবর ফেলেন, ডান হাত চাকার মতো ঘুরিয়ে বাঁ হাতটাকে তার ফলো থ্রু-তে নিয়ে এসে ডান পায়ের উপর ভর করে বাঁ হাত পিছনে নিয়ে গিয়ে বাঁ হাতটা ডান ঊরু পার করে হাত ঘুরিয়ে শেষ করেন। এই স্টাইল ছাড়াও লেফট আর্ম অফস্পিন হয়, তবে পুরোপুরি অর্থোডক্স হয় না। উৎপল চ্যাটার্জি ছিলেন এই স্টাইলের। এক্ষেত্রে বলটা ব্যাটসম্যানের চোখের উপরে উঠে ব্যাটসম্যানের কাছে পৌঁছোবার ঠিক আগেই ফ্লাইট ভেঙে পড়ে ব্যাটের প্রান্তভাগ ছুঁয়ে চলে যায় উইকেটকিপারের দস্তানায়
বেদি বললেই আমার মনে কয়েকটা ঘটনার স্মৃতি জাগরিত হয়। সেটা ছিল ১৯৮৪-র দাঙ্গার সময়। দেশে তখন শিখ সম্প্রদায়ের প্রতি ক্ষোভ এবং ঘৃণা জাগিয়ে তোলা হয়েছে কারণ সদ্য-মৃতা প্রধানমন্ত্রীর আততায়ী ওই সম্প্রদায়ের। দেশজুড়ে চলছে খুন-জখম। বিশন সিং বেদি তখন থাকেন দিল্লি শহরের অনতিদূরে মেহেরৌলি নামে এক জায়গায়; সেই মেহরৌল, যেখানে আছে চন্দ্র নামক রাজার লোহার সেই স্তম্ভ, যা আজও জং ধরেনি। আছে কুতব মিনার।
যাই হোক, দাঙ্গার সময় বেদি নাকি সেই জায়গা বিক্রি করে অন্য কোথাও চলে যাওয়ার কথাই ভাবছিলেন। বাংলোর সামনে ‘ফর সেল’ নোটিসও ঝুলিয়ে রাখা শুরু করেন তিনি। এমনই একদিন, জনৈক আমলা তাঁকে পরামর্শ দেন— শুধু বাড়ি নয়, দিল্লি নয়, দেশ ছেড়ে চলে যেতে। সে কথা বেদিকে এতটাই আহত করে, যে বেদি সিদ্ধান্ত নেন, দেশ তো দূরের কথা, বাড়িও তিনি ছাড়বেন না।
আরেকটি ঘটনা যা আমাকে রীতিমতো ভাবিয়েছিল, তা হল, কিছুদিন আগে রাজনীতিবিদ অরুণ জেটলির মৃত্যুর পরে ফিরোজ শাহ কোটলা ক্রীড়াঙ্গনের নাম বদল করে অরুণ জেটলির নামে নামকরণের ঘটনা। দিল্লি অ্যান্ড ডিস্ট্রিক্ট ক্রিকেট অ্যাসোশিয়েশন— ডিডিসিএ— সিদ্ধান্ত নেয় যে এই উপলক্ষ্যে তারা মাঠের বাইরে অরুণ জেটলির মূর্তি স্থাপন করবে। এই খবর পাওয়া মাত্র বেদি ডিডিসিএ-কে খোলা চিঠিতে জানালেন— যাঁর আমলে ডিডিসিএ চরম দুর্নীতি এবং আর্থিক বেনিয়মের অভিযোগে জর্জরিত হয়েছে, যে অভিযোগের অনেকগুলিই তখনও আদালতের বিচারাধীন, এই রকম কারও নামে স্টেডিয়ামের নামকরণ ও সেখানে তাঁরই মূর্তি স্থাপন মেনে নেওয়া যায় না। এই প্রতিবাদের ঘোষণা করে বেদি ডিডিসিএ-র সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দেন, ও তাঁর নামে ওই মাঠে যে স্ট্যান্ড আছে সেখান থেকেও নিজের নাম সরিয়ে নিতে বলেন।
অনেক আগের কথা। ১৯৭৫-৭৬ সালে— বেদি তখন ভারত ক্রিকেটদলের অধিনায়ক— জন লিভার দিল্লি টেস্টে দুইদিকে অদ্ভুত রকমের সুইং করিয়ে ভারতের বিরূদ্ধে ৭০ রানে ১০ উইকেট নেন। শুধুমাত্র সেই সিরিজেই লিভার কেরিয়ারের মোট ৪৭টা উইকেটের মধ্যে (১৬টা টেস্টে) ২৬টা পেয়েছিলেন। বেদিই প্রথম লিভারের বিরুদ্ধে বল ট্যাম্পারিং-এর অভিযোগ আনেন। বলেন, লিভার বলে ভেসলিন লাগিয়ে বলের ‘শাইন’ অক্ষুণ্ণ রাখছেন। আসলে লিভার ও উইলিসের কপালে ভেসলিন গজ লাগানো ছিল। এই অভিযোগ বেদি তোলেন রয়টার্সের এক সাংবাদিকের কাছে।
ওই ১৯৭৫-৭৬ মরসুমেরই কথা। বেদির অধিনায়কত্বে ভারত চার ম্যাচের সিরিজ খেলতে গেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজে। প্রথম তিন টেস্ট ম্যাচের পর ফল ১-১। নিজের দেশের মাটিতে ভারতের কাছে পরাজয় হজম হল না ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলের। চতুর্থ টেস্টে তাঁরা পরিকল্পনা নিলেন কুখ্যাত বডিলাইন বোলিং-এর। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পরিকল্পিত শরীর লক্ষ করে করা বোলিংয়ের বিরূদ্ধে বেদি দল তুলে নিয়েছিলেন, হয়তো কিছুটা বাধ্য হয়েও।
অসম্ভব স্পষ্টবাক বেদি মুরলিধরনকে চাকার বলতে ছাড়েননি। চাকার-এর সঙ্গে মুরলির জন্য আরও একটি অভিধা তিনি জুড়েছিলেন— জ্যাভলিন থ্রোয়ার! তাঁর যুক্তি ছিল, দৃষ্টিহীন ব্যাক্তিকে যেমন উড়োজাহাজ ওড়ানোর সুযোগ দেওয়া হয় না, তেমনি কোনও বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তিকে কনুই ভাঙার ডিগ্রির (পরিমাণ) ওপর ভিত্তি করে বল ছোঁড়ার সুযোগ দেওয়াও উচিত নয়। প্রবল বিতর্ক সত্ত্বেও এই অবস্থান থেকে বেদি নড়েননি। প্রসঙ্গত বলে রাখা ভাল, মুরলির পাশাপাশি শোয়েব আখতার এবং হরভজন সিং-কেও চাকার মনে করতেন বেদি।
আসলে বেদি ছিলেন বাঁহাতি অফ স্পিনার অর্থাৎ লেফট আর্ম অর্থোডক্স। এই ধাঁচের ধ্রুপদী ঘরানার বোলাররা ডান পা-টা রিটার্ন ক্রিজ আর পপিং ক্রিজ বরাবর ফেলেন, ডান হাত চাকার মতো ঘুরিয়ে বাঁ হাতটাকে তার ফলো থ্রু-তে নিয়ে এসে ডান পায়ের উপর ভর করে বাঁ হাত পিছনে নিয়ে গিয়ে বাঁ হাতটা ডান ঊরু পার করে হাত ঘুরিয়ে শেষ করেন। এই স্টাইল ছাড়াও লেফট আর্ম অফস্পিন হয়, তবে পুরোপুরি অর্থোডক্স হয় না। উৎপল চ্যাটার্জি ছিলেন এই স্টাইলের। এক্ষেত্রে বলটা ব্যাটসম্যানের চোখের উপরে উঠে ব্যাটসম্যানের কাছে পৌঁছোবার ঠিক আগেই ফ্লাইট ভেঙে পড়ে ব্যাটের প্রান্তভাগ ছুঁয়ে চলে যায় উইকেটকিপারের দস্তানায়।
ভারতে এই ঘরানার প্রবর্তক ছিলেন আরডি জামশেদজি। পরে এই ধারা বজায় রাখেন ভিনু মানকড়। বেদির যখন কলকাতার সেই অভিশপ্ত টেস্টে (১ জানুয়ারি ১৯৬৭) অভিষেক হয় তখন কিন্তু আনন্দবাজারে হেডিং হয়েছিল ‘বেদির কায়ায় ভিনুর ছায়া’।
বেদির পরে এই ধারা দেখা গিয়েছিল একজনের মধ্যেই। তিনি মনিন্দর সিং। মনিন্দর পরে অবশ্য বদলে যাওয়া যুগের সঙ্গে নিজেকে বদলানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু না পারলেন নিজেকে পুরো বদলাতে, না পারলেন ধ্রুপদী ঘরানা বজায় রাখতে। অনেক প্রতিশ্রুতি নিয়েও হারিয়ে গেলেন। পরবর্তীতে মুরলী কার্তিকের মধ্যে এই স্টাইল কিছুটা দেখা গিয়েছিল।
বেদির কথায় ফেরা যাক।
বেদির জন্ম ১৯৪৬ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর পাঞ্জাবের অমৃতসরে, দেশ বিভাজনের আবহে। ১৩ বছর বয়সে— তুলনামূলকভাবে একটু বেশি বয়সেই— তিনি ক্রিকেট খেলা শুরু করেন। কিন্তু অভূতপূর্ব বোলিং দক্ষতার জন্য ১৫ বছর বয়সে নর্দার্ন পাঞ্জাবের হয়ে রঞ্জি ট্রফিতে খেলার সুযোগ পান। এর কারণ, ১৯৬০-৬১ মরশুমে পাঞ্জাব স্কুলের হয়ে দিল্লি স্কুলের বিরুদ্ধে কোচবিহার ট্রফির খেলায় ৯৯ রানে বেদি ৭ উইকেট নেন— দুই ইনিংস মিলিয়ে। কোয়ার্টার ফাইনালে পশ্চিমাঞ্চল স্কুলদলের বিরূদ্ধে নেন ২ উইকেট।
১৯৬১-৬২ সালে মাত্র ৩টি রঞ্জি ম্যাচে ১৮ উইকেট নিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে তাঁকে আটকে রাখা যাবে না। এর মধ্যে দিল্লির বিরুদ্ধে ১০০ রানে ১১ উইকেট। পরের মরশুমে নেন ১৯ উইকেট নেন, কিন্তু মাত্র ১৩.১০ গড়ে। সুযোগ পান এমসিসি-র বিরূদ্ধে। কিন্তু ১৬ বছরের পাঞ্জাবতনয় সেই খেলায় ২টির বেশি উইকেট পাননি। ততদিনে চণ্ডীগড়ের পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় দলের হয়ে রোহিন্টন বারিয়ায় প্রচুর উইকেটের (সেরা ২৩/৮; বনাম দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়) পাশাপাশি ব্যাট হাতে রানও করছেন লোয়ার অর্ডারে (সেরা ৭১; বনাম আলিগড়)।
এর পর ১৯৬৪-৬৫ সালের রঞ্জি ট্রফিতে নেন ২০ রানের কম গড়ে ২৭ উইকেট। পরেরবার (১৯৬৫-৬৬ মরশুমে) ২৫ উইকেট নেন, তবে ২০-র সামান্য বেশি গড়ে। তার পরের বছরেও ১৭ উইকেট, ২৩ গড়ে। ফলে ওই মরশুমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ খেলতে এলে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে সুযোগ পান, কিন্তু ব্যর্থ হন। তবে, প্রধানমন্ত্রী একাদশের হয়ে খেলতে নেমে লয়েড-সহ ছয় উইকেট তাঁকে সুযোগ এনে দেয় কলকাতায় দ্বিতীয় টেস্টে খেলার।
সেই সিরিজের প্রথম টেস্টে বোরদের শতরান, বুধি কুন্দরনের টেল-এন্ডার হিসেবে নেমে ঝড় তোলা ৭৯ আর চন্দ্রশেখরের ১১ উইকেট সত্ত্বেও ভারত ৬ উইকেটে হারে।
সে ছিল এক অন্য ভারত। একদিকে, দেশ জুড়ে অকংগ্রেসি সরকারের সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। ভারতীয় ক্রিকেটে তখনও রাজাদের প্রাধান্য। ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে গ্ল্যামার। তৈরি হচ্ছে ক্রিকেট ও বলিউডি নেক্সাস। অন্যদিকে, উঠে আসছে অজস্র ভাইবোনের পরিবারে বড় হওয়া এবং রাতে সিসিআই ক্লাব হাউসের পিছনের চওড়া পাঁচিলে ঘুমিয়ে কাটানো বুধি কুন্দরন বা নিম্নবিত্ত শিখ পরিবারে বড় হয়ে ওঠা বেদির মতন ক্রিকেটাররা।
বেদির প্রথম টেস্ট কিন্তু স্মরণীয়। একদিকে টিকিট ব্ল্যাক, পুলিশের লাঠচার্জ, ‘চাল চাই না টিকিট চাই’ বলা মুখ্যমন্ত্রী, আতঙ্কে রাস্তায় দৌড়ানো ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটার, আগুনের হাত থেকে জাতীয় পতাকা বাঁচানোর চেষ্টায় লিপ্ত ক্রিকেটার, আর অন্যদিকে সব কাটিয়ে উঠে উৎসবের মতো মাঠমুখী হওয়া কল্লোলিনী কলকাতার ক্রীড়াপ্রেমিক জনতা। বুচার আর লয়েডের উইকেট দখল করলেন বেদি। এই সিরিজে বেদি পরে আর একটাই টেস্ট খেলেন। ৫ উইকেট নেন দুই ইনিংসে। তার মধ্যে ছিলেন কানহাই, লয়েড, সিমোর নার্সের মতন ক্রিকেটাররা।
এরপরে ভারত ইংল্যান্ড সফরে যায়। টেস্টে ৭ উইকেটের বেশি না পেলেও সফরের অন্যান্য প্রথম শ্রেণির খেলায় আরও ২৭ উইকেট তুলে নেন বেদি। পরের অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড সফরেও বেদি তেমন সাফল্য পান না। বরং, গোটা সফর জুড়ে প্রসন্ন ছিলেন বিধ্বংসী।
দেশে ফিরে নিউজিল্যান্ড সফরের আগে দলীপ ট্রফির খেলায় জয়সিমা, পতৌদি, বিশ্বনাথ, কুন্দরন-সহ টেস্ট দলের ৫ জন ও মোট ৭ জনকে আউট করেন বেদি। উত্তরাঞ্চল, যা স্বাধীনতার পর থেকে দুর্বল জোন হিসেবে চিহ্নিত হত, জয়ী হয়। উত্তরাঞ্চলের এই উত্থান ছিল পরের প্রায় আড়াই দশকব্যাপী ভারতীয় ক্রিকেটে দাপটের সূচনা। তবে, উত্তরাঞ্চলের এই উত্থান দেশবিভাগের ফলে উদ্বাস্তুদের মধ্যে ক্রিকেটের পৃষ্ঠপোষক ও খেলোয়াড় সৃষ্টির জন্য, নাকি সবুজ বিপ্লবের ফলে নবোত্থিত বুর্জোয়াদের ক্রিকেটে মনোনিবেশই এর কারণ— নাকি দুটোই— তা গবেষণার বিষয় হতে পারে। কারণ যাই হোক, এর সূত্রপাত যে বেদির হাত ধরেই ঘটে তাতে সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই। এর সঙ্গে যুক্ত হয় দেশ জুড়ে স্পিন বোলিং-এর উত্থান।
দক্ষিণ ভারত থেকে চন্দ্রশেখর, প্রসন্ন ও ভেঙ্কটরঘবন এই সময়ে টেস্ট দলে নিয়মিত হন। বোম্বের পদ্মাকর শিভালকর, দিল্লির রাজিন্দর গোয়েল, বাংলার দিলীপ দোশি, উত্তরপ্রদেশের রাজবিন্দর সিং হংস ও প্রবীণ ওবেরয়, হায়দরাবাদের মুমতাজ হুসেন, প্রভৃতি উন্নত মানের স্পিনারদের আগমন ভারতকে শক্তিশালী করে। এরই সঙ্গে বিশ্বনাথ, জিমি অমরনাথ, কিছুদিন বাদে গাভাস্কার, তখনও দলে খেলে চলা বোরদে, দুরানি, বেগ, পতৌদি, সারদেশাই, ক্রমাগত উঠে আসা অংশুমান গায়কোয়াড় ব্যাটিংকে সমৃদ্ধ করেন। সঙ্গে ওয়াদেকার পতৌদির বাদ পড়ার পর অধিনায়ক হয়ে ভারতীয় ক্রিকেটে মধ্যবিত্তের ভিত মজবুত করেন।
এই অবস্থায় ১৯৭১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ইংল্যান্ডকে ভারত হারিয়ে দেয়। বেদি ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে টেস্টে ১৫টি সহ ৩৩ উইকেট নেন। ইংল্যান্ড সফরে তিনি আরও বেশি সফল হন। টেস্টে ১১টি সহ ৫৮টি উইকেট। এই দুই সিরিজ জয় ভারতকে এক ধাক্কায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রতিষ্ঠা করে।
এই সময় বর্ণবৈষম্যের জেরে দক্ষিণ আফ্রিকা সাসপেন্ড হওয়ায় বিশ্ব একাদশ অস্ট্রেলিয়া সফর করে সোবার্সের নেতৃত্বে। ভারত থেকে সুযোগ পান বেদি, ইঞ্জিনিয়ার ও গাভাস্কার। বেদি প্রথম শ্রেণির ম্যাচগুলোয় ৩৬টি উইকেট নেন।
১৯৭২ সালে নর্দাম্প্টনশায়ারের হয়ে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপে খেলতে যান এবং ২০টি ম্যাচে ৬২টি উইকেট পান। সেই সময় অস্ট্রেলিয়া ইংল্যান্ডে গেলে নর্দাম্প্টনশায়ারের হয়ে বেদি ৯ উইকেট তুলে নেন। লিলি, মার্শ, চ্যাপেলের অস্ট্রেলিয়া ৭ উইকেটে হেরে যায়। এর আগে নর্দাম্প্টনশায়ার অস্ট্রেলিয়ার বিরূদ্ধে খেলা ৪টি ম্যাচের ৩টিতে হারে, একটিতে ড্র করে।
১৯৭২-৭৩ এর রঞ্জি ট্রফিতে বেদির ১০.৮০ গড়ে ২১ উইকেট প্রমাণ করে দেশের মাটিতে তিনি কতদূর অবধি ব্যাটারের ত্রাস হতে পেরেছিলেন। সেবার ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধেও ২২ উইকেট নেন বেদি। পরের মরশুমে নর্দাম্প্টনশায়ারের হয়ে কাউন্টিতে ৮৬টি সহ ১০৪টি ফার্স্ট ক্লাস উইকেট নেন বেদি মাত্র ২৩ ম্যাচে। পরের মরশুমে রঞ্জি ট্রফিতে আবার সফল। তারপর কাউন্টি ক্রিকেটে আবারও ৫৫ উইকেট। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সফর করার সময় টেস্টে ১০টি সহ ৫৩টি উইকেট নেন। ১৯৭৪-৭৫ মরশুমে রঞ্জি ট্রফিতে রেকর্ড ৬৪ উইকেট পান ৮.৫৩ গড়ে। সেটাকে অনেকেই তুচ্ছ করেন, কিন্তু আজ অবধি এই গড়ে এত উইকেট রঞ্জিতে কেউ পায়নি।
ইতিমধ্যে বেদি অধিনায়ক হন। লিভারের ভেসলিন, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপজ্জনক বডিলাইন বোলিং, পাকিস্তানের আম্পায়ারের অন্যায্য সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে জয়ের মুখোমুখি দল তুলে নেওয়া— বেদির অধিনায়কত্বে বিতর্ক কম হয়নি। কিন্তু বেদি পিছপা হননি।
টেস্টে ২৬৬, কাউন্টিতে ১৯৬, রঞ্জি ট্রফিতে ১৯৭, উত্তরাঞ্চলের হয়ে ৬৯, এগুলো কিছু নমুনা মাত্র। বেদি আসলে একমাত্র ক্রিকেটার যিনি প্রথম শ্রেণির খেলায় কোনওদিন এক ইনিংসে ৮ উইকেট পাননি, কিন্তু ১৫০০-র বেশি উইকেট পেয়েছেন।
স্পষ্টবক্তা, দক্ষ কোচ, ২২টি টেস্টে ভারতের অধিনায়ক, স্পিন চতুর্ভুজের অন্যতম, ধ্রুপদী ঘরানার সেরা উদাহরণ বেদি সম্প্রতি বিদায় নিলেন পৃথিবী থেকে। স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁর ধ্রুপদী ঘরানার স্মৃতিতে বলতে হয়…..
বড়ে রঙ্গি জমানে থে, তরানে হি তরানে থে
মগর আব পুঁছতা হ্যায় দিল, ওহ দিন থে ইয়া ফসানে থে
ফকত এক ইয়াদ হ্যায় বাকি, বস এক ফরিয়াদ হ্যায় বাকি
ও খুশিয়াঁ লুট গই লেকিন, দিল-এ-বরবাদ হ্যায় বাকি
কহাঁ থি জিন্দেগি মেরি, কহাঁ পর আ গই
ওহ ভুলি দাস্তাঁ লো ফির ইয়াদ আ গই…—রাজেন্দ্র কৃষ্ণ