মৌলিনাথ বিশ্বাস
লেখক ‘কালকথা’ পত্রিকার সম্পাদক। লিটল ম্যাগাজিন ফোরাম-এর অন্যতম সদস্য।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের অধীন পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি আকাদেমি-নন্দন চত্বরে প্রতি বছর ১১-১৫ জানুয়ারি লিটল ম্যাগাজিন মেলা আয়োজন করে থাকে। কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত জেলার এবং পশ্চিমবঙ্গের বাইরে থেকেও অনেক ম্যাগাজিন এই মেলায় অংশগ্রহণ করে। এই মেলা লিটল ম্যাগাজিনগুলির কাছে খুব মূল্যবান ও আদরের। অনেক পত্রিকা সারাবছরে একটি-ই সংখ্যা প্রকাশ করে এই মেলা উপলক্ষ করে। মেলার বিক্রির ব্যবসায়িক দিক ছাড়াও দূরদূরান্তের লেখক-পাঠকদের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ হয় এই মেলায়। যে কোনও মেলার যা মূল উদ্দেশ্য অর্থাৎ সবার সঙ্গে সবার মিলন -– এই লিটল ম্যাগাজিন মেলা তার সংজ্ঞাসার্থক উদাহরণ। সেই কারণেই লিটল ম্যাগাজিন-এর সঙ্গে যুক্ত সব পক্ষ-ই, যেমন পাঠক-লেখক-সম্পাদক, এই মেলার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকেন।
শোনা যাচ্ছিল, ২০১৮-এর লিটল ম্যাগাজিন মেলাটি আকাদেমি কর্তৃপক্ষ সল্ট লেকের রবীন্দ্র-ওকাকুরা ভবন-এ স্থানান্তরিত করবেন। তারপর গত ১৪ নভেম্বর ‘একদিন’ সংবাদপত্রে প্রকাশিত সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে এই আশঙ্কাই সত্য বলে নিশ্চিত হওয়া যায়।
শোনা কথার উপর ভিত্তি করে গত ৫ নভেম্বর বিকেলে আকাদেমি চত্বরে বেশ কিছু লিটল ম্যাগাজিন কর্মী জড়ো হয়ে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেন যে, এই বিষয়ে কিছু করতে হলে সংগঠিতভাবে করতে হবে। তাই একটি প্লাটফর্ম তৈরি করা হয়, নাম দেওয়া হয় — লিটল ম্যাগাজিন ফোরাম। খুব পরিষ্কার ভাষায় বলা থাক -– এটি একটি সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক ফোরাম। লিটল ম্যাগাজিনের সাথে সংশ্লিষ্ট যে কেউ এই ফোরামে স্বাগত। কেউ-ই আমাদের কাছে ব্রাত্য নন। সবাই আসুন।
প্রদীপের আগে সলতে হিসেবে এক ছোট ইতিহাস আছে। গতবার এই মেলা দু-ভাগে ভাগ করে -– নন্দন চত্বর ও মোহরকুঞ্জ — অনুষ্ঠিত হয়। খুবই অসুবিধাকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয় সবাইকেই। আমি ব্যক্তি-একক হিসেবে একটি আবেদনপত্র দিতে চাওয়ার কথা জানানোয় বন্ধু মিতুল দত্ত (সম্পাদক- কবিয়াল) বলে সবাই রাজি। আমার আবেদনপত্র ২ কপি রাখা হয় — ‘কবিয়াল’ ও আমার ‘কালকথা’-র টেবিলে। প্রায় দু’শ সম্পাদক-লেখক-পাঠক তাতে সই করেন। ফলে সেই আবেদনটি কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে যাওয়াটা ছিল আমার দায়িত্ব। আমি যখন জমা দিতে যাই, তখন নিতান্ত ঘটনাচক্রে মাননীয় সভাপতি, মাননীয় সচিবের সাথে এই ব্যাপারে আমাকে আলোচনা করতে হয়। আরও কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি সেই সময় উপস্থিত ছিলেন। অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ ছিল সেই আলোচনা।
যতদূর জানা গেছে, অগ্নিবিধি মেনে নন্দন চত্বরে মেলায় যত পত্রিকা আবেদন করে (প্রায় ৫০০), তার ২০ শতাংশ মতো পত্রিকাকে স্থান দেওয়া সম্ভব। আবার দু’ভাগে করাও অসুবিধাকর। তাই, স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত।
আমাদের মনে হয়, এককভাবে মোহরকুঞ্জে ৫০০ পত্রিকাকে স্থান দেওয়া সম্ভব।
এই প্রেক্ষাপটে, ফোরামের পক্ষ থেকে, কয়েকটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। যার মূল এবং প্রধান হল — আকাদেমি কর্তৃপক্ষের কাছে আগামী সোমবার (২০ নভেম্বর, ২০১৭) একটি আবেদনপত্র তথা স্মারকলিপি জমা দেওয়া। এই স্মারকলিপির বক্তব্য -– মেলা স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার অনুরোধ। আমি বিশ্বাস করি, খোলা মনে, হাতের সব তাস টেবিলে দেখিয়ে, কোনওরকম পূর্বধারণা ছাড়া, দুই পক্ষের আলোচনার মাধ্যমে পৃথিবীর যে কোনও সমস্যার গ্রহণযোগ্য সমাধান হওয়া সম্ভব। নিতান্ত না হলে, রাষ্ট্র ও সমাজসম্মত বিকল্প অন্য সব পথ তো খোলা আছেই।
আমি খুব পরিষ্কারভাবে আর একবার উল্লেখ করতে চাই — এই ফোরাম সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক। এবং আমরা কোনওরকম প্রতিবাদ-বিক্ষোভে -– অন্তত এই বিষয়ে -– আগ্রহী নই।
আমাদের বিশ্বাস পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি কর্তৃপক্ষ তাঁদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবেন। লিটল ম্যাগাজিন মেলা স্ব-মহিমায় উদযাপিত হবে।
শত জল ঝরনার স্রোতধ্বনিতে মোহরকুঞ্জে ভেসে যাবে আমাদের সবার প্রিয় আদরের নৌকাটি…