সোমনাথ মুখোপাধ্যায়
গুজরানওয়ালা। পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের এক জনপদ। এই শহরের ভূমিকন্যা রিফাত আরিফ ওরফে সিস্টার জেফ আজ পৃথিবীর সেরা শিক্ষিকা। এক সাধারণ শ্রমিককন্যার বিশ্ব শিরোপা প্রাপ্তির সূত্রে প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান আজ নতুন করে আলোচনায় উঠে এসেছে। পর্দা সরিয়ে পেছনের কাহিনি এই সুযোগে একটু জেনে নেওয়া যাক।
মেয়েটি তখন স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। পাকিস্তানের মতো ধর্মীয় রক্ষণশীলতার মোড়কে মোড়া একটি দেশে যেখানে আধুনিক শিক্ষালাভের সুযোগ ভীষণ রকমের সীমাবদ্ধ সেখানে মেয়েদের স্কুলে যাওয়া রীতিমতো দুরূহ। উপরন্তু দিন-আনি-দিন-খাই গোছের এক শ্রমিক পরিবারের মেয়ের স্কুলে যাওয়াটাই ছিল একরকমের বিলাসিতা। দুবেলা ঠিকমতো অন্ন জোটে না তায় আবার লেখাপড়া! কিন্তু ছোট্ট জেফ অনড়। শুধু নিজে নয় তাঁদের মতো কষ্টেসৃষ্টে দিন গুজরান করে যে-সব পরিবারের মানুষজনেরা তাঁদের ছেলেমেয়েদেরও পড়াশোনা করিয়ে নিজের নিজের পায়ে সসম্মানে দাঁড় করাতে চায় জেফ। একরকম জোরজার করেই স্কুলে ভর্তি হল সে।
কিন্তু স্কুলের পরিবেশ মোটেই তাঁর মনপসন্দ ছিল না। তার ওপর সেখানে শিক্ষক-শিক্ষিকা হিসেবে যাঁদের পেলেন তাঁরা সবাই এই কিশোরী ছাত্রীটিকে এগিয়ে যাওয়ার উৎসাহ জোগানোর পরিবর্তে পেছনে টেনে রাখতেই ব্যস্ত। তাই অনেক অনেক পারিবারিক সমস্যাকে হার মানিয়ে বছর এগারোর যে কিশোরী মেয়েটি নতুন আলোর খোঁজে স্কুলে ভর্তি হয়েছিল সে হতোদ্যম হয়ে পড়ল। স্কুলে সাধারণ কিশোরীসুলভ চপলতার জন্য নানারকম কটূক্তি, গঞ্জনার পাশাপাশি চলতে থাকে শারীরিক লাঞ্ছনা। জেফ বাধ্য হয় স্কুল ছেড়ে দিতে। কিন্তু পড়াশোনা ছাড়া সে বাঁচবে কী করে?
অনমনীয় জেফ নিজেই তাদের বাড়ির উঠোনে শুরু করল স্কুল। গুজরানওয়ালা জেলার আরুপ নামের গাঁয়ে শুরু হল বছর তেরোর খুদে দিদিমণির একল স্কুল। প্রথম ছাত্রী হিসেবে হাজির জেফের ছোট্ট বোন। আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, প্রতিটি উন্নয়নশীল দেশের আর্থ সামাজিক সাংস্কৃতিক যাপন এক গভীর অনিশ্চয়তায় ঘেরা। প্রশাসনিক ত্রুটির কারণে দেশের আপামর মানুষের জন্য আবশ্যক তিনটি প্রাথমিক নাগরিক চাহিদাকে এখনও এই দেশগুলোতে যথাযথভাবে মেটানো সম্ভব হয়নি। তার ওপর পাকিস্তানে লিঙ্গবৈষম্য ভয়ানক। পুরুষ স্ত্রী নির্বিশেষে সর্বসাধারণের জন্য উন্নত শিক্ষার ব্যবস্থা করা এখনও সম্ভব হয়নি। এছাড়া দারিদ্র্যের কারণে সাধারণ খেটেখাওয়া পরিবারের সন্তানদের স্কুলে ভর্তি করা সম্ভব হয় না। ছোটবেলা থেকেই এমন সব দুর্লঙ্ঘ্য বাধার মুখে বারবার পড়তে হয়েছে জেফকে। তাই তাঁর ভাবনা জুড়ে কেবলই সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের শিক্ষার ব্যবস্থা করার চিন্তা। ছোট্ট স্কুলকে বড় করে তুলতে হবে যাতে আরও বেশি সংখ্যক শিশুকে পরিশীলিত শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলা সম্ভব হয়। জেফ অদম্য উৎসাহে তাঁর গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে ঘুরে ছাত্রছাত্রী সংগ্রহ করতে শুরু করলেন। এ কি আর সহজ কাজ! ওইটুকু মেয়ের কথায় কে ভরসা করবে? ধীরে হলেও একসময়ে বরফ গলতে শুরু করল। আসলে জমাট রক্ষণশীল শীতল মানসিক সমাজে একটু উষ্ণতার প্রয়োজন ছিল। জেফ, ত্রয়োদশ বর্ষীয়া একটি ছোট্ট কিশোরী, তাঁর হাতের দিয়ার আলোর উষ্ণতায় সেই জমে থাকা বরফকে গলানোর কাজ শুরু করলেন— ঠিক Lady with the lamp-এর মতো। শুরু হল এক নতুন লড়াই।
পৃথিবীর আনাচেকানাচে ছড়িয়ে আছে এমনই কত না জেফ। এঁরা সকলেই নীরবে নিভৃতে গোপনে গোপনে কাজ করে চলেছেন কোনওরকম পাওয়ার আশা, খ্যাতির আশা না করেই। আজ এমন কয়েকজন নিরলস নির্মাতার সঙ্গে আলাপ করে নেওয়া যাক যাঁরা পৃথিবীর সেরা দশ শিক্ষকের তালিকায় ঠাঁই পেয়েছিলেন।
গেইশা বোনেলা কর্টিসের কথা দিয়েই শুরু করি। সুদূর চিলি দেশের কন্যা গেইশা। এক কৃষিশ্রমিক পরিবারের মেয়ে। পড়াশোনায় মনোযোগী কিন্তু বাড়ির অবস্থা মোটেই অনুকূল নয়। ভাগ্য ভাল যে গেইশার মা ছিলেন মাধ্যমিক পাশ। ফলে পঠনপাঠনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি খানিকটা ওয়াকিবহাল ছিলেন। এটা গেইশার পক্ষে শাপে বর হয়েছিল। গেইশার বাবা ও ঠাকুরদা কারও অক্ষর-পরিচিতি ছিল না। মাত্র ১২ বছর বয়সে গেইশার বাবা খনিশ্রমিক হিসেবে কাজে যোগদান করেন এবং গোটা কর্মজীবন সেখানেই কেটে যায়। ফলে স্কুলে যাওয়া আর তাঁর হয়ে ওঠেনি। বাবার এই দুঃখজনক অসম্পূর্ণতা সম্পর্কে গেইশা অবহিত ছিলেন এবং বুঝতে পেরেছিলেন যে তাঁর পড়াশোনার ব্যাপারে বাবার কাছ থেকে কোনওরকম সহায়তা পাবেন না। এমনটা এক নিদারুণ কষ্টদায়ক ব্যাপার হলেও তাঁকে এই সত্য মেনে নিতে হয়েছিল।
গেইশা তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। একদিন বেশ উচ্চস্বরেই চিলিয়ান সাহিত্যের কিছু অংশ পাঠ করছেন। পাশে বসে থাকা তাঁর বাবা এটি পড়তে চাইলেন। কিন্তু পড়বেন কী করে? তাঁর তো অক্ষরপরিচয়ই নেই। শুরু হল এক নতুন লড়াই, বাপ আর বেটির লড়াই। বয়স্ক শিক্ষার্থীদের জন্য নির্দিষ্ট বই নিয়ে বাবাকে পড়ানোর কাজ শুরু করলেন গেইশা। ৪৭ বছর বয়সে তিনি ভর্তি হলেন গ্রামের প্রাথমিক স্কুলে। আর এখন পড়াশোনা নিয়েই সময় কাটাতে ভালবাসেন গেইশার বাবা। ভীষণভাবে প্রাণিত হয়েছিলেন তিনি বাবার এই আশ্চর্য উত্তরণ দেখে।
এই ঘটনা গেইশার শিক্ষয়িত্রী হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে একটা বড় মাইলফলক।
এখন চিলির মূল ভূখণ্ড থেকে ৩৭০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ইস্টার দ্বীপের লরেঞ্জো বেজা ভেগা স্কুলের দিদিমণি তিনি। সেখানকার আদিবাসী মানুষদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে গেইশার ভূমিকা অনন্য। সাম্প্রতিক মহামারির সময়ে ওখানকার স্কুলে যোগদান করে গেইশা দেখলেন স্পেনীয় ভাষা ও সংস্কৃতির দাপটে স্থানীয় মানুষদের প্রচলিত রাপা ন্যুই ভাষা কোনঠাসা। শিক্ষার মাধ্যম স্প্যানিশ, ফলে এক শূন্যতা তৈরি হয়েছে শিক্ষার্থীদের মনে। যে কারণে স্কুলে হাজিরা হ্রাসমান। গেইশা কোমর বেঁধে নেমে পড়লেন মাঠে। সরকারি স্প্যানিশ ভাষার পাশাপাশি রাপা ন্যুই ভাষাতেও পঠনপাঠনের প্রক্রিয়া শুরু হল স্কুলে। বাড়তে থাকল হাজিরার হার। এই কর্মকাণ্ডের দৌলতে রক্ষা পেল একটা ক্ষীয়মান সাংস্কৃতিক পরম্পরা, ভাষা, একটি সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর অন্তর্লীন যাপন। এই কাজের জন্য গেইশা বোনেলা কর্টিস নির্বাচিত হন বিশ্বের সেরা দশ প্রভাবশালী শিক্ষকদের অন্যতম হিসেবে। তাঁকে অভিনন্দন জানাই।
এবার চলুন রোমানিয়া। সেখানে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছেন আনা মারিয়া রুসু। এক আশ্চর্য দিদিমণি তিনি। আনা বিশ্বাস করেন, জীবজগতের ইকোসিস্টেম মডেলই হল এক কার্যকরী হাতিয়ার যা যাবতীয় সমস্যার সমাধান করতে পারে। তা সে শিক্ষাঙ্গন হোক অথবা ভূ-রাজনৈতিক বা সামাজিক সমস্যাই হোক। বাস্তুতন্ত্র যেমন সংযোগ ও শৃঙ্খলের কথা বলে আনা মারিয়া রুসুও তেমনই সামূহিক যাপনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সংযুক্তিকরণের ওপর বিশ্বাস রাখেন। তাঁর মতে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের শিক্ষা কোনও ভেদবুদ্ধির দ্বারা পরিচালিত হলে তা কখনও ফলপ্রসূ হতে পারে না। এজন্য আনা সঙ্গীতকে শিক্ষা সঞ্চালনের প্রধান অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। শিক্ষার্থীদের বয়ঃক্রম, মানসিক ও প্রাক্ষোভিক চাহিদার কথা মাথায় রেখে তিনি আলাদা আলাদা গান, কথিকা, ভাষ্য, নাটক ইত্যাদি রচনা করেন ও তাকেই ব্যবহার করেন তাঁর ছাত্রছাত্রীদের কাছে পৌঁছে যাওয়ার জন্য। কোভিড-মহামারিকালে এই পদ্ধতিতেই তিনি পৌঁছে গেছেন বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা পড়ুয়াদের কাছে। মারিয়া তাঁর এই পদ্ধতির নাম দিয়েছেন “teaching through fascination” বা আবেগের শিক্ষা। শিক্ষকদের মধ্যে যদি সৃষ্টিশীল আবেগ না থাকে তাহলে তিনি শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছবেন কী করে? আগে যে তাঁকে গ্রহণযোগ্য হতে হবে, তারপর কঠিন পাঠের আলোচনা! তাই নিজেকে মেলে ধরতে তিনি নানান মজাদার পশরা সাজিয়েগুছিয়ে হাজির হন ক্লাসঘরে। তাঁর সংস্পর্শে চার দেওয়ালের পরিসীমা ছাপিয়ে সবটাই হয়ে ওঠে এক আশ্চর্য আনন্দবাসর। আনার কথা শুনে নিশ্চয়ই নিজের শিক্ষার্থী জীবনের দিনগুলোতে ফিরে যেতে ইচ্ছে করছে? আনাকে ইউটিউবে পেয়ে যাবেন আশাকরি। আনা মারিয়া রুসু শেষ পর্যন্ত দশজন বাছাই করা শিক্ষকের তালিকায় ঠাঁই পাননি বটে তবে তাঁর ইকোসিস্টেম মডেল আমার কাছে অনবদ্য উদ্ভাবন বলে মনে হয়েছে।
আসলে শিক্ষকতা হল উদ্ভাবনের আঁতুড়ঘর। শ্রেণিকক্ষের চারদেওয়ালের পরিসীমার মধ্যে থেকেও বিশ্বপটভূমি সন্দর্শনের সুযোগ পান একজন শিক্ষক। তাঁর শিক্ষার্থীদের সমস্যা যে আদতে বৃহত্তর সমাজেরই সমস্যা তা উপলব্ধি করতে পারলে সমাধান করতে উন্মুখ হয়ে ওঠেন একজন সত্যিকারের শিক্ষক। এবার বিশ্বের প্রভাবশালী সেরা ৫০ জন শিক্ষক-শিক্ষিকার তালিকায় ঠাঁই পেয়েছিলেন দুজন ভারতীয় শিক্ষক— অন্ধ্রপ্রদেশের গুন্টুর জেলার ইলাভরমের ZPHS বিদ্যালয়ের ইংরেজি ভাষার শিক্ষক হরিকৃষ্ণ পাতাচারু এবং আমাদের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের জামুড়িয়ার তিলকামাঝি আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষক দীপনারায়ণ নায়েক। ৮ নভেম্বর, ২০২৩ প্যারিসে অনুষ্ঠিত পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দীপনারায়ণ প্রথম দশে নির্বাচনের সুবাদে। ভারি ভাল লাগছিল অনুষ্ঠানমঞ্চে দীপনারায়ণকে দেখে। মনের ভেতরে নিজেকে ছাপিয়ে যাওয়ার, ছড়িয়ে দেওয়ার আকুতি ও আন্তরিকতা না থাকলে নতুন কিছু করা সম্ভব নয়।
এমন আন্তরিক তাড়না থেকেই সিস্টার জেফের পথচলা। নিজের ঠোক্কর খাওয়া মেয়েবেলা তাঁকে আজও তাড়িয়ে ফেরে। স্কুল তো তৈরি হল। কিন্তু তাকে বাড়িয়ে তোলা প্রয়োজন আর তার জন্য চাই অর্থ। বাড়ির যা অবস্থা তাতে করে সেখান থেকে সাহায্য পাওয়া যাবে না। জেফ তখন ক্লাস নাইনের ছাত্রী। একটা চাকরি নিলেন তিনি। মাসিক বেতন মাত্র ৬০০ টাকা। এই সামান্য টাকা জমিয়ে জমিয়ে একটা ঘর তৈরি করা হল। অবৈতনিক বিদ্যালয় তাই অভিভাবকদের কাছ থেকে অনুদান গ্রহণের প্রশ্ন নেই। এখন অবশ্য ছাত্রছাত্রী সংখ্যা বেশ খানিকটা বেড়েছে; ফলে বেড়েছে দায় ও দায়িত্ব। এই অবসরে নিজেকে একটু একটু করে গড়েপিটে নিয়েছেন জেফ। পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুটি বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি— ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান। স্কুলের কারিকুলামে যুক্ত করেছেন জীবনের লড়াইয়ে টিকে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা— আত্মরক্ষার নানান প্রকৌশল, চিত্রাঙ্কন, রূপশিল্পী হয়ে ওঠার শিক্ষা, সেলাই। জেফ জানেন যতদিন পর্যন্ত না আমাদের মেয়েরা অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত তাঁদের মুক্তি নেই। পাকিস্তানের মতো একটা বিশৃঙ্খল দেশে এমন একটা সৃষ্টিমুখর কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রাখার জন্য প্রয়োজন ছিল হার-না-মানা অদম্য ইচ্ছেশক্তির, নিরলস একাগ্রতা আর অন্তহীন দায়বদ্ধতার।
আমাদের ঘরের ছেলে দীপনারায়ণ নায়েক, চিলির গেইশা বোনেলা কর্টিস, ঘানার এরিক আসোমানি আসান্তে, কানাডার আ্যানি ওহানা, ইউক্রেনের আর্তুর প্রোইদাকভ, ফ্রান্সের নিকোলাস গাউবে, ইউনাইটেড কিংডমের সাফিনা বোরহা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিলিসা ট্রেসি আর দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যারিটি হুইলার— এঁরা সত্যিই অনন্য। গভীর অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন না হলে এমন উচ্চতায় পৌঁছনো যায় না। নিজের পথ নিজেই তৈরি করতে না পারলে আজকের দুনিয়ায় অন্য উচ্চতায় উত্তীর্ণ হওয়া যায় না। এঁরা পারিপার্শ্বিক অবস্থাকে মনে রেখেই নতুন করে নিজেদের প্রকাশ করেছেন। এজন্য এঁদের লাখো কুর্নিশ জানাই।
শেষ করব পুরস্কার জেতার পর সিস্টার জেফের অভিভাষণের কথা কটি দিয়ে।
এই পুরস্কার পাওয়া আমার কাছে এক অকল্পনীয় বিস্ময়। যেদিন মাত্র তেরো বছর বয়সে এক কিশোরী মেয়ে হিসেবে নিজের ছোট বোনকে নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলাম সেদিন স্বপ্নেও ভাবিনি যে ভবিষ্যতে এমন এক সোনালি মুহূর্ত আমার জন্য অপেক্ষা করছে। নিজের জীবনে অনেক অনেক কঠিন সময় পার হতে হয়েছে আমাকে, সম্মুখীন হয়েছি নানান বাধার। আমি কখনওই নিজের প্রতি বিশ্বাস হারাইনি। প্রত্যেক বিফলতা থেকে আমি শেখার চেষ্টা করে গেছি। আজ এই মুহূর্তে যখন এত সুন্দর একটা অনুষ্ঠানে, এতসব শিক্ষানুরাগী গুণীজনদের সামনে দাঁড়িয়ে আমার কষ্টার্জিত সাফল্যের সোনালি ফসল ঘরে তুলতে চলেছি তখন বারবার আমার গ্রামের সেই স্কুলের প্রথম দিনটির কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। আজকের এই স্বীকৃতি কখনওই আমার একার প্রাপ্য নয়। এই পুরস্কার, এই স্বীকৃতি বিশ্বের সমস্ত শিক্ষকদের। আমি বিশ্বাস করি শিক্ষকরাই পারেন সমাজের ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে। এক সুন্দর সমাজ গড়ার কাজে শিক্ষকদের এক হয়ে কাজ করে যেতে হবে নিরলসভাবে। আমি কায়মনোবাক্যে বিশ্বাস করি, শিক্ষকতা নিছক একটি পেশা নয়, এটি একটি ব্রত।
আজকের এই পুরস্কার আমাকে আরও আরও গভীরভাবে ভাবতে এবং আরও আন্তরিকতা, অনুধ্যান ও দায়িত্ববোধের সঙ্গে কাজ করার শক্তি জোগাবে। শিক্ষা হল আলো যা সমস্ত অন্ধকার দূর করে। তাই সমাজের সমস্ত স্তরের মানুষের কাছে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে হবে। আগামী দিনে আমি এই লক্ষ্যে কাজ করে যাব। আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ জানাই।