গুজরাত গণহত্যার বিচার হয়নি: সিসিটি গোধরা থেকে ঘুরে আসার পর যা জানিয়েছিল

প্রদীপ দত্ত

 


২৭ ফেব্রুয়ারির ঘটনার দিকে ফিরে তাকালে সিদ্ধান্তে আসা কঠিন নয় যে, এইদিনই ভারতের আধুনিক জাতিসত্তা ব্যর্থ হতে শুরু করে। গোধরার ঘটনাই মোদিকে গুজরাতের ক্ষমতায় ফিরিয়ে এনেছে এবং তাঁকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার রাস্তা বানিয়ে দিয়েছে। মোদি গুজরাতে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ভয় ও সন্দেহের বীজ বপন করে তাঁর দলের ক্ষমতা দৃঢ় করেছেন। এখন গোটা দেশের ক্ষেত্রেই বিজেপি তাই করছে

 

পূর্ব-প্রসঙ্গ: গোধরার ঘটনা

৭ মে, ২০০২ তারিখে বিচারপতি কৃষ্ণ আইয়ারের নেতৃত্বে বিচারপতি পিবি সায়ন্ত, বিচারপতি হসবেত সুরেশ, মানবাধিকার-কর্মী কেজি কান্নাবিরন, ইতিহাসবিদ তনিকা সরকার, সমাজকর্মী অরুণা রায়-সহ ৮ জনের কনসার্ন্ড সিটিজেনস ট্রাইবুনাল (সিসিটি) সেই কোচটি এবং যে-জায়গায় তা পুড়েছিল সেই স্থান পরিদর্শন করেন। তাঁরা দেখেছিলেন এবং জানিয়েছিলেন, যেখানে ট্রেন থেমেছিল সেখানে রয়েছে উঁচু বাঁধ। মাটি থেকে তার উচ্চতা প্রায় ১২-১৫ ফুট এবং সেখানে ঢাল রয়েছে। উপরে রেললাইনের পাশে কোনও দিকেই দু-হাজার মানুষের জড়ো হওয়ার জায়গা নেই। যদি সেই জায়গায় অত লোক জড়ো হয়েছিল বলে ধরাও হয়, তাহলেও তারা এস-৬ কোচ যতটা লম্বা তার চেয়ে অনেক বেশি জায়গা জুড়ে ছড়িয়েছিল। এ থেকেই বোঝা যায় অন্য কোচ আক্রমণ করা এস-৬ কোচটির মতোই সহজ ছিল।

তাছাড়া যদি বাঁধের উচ্চতা এবং ট্রেনের উচ্চতার কথা ভাবা হয় এবং যদি ট্রেনে আগুনের গোলা ছোড়া হয়ে থাকে তাহলে কোচের বাইরেও তার পোড়া চিহ্ন থাকার কথা। তাঁরা জানলার নিচে সেরকম কোনও চিহ্ন দেখেননি। পোড়া চিহ্ন ছিল জানলার চারপাশে এবং তার উপরের দিকে। তা থেকেই পরিষ্কার বোঝা যায় আগুন লেগেছিল কোচের ভিতরে এবং আগুনের শিখা জানলা দিয়ে কোচটির বাইরের দিকে এবং জানলার উপরের দিকে গিয়েছিল। তাই, এমনকি খালি চোখেও এটা পরিষ্কার হয়েছে যে আগুন ভিতর থেকেই ধরেছিল, বাইরে থেকে নয়।

আগুন যদি ভিতরেই লেগে থাকে তাহলেও কীভাবে তা ঘটেছিল? এফএসএল-এর ‘বৈজ্ঞানিক’ বিশ্লেষণের উপর নির্ভর করে পুলিশ নতুন ব্যাখ্যা দেয়। তদন্তকারী অফিসার দাবি করেন, ফালিয়াতে সিগনালের জন্য ট্রেন থামলে কিছু মুসলমান ট্রেনে চড়ে বসে, এস-৬ ও এস-৭-এর সংযোগস্থলের ভেস্টিবুল কেটে এস-৬-এ ঢোকে। করিডোরে ৬০ লিটার পেট্রল ঢালে এবং দেশলাইকাঠি জ্বেলে দেয়।

এই অবাস্তব দাবির সমর্থনে পুলিশ একজন সাক্ষীও পায়নি যে তা সমর্থন করবে। এই তত্ত্বের অবাস্তবতা নিয়ে গত দুই দশকে বেশ কয়েকটি লেখা হয়েছে। প্রথমত বালতি হাতে করে বয়ে আনতে হত, খুব কম বালতিই আছে যাতে ২০ লিটারের বেশি তরল ধরে। তাই অন্তত ৩টি বালতি ট্রেনে তুলতে হয়েছিল। যে কামরা মুসলমান-বিরোধী উত্তেজিত করসেবকে ঠাসা, তারা কি তিনজনকে এমন তরলের বালতি নিয়ে উঠতে দেবে? বিশেষ করে যার মধ্যে কী আছে তা গন্ধেই বোঝা যায়।

ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির (এফএসএল) ৬০ লিটারের হিসাবের ভিত্তি ছিল একটা খালি কোচে ওই তরল কতদূর পর্যন্ত যেতে পারে।[1] মৃত ও আহতের সংখ্যা দেখিয়েছে যখন কোচটিতে আগুন লাগে সেখানে অন্তত ১০৮ জন যাত্রী ছিল। ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের প্রাথমিক ভুল হতে পারে, কিন্তু বোঝাই যাচ্ছে তাঁদের দুর্ঘটনার অন্য ব্যাখ্যা করার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছিল, যেন মুসলমান সম্প্রদায়কে দোষী করা যায়।

গোধরায় মৃতদের মধ্যে ২০ জন ছিল পুরুষ, ২৬ জন মহিলা এবং ১২ জন শিশু। কিন্তু কোচ নম্বর এস-৬-এর যাত্রীদের পরিচয় থেকে বোঝা যায় অযোধ্যায় করসেবকরা দল বেঁধে সেই কোচে ওঠার আগে বেশিরভাগই ছিলেন সাধারণ যাত্রী, যাঁরা লখনৌ এবং পরবর্তী স্টেশন থেকে উঠেছিলেন। লখনৌতে ওই কোচের রেলওয়ে বুকিং চার্ট থেকে দেখা গেছে এস-৬ কোচের ৭২টি বার্থের মধ্যে ৪৩টির নিশ্চিত বুকিং ছিল। ১৯টি ছিল প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের, প্রাপ্তবয়স্ক মহিলার ছিল ১৯টি এবং ৫টি শিশুর। অর্ধেকের বেশিই পরিবার নিয়ে যাচ্ছিলেন। আরও ২৩ জন যাত্রী উঠেছিলেন মাঝের স্টেশন থেকে। যেহেতু সবারই বার্থ ছিল, তাই কোচের দুই প্রান্তে ভেস্টিবুলের কাছে খুব কম যাত্রীরই থাকার কথা।

সিসিটির প্রধান বিচারপতি কৃষ্ণা আয়ার বলেছিলেন, করসেবকদের মৃত্যুসংখ্যা আরও কম হতে পারত। শারীরিকভাবে সক্ষম যুবকদের অল্পই মারা গেছে, কারণ তাদের বেশিরভাগই ছিল কোচের মাঝে নয় শেষ প্রান্তে। গায়ের জোর খাটিয়ে তারা ট্রেনে উঠেছে এবং গায়ের জোরে তুলনামূলক সহজেই ৪৩ জন জ্বলন্ত কোচ থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছিল। তাদের মধ্যে মাত্র ৫ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। এইসব বিচার করলে মনে হয় মৃতদের মধ্যে জনা দশ-বারোই ছিল করসেবক। কিন্তু প্রায় সবাই মনে করে ওই সব মৃতদেহ করসেবকদেরই ছিল।

আদালতে প্রশ্ন ওঠে পেট্রোল ছড়ানোর প্রত্যক্ষদর্শী নেই কেন? এস-৬ কোচের একজন বৈধ যাত্রী বা করসেবকও প্রসিকিউশনের দাবি মেনে বলেনি যে, অগ্নিসংযোগকারীরা কোচ ভেঙে ঢুকে ২০ লিটারের ক্যান থেকে কোচের মধ্যে পেট্রোল ছড়িয়েছিল। বরং তারা বলেছে যে, তারা দেখেনি বা শারীরিকভাবে অনুভব করেনি, ভিড়ে ঠাসা ওই কোচে পেট্রোলের গন্ধ পায়নি। আসল ফাঁক ছিল প্রমাণের। কোচের মধ্যে যারা ছিল তারা কেউ দরজা ভাঙতে বা পেট্রোল ছড়াতে দেখেনি। প্রসিকিউশনের দাবি যে দুর্বল তা বুঝিয়ে আদালত বলে— মানতে হবে যে ওই উত্তেজনাপূর্ণ ঘটনার সময় (সকাল ৮টার কাছাকাছি) গোটা ট্রেনের সমস্ত জানলা ও দরজা একেবারে বন্ধ ছিল এবং যাত্রীরা আক্রমণকারীদের, বিশেষত অচেনা আক্রমণকারীদের শনাক্ত করার মতো অবস্থায় ছিলেন না।

গোধরার মুসলমানরা কোনওরকম উস্কানি ছাড়াই ট্রেন আক্রমণ করেছে, মোদির এই আখ্যান অনুযায়ী বিশ্ব হিন্দু পরিষদের (ভিএইচপি) যে ৯ জন সদস্যের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছিল, আদালত (ট্রায়াল কোর্ট) তা খারিজ করে দেয়। প্রত্যক্ষদর্শী হিসাবে হাজির করা প্রসিকিউশনের ভিএইচপির লোকেরা বলেছিল, অযোধ্যা থেকে যে করসেবকরা ফিরছে তাদের অভিবাদন জানাতে ফুলের মালা ও খাবারের প্যাকেট নিয়ে তারা সকাল ছটার সময় গোধরা রেলস্টেশনে গিয়েছিল।

অথচ সবরমতির এক্সপ্রেসের সেখানে পৌঁছনোর সময় ছিল রাত ২-৫৫ মিনিটে। ট্রেন যে পাঁচ ঘন্টা দেরিতে চলছে সে-কথা তারা জানত না। তাই অভিবাদন জানাতে কেন অত দেরিতে গিয়েছিল তার কোনও ব্যাখ্যা তারা দিতে পারেনি। তারা করসেবকদের মালা ও খাবারের প্যাকেট দিয়েছে বললেও, বেঁচে থাকা একজন করসেবকও স্টেশনে সেই আতিথেয়তা পেয়েছে বলে আদালতে জানায়নি। কোনও করসেবক বা অন্য সাক্ষী, এমনকি যে অফিসাররা সেখানে ডিউটিতে ছিল কেউ ভিএইচপি সদস্যদের উপস্থিতির কথা বলেনি। অর্থাৎ তারা যে স্টেশনে গিয়েছিল তার সমর্থনেও কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

ডিফেন্স কাউন্সিল যখন তাদের প্রশ্ন করে তারা কী করে সকাল ছটার সময় পৌঁছবার ওই পরিকল্পনা করেছিল, তা নিয়ে তাদের কাছে উত্তর ছিল না। আদালত রায়ে মন্তব্য করে— ওই সময় (রাত ২-৫৫) গাড়িতে শান্তিতে ঘুমোবার সময়, করসেবকদের জাগিয়ে চা-স্ন্যাকস দিয়ে অভিবাদন জানিয়ে বাকি যাত্রীদের বিরক্ত করার উপযুক্ত সময় মোটেই নয়।

ভিএইচপি সাক্ষীদের আরেকটি বিষয় আদালতের চোখে বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছিল। প্ল্যাটফর্মে করসেবক ও মুসলমান হকারদের মধ্যে গোলমাল— মুসলমান হকারদের পয়সা মেটানো নিয়ে গোলমাল, তাদের হিন্দু স্লোগান দিতে বাধ্য করা এবং মুসলমান মহিলার শ্লীলতাহানি করার কথা তারা জানতই না। অথচ আদালতে সেই সাক্ষ্য গৃহীত হয়েছিল। ভিএইচপি সদস্যদের সাক্ষ্য বিশ্বাসযোগ্য নয় ভেবে আদালত ঘটনার সময় সেখানে বা তার কাছাকাছি তাদের উপস্থিতি এবং তারা যা বলেছে তা বিশ্বাসযোগ্য নয় বলে জানায়। ওই ভিএইচপির সদস্যরা যে-সব মুসলমান ওই ট্রেন আক্রমণ করেছে বলে জানিয়েছিল, আদালত তাদের সবাইকে মুক্তি দেয়। অবশ্য ততদিনে তাদের ন-বছর জেল খাটা হয়ে গেছে। এঁদের মধ্যে ছিলেন ট্রেনে আগুন লাগার সময় গোধরা মিউনিসিপালিটির প্রেসিডেন্ট মোহম্মদ কালোতা।

দুর্ঘটনার ২৪ ঘন্টার মধ্যে, গোধরা-পরবর্তী হিংসা শুরু হওয়ার আগে যে ২৮ জন মুসলমানকে গ্রেফতার করা হয়েছিল,[2] দেখা গেছে সবইটাই সাজানো অভিযোগ। দুই দফায় তাদের ধরা হয়। প্রথম দিন ১৫ জনকে, পরেরদিন সকালে ১৩ জনকে।[3] বলা হয়েছিল ২৭ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯-১৫ মিনিটে ১৫ জনকে ঘটনাস্থল থেকে ধরা হয়েছে। পুলিশ জানায়, রেলস্টেশনের কাছে যখন উদ্ধারের কাজ চলছে সেই উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশে ১৫ জন মুসলমানকে ৩ ঘণ্টা ধরে আটক করে রাখা হয়েছিল। অন্য কোনও প্রত্যক্ষদর্শী পুলিশের এই অবিশ্বাস্য দাবি সমর্থন করেনি। আদালত শেষে বলে, ওই ১৫ জনকে সম্ভবত সেদিন সন্ধ্যায় কম্বিং অপারেশনের সময় বাড়ি থেকে ধরা হয়েছে। পরেরদিন সকাল ৯-৩০ মিনিটে যে ১৩ জনকে ধরা হয়েছিল, বলা হয় যে, ট্রেনে আক্রমণকারীদের ভিড়ে এরা ছিল। এ-নিয়ে পুলিশ-প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান আদালতে গ্রহণযোগ্য হয়নি। সম্ভবত ট্রেনে আগুন ধরার ঘটনাকে মোদির কথা অনুযায়ী সন্ত্রাসবাদীদের আক্রমণ হিসাবে দেখাতে তদন্তের শুরুতেই ওই ২৮ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ মিথ্যা অভিযোগ এনেছিল। মামলার চলার প্রথমদিকে আদালত তাদের সবাইকেই মুক্তি (খালাস) দেয়।

যে-মাস্টারমাইন্ড, মৌলভি হুসেন ইব্রাহিম উমরজি এস-৬ নম্বর কোচটিতে আগুন ধরানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ ছিল, ৮ বছর পর তিনি মুক্তি পান। ফলে ষড়যন্ত্রের আখ্যানে বিরাট ফাঁক তৈরি হয়। উমরজির মাস্টারমাইন্ড হওয়া দূরস্থান গোধরার হিংসায় তাঁর জড়ানোর কথাই নয়। কারণ তিনি ছিলেন গোধরায় মুসলমান সম্প্রদায়ের এমন নেতা, যাকে জেলার প্রশাসন ভরসা করে ২০০২ সালের মুসলমান-বিরোধী দাঙ্গার পর শরণার্থী শিবির চালানোর দায়িত্ব দিয়েছিল। জেলার কালেক্টরের ডাকা শান্তি আলোচনায় তিনি গিয়েছেন, ট্রেন জ্বলে যাওয়ার জন্য মুসলমানদের তরফে দুঃখপ্রকাশ করেছেন। যে দুই কারণে তার উপর ট্রেনে আগুন ধরানোর অভিযোগ আনা হয়েছিল তার একটি হল, দাঙ্গার শিকারদের জন্য শরণার্থী শিবির চালানোর আড়ালে তিনি অগ্নিসংযোকারী অভিযুক্তদের অর্থসাহায্য করেছেন। অন্যটি ছিল, ওই অপরাধ ঘটানোর জন্য তিনি গোধরা রেলওয়ে স্টেশনের কাছের গেস্টহাউসে মিটিং ডেকেছিলেন, সেখান থেকেই এক চক্রান্তকারী উমরজির বার্তা নিয়ে যায়, যে বার্তায় তিনি নির্দিষ্ট এস-৬ কোচটিই জ্বালিয়ে দিতে বলেছিলেন। ঘটনার এক বছর পর, এক অভিযুক্ত বিলাল হাজির স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ২০০৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।

সুপ্রিম কোর্টে জামিনের আবেদনে উমরজি বলেন, ২০০২-এর এপ্রিল মাসে প্রধানমন্ত্রীর গোধরা পরিদর্শনের সময়ে মুখ্যমন্ত্রী মোদিকে অস্বস্তিতে ফেলার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ির কাছে এক মুসলমান দলের প্রতিনিধিত্ব করে তিনি বলেছিলেন, গোধরা-কাণ্ডের জন্য সেখানকার মুসলমানদের উপর অত্যাচার চলছে। বাজপেয়ি যখন আরও জানতে চান, তিনি মোদির দিকে আঙুল তোলেন এবং ব্যঙ্গাত্মকভাবে বলেন, মোদিই বিষয়টি আরও ভাল জানেন। সুপ্রিম কোর্ট বলে যে, উমরজির বিরুদ্ধে অভিযোগ হল দুর্ঘটনা-পরবর্তী সময়ে সাহায্য করা সংক্রান্ত, তাও অনেকটাই শোনা কথা। অভিযুক্ত বিলাল হাজি মুখে যে কথা বলেছে বলে বলা হচ্ছে সেটা ছাড়া উমরজির বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ নেই। কেন এস-৬ কোচটিকেই টার্গেট করা হল সে-ব্যাপারে প্রসিকিউশন কোনও ব্যাখ্যা দেয়নি।

যারা ট্রেন থামাল তারা দায়মুক্ত কেন? কথিত যে দুজন মুসলমান ইলিয়াস মোল্লা ও আনওয়ার মোল্লা গোধরা স্টেশনের কাছে দুবার অগ্নিসংযোগের জন্য ট্রেন থামিয়েছে তাদের অভিযুক্ত হিসাবে কেন আদালতে তোলা হয়নি? ওই দুজন ছিল প্রসিকিউশনের সাক্ষী। কিন্তু বিচারের সময় তারা যেই বিরূপ হল, আদালত বিচারের আগে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে তাদের সাক্ষ্যের উপর নির্ভর করল। তাদের যুক্তি অনুযায়ী যদি আদালত মানত যে শারীরিক নিপীড়নের জন্যই তারা সেই সব কথা বলেছে তাহলে প্রসিকিউশন যে ঘটনাপরম্পরা সাজিয়েছে তার ফাঁক ধরা পড়ত। যেটা রহস্যাবৃত তা হল প্রসিকিউশনের অমন গুরুত্বপূর্ণ দুই সাক্ষ্যকে সাজা না দেওয়ার চেষ্টায় বাধ্যবাধকতা কী ছিল!

আদালত (ট্রায়াল কোর্ট) ২০১১ সালের রায়ে চক্রান্তের অভিযোগ বহাল রাখে। মোদি যেমন দাবি করেন যে, গোধরা গণহত্যা পূর্বপরিকল্পিত অপরাধ, ওই রায় সেই দাবিকে বিচারিক অনুমোদন দিয়েছিল এবং মোদির মুখ কিছুটা বাঁচিয়েছিল।

২৭ ফেব্রুয়ারির ঘটনার দিকে ফিরে তাকালে সিদ্ধান্তে আসা কঠিন নয় যে, এইদিনই ভারতের আধুনিক জাতিসত্তা ব্যর্থ হতে শুরু করে। গোধরার ঘটনাই মোদিকে গুজরাতের ক্ষমতায় ফিরিয়ে এনেছে এবং তাঁকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার রাস্তা বানিয়ে দিয়েছে। মোদি গুজরাতে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ভয় ও সন্দেহের বীজ বপন করে তাঁর দলের ক্ষমতা দৃঢ় করেছেন। এখন গোটা দেশের ক্ষেত্রেই বিজেপি তাই করছে।

গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর মোদি জীবনে প্রথম নির্বাচনে লড়েছিলেন ২০০১ সালের অক্টোবর মাসে। যে-বিধানসভা ক্ষেত্রের উপনির্বাচনে তিনি লড়েছিলেন সেটি বিজেপির নিরাপদ আসন হলেও তাঁর ভোটে জেতার মার্জিন ছিল আগের বিধায়কের মার্জিনের অর্ধেক। নির্বাচনের ফল বেরোনোর এক সপ্তাহের মধ্যে গোধরার দুর্ঘটনা ঘটে। তারপর থেকে ঘটনাপরম্পরায় তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে যান।

২৭ ফেব্রুয়ারি ভিএইচপি ক্যাডাররা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেরিয়ে ঘোষণা করে, অযোধ্যার পুণ্য মিশন থেকে ফেরার সময় বিরাট সংখ্যক করসেবককে মুসলমানরা গোধরায় পুড়িয়ে মেরেছে। ২৮ তারিখে মৃতদেহ নিয়ে তারা আমেদাবাদে মিছিল করে, যেন মানুষের মধ্যে মুসলমানদের প্রতি তীব্র ঘৃণা জেগে ওঠে।

 

Reference:

 

[পরের পর্ব- গুলবার্গ সোসাইটি হত্যাকাণ্ড]


[1] জ্যামপ্যাকড অবস্থায় নয়, যেখানে লোকের জুতো এবং লাগেজ তেল ছড়ানোয় বাধা হিসাবে দেখা দেবে।
[2] বিচার শুরু হওয়ার আগেই তাদের ১ জন মারা যায়।
[3] গোধরা মামলায় মোট ৯৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4885 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

1 Comment

  1. Amader ke to adalatoke somman korte hoy. Pothe neme socchar protibad opekkha chupchap thaka protibad er vashay ek ghrinyo obosthan. Kintu amader hat pa bandha. Bichar prakriya jodi karo bibeker dongshon thake…. tar kotha hoyto vabishyot bolbe. Kijani ke jeno bolchhilo mithya chapa thake na.

2 Trackbacks / Pingbacks

  1. গুজরাত গণহত্যার বিচার হয়নি: গুলবার্গ সোসাইটি হত্যাকাণ্ড – ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম
  2. গুজরাত গণহত্যার বিচার হয়নি: গোধরার ঘটনা – ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

আপনার মতামত...