অশোক মুখোপাধ্যায়
কংগ্রেসের ইস্তাহারে এত সব ভাল কথার মানে হল শুধু বিজেপি-কে হারানোই নয়, কংগ্রেস নিজেকেও শুধরে নেবে বলে জানাচ্ছে। সময় ঘনিয়ে আসছে। আর হয়তো কিছুদিনের মধ্যেই আমরা তেরঙা প্রতিশ্রুতি আর গৈরিক জুমলাবাজির মধ্যে তফাত দেখতে পাব কিনা, নিশ্চিত হতে পারব
কিঞ্চিৎ ক্রিকেটীয় জ্ঞান দিয়ে শুরু করা যাক। টেস্ট ক্রিকেটে ব্যাকফুটে খেলার একটা ছক আছে। সেটা প্রচলিত অর্থে পিছিয়ে যাওয়া নয়। সাধারণভাবে ব্যাটসম্যানদের সমস্ত ড্রাইভ বা কাটই ফরওয়ার্ডে খেলে (অর্থাৎ এক পা বাড়িয়ে) মারতে হয়, একমাত্র লেট কাট আর গ্ল্যান্স ছাড়া। কিন্তু বোলার যখন নিখুঁত লাইনে গুডলেংথ বল করে, ব্যাটসম্যান ভালরকম লম্বা হলে তাতে রক্ষণাত্মক না খেলে একটু পিছিয়ে গিয়ে মেরে খেলতে পারে। স্কোয়ার কাট, পুল বা হুক। বনেদি ক্রিকেটীয় ব্যাকরণমতে তাকে বলা হয়, ব্যাকফুটে গিয়ে আক্রমণাত্মক খেলা। মধ্য-উচ্চতার হলে ব্যাকফুটে রক্ষণাত্মক খেলাই নিরাপদ। আর বেঁটে হলে সেইসব বলের উপর চোখ রেখে ছেড়ে দেওয়াই রীতি।
রাজনীতিতে হুক বা পুল করার সুযোগ থাকলেও ব্যাকফুট মানে হল পিছিয়ে যাওয়া। কংগ্রেসের ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনী ইস্তাহার দেখতে গিয়ে প্রথমেই ক্রিকেটের এইসব জরুরি কথা মনে এল।
ব্যাকফুটে কেন?
সেই কথাটা বলার জন্যই এত ধানাইপানাই।
বর্তমানে নরেন্দ্র দামোদরদাস স্ক্যামোদির উদ্যোগে ভারতে যে জল জঙ্গল জমি খনি পাহাড়-সহ সমস্ত দেশীয় ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ বেচে দেওয়ার তোড়জোড় চলছে, তার সূত্রপাত করেছিল এই কংগ্রেসেরই প্রায়-বর্তমান নেতৃবৃন্দ। ১৯৯১ সালে। বিশ্বায়ন ও উদারীকরণের সেই সাতসকালে। সেই যখন ফুকুয়ামা সোভিয়েত ব্যবস্থার পতন দেখে আনন্দে আত্মহারা হয়ে ইতিহাসের সমাপ্তি দেখতে পেয়ে একখানা বই লিখে প্রচুর কামিয়েছিলেন (ছয় লক্ষ ডলার)।
ফুকুয়ামা বছর পঁচিশের মধ্যেই বুঝে যান (তত দিনে তাঁর সেই বইয়ের লক্ষাধিক কপি বিক্রি হয়ে গেছে), ইতিহাসের এক পর্বের সমাপ্তি হলেও ইতিহাসের সমাপন আসেনি। তিনি যে আসার দিনক্ষণ মাপতে ভুল করেছিলেন তা নয়, আসলে ইতিহাস যে ধনতন্ত্রেই শেষ হবে না, হওয়ার কথা নয় বলেই, সেটাই বুঝতে তাঁর ভুল হয়েছিল। লোকটি সজ্জন, নিজেই সেই ভুল স্বীকার করেছিলেন। যদিও ভুল স্বীকার করে আর একটা বই লিখে এবং সে বই বেচে আরও ডলার কামানোর রাস্তায় আর হাঁটেননি।
সবাই ফুকুয়ামা নন। মনমোহন সিং-এর পক্ষে একইভাবে স্বীকার করা যে আমাদের বিরাট ভুল হয়েছিল নব শিল্পনীতি প্রণয়নে— সম্ভব নয়। সিদ্ধান্ত নিশ্চয়ই মনমোহনের একার ছিল না। ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক ও আইএমএফ-এর পরামর্শ এবং প্রধানমন্ত্রী নরসিংহ রাও, দলের সভাপতি সীতারাম কেশরী এবং নেপথ্য নায়ক সোনিয়া গান্ধির ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে তিনি এই কাজ করতে পারতেন বলে মনে হয় না। দেশের অর্থনীতির হাল এতেই ফিরবে— এটা বোঝানোর ক্ষেত্রে হয়তো তিনি তাঁর ব্যাপক বিদ্যা আর পেশাদারি অভিজ্ঞতাকে ব্যবহার করেছিলেন মাত্র।
মাঝখানে ছয় বছর বাজপেয়ির রাজত্বকাল পেরিয়ে আবার দশ বছর কংগ্রেসের হাতেই দেশের শাসনভার এসেছিল। ফুকুয়ামার ভুল বুঝতে আড়াই দশক লেগেছিল। দেশের দিকে তাকিয়েও প্রবীণ বিচক্ষণ প্রধানমন্ত্রী মনমোহন বুঝতে পারেননি, ইঞ্জিন তিনি পেছনদিকের গিয়ারে রেখেছিলেন। এমনকি, বিভিন্ন রুটের শতাব্দী এক্সপ্রেসগুলি বেজায় ক্ষতি স্বীকার করে চলছে দেখেও নয়।
বুঝেছিল কর্পোরেট দুনিয়ার কর্তাব্যক্তিরা।
দেশের সমস্ত দেশজ ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ দ্রুত বিক্রি করে দেওয়া এই বৃদ্ধের পক্ষে এবং এই দলের সম্ভব নয়। আরও বেপরোয়া একজনকে চাই। এমন একটা দলকে এবং নেতাকে চাই যারা আম্বানির সাতাশ তলা বাড়িকেই দেশ বলে জানে। তার বাইরে যে বৃহত্তর ভারত তার খবরই রাখে না। ফলে বেচতে গেলে তাদের প্রাণে কোথাও বাজবে না। ফল দাঁড়াল এই যে ১৯৯১ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত দেশ ও রাষ্ট্রের সম্পদ বিক্রির যে গতিবেগ ছিল, নরেন্দ্র মোদি এসে তাকে বহুগুণ বাড়িয়ে তুললেন এবং দেশের মানুষকে লুঠ করার নিত্যনতুন তরিকা বের করতে লাগলেন। ভাল নোট বাতিল, সর্বজনীন জিএসটি, ইত্যাদি।
আয়নায় কংগ্রেসের নেতারা দেখেছেন, তাঁদেরই তৈরি নীতিকে একজন লুটেরা রাজনীতিবিদ কী চমৎকারভাবে ব্যবহার করে দেশকে নিঃস্ব করে দিচ্ছেন। বিশ্বায়ন থেকে নিঃস্বায়নের দূরত্ব কী দ্রুততার সঙ্গে কমিয়ে এনেছেন। আম্বানি আদানিরা বিশ্বের ধনীকুলে শীর্ষ ধাপে পৌঁছেছে, আর সারা দেশ ক্ষুধার সূচকে ১১১-তে নেমে গেছে। বেকারত্বে দক্ষিণ এশিয়ায় সেরা। টাকার দাম কমতে কমতে তল খুঁজে পাচ্ছে না।
পড়ুন, ইলেকশন এক্সপ্রেস ২০২৪
দেশের জনসাধারনের মধ্যে বিজেপি-র বিরুদ্ধে যে ক্ষোভ তার রাজনৈতিক চরিত্র বিশ্লেষণ করলে যে ১৯৯১ সালের নয়া-অর্থনৈতিক পলিসির বিরুদ্ধেই কথা উঠে যায়, এটা যেন ২০২৪ সালে এসে কংগ্রেস নেতৃত্ব বুঝতে পেরেছেন। তাই তাঁরা এখন ব্যাকফুটে।
ফলে ন্যায়পত্রে ছত্রে ছত্রে সেই পুরনো পাপ স্খালনের প্রচেষ্টা দেখার মতো। শুধু একটা জিনিসেরই অভাব, নিজেদের ঘোরতর অন্যায়কে অন্যায় বলে স্বীকার করে নিয়ে ন্যায়ের দিকে কদমক্ষেপ।
কয়েকটা উদাহরণ দিলে এই পাপস্খালনের লক্ষণ চোখে পড়বে।
Equity অধ্যায়ের ৫ নং ধারায় আপনি দেখতে পাবেন:
Congress will abolish the contractualisation of regular jobs in the government and public sector enterprises and ensure regularisation of such appointments.
শুধু এই ধারাটির বিশ্লেষণই আপনাকে বলে দেবে যে অন্তত ভোটের প্রতিশ্রুতিতে কংগ্রেস ইউপিএ আমলে সরকারি চাকরিতে পদ বিলোপন এবং করিয়ে-আনা (outsourcing) চালু করা যে ভুল হয়েছিল বুঝতে পেরে এখন পুরনো জায়গায় ফিরতে ইচ্ছুক।
কিন্তু অর্থনীতি বিষয়ক অধ্যায়ে একটা বেশ ভালো রকম চালাকির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। ১৯৯১ সালের নতুন নীতিকে প্রচুর প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়ে, তারপর একটা “কিন্তু”-র আমদানি করা হয়েছে। বলা হয়েছে: After 33 years, the time is ripe for a re-set of economic policy. We need a Nav Sankalp Economic Policy. The cornerstone of the Nav Sankalp Economic Policy will be JOBS. To create jobs, India must become a producing economy. তাহলে এত দিনে কংগ্রেসের জাতীয় নেতারা বুঝতে পারলেন যে গত ৩৩ বছর ধরে এমন এক অর্থনৈতিক নিদান মেনে চলা হয়েছিল, যেখানে উৎপাদন হয়, মালিকের মুনাফাও হয়, শুধু চাকরির বাজারটাই যা সঙ্কুচিত হয়ে যায়। এটা বোঝা বা মেনে নেওয়াও খুব কম কথা নয়। বিজেপি-র উদ্দেশে একটা খোঁচাও আছে সেখানে, We reject jobless growth and the BJP’s legacy of job-loss growth. এই প্রত্যাখ্যান আরও অনেক আগে, ক্ষমতাসীন থাকার কালে, করতে পারলে হয়ত বিজেপি-র উত্থান সম্ভবই হত না।
আরও মজা হল, jobless এবং job-loss উন্নয়নমূলক নীতিকে কীভাবে বদলানো হবে, সেই ব্যাপারে টুঁ শব্দটিও নেই। বিভিন্ন সরকারি সেক্টরে মানুষ কমিয়ে পদ বিলোপ করে যন্ত্র বসিয়ে দিলে যে উন্নতি হতে দেখা যায়, তাতে চাকরি বাড়ে না, কমতেই থাকে। যদিও নিত্য নতুন ধরনের সমস্ত যন্ত্রপাতি দেখে হয়ত আম জনতার চোখ ধাঁধিয়ে যেতে পারে। অন্তত সরকারি ক্ষেত্রে পদ বিলোপ করার নীতি বদলানোর প্রতিশ্রুতি কি দেওয়া যেত না?
আর সরকার নিজেই যখন এই “লোক-কমাও” “পদ-ছাঁটো” নীতি অনুসরণ করতে থাকে তা যে কার্যত ব্যক্তি মালিকানাধীন পুঁজিকে বেশ অনুপ্রাণিত করে—সে কথা বলাই বাহুল্য। আমরা আশা করছি, পুরনো ভুলগুলো যখন ধরতে শুরু করেছেন, কংগ্রেসের নেতারা হয়ত এই ব্যাপারেও আর একটু যত্নশীল হবেন।
সংখ্যালঘুদের ক্ষেত্রে ৭ নং ধারায় বলা হয়েছে: Congress will ensure that, like every citizen, minorities have the freedom of choice of dress, food, language and personal laws. [মোটা হরফ আরোপিত] প্রশ্ন হচ্ছে, সংবিধানের ৪৮ নং প্যারায় যে নির্দেশিকা রয়েছে, গোহত্যা নিবারণের ব্যাপারে, যেটা গান্ধির বারণ সত্ত্বেও রাজেন্দ্রপ্রসাদ ও একদল কংগ্রেস নেতারই বাড়াবাড়িতে সংবিধানে ঠাঁই পেয়েছিল, আজ তাহলে এই প্রজন্মের নেতারা সেটা যে ভ্রান্ত ছিল ধরতে পারছেন! সংবিধানের সেই ধারা এবং প্রতিশ্রুতির এই বহর যে পরস্পর সাঙ্ঘর্ষিক সেটা স্বীকার করা এখন তাঁদের কর্তব্য। তবে, ক্ষমতা পেলেও, কাজটা এখন আর সহজ হবে না।
শিক্ষা নিয়ে দুটো খুব চমকপ্রদ প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে:
৮ নং প্যারা: We will discourage the use of teachers for non-teaching activities.
৯ নং প্যারা: We will discourage the appointment of contractual teachers in regular vacancies and ensure that such appointments are regularised.
একে তো discourage আর তুলে দেওয়া বা বন্ধ করা এক কথা নয়। বড় আকারের একটা ফাঁক রেখে দেওয়া হল। দ্বিতীয়ত, এই কাণ্ডগুলিও যে কংগ্রেস বা ইউপিএ আমলেই ব্যাপকভাবে শুরু হয়েছিল, সেটাও ভুলে গেলে চলবে না।
অবশ্য পাঠ্যপুস্তক সম্পর্কে ১৫ নং প্যারায় একটা খুব দরকারি কথা সংযোজন করেছে কংগ্রেস: We will ensure that all central textbooks promote a scientific temper and are aligned with India’s constitutional values as contained in the Preamble and other provisions of the Constitution of India. Textbook revisions will not be done arbitrarily or driven by political motives. শুধু বিজেপি আমলের পাঠ্যপুস্তকসমূহের গৈরিক সংস্কারগুলি বাতিল করার প্রতিশ্রুতিটা স্পষ্ট করে দিতে পারলে আরও ভাল হত।
কৃষি প্রসঙ্গে প্রথম প্রতিশ্রুতিটি প্রশ্ন জাগিয়ে তোলে: Congress will give a legal guarantee to the Minimum Support Prices (MSP) announced by the government every year, as recommended by the Swaminathan Commission. এই কাজটা দীর্ঘকালের শাসনামলে কংগ্রেস নেতৃত্ব করেননি কেন? কৃষি এবং খাদ্যশস্যকে বিশ্ববাজারের বেলাগাম চাহিদা-জোগানের অবাধ পুঁজিতান্ত্রিক নিয়মের অধীনে রেখে দেওয়া বা ঠেলে দেওয়াই যে এর অন্যতম কারণ সে-কথা বলাই বাহুল্য। এটা নিয়ে বিজেপি পুরো খাদ্যশস্য বাজারটা আম্বানি আর আদানিদের হাতে তুলে দিতে গিয়ে যতটা প্যাঁচকলে পড়েছে, কংগ্রেস তার ক্ষমতার জমানায় সেই সমস্যায় পড়েনি ঠিকই। কিন্তু অপরাধ স্বীকার করা কি ভাল হত না?
শ্রমিকপ্রশ্নে নতুন শ্রম আইন আনার কথা না বলে আইনের সংস্কারের কথা বলা হয়েছে। সাহসের সঙ্গে স্ক্যামোদির লেবার কোড বাতিলের কথা বলা উচিত ছিল।
একটা ভাল দিক রয়েছে যে এই প্রথম একটা জাতীয় দলের তরফে গিগ শ্রমিকদের ভালমন্দ নিয়ে দুটো ভাল কথা বলা হল (৬ নং প্যারা)। গিগ শ্রমিকদের বাড়বাড়ন্তের কারণ যে চাকরির ধারণাকেই পালটে ফেলা, স্থায়ী নিয়োগের বদলে অস্থায়ী চুক্তিকেই কর্মসংস্থানের একমাত্র পদ্ধতি হিসাবে গড়ে তোলা, যেটা আধুনিক পুঁজিবাদ চাইছে, সেই কথাটা নেই। জাতীয় পর্যায়ে ন্যূনতম মজুরি যেভাবে দৈনিক ৪০০ টাকা, অর্থাৎ, মাসে ১২০০০ টাকার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে (১৪ নং প্যারা), তাতে গিগ শ্রমিকদের আর ভরসা পাওয়ার কিছু রইল না। এই টাকাটা তারা এখনই পায় অনেক কষ্টে।
সংবিধান রক্ষার প্রসঙ্গে এসে শুরুটা চমৎকারই করেছিল, We promise you freedom from fear (১ম প্যারা)। তারপর খুঁজলাম, ইউপিএ-জমানার কুফসল ইউএপিএ এবং সিডিশন ধারা— যেগুলি কুখ্যাত ঔপনিবেশিক আমলের বিনা বিচারে জেলে পচানোর স্বাধীন ভারতীয় হাতিয়ার— সেগুলি বাতিল করার কোনও প্রস্তাব আছে কিনা। দেখলাম, নেই। অর্থাৎ, বিজেপি-র ভয় থেকে তোমাদের মুক্তি দেব, কিন্তু ভয়ের শাসন আমরাও বজায় রাখতেই চাই।
পড়ুন, গুজরাত গণহত্যার বিচার হয়নি
শাসকশ্রেণির দিক থেকে ঠিকই আছে। এজেন্সি ব্যবহারের ক্ষেত্রেও বেছে বেছে বিরোধীপক্ষকে আক্রমণ করার ব্যাপারটাকে আমলে নিয়ে কিছু ভাল কথা আছে। তবে সুনির্দিষ্টভাবে কোনও দিকনির্দেশ নেই।
সংবাদমাধ্যমের নিরপেক্ষতা ও স্বাতন্ত্র্য রক্ষার ব্যাপারে কংগ্রেস ভরসা দিয়েছে যে, Congress will defend independent journalism by enacting laws to protect journalists from coercive action by the State. This includes restricting the powers of the government for surveillance of journalists, seizure of their devices and exposure of their sources (প্যারা ৩)। আরও বলেছে: Many new laws (e.g. the Broadcasting Services (Regulation) Bill, 2023; Digital Personal Data Protection Act, 2023; Press and Registration of Periodicals Act, 2023, etc.) give unbridled powers of censorship to the government. The first named Bill will be withdrawn. The restrictive provisions of the two Acts will be amended or deleted to eliminate backdoor censorship (প্যারা ৭)। আমরা অপেক্ষায় থাকব।
হাতে ছাপ দিলে যে হালত বদলাবে তার নিশ্চয়তা দিয়েছে এই ইস্তাহার: All media houses, irrespective of the size, will be required to disclose their ownership structures (direct and indirect), cross holdings, revenue streams, etc. through their websites (প্যারা ৫)। তার মানে হল, কোন মাধ্যম কী ধরনের প্রচার করছে, তার মালিকানা দেখে আম আদমিও বুঝতে পারবে। কর্পোরেটরা রাজি হলে হয়!
ইন্টারনেট পরিষেবা যখন তখন বন্ধ করে দেওয়ার বিরুদ্ধেও ৬ নং প্যারাতে প্রতিশ্রুতি দেওয়া আছে।
আশ্চর্যের কথা হল, ৪৮ পৃষ্ঠার এই দলিলে কংগ্রেস নেতৃত্ব কোথাও নাগরিকত্বের প্রশ্নটিকে ধরে একটা কথাও বলেননি। অথচ তাঁরা যে ভয় থেকে নাগরিকদের মুক্তি দেবেন বলে অঙ্গীকার করেছেন, তার অন্যতম হাতিয়ারই তো হল নাগরিকত্বের প্রশ্ন এবং সিএএ ২০০৩/২০১৯ আইন। আসামে ১৯ লক্ষ নাগরিককে “বিদেশি” বলে চিহ্নিত করে ব্যাচে ব্যাচে মরণ শিবিরে পাঠানো হচ্ছে। সারা দেশে এই নিয়ে তুমুল গণবিক্ষোভ হয়েছে। কংগ্রেসের জাতীয় নেতৃত্ব এই খবর জানেন না নিশ্চয়ই নয়। তাহলে তাঁরা এই প্রশ্নে একেবারে নীরবতা অবলম্বন করলেন কেন? নির্বাচনের সময় বিভিন্ন মহল্লায় ভোটদাতারা কিন্তু জানতে চাইতে পারে।
যাই হোক, তবুও কিছু ভালো কথা অবশ্যই আছে। এত সব ভাল কথার মানে হল শুধু বিজেপি-কে হারানোই নয়, কংগ্রেস নিজেকেও শুধরে নেবে বলে জানাচ্ছে। এটাকেই আমি ব্যাকফুটে খেলা বলে দাগিয়ে এই ইস্তাহার পর্যালোচনা শুরু করেছিলাম। সময় ঘনিয়ে আসছে। আর হয়তো কিছুদিনের মধ্যেই আমরা তেরঙা প্রতিশ্রুতি আর গৈরিক জুমলাবাজির মধ্যে তফাত দেখতে পাব কিনা, নিশ্চিত হতে পারব।
আশা করা যাক, বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদযাপনের আগে ভারতের পরিবেশ খানিক হলেও কলুষমুক্ত হবে!
*মতামত ব্যক্তিগত